একজন আদর্শবান ব্যক্তির গুণাবলী (শেষ কিস্তি)

এ. এইচ. এম. রায়হানুল ইসলাম 1305 বার পঠিত

দুনিয়াত্যাগী হওয়া :

একজন সত্যিকারের আদর্শবান ব্যক্তি হ’তে হ’লে তাকে অবশ্য দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হবে। আর সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কে প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আলে ইমরান ৩/৩১)। আর দুনিয়াতে কিভাবে চলতে হবে সে সম্পর্কে হাদীছ,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمَنْكِبِى فَقَالَ كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ. وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ-

হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার আমার দু’কাঁধ ধরে বললেন, তুমি দুনিয়াতে এমনভাবে অবস্থান কর, যেন তুমি মুসাফির অথবা পথচারী’।[1]

একজন সত্যিকারের আর্দশবান মানুষ কখনো বিলাসী হ’তে পারে না। তার মধ্যে কখনো স্বার্থপরতা বা আমিত্ব বিরাজ করতে পারে না। কেননা একজন স্বার্থপর ব্যক্তি আর যাই হোক, কখনো সে আদর্শ মানুষ হ’তে পারেনা। তাই আদর্শ মানুষ হ’তে হ’লে আমাদেরকে আগে নিজের আমিত্ব, স্বার্থপরতা বিসর্জন দিতে হবে। আমাদের হ’তে হবে ত্যাগী, সহমর্মী, কর্মঠ ও উদার। তবেই আমরা প্রকৃত মানুষ হ’তে পারব। মহান আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ-

‘আর যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করত এবং ঈমান এনেছিল। যারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং তাদেরকে (ফাই থেকে) যা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের মনে কোনরূপ আকাংখা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তাদেরই রয়েছে অভাব। বস্ত্ততঃ যারা নিজেদেরকে হৃদয়ের কার্পণ্য হ’তে বাঁচাতে পেরেছে, তারাই হ’ল সফলকাম’ (হাশর ৫৯/৯)। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা অন্যত্র বলেন, وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا ‘তারা আল্লাহর মহববতে অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বনদীদের আহার্য প্রদান করে’ (দাহর ৭৬/৮)। তিনি আরো বলেন,

لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ-

‘(ইবাদতকালে) পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোটাই কেবল সৎকর্ম নয়, বরং প্রকৃত সৎকর্মশীল ঐ ব্যক্তি, যে বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহ, বিচার দিবস, ফেরেশতামন্ডলী, আল্লাহর কিতাব ও নবীগণের উপর এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করে নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, প্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য। আর যে ব্যক্তি ছালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, অঙ্গীকার করলে তা পূর্ণ করে এবং অভাবে, রোগ-পীড়ায় ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্যের সাথে দৃঢ় থাকে। তারাই হ’ল সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই হ’ল প্রকৃত আল্লাহভীরু’ (বক্বারাহ/১৭৭)

উপরোল্লেখিত আয়াত সমূহের মাধ্যমে মহান আল্লাহ সৎকর্মশীল, আদর্শবান মানুষের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন যে, এই সৎকর্মশীল লোকগুলি শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য সাধ্যমত খরচ করে থাকে।

নাফে‘ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একবার ইবনে ওমর (রাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। আঙ্গুরের মৌসুমে আঙ্গুর পাকতে শুরু করল। তার স্ত্রী সুফিয়া (রাঃ) লোক পাঠিয়ে এক দিরহামের আঙ্গুর আনিয়ে নেন। ঠিক ঐ সময়ে দরজায় এক ভিক্ষুক এসে পড়ে এবং ভিক্ষা চায়। ইবনে ওমর (রাঃ) এই আঙ্গুর ভিক্ষুককে দিয়ে দিতে বললেন। সুতরাং তা ভিক্ষুককে দিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর আবার লোক গিয়ে আঙ্গুর কিনে আনে। কিন্তু আবারও ভিক্ষুক এসে পড়ে এবং ভিক্ষা চেয়ে বসে। এবারও ইবনে ওমর (রাঃ) তা ভিক্ষুককে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সুফিয়া (রাঃ) এবার ঐ ভিক্ষুককে বলে দেন, আল্লাহর কসম! এরপরেও তুমি ফিরে আসলে তোমাকে আর কিছুই দেওয়া হ’বেনা। অতঃপর আবার তিনি এক দিরহামের আঙ্গুর আনিয়ে দেন’।[2]

এবারে আমরা জানবো, ত্যাগ ও সহমর্মিতার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ جَاءَتِ امْرَأَةٌ بِبُرْدَةٍ قَالَ سَهْلٌ هَلْ تَدْرِى مَا الْبُرْدَةُ قَالَ نَعَمْ هِىَ الشَّمْلَةُ، مَنْسُوجٌ فِى حَاشِيَتِهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّى نَسَجْتُ هَذِهِ بِيَدِى أَكْسُوكَهَا فَأَخَذَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُحْتَاجًا إِلَيْهَا، فَخَرَجَ إِلَيْنَا وَإِنَّهَا لإِزَارُهُ، فَجَسَّهَا رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اكْسُنِيهَا قَالَ نَعَمْ فَجَلَسَ مَا شَاءَ اللَّهُ فِى الْمَجْلِسِ، ثُمَّ رَجَعَ ، فَطَوَاهَا ثُمَّ أَرْسَلَ بِهَا إِلَيْهِ فَقَالَ لَهُ الْقَوْمُ مَا أَحْسَنْتَ، سَأَلْتَهَا إِيَّاهُ وَقَدْ عَرَفْتَ أَنَّهُ لاَ يَرُدُّ سَائِلاً فَقَالَ الرَّجُلُ وَاللَّهِ مَا سَأَلْتُهَا إِلاَّ لِتَكُونَ كَفَنِى يَوْمَ أَمُوتُ قَالَ سَهْلٌ فَكَانَتْ كَفَنَهُ-

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) বলেন, এক মহিলা নবী করীম (ছাঃ) এর নিকট একটি হাতে বোনা চাদর নিয়ে এল। অতঃপর বলল, আপনার পরিবারের জন্য আমি চাদরটি নিজ হাতে বুনেছি। রাসূল (ছাঃ) তা গ্রহণ করলেন যদিও তাঁর চাদরের প্রয়োজন ছিল না। তারপর তিনি সেটি লুঙ্গীরূপে পরিধান করলেন এবং আমাদের সামনে আসলেন। তখন অমুক ব্যক্তি বললেন, এটি আমাকে পরার জন্য দান করুন। তিনি বলেন, হ্যাঁ (তাই দেব)। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ মজলিসে বসলেন। তারপর ফিরে গিয়ে তা ভাঁজ করে ঐ লোকটির কাছে পাঠিয়ে দিলেন। লোকেরা বলল, তুমি কাজটা ভাল করলে না। নবী করীম (ছাঃ) তাঁর প্রয়োজনে পরিধান করেছিলেন। তবুও তুমি চেয়ে বসলে। অথচ তুমি জানো তিনি কারো চাওয়া ফিরিয়ে দেন না। ঐ ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! আমি তা পরার উদ্দেশ্যে চাইনি। আমার চাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য যে, তাদ্বারা আমার কাফন হবে। সাহল (রাঃ) বলেন, শেষ পর্যন্ত তা তার কাফনই হয়েছিল’।[3]

হাদীছে এসেছে,

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল; আমি ক্ষুধায় কাতর হয়ে আছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর কোন স্ত্রীর নিকট পাঠালেন। তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্যের সঙ্গে পাঠিয়েছেন! আমার কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আজ রাতে কে একে মেহমান হিসাবে গ্রহণ করবে? এক আনছারী বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি একে মেহমান হিসাবে গ্রহণ করব। সুতরাং তিনি তাকে সাথে করে নিজ গৃহে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মেহমানের খাতির কর। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি (&আনছারী) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, তোমার নিকট কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন, না। শুধু বাচ্চাদের খাবার আছে। তিনি বললেন, কোন জিনিস দ্বারা তাদের ভুলিয়ে রাখবে এবং তারা যখন খাবার চাইবে তখন তাদের ঘুম পাড়িয়ে দেব। তখন বাতি নিভিয়ে দেব এবং তাকে (এমন ভাব) দেখাবে যে, আমরাও খাচ্ছি। সুতরাং তারা সকলেই খাবার জন্য বসে গেলেন; মেহমান খাবার খেল আর তারা অনাহারে সারা রাত কাটিয়ে দিল। অতঃপর তিনি (আনছারী) যখন সকালে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গেলেন, তখন তিনি বললেন, তোমাদের দু’জন আজ রাতে মেহমানের সাথে যে ব্যবহার করেছ, তাতে আল্লাহ বিস্মিত হয়েছেন’।[4] অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى سَفَرٍ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ عَلَى نَاقَةٍ لَهُ فَجَعَلَ يَصْرِفُهَا يَمِينًا وَشِمَالاً فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ كَانَ عِنْدَهُ فَضْلُ ظَهْرٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ ظَهْرَ لَهُ وَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ فَضْلُ زَادٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ زَادَ لَهُ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ لاَ حَقَّ لأَحَدٍ مِنَّا فِى الْفَضْلِ-

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে সফরে ছিলাম। ইতোমধ্যে একটি লোক তার সওয়ারীর উপর চড়ে আমাদের নিকট এল এবং ডানে বামে তাকাতে লাগলো। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যার নিকট উদ্বৃত্ত সওয়ারী আছে সে যেন তা ঐ ব্যক্তিকে দেয় যার সওয়ারী নেই। আর যার নিকট উদ্বৃত্ত পাথেয় আছে সে যেন, ঐ ব্যক্তিকে দেয় যার কোন পাথেয় নেই। এভাবে তিনি বিভিন্ন মালের কথা উল্লেখ করলেন। এমনকি আমরা মনে করলাম যে, উদ্বৃত্ত মালে আমাদের কোন অধিকার নেই’।[5]

সুবহানাল্লাহ! কি অপূর্ব ত্যাগ! কি অপরূপ সহমর্মীতা! কতইনা সুন্দর ভ্রাতৃত্ববোধ! পৃথিবীর সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অনুপম আদর্শ, নিখাঁদ চরিত্র ও অপরিসীম ভালবাসায় মরুচারী বেদুঈনরা, আরব বিশ্বের রুক্ষ, বর্বর, নিষ্ঠুর ও পাষানহৃদয় লোকগুলিও কেমন জগৎ শ্রেষ্ঠ সোনালী মানুষের পরিণত হয়েছিল। অথচ সেই নবীর উম্মত আমরা। এটা আমাদের চরম সৌভাগ্য! তথাপি আমরা কি নিজেকে সেই মহান আদর্শে আদর্শবান হ’তে পারছি? পেরেছি কি নিজের ভিতরের সেই স্বার্থপরতা, বিলাসী মনোভাবকে কুরবানী করতে? যদি না পারি, তবে কোন দিনও আমরা আদর্শ মানুষ হ’তে পারবো না।

মৃত্যুকে স্মরণ:

মানুষ মাত্রই মরণশীল। শুধু কি মানুষই মরণশীল? না; বরং বিশ্বের প্রতিটি প্রাণীই মরণশীল। মৃত্যু একটি অতি নির্মম ও নিষ্ঠুর সত্য। একে উপেক্ষা করা বা এড়িয়ে যাওয়ার কোনই উপায় নেই। যার প্রাণ আছে তাকে মরতে হবে। ক্ষণস্থায়ী এই পার্থিব জীবন ভোগ-বিলাস আর ছলনা ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হ’বে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে ব্যক্তি সফলকাম হবে। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নয়’ (আল-ইমরান ৩/১৮৫)

মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে যতই উন্নতি সাধন করুক না কেন তবুও আগামীর খবর নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। এ জ্ঞান শুধুমাত্র জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিকট রয়েছে। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই রয়েছে ক্বিয়ামতের জ্ঞান। আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন মায়ের গর্ভাশয়ে কি আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সকল বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (লুকমান ৩১/৩৪)

সুতরাং যারা বিশ্বাসী, সৎকর্মশীল ও আদর্শবান মানুষ, তারা তাদের পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনকে সুন্দর ও সুখী করার জন্য সর্বদা আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে কাটায়। আর তাদের নির্ধারিত সময় (মৃত্যু) আসার পূবেই তারা পরকালীন পাথেয় সংগ্রহ করে। কারণ নির্ধারিত সময় এসে পড়লে তা আর কাউকে এক মুহূর্ত অবকাশ দেবে না। তাই যত ইবাদত বন্দেগী করার, তা মৃত্যু আসার পূর্বেই করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ- وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنَ الصَّالِحِينَ- وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ-

‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে ফেলে। যারা এতে রত হয়ে গাফেল হবে, তারাই হ’বে ক্ষতিগ্রস্ত’। আর আমরা তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা খরচ কর তোমাদের কারু মৃত্যু আসার আগেই। যাতে সে না বলে, হে আমার পালনকর্তা! যদি তুমি আমাকে স্বল্পকাল অবকাশ দিতে, তাহ’লে আমি ছাদাক্বাহ করতাম ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হ’তাম’। আর কখনোই আল্লাহ কাউকে অবকাশ দিবেন না যখন তার (মৃত্যুর) নির্ধারিত সময়কাল এসে যাবে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত’ (মুনাফিকুল ৬৩/৯-১১) । এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ আরো বলেন,

حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ- لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ- فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ-

অবশেষে যখন তাদের কারু কাছে মৃত্যু এসে যায়, তখন সে বলে হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) ফেরত পাঠান। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি করিনি। কখনই নয়। এটা তো তার একটি (বৃথা) উক্তি মাত্র যা সে বলে। বরং তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। অতঃপর যেদিন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন তাদের মধ্যে কোন আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং কেউ কারু খোঁজ-খবরও নিবে না (মুমিনূন ২৩/৯৯-১০১)। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কি বলেছেন,

 عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمَنْكِبِى فَقَالَ كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ-

ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, একদা আমরা দুই কাঁধ ধরে বললেন, তুমি এই দুনিয়ায় একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক। আর ইবনে ওমর (রাঃ) বলতেন, তুমি সন্ধায় উপনীত হ’লে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হ’লে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ কর’।[6]

অপর হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ كُنْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَهُ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الْمُؤْمِنِينَ أَفْضَلُ قَالَ أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا قَالَ فَأَىُّ الْمُؤْمِنِينَ أَكْيَسُ قَالَ أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا أُولَئِكَ الأَكْيَاسُ-

হযরত ইবনু ওমর (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক আনসারী নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে তাকে সালাম দিল। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? তিনি বললেন, স্বভাব-চরিত্রে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক উত্তম। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান’।[7]

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَنَسٍ قَالَ خَطَّ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم خُطُوطًا فَقَالَ هَذَا الأَمَلُ وَهَذَا أَجَلُهُ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَهُ الْخَطُّ الأَقْرَبُ-

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত একবার নবী (ছাঃ) কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা হ’ল মানুষ আর এটা হ’ল তার মৃত্যু। সে এই অবস্থার মধ্যেই থাকে। হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা বা মৃত্যু এসে পড়ে’। [8] অন্য একটি হাদীছে এসেছে,

عَنْ رَبِيعِ بْنِ خُثَيْمٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رضى الله عنه قَالَ خَطَّ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم خَطًّا مُرَبَّعًا، وَخَطَّ خَطًّا فِى الْوَسَطِ خَارِجًا مِنْهُ، وَخَطَّ خُطُطًا صِغَارًا إِلَى هَذَا الَّذِى فِى الْوَسَطِ، مِنْ جَانِبِهِ الَّذِى فِى الْوَسَطِ وَقَالَ هَذَا الإِنْسَانُ، وَهَذَا أَجَلُهُ مُحِيطٌ بِهِ أَوْ قَدْ أَحَاطَ بِهِ وَهَذَا الَّذِى هُوَ خَارِجٌ أَمَلُهُ، وَهَذِهِ الْخُطُطُ الصِّغَارُ الأَعْرَاضُ، فَإِنْ أَخْطَأَهُ هَذَا نَهَشَهُ هَذَا، وَإِنْ أَخْطَأَهُ هَذَا نَهَشَهُ هَذَا-

ইবনু মাসঊদ রাঃ) হ’তে বর্ণিত একদিন নবী করীম (ছাঃ) একটি চতুর্ভুজ আঁকলেন এবং এর মাঝখানে একটি রেখা টানলেন, যা চতুর্ভুজের বাইরে চলে গেল। তারপর মাঝের রেখার সাথে দু’পাশ দিয়ে ভিতরেরর দিকে কয়েকটি ছোট ছোট রেখা মেলালেন এবং বললেন, এর মাঝামাঝি রেখাটা হ’ল মানুষ আর চতুর্ভুজটি হ’ল তার মৃত্যু; যা তাকে ঘিরে রেখেছে। আর বাইরের দিক বর্ধিত রেখাটি হ’ল এর আশা-আকাঙ্খা। আর ছোট ছোট রেখাগুলি নানা রকম বিপদ-আপদ। যদি সে এর একটাকে এড়িয়ে যায় তবে অন্যটা তাকে আক্রমণ করে। আর অন্যটাও যদি এড়িয়ে যায়, তবে পরবর্তী অন্য একটি তাকে আক্রমণ করে’।[9]

মৃত্যুর কথা স্মরণ করে রাসূল (ছাঃ)-এর শেষ রাতে যা আমল করতেন। এ সম্পর্কে হাদীছ এসেছে, إِذَا ذَهَبَ ثُلُثَا اللَّيْلِ قَامَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا اللَّهَ اذْكُرُوا اللَّهَ جَاءَتِ الرَّاجِفَةُ تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ قَالَ أُبَىٌّ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّى أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِى فَقَالَ مَا شِئْتَ قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ قَالَ مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قُلْتُ النِّصْفَ قَالَ مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ قَالَ مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قُلْتُ أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِى كُلَّهَا قَالَ إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ- উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উঠে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, হে লোক সকল! আল্লাহকে স্মরণ কর। কম্পনকারী প্রথম ফুৎকার এবং তার সহগামী দ্বিতীয় ফুৎকার চলে এসেছে এবং মৃত্যু ও তার ভয়াবহতা নিয়ে হাযির। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমি (আমার দো‘আতে) আপনার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়ি। অতএব আমি আপনার প্রতি দরূদ পড়ার জন্য (দো‘আর) কতটা সময় নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তুমি যতটা ইচ্ছা কর। আমি বললাম এক চতুর্থাংশ? তিনি (ছাঃ) বললেন, যতটা চাও। যদি তুমি বেশী কর তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম অর্ধেক সময়? তিনি বললেন, তুমি যা চাও। যদি বেশী কর তাহ’লে তা ভালো হবে। আমি বললাম দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বলেন, তুমি যা চাও। যদি বেশী কর তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমি আমার (দো‘আর) সম্পূর্ণ সময় দরূদের জন্য নির্দিষ্ট করব। তিনি বললেন, তাহ’লে তো তা তোমার দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য যথেষ্ট হ’বে এবং তোমার পাপকে মোচন করা হবে’।[10]

আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদের সকলকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একজন আদর্শবান ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার তাওফীক দান করুন। আমীন!

 [লেখক : সভাপতি, দিনাজপুর সাংগঠনিক যেলা ]



[1]. বুখারী হা/ ৬৪১৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১১৪; মিশকাত হা/১৬০৪।

[2]. বায়হাকী, ইবনু কাছীর ১৭/৭৭০ পৃ.।

[3]. বুখারী হা/৫৮১০; নাসাঈ হা/ ৫৩২১; ইবনু মাজাহ হা/ ৩৫৫৫।

[4]. বুখারী হা/ ৩৭৯৮; মুসিলম হা/ ২০৫৪; তিরমিযী হা/ ৩৩০৪।

[5]. মুসলিম হা/ ১৭২৮; আবু দাঊদ হা/ ১৬৬৩; আহমাদ হা/ ১০৯০০।

[6]. বুখারী হা/৬৪১৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১১৪; আহমাদ হা/৪৭৫।

[7]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯;।

[8]. বুখারী হা/৬৪১৮; তিরমিযী হা/২৩৩৬; ইবনু মাজাহ হা/৪২৩।

[9]. বুখারী হা/৬৪১৭; তিরমিযী হা/৩৪৫৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২৩০।

[10]. তিরমিযী হা/২৪৫৭; আহমাদ হা/২০৭৩৫।



আরও