হজ্জের শিক্ষা : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আসাদুল্লাহ আল-গালিব 5389 বার পঠিত

হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হজ্জের সাথে আর্থিক ও দৈহিক দু’টি কুরবানীই সমভাবে সম্পৃক্ত। ফলে এর দ্বারা খুব সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এতে রয়েছে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। নিম্নে হজ্জের মাক্বাছেদ (উদ্দেশ্যাবলী) তথা শিক্ষা সমূহ তুলে ধরা হ’ল।

তাওহীদ প্রতিষ্ঠা :

তাওহীদ হ’ল আল্লাহর একাত্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করা। এর বিপরীত হ’ল শিরক। আর আল্লাহ আমাদেরকে শিরক থেকে বেঁচে থেকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। একজন মুমিন আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সকল আনুগত্য ও ইবাদত হ’তে হবে তাওহীদ যুক্ত ও শিরক মুক্ত। আর হজ্জ পালন একনিষ্ঠ ইবাদতের শামিল। আর এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাওহীদ যুক্ত তালবিয়াহ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। যা হ’ল নিম্নরূপ, لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ  ‘আমি তোমার দরবারে হাযির আছি, হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমার দরবারে হাযির। নিশ্চিত সমস্ত প্রশংসা, নে‘মত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’।[1]

সুতরাং হজ্জ হ’ল তাওহীদ বাস্তবায়নের একটি অন্যতম মাধ্যম। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওহীদ ছাড়া কোন আমলই গ্রহণ করেন না। এজন্য হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِى غَيْرِى تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ  ‘আমি শিরককারীদের শিরক থেকে অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি আমার সাথে অন্য কাউকে অংশী স্থাপন করবে, আমি তাকে তার অংশীকে ছেড়ে দেই’।[2]

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি :

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হ’ল হজ্জ পালন করা। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ  ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ পালন করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হ’তে বিরত থাকল, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ হ’তে ফিরে আসবে যে দিন তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিল’।[3] 

অন্যত্র আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলছেন, أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ  ‘হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়, আর হিজরত পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়, আর হজ্জ পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়’?[4]  

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ  ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরা পরপর একত্রে আদায় কর। কেননা, এ হজ্জ ও ওমরা দারিদ্র ও গুনাহ দূর কর দেয়। যেমন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা হাপরের আগুনে দূর হয়। আর একটি কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়’।[5]  

তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন :

আল্লাহ অধিকাংশ হজ্জ সম্পর্কিত আয়াতেই তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জনের কথা বলেছেন। সূরা বাক্বারার ১৯৫ নং আয়াত এর প্রথমাংশে বলা হয়েছে- وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّهِ... ‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পূর্ণ কর’...। আর আয়াতে শেষাংশে বলা হচ্ছে- وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’।

অনুরূপভাবে সূরা বাক্বারার ১৯৭ আয়াত এর প্রথমাংশে বলা হয়েছে-الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ... ‘হজ্জের মাসগুলি নির্ধারিত’। আর আয়াতে শেষাংশে বলা হচ্ছে- وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَاأُولِي الْأَلْبَابِ... ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় হ’ল আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর’।

হজ্জের নিয়ম-রীতি সবকিছুই যে তাক্বওয়া অর্জনের নিমিত্তে তার প্রমাণ এ আয়াত দু‘টিও। মহান আল্লাহ বলেন, ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ ‘উপরের গুলি এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ সমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই সেটি হৃদয় নিঃসৃত আল্লাহভীতির প্রকাশ’ (হাজ্জ ২২/৩২)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ ‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকটে পৌঁছে না। বরং তাঁর নিকট পৌঁছে তোমাদের আল্লাহভীরুতা’ (হাজ্জ ২২/৩৭)

তাক্বওয়া শুধু উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্যই নয় বরং সকল উম্মতের জন্য সর্বোত্তম অছীয়ত ও শেষ দিবসের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ ‘বস্ত্ততঃ আমরা আদেশ করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের এবং তোমাদের এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর’ (নিসা ৪/১৩১)।  

সুতরাং হজ্জব্রত পালনে তাক্বওয়া অর্জন একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়।

আল্লাহকে স্মরণ :

প্রতিটি আমল আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তেই করতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, أَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي ‘আমার স্মরণে ছালাত কায়েম কর’ (ত্বহা ২০/১৪)। অনুরূপভাবে হজ্জ, ছিয়াম এবং প্রতিটি আনুগত্যের বিষয়গুলি আল্লাহর স্মরণেই হ’তে হবে। ফলে হজ্জে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর স্মরণ আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। মহান আল্লাহ বলেন, فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ- ‘তোমাদের কোন গোনাহ নেই। আর যখন তোমরা আরাফাত থেকে (মিনায়) ফিরবে, তখন (মুযদালিফায়) মাশ‘আরুল হারামে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তোমরা তাঁকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৮)

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ - لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ- ‘আর তুমি মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হ’তে। যাতে তারা তাদের (দুনিয়া ও আখেরাতের) কল্যাণের জন্য সেখানে উপস্থিত হতে পারে এবং রিযিক হিসাবে তাদের দেওয়া গবাদিপশুসমূহ যবেহ করার সময় নির্দিষ্ট দিনগুলিতে তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে’ (হজ্জ ২২/২৭-২৮)।  

হজ্জের যাবতীয় বিষয় যে আল্লাহর স্মরণেই নিমিত্ত সে বিষয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْىُ الْجِمَارِ لإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ  ‘নিশ্চয় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সাঈ, যামরায় পাথর নিক্ষেপসহ সব কিছুই আল্লাহর স্মরণ বাস্তবায়নের নিমিত্তেই সংগঠিত হয়ে থাকে’।[6]

আর আল্লাহর স্মরণ যে শ্রেষ্ঠ আমল সে সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেনব أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ وَأَرْفَعِهَا فِى دَرَجَاتِكُمْ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ قَالُوا بَلَى قَالَ  ذِكْرُ اللَّهِ تَعَالَى ‘আমি কি তোমাদেরকে অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয় পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হ’তে সবচেয়ে উঁচু। স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খায়রাত করার চেয়েও বেশী ভাল এবং তোমাদের শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল। তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হ’ল আল্লাহর স্মরণ’।[7]

সুতরাং হজ্জব্রত পালনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর স্মরণ যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি আমাদের মর্যাদাও উত্তরোত্তর বেড়ে যায়।

ঈমানের মযবুতী :

ইসলাম কবুলের পূর্বশর্ত ঈমান। এই ঈমান কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে। আল্লাহর স্মরণ, আনুগত্য, তাওবা-ইস্তিগফার, উত্তম আচরণসহ ইত্যাদি কল্যাণমূলক কাজে ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে অলসতা, অন্যায়, পাপাচারমূলক কাজে ঈমান কমে। আর হজ্জ এমন একটি ইবাদত যার দ্বারা অন্তরের পরিশুদ্ধিতা পায়। ফলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। হজ্জের আহকাম, তাহযীব-তামাদ্দুনসহ যাবতীয় আমলগুলি পালনে ঈমান পূর্ণতা পায়। আর একাগ্রচিত্তে আল্লাহর নিকট চাইলে তিনি তা গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ  ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, (তখন তাদের বল যে,) আমি অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমাকে আহবান করে এবং আমার উপরে নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখে। যাতে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৬)।   আর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الحجاج والعمار وفد الله، دعاهم فأجابوه، سألوه فأعطاهم ‘হজ্জ ও ওমরা পালনকারী ব্যক্তি আল্লাহর সৈনিক। তারা ডাকলে আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দিবেন এবং তারা আল্লাহর নিকট চাইলে আল্লাহ তাদের তা দিবেন’।[8] 

আল্লাহর ডাকে সাড়া দান :

যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের উপর হজ্জ পালন করা ফরয ইবাদত। এতে আল্লাহর নির্দেশনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ  ‘আর তুমি মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হ’তে’ (হজ্জ ২২/২৭)

আর সেই ডাকে মানুষ সাড়া দিয়ে হজ্জে لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ... উচ্চধ্বনিতে আকাশ-বাতাশ মুখরিত করে তোলে। আর উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশনা দিয়েছেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, جَاءَنِى جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ مُرْ أَصْحَابَكَ فَلْيَرْفَعُوا أَصْوَاتَهُمْ بِالتَّلْبِيَةِ فَإِنَّهَا مِنْ شِعَارِ الْحَجِّ ‘জিব্রাঈল (আঃ) আমার নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! তোমার অনুসারীদের নির্দেশ দাও তারা যেন উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করে। কেননা তা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্য হ’তে অন্যতম’।[9] 

উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ একটি মহৎ কাজ। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,  مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُلَبِّى إِلاَّ لَبَّى مَنْ عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ مِنْ حَجَرٍ أَوْ شَجَرٍ أَوْ مَدَرٍ حَتَّى تَنْقَطِعَ الأَرْضُ مِنْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا  ‘যখন কোন মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়’।[10]

পৃথিবীর সব কিছুই যে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا ‘সাত আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই যা তার প্রশংসাসহ মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা বর্ণনা তোমরা বুঝতে পারো না। নিশ্চয়ই তিনি অতীব সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৪৪)

হজ্জের উপকারিতা অর্জন :

মহান আল্লাহ বলেন, وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ ‘আর তুমি মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হ’তে’ (হজ্জ ২২/২৭)

নবী-রাসূলদের স্মরণ :

হজ্জব্রত পালনে গেলে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ হয়। বিশেষ করে ইবরাহীম (আঃ), ইসমাঈল (আঃ) ও মা হাযেরা সম্পর্কে। (১) পবিত্র কাবা ঘর দর্শনের সাথে সাথে ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর কথা স্মরণ হয়। কাবা নির্মাণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল বায়তুল্লাহর ভিত্তি স্থাপন করেছিল, তখন তারা প্রার্থনা করেছিল, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের পক্ষ হ’তে এটি কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/১২৭)। (২) মাকামে ইবরাহীম। যার উপর দাঁড়িয়ে ইবরাহীম (আঃ) কাবা ঘর নির্মাণ করেছিলেন। সাত তাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হয়। আর সেটা মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে হওয়া বাঞ্চনীয় যদি না ভীড় থাকে। এতে ইবরাহীম (আঃ)-এর স্মরণ করিয়ে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى ‘তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে ছালাতের স্থান হিসাবে গ্রহণ কর’ (বাক্বারাহ ২/১২৫)

(৩) যমযম কুপ ও সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থলে সাঈ করার প্রাক্কালে মা হাজেরার সেই স্বগতোক্তির কথা মনে পড়ে যখন পিতা ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে ও শিশু সন্তানকে এক বিরাণভূমিতে রেখে যাচ্ছিলেন, তখন মা হাযেরা বলেছিলেন, من أمرك أن تضعني بأرض ليس فيها ضَرْع ولا زرع ، ولا أنيس ، ولا زاد ولا ماء؟  ‘আপনি কার নির্দেশে আমাকে এমন জায়গায় রেখে যাচ্ছেন যেখানে কোন দুধ, শস্য বা মানুষ কিংবা খাদ্য-পানীয় নেই। তখন ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন,ربي أمرني  ‘আমার প্রভু আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তখন মা হাযেরা বলেছিলেন, فإنه لن يضيِّعنا ‘নিশ্চয় তিনি আমাদের ধ্বংস করবেন না’।[11]

(৪) একইভাবে আরাফায় অবস্থানের সময় রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, كُونُوا عَلَى مَشَاعِرِكُمْ فَإِنَّكُمْ عَلَى إِرْثٍ مِنْ إِرْثِ إِبْرَاهِيمَ  ‘হজ্জের নির্ধারিত স্থান সমূহে অবস্থান কর। কারণ তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-এর উত্তরাধীকার প্রাপ্ত হয়েছে’।[12]

নবীগণ দীনার ও দিরহামের ওয়ারিছ হন না; বরং তারা আল্লাহর দ্বীনের ওয়ারিছ হন। রাসূর (ছাঃ) বলেছেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ  ‘আরাফার দিনের দো‘আই উত্তম দো‘আ’।[13] 

(৫) অনুরূপভাবে পাথর নিক্ষেপের সময় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইবরাহীম (আঃ)-এর কথা। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে মারফ‘ু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, لما أتى إبراهيم خليل الله المناسك عرض له الشيطان عند جمرة العقبة فرماه بسبع حصيات حتى ساخ في الأرض ثم عرض له عند الجمرة الثانية فرماه بسبع حصيات حتى ساخ في الأرض ثم عرض له عند الجمرة الثالثة فرماه بسبع حصيات حتى ساخ في الأرض  ‘যখন ইবরাহীম (আঃ) কোরবানগাহে আসছিলেন তখন জামরায়ে আক্বাবায় শয়তান ধোঁকায় দিচ্ছিল। ফলে তিনি ৭টি পাথর নিক্ষপ করলে শয়তান মাটিতে গেড়ে যায়। অতঃপর দ্বিতীয় জামরায় শয়তান ধোঁকা দিলে তিনি পুনরায় ৭টি পাথর নিক্ষেপ করেন। এতে শয়তান মাটিতে দেবে যায়। এভাবে তৃতীয় জামরাতে শয়তান ধোঁকা দিলে ইবরাহীম (আঃ) ৭টি পাথর নিক্ষেপের ফলে শয়তান মাটিতে দেবে যায়’।[14] 

কুরবানী যবেহ করার সময়কালে সেই মহান ঘটনার কথা স্মরণ হয় যখন ইবরাহীম খলীল স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী করছেন। এটা পুত্রের নিকট বর্ণনা করতেই তার দৃঢ়চিত্ত উত্তর আমাদের অন্তরাত্মাকে শিহরিত করে তোলে। যা কুরআনী ভাষায় এসেছে এভাবে-فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَابُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَاأَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ   الصَّابِرِينَ - فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ-‘অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরার বয়সে উপনীত হ’ল, তখন ইবরাহীম তাকে বলল, হে আমার বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি তোমাকে যবহ করছি। এখন ভেবে দেখ তোমার অভিমত কি? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। এভাবে পিতা-পুত্র উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং পিতা যখন পুত্রকে তার চেহারা ধরে মাটিতে কাত করে শোয়ালো’... (ছফফাত ৩৭/১০২-৩)

রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ :

হজ্জের বিধি-বিধান ও নিয়ম কানুনগুলি আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করার চেষ্টা করি। কোন কাজ করলে হজ্জের ত্রুটি হবে, কোন আমল সুন্নাত অনুযায়ী হবে এ বিষয়ে মনোনিবেশ করি। এ ক্ষেত্রে হযরত ওমর (রাঃ) এর কথা প্রণিধান যোগ্য। তিনি হাযারে আসওয়াদকে চুম্বনের প্রাক্কালে বলেছিলেন, إِنِّى أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ ، وَلَوْلاَ أَنِّى رَأَيْتُ النَّبِىَّ - صلى الله عليه وسلم - يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ  ‘আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র। তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী (ছাঃ)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না’।[15]

মুশরিকদের আমলের বিরুদ্ধাচারণ :

জাহেলী যুগে মুশরিকরা যেভাবে হজ্জ পালন করত তা মহানবী (ছাঃ) সমূলে পরিবর্তন করে দেন। হজ্জের ভাষণে তিনি বলেন, أَلاَ كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ كَانَ مُسْتَرْضِعًا فِى بَنِى سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ  ‘সাবধান! জাহেলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নীচে। জাহেলী যুগের রক্তের দাবিও বাতিল হ’ল। আমি সর্বপ্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি তা হ’ল আমাদের বংশের রবী‘আহ ইবনু হারিসের পুত্রের রক্তপণ। সে শিশু অবস্থায় বানু সা‘দ গোত্রে দুগ্ধপোষ্য ছিল। তখন হুযায়েল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। জাহেলী যুগের সুদও বাতিল। আমি প্রথম যে সুদ হারাম করছি তা হ’ল আমাদের বংশের আববাস ইবনু আব্দুল মুত্ত্বালিবের সুদ। তার সমস্ত সুদ বাতিল হ’ল’।[16]

সুতরাং হজ্জব্রত পালন অবস্থায় যাবতীয় অপকর্ম ও জাহেলিয়াত থেকে দূরে থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَبْغَضُ النَّاسِ إِلَى اللَّهِ ثَلاَثَةٌ مُلْحِدٌ فِى الْحَرَمِ ، وَمُبْتَغٍ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ ، وَمُطَّلِبُ دَمِ امْرِئٍ بِغَيْرِ حَقٍّ لِيُهَرِيقَ دَمَهُ ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত লোক হচ্ছে তিন জন। (১) যে লোক হারাম শরীফে অন্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। (২) যে লোক ইসলামী যুগে জাহেলী যুগের রীতিনীতি অন্বেষণ করে। (৩) যে লোক ন্যায় সঙ্গত কারণ ছাড়া কারো রক্ত দাবী করে’।[17]

আখিরাতের কথা স্মরণ :

আখিরাতের চিত্র সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَوْ قَالَ الْعِبَادُ عُرَاةً غُرْلاً بُهْماً قَالَ قُلْنَا َمَا بُهْماً قَالَ لَيْسَ مَعَهُمْ شَىْءٌ ‘মানুষ ক্বিয়ামতের দিন একত্রিত হব খালি পায়ে বিবস্ত্র ও বুহম অবস্থায়। রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল বুহম কি? তিনি বললেন, যাদের নিকট কিছুই থাকবে না’।[18]

একজন ব্যক্তি ইহরাম বাঁধার পর ক্ষেতখামার, ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেন কোন কিছুই চলবে না। ফলে সকলের একই ইহরামের পোষাক কিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

একইভাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের আশায় সকল হজ্জব্রত পালনকারী ব্যক্তি আরাফার মাঠে একত্রিতভাবে অবস্থান করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘আরাফার দিবসের ব্যতীত আর এমন কোন দিন নেই যেদিন আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক সংখ্যক লোককে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন’।[19]

সুতরাং আরাফার ময়দানে অবস্থানও মানুষকে আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়। জ্ঞাতব্য যে, আরাফার মাঠে বিশেষভাবে দো‘আ করতে হবেব কেননা এই দিনের দো‘আ আল্লাহ কবুল করে থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘আরাফার দিনের দো‘আই হ’ল সর্বোত্তম দো‘আ’।[20] 

দ্বীনী ভ্রাতৃত্ববোধ :

হজ্জে বিভিন্ন দেশ, ভাষা ও বর্ণের লোক একত্রিত হয়। আর প্রত্যেকেই তাক্বওয়া অর্জনের প্রতিযোগিতা করে। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَلاَ إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ أَلاَ لاَ فَضْلَ لِعَرَبِىٍّ عَلَى أَعْجَمِىٍّ وَلاَ لِعَجَمِىٍّ عَلَى عَرَبِىٍّ وَلاَ لأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلاَ أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلاَّ بِالتَّقْوَى أَبَلَّغْتُ ‘হে লোক সকল! জেনে রাখ তোমাদের প্রভু একজন, তোমাদের পিতা একজন। জেনে রাখ! অনারবদের উপর আরবদের এবং আরবদের উপর অনারবদের কোন প্রাধান্য নেই তাক্বওয়া ব্যতীত। একইভাবে কালোর উপর লালের ও লালের উপর কালোর কোন প্রাধান্য নেই তাক্বওয়া ব্যতীত’।[21]

উত্তম চরিত্র গঠন :

হজ্জ উত্তম চরিত্র গঠনের একটি অন্যতম শিক্ষা কেন্দ্র। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হ’তে বিরত রইল সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ হ’তে ফিরে আসবে যেদিন তাকে তার মাতা জন্ম দিয়েছিল’।[22]

বিদায় হজ্জে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِالْمُؤْمِنِ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ ‘আমি তোমাদেরকে মুমিন ব্যক্তি সম্পর্কে বলে দিব না? মুমিন হ’ল সেই ব্যক্তি মানুষ যাকে নিজের জীবন ও সম্পদের ব্যাপারে আশংকামুক্ত মনে করে এবং মুসলিম সেই ব্যক্তি যার জিহবা ও হাত হ’তে সকল মুসলিম নিরাপদ’।[23]

অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-কে বলেছেন, يَا عُمَرُ إِنَّكَ رَجُلٌ قَوِىٌّ لاَ تُزَاحِمْ عَلَى الْحَجَرِ فَتُؤْذِىَ الضَّعِيفَ إِنْ وَجَدْتَ خَلْوَةً فَاسْتَلِمْهُ وَإِلاَّ فَاسْتَقْبِلْهُ فَهَلِّلْ وَكَبِّرْ ‘হে ওমর! নিশ্চয় তুমি শক্তিশালী পুরুষ। তুমি হাজরে আসওয়াদের  নিকট ঠেসাঠেসি কর না। যাতে দুর্বলরা কষ্ট পায়। যদি তুমি ফাঁকা পাও তাহ’লে তুমি পাথরকে (হাযার আসওয়াদকে) চুম্বন করবে’।[24] অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-কে দুর্বলদের প্রতি  সদয় হ’তে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং হজ্জে গেলে পরস্পর পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরী হয়।

অতএব আল্লাহ আমাদের সকলকে হজ্জ আদায়ের সৌভাগ্য দান করুন এবং হজ্জের যাবতীয় শিক্ষাগুলোকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়নের তাওফীক্ব দিন-আমীন।

 [লেখক : ৪র্থ বর্ষ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]

[1]মুসলিম হা/১২১৮

[2]মুসলিম হা/২৯৮৫

[3]বুখারী হা/১৫২১মুসলিম হা/১৩৫০

[4]মুসলিম হা/১২১

[5]তিরমিযী হা/২১১ইবনু মাজাহ হা/২৮৮৭

[6]আহমাদ হা/ ২৪৫১২সনদ হাসান

[7]তিরমিযী হা/৩৩৭৭

[8]সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮২০

[9]ইবনু মাজাহ হা/২৯২৩আহমাদ হা/২১২৭৮

[10]তিরমিযী হা/৮২৮মিশকাত হা/২৫৫০

[11]তাফসীর ইবনু জারীর ১৩/৬৯২ পৃঃ

[12]তিরমিযী হা/৮৮৩নাসাঈ হা/৩০১৪

[13]তিরমিযী হা/৩৫৮৫ছহীহাহ হা/১৫০৩

[14]হাকেম হা/১৭১৫আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১১৫৬

[15]বুখারী হা/১৫৯৭মুসলিম হা/১২৭০

[16]মুসলিম হা/১২১৮

[17]বুখারী হা/৬৮৮২

[18]আহমাদ হা/১৬০৪২

[19]মুসলিম হা/১৩৪৮

[20]তিরমিযী হা/৩৫৮৫

[21]আহমাদ হা/২৩৫৩৬

[22]বুখারী হা/১৫২১

[23]আহমাদ হা/২৪০১৩

[24]আহমাদ হা/১৯০




বিষয়সমূহ: হজ্জ্ব
আরও