মূল্যহীন দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালোবাসা (৬ষ্ঠ কিস্তি)

আব্দুর রহীম 9797 বার পঠিত

পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ 

রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনীতে মূল্যহীন দুনিয়ার অবস্থা :

মূল্যহীন দুনিয়ার এই মুসাফিরখানায় রাসূল (ছাঃ) খুব সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। তিনি কখনো দুনিয়ার কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য কষ্ট প্রকাশ করেন নি। বরং তিনি স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যা পেয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেছেন এবং আল্ল­াহর প্রশংসা করেছেন। তিনি ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়েছেন। ক্ষুধায় পেটে পাথর বেঁধেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, كَانَ يَرْبِطُ الْحَجَرَ عَلَى بَطْنِهِ مِنَ الْغَرَثِ ‘রাসূল (ছাঃ) ক্ষুধার কারণে পেটের উপর পাথর বেঁধে রাখতেন’।[1]

ক্ষুধার কারণে রাসূলের চেহারা বিমর্ষ হয়ে গেছে, কখনো খাবারের সন্ধানে মানুষের বাড়িতে গমন করেছেন। রাসূলের বিছানা ছিল খেজুর পাতার; দেহে খেজুর পাতার দাগ পড়ে থাকত; বিছানায় কোন গদি ছিল না। ছিল না কোন ভালো বালিশ। এভাবেই বছরের পর বছর অতিবাহিত করেছেন। বাড়িতে মাসের পর মাস চুলা বন্ধ ছিল। কেবল নিম্ন মানের খেজুর ও পানি পান করে কাটিয়েছেন কত দিন। কেবল পরকালের শান্তির জন্য ও জাতির মুক্তির জন্য। আজ আমরা যারা তার উম্মতের দাবীদার তাদের অবস্থা রাসূলের আদর্শের পরিপন্থী। রাসূলের নামে কটূক্তি করা হলে জীবন দিতে যায়, কিন্তু রাসূলের আদর্শের অনুসরণ নেই। আমরা রাসূলের অনুসরণ করতে গিয়েও অর্থমোহে আবদ্ধ হয়ে পড়ি। নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের অন্ন কেড়ে নিই। রক্ত ঝরাতেও দ্বিধাবোধ করিনা। তাহলে আমরা কেমন আদর্শ অনুসরণ করি? নাকি আমাদের ধর্মীয় কাজগুলো দুনিয়াবী স্বার্থে হচ্ছে? যে রাসূল অর্থাভাবে অনাহারে দিন কাটালেন সে রাসূলের উম্মত হয়ে জীবিকা অন্বেষণের অযুহাত দিয়ে ঘুষ প্রদান করতে অন্তরে বাধেনা। অথচ নিজেদের তাক্বওয়াশীল বলে পরিচয় দিতে স্বাছন্দ্যবোধ করি। তাহলে আসুন আমরা সর্বক্ষেত্রে রাসূলের জীবনাদর্শ অনুসরণ করি। আগে জানি রাসূলের জীবনাদর্শ কেমন ছিল। নিম্নে এ সংক্রান্ত হাদীছগুলো পেশ করা হ’ল :

রাসূলের বিছানার অবস্থা :

عن عُمَر بْن الْخَطَّابِ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ عَلَى حَصِيرٍ قَالَ فَجَلَسْتُ فَإِذَا عَلَيْهِ إِزَارٌ وَلَيْسَ عَلَيْهِ غَيْرُهُ وَإِذَا الْحَصِيرُ قَدْ أَثَّرَ فِى جَنْبِهِ وَإِذَا أَنَا بِقَبْضَةٍ مِنْ شَعِيرٍ نَحْوَ الصَّاعِ وَقَرَظٍ فِى نَاحِيةٍ فِى الْغُرْفَةِ وَإِذَا إِهَابٌ مُعَلَّقٌ فَابْتَدَرَتْ عَيْنَاىَ فَقَالَ : مَا يُبْكِيكَ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ. فَقُلْتُ يَا نَبِىَّ اللهِ وَمَا لِىَ لاَ أَبْكِى وَهَذَا الْحَصِيرُ قَدْ أَثَّرَ فِى جَنْبِكَ وَهَذِهِ خِزَانَتُكَ لاَ أَرَى فِيهَا إِلاَّ مَا أَرَى وَذَلِكَ كِسْرَى وَقَيْصَرُ فِى الثِّمَارِ وَالأَنْهَارِ وَأَنْتَ نَبِىُّ اللهِ وَصَفْوَتُهُ وَهَذِهِ خِزَانَتُكَ. قَالَ : يَا ابْنَ الْخَطَّابِ أَلاَ تَرْضَى أَنْ تَكُونَ لَنَا الآخِرَةُ وَلَهُمُ الدُّنْيَا. قُلْتُ بَلَى-

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি তখন খেজুর পাতার চাটাইয়ের উপর শোয়া ছিলেন। আমি বসে পড়লাম। তাঁর পরিধানে ছিলো একটি লুঙ্গি। এ ছাড়া আর কোন বস্ত্র তাঁর পরিধানে ছিলো না। তাঁর পাঁজরে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিলো। আমি দেখলাম যে, তাঁর ঘরের এক কোণে ছিলো প্রায় এক ছা গম, বাবলা গাছের কিছু পাতা এবং ঝুলন্ত একটি পানির মশক। এ অবস্থা দেখে আমার দু’চোখে অশ্রু প্রবাহিত হ’ল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি কাঁদছো কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি কেন কাঁদবো না? এই চাটাই আপনার পাঁজরে দাগ কেটে দিয়েছে, আর এই হচ্ছে আপনার ধনভান্ডার, এতে যা আছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। এই কিসরা (পারস্যরাজ) ও কায়ছার (রোম সম্রাট) বিরাট বিরাট উদ্যান ও ঝর্ণা সমৃদ্ধ অট্টালিকায় বিলাস-ব্যসনে জীবন-যাপন করছে। আর আপনি হলেন আল্ল­াহর নবী এবং তাঁর মনোনীত প্রিয় বান্দা। আর আপনার ধনভান্ডারের অবস্থা এই। তিনি বলেন, হে খাত্ত্বাবের পুত্র! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, আমাদের জন্য রয়েছে আখেরাতের স্থায়ী সুখ-শান্তি এবং ওদের জন্য রয়েছে পার্থিব ভোগ বিলাস? আমি বললাম, হ্যাঁ।[2] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهِ عُمَرُ وَهُوَ عَلَى حَصِيرٍ قَدْ أَثَّرَ فِى جَنْبِهِ فَقَالَ يَا نَبِىَّ اللهِ لَوِ اتَّخَذْتَ فِرَاشاً أَوْثَرَ مِنْ هَذَا فَقَالَ : مَا لِى وَلِلدُّنْيَا مَا مَثَلِى وَمَثَلُ الدُّنْيَا إِلاَّ كَرَاكِبٍ سَارَ فِى يَوْمٍ صَائِفٍ فَاسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا-

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলেন। তিনি তখন খেজুর পাতার চাটাইয়ের উপর শোয়া ছিলেন। তাঁর পাঁজরে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিলো। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, হে আল্ল­াহর রাসূল! যদি আপনি এ থেকে রক্ষার জন্য একটি বিছানা বানিয়ে নিতেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আমার ধন-সম্পদ ও দুনিয়া বা আমার ও দুনিয়ার উদাহরণ হ’ল, কোন মুসাফির গরমের দিনে চলতে চলতে কোন বৃক্ষের ছায়াতলে দিনের কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো, তারপর তা ছেড়ে চলে গেল’।[3]  অন্যত্র এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: دَخَلَتْ عَلَيَّ امْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَرَأَتْ فِرَاشَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَبَاءَةً مُثَنَّاةً، فَانْطَلَقَتْ، فَبَعَثَتْ إِلَيَّ بِفِرَاشٍ حَشْوهُ الصُّوفُ، فَدَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: مَا هَذَا ؟  فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ فُلَانَةُ الْأَنْصَارِيَّةُ دَخَلَتْ عَلَيَّ فَرَأَتْ فِرَاشَكَ، فَانْطَلَقَتْ، فَبَعَثَتْ إِلَيَّ بِهَذَا قَالَ: " رُدِّيهِ " فَلَمْ أَرُدَّهُ وَأَعْجَبَنِي أَنْ يَكُونَ فِي بَيْتِي، حَتَّى قَالَ ذَلِكَ مِرَارًا  قَالَ: وَاللهِ يَا عَائِشَةُ لَوْ شِئْتُ لَأَجْرَى اللَّهُ مَعِي جِبَالَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ  " فَرَدَدْتُهُ إِلَيْهَا-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক আনছারী মহিলা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। সে দেখতে পায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিছানা ভাঁজ করা চোগা (হাতকাটা এক ধরনের জামা) দিয়ে তৈরী। সে তখন বাড়ি গিয়ে তাঁর জন্য পশমভরা একটি তোশক পাঠিয়ে দিল। রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) যখন আমার ঘরে এলেন তখন তিনি বিছানা দেখে বললেন, এটা কী? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! অমুক আনছারী মহিলা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সে আপনার বিছানা দেখে বাড়ি গিয়ে এই বিছানা পাঠিয়ে দিয়েছে। তিনি বললেন, এটা ফেরৎ দাও। কিন্তু আমি ফেরৎ দিলাম না। বিছানাটা আমার ঘরে থাকা আমার ভাল লাগছিল। এমনি করে তিনি বেশ কয়েকবার কথাটি আমাকে বললেন। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! হে আয়েশা! আমি চাইলে আল্ল­াহ তা‘আলা আমার সঙ্গে সোনা-রূপার পাহাড়কে চলমান করে দিতেন। তখন আমি সেটি মহিলাটির কাছে ফিরিয়ে দিলাম’।[4]

রাসূল (ছাঃ)-এর খাবারের অবস্থা :

রাসূল (ছাঃ) কোন সময় এই মূল্যহীন দুনিয়ার খাদ্যকে গুরুত্ব দেননি। তিনি এই নে‘মত প্রাপ্ত হ’লে শুকরিয়া আদায় করতেন এবং বঞ্চিত হলে ধৈর্য ধারণ করতেন। যেমন হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى عَسِيبٍ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَيْلاً فَمَرَّ بِى فَدَعَانِى إِلَيْهِ فَخَرَجْتُ ثُمَّ مَرَّ بِأَبِى بَكْرٍ فَدَعَاهُ فَخَرَجَ إِلَيْهِ ثُمَّ مَرَّ بِعُمَرَ فَدَعَاهُ فَخَرَجَ إِلَيْهِ فَانْطَلَقَ حَتَّى دَخَلَ حَائِطاً لِبَعْضِ الأَنْصَارِ فَقَالَ لِصَاحِبِ الْحَائِطِ  أَطْعِمْنَا بُسْراً. فَجَاءَ بِعِذْقٍ فَوَضَعَهُ فَأَكَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ بَارِدٍ فَشَرِبَ فَقَالَ : لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ. قَالَ فَأَخَذَ عُمَرُ الْعِذْقَ فَضَرَبَ بِهِ الأَرْضَ حَتَّى تَنَاثَرَ الْبُسْرُ قِبَلَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَئِنَّا لَمَسْئُولُونَ عَنْ هَذَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ : نَعَمْ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثٍ خِرْقَةٍ كَفَّ بِهَا الرَّجُلُ عَوْرَتَهُ أَوْ كِسْرَةٍ سَدَّ بِهَا جَوْعَتَهُ أَوْ جُحْرٍ يَتَدَخَّلُ فِيهِ مِنَ الْحَرِّ وَالْقَرِّ –

আবী আসীব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূল (ছাঃ) আমার নিকট এসে আমাকে ডাকলেন। আমি বের হয়ে তৎক্ষণাৎ তাঁর নিকট আসলাম। অতঃপর তিনি আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট গমন করলেন, তাঁকেও ডাকলেন এবং তিনি বের হয়ে আসলেন। পরে ওমর (রাঃ)-এর নিকট গমন করলেন এবং তাঁকেও ডাকলেন। তিনিও বের হয়ে আসলেন। এবার তিনি (সবাইকে সঙ্গে নিয়ে) চললেন। অবশেষে জনৈক আনছারীর বাগানের মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং বাগানের মালিককে বললেন, আমাদেরকে তাজা পাকা খেজুর খাওয়াও। অমনি সে খেজুরের একটি ছড়া এনে রাখল। আর রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা তা খেলেন। অতঃপর তিনি ঠান্ডা পানি চেয়ে আনালেন এবং পান করলেন। এরপর তিনি বললেন, নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন এ সমস্ত নে‘মত সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, (এ কথা শুনে) ওমর (রাঃ) খেজুরের ছড়াটি নিয়ে যমীনের উপর আঘাত করলেন, এতে খেজুরগুলো রাসূল (ছাঃ)-এর সম্মুখে বিক্ষিপ্তভাবে ছিটিয়ে পড়ল, অতঃপর বললেন, হে আল্ল­াহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনটি বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। যথা- ১. কাপড়ের সে টুকরাটি যার দ্বারা মানুষ তার লজ্জাস্থান আবৃত করে, ২. অথবা রুটির সে খন্ডটি যার দ্বারা সে তার ক্ষুধা নিবারণ করে, ৩. এবং ঐ ছোট্ট ঘরখানা যাতে অবস্থান করে গ্রীষ্ম ও শীত হতে আত্মরক্ষা করে’।[5]

অপর হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ لَيْلَةٍ فَإِذَا هُوَ بِأَبِى بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقَالَ مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُمَا هَذِهِ السَّاعَةَ. قَالاَ الْجُوعُ يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ: وَأَنَا وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لأَخْرَجَنِى الَّذِى أَخْرَجَكُمَا قُومُوا. فَقَامُوا مَعَهُ فَأَتَى رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ فَإِذَا هُوَ لَيْسَ فِى بَيْتِهِ فَلَمَّا رَأَتْهُ الْمَرْأَةُ قَالَتْ مَرْحَبًا وَأَهْلاً. فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيْنَ فُلاَنٌ . قَالَتْ ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا مِنَ الْمَاءِ. إِذْ جَاءَ الأَنْصَارِىُّ فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَصَاحِبَيْهِ ثُمَّ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أَكْرَمَ أَضْيَافًا مِنِّى قَالَ  فَانْطَلَقَ فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ كُلُوا مِنْ هَذِهِ. وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِيَّاكَ وَالْحَلُوبَ. فَذَبَحَ لَهُمْ فَأَكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ الْعِذْقِ وَشَرِبُوا فَلَمَّا أَنْ شَبِعُوا وَرَوُوا قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لأَبِى بَكْرٍ وَعُمَرَ  وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أَصَابَكُمْ هَذَا النَّعِيمُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক দিনে কিংবা এক রাতে রাসূল (ছাঃ) বের হয়ে আবুবকর (রাঃ) ও ওছমান (রাঃ)-কে দেখতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ সময় কিসে তোমাদের বাড়ি থেকে বের করেছে? তাঁরা বললেন, হে আল্ল­াহর রাসূল! ক্ষুধার তাড়নায়। তিনি বললেন, যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ, যা তোমাদের বের করে এনেছে, আমাকেও তাই বের করে এনেছে। অতএব চলো। তাঁরা তাঁর সাথে চলতে লাগলেন। অতঃপর তিনি এক আনছারীর বাড়িতে এলেন। তখন তিনি গৃহে ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী তাঁকে দেখে বলল, মারহাবা ওয়া আহলান مَرْحَبًا وَأَهْلاً (সুস্বাগতম আসুন নিজের বাড়িতে) রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, অমুক কোথায়? মহিলাটি বলল, তিনি আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন। তখনই আনছারী লোকটি উপস্থিত হয়ে রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর দুই সঙ্গীকে দেখতে পেয়ে বললেন, আল্ল­াহর শোকর, আজ মেহমানের দিক থেকে আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। অতঃপর তিনি গিয়ে একটি খেজুরের কাঁদি নিয়ে আসলেন। তাতে কাঁচা পাকা ও শুকনা খেজুর ছিল। তিনি বললেন, আপনারা এ খেজুর থেকে খেতে থাকুন। এ সময় তিনি একটি ছুরি নিলেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, সাবধান, দুধওয়ালা ছাগল যবেহ করবে না। তারপর তাদের জন্য ছাগল যবেহ করলে তারা ছাগল ও কাঁদির খেজুর খেলেন ও (মিঠা) পানি পান করলেন। তাঁরা যখন ক্ষুধা নিবারণ করলেন ও পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রাসূল (ছাঃ) আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! ক্বিয়ামতের দিন এ নে‘মত সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। ক্ষুধা তোমাদের ঘর থেকে বের করে এনেছে অথচ তোমরা এ নে‘মত লাভ না করে প্রত্যাবর্তন করনি।[6] 

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا، فَرَأَيْتُهُ مُتَغَيِّرًا قَالَ: قُلْتُ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي، مَا لِيَ أَرَاكَ مُتَغَيِّرًا؟ قَالَ: مَا دَخَلَ جَوْفِي مَا يَدْخُلُ جَوْفَ ذَاتِ كَبِدٍ مُنْذُ ثَلَاثٍ قَالَ: فَذَهَبْتُ فَإِذَا يَهُودِيٌّ يَسْقِي إِبِلًا لَهُ، فَسَقَيْتُ لَهُ، عَلَى كُلِّ دَلْوٍ تَمْرَةٌ، فَجَمَعْتُ تَمْرًا، فَأَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مِنْ أَيْنَ لَكَ يَا كَعْبُ؟ فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتُحِبُّنِي يَا كَعْبُ؟ قُلْتُ: بِأَبِي أَنْتَ، نَعَمْ  قَالَ: إِنَّ الْفَقْرَ أَسْرَعُ إِلَى مَنْ يُحِبُّنِي مِنَ السَّيْلِ إِلَى مَعَادِنِهِ، وَإِنَّهُ سَيُصِيبُكَ بَلَاءٌ، فَأَعِدَّ لَهُ تَجْفَافًا، قَالَ: فَقْدَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَا فَعَلَ كَعْبٌ؟  قَالُوا: مَرِيضٌ، فَخَرَجَ يَمْشِي حَتَّى دَخَلَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ:أَبْشِرْ يَا كَعْبُ، فَقَالَتْ أُمُّهُ: هَنِيئًا لَكَ الْجَنَّةُ يَا كَعْبُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ هَذِهِ الْمُتَأَلِّيَةُ عَلَى اللهِ؟ قَالَ: هِيَ أُمِّي يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: مَا يُدْرِيكِ يَا أَمَّ كَعْبٍ؟ لَعَلَّ كَعْبًا قَالَ مَا لَا يَنْفَعُهُ، أَوْ مَنَعَ مَا لَا يُغْنِيهِ-

কা‘ব বিন ওযরা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (ছাঃ)-এর বাড়িতে এসে দেখলাম তাঁর চেহারার মধ্যে বিবর্ণতা রয়েছে। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনার চেহারায় বিষণ্ণতা কেন? তিনি বললেন, তিনদিন যাবত আমার পেটে কিছুই প্রবেশ করেনি যা প্রত্যেক কলিজাওয়ালা পেটের মধ্যে প্রবেশ করে থাকে। আমি সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। পথে জনৈক ইহুদীকে দেখলাম সে তার উটকে পানি পান করাচ্ছে। আমি প্রতি বালতির বিনিময়ে একটি খেজুর প্রাপ্তির প্রত্যাশায় তার উটগুলোকে পানি পান করালাম। কিছু খেজুর জমা হ’লে সেগুলো নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে কা‘ব তুমি এগুলো কোথা থেকে পেলে। আমি তাকে অবহিত করলাম। তখন নবী (ছাঃ) আমাকে বললেন, হে কা‘ব তুমি কি আমাকে ভালোবাস? হ্যাঁ, হে আল্ল­াহর রাসূল! আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হৌক। তিনি বললেন, আমাকে যে ভালোবাসে দরিদ্রতা জোয়ারের দিকে ধাবমান বন্যার চেয়ে তার দিকে দ্রুত ছুটে যায়। খুব শিঘ্রই বিপদ-আপদে নিপতিত হবে। অতএব তুমি তার মুকাবিলা করার জন্য শক্তভাবে প্রস্ত্ততি গ্রহণ কর। এরপর নবী করীম (ছাঃ) কা‘বকে হারিয়ে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কা‘বের কী হয়েছে? ছাহাবীগণ বললেন, তিনি অসুস্থ। সুতরাং তিনি বের হয়ে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে এসে বললেন, কা‘ব! তুমি সুসংবাদ নাও। তাঁর মা তাঁর উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, হে কা‘ব! তোমার জন্য জান্নাত মোবারক হোক। তা শুনে তিনি বললেন, কে আল্ল­াহর ব্যাপারে কসম খেয়ে (নিশ্চয়তা দিচ্ছে)? কা‘ব বললেন, উনি আমার মা, হে আল্ল­াহর রাসূল! তিনি তাঁর মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন, হে কা‘বের মা! কীভাবে জানলে তুমি (সে জান্নাতী)? হয়তোবা কা‘ব এমন কথাবার্তা বলেছে, যা তার উপকার করে না এবং এমন কিছু দানে বিরত থেকেছে, যা তাকে অভাবমুক্ত করে না।[7]

অন্যত্র এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم اشْتَرَى مِنْ يَهُودِىٍّ طَعَامًا إِلَى أَجَلٍ وَرَهَنَهُ دِرْعَهُ-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জনৈক ইহুদীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে খাদ্যশস্য খরিদ করেন এবং নিজের বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন।[8] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا قَالَتْ لِعُرْوَةَ: ابْنَ أُخْتِي إِنْ كُنَّا لَنَنْظُرُ إِلَى الهِلاَلِ، ثُمَّ الهِلاَلِ، ثَلاَثَةَ أَهِلَّةٍ فِي شَهْرَيْنِ، وَمَا أُوقِدَتْ فِي أَبْيَاتِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَارٌ، فَقُلْتُ يَا خَالَةُ: مَا كَانَ يُعِيشُكُمْ؟ قَالَتْ: الأَسْوَدَانِ: التَّمْرُ وَالمَاءُ، إِلَّا أَنَّهُ قَدْ كَانَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِيرَانٌ مِنَ الأَنْصَارِ، كَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ، وَكَانُوا يَمْنَحُونَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَلْبَانِهِمْ، فَيَسْقِينَا –

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার উরওয়া (রা.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, বোনপো! আমরা (মাসের) নতুন চাঁদ দেখতাম, আবার নতুন চাঁদ দেখতাম। এভাবে দু’মাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর কোন ঘরেই আগুন জ্বালানো হ’ত না। (উরওয়া (রা.) বলেন) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, খালা! আপনারা তাহ’লে কিভাবে বেঁচে থাকতেন? তিনি বললেন, দু’টি কালো জিনিস অর্থাৎ খেজুর আর পানিই শুধু আমাদের বাঁচিয়ে রাখত। অবশ্য কয়েক ঘর আনছারী পরিবার রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতিবেশী ছিল। তাঁদের কিছু দুধালো উটনী ও বকরী ছিল। তাঁরা রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য দুধ হাদিয়া পাঠাত। তিনি আমাদেরকে তা পান করতে দিতেন।[9]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে যে, أَنَّهُ مَرَّ بِقَوْمٍ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ ، فَدَعَوْهُ فَأَبَى أَنْ يَأْكُلَ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنَ الْخُبْزِ الشَّعِيرِ- ‘তিনি একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন যাদের সামনে ছিল একটি ভুনা বকরী। তারা তাঁকে খেতে ডাকল। তিনি খেতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) পৃথিবী থেকে চলে গেছেন অথচ তিনি কোন দিন যবের রুটিও পেট ভরে খাননি’।[10]  অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: مَا كَانَ يَبْقَى عَلَى مَائِدَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيرِ قَلِيلٌ وَلَا كَثِيرٌ-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর দস্তরখানায় কোন দিন যবের রুটির কম-বেশী কিছুই অবশিষ্ট থাকত না।[11]

অন্যত্র এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: مَنْ حَدَّثَكُمْ أَنَّا كُنَّا نَشْبَعُ مِنَ التَّمْرِ فَقَدْ كَذَبَكُمْ فَلَمَّا افْتَتَحَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُرَيْظَةَ أصبنا شيئا من التمر والودك-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে তোমাদের নিকট বর্ণনা করবে যে আমরা পরিতৃপ্তি সহকারে খেজুর খেয়েছি সে তোমাদেরকে মিথ্যা বলবে। তবে যখন আল্ল­াহ তা‘আলা নবী করীম (ছাঃ)-কে বনু কুরায়যার উপর বিজয় দান করলেন তখন আমরা কিছু উন্নত ও কিছু নিম্ন মানের খেজুর পেয়েছিলাম।[12] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمْ يَأْكُلِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى خِوَانٍ حَتَّى مَاتَ، وَمَا أَكَلَ خُبْزًا مُرَقَّقًا حَتَّى مَاتَ-

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) আমৃত্যু টেবিলের উপর খাবার খাননি আর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মসৃণ রুটি খেতে পাননি।[13]

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, مَا أَكَلَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى خِوَانٍ ، وَلاَ فِى سُكْرُجَةٍ ،وَلاَ خُبِزَ لَهُ مُرَقَّقٌ  قُلْتُ لِقَتَادَةَ عَلَى مَا يَأْكُلُونَ قَالَ عَلَى السُّفَرِ- নবী করীম (ছাঃ) উঁচু টেবিলে এবং নানা রকমের মুরববা চাটনি ও হজমির পেয়ালা রেখে আহার করেননি। তাঁর জন্য চাপাতি রুটিও পাকান হয়নি। বর্ণনাকারী ইউনুস (রহঃ) বলেন, আমি কাতাদা (রহঃ)-কে বললাম তা হলে কিসের উপর খাদ্য রেখে তাঁরা আহার করতেন? তিনি বললেন, এসব চামড়ার দস্তরখানে রেখে।[14]

আবু হাযিম (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,  سَأَلْتُ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ فَقُلْتُ هَلْ أَكَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم  النَّقِىَّ فَقَالَ سَهْلٌ مَا رَأَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم النَّقِىَّ مِنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللَّهُ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ . قَالَ فَقُلْتُ هَلْ كَانَتْ لَكُمْ فِى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم  مَنَاخِلُ قَالَ مَا رَأَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم  مُنْخُلاً مِنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللَّهُ حَتَّى قَبَضَهُ. قَالَ قُلْتُ كَيْفَ كُنْتُمْ تَأْكُلُونَ الشَّعِيرَ غَيْرَ مَنْخُولٍ قَالَ كُنَّا نَطْحَنُهُ وَنَنْفُخُهُ ، فَيَطِيرُ مَا طَارَ وَمَا بَقِىَ ثَرَّيْنَاهُ فَأَكَلْنَاهُ-

আমি সাহল (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) কি ময়দা খেয়েছেন? সাহল (রাঃ) বললেন, আল্ল­াহ তা‘আলা যখন থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে পাঠিয়েছেন তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ময়দা দেখেননি। আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ)-এর যুগে কি আপনাদের চালুনি ছিল? তিনি বললেন, আল্ল­াহ তা‘আলা রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ)-কে পাঠানোর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি চালুনিও দেখেননি। আবু হাযিম বলেন, আমি বললাম, তাহলে আপনারা না চেলে যবের আটা কিভাবে খেতেন? তিনি বললেন, আমরা যব পিষে তাতে ফুঁক দিতাম, এতে যা উড়ার তা উড়ে যেত, আর যা বাকী থাকত তা মথিত করতাম, তারপর তা খেতাম।[15]

অন্যত্র এসেছে, عَنْ أُمِّ أَيْمَنَ أَنَّهَا غَرْبَلَتْ دَقِيقًا فَصَنَعَتْهُ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم رَغِيفًا فَقَالَ : مَا هَذَا. قَالَتْ طَعَامٌ نَصْنَعُهُ بِأَرْضِنَا فَأَحْبَبْتُ أَنْ أَصْنَعَ مِنْهُ لَكَ رَغِيفًا. فَقَالَ : رُدِّيهِ فِيهِ ثُمَّ اعْجِنِيهِ- উম্মু আয়মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আটা ছেনে নবী (ছাঃ)-এর জন্য রুটি তৈরি করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বলেন, এটা আমাদের এলাকার খাবার। আমি আপনার জন্য এ খাবার তৈরি করতে আগ্রহী হলাম। তিনি বলেন, এর মধ্যে ভুসি ঢেলে দাও, তারপর ছেনে নাও।[16]

অন্যত্র এসেছে, عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ يَقُولُ أَلَسْتُمْ فِى طَعَامٍ وَشَرَابٍ مَا شِئْتُمْ لَقَدْ رَأَيْتُ نَبِيَّكُمْ صلى الله عليه وسلم وَمَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلأُ بَطْنَهُ- সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, আছে, তিনি বলেন, নো‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, এখন তোমরা কি নিজেদের খুশি মত পানাহার করতে পারছ না? অথচ আমি তোমাদের নবী (ছাঃ) দেখেছি যে, তিনি এই নিকৃষ্ট ও শুকনো খেজুরও পেতেন না, যদ্বারা তার পেট ভরতে পারেন।[17]

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, جِئْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فَوَجَدْتُهُ جَالِسًا مَعَ أَصْحَابِهِ يُحَدِّثُهُمْ وَقَدْ عَصَّبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ قَالَ أُسَامَةُ وَأَنَا أَشُكُّ عَلَى حَجَرٍ فَقُلْتُ لِبَعْضِ أَصْحَابِهِ لِمَ عَصَّبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَطْنَهُ فَقَالُوا مِنَ الْجُوعِ. فَذَهَبْتُ إِلَى أَبِى طَلْحَةَ وَهُوَ زَوْجُ أُمِّ سُلَيْمٍ بِنْتِ مِلْحَانَ فَقُلْتُ يَا أَبَتَاهُ قَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَصَّبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ فَسَأَلْتُ بَعْضَ أَصْحَابِهِ فَقَالُوا مِنَ الْجُوعِ. فَدَخَلَ أَبُو طَلْحَةَ عَلَى أُمِّى فَقَالَ هَلْ مِنْ شَىْءٍ فَقَالَتْ نَعَمْ عِنْدِى كِسَرٌ مِنْ خُبْزٍ وَتَمَرَاتٌ فَإِنْ جَاءَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَحْدَهُ أَشْبَعْنَاهُ وَإِنْ جَاءَ آخَرُ مَعَهُ قَلَّ عَنْهُمْ... ‘আমি একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এসে তাকে দেখলাম, তিনি ছাহাবীদের সাথে বসে আলোচনায় রত আছেন এবং তিনি তার পেট একটি কাপড়ের টুকরো দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। বর্ণনাকারী ওসামা বলেন, পাথরসহ ছিল কি-না, এতে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। আমি তাঁর কোন এক ছাহাবীকে প্রশ্ন করলাম, রাসূল (ছাঃ) তাঁর পেট কেন বেঁধে রেখেছেন? তারা বললেন, ক্ষুধার তাড়নায়। তারপর আমি আবু তালহা (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি উম্মু সুলায়ম বিনতু মিলহান (রাঃ)-এর স্বামী ছিলেন। আমি বললাম, আববা! আমি রাসূল (ছাঃ)-কে প্রত্যক্ষ করলাম, তিনি বস্ত্র দ্বারা তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন। আমি তাঁর এক ছাহাবীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায়। অতঃপর আবু তালহা (রাঃ) আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার কাছে কয়েক টুকরা রুটি আর কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূল (ছাঃ) আমাদের ঘরে একাকী আসেন, তাহ’লে আমরা তাকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাতে পারি। আর যদি ভিন্ন কেউ তার সাথে আসে তাহলে তাদের সামান্য হবে।[18]   অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ حُمَيْدٍ، قَالَ: قَالَتْ عَائِشَةُ: أَرْسَلَ إِلَيْنَا آلُ أَبِي بَكْرٍ بِقَائِمَةِ شَاةٍ لَيْلًا، فَأَمْسَكْتُ وَقَطَعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَتْ: تَقُولُ لِلَّذِي تُحَدِّثُهُ هَذَا عَلَى غَيْرِ مِصْبَاحٍ: فَقَالَتْ لَوْ كَانَ عِنْدَنَا مِصْبَاحٌ لاَئْتَدَمْنَا بِهِ إِنَّهُ لَيَأْتِي عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ الشَّهْرُ، مَا يَخْتَبِزُونَ خُبْزًا، وَلَا يَطْبُخُونَ قِدْرًا "، قَالَ حُمَيْدٌ: فَذَكَرْتُ لِصَفْوَانَ بْنِ مُحْرِزٍ، فَقَالَ: لَا، بَلْ كُلُّ شَهْرَيْنِ-

হুমাইদ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেন, এক রাতে আবুবকর পরিবারের পক্ষ থেকে ছাগলের একটি পা পাঠানো হল। আমি সেটি ধরে ছিলাম আর রাসূল (ছাঃ) তা কাটছিলেন। তিনি বলেন, তোমরা বলবে এটি কি অন্ধকারে ছিল? তিনি বললেন, যদি আমাদের নিকট তেল থাকত তাহলে তা তরকারী বানিয়ে খেতাম। রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবারে মাস অতিবাহিত হয়েছে অথচ তারা রুটি বানিয়ে খাননি এবং পাতিলে রান্না করে খাননি। হুমাইদ বলেন, আমি ছাফওয়ান বিন মুহরেযকে জিজ্ঞেস করলাম, না, বরং প্রত্যেক দু’মাসে।[19]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, عَنْ عَابِسٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ فَقُلْتُ لَهَا أَكَانَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يَنْهَى عَنْ لُحُومِ الأَضَاحِىِّ بَعْدَ ثَلاَثٍ فَقَالَتْ نَعَمْ أَصَابَ النَّاسَ شِدَّةٌ فَأَحَبَّ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ يُطْعِمَ الْغَنِىُّ الْفَقِيرَ ثُمَّ لَقَدْ رَأَيْتُ آلَ مُحَمَّدٍ -صلى الله عليه وسلم- يَأْكُلُونَ الْكُرَاعَ بَعْدَ خَمْسَ عَشْرَةَ. فَقُلْتُ لَهَا مِمَّ ذَاكَ قَالَ فَضَحِكَتْ وَقَالَتْ مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ مِنْ خُبْزٍ مَأْدُومٍ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ حَتَّى لَحِقَ بِاللهِ عَزَّ وَجَلَّ - আবিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট গমন করে জিজ্ঞেস করলাম, নবী কি কুরবানীর পোশত তিন দিনের বেশী সময় খেতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, সেই বছরেই কেবল নিষেধ করেছিলেন যেই বছর মানুষ অনাহারে আক্রান্ত হয়েছিল। তখন তিনি চেয়েছিলেন যেন ধনীরা গরীবদের খাওয়ায়। আমরা তো বকরীর পায়াগুলো তুলে রাখতাম এবং পনের দিন পর তা খেতাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হ’ল কীসে আপনাদের এগুলো খেতে বাধ্য করত? তিনি হেসে বললেন, মুহাম্মদ (ছাঃ) আল্ল­াহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাঁর পবিবার পরিজন একাধারে তিন দিন তরকারীসহ গমের রুটি পেট ভরে খান নি।[20] 

ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَبِيتُ اللَّيَالِىَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِيًا وَأَهْلُهُ لاَ يَجِدُونَ الْعَشَاءَ وَكَانَ عَامَّةَ خُبْزِهِمْ خُبْزُ الشَّعِيرِ- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একাধারে কয়েক রাত অভুক্ত অবস্থায় কেটে যেত এবং তাঁর পরিবারের লোকেদেরও রাতের আহার জুটতো না। অধিকাংশ সময় তাদের রুটি হ’ত যবের তৈরী।[21]

অন্যত্র এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ تُوُفِّىَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَا فِى رَفِّى مِنْ شَىْءٍ يَأْكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلاَّ شَطْرُ شَعِيرٍ فِى رَفٍّ لِى فَأَكَلْتُ مِنْهُ حَتَّى طَالَ عَلَىَّ فَكِلْتُهُ فَفَنِىَ- আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল (ছাঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন, তখন আমার পাত্রে সামান্য কিছু যব ব্যতীত কোন কলিজাধারী (প্রাণী) খেতে পারে এমন কিছুই আমার তাকে ছিল না। আমি তা থেকেই খেতাম। এভাবে অনেক দিন চলে গেলে আমি একবার তা মেপে নিলাম। ফলে তা শেষ হয়ে গেল।[22]         (ক্রমশঃ)

[লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]


[1]. ছহীহাহ হা/১৬১৫

[2]. মুসলিম হা/১৪৭৯; ইবনু মাজাহ হা/৪১৫৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৮৪

[3]. আহমাদ হা/২৭৪৪; হাকেম হা/৭৮৫৮; ছহীহাহ হা/৪৩৯।

[4]. শু‘আবুল ঈমান হা/১৩৯৫; ছহীহাহ হা/২৪৮৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৮৭।

[5]. আহমাদ হা/২০৭৮৭; মিশকাত হা/৪২৫৩; ছহীত তারগীব হা/৩২২১।

[6]. মুসলিম হা/২০৩৮; মিশকাত হা/৪২৪৬।

[7]. তাবারানী আওসাত্ব হা/৭১৫৭; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৭১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৮২৪৫।

[8]. বুখারী হা/২৫০৯; মুসলিম হা/১৬০৩; মিশকাত হা/২৮৮৪।

[9]. বুখারী হা/২৫৬৭; মুসলিম হা/২৯৭২; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৭৭।

[10]. বুখারী হা/৫৪১৪; মিশকাত হা/৫২৩৮।

[11]. তাবারানী আওসাত্ব হা/১৫৬৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৮২৪০; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৬৯।

[12]. ইবনু হিববান হা/৬৮৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৭৮।

[13]. বুখারী হা/৬৪৫০; মিশকাত হা/৪১৬৯

[14]. বুখারী হা/৫৪১৫; তিরমিযী হা/১৭৮৮;  মিশকাত হা/৪১৬৯।

[15]. বুখারী হা/৫৪১৩; মিশকাত হা/৪১৭১।

[16]. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৩৬; ছহীহাহ হা/২৪৮৩।

[17]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৯৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৭৫।

[18]. মুসলিম হা/২০৪০; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৭৯।

[19]. আহমাদ হা/২৪৬৭৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৭৬।

[20].  বুখারী হা/৬৬৮৭; নাসাঈ হা/৪৪৩২; আহমাদ হা/২৫৫৮১।

[21]. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৪৭; তিরমিযী হা/২৩৬০; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৬৪।

[22]. বুখারী হা/৬৪৫১; মুসলিম হা/২৯৭৩; মিশকাত হা/৫২৫৩।



বিষয়সমূহ: মূল্যহীন দুনিয়া
আরও