কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমানের শাখা (৭ম কিস্তি)

হাফেজ আব্দুল মতীন 1057 বার পঠিত

(৫৯) দ্বীনদার ব্যক্তিদের নিকটবর্তী হওয়া, তাদের ভালোবাসা, তাদের মাঝে সালাম প্রচার করা এবং মুছাফাহা করা :

মুমিন ব্যক্তিদের সাথে সালাম বিনিময় একে অপরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম। নিজ গৃহে হোক বা অন্যের গৃহে হোক সালাম দিয়েই প্রবেশ করবে। আর অন্যের গৃহে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করবে না, অনুমতি দিলে সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যদের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা তাদের অনুমতি নাও এবং গৃহবাসীদের প্রতি সালাম কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। সম্ভবতঃ তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে (তা মেনে চলার মাধ্যমে)’ (নুর ২৪/২৭)

এরপর মহান আল্লাহ বলেন, فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ- ‘যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও, তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও! তাহলে তোমরা ফিরে এসো। এটাই তোমাদের জন্য পবিত্রতর। আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত’ (নুর ২৪/২৮)। শরী‘আতসম্মত এই সুন্দর আদবটি মহান আল্লাহ মুমিন ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রদান করেছেন যাতে করে তারা অন্যের গৃহে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়। আর প্রবেশ করার জন্য তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না দিলে ফিরে আসবে।

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ كُنْتُ فِى مَجْلِسٍ مِنْ مَجَالِسِ الأَنْصَارِ إِذْ جَاءَ أَبُو مُوسَى كَأَنَّهُ مَذْعُورٌ فَقَالَ اسْتَأْذَنْتُ عَلَى عُمَرَ ثَلاَثًا، فَلَمْ يُؤْذَنْ لِى فَرَجَعْتُ فَقَالَ مَا مَنَعَكَ قُلْتُ اسْتَأْذَنْتُ ثَلاَثًا، فَلَمْ يُؤْذَنْ لِى فَرَجَعْتُ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلاَثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ، فَلْيَرْجِعْ فَقَالَ وَاللَّهِ لَتُقِيمَنَّ عَلَيْهِ بِبَيِّنَةٍ أَمِنْكُمْ أَحَدٌ سَمِعَهُ مِنَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ وَاللَّهِ لاَ يَقُومُ مَعَكَ إِلاَّ أَصْغَرُ الْقَوْمِ، فَكُنْتُ أَصْغَرَ الْقَوْمِ، فَقُمْتُ مَعَهُ فَأَخْبَرْتُ عُمَرَ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ذَلِكَ-

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি আনছারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবু মুসা (রাঃ) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেন, আমি তিনবার উমর (রাঃ) আর নিকট অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে এলাম। উমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে কিসে বাধা দিল? আমি বললাম, আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে আসলাম (কারণ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাতে অনুমতি দেয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়। তখন উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে এ কথার উপর অবশ্যই প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মাঝে কেউ কি যিনি নবী করীম (ছাঃ) থেকে এ হাদীছ শুনেছ? তখন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আপনার কাছে প্রমাণ দিতে দলের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিই উঠে দাঁড়াবে। আর আমি দলের সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, রাসূল (ছাঃ) অবশ্যই এ কথা বলেছেন’।[1] অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو  رضى الله عنهما أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি অন্যকে খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সকলকে সালাম প্রদান করবে।[2]

অন্যত্র এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُسَلِّمُ الصَّغِيرُ عَلَى الْكَبِيرِ، وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে পথচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে’।[3] রাসূল (ছাঃ) শিশুদেরকেও সালাম দিতেন। عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه أَنَّهُ مَرَّ عَلَى صِبْيَانٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَفْعَلُهُ ‘আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, একবার আনাস (রাঃ) একদল শিশুর পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রমকালে তিনি তাদের সালাম দিলেন এবং বললেন যে নবী করীম (ছাঃ) তা করতেন’।[4]  মহিলাদের সালাম দেওয়া সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ, عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها حَدَّثَتْهُ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهَا إِنَّ جِبْرِيلَ يُقْرِئُكِ السَّلاَمَ قَالَتْ وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ ‘আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা নবী করীম (ছাঃ) তাঁকে বললেন, জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, ওয়া আলাইহিস সালাম ও রহমাতুল্লাহ’।[5]

হাদীছে এসেছে, عَنْ سَهْلٍ قَالَ كُنَّا نَفْرَحُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ قُلْتُ وَلِمَ قَالَ كَانَتْ لَنَا عَجُوزٌ تُرْسِلُ إِلَى بُضَاعَةَ قَالَ ابْنُ مَسْلَمَةَ نَخْلٍ بِالْمَدِينَةِ فَتَأْخُذُ مِنْ أُصُولِ السِّلْقِ فَتَطْرَحُهُ فِى قِدْرٍ، وَتُكَرْكِرُ حَبَّاتٍ مِنْ شَعِيرٍ، فَإِذَا صَلَّيْنَا الْجُمُعَةَ انْصَرَفْنَا وَنُسَلِّمُ عَلَيْهَا فَتُقَدِّمُهُ إِلَيْنَا، فَنَفْرَحُ مِنْ أَجْلِهِ، وَمَا كُنَّا نَقِيلُ وَلاَ نَتَغَدَّى إِلاَّ بَعْدَ الْجُمُعَةِ- সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা জুম‘আর দিনে খুশি হতাম। রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম, কেন? তিনি বললেন, আমাদের একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। সে কোন লোককে ‘বুদ‘আ’ নামক খেজুর বাগানে পাঠিয়ে বীচ চিনির শিকড় আনতো। তা একটি হাঁড়িতে দিয়ে সে তাতে কিছুটা যবের দানা দিয়ে ঘুঁটে এক রকম খাবার তৈরী করত। এরপর আমরা যখন জুম‘আর ছালাত আদায় করে ফিরতাম তখন আমরা এ মহিলাকে সালাম দিতাম। তখন সে আমাদের ঐ খাবার পরিবেশন করত। আমরা এজন্য খুশী হতাম। আমাদের নিয়ম ছিল যে, আমরা জুম‘আর পরেই মধ্যাহ্নভোজন এবং বিশ্রাম  করতাম’।[6] 

একে অপরের মাঝে সালাম প্রচার-প্রসার এর মাধ্যমে মহববত বাড়বে।

হাদীছে এসেছে, عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رضى الله عنهما قَالَ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِسَبْعٍ بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ، وَتَشْمِيتِ الْعَاطِسِ، وَنَصْرِ الضَّعِيفِ، وَعَوْنِ الْمَظْلُومِ، وَإِفْشَاءِ السَّلاَمِ، وَإِبْرَارِ الْمُقْسِمِ، وَنَهَى عَنِ الشُّرْبِ فِى الْفِضَّةِ، وَنَهَانَا عَنْ تَخَتُّمِ الذَّهَبِ، وَعَنْ رُكُوبِ الْمَيَاثِرِ، وَعَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ، وَالدِّيبَاجِ، وَالْقَسِّىِّ، وَالإِسْتَبْرَقِ- বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন- রোগীর খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, হাঁচি দাতার জন্য দো’আ করা, দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলুমের সাহায্য করা, সালামের প্রচার-প্রসার করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ণ করা। আর নিষেধ করেছেন, (সাতটি কাজ থেকে) রুপার পাত্রে পানাহার, স্বর্ণের আংটি পরিধান, রেশমী জিনের উপর সওয়ার হওয়া, মিহি রেশমী বস্ত্ত পরিধান, পাতলা রেশমী বস্ত্র ব্যবহার, রেশম মিশ্রিত কাতান বস্ত্র পরিধান এবং গাঢ় রেশমী পরিধান করা’।[7]

তিনি অন্যত্র বলেন,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ-

আবূু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না বিশ্বাস স্থাপন করবে। বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে না যতক্ষণ না পরস্পরে ভালোবাসা স্থাপন করবে, তাহলে আমি কি তোমাদের সে বিষয়টি বলে দেব না যেটি করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা তৈরী হবে?  তোমরা তোমাদের পরস্পরের মাঝে সালামের প্রচার-প্রসার কর’।[8]

হাদীছে আরো এসেছে, عَنْ قَتَادَةَ قَالَ قُلْتُ لأَنَسٍ أَكَانَتِ الْمُصَافَحَةُ فِى أَصْحَابِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ نَعَمْ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের মধ্যে কি মুছাফাহা চালু ছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।[9] অন্যত্র এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلاَلِى الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِى ظِلِّى يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّى- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন বলবেন, যারা আমার মর্যাদা-সম্মানার্থে পরস্পরকে ভালোবেসেছিল তারা কোথায়? আজকে আমি তাদের আমার ছায়াতলে ছায়া দিব। এ দিনে আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই’।[10]

(৬০) সালামের উত্তর  দেওয়া :

মহান আল্লাহ  বলেন, وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا ‘আর যখন তোমরা সম্ভাষণপ্রাপ্ত হও, তখন তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ প্রদান কর অথবা ওটাই প্রত্যুত্তর কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী’ (নিসা ৪/৮৬)। যখন তোমাদের কোন মুসলমান ভাই সালাম দেয় তখন তাকে তার থেকে উত্তমভাবে জবাব দাও, অথবা তার অনুরূপ উত্তর দাও।

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ عَلَى الطُّرُقَاتِ فَقَالُوا مَا لَنَا بُدٌّ، إِنَّمَا هِىَ مَجَالِسُنَا نَتَحَدَّثُ فِيهَا قَالَ فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجَالِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهَا قَالُوا وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ قَالَ غَضُّ الْبَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ، وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَر-ِ আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে একবার নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক। তারা বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের রাস্তায় বসা ব্যতীত কোন উপায় নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তখন তিনি বললেন, যদি তোমাদের রাস্তায় বসা ব্যতীত উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাস্তার হক্ব আদায় করবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক্ব কি? তিনি বললেন, তা হ’ল চক্ষু অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেয়া। সালামের জবাব দেয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা’।[11]

(৬১) অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা :

হাদীছে এসেছে, عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رضى الله عنهما قَالَ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِسَبْعٍ بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ، وَتَشْمِيتِ الْعَاطِسِ، وَنَصْرِ الضَّعِيفِ، وَعَوْنِ الْمَظْلُومِ، وَإِفْشَاءِ السَّلاَمِ، وَإِبْرَارِ الْمُقْسِمِ، وَنَهَى عَنِ الشُّرْبِ فِى الْفِضَّةِ، وَنَهَانَا عَنْ تَخَتُّمِ الذَّهَبِ، وَعَنْ رُكُوبِ الْمَيَاثِرِ، وَعَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ، وَالدِّيبَاجِ، وَالْقَسِّىِّ، وَالإِسْتَبْرَقِ- বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, রোগীর খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, হাঁচিদাতার জন্য দো’আ করা, দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলুমের সাহায্য করা, সালামের প্রচার-প্রসার করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ণ করা। আর নিষেধ করেছেন, (সাতটি কাজ থেকে) রুপার পাত্রে পানাহার, স্বর্ণের আংটি পরিধান, রেশমী জিনের উপর সওয়ার হওয়া, মিহি রেশমী বস্ত্ত পরিধান, পাতলা রেশমী বস্ত্র ব্যবহার, রেশম মিশ্রিত কাতান বস্ত্র পরিধান এবং গাঢ় রেশমী পরিধান করা’।[12] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেছেন, عَائِدُ الْمَرِيضِ فِى مَخْرَفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ ‘যে ব্যক্তি অসুস্থ ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত রয়েছে, সে জান্নাতের পথে রয়েছে যতক্ষণ না সে ফিরে আসে’।[13]

(৬২) যে ব্যক্তিই মারা যাক তার জানাযার ছালাত পড়া :

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلاَمِ، وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ- আবু হুরায়রা হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি যে, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক্ব পাঁচটি : (১) সালামের জওয়াব দেওয়া (২) অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া। (৩) জানাযার পশ্চাদনুসরণ করা। (৪) দাওয়াত কবুল করা। (৫) হাঁচির দাতার উত্তর দেওয়া (আল-হামদুলিল্লাহর জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা)’।[14]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের ছয়টি হক্ব রয়েছে, জিজ্ঞেস করা হ’ল সেগুলি কী কী হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, (১) যখন তুমি সাক্ষাৎ করবে তখন তার উপর সালাম দিবে (২) তোমাকে দাওয়াত করলে তা কবুল করবে। (৩) তোমাকে নছীহত করলে তা গ্রহণ করবে। (৪) হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহর জবাব দিবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে (তার জন্য দো‘আ করবে)। (৫) অসুস্থ হলে তার সেবা করবে। এবং (৬) কেউ মারা গেলে তার জানাযায় শরীক হবে।[15] অন্যত্র এসেছে,

عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ فَلَهُ قِيرَاطٌ فَإِنْ شَهِدَ دَفْنَهَا فَلَهُ قِيرَاطَانِ الْقِيرَاطُ مِثْلُ أُحُدٍ-

ছাওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জানাযার ছালাত আদায় করলো তার জন্য এক ক্বিরাত রয়েছে। আর যে ব্যক্তি জানাযার ছালাত ও দাফন করাতে উপস্থিত হ’ল তার জন্য দু’ক্বিরাত রয়েছে। এক ক্বিরাত হ’ল উহুদ পাহাড়ের সমান’।[16]                            (ক্রমশ)

[লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, সঊদীআরব]

[1]. বুখারী হা/৬২৪৫; আহমাদ হা/১১০৪৩; মুসলিম হা/৫৭৫১।

[2]. বুখারী হা/১২; আহমাদ হা/৬৫৮১; মুসলিম হা/৩৯।

[3]. বুখারী হা/৬২৩৪;  তিরমিযী হা/২৯২২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১৪৯।

[4]. বুখারী হা/৬২৪৭; আদাবুল মুফরাদ হা/১০৪৩; ছহীহাহ হা/১২৭৮।

[5]. বুখারী হা/৬২৫৩; আহমাদ হা/২৫৭৮৭; মিশকাত হা/৬১৭৮।

[6]. বুখারী হা/৬২৪৮।

[7]. বুখারী হ/৬২৩৫; মুসলিম হা/৩; ।

[8]. মুসলিম হা/৫৪; আহমাদ হা/৯০৭৩।

[9]. বুখারী হ/৬২৬৩; মিশকাত হা/৪৬৭৭।

[10]. মুসলিম হা/২৫৬৬; মিশকাত হা/৫০০৬।

[11]. বুখারী হা/৬২২৯; আহমদ হা/১১৩০৯; মুসলিম হা/২১২১।

[12]. বুখারী হা/৬২৩৫; মুসলিম হা/২০৬৬; আহমাদ হা/১৮৫৩২।

[13]. মুসলিম হা/২৫৬৮; আহমাদ হা/২২৪০৪।

[14]. বুখারী হা/১২৪০; আহমাদ হা/১০৯৬৬; মুসলিম হা/২১৬২।

[15]. মুসলিম হা/২১৬২; আহমাদ হা/৮৮৪৫।

[16]. মুসিলম হা/২২৩৯; আহমাদ হা/ ২২৩৮৪।




বিষয়সমূহ: সুন্নাত বিশ্বাস
আরও