শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ)-এর জানাযায়

ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব 1299 বার পঠিত

গত ১০ নভেম্বর’১৩ সকাল ৭টায় রাওয়ালপিন্ডির এক হাসপাতালে মারা গেলেন ‘পাকিস্তানের আলবানী’ খ্যাত সমকালীন প্রসিদ্ধ আহলেহাদীছ বিদ্বান মাওলানা যুবায়ের আলী যাই (৫৬)। গত ১৯ সেপ্টেম্বর’১৩ নিজ বাড়িতে হঠাৎ উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে তাঁর শরীরের একপাশ অসাড় হয়ে পড়ে এবং ব্রেন হেমোরেজে আক্রান্ত হয়ে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। অতঃপর তাঁকে ইসলামাবাদের ‘আল-শিফা ইন্টারন্যাশনাল’ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। আইসিইউতে তাঁর সঙ্গীন অবস্থার কথা জেনে গত ৯ অক্টোবর সন্ধায় আমি হাসপাতালে যাই। তখন তিনি পুরোপুরি অচেতন অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। সেখানে আব্দুল বাছীর ভাইসহ ইসলামাবাদের বেশ কয়েকজন আহলেহাদীছ ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ও পরিচয় হয়েছিল। উনার ভাগ্নে হাফিয ভাই এবং ছোট ছেলে তাহেরকে নিয়ে আমরা একসাথে কয়েকজন সে রাতে হাসপাতাল ক্যান্টিনে রাতের খাবার খেয়েছিলাম। ডাক্তারদের আশ্বাস, আত্মীয়-স্বজনের প্রত্যয় দেখে তখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছিল তিনি হয়ত দ্রম্নতই সেরে উঠবেন। পরবর্তীতে মাঝেমধ্যেই উনার খোঁজখবর নিতাম উনার ভাগ্নের কাছ থেকে। মাঝে শুনলাম উনাকে রাওয়ালপিন্ডি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। গত ১০ নভেম্বর হোস্টেল ক্যাফেটেরিয়ায় সকালের নাস্তা করতে বসেছি। হঠাৎ এক ভাইয়ের কাছে সংবাদ পেলাম শায়খ আর নেই। সমস্ত মন-মগজ জুড়ে একটা আফসোসের ঝড় বয়ে গেল। শায়খের কাছ থেকে ইলমী ইস্তাফাদা নেয়ার ইচ্ছা ছিল, সে সুযোগটা আর হল না।

পাকিস্তানের আসার পূর্বে শায়খ যুবায়ের আলী যাইয়ের ব্যাপারে খুব বেশী জানা ছিল না। ল-নের তামীম ভাইয়ের মাধ্যমে তাঁর একটি বইয়ের ইংরেজী অনুবাদ পেয়েছিলাম, যার বিষয়বস্ত্ত ছিল আহলেহাদীছ সম্পর্কে পূর্ববর্তী ৫০ জন আলেমের মন্তব্য। এই বইটির মাধ্যমে সর্বপ্রথম তাঁর সম্পর্কে জানার সূত্রপাত হয়। পাকিস্তানে আসার পর দেখলাম তাঁর খ্যাতি এবং প্রসিদ্ধি কেবল আহলেহাদীছদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেওবন্দী ও ব্রেলভীরাও তাঁকে যথেষ্ট মেপে চলে। শায়খের যুক্তিনিষ্ঠ বলিষ্ঠ বক্তব্য ও লেখনীর সামনে দেওবন্দী, ব্রেলভীদের কোন জবাব ছিল না। তিনি রাফঊল ইয়াদায়েন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে যে বইটি লিখেছেন, তার জবাব এ পর্যস্ত পাকিস্তানের কোন হানাফী আলেম দিতে পারেননি। যদিও একটা জিনিস খারাপ লাগছিল, আমাদের ভার্সিটির আহলেহাদীছ ছাত্রদের যে কয়জনের সাথেই কথা বলেছি, তাদের কেউই শায়খ সম্পর্কে খুব একটা ইতিবাচক ধারণা রাখে না। আকারে ইঙ্গিতে তারা যেটা বোঝাতে চাইল, শায়খ কিছুটা যাহেরী মতবাদপন্থী, অর্থাৎ কুরআন-হাদীছ থেকে বিধান ইস্তিমবাতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি খুবই আক্ষরিক। তিনি যে কঠোর উছূল মোতাবেক তাখরীজ করেন, তা মুহাদ্দিছীনের নীতিমালার সাথে সার্বিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি ফিলিস্তীনী বংশদ্ভূত জনৈক হাদীছ গবেষক আবুল ওয়ালীদ খালেদের সাথে আমার থিসিস নিয়ে একদিন দীর্ঘ আলাপ করছিলাম, কথা প্রসঙ্গে তিনিও শায়খ সম্পর্কে মন্তব্য করলেন যে, ‘আমি উনাকে বহুদিন পূর্ব থেকে জানি। আমরা এক সাথেই করাচীর প্রখ্যাত আহলেহাদীছ শায়খ বদীউদ্দীন শাহ রাশেদী (১৯২৫-১৯৯৬ইং)-এর কাছে হাদীছ পড়েছি। আমি যতটুকু তাকে জানি তিনি হাদীছের মূলনীতি আরোপে খুব কঠোর ছিলেন। ফলে তাঁর অবদান যেরূপ মূল্যায়িত হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি’। একদিন আব্দুল বাছীর ভাইকে এ কথা জানাতেই উনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন, ‘যারা এ ধরণের কথা বলেছে, তারা হয় জামায়াতপন্থী আহলেহাদীছ কিংবা জঙ্গিবাদী, অথবা শায়খকে তারা ভালভাবে জানে না’। তবে আমার যেটা মনে হয়েছে, তাঁর প্রতি অনেকের এই প্রচ্ছন্ন অবহেলার পিছনে শায়খের ‘একলা চল’ নীতি বা কোন আহলেহাদীছ সংগঠন বা আলেমের সাথে সম্পৃক্ততা না রাখাটা বোধহয় বড় একটা কারণ হতে পারে। যতদূর জেনেছি, তিনি সংগঠনভিত্তিক কার্যক্রমকে সমর্থন করতেন না অন্যদিকে প্রচলিত কিছু কিছু মাসআলার ব্যাপারে তাঁর কঠোরতার কারণে তিনি অনেক আহলেহাদীছ আলেমেরই বিরাগভাজন হয়েছিলেন।   

সবমিলিয়ে কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, হাদীছের গবেষণায় শায়খের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর নিয়তে কোন ক্রটি ছিল না। ছিল না ইখলাছের ঘাটতি। নিজের সবটুকু দিয়ে নিজ বাসভবনে তিনি যে বিরাট লাইব্রেরী গড়ে তুলেছিলেন এবং বহির্জগতের সকল প্রকার ব্যস্ততাকে দূরে ঠেলে দিয়ে কেবল ইলমী খেদমতে যেভাবে আকণ্ঠ ডুবে ছিলেন, তা সুস্পষ্টতই একজন সত্যিকার মুজতাহিদ ও মুখলিছ আলেমের পরিচয় বহন করে। শায়খের ভাগ্নে বলছিলেন, তিনি সব কাজেই সালাফে ছালেহীনের নীতি অনুসরণের চেষ্টা করতেন। যেমন কোন যরূরী বই-পুস্তকের সন্ধান পেলে দূরত্ব যতই হোক, তিনি নিজেই সশরীরে উপস্থিত হয়ে বইটি নিয়ে আসতেন। কাউকে সেটা আনার জন্য পাঠাতেন না বা পোস্ট অফিসেরও সাহায্য নিতেন না। তিনি কোন কাজে লেগে গেলে শেষ না করা পর্যন্ত ছাড়তেন না। তাই কিছুটা খামখেয়ালীপনাও করে ফেলতেন। যেমন একবার নাকি তিনি ইংরেজীতে মাস্টার্স করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তাই একটা ইংরেজী ডিকশনারী কিনে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি মুখস্থ করেছিলেন। তাঁর মুখস্থ শক্তির বিবরণ দিতে যেয়ে গুজরানওয়ালার ফাহীম সালাফী ভাই বলছিলেন, শায়খকে কোন হাদীছ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাদীছটি পূর্ণ ইসনাদসহ বলে দিতে পারতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি যে ব্রেন হেমোরেজে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এর পিছনেও ব্রেনের এই অতিরিক্ত পরিশ্রম একটা ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।                   

শায়খের মৃত্যুর খবর জেনে সাথে সাথেই আব্দুল বাছীর ভাইকে ফোন দিলাম। জানতে পারলাম শায়খের জানাযা হবে রাত ৮টায় তাঁর নিজ গ্রাম হাযরোতে। রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনের অন্তর্ভুক্ত এটোক যেলার এক প্রান্তে অবস্থিত তাঁর গ্রাম। ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ৮০ কিঃ মিঃ উত্তর-পন্ডিমে। এখানেই তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন এবং গবেষণাকর্ম চালিয়েছেন। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে আব্দুল বাছীর ভাই তাঁর গাড়ি নিয়ে আসলেন আমার হোস্টেলে। এক সাথে আমরা ৪ জন রওনা দিলাম হাযরোর উদ্দেশ্যে। সহযাত্রীরা ছিলেন গুজরানওয়ালার ফাহীম সালাফী ভাই (রাওয়ালপিন্ডির ইসলামী গবেষণা সংস্থা আইআরসি’র পরিচালক) এবং হাশেম ভাই (আফগানিস্তানের কুন্দুজ প্রদেশের খারুটি যেলার নাহরে জীহূন তথা আমুদরিয়ার তীরস্থ এক প্রত্যন্ত গ্রামের অধিবাসী, বর্তমানে আমাদের ভার্সিটিতেই এমএস করছেন)। পেশাওয়ার মটরওয়ে ধরে প্রায় সোয়া ঘন্টার ড্রাইভ। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি ঘন্টায় ১২০-১৩০ কিঃ মিঃ গতিতে চলছে। ৮ লেনের চওড়া সুপ্রশস্ত রাস্তাটি চলে গেছে সরাসরি পেশাওয়ার পর্যস্ত। শেরশাহ কর্তৃক গ্রান্ড ট্রাংক সড়ক নির্মিত হওয়ারও বহু পূর্বে এই রাস্তাটি সুপ্রাচীন কাল থেকে মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ হিসাবে বিবেচিত ছিল। ২০০৭ সালে বিশ্বমানের এই আধুনিক মটরওয়েটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষ-পল্লববিহীন প্রস্তরাকৃতির পাহাড়ের রাজত্ব। উঁচু-নিচু পাহাড়ী রাস্তা থেকে বহু দূরে পাহাড়ের পাদদেশের উপত্যকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাড়ি-ঘর দেখা যায়। প্রাচীন পৃথিবীর একেকটা স্কেচ যেন সস্নাইড শোর মত ভেসে আসছে চোখের সামনে। লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য এর চেয়ে আদর্শ পরিবেশ আর হতে পারে না। তবে আমাদের দৃষ্টিসীমায় তখন ভ্রমণের চঞ্চলতা নেই। নেই নতুন কিছু দেখার মুগ্ধতা। বিষণ্ণ আলাপচারিতায় তখন কেবলই শায়খের জীবন ও কর্ম প্রসঙ্গ। পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করে শায়খের দীর্ঘদিনের সাথী ফাহীম ভাই, আব্দুল বাছীর ভাইদের চোখ বারবারই ভিজে আসছে। আমি শায়খ সম্পর্ক তাঁদের দেয়া তথ্যগুলো টুকে নিচ্ছিলাম কাগজে। দুপুর আড়াইটার দিকে এটোক যেলার হাযরো ইউনিয়নের পীরদাদ গ্রামে পৌঁছলাম।

শায়খের আটপৌরে অনাড়ম্বর বাড়ীর সাথেই মসজিদ। পেশাওয়ারসহ নিকটস্থ অঞ্চলের অনেক লোকজন তখন জানাযার উদ্দেশ্যে চলে এসেছে। পাড়া-প্রতিবেশী মহিলারাও ভিড় করেছে অন্দরমহলে। আমরা গিয়ে মসজিদে বসলাম এবং শায়খের পিতা মুজাদ্দাদ খান, ছেলে তাহের ও ভাগ্নে হাফিযের সাথে কথা বললাম। ক্রন্দনরত ছেলেকে সান্তবনা দিলাম। আছরের ছালাতের পর পেশাওয়ারের প্রখ্যাত আহলেহাদীছ আলেম আব্দুল আযীয নূরিস্তানী (মাদরাসাতুল আছারিয়ার প্রিন্সিপ্যাল) ও রাওয়ালপিন্ডির আব্দুল হামীদ আযহার (খত্বীব, মসজিদে মুহাম্মাদী), সামসাদ সালাফী, পেশাওয়ারের ‘তাহরীকে শাবাব সালাফিয়া’র প্রধান রূহুল্লাহ তাওহীদী প্রমুখ আহলেহাদীছ নেতৃবৃন্দ এসে উপস্থিত হলেন। সন্ধ্যার পূর্বে আব্দুল আযীয নূরিস্থানীর সাথে সাক্ষাৎ ও পরিচয় হল। আমার থিসিসের বিষয়বস্ত্ত শুনে উনি অনেক দো‘আ করলেন এবং পেশাওয়ারে উনার মারকায লাইব্রেরীতে আসার জন্য বললেন। পরে উনার দুই ছেলে উমার ও উমায়ের এবং ‘তাহরীকে শাবাব সালাফিয়া’র প্রধান মাওলানা রূহুল্লাহ তাওহীদীর সাথেও পরিচয় হ’ল।

মাগরিবের পর আগত ওলামায়ে কেরাম বক্তব্য রাখলেন। সবার আবেগঘন বক্তব্যে যখন মসজিদের মুছল্লীদের চোখ অশ্রুসিক্ত, তখন শেষ বক্তা হিসাবে কথা বললেন শায়খ আব্দুল আযীয নূরিস্তানী। তিনি বললেন, ‘আমাদের আলোচনাগুলো ‘রিছা’ বা শোকের মাতমের মত হয়ে যাচ্ছে। এটা সুন্নাতী তরীকার বিরোধী। আপনারা বরং তাঁর রেখে যাওয়া গ্রন্থাবলী জনগণের মাঝে বেশী করে প্রচার করুন। এতেই তাঁর প্রকৃত মূল্যায়ন হবে’। রাত ৮টায় জানাযার পূর্বে প্রায় ১ কিলোমিটার পথ লাশের খাটিয়া বহনের জন্য সবার মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হল। পালা করে প্রায় সকলেই শায়খের খাটিয়া বহন করে যেন শায়খের শেষ স্পর্শটুকু পেতে চাইছিল। সুযোগ পেয়ে আমরাও কিছুদূর বহন করলাম। ঠিক ৮টার সময় পীরদাদ বাজারের পার্শ্বস্থ বিশাল মাঠে জানাযার ছালাত শুরু হল। পেশাওয়ার, ইসলামাবাদ, লাহোর, সারগোদা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে প্রায় ১০ হাযার লোক জানাযায় অংশগ্রহণ করলেন। ইমামতি করলেন শায়খেরই শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হামীদ আযহার। এছাড়া লাহোরের খ্যাতনামা বিদ্বান ও লেখক হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ, বিশিষ্ট আলেম শায়খ মুবাশ্বির আহমাদ রববানী, শায়খ ইয়াহইয়া আরীফীসহ আরো অনেক আহলেহাদীছ আলেম-ওলামা উপস্থিত ছিলেন। ছালাতের দাঁড়ানোর পর লক্ষ্য করলাম বেশ পিছনের দিকে ড. ফযলে এলাহী যহীর এবং ড. সুহায়েল আহমাদ এসে দাঁড়িয়েছেন। জানাযার পর শায়খকে এক নযর দেখার জন্য মানুষের মধ্যে প্রচ- হুড়োহুড়ি সৃষ্টি হল। তবে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কঠোর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। জানাযার পর রাত বেশী হয়ে যাওয়ায় আমরা আর অপেক্ষা করলাম না। ফেরার পথে গাড়িতে উঠার সময় দেখি আমাদের পাশে অপর একটি কারে কয়েকজন মুরববী বসে আছেন। জানাযায় অংশগ্রহণকারী সাধারণ মুছল্লী ভেবে উনাদের সাথে সালাম বিনিময় করে আমাদের গাড়িতে উঠে বসলাম। একটু পর ফাহীম ভাই বললেন, হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফকে চিনেন? বললাম, ‘খুবই চিনি’। উনি বললেন, ‘তাড়াতাড়ি নেমে আসেন, শায়খ ঐ গাড়িতে বসে আছেন’। দ্রম্নত বের হয়ে উনাকে পুনরায় সালাম দিয়ে আমার পরিচয় দিলাম এবং তাঁর বেশ কিছু বই আমাদের বাসায় আছে সে কথা জানালাম। উনি সহাস্যে স্বাগত জানালেন এবং লাহোরে উনার মারকাযে যাওয়ার জন্য বললেন। শেষে উপদেশমূলক কিছু বললেন, তবে কথাগুলো হুবহু বুঝতে পারলাম না। কেননা আমি বলছি আরবীতে, কিন্তু জবাবে শায়খ প্রথম থেকেই কোন এক কারণে আরবীর পরিবর্তে উর্দূতে কথা বলছিলেন।

উনারা চলে যাওয়ার পর আমরাও রওনা দিলাম। পথে কিছু দূরে এক রেস্টুরেন্টে দেখা হল শায়খ মুবাশ্বির রববানী এবং শায়খ ইয়াহইয়া আরীফীর সাথে। উনারা একই পথে লাহোরে ফিরে যাচ্ছিলেন মাইক্রোতে। বেশ কিছুক্ষণ কথা হল উনাদের সাথে। বাংলাদেশের আহলেহাদীছদের সম্পর্কে তারা জানতে চাইলেন। পরে লাহোর আসার জন্য খুব আন্তরিকভাবে দাওয়াত দিলেন। বিশেষ করে শায়খ মুবাশ্বির আহমাদ রববানীর অমায়িক ব্যবহারে সত্যিই মুগ্ধ হলাম। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আমরা একই সাথে রওয়ানা হলাম। তারপর পেশাওয়ার মোড় এসে তাঁরা লাহোরের দিকে রওনা দিলেন আর আমরা ইসলামাবাদ ফিরে আসলাম। রাত ১১টার দিকে আমাকে হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে বাছীর ভাইরা বিদায় নিলেন। সারাটা দিন কেমন যেন ঘোরের মধ্যে কেটে গেল। এতবড় একজন শায়খের মৃত্যুতে বুকটা যেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল, তেমনি বাছীর ভাইদের কান্নায় বুজে আসা কন্ঠের উত্তাপে চোখটা ভিজে আসছিল। অন্যদিকে একই জায়গায় পাকিস্তানের এতজন আহলেহাদীছ আলেম-ওলামার সাক্ষাৎ পেয়ে একটা পরিতৃপ্তি বোধও করছিলাম। পরিশেষে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন শায়খ যুবায়ের আলী যাই (রহঃ)-কে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন এবং তাঁর রেখে যাওয়া ইলমী খেদমত মুসলিম উম্মতের কল্যাণে কবুল করে নিন-আমীন!

আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি

ইসলামাবাদ, পাকিস্তান



আরও