পর্দা নারীর রক্ষাকবচ

নিযামুদ্দীন 9240 বার পঠিত

ভূমিকা : আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা মানুষকে সামাজিক জীব হিসাবে সৃষ্টি করে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদায় আসীন করেছেন। মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের মত নয়। জ্ঞান সম্পন্ন মানুষের রয়েছে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যবোধ ও ব্যক্তি সত্তা। মানুষের সেই ব্যক্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্যবোধ ফুটে উঠে তাদের চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া ও পোষাক-পরিচ্ছদে। নারী-পুরুষ উভয়ে নিজস্ব পোষাকে তাদের জীবন সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। কখনোই নারীরা পুরুষের এবং পুরুষরা নারীর পোষাক নিজেদের বলে দাবী করতে পারে না। নিম্নে ইসলামে নারীর পোষাক বিধান ও তার সামাজিক প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা হ’ল।

পর্দার ফযীলত :

আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য প্রর্দশন : আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন তাঁর আনুগত্য করা ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) অনুকরণ করাকে মুমিনদের জন্য ওয়াজিব করেছেন। মহান আল্লাহ  পবিত্র কুরআনে বলেন,وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়ছালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে নিজস্ব কোন ফায়ছালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, সে ব্যক্তি স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হবে’(আহযাব ৩৩/৩৬)

আল্লাহ রাববুল আলামীন আরও বলেন, فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا ‘অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়ছালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে (নিসা ৪/৬৫)

মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ-  ‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে’ (নূর ২৪/৩১)

আল্লাহ রাববুল আলামীন আরও বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না’ (আহযাব ৩৩/৩৩)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ‘নারীরা হচ্ছে আওরাত বা আবরণীয় বস্ত্ত। সে বাইরে বের হলে শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়’।[1]

পর্দা নারীর পবিত্রতার বাহন : আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন পর্দা করাকে পবিত্রতার শিরোনাম হিসাবে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا- ‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনদের স্ত্রীদের বলে দাও তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াবান’ (আহযাব ৩৩/৫৯)

সতী ও পবিত্র নারীরা সর্বদা নিজেকে পর্দায় ঢেকে রাখার চেষ্টায় রত থাকেন। আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের বাণী فَلَا يُؤْذَيْنَ ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, নারীদের সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়লে সমাজের মানুষকে কষ্টে ফেলে দিবে। বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়বে এবং তারা বিভিন্ন ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়বে।

তবে বৃদ্ধ নারী, যাদের যৌবন হ্রাস পেয়েছে এবং বিবাহের আশা করে না, তাদের জিল-বাব ব্যবহার না করা, চেহারা ও কবজিদ্বয় খোলা রাখায় ফিৎনার আশংকা থাকে না। তাদের জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন পর্দা করার ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। তাদের বিষয়ে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন, وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ‘আর বৃদ্ধা নারী যারা বিবাহের কামনা রাখে না, তারা যদি সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে, তাতে তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম হবে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (নূর ২৪/৬০)। আল্লাহ তা‘আলার বাণী, أَن يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَة- ‘যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে’ এখানে তাদের জন্য কোন দোষ নাই এ কথার অর্থ হল, কোন গুনাহ নাই। অর্থাৎ বয়স্ক বা বৃদ্ধা নারীরা যদি তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে পোশাক খুলে রাখে, তাতে তাদের কোন গুনাহ হবে না।

এ কথা বলার পরপর আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন, وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ- ‘তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম হবে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (নূর ২৪/৬০)। আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন হিজাবকে বৃদ্ধা ও বয়স্ক নারীদের জন্যও উত্তম বলে ঘোষণা করেন। সুতরাং যুবতী নারীদের জন্য পর্দা করা যে কতটা আবশ্যক তা একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারব।

পর্দা নারীদের পবিত্রতা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ- ‘আর তোমরা তাঁর স্ত্রীদের নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’ (আহযাব ৩৩/৫৩)

আয়াতে আল্লাহ রাববুল আলামীন পর্দাকে মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষের পবিত্রতা বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ, যখন চোখ কোন কিছু না দেখে, তখন তার প্রতি আকৃষ্ট হয় না। আর যখন চোখ দেখে, তখন অন্তর তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে কোন কোন সময় নাও হতে পারে। এ কারণে যখন তারা নারীদের দেখবে না, তখন তাদের অন্তর পবিত্র থাকবে। তাদের মধ্যে কোন ফিৎনার আশঙ্কা দেখে যাবে না। ই না; তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তার অবসান হবে।

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ- ‘তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বল না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়’ (আহযাব ৩৩/৩২)

রাসূল (ছাঃ) বলেন,إن الله تعالى حيِيٌّ سِتِّيرٌ, يحب الحياء والستر- ‘মহান আল্লাহ লাজুক, গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা তথা পর্দা-শীলতাকে পছন্দ করেন।[2]

রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَزَعَتْ ثِيَابَهَا فِي غَيْرِ بَيْتِهَا خَرَقَ اللَّهُ عَنْهَا سِتْرَهُ- ‘যদি কোন নারী তার ঘরের বাহিরে স্বীয় কাপড় খুলে এবং সতর খুলে ফেলে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার থেকে তার কাপড় খুলে ফেলবেন’।[3]

পর্দা করা তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির পরিচায়ক :

পর্দার অপর নাম তাক্বওয়া বা আল্লাহর ভয়।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَابَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ- ‘হে আদম সন্তান! আমরা তোমাদের উপর পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি বেশভূষার উপকরণ সমূহ। তবে আল্লাহ ভীতির পোষাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (আ‘রাফ ৭/২৬)

আল্লাহ রাববুল আলামীন মুমিন নারীদেরকে সম্বোধন করে পর্দা করার নির্দেশ দেন এবং বলেন, وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ  ‘হে রাসূল! আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন। অনুরূপভাবে আল্লাহ রাববুল আলামীন অপর এক আয়াতে আরও বলেন, وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ ‘হে মুমিনদের স্ত্রীগণ!। হাদীছে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। বনী তামীম গোত্রের নারীরা একবার পাতলা কাপড় (অর্থাৎ যে কাপড়ে শরীর দেখা যায়) পরিধান করে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করল, তাদের দেখে তিনি বললেন, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তবে তোমরা যে পোশাক পরিধান করেছ, তা কোন মুমিন নারীদের পোশাক হতে পারে না। আর যদি তোমরা মুমিন না হয়ে থাক তবে তা উপভোগ করতে থাক (তাফসীর কুরতুবী ১৭/২৩১)

পর্দাই লজ্জা :

পর্দা লজ্জাবোধের প্রতীক। যাদের মধ্যে লজ্জা নাই, তাদের নিকট পর্দার কোন গুরুত্ব নাই। অথচ লজ্জাশীলতার ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ لِكُلِّ دِينٍ خُلُقًا وَخُلُقُ الإِسْلاَمِ الْحَيَاءُ- ‘প্রতিটি দ্বীনের একটি চরিত্র আছে, আর ইসলামের চরিত্র হল, লজ্জা’।[4] রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন, الْحَيَاءُ مِنَ الإِيمَانِ وَالإِيمَانُ فِى الْجَنَّةِ ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ আর ঈমানের গন্তব্য হল জান্নাত’।[5] রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন, الحياء والإيمان قُرِنا جميعاً , فإذا رُفِعَ أحدُهما, رُفِعَ الآخر- ‘লজ্জা ও ঈমান উভয়টি একটি অপরটির সম্পূরক। যদি একটি শূন্য হয়, তখন অপরটিও শূন্য হয়ে যায়’।[6]

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, كُنْتُ أَدْخُلُ بَيْتِى الَّذِى دُفِنَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِى فَأَضَعُ ثَوْبِى فَأَقُولُ إِنَّمَا هُوَ زَوْجِى وَأَبِى فَلَمَّا دُفِنَ عُمَرُ مَعَهُمْ فَوَاللَّهِ مَا دَخَلْتُ إِلاَّ وَأَنَا مَشْدُودَةٌ عَلَىَّ ثِيَابِى حَيَاءً مِنْ عُمَرَ- ‘রাসূল (ছাঃ) ও আমার পিতা আবুবকর (রাঃ)-কে যে ঘরে দাফন করা হয়েছে, সে ঘরে আমি আমার কাপড় (ওড়না) খুলে প্রবেশ করতাম, আমি মনে মনে বলতাম, এরা আমার স্বামী ও পিতা। এখানে পর্দা করার কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু যখন ওমর (রাঃ)-কে একই ঘরে দাফন করা হল, তখন ওমর (রাঃ)-এর লজ্জায় আমি সে ঘরে কাপড়কে শক্ত করে পেঁচিয়ে ও কঠিন পর্দা করে প্রবেশ করতাম’।[7]

এতে একটি কথা প্রমাণিত হয়, নারীদের জন্য পর্দা শুধু শরী‘আতের বিধানের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং পর্দা হল, নারীদের স্বভাবের সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ রাববুল আলামীন নারীদের সৃষ্টিই করেছেন লজ্জাবতী ও কোমলমতি করে। ফলে তাদেরকে তাদের স্বভাবই লজ্জা করতে অনেক সময় বাধ্য করে।

পর্দা নারীদের জন্য আত্মমর্যাদা ও সম্মানের কারণ :

আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মানের সাথে পর্দার সম্পর্ক নিবীড় ও গভীর। মানব জাতিকে আল্লাহ রাববুল আলামীন আত্মসম্মান ও মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার কারণে দেখা যায়, একজন মানুষ তার মেয়ে, বোন ও স্ত্রীদের প্রতি কোন লম্পট বা চরিত্রহীন লোকের কুদৃষ্টিকে বরদাশত করতে পারে না। তাদের সম্মানহানি হয়, এমন কোন কাজ বা কর্মকে তারা কোনক্রমেই মেনে নিতে পারে না। ইসলামপূর্ব যুগে এবং ইসলামের যুগে অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহ ও হানাহানি নারীদের ইযয্ত-সম্মান রক্ষার্থে সংঘটিত হয়েছিল। আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) বলেন, আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে, তোমাদের নারীরা বাজারে পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা ও চলাফেরা করে। এতে কি তোমরা একটুও অপমান বোধ করো না? (আহমাদ হা/১১১৮, আহমাদ শাকের ছহীহ বলেছেন)। 

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ক্ষতি :

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা আল্লাহ রাববুল আলামীনের নাফরমানী ও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্যতা। যারা আল্লাহর নাফরমানী করে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্য হয়, তারা তাদের নিজেদের ক্ষতি করে। তারা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى. ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যারা অস্বীকার করে তারা ছাড়া। ছাহাবী এ কথা শুনে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যারা অস্বীকার করে তারা কারা? রাসূল বললেন, যে আমার অনুকরণ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল, আর যে আমার নাফরমানী করল, সে অস্বীকার করল’।[8]

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা মহাবিধ্বংসী কবীরা গুনাহ :

হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, উমাইমা বিনতে রাকিকাহ রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে আসল, ইসলামের উপর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করতে। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করে বললেন, أُبَايِعُكِ عَلَى أَنْ لاَ تُشْرِكِى بِاللَّهِ شَيْئاً وَلاَ تَسْرِقِى وَلاَ تَزْنِى وَلاَ تَقْتُلِى وَلَدَكِ وَلاَ تَأْتِى بِبُهْتَانٍ تَفْتَرِينَهُ بَيْنَ يَدَيْكِ وَرِجْلَيْكِ وَلاَ تَنُوحِى وَلاَ تَبَرَّجِى تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الأُولَى. ‘আমি তোমাকে এ কথার উপর বায়‘আত করাবো, তুমি আল্লাহর সাথে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তুমি তোমার সন্তানকে হত্যা করবে না, তুমি কাউকে সরাসরি অপবাদ দেবে না, নিয়া-হা তথা মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করবে না এবং জাহেলী যুগের নারীদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না’।[9] এ হাদীছে সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতাকে কবীরা গুনাহের সাথে একত্র করা হয়েছে।

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অভিশাপ ডেকে আনে এবং আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের শেষ যুগে এমন কতক মহিলার আবির্ভাব হবে, তারা কাপড় পরিধান করবে অথচ নগ্ন, তাদের মাথার উপরিভাগ উটের সিনার মত হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ কর। কারণ তারা অভিশপ্ত’।[10]

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা জাহান্নামীদের চরিত্র :

রাসূল (ছাঃ) বলেন, صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا. ‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী হবে, যাদের আমি আমার যুগে দেখতে পাব না। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের লাঠি যা দ্বারা তারা মানুষকে পিটাবে। অপর শ্রেণী হল, কাপড় পরিহিতা নারী, অথচ নগ্ন, তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে উটের চোটের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে’।[11]

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা মুনাফেকী :

রাসূল (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ نِسَائِكُمُ الْوَدُودُ الْوَلُودُ الْمُوَاتِيَةُ الْمُوَاسِيَةُ، إِذَا اتَّقَيْنَ اللهَ، وَشَرُّ نِسَائِكُمُ الْمُتَبَرِّجَاتُ الْمُتَخَيِلَّاتُ وَهُنَّ الْمُنَافِقَاتُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْهُنَّ، إِلَّا مِثْلُ الْغُرَابِ الْأَعْصَمِ-

‘তোমাদের মধ্যে উত্তম নারী হল, যারা অধিক মহববতকারী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, ..যখন তারা আল্লাহকে ভয় করে। আর তোমাদের মধ্যে খারাপ মহিলা হল, যারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী, অহংকারী। মনে রাখবে এ ধরনের মহিলারা মুনাফেক। তারা কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একমাত্র লাল বর্ণের ঠোঁট বিশিষ্ট কাকের মত।[12]

এ ধরনের কাক একেবারেই দূর্লভ বা পাওয়া যায় না বললেই চলে। এখানে এ কথা বলার উদ্দেশ্য হল, নারীদের জাহান্নামে প্রবেশের সংখ্যা খুবই কম হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা।

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা আল্লাহর মাঝে ও বান্দার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে ও নারীদের জন্য অপমান :

রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ وَضَعَتْ ثِيَابَهَا فِى غَيْرِ بَيْتِ زَوْجِهَا فَقَدْ هَتَكَتْ سِتْرَ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ. ‘কোন নারী যদি তার স্বামীর ঘরের বাহিরে স্বীয় কাপড় খোলে, তাহলে তার মাঝে এবং আল্লাহর মাঝে যে বন্ধন ছিল তা সে ছিঁড়ে ফেলল’।[13]

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অশ্লীলতা :

নারীরা হ’ল আদতেই সতর। আর এই সতর খোলা অশ্লীলতা ও নোংরামি। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, وَإِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا قُلْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ‘আর যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। বল, নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না’(আ‘রাফ ৭/২৮)?

শয়তান মানুষকে এ ধরনের অশ্লীল বিষয়ে নির্দেশ দেয় এবং তাদেরকে অন্যায়ের প্রতি ধাবিত করে। পর্দাহীন নারীরা মূলত: আল্লাহ নয়, শয়তানেরই আনুগত্য করে। শয়তান মানুষকে অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয় এবং মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ- ‘শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৬৮)

যে নারীরা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘুরে বেড়ায়, তারা অত্যন্ত খারাপ ও ক্ষতিকর নারী। তারা ইসলামী সমাজে অশ্লীলতা ও অন্যায় ছড়ায় এবং বেহায়াপনার দ্বার উন্মুক্ত করে। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‘নিশ্চয় যারা এটা পসন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না’ (নূর ২৪/১৯)

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা শয়তানের আদর্শ :

অভিশপ্ত ইবলীসের সাথে সংঘটিত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-এর ঘটনা দ্বারা আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, আল্লাহর দুশমন ইবলীস বনী আদমের ইযয্ত ও সম্ভ্রম হনন করা, তাদের সম্মান হানি করা, তাদের হেয়পতিপন্ন ও দুর্নাম ছড়ানোর প্রতি কতটুকু লালায়িত। এমনকি ইবলীসের লক্ষ্যই হল, বনী আদমকে অপমান, অপদস্থ ও অসম্মান করা। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, يَابَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا-  ‘হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিচ্ছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে’ (আ‘রাফ ৭/২৭)

মোটকথা, ইবলীস বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার দাওয়াতের গুরু। শয়তানই নারী স্বাধীনতার শ্লোগান তুলে নারীদেরকে ঘর থেকে বের করার জন্য দায়িত্বশীল। যে সব লোক আল্লাহর নাফরমানী করে, শয়তান এ ধরনের লোকদের ইমাম। বিশেষ করে ঐ সব মহিলা যারা তাদের নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে মুসলিমদের কষ্ট দেয় এবং যুবকদের বিপদে ফেলে, শয়তান তাদের বড় ইমাম। শয়তান বনী আদমের চির শত্রু। পৃথিবীর শুরু থেকেই শয়তান মানুষকে বিপদে ফেলে আসছে। আর নারীরা হ’ল, শয়তানের জাল। শয়তান অসতী নারীদের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজকে কলুষিত করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا تَرَكْتُ بَعْدِى فِتْنَةً هِىَ أَضَرُّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ. ‘আমি আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে বড় ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাইনি’।[14]

সৌন্দর্য প্রদর্শন করা ইয়াহুদীদের আদর্শ :

নারীদের মাধ্যমে কোন জাতিকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র ও কৌশল সফলতার দাবীদার। নারীরাই হ’ল তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের বড় হাতিয়ার। ইয়াহুদীরা এ বিষয়ে সিদ্ধহস্ত ও অভিজ্ঞ। এ কারণেই রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِى إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِى النِّسَاءِ- ‘তোমরা দুনিয়াকে ভয় কর এবং নারীকে ভয় কর, কারণ বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল নারীর ফিৎনা’।[15]

তাদের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, আল্লাহ রাববুল আলামীন ছিহয়ুন গোত্রের মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের কারণে শাস্তি দেন। সিফরে আশিয়া কিতাবের তৃতীয় সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ রাববুল আলামীন ছিহয়ুন গোত্রের মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের কারণে শাস্তি দেন। অর্থাৎ তাদের থেকে তাদের সৌন্দর্যকে ছিনিয়ে নেন।

রাসূল (ছাঃ) উম্মতকে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করতে এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেন। বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে তিনি উম্মতে মুসলিমাহকে অধিক সতর্ক করেন। অথচ দুঃখের সাথে বলতে হয়, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম নারী ও পুরুষ রাসূল (ছাঃ)-এর সতর্কীকরণের বিরোধিতা করেন। রাসূল (ছাঃ) উম্মতের প্রতি যে ভবিষ্যৎবাণী রেখে গেছেন, তার প্রতিফলনই আমরা লক্ষ্য করছি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِى جُحْرِ ضَبٍّ لاَتَّبَعْتُمُوهُمْ. قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ آلْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ  فَمَنْ.‘তোমরা তোমাদের পূর্বে যারা অতিবাহিত হয়েছে, তাদের হুবহু অনুকরণ করবে; কড়া ইঞ্চি পর্যন্ত অনুকরণ করবে। এমনকি যদি তারা গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করে, তোমরাও তাদের অনুকরণ করেই সাপের গর্তে প্রবেশ করবে। ছাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, তারা কি ইয়াহুদী ও খৃস্টান? রাসূল (ছাঃ) উত্তরে বললেন, তারা ছাড়া আর কারা’? [16]

যারা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অনুকরণ করে এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নাফরমানী করে, তাদের সাথে ঐ সব অভিশপ্ত ইয়াহুদীদের কোন পার্থক্য নাই; যারা এ বলে আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে, [سمعنا وعصينا] ‘আমরা শুনলাম ও নাফরমানী করলাম’। এরা ঐ সব নারীদের থেকে কত দূরে যারা আল্লাহর নির্দেশ শোনার পর বলে, [سمعنا وعصينا] ‘আমরা শুনলাম এবং অনুকরণ করলাম’। আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআনে কারীমে এরশাদ করে বলেন, وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا ‘আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ’ (নিসা ৪/১১৫)

হেদায়াতের পথ স্পষ্ট হওয়ার পরও যদি কোন লোক গোমরাহীর পথ অবলম্বন করে এবং মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন কঠিন আযাব রেখেছেন। আখেরাতে আল্লাহ রাববুল আলামীন তাদের কঠিন শাস্তি দেবেন। আর আখেরাতের শাস্তি কত কঠিন হবে তা বর্ণনা দিয়ে বোঝানো যাবে না।

পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন নিকৃষ্ট জাহিলিয়াত :

আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআনে কারীমে এরশাদ করে বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى- ‘তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান কর এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না’ (আহযাব ৩৩/৩৩)

রাসূল (ছাঃ) জাহিলিয়াতের দাবীকে অপবিত্র ও দুর্গন্ধময় বলে অভিহিত করেন এবং আমাদেরকে তা প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ দেন। রাসূল (ছাঃ)-এর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে তাওরাতে বলা হয়, তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্ত্তকে হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্ত্তকে হারাম করেন। অনুরূপভাবে কুরআনেও এসেছে, وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ- ‘এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্ত্ত হালাল করে আর অপবিত্র বস্ত্ত হারাম করে’ (আ‘রাফ ৭/১৫৭)

জাহেলী কুসংস্কার ও নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন উভয়টি একটি অপরটির পরিপূরক। এ দু’টিই অপবিত্র ও দুর্গন্ধময়। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদের জন্য এ সবকে হারাম করেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَلاَ كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوعٌ- ‘শুনে রাখ, জাহেলী যুগের সকল কিছু আমার পায়ের তলে পিষ্ট হ’ল’।[17]

 (ক্রমশঃ)

[লেখক : শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী ]



[1]. তিরমিযী হা/১১৭৩; মিশকাত হা/৩১০৯

[2]. আবুদাউদ হা/৪০১২; মিশকাত হা/৪৪৭

[3]. আহমাদ হা/২৬৬১১; মুসতাদরাকে হাকেম হা/৭৭৮২

[4]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৮১; মিশকাত হা/৫০৯০

[5]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৮৪; তিরমিযী হা/২০০৯

[6]. আদাবুল মুফরাদ হা/১৩১৩; মুসতাদরাকে হাকেম হা/৫৮

[7]. আহমাদ হা/২৫৭০১; মুসতাদরাকে হাকেম হা/৪৪০২; মিশকাত হা/১৭৭১

[8]. বুখারী হা/৭২৮০; মিশকাত হা/১৪৩

[9]. আহমাদ হা/৬৮৫০

[10]. তিরমিযী হা/১১৭৩; মিশকাত হা/৩১০৯

[11].  মুসলিম হা/২১২৮; মিশকাত হা/৩৫২৪

[12]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৪৯

[13].  আহমাদ হা/২৫৬৬৮; ইবন মাজাহ হা/৩৭৫০

[14]. মুসলিম হা/২৭৪০; মিশকাত হা/৩০৮৫

[15]. মুসলিম হা/২৭৪২; মিশকাত হা/৩০৮৬

[16]. মুসলিম হা/২৬৬৯; মিশকাত হা/৫৩৬১

[17]. মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫



বিষয়সমূহ: নারী অধিকার
আরও