ছালাতে রাসূল (ছাঃ)-এর রাফ‘উল ইয়াদায়েন (শেষ কিস্তি)

আশরাফুল ইসলাম 191 বার পঠিত

দলীল-৪ : ছাহাবী আবু মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) বলেন,هَلْ ‌أُرِيْكُمْ ‌صَلَاةَ ‌رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلََّمَ؟ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ، ثُمَّ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ لِلرُّكُوْعِ ثُمَّ قَالَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ: هَكَذَا فَاصْنَعُوْا وَلَا يَرْفَعُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ ‘আমি কি তোমাদের রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত দেখাব না? অতঃপর তিনি তাকবীর দিলেন এবং দু’হাত উত্তোলন করলেন, আবার তাকবীর দিলেন ও রুকূর জন্য দু’হাত উত্তোলন করলেন। রুকূ হ’তে উঠার সময় বললেন সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ এবং দু’হাত উত্তোলন করলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা এভাবেই ছালাত আদায় করবে। তিনি সিজদার সময় দু’হাত উত্তোলন করেননি’।[1]

তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ ইবনে মুবারাক হাকিমী বলেন, এই হাদীছের সনদের সকল রাবী ছিক্বাহ’।[2] শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ এই হাদীছের সনদ ছহীহ বলেছেন’।[3]

লক্ষণীয় : ছাহাবী আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে তাবেঈদেরকে ছালাত শিক্ষা দেওয়ার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে ছালাত শিক্ষা দিলেন। যদি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা মানসূখ হ’ত তাহ’লে তিনি বলতেন না, তোমরা এভাবেই ছালাত আদায় করবে। বরং তিনি বলতেন, তোমরা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে না। কারণ প্রথম দিকে রাসূল (ছাঃ) করলেও পরে তা আর করেননি।

দলীল-৫ : মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহঃ) বলেন, আমি আবু হুমাইদ আস-সা‘এদী (রাঃ)-কে দশজন ছাহাবীর উপস্থিতিতে বলতে শুনেছি, যাদের মধ্যে আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) ছিলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত সম্পর্কে আমি আপনাদের চেয়ে অধিক অবগত। তাঁরা বললেন, কীভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো তাঁর অনুসরণ ও সাহচর্যের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে বেশী অগ্রগামী নন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তাঁরা বললেন, এখন আপনি আপনার বক্তব্য পেশ করুন। তিনি বললেন,كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حَتَّى يَقِرَّ كُلُّ عَظْمٍ فِيْ مَوْضِعِهِ مُعْتَدِلًا، ثُمَّ يَقْرَأُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ فَيَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ، ثُمَّ يَرْكَعُ وَيَضَعُ رَاحَتَيْهِ عَلَى

رُكْبَتَيْهِ، ثُمَّ يَعْتَدِلُ فَلَا يَصُبُّ رَأْسَهُ وَلَا يُقْنِعُ، ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ، فَيَقُولُ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতে দাঁড়ানোর সময় নিজের দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে পূর্ণরূপে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এরপর ক্বিরাআত করে তাকবীর দিয়ে রুকূতে গমনকালে স্বীয় দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তারপর রুকূতে গিয়ে দু’হাতের তালু দ্বারা হাঁটুদ্বয় দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতেন। রুকূতে তাঁর মাথা পিঠের সাথে সমান্তরাল থাকত। এরপর রুকূ হ’তে মাথা উঠিয়ে ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ বলে স্বীয় দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন...। তখন তাঁরা সকলে (উপস্থিত ছাহাবীগণ) বললেন,صَدَقْتَ هَكَذَا كَانَ يُصَلِّي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এভাবেই ছালাত আদায় করতেন’।[4]

ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীছটিকে হাসান ছহীহ বলেছেন’।[5] ইমাম খাত্ত্বাবী (রহঃ) ছহীহ বলেছেন’।[6] ইমাম নববী (রহঃ) ছহীহ বলেছেন’।[7] হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) ছহীহ বলেছেন’।[8] এছাড়াও শায়েখ শুআ‘ইব আরনাউত্ব (রহঃ), শায়েখ আলবানী (রহঃ) তাহক্বীক আবু দাউদে এই হাদীছের সনদ ছহীহ বলেছেন।

লক্ষণীয় যে, ঐ দশ জন ছাহাবীর মধ্যে ছিলেন, আবু উসাইদ, সাহল ইবনু সা‘দ, আবু হুরায়রা, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ)।[9] ভাবুন তো একবার! ১০ জন ছাহাবী রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার পক্ষে বলেছেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এভাবেই ছালাত আদায় করতেন। এর পরেও আমরা বলব? রাসূল (ছাঃ) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা ছেড়ে দিয়েছিলেন!

এই হাদীছের ব্যপারে ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেছেন,مَنْ سَمِعَ هَذَا الْحَدِيْثَ، ثُمَّ لَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ- يَعْنِي إِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ فَصَلَاتُهُ نَاقِصَةٌ ‘এই হাদীছ শোনার পরেও যে রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ হ’তে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করেনি তার ছালাত অসম্পূর্ণ’।[10] অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ) মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত রাফ‘উল ইয়াদায়েন করেছেন। তিনি কখনই তা ছেড়ে দেননি।

দলীল-৬ ‘আছেম আল-আহওয়াল (রহঃ) বলেন,رَأَيْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ كَبَّرَ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ، وَيَرْفَعُ كُلَّمَا رَكَعَ وَرَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ- ‘আমি আনাস ইবনু মালেক (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন ছালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন ও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। আর তিনি যখন রুকূ করতেন এবং রুকূ হ’তে মাথা উঠাতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন’।[11]

লক্ষণীয় : রাসূল (ছাঃ) মদীনায় আসার পর থেকে মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত দশ বছর আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) তাঁর খেদমত করেছেন’।[12] রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনের শেষদিনগুলোতেও যখন আবুবকর (রাঃ)-কে ছালাতে ইমামতি করার আদেশ করেছিলেন, তখনও আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ছিলেন। সেই দিনটি ছিল সোমবার এবং রাসূল (ছাঃ) ঐ দিনই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন’।[13] এমনকি আনাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে কবর দেওয়ার সময়ও ছিলেন’।[14] এর চেয়ে বড় দলীল আর কি হ’তে পারে? রাসূল (ছাঃ) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা ছেড়ে দিয়েছিলেন, অথচ কবরে রাখা পর্যন্ত যে ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলেন তিনি জানবেন না? আর তিনি জানার পরেও রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ হ’তে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবেন?

দলীল-৭ : আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,صَلَّيْتُ خَلْفَ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَكَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ وَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ: صَلَّيْتُ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَانَ يَرْفَعً يَدَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ- ‘আমি আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছি। তিনি যখন ছালাত শুরু করতেন, যখন রুকূ করতেন, রুকূ হ’তে মাথা উঠাতেন, তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর আবুবকর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছি, তিনি যখন ছালাত শুরু করতেন, যখন রুকূতে যেতেন এবং রুকূ হ’তে মাথা উঠাতেন তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন’।[15]

তাহক্বীক : এই হাদীছের সকল রাবীকে ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) ছিক্বাহ বলেছেন’।[16] এছাড়াও ইমাম যাহাবী[17] ও ইমাম ইবনু হাজার আস-ক্বালানী (রহঃ) এই হাদীছের সকল রাবীকে ছিক্বাহ বলেছেন’।[18] এই হাদীছটিকে শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ[19] শায়খ শো‘আইব আরনাঊত[20] শায়খ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী[21] ছহীহ বলেছেন।

লক্ষ্যণীয় : আবুবকর (রাঃ) সেই ছাহাবী, যিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সবচেয়ে কাছের মানুষ। যিনি রাসূল (ছাঃ) কতৃক নির্ধারিত ইমাম। রাসূল (ছাঃ)-এর জীবিত থাকাবস্থায় তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর স্থলে ছাহাবীদের নিয়ে ইমামতি করেছেন’।[22] আর তিনিও জানবেন না রাসূল (ছাঃ)-এর রাফ‘উল ইয়াদায়েন ছেড়ে দেওয়ার কথা?

দলীল-৮ : আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেম (রহঃ) বলেন, ‘একদা মানুষেরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মসজিদে ছালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাদের মাঝে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) এসে বললেন, তোমরা আমার দিকে তোমাদের মুখ ফিরাও। আমি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত আদায় করব। অর্থাৎ পড়িয়ে দেখাব। রাসূল (ছাঃ) যেভাবে পড়তেন আবার আমাদের যেভাবে পড়ার জন্য হুকুম দিতেন। তারপর ওমর (রাঃ) ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন এবং দু’হাত কাঁধ বরাবর উত্তোলন করলেন এবং বললেন, আল্লাহু আকবার। তারপর তার দৃষ্টিনত করলেন। এরপর তিনি দু’হাত উত্তোলন করলেন কাঁধ বরাবর, অতঃপর তাকবীর বলে রুকূতে গেলেন। তিনি আবার দু’হাত উত্তোলন করলেন যখন রুকূ হ’তে দাঁড়ালেন। এভাবে ছালাত আদায়ের পর তিনি মানুষদের বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এভাবেই আমাদের ছালাত পড়াতেন’ (هَكَذَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُصَلِّي بِنَا) ।[23]

তাহক্বীক : সুনানে তিরমিযীর ব্যাখ্যাকারী ইমাম ফাতহুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ (মৃ. ৭৩৪ হি.) বলেছেন, এই হাদীছের সকল রাবী ছিক্বাহ’।[24] ইমাম আবুল ফায়েয আহমাদ ইবনু ছিদ্দীক আল-গুমারী (মৃ. ১৩৮০ হি.) এই হাদীছের সকল রাবীকে ছিক্বাহ বলেছেন’।[25] ইমাম হাকেম (রহঃ) এই হাদীছকে ছহীহ বলেছেন’।[26] এছাড়াও যুবাইর আলী যাঈ (রহঃ) ছহীহ বলেছেন’।[27]

দলীল-৯ : আলী ইবনু আবু তালিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ كَانَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ الْمَكْتُوْبَةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَيَصْنَعُ مِثْلَ ذَلِكَ إِذَا قَضَى قِرَاءَتَهُ وَأَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ وَيَصْنَعُهُ إِذَا رَفَعَ مِنَ الرُّكُوْعِ وَلَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِيْ شَىْءٍ مِنْ صَلَاتِهِ وَهُوَ قَاعِدٌ وَإِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ كَذَلِكَ وَكَبَّرَ-রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফরয ছালাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে তাঁর দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি ক্বিরাআত শেষে রুকূতে গমনকালে এবং রুকূ হ’তে উঠার সময়ও অনুরূপ করতেন। তবে বসে ছালাত আদায়কালে তিনি এরূপ হাত তুলতেন না। তিনি দুই সিজদার পর (অর্থাৎ দুই রাকা‘আত পর)[28] দাঁড়ালে দু’হাত অনুরূপ উঠিয়ে তাকবীর বলতেন’।[29]

হাদীছটির তাহক্বীক : আহমাদ ইবনু হাম্বল হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন’।[30] ইমাম তিরমিযী হাসান ছহীহ বলেছেন’।[31] শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব হাদীছটির সনদ হাসান বলেছেন’।[32] ড. মুস্তফা আল-আজমী হাসান বলেছেন’।[33] আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির ছহীহ বলেছেন’।[34]

লক্ষ্য করুন : আলী ইবনু আবু তালেব (রাঃ) শুধু রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীই ছিলেন না, বরং আপন চাচাত ভাই ও জামাতা। এবিষয়টি কারো অজানা নয়। এমনকি বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন তিনিই।[35] রাসূল (ছাঃ) জীবনের শেষ সময়ের অসুস্থতায় যার কাধে ভর দিয়ে আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে গিয়েছিলেন।[36] ভাবুন তো সেই আলী (রাঃ) সাক্ষ্য দিয়েছেন, রাসূল (ছাঃ) রুকূতে যাওয়ার সময় ও রুকূ হ’তে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। তাহ’লে রাসূলুললাহ (ছাঃ) রাফ‘উল ইয়াদায়েন ছাড়লেন কখন?

দলীল-১০ : আবু যুবায়ের হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,أَنَّ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ، كَانَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ وَيَقُوْلُ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ- ‘জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) যখন ছালাত শুরু করতেন, তখন তার উভয় হাত উঠাতেন। তিনি যখন রুকূ করতেন এবং রুকূ থেকে তার মাথা উঠাতেন, তখনও অনুরূপ করতেন। তিনি বলতেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এরূপ করতে দেখেছি’।[37]

তাহক্বীক্ব : সুনান ইবনু মাজাহর বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার মুহাম্মাদ আল-আমীন আল-হারারী (রহঃ) হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন’।[38] শো‘আইব আরনাউত্ব (রহঃ) তাহক্বীক্ব ইবনে মাজাহতে হাসান বলেছেন’।[39] হানাফী ফক্বীহ শায়খ নূরুদ্দীন সিন্ধী (রহঃ) এই হাদীছের সকল রাবীকে ছিক্বাহ বলেছেন’।[40]

লক্ষ্যণীয় : জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর মাত্র তিনদিন পূর্বেও তার পাশে ছিলেন’।[41] তাহ’লে রাসূল (ছাঃ) রাফ‘উল ইয়াদায়েন বাদ দিলেন কবে? কখন তা মানসূখ হ’ল? বরং রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে ছাহাবী জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) রুকূতে যাওয়ার সময়ে এবং রুকূ হ’তে উঠার সময়ে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।

দলীল-১১ : আবু হামযাহ (রহঃ) বলেন,رَأَيْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ، وَإِذَا رَكَعَ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ- ‘আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন ছালাত শুরু করতেন, রুকূ করতেন ও রুকূ হ’তে মাথা উঠাতেন তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’।[42]

রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর সময়ে ইবনু আববাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর পাশেই ছিলেন।[43] তাহ’লে এটা স্পষ্ট যে, ইবনু আববাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে দেখেন, যদি না দেখতেন তাহ’লে তাঁর মৃত্যুর পরে ইবনু আববাস (রাঃ) রুকূতে যাওয়ার সময় রুকূ হ’তে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না।

দলীল-১২ : আব্দুর রহমান ইবনুল আ‘রায আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেছেন,‌أَنَّهُ ‌كَانَ‌‌ ‌إِذَا ‌كَبَّرَ ‌رَفَعَ ‌يَدَيْهِ، ‌وَإِذَا ‌رَكَعَ، ‌وَإِذَا ‌رَفَعَ ‌رَأْسَهُ ‌مِنَ ‌الرُّكُوْعِ- ‘নিশ্চয়ই আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন তাকবীর দিতেন, যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ হ’তে মাথা উঠাতেন তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’।[44]

লক্ষ্যণীয় : আবু হুরায়রা (রাঃ) নিজেই বলতেন, তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত সম্পর্কে সবার থেকে ভাল জানেন’।[45] একদা তিনি ছালাত শেষ করে বলেন,وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنِّيْ لأَقْرَبُكُمْ شَبَهًا بِصَلاَةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِنْ كَانَتْ هَذِهِ لَصَلاَتَهُ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا- ‘যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! তোমাদের মধ্য হ’তে আমার ছালাত আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। দুনিয়া হ’তে বিদায় নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নবী করীম (ছাঃ)-এর ছালাত এ রকমই ছিল’।[46]

সুতরাং সুধী পাঠকের নিকট এটি নিশ্চয়ই সুস্পষ্ট যে, রাসূল (ছাঃ) কোনদিনই রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা ছাড়েননি। আর তা মানসূখও হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।-আমীন!

আশরাফুল ইসলাম

  [দক্ষিণ শালিকা, মেহেরপুর]


[1]. দারাকুৎনী হা/১১২৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৩।

[2]. ফাতাওয়া নাবিইঈ আছহাবিল জামে‘ ২/২৫০ পৃ.।

[3]. নুরুল আইনাইন ১১৮ পৃ.।

[4]. আবুদাউদ হা/৭৩০ ‘ছালাত শুরু করার বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ।

[5]. তিরমিযী হা/৩০৪ ‘রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের বৈশিষ্ট্য’ অনুচ্ছেদ।

[6]. মা‘আলিমুস সুনান ১/১৯৪ পৃ.।

[7]. খুলাসাতুল আহকাম ১/৩৫৩।

[8]. তাহযীব ফি সুনানি আবুদাঊদ ২/৪১৬ পৃ.।

[9]. জুযউ রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/৫; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৫৮৯।

[10]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৫৮৯।

[11]. জুযউ রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৯।

[12]. তিরমিযী হা/৩৮৩৩, জুবায়ের আলী জাঈ (রহঃ) ছহীহ বলেছেন।

[13]. বুখারী হা/৬৮০ ‘আযান’ অধ্যায়-১০; ‘বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামাতের অধিক যোগ্য’ অনুচ্ছেদ-৪৬।

[14]. বুখারী হা/৪৪৬২ ‘মাগাযী’ অধ্যায়-৬৪; ‘নবী করীম (ছাঃ)-এর রোগ ও তাঁর ওফাত’ অনুচ্ছেদ-৮৩।

[15]. বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা হা/২৬২০ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৩ ‘রুকূতে যাওয়ার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা’ অনুচ্ছেদ-১৭৮।

[16]. প্রাগুক্ত।

[17]. আল-মুহাযযাব ২/৪৯ পৃ.।

[18]. আত-তালখীছুল হাবীর, ১/২১৯ পৃ.।

[19]. নুরুল আইনাইন ৪২৫ পৃ.।

[20]. আহমাদ, তাহক্বীক্ব শু‘আইব আরনাঊত হা’২৩০৮-এর টিকা দ্রষ্টব্য।

[21]. আবকারুল মিনান ৭২৭ পৃ.।

[22]. বুখারী হা/৬৮০ ‘আযান’ অধ্যায়-১০; ‘বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামাতের অধিক যোগ্য’ অনুচ্ছেদ-৪৬।

[23]. বায়হাক্বী, আল-খিলাফিয়াত হা/১৬৬৮।

[24]. আন-নাফহুশ শাযী ফি শারহ সুনানুত তিরমিযী ৪/৩৯১ পৃ.।

[25]. আল-হিদায়া ফি তাখরিজি আহাদিছিল বিদায়া ৩/১০৯ পৃ.।

[26]. আল-বাদরুল মুনীর ৩/৫০১ পৃ.।

[27]. নূরুল আইনাইন ১৬৩-১৬৪ পৃ.।

[28]. বদরুদ্দীন আইনী হানাফী বলেন, দুই রাক্ব‘আত পর যখন উঠতেন, তখন হাত উঠাতেন। সুনানু আবুদাউদ লিল আইনী ৩/৩৬৭ পৃ.।

[29]. আবুদাউদ হা/৭৪৪; তিরমিযী হা/৩৪২৩।

[30]. ইমাম জাইলাঈ হানাফী (রহঃ), নাসবুর রাইয়া ১/৪১২ পৃ.।

[31]. তিরমিযী হা/৩৪২৩ ‘রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত দো‘আ’ অধ্যায়।

[32]. তাহক্বীক্ব আবুদাউদ লিল আরনাঊত্ব, হা/৭৪৪।

[33]. ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, তাহক্বীক্ব লিল আজমী, হা/৫৮৪।

[34]. তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ লিশ শাকির হা/৭১৭।

[35]. ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, ৭/২৩৯ পৃ.।

[36]. বুখারী হা/১৯৮।

[37]. ইবনু মাজাহ হা/৮৬৮।

[38]. শারহু ইবনু মাজাহ লিল হারারী, ৫/৫১৮ পৃ.।

[39]. তাহক্বীক্ব সুনানু ইবনু মাজাহ লিল আরনাউত্ব হা/৮৬৮।

[40]. হাশিয়াতুস সিন্ধি লিস সুনানি ইবনু মাজাহ ১/২৮৪।

[41]. মুসলিম হা/২৮৭৭।

[42]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, মুহাক্কিক্ব আবু আওয়ামাহ হা/২৪৪৬; মুছান্নাফ জামিউ‘ লিলফাতওয়া ৫/৮১ পৃ;।

[43]. বুখারী হা/৪৪৩২, ৪৪৪৩, ৪৪৪৪, ৪৪৫৪।

[44]. জুযউ রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৮।

[45]. আল মুখাল্লাছিয়াত হা/১২২৯ সনদ হাসান।

[46]. বুখারী হা/৮০৩।



বিষয়সমূহ: ছালাত
আরও