ছাদাক্বাহ

নাজমুল আহসান 8610 বার পঠিত

উপক্রমণিকা :

ছাদাক্বার সুফল উভয় জগতে পরিব্যপ্ত। এ জন্যই রাসূল (ছাঃ) প্রত্যেক ব্যক্তিকে ছাদাক্বাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং স্বয়ং নিজেই ছাদাক্বাহ প্রদানে রোল মডেল ছিলেন। আলোচ্য নিবন্ধে ছাদাক্বার ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।

ছাদাক্বার ইহলৌকিক কল্যাণ:

রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ- ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোন অভাবী লোকের অভাব দূর করে দিবে আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের (উভয় জাগতে) অভাব দূর করে দিবেন’।[1]

ছাদাক্বার ফলে ইহলৌকিক অনেক কল্যাণ আমরা লাভ করে থাকি। নিম্নে ছাদাক্বার দুনিয়াবী প্রাপ্তি ও কল্যাণ কী তা আমরা জানব।

১. দোআ : ছাদাক্বার ফলে নগদ যেটি পাই তা হ’ল দো‘আ। আর এটা ছাদাক্বার অগ্রিম প্রাপ্তি। মহান আল্লাহ বলেন, خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ‘তুমি তাদের মাল-সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ কর। যা দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করবে ও পরিশুদ্ধ করবে এবং তাদের জন্য তুমি দো‘আ কর। নিশ্চয়ই তোমার দো‘আ তাদের জন্য প্রশান্তি স্বরূপ। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা’ (তাওবাহ ৯/১০৩)। রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদের নিকট থেকে ছাদাক্বাহ গ্রহণের সময় তাদের জন্য দো‘আ করতেন। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আওফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট কোন সম্প্রদায় যখন ছাদাক্বা নিয়ে আসত তখন তিনি বলতেন, اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِمْ  হে আল্লাহ! তুমি তাদের উপর কল্যাণ বর্ষণ করুন। তিনি আরো বলেন, আমার পিতা ছাদাক্বাহ নিয়ে তাঁর নিকট আসলে তিনি বলতেন, اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى آلِ أَبِى أَوْفَى  হে আল্লাহ! আবু আওফার পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন! [2]

রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আ তাঁর মৃত্যুর পর যখন বন্ধ হয়ে গেল তখন কতিপয় ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছিল আমরা আর যাকাত (ছাদাক্বাহ) জমা করব না। তখন আবু বকর (রাঃ) তার সমাধান করেছিলেন কঠোর হস্তে। উমার (রাঃ) যার মর্ম উপলব্ধি করেছিলেন। কাজেই সকল দাতার জন্য উচিত হ’ল সমসাময়িক যথাযথ পন্থায় ছাদাক্বাহ প্রদানকারীর জন্য দো‘আ করা। ফলে তা অন্তরের প্রশান্তির কারণ হয়। এতদ্ব্যতীত অগ্রিম দো‘আর হ’ল দাতার প্রতি ফেরেশতা দো‘আ। হাদীছে এসেছে,  عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا-  আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বান্দারা যখন উঠে তখন দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার উত্তম প্রতিদান দিন এবং অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণের মাল ধ্বংস করে দিন’।[3]

২. সম্পদ বৃদ্ধি : রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ ‘ছাদাক্বায় সম্পদ হ্রাস পায় না অর্থাৎ বৃদ্ধি পায়’।[4] ছাদাক্বার এই দুনিয়াবী পুরস্কারের ঘোষণা আরো জোরালোভাবে অন্য বর্ণনায় বিদ্যমান।

হাদীছে আরো এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  قَالَ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْفِقْ أُنْفِقْ عَلَيْكَ وَقَالَ يَدُ اللَّهِ مَلأَى لاَ تَغِيضُهَا نَفَقَةٌ، سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَقَالَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِى يَدِهِ، وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ، وَبِيَدِهِ الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তুমি খরচ কর আমি তোমাকে দান করব এবং রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার হাত পরিপূর্ণ। রাত-দিন অবিরাম খরচেও তা কমবে না (অর্থাৎ কত দান করবে! আল্লাহ তত দিবেন। তিনি বলেন, তোমরা কি দেখ না? যখন থেকে আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে কি পরিমাণ খরচ করেছেন। কিন্তু এত খরচ করার পরও তার হাতের সম্পদে কোন কমতি হয়নি। আর আল্লাহ তা‘আলার আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে দাঁড়িপাল্লা। তিনি ঝুঁকান, তিনি উপরে উঠান’।[5] 

হাদীছে কুদসীর অন্য বর্ণনায় আছে, أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ ‘হে আদম সন্তান! দান কর তুমি, দান করব তোমাকে আমি’।[6] বনী আদম সকলে সমবেত হয়ে যদি আল্লাহর নিকট চাই আর আল্লাহ তাদের চাওয়া পূরণ করেন তাহ’লে তার ও তার সাম্রাজ্যের কোন কমতি হবে না।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَا عِبَادِى لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِى صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِى فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ مَسْأَلَتَهُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِى إِلاَّ كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ ‘আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ ব্যক্তি, সমস্ত মানুষ ও জ্বিন একই মাঠে দাঁড়িয়ে একত্রে আমার নিকট চায়, আর আমি তোমাদের প্রত্যেককে তার চাওয়া জিনিস দেই তা আমার কাছে যা আছে তার কিছুই কমাতে পারবে না, অতখানি ব্যতীত যতখানি কমায় একটি সুই যখন সুমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হয় (আর উঠে নেওয়া হয়)’।[7]

এছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর যবানীতে এই কসম বিদ্যমান যে দানে সম্পদ কমে না। হাদীছে এসেছে, أَبُو كَبْشَةَ الأَنْمَارِىُّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ثَلاَثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ. قَالَ مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ-  আবু কাবশাহ আনসারী (রা) বলেন, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘যে তিনটি বিষয় রয়েছে যার উপরে আমি কসম করছি। আর আমি তোমাদের একটি হাদীছ বলব যা তোমরা মুখস্থ রেখ। অতঃপর আমি যেগুলির উপর কসম করছি তা এই যে ছাদাক্বার ফলে বান্দার সম্পদ হ্রাস পায় না’।[8]

আল্লাহর পথে ব্যয় করলে আল্লাহ ধারণাতীত উৎস থেকে দান করনে এবং দারিদ্রের পথ বন্ধ করে দেন। তিনিই অফুরন্ত কল্যাণের অধিকারী। আল্লাহ বলেন, وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنْتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ  ‘আর আমরা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু প্রেরণ করি। অতঃপর আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করি। এরপর তা তোমাদেরকে পান করাই। অথচ তোমাদের কাছে এর কোন ভান্ডার নেই’ (হিজর ১৫/২২)। দানে সম্পদ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তা নিম্নোক্ত হাদীছের গল্পের মাধ্যমে সহজেই অনুমেয়।

‘একদা একলোক পানি হীন প্রান্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথি মধ্যে সে মেঘ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেল। অমুক ব্যক্তির বাগানে পানি বর্ষণ কর। এটা শুনে মেঘ খন্ডটি এক দিকে এগিয়ে গেল এবং প্রস্তরময় ভূখন্ডে পানি বর্ষণ করল। আর পানি ছোট ছোট নালাসমূহ থেকে বড় একটি নালার দিকে অগ্রসর হ’ল। এমনকি পানি পুরো বাগানকে বেষ্টন করে নিল। লোকটি ঐ পানির পেছনে পেছনে যেতে লাগল এমন সময় সে দেখতে পেল এক ব্যক্তি তার বাগানে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং সে তার বেলচা দিয়ে পানি এদিক-সেদিক ছিটিয়ে দিচ্ছে। সে ঐ ব্যক্তিকে জিঙ্গাসা করল। হে আল্লাহর বান্দা! আপনার নাম কি? সে বলল আমার না অমুক। অর্থাৎ ঐ নামই বলল যা সে মেঘ থেকে শুনতে পেয়েছিল। বাগানের মালিক বলল। হে আল্লাহর বান্দা! আমার নাম তুমি কেন শুনলে? সে বলল, যে মেঘ থেকে এ পানি বর্ষিত হয়েছে তা থেকে আমি শুনতে পেয়েছিলাম। ঐ আওয়াজ ছিল এই যে, অমুকের বাগানে গিয়ে পানি বর্ষণ কর। আপনার নামই তাতে বলা হয়েছিল। আচ্ছা আপনি এমন কি আমল করেছেন? সে বলল, তুমি যখন জানতে চাইলে তাহ’লে শুন। এ বাগান থেকে যা কিছু উৎপন্ন হয় আমি তার তত্ত্বাবধান করি। উৎপাদিত দ্রব্যের এক তৃতীয়াংশ দান করি আর এক তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার খেয়ে থাকি আর এক তৃতীয়াংশ পুনরায় এতে বপণ করি’।[9]

উল্লেখ্য যে, উৎপাদিত ফসলের যাকাত এক দশমাংশ অথবা বিশ ভাগের এক ভাগ। সেখানে এ তৃতীয়াংশ দান করার কারণে আল্লাহ তাকে এভাবে রূযী প্রদান করলেন ও সম্মানিত করলেন।

৩. আল্লাহর নিকট সম্মান বৃদ্ধি :

ছাদাক্বাহ প্রদানকারীর মান-মর্যাদা আল্লাহর নিকট অনেক বেশী। রাসূল (ছাঃ)- বলেন, الْعَامِلُ عَلَى الصَّدَقَةِ بِالْحَقِّ كَالْغَازِى فِى سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى بَيْتِهِ  ‘ন্যায় নিষ্ঠার সাথে যাকাত আদায়কারী মহান আল্লাহর পথে জিহাদকারী সৈনিকের সমান যে পর্যন্ত না সে বাড়ীতে ফিরে আসে’।[10]

কে না জানে আল্লাহর পথে জিহাদ কারীর মর্যাদা আল্লাহর নিকট কত বেশী।

আল্লাহ বলেন,  لَا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَفَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا- ‘যথার্থ ওযর ব্যতীত গৃহে উপবিষ্ট মুমিনগণ ঐসব মুজাহিদগণের সমান নয়, যারা তাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। যারা মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা উপবিষ্টদের উপরে এক স্তর  বৃদ্ধি করেছেন। আর উভয়ের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদগণকে উপবিষ্টদের উপরে মহা পুরস্কারে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন’ (নিসা ৪/৯৫)

তিনি আরো বলেন, دَرَجَاتٍ مِنْهُ وَمَغْفِرَةً وَرَحْمَةً وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا ‘এগুলি তাঁর পক্ষ হ’তে প্রদত্ত মর্যাদা সমূহ এবং ক্ষমা ও দয়া। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নিসা ৪/৯৬)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَالْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى ‘উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে উত্তম’।[11] অর্থাৎ উপরের হাত হ’ল দাতার হাত এবং নিচের হাত হ’ল গ্রহীতার হাত। রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, إِنَّمَا الدُّنْيَا لأَرْبَعَةِ نَفَرٍ عَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالاً وَعِلْمًا فَهُوَ يَتَّقِى فِيهِ رَبَّهُ وَيَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ وَيَعْلَمُ لِلَّهِ فِيهِ حَقًّا فَهَذَا بِأَفْضَلِ الْمَنَازِلِ  ‘দুনিয়া চার শ্রেণীর লোকের জন্য। তার প্রথম শ্রেণী যে বান্দাকে আল্লাহ সম্পদ ও ইলম দান করেছেন এবং সে এগুলির ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে চলে। এগুলির সাহায্যে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে চলে এবং এর সাথে জড়িত আল্লাহর অধিকার সম্পর্কে সজাগ থাকে (ফরয যাকাত, ওশর ছাদাক্বাহ ইত্যাদি আদায়ে সক্রিয়) এ ব্যক্তি উৎকৃষ্টতম মর্যাদার অধিকারী’।[12]

একটি বিষয় সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে। যে ব্যক্তি দুনিয়াবী মান-মর্যাদার জন্য ছাদাক্বাহ করবে আল্লাহ তার জন্য পরকালে কোন অংশ রাখবেন না; বরং আল্লাহ প্রথমে শহীদ, জ্ঞানী ও দানশীল এই তিন শ্রেণীর লোকের বিচার করবেন। আর এরা প্রত্যেকেই লৌকিকতার কারণে ধ্বংস হবে। তবে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা দান করবেন তারা সফলকাম হবেন।

৪. আয়ু বৃদ্ধি :

ছাদাক্বাহ করলে আয়ু বৃদ্ধি পায়। অবশ্যই বিষয়টি এরূপ যে আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার সাথে রূযী প্রশস্ত হওয়া ও আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি জড়িত। পক্ষান্তরে ছাদাকবার দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক সমুন্নত ও সুদৃঢ় হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِى رِزْقِهِ ، وَيُنْسَأَ لَهُ فِى أَثَرِهِ ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি চায় যে তার রূযী (জীবিকা) প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে’।[13] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ  (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) ও এক আনছারী মহিলা বিলাল (রাঃ)-এর মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-কে তাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত ইয়াতীম ও নিজ স্বামীর উপর খরচ করা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَهَا أَجْرَانِ أَجْرُ الْقَرَابَةِ وَأَجْرُ الصَّدَقَةِ ‘তাদের জন্য দু’টি ছাওয়াব রয়েছে আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখার এবং ছাদাক্বার ছওয়াব’।[14] 

ছাদাক্বার পারলৌকিক প্রতিদান :

দান-ছাদাক্বার দ্বারা পরকাল অনুসন্ধান করা একান্ত যরূরী। দুনিয়াবাসীর প্রতি অনুগ্রহের হাত প্রসারিত করে ইহকালে ও পরকালে কামিয়াব হওয়ার অন্যতম একটি উপায়। এ সম্পর্কে  মহান আল্লাহ বলেন, وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ  ‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন, তার দ্বারা আখেরাতের গৃহ সন্ধান কর। অবশ্য দুনিয়া থেকে তোমার প্রাপ্য (অপচয়হীন হালাল) অংশ নিতে ভুলো না। আর অন্যের প্রতি অনুগ্রহ (ছাদাক্বা) কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’(কাছাছ ২৮/৭৭)

১. মৃত্যুর পূর্বেই ছাদাক্বা ও  সুফল :

মৃত্যুর সাথে সাথেই পরকালের জীবন শুরু হয়ে যায়। আর যেহেতু মৃত্যুকালীন সময়ের বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেতে ছাদাক্বার বিকল্প কিছু নেই।  

মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ- وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنَ الصَّالِحِينَ-  ‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি তোমাদেরকে যে রিযক্ব দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব! যদি আপনি আমাকে আরো কিছু কাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন তাহ’লে আমি দান-ছাদাক্বা করতাম। আর সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম’ (মুনাফিকুন ৬৩/৯-১০)

মৃত্যুর পূর্বে ছাদাক্বা করা উচিত। মুমূর্ষু অবস্থায় নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ ، تَخْشَى الْفَقْرَ وَتَأْمُلُ الْغِنَى، وَلاَ تُمْهِلُ حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ قُلْتَ لِفُلاَنٍ كَذَا، وَلِفُلاَنٍ كَذَا، وَقَدْ كَانَ لِفُلاَنٍ ‘যখন তুমি সুস্থ থাক, ধনের প্রতি লোভ পোষণ কর; অপর দিকে ভয় কর তুমি দারিদ্রে্যর এবং আশা রাখ ধনী হওয়ার, তখনকার দান। সুতরাং তুমি অপেক্ষা করবে না দান করতে তোমার প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার সময় পর্যন্ত, তখন তুমি বলবে, এ মাল অমুকের জন্য, আর এ মাল অমুকের জন্য, অথচ মাল অমুকের হয়ে গিয়েছে’।[15]

মানুষের স্বভাব হয়ে গেছে অবকাশ চাওয়া। কিন্তু তাতে কি ফায়দা হবে? বরং যারা সময় থাকতে ছাদাক্বাহ করে ও হৃদয়ের প্রশান্তি অর্জন করে তারাই হলো আসল দানকারী।  তাদেরকে মালাকুত মাউত সম্বোধন করে বলবে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ- ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً-  فَادْخُلِي فِي عِبَادِي وَادْخُلِي جَنَّتِي- ‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে (ফাজর ৮৯/২৭-৩০)

পক্ষান্তরে যারা দান ছাদাক্বার মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ নির্বাপিত করে না। পাপ সমূহ থেকে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে না। তাদের মৃত্যুকালীন বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন,  فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ- ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ- ‘অতঃপর তাদের অবস্থা কেমন হবে যখন ফেরেশতারা তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশসমূহে আঘাত করতে করতে তাদের জীবনাবসান ঘটাবে? এটি এ জন্যে যে, তারা এমন সব বিষয়ের অনুসরণ করেছে যা আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করেছে এবং তারা তাঁর সন্তোষকে অপছন্দ করেছে ফলে আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ নিস্ফল করে দিয়েছেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৭-২৮)। যারা ছাদাক্বার মাধ্যমে নিজেদের পাপ মোচন করে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অর্জন করে তারা সফলকাম। ছাদাক্বাহ প্রদান করলে আল্লাহ সন্তুষ্টি হন এবং  তাঁর ক্রোধ প্রশমিত হয়।

২. কবরের আযাবের তীব্রতা কমাতে :

কবরের আযাব সত্য। আর কবর হ’ল আখিরাতের প্রথম মঞ্জিল। যে ব্যক্তি এখানে বেঁচে যাবে সে পরবর্তী সকল স্তরে বেঁচে যাবে। সেই আযাবের তীব্রতা কমাতে ছাদাক্বার ভূমিকা অপরিসীম। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,  إنّ الصّدقة لَتطفئُ عن أهْلِها حرَّ القُبورِ، وإنّما يستظلُ المؤمنُ يومَ القيامةِ في ظلِّ صَدَقَتِه- ‘নিশ্চয়ই ছাদাক্বাহ কবরবাসীর কবরের আযাবের তীব্রতা কমিয়ে দিবে এবং কিয়ামতের দিনে মুমিন তাঁর ছাদাক্বার ছায়াতলে আশ্রয় পাবে’।[16]

জেনে রাখা আবশ্যক যে, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি আমল ব্যতীত। তার মধ্যে অন্যতম ছাদক্বায়ে জারিয়া।[17] এজন্য জীবিত অবস্থায় বেশী বেশী ছাদাক্বাহ করা যরূরী।

৩. কিয়ামতের দিন ছায়া :

বিচার দিবসের কঠিন মুহূর্তে সুর্যের উত্তাপে মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়বে। কোন উপায় থাকবে না। তখন তার ছাদাক্বা ও  ঋণদান মুক্তির বড় মাধ্যম হিসাবে কাজ করবে। তাকে ছায়া দিয়ে বাঁচিয়ে নেবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ أَظَلَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ  ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম কোন ঋণগ্রহীতাকে অবকাশ দেবে অথবা তাকে ক্ষমা করে দিবে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন তার আরশের ছায়া দিবেন। যে দিন তার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না’।[18] রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন,  سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِى ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ  وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ أَخْفَى حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُه- ‘যেদিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না সেদিন আল্লাহ সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। তন্মধ্যে যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে ছাদাক্বাহ করে যে তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না’।[19] 

৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি :

জীবনের সর্বশেষ ও ভয়াবহ শাস্তির স্থান হ’ল জাহান্নাম। সেখানকার ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচার এক অনন্য হাতিয়ার হ’ল ছাদাক্বাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর, এক টুকরো খেজুর দান করে হলেও’।[20]

রাবী বলেন, নবী (ছাঃ) বললেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনি এরূপ করলেন তিনবার এমনটি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বললেন, তোমরা এক টুকরো খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। আর যদি মেটাতে না পাও তাহ’লে উত্তম কথার দ্বারা হলেও।

মহান আল্লাহ বলেন, مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ- الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের ন্যায়। যা থেকে সাতটি শিষ জন্মে। প্রত্যেকটি শিষে একশ’টি দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন বহুগুণ বর্ধিত করে দেন। আর আল্লাহ প্রশস্ত দানশীল ও সর্বজ্ঞ। যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, অতঃপর ব্যয় করার পর খোঁটা দেয় না বা কষ্ট দেয় না, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে পুরস্কার। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/১৬১-২৬২)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, إِنَّ الْمُصَّدِّقِينَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيمٌ ‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারীগণ এবং যারা আল্লাহকে উত্তম করয দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান’ (হাদীদ ৫৭/১৮)। হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَرضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ- وَلاَ يَقْبَلُ اللَّهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ- وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّى أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ- আবু হুরায়রা (ছাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তা হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরের মূল্য পরিমাণ দান করে। বলাবাহুল্য আল্লাহ হালাল বস্ত্ত ছাড়া কিছু কবুল করে না। তবে আল্লাহ সেই দান তার ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর ঐ দানকে বৃদ্ধি করতে তাকেন যেরূপ তোমাদের কেউ তার ঘোড় শাবক পালন করে থাকে। অবশেষে তা এক দিন পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়। আয়েশা হ’তে অন্য বর্ণনায় আছে অবশেষে তা একদিন উহুদ পাহাড় তুল্য হয়ে যায়’।[21]

রাসূল (ছাঃ) দানশীলদের উপমা দিতে গিয়ে বলেন, وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ فَأَوْثَقُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ فَقَالَ أَنَا أَفْدِيهِ مِنْكُمْ بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ. فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ ‘আমি তোমাদেরকে ছাদাক্বাহ করার নির্দেশ দিচ্ছি। ছাদাক্বাকারীর উপমা ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শত্রুরা পাকড়াও করে তার ঘাড়ের সাথে হাত বেঁধে ফেলেছে এবং হত্যার জন্য তাকে বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। তখন সে বলল, আমি আমার প্রাণের বিনিময়ে আমার সম্পদের কম-বেশী তোমাদের দিচ্ছি। অতঃপর সে মালের বিনিময়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল’।[22] কৃপণ ঠিকই একদিন মুক্তিপণ দিতে চাইবে যেমন মৃত্যুর সময় অবকাশ চায়। কিন্তু সেদিন তার মুক্তিপণ গ্রহনীয় হবে না।

৫. জোড়া ছাদাক্বা ও জান্নাতের দরজা থেকে আহবান :

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِى سَبِيلِ اللَّهِ نُودِىَ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّة- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার মাল থেকে এক জোড়া আল্লাহর পথে দান করবে তাকে জান্নাতের দরজা সমূহ থেকে ডাকা হবে’।[23]

অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে কোন মুসলিম বান্দা তার প্রত্যেক প্রকার সম্পদের এক জোড়া আল্লাহর পথে ছাদাক্বাহ করবে নিশ্চই জান্নাতের দ্বাররক্ষীগণ তাকে স্বাগতম জানাবেন এবং প্রত্যেকই তাকে নিজের কাছে যা আছে সেদিকে আহবান করবেন। আবু যার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কিভাবে? নবী (ছাঃ) বললেন, إِنْ كَانَتْ إِبِلاً فَبَعِيرَيْنِ وَإِنْ كَانَتْ بَقَرًا فَبَقَرَتَيْنِ ‘যদি কারো উট থাকে তাহ’লে দু’টি উট দান করবে, আর যদি কারো গরু থাকে তবে দু’টি গরু দান করবে।[24]

অন্য বর্ণনায় আছে, مَا مِنْ رَجُلٍ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ مِنْ مَالِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِلَّا ابْتَدَرَتْهُ حَجَبَةُ الْجَنَّةِ" قُلْتُ: وَمَا زَوْجَانِ مِنْ مَالِهِ؟ قَالَ: عَبْدَانِ مِنْ رَقِيقِهِ، فَرْسَانِ مِنْ خَيْلِهِ، بَعِيرَانِ مِنْ إِبِلِهِ ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে দু’টি সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে। জান্নাতের দাররক্ষী দ্রুত তার দিকে ছুটে যায়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সম্পদ সমূহের দু’টি সম্পদ কি? তিনি বললেন, গোলাম থেকে দু’টি গোলাম, ঘোড়া থেকে দু’টি ঘোড়া এবং উট থেকে দু’টি উট’।[25] 

শেষকথা : আমার মাল, আমার মাল কিন্তু তা হ’ল ঐটুকু যা আমরা ছাদাক্বাহ করি, খাই ও পরিধান করে থাকি।  অতএব আসুন, আল্লাহর পথে বেশী বেশী দান-ছাদাক্বা করে বৃহত্তর মানব কল্যাণে ব্রত হই। আল্লাহ আমাদের সহান হৌন-আমীন।

[ লেখক : বি এস সি অনার্স (ভূগোল) সাতক্ষীরা]


[1]. মুসলিম হা/৭০২৮; মিশকাত হা/২০৪।

[2]. বুখারী হা/৪১৬৬; মুসলিম হা/২৫৪৪।

[3]. বুখারী হা/১৪৪২; মুসলিম হা/২৩৮৩; মিশকাত হা/১৮৬০।

[4]. মুসলিম হা/৬৭৫৭; মিশকাত হা/১৮৮৯।

[5]. বুখারী হা/৪৬৮৪; মুসলিম হা/২৩৫৬; মিশকাত হা/৯২।

[6]. বুখারী হা/৫৩৫২; মিশকাত হা/১৮৬২।

[7]. মুসলিম হা/২৫৭৭; তিরিমিযী হা/২৪৯৫; ইবনু মাযাহ হা/৪২৫৭।

[8]. তিরিমিযী হা/২৪৯৫।

[9]. মুসলিম হা/৭৬৬৪; মিশকাত হা/১৮৭৭।

[10]. আবু দাঊদ হা/২৯৩৮; ইবনু মাজাহ হা/১৮০৯; ইবনু খুযাইমাহ হা/২৩৩৪; তিরিমিযী হা/৬৪৫; মিশকাত হা/১৭৮৫।

[11]. মুসলিম হা/২৪৩৫।

[12]. তিরমিযী হা/২৪৯৫; মিশকাত হা/৫২৮৭।

[13]. বুখারী হা/২০৬৭; ৫৯৮৬; মুসলিম হা/৬৬৮৭; মিশকাত হা/৪৯১৮।

[14]. বুখারী হা/ ১৪৬৬; মুসলিম হা/২৩৬৫; মিশকাত হা/১৯৩৪।

[15]. বুখারী হা/১৪১৯; মিশকাত হা/১৮৬৭।

[16]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪৮৪।

[17]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩।

[18]. মুসলিম হা/৭৭০৪; মিশকাত হা/২৯০৪।

[19]. বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/২৪২৭; মিশকাত হা/৭০১।

[20]. বুখারী হা/১৪১৭।

[21]. বুখারী হা/১৪১০; মিশকাত হা/১৮৮৮।

[22]. তিরমিযী হা/৩১০২; আহমাদ হা/১৭২০৯।

[23]. বুখারী হা/১৮৯৭।

[24]. নাসাঈ হা/৩১৯৮; মিশকাত হা/১৯২৪।

[25]. সিলসিলা ছহীহাহ/২২৬০।

 



বিষয়সমূহ: ইসলামী অর্থনীতি
আরও