বিশ্ব বিজয়ী আদর্শ ইসলাম

মুযাফফর বিন মুহসিন 804 বার পঠিত

আদর্শ চির ভাস্বর, চির অম্লান। যেকোন দেশ ও জাতি আদর্শকে সামনে রেখে গড়ে উঠে। যতদিন আদর্শের উপর অটল থাকে ততদিন ঐ জাতি সমুন্নত থাকে। যখন আদর্শের পতন ঘটে তখন সর্বক্ষেত্রে পতন ঘটে।

পৃথিবীর পরীক্ষিত দিগ্বিজয়ী আদর্শ হল ইসলাম, যা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করেছে। বর্তমানে মতবাদ বিক্ষুব্ধ এই পৃথিবী সন্ত্রাস আর নৈরাজ্যের অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়েছে। কারণ, কোন দর্শনই বিশ্ব মানবতাকে প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারছে না। ফলে নিত্য-নতুন দর্শনের আবির্ভাব হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে পতনও হচ্ছে। কোন মতবাদই স্থায়ী হতে পারেনি। এভাবে যত মতবাদই সৃষ্টি হোক তার ধ্বংস সুনিশ্চিত। ইসলামই একমাত্র চিরস্থায়ী আদর্শ।

আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল উক্ত মহাসত্যের আহবান মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। তাতে নিরস্ত্র ইবরাহীমের আদর্শের নিকট ক্ষমতাধর নমরূদ ও আযরের পতন হয়েছে। ইবরাহীম (আঃ) চির সম্মানিত হয়েছেন। নমরূদ-আযর চির লাঞ্ছিত-অপদস্ত হয়েছে। দোর্দন্ড প্রতাপশালী শাসকগোষ্ঠী ফেরআউন, হামান, কারূণ অনন্তকালের জন্য অভিশপ্ত হয়েছে, হয়েছে চির অপমানিত। পক্ষান্তরে আদর্শমন্ডিত নিঃস্ব মূসা (আঃ) পেয়েছেন বিশ্ববিজয়ের মর্যাদা খচিত মুকুট। আরব সম্রাট আবু জাহল, আবু লাহাবের নষ্ট মস্তক ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বহিষ্কৃত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আদর্শের সামনে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে ইসলামকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার জন্য। যদিও মুশরিকরা তা অপসন্দ করে (ছফ ৯)। আল্লাহ তা‘আলার এই চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত প্রলম্বিত (ছহীহ মুসলিম হা/৭৪৮৩)

উক্ত বাণীই প্রমাণ করে পৃথিবীতে যে মতবাদেরই আবির্ভাব হোক তার উপরই ইসলাম বিজয়ী হবে। ইসলামই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। রোম সম্রাটের নিকট আবু সুফিয়ান মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করলে তিনি বলেন, ‘তুমি যা বলছ তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে অতি সত্বর মুহাম্মাদ (ছাঃ) আমার দুই পায়ের নীচের স্থানটুকুরও মালিক হয়ে যাবে। ... আমি যদি তাঁর নিকট থাকতাম তবে তাঁর পদযুগল ধুয়ে দিতাম (বুখারী হা/৩)। উক্ত বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে এবং রোম সম্রাটের সিংহাসন ইসলামের করতলগত হয়েছে।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, পৃথিবীর এমন কোন মাটির ঘর ও তাঁবুও অবশিষ্ট থাকবে না, যেখানে ইসলামের কালেমা প্রবেশ করবে না (আহমাদ হা/২৩৮৬৫, সনদ ছহীহ)। অর্থাৎ ইসলাম সর্বত্র বিজয় লাভ করবে। অন্যত্র তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে সমগ্র পৃথিবীকে একত্রিত করে দেখালেন। আর আমি তার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখলাম। অতি সত্বর আমার উম্মতের শাসন ঐ সমস্ত এলাকা পর্যন্ত পৌঁছানো হবে যতদূর পর্যন্ত এলাকা আমাকে দেখানো হয়েছে (ছহীহ মুসলিম হা/৭৪৪০)

মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে নব্য মতবাদপুষ্ট ব্যক্তিরা ইসলামকে ভয় পায়। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ, পুঁজিবাদ, উদারতাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি মতবাদের দুর্গন্ধে মানব জীবন অতিষ্ঠ। অর্থনৈতিক মন্দা, পারমাণবিক বোমার অশনি সংকেত, ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া, সাম্রাজ্যবাদী জিঘাংসা, ভূগর্ভের সম্পদ লুণ্ঠন, মানব হত্যার রেকর্ড বিশ্ববাসীকে প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত করেছে। উক্ত মতবাদগুলো এখন ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত পচা ময়লার ভাগ্যবরণ করেছে। সেজন্য তথাকথিত বিশ্বমোড়ল রাষ্ট্র আমেরিকা-বৃটেনে মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাবতীয় ধর্ম, দর্শন ও থিউরী পশ্চাতে নিক্ষেপ করে ইসলামের নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিচ্ছে। ফালিল্লাহিল হামদ। উক্ত বাস্তবতার কারণে নতুন কৌশল অবলম্বন করে মূল ইসলামকে তারা বিকৃত করে মুসলিম জনসাধারণের সামনে পেশ করেছে, মুসলিম উম্মাহর মাঝে ফাটল সৃষ্টি করছে। সে সাথে মডারেট ইসলামপন্থীদের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ। এমনকি সাম্রাজ্যবাদী উক্ত রাষ্ট্রগুলোতে তাদের যাতায়াতে কোন বাধা নেই।

ইসলাম বিরোধী চক্রগুলো নানা অপতৎপরতা চালালেও প্রকৃত ইসলামের অনুসারী সালাফী ও আহলেহাদীছদেরকে ঠিকই তারা ভয় পায়। ইসলাম বিদ্বেষী আধুনিক গবেষকরা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, Over the long term, the social costs of the spread of the salafi movement to the masses would be very high. ‘দূর ভবিষ্যতে সালাফী দাওয়াতের প্রসারের সামাজিক মূল্য জনগণের মাঝে অতি উচ্চে অবস্থান নিবে’। কিন্তু কেন? অথচ তাদের কোন অস্ত্র নেই, নেই কোন সম্পদ ও লোকবল। কারণ হল, তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে বারবার পরীক্ষিত ঔষধ বিশ্ববিজয়ী আদর্শ ইসলাম। তারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত প্রকৃত ইসলামের অনুসারী। এই আদর্শের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।

বিজয়ের জাজ্বল্য প্রমাণ এদের মাঝেই রয়েছে। বৃটিশ-বেনিয়া গোষ্ঠী উপমহাদেশের স্বাধীনতা হরণ করে হত্যা-লুণ্ঠন করলেও অবশেষে টিকতে পারেনি। সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভী, শাহ ইসমাঈল, তিতুমীর, এনায়েত আলী, বেলায়েত আলী আহলেহাদীছ সিপাহসালারদের গড়ে তোলা আদর্শিক আন্দোলনের মুখে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছে।

অতএব ইসলাম বিশ্ববিজয়ী আদর্শ তাতে সন্দেহ নেই। মানবতার শেষ আশ্রয়স্থল এখানেই। আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত ইসলামকে বুঝার ও তার উপর দৃঢ় থাকার তাওফীক দান করুন এবং ইসলাম, মুসলিম উম্মাহ ও মুসলিম ভূখন্ডকে হেফাযত করুন- আমীন!!



বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
আরও