পারিবারিক বন্ধন

মুখতারুল ইসলাম 1418 বার পঠিত

ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। আত্মীয়তার বন্ধনে একে অপরের সাথে সুনিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। আত্মীয়তার প্রথম মনযিল হ’ল পরিবার। মানুষ ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরিবারেই তার প্রথম থাকার জায়গা হয়। মানব সভ্যতার উত্থানই হয়েছে পারিবারিক বন্ধনের মাধ্যমে। আদি পিতা আদম (আঃ) ও মাতা হাওয়া (আঃ)-এর মধ্যকার পারিবারিক বন্ধনের ভরেই মানব সভ্যতার বিকাশ। তারই আদলে দুনিয়ায় আজকে আমাদের পিতা-মাতা, ভাইবোন পরিবার ও পারিবারিক বন্ধন। মহান আল্ল­াহর নিযামে আবাদী তথা চিরন্তন সৃষ্টি শৃংখলার মধ্যে যখনই মানুষ আধুনিকতার নামে নিজেদের খেয়াল-খুশী ও খামখেয়ালীর অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে, তখনই মানুষের উপর চেপে বসেছে এক মহা পারিবারিক বিপর্যয়। যেখানে মানুষ দুনিয়াতে সামান্য শান্তি পাওয়ার জন্য দিনরাত এত চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম করে চলেছে। সেখানে উল্টো মানুষ তাদের নিজেদের চেষ্টা-প্রচেষ্টা, পরিশ্রম নামের অপকর্মেরই বলি হচ্ছে। তাই সৃষ্টিকে তার স্রষ্টার দেওয়া নিযামে আবাদীর পথেই চলতে হবে। নইলে শান্তি নামক সোনার পাখিটি দূর আকাশে উড়াল দিবে।

পরিবার :

স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের দায়িত্ব নিয়ে বংশবৃদ্ধি করার প্রক্রিয়ায় নিজেদের সম্পৃক্ত করার নামই পরিবার। পরিবার হ’ল একটি প্রাচীনতম সংগঠন। মানুষকে সমাজে বসবাস করতে হ’লে পারিবারিক পরিচয় বহন করতে হয়। পিতা-মাতা সন্তান-সন্ততি উৎপাদন ও লালন-পালনের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখে। যেখানে পরিবারের সদস্য হ’ল দাদা-দাদী, বাবা-মা, ভাই-বোন ইত্যাদি। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পরিবার আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর পরিবার। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ‘হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ঐ দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন’ (নিসা ৪/১)

মানুষের জীবনে পারিবারিক শিক্ষা ও শিষ্টাচার ব্যাপক ভূমিকা রাখে। মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের অন্তরকে বিকশিত করা, সর্বোপরি সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়ার মতো গুণাবলী তৈরী করা আসলে পরিবারেই গ্রথিত।

বর্তমানে পারিবারিক বন্ধনের বাস্তব চিত্র :

মানব সভ্যতার মৌলিক ও সৌহার্দ্য-ভালবাসার বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান পরিবারে এখন ব্যাপক ভাঙন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণেই সামাজিক অস্থিরতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রথমে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙ্গে একক পরিবার প্রথা চালু হতে থাকে। যখন একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙ্গে গেল, তখন স্বামী-স্ত্রী মা-বাবাকে ছেড়ে আলাদা বাড়িতে থাকতে শুরু করল। এভাবে ফ্লাটভিত্তিক পরিবারের বিকাশ ঘটল। সচরাচর বাবা-মায়ের স্থান হয় না এসব ফ্লাট পরিবারে। হয়তো স্বামী চাকরি করছে, স্ত্রী বাসায় থাকছে; স্বামী স্ত্রীকে ঠিকভাবে সময় দিতে পারছে না অথবা স্বামীকে যথাযথভাবে স্ত্রী সময় দিতে পারছে না। এর সুযোগে পরিবারে ঢুকে পড়ছে পরকীয়ায় মত জঘন্য অপরাধ।

আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কারণেও পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন মোবাইল, ফেসবুক ও ইউটিউব নিয়ে মানুষ খুব বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়ায় পরিবারের সদস্যরা একে অন্যকে যে পরিমাণ সময় দেওয়া উচিত তা দিতে পারছে না। এর সঙ্গে আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবের কারণে অবিশ্বাস, হতাশা, লোভ ও মানসিক বিষন্নতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তখন পরিবার হয়ে উঠছে রণক্ষেত্র। পরিবারের অন্যান্য সদস্য বিশেষ করে বাড়ির বরকত পিতামাতার জায়গা হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে এবং পরিবারের সৌন্দর্য শিশুদের চাইল্ড কেয়ারে। ফলে পারিবারিক পবিত্র বন্ধন অগ্নিপুরীতে রুপান্তরিত হচ্ছে।

পারিবারিক সম্পর্ক বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ

১. শারঈ জ্ঞানের অভাব :

মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শক্র হ’ল তার অজ্ঞতা-মূর্খতা। অজ্ঞতাকে অন্ধকারের সাথে তুলনা করা হয়। একজন অজ্ঞ ব্যক্তি তার অজ্ঞতার কারণে জীবন বাস্তবতায় মূলত অন্ধকারের মধ্যে বসবাস করে। ফলে দুনিয়াবী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ে এবং ব্যর্থ ও অনুতপ্ত হয়। অথচ ইসলাম অহীভিত্তিক জ্ঞান সম্বলিত এক অনন্য জীবন ব্যবস্থার নাম, যা মানুষকে সার্বিক জীবনে জ্ঞান নির্ভর সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে এবং যার মাধ্যমে মানবতার প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ ‘তুমি বল, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান? বস্ত্ততঃ জ্ঞানীরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে’ (যুমার ৩৯/৬)। অতএব পরিবার ও পারিবারিক জ্ঞানের অভাবে পারিবারিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, পারিবারিক ও সামাজিক বিছিন্নতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পারিবারিক অস্তিরতা ও অশান্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, تَعَلَّمُوا مِنْ أَنْسَابِكُمْ مَا تَصِلُونَ بِهِ أَرْحَامَكُمْ فَإِنَّ صِلَةَ الرَّحِمِ مَحَبَّةٌ فِى الأَهْلِ مَثْرَاةٌ فِى الْمَالِ مَنْسَأَةٌ فِى الأَثَرِ. ‘তোমরা নিজেদের বংশধারার ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন কর, যাতে করে তোমাদের বংশীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে পার। কেননা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় থাকলে নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা তৈরী হয় এবং ধন-সম্পদ ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়’।[1] জগতশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম বুখারী তাই অধ্যায় রচনা করেছেন- باب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ ‘কথা ও কর্মের পূর্বে জ্ঞান’। কেননা দুনিয়াতে সমস্ত অঘটনের পেছনে কিন্তু প্রথমত অজ্ঞতাই দায়ী।

২. পিতা-মাতার মর্যাদার অবমূল্যায়ন : পারিবারিক বন্ধনের কেন্দ্রবিন্দু হ’ল পিতা-মাতা। যাদের মাধ্যমে একজন মানুষ পৃথিবী নামক এই ছোট্ট গ্রহে আগমন করে। অপরপক্ষে পরকালীন সাফল্যও নির্ভর করে তাদের সাথে আচরিত সর্বোত্তম আচরণের উপর ভিত্তি করে। ফলে পৃথিবীতে একজন সন্তানের নিকট পিতা-মাতা সর্বোত্তম আচরণ পাবে এটাই স্বাভাবিক। মহান আল্লাহ বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُلْ لَّهُمَا أُفٍّ وَّلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيْماً- وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً- ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তুমি তাদের প্রতি উহ শব্দটিও করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে নরমভাবে কথা বল। আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়াবশে প্রতিপালন করেছিলেন’ (বনী ইসরাঈল ১৭/ ২৩- ২৪)

কৃতজ্ঞতার দিক থেকে মহান আল্লাহর পরেই পিতা-মাতার প্রতি সদয় হওয়ার তাকীদ এসেছে। পিতা-মাতার কথা স্বরণ করিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, وَاللهُ أَخْرَجَكُم مِّنْ بُطُوْنِ أُمَّهَاتِكُمْ لاَ تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ الْسَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ. ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর’ (নাহল ১৬/৭৮)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ؟ قَالَ: الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا. قَالَ: ثُمَّ أَىُّ قَالَ : ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ . قَالَ : ثُمَّ أَىُّ قَالَ: الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ. قَالَ حَدَّثَنِى بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِى- ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বললেন, সময় মত ছালাত আদায় করা। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন, অতঃপর পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে আমি চুপ রইলাম। আমি যদি আরো বলতাম, তবে তিনি আরও অধিক বলতেন’।[2]

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে গমন প্রতিটি মুসলমানের পরম আকাঙ্ক্ষার বস্ত্ত। একজন সন্তান জিহাদে না গিয়েও পিতা-মাতার সেবার মধ্যে দিয়ে জিহাদ করার নেকী পেতে পারে। এক ব্যক্তি নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে জিহাদ ও হিজরতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও বিনিময় আশা করল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَقَالَ : أَحَىٌّ وَالِدَاكَ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ: فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ- ‘তোমার পিতা-মাতা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নবী (ছাঃ) বললেন, তবে তাঁদের খেদমতের (মাধ্যমে জিহাদের নেকীর) চেষ্টা কর’।[3] তিনি আরও বলেন,فَارْجِعْ إِلَيْهِمَا فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا، وَأَبَى أَنْ يُبَايِعَهُ ‘তুমি তাদের কাছে ফিরে যাও। অতঃপর তাদেরকে হাসাও, যেমন তুমি তাদেরকে কাঁদিয়েছ। অতঃপর তিনি তার বায়‘আত নিতে অস্বীকার করলেন’।[4]

নিশ্চিত জান্নাত পিতা-মাতার সেবার মধ্যে নিহিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,رِضَا اَللَّهِ فِي رِضَا اَلْوَالِدَيْنِ, وَسَخَطُ اَللَّهِ فِي سَخَطِ اَلْوَالِدَيْنِ ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে’।[5] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ ذَلِكَ الْبَابَ أَوِ احْفَظْهُ ‘পিতা হ’লেন জান্নাতের উত্তম দরজা। এক্ষণে তুমি তা রেখে দিতে পার অথবা বিনষ্ট করতে পার’।[6] অত্র হাদীছে পিতা জিনসী শব্দ তথা মাতা-পিতা উভয়কে বুঝানো হয়েছে’।[7]

অথচ বর্তমান বস্ত্তবাদী দুনিয়ায় সন্তানরা মা-বাবাকে ছেড়ে দুনিয়া কামাইয়ের নেশায় মত্ত হয়ে পড়ছে। মহান আল্লাহ প্রদত্ত তাকদীরকে জলাঞ্জলী দিয়ে তারা বাড়ির বরকত, দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তির সোপান পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে পারিবারিক বিপর্যয়ের নতুন অধ্যায় রচনা করছে। গাছের শেকড়কে হত্যা করে কিভাবে গাছের অন্যান্য কান্ড বেঁচে থাকতে পারে? যে পরিবারে পিতা-মাতাকে সন্তানদের অবমূল্যায়ন করা হয়, সেখানে বিচ্ছিন্নতা, সম্পর্কচ্ছেদ, অশান্তি, অস্থিরতা জায়গা করে নিবেই।

৩. সুবিচারের অভাব : বর্তমান সমাজ ও পরিবারে ইনছাফ ও সুবিচারের বড়ই অভাব। সুবিচার না থাকলে একটি সমাজ, একটি দেশ টিকে থাকতে পারে না। ন্যায়পরায়ণতা না থাকলে একটি পরিবার সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে না। ইনছাফ না থাকলে কোথাও শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা থাকে না। মহান আল্লাহ মানবজাতির প্রতি সুবিচারের আদেশ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অন্যায় কাজ ও অবাধ্যতা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর’ (যুমার ১৬/৯০)। অন্য আয়াতে এসেছে, اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ ‘তোমরা ন্যায়বিচার কর, যা আল্লাহভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত’ (মায়েদাহ ৫/৮)।

ইসলামে এই সুবিচারের নির্দেশনা জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পরিবারে সুবিচার প্রতিষ্ঠা সবার আগে যরূরী। কেননা পরিবারে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। হাদীছে এসেছে, عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ أَنَّ أَبَاهُ أَتَى بِهِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّى نَحَلْتُ ابْنِى هَذَا غُلاَمًا فَقَالَ أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَ مِثْلَهُ. قَالَ لاَ قَالَ فَارْجِعْهُ. নু‘মান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘একবার তাঁর পিতা তাকে নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং বলেন, আমি আমার এ ছেলেকে একটি গোলাম (দাস) দান করেছি। রাসূূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি তোমার সব সন্তানকে এমন দান করেছ? পিতা জবাব দিলেন, না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাহ’লে এ গোলাম ফেরত নিয়ে নাও’।[8]

জমিজমা হ’ল পারিবারিক সম্পর্ক নষ্টের যম। বর্তমান সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মহান আল্লাহ প্রদত্ত মিরাছী বিধিবিধান যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় না। ইসলাম যে সুশৃংখল ও বিধিবদ্ধ নিয়ম করে দিয়েছে, অনেক পিতা-মাতাই তার তোয়াক্কা করেন না। কখনো কখনো মা-বাবা কন্যা সন্তানের তুলনায় পুত্র সন্তানকে বেশী গুরুত্ব দেন। কখনো সম্পত্তি থেকে মাহরূম করেন। ফলে পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা স্থায়ী আসন গেড়ে বসে। আবার যখন কোনো পরিবারে মা-বাবার পক্ষ থেকে কোনো সন্তানদের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ বা স্নেহ-মমতার লক্ষণ দেখা যায়। যদিও তার পেছনে যথেষ্ট ন্যায্য কারণ থাকে, যা ধন-সম্পদ সঠিকভাবে বন্টনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। ঠিক তখনই ঐ পরিবারে দ্বন্দ্ব ও অশান্তির আগুন দাউ দাউ জ্বলে উঠে।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পিতার জীবদ্দশাতেই বাড়ির বড় ভাই সংসারের ঘানি টানেন। এক সময় তিনিই বাড়ির সকল সিদ্ধান্তের একচ্ছত্র অধিকারী হয়ে উঠেন। বড় ভাইয়ের উপর দ্বীন বিজয় লাভ করলে খুব ভাল। কেননা তিনি পিতৃ স্নেহে পরিবারের অন্য সদস্যদের বড় করে তোলেন। কিন্তু প্রায়শঃ দেখা যায়, বাড়ির অধীনস্থ ছোট ভাইবোনেরা বড় ভাইয়ের কাছে চরমভাবে নিগৃহীত ও বঞ্চিত হয়। অনেক পরিবারে আবার ভাবীরা আগুনে ঘি ঢালেন। ইউসুফ (আঃ)-এর জীবনেতিহাস এর জ্বলন্ত প্রমাণ। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى وَبِعَهْدِ اللَّهِ أَوْفُوا ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ‘আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায় কথা বলবে, তা নিকটজনের বিরুদ্ধে হলেও। আর তোমরা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ কর। এসব বিষয় তিনি তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’ (আনআ‘ম ৬/১৫১)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ. ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মধ্যে ইনছাফ কায়েম করো’।[9]

তাই প্রত্যেক পরিবারের মা-বাবার উচিত হবে, সন্তান-সন্ততির মধ্যে ইনছাফভিত্তিক আচরণ করা। বেইনছাফী ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। তাই পরিবার ও আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে অশান্তির দাবানল স্থায়ী না করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেক পিতা-মাতাকে সবার আগে পরিবারে ইনছাফ কায়েম করা প্রয়োজন। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যারা ইনসাফ কায়েম করতে পারবে, তাদের এই ইনসাফপূর্ণ আচরণ ক্বিয়ামতের দিন নূর বা জ্যোতি হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَلَى يَمِينِ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِى حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلُوا- ‘আল্লাহর নিকট যারা ন্যায়পরায়ণ তারা দয়াময়ের ডান পার্শ্বে জ্যোতির মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। আর তাঁর উভয় হস্তই ডান। (ঐ ন্যায়পরায়ণ তারা) যারা তাদের বিচারে, পরিবারে এবং তার কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ’।[10] এরপরেও যদি পিতা-মাতা সন্তানদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন, তাহ’লে মহান আল্লাহর অমোঘ বাণী শুনুন। মহান আল্লাহ বলেন,

يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَداءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيراً فَاللَّهُ أَوْلى بِهِما فَلا تَتَّبِعُوا الْهَوى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كانَ بِما تَعْمَلُونَ خَبِيراً-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের কিংবা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়। (বাদী-বিবাদী) ধনী হৌক বা গরীব হৌক (সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করো না)। কেননা তোমাদের চাইতে আল্লাহ তাদের অধিক শুভাকাংখী। অতএব ন্যায়বিচারে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের সকল কর্ম সম্পর্কে অবহিত’ (নিসা ৪/১৩৫)।

৪. পর্দাহীনতা ও অল্পেতুষ্টিহীন জীবনযাপন :

পর্দাহীনতার কারণে আধুনিক পরিবারগুলোতে ক্যান্সারের মত পরকীয়া ছড়িয়ে পড়েছে। স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর মিল নেই। ঘরে-বাইরে অশান্তির দাবানল জ্বলছে। স্বামী চাকুরীজীবী বা প্রবাসী, স্ত্রীকে সময় দিতে পারে না অথবা উভয়ে চাকুরীজীবী অথবা স্বামী এবং স্ত্রী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করেন। এমনকি বর্তমানে নারী স্বাধীনতার নামে আবার মেয়েরাও পরিবার ছেড়ে প্রবাসে চাকুরী-বাকুরীর সুযোগ নিচ্ছে। ফলে পরস্পরের ব্যস্ততায় দাম্পত্য জীবন ব্যাহত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির নানাবিধ ব্যবহার যা একটি আদর্শ পরিবারের জন্য বড়ই হুমকির। মহান আল্লাহ রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ‘আর তোমরা নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করবে। প্রাচীন জাহেলী যুগের ন্যায় সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না। তোমরা ছালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হও। হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে’ (আহযাব ৩৩/৩৩)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ ، وَلاَ تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ، اكْتُتِبْتُ فِى غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِى حَاجَّةً قَالَ اذْهَبْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِكَ. ‘কোন পুরুষ যেন অপর মহিলার সঙ্গে নিভৃতে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ছাড়া সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম লেখা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জযাত্রী। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তবে যাও তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর’।[11]

সাধারণত চাকুরীজীবীরা ফ্ল্যাট ভিত্তিক পরিবারে অভ্যস্ত। যেখানে পিতা-মাতা, ভাই-বোন সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসবাসের সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَوْ أَنَّكُمْ تَوَكَّلْتُمْ عَلَى اللَّهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ تَغْدُو خِمَاصًا وَتَرُوحُ بِطَانًا ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থ ভরসা কর তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিযিক দান করবেন, যেরূপ পাখিকে রিযিক দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে (বাসায়) ফিরে আসে’।[12]

রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন,مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ مُعَافًى فِى جَسَدِهِ آمِنًا فِى سِرْبِهِ عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا. ‘তোমাদের মধ্যে যে লোক নিজের গৃহে নিরাপদে শারীরিক সুস্থতা সহকারে ভোর করে এবং তার কাছে সে দিনের প্রাণ রক্ষা পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য বিদ্যমান থাকে, তার জন্য যেন দুনিয়ার সমস্ত নে‘মত একত্রিত করে দেয়া হয়েছে’।[13]

রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ إِبْلِيسَ يَضَعُ عَرْشَهُ عَلَى الْمَاءِ، ثُمَّ يَبْعَثُ سَرَايَاهُ يَفْتِنُونَ النَّاسَ، فَأَدْنَاهُمْ مِنْهُ مَنْزِلَةً أَعْظَمُهُمْ فِتْنَةً يَجِيءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُولُ: فَعَلَتُ كَذَا، وَكَذَا فَيَقُولُ مَا صَنَعْتَ شَيْئًا. قَالَ: ثُمَّ يَجِيءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُولُ: مَا تَرَكَتُهُ حَتَّى فَرَّقَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ امْرَأَتِهِ. قَالَ: فَيُدْنِيهِ مِنْهُ، وَيَقُولُ: نَعَمْ أَنْتَ قَالَ الْأَعْمَشُ: أَرَاهُ قَالَ فَيَلْتَزِمُهُ ‘ইবলীস শয়তান সমুদ্রের পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশী ফিৎনায় নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিৎনা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলীস) প্রত্যুত্তরে বলে, তুমি কিছুই করনি। রাসূল বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দেইনি, এমনকি দম্পতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। রাসূল বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে নিকটে বসায় আর বলে, তুমিই উত্তম কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আ‘মাশ বলেন, আমার মনে হয় জাবির (রাঃ) এটাও বলেছেন যে, ‘অতঃপর ইবলীস তার সাথে আলিঙ্গন করে’।[14]

স্বাধীন ও উন্নত জীবন গঠনের নামে ইসলামে অল্পতুষ্টি ও পর্দার মত মৌলিক বিধানগুলি এ সমস্ত বস্ত্তবাদী পরিবারে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। ফলে অসামঞ্জস্যপূর্ণ পারিবারিক জীবনধারার সুযোগে শয়তান এ সমস্ত পরিবারে ঢুকে পড়ছে এবং পবিত্র পারিবারিক বন্ধনের প্রাসাদকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। কেননা শয়তান সর্বদা পারিবারিক ভাঙ্গন ও বিচ্ছিন্নতা প্রত্যাশী। কারণ একটি পরিবারের শান্তি, শৃংঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়া মানে পুরো দেশ ও জাতির শান্তি, শৃংঙ্খলায় করাঘাত।

৫. আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সম্পর্কহীনতা : পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মান-মর্যাদার দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি পারস্পরিক আচরণ বিধি পুরোপুরি মেনে চলা উচিৎ। প্রতিটি মানুষ তার আত্মীয়তা তথা পারিবারিক ভালবাসার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর সদা সতর্ক তত্ত্বাবধায়ক’ (নিসা ৪/১)

وَالْأَرْحَامَ ‘আরহাম’ শব্দের ব্যাখ্যায় শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এর দ্বারা পিতামাতার সাথে সম্পর্কিত সকল আত্মীয়-স্বজনকে বুঝায়। তারা মিরাছের সদস্যভুক্ত হৌক বা না হৌক। মহান আল্লাহ বলেন, وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ إِلَّا أَنْ تَفْعَلُوا إِلَى أَوْلِيَائِكُمْ مَعْرُوفًا كَانَ ذَلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا ‘আল্লাহর কিতাবে রক্ত সম্পর্কীয়গণ পরস্পরের অধিক নিকটবর্তী অন্যান্য মুমিন ও মুহাজিরগণের চাইতে। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি সদাচরণ কর তাতে বাধা নেই। আর এটাই মূল কিতাবে (লাওহে মাহফূযে) লিপিবদ্ধ আছে’ (আহযাব ৩৩/৬)

রাসূল (ছাঃ)-কে একজন ছাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ:أُمَّكَ قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: أُمَّكَ، قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ:أُمَّكَ. قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ قَالَ: أَبَاكَ، ثُمَّ الْأَقْرَبَ فَالْأَقْرَبَ. ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কার সাথে উত্তম আচরণ করব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি বললাম, অতঃপর কার সাথে? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কার সাথে? এবার তিনি বললেন, তোমার বাবার সাথে, তারপর তোমার নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের সাথে, তারপর তাদের নিকটতম আত্মীয়দের সাথে’ (তিরমিযী, আবুদাউদ, মিশকাত হা/৪৯২৯)[15]

অতঃপর সকল আত্মীয়-স্বজন, আপনজন ও সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, وَاعْبُدُوْا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَبِذِيْ الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالاً فَخُوْراً. ‘উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে, পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম-মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী সঙ্গী-সাথী, মুসাফির এবং দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পসন্দ করেন না দাম্ভিক-অহংকারীকে’ (নিসা ৪/৩৬)

আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি সর্বাধিক ভাল আচরণ পাওয়ার হকদার, তিনি আপন খালা-মামারা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ ‘খালা হ’ল মাতৃস্থানীয়’।[16] অন্য হাদীছে এসেছে, يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أَذْنَبْتُ ذَنْبًا كَبِيرًا، فَهَلْ لِي مِنْ تَوْبَةٍ؟، فقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَكَ وَالِدَانِ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَلَكَ خَالَةٌ؟ قَالَ نَعَمْ، قَالَ فَبِرَّهَا إِذًا ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো মহাপাপ করে ফেলেছি। আমার জন্য কি ক্ষমার দরজা খোলা আছে? রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তোমার কি মা-বাবা জীবিত আছেন? সে বলল, না। তিনি বললেন, তোমার খালা জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে তার সাথে সদাচরণ কর’।[17]

মায়মূনাহ (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন,أَمَا إِنَّكِ لَوْ أَعْطَيْتِيهَا أَخْوَالَكِ او أَخَوَاتِكِ كَانَ أَعْظَمَ لأَجْرِكِ- ‘শোন! তুমি যদি তোমার মামা-খালা বা বোনদের এটা দান করতে, তাহ’লে তোমার জন্য বেশী নেকীর কাজ হত’।[18]

রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষায় পাড়া-প্রতিবেশীও আত্মীয়স্বজনদের অর্ন্তভুক্ত। অতএব তারাও সর্বোত্তম আচরণ পাওয়ার হকদার। অথচ বংশীয় অহমিকা, যিদ, মান-অভিমানের জায়গা থেকে শয়তান পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে একে অপরের মধ্যে চরম শত্রুতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ الأَصْحَابِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ وَخَيْرُ الْجِيرَانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ- ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম সাথী সে, যে তার সঙ্গী-সাথীর নিকট উত্তম। আর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার পড়শীর নিকট উত্তম’।[19]

কিন্তু ব্যস্ত দুনিয়ায় পরস্পর সাক্ষাতের ঘাটতি, অনিচ্ছা- অনীহায় ও দীর্ঘদিনের যোগাযোগ বিছিন্নতা নিজের খালা-মামা, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনরা সম্পর্কের জায়গা থেকে অনেক দূরে চলে যান। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা ঈদে দেখা হলেও গুরুত্বহীন এ সাক্ষাৎ সুসম্পর্কে খুব একটা প্রভাব রাখে না। সম্পর্কহীনতার যতগুলো কারণ দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হ’ল কৃপণতা। একজন নিকটাত্মীয় মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলেও অসুস্থ মানসিকতা ও কৃপণতা সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়।

৬. বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহের ঘাটতি :

ইসলামে বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহের যে পরিসর রচিত হয়েছে তা পারিবারিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতায় এক ঐতিহাসিক দলীল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান করে না সে আমার দলভুক্ত নয়’।[20] ছোট্ট মালেক ইবনুল হুরায়রেছ ছোটদের সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর উত্তম আচরণে মুগ্ধ হয়ে বলেন, أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فِى نَفَرٍ مِنْ قَوْمِى فَأَقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ لَيْلَةً وَكَانَ رَحِيمًا رَفِيقًا، فَلَمَّا رَأَى شَوْقَنَا إِلَى أَهَالِينَا قَالَ ارْجِعُوا فَكُونُوا فِيهِمْ وَعَلِّمُوهُمْ وَصَلُّوا، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْبَرُكُمْ. ‘সগোত্রীয় একটি দল নিয়ে আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে গেলাম। আমরা তাঁর কাছে বিশ রাত অবস্থান করলাম। তিনি ছিলেন দয়ালু ও কোমলপ্রাণ। তিনি আমাদের নিজ নিজ পরিবারের প্রতি আমাদের মনের টান লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমরা (নিজেদের পরিবারে) ফিরে যাও। তাদের মাঝে অবস্থান কর আর তাদের (তোমরা যা শিখলে তা) শেখাও এবং (তাদের নিয়ে) ছালাত আদায় কর। যখন ছালাতের সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দেবে আর তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামতি করবে’।[21]

হুযায়ফা ইয়ামানী বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে কোন নিমন্ত্রণে যেতাম তখন তাঁর শুরু করার আগে আমরা খাবারে হাত দিতাম না।[22]

রাসূল অন্যত্র বলেন, إِنَّ مِنْ إِجْلاَلِ اللَّهِ إِكْرَامَ ذِى الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِى فِيهِ وَالْجَافِى عَنْهُ وَإِكْرَامَ ذِى السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ ‘বয়স্ক মুসলিমকে ইযযত-সম্মান করা, কুরআন পাঠককে সম্মান করা- যতক্ষণ সে কুরআনের বাক্যের বা অর্থে বাড়াবাড়ি ও বিকৃতিসাধন না করে এবং ন্যায়বিচারক শাসককে সম্মান করা, এ সবকিছুই আল্লাহকে সম্মান করার অংশবিশেষ’।[23]

কিন্তু আজকের বস্ত্তবাদী সমাজ ব্যবস্থা মানবিক সমস্ত মমত্ববোধ, স্নেহ, ভালবাসার পরিবর্তে অমানবিকতা, অশ্রদ্ধা ও চরম নিষ্ঠুরতার সমাজ উপহার দিয়েছে। সেখানে দুনিয়াদার পিতা-মাতার নিকট সবই তুচ্ছ। তারা ছোটদের চাইল্ড কেয়ার ও বাড়ির মুরুববীদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে নিজের দায়দায়িত্বের ইতি টানেন। যেখানে পারিবারিক বন্ধন বলে কিছু নেই। তাহ’লে এমন মেকী দায়বোধকে কিভাবে একটি সভ্য পরিবার বলা যেতে পারে?

অথচ ইসলামী পরিবারে দাদা-দাদী, নানা-নানী বড় ভাই-বোন ও নাতি-নাতনী, স্নেহের কচিকাচার মিলনমেলা। যেখানকার পারস্পরিক ভালবাসা ও মমত্ববোধ মহান আল্লাহর অপার দান। সন্তান লালন-পালনে পিতা-মাতার পাশাপাশি দাদা-দাদী, নানা-নানী, বড় ভাই-বোন অজস্র পরিশ্রম করেন। কত বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করেন। কোলে-পিঠে বড় করে তোলেন। তাহ’লে কিভাবে বড়দের অসম্মান করে আজকের ছোটরা পার পেয়ে যেতে পারে? বর্তমান বস্ত্তবাদী সমাজবাদীরা কি তাদের একদিনের পরিশ্রমের মূল্যায়ন করতে পারবেন? অথবা দুনিয়ার কোন কিছু দিয়ে কি তাদের সে হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার বদলা দিতে পারবেন? আদৌও নয়।

৭.পারিবারিক অহংবোধ :

উচ্চ বংশীয়, নিচু বংশীয়, সাদা-কালো, ধনী-গরীব সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মাধ্যমে একটি পরিবার গঠিত হয়, যা মহান আল্লাহর সৃষ্টি বৈচিত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। মানুষের সম্মান-ইয্যত বাড়ানো বা কমানো তাঁরই হাতে। এ নিয়ে তারা পরস্পর হানাহানি ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হবে, একে অপরকে অভিসম্পাত করবে, একে অন্যের উপর গর্ব ও অহমিকা প্রদর্শন করবে, ব্যাপারটি আসলে এমন নয়।

কিন্তু আজকের আধুনিক পরিবারে এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিয়েশাদীর মাধ্যমে এক পরিবারের সদস্য অন্য পরিবারের আপনজন হয়। পরিবারে জাহেলী যুগের আছাবিয়াত বা অন্যায় পক্ষপাতদুষ্টতা, অহংকার, যিদ, রাগ, মান-অভিমান, জাতিগর্ব, বর্ণবাদ, শ্রেণী বিদ্বেষ, জাত্যাভিমান, গোত্র ও দলীয় গোড়ামী মানুষের ভেতর হিংসা ও জিঘাংসার চারা বুনে। শয়তান পরস্পরের সম্পর্ক বিনষ্ট করার জন্য জাতিগত বিভেদের ভয়ংকর এক অদৃশ্য প্রাচীর তাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। পরিবারের এক সদস্য অন্য সদস্যকে ঘৃণা করে, তুচ্ছ ভাবে, গালমন্দ করে, যা চরম অমানবিক ও অমার্জনীয় অপরাধ। এসবের ফলে চরমভাবে পারিবারিক বন্ধন বিপর্যস্ত হয়।

ইসলাম ধন-সম্পদ, বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য, বংশীয় কৌলিণ্য, সামাজিক প্রতিপত্তি কিংবা দৈহিক শক্তি সামর্থ্যকে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি বানায়নি। গরীবের ওপর ধনীর, দুর্বলের ওপর সবলের, নিচু বংশের ওপর উচ্চ বংশের, কালোর ওপর সাদার কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও আভিজাত্য ইসলাম রাখেনি।

ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার মানদন্ড হ’ল পরহেযগারিতা বা তাক্বওয়া। পরিবারের সদস্যরা যে যতটুকু তাক্বওয়া ধারণ করবে, সে তত শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান হবে।

মানুষ সকলেই আদম সন্তান। আর আদম (আঃ) মাটির তৈরী। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ‘হে মানুষ! আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও নারী থেকে। অতঃপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হ’তে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু। অবশ্যই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও তোমাদের ভিতর-বাহির সবকিছু অবগত’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَلاَ لاَ فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ، وَلاَ لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ، وَلاَ لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ، وَلاَ أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ، إِلاَّ بِالتَّقْوَى، ‘মনে রেখ! আরবের জন্য অনারবের উপর, অনারবের জন্য আরবের উপর, কৃষ্ণাঙ্গের ওপর লাল বর্ণের লোকের, লাল বর্ণের লোকের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সম্মান মর্যাদা কেবল তাক্বওয়ার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে’।[24] কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ নয়। বরং পরহেযগারিতা পারিবারিক বন্ধনকে সংশোধন করবে, ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবে। পারস্পরিক আছাবিয়াত বা জাত্যাভিমান, জাতিগর্ব, বর্ণবাদ ও শ্রেণীবিভেদ দূর করবে। ফলে সুখী সমৃদ্ধ পরিবার ও দেশ গঠিত হবে, যেখানে আল্লাহর দয়া ও রহমত সদা বর্ষিত হতে থাকবে।

(ক্রমশঃ)

 ড. মুখতারুল ইসলাম

কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ


[1]. তিরমিযী হা/১৯৭৯; ছহীহাহ হা/২৭৬; মিশকাত হা/৪৯৩৪।

[2]. বুখারী হা/২৭৮২; মুসলিম হা/৮৫; মিশকাত হা/৫৬৮।

[3]. বুখারী হা/৩০০৪; মুসলিম হা/২৫৪৯; মিশকাত হা/৩৮১৭।

[4]. আবুদাঊদ হা/২৫২৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৪৮১।

[5]. শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫০৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫০৩।

[6]. আহমাদ হা/২৭৫৫১; তিরমিযী হা/১৯০০; ইবনু মাজাহ হা/২০৮৯; মিশকাত হা/৪৯২৮; ছহীহাহ হা/৯১৪।

[7]. মিরকাত ৭/৩০৮৯, ৪৯২৮ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।

[8].বুখারী হা/২৫৮৬;।

[9].বুখারী হা/২৫৮৭; মিশকাত হা/৩০১৯।

[10].মুসলিম, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬৯০।

[11].বুখারী হা/৩০০৬; মিশকাত হা/২৫১৩।

[12]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫২৯৯।

[13]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৯১।

[14]. মুসলিম, মিশকাত হা/৭১।

[15]. ফাতাওয়া শায়খ ছালেহ মুনাজ্জিদ ক্রমিক নং ৭৫০৫৭।

[16]. বুখারী, তিরমিযী, আবুদাউদ, মিশকাত হা/৩৩৭৭।

[17]. ইবনু হিববান হা/৪৩৫; ছহীহু আত-তারগীব হা/২৫০৪,২৫২৬; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮৬৪।

[18]. বুখারী হা/২৫৯২; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫২৬।

[19]. তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৪৯৮৭।

[20]. তিরমিযী হা/১৯১৯; আবুদাউদ হা/৪৯৪৩।

[21]. বুখারী হা/৬২৮; মিশকাত হা/৬৮৩।

[22]. মুসলিম হা/২০১৭; মিশকাত হা/৪২৩৭।

[23]. আবুদাউদ হা/৪৮৪৩; মিশকাত হা/৪৯৭২।

[24]. বায়হাক্বী -শো‘আব হা/৫১৩৭; আহমাদ হা/২৩৫৩৬; ছহীহাহ হা/২৭০০।



বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
আরও