ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর অবদান

আব্দুল হালীম বিন ইলিয়াস 599 বার পঠিত

ভূমিকা :

আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সুন্দর এই ভুবনে তাঁর ইবাদত করার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন । জীবন পরিচালনার জন্য তিনি অহি-র মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করেছেন। সেই সাথে মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিও দান করেছেন। ইচ্ছা করলে সে ইসলামের চিরকল্যাণময় বিধানকে নিজের চলার মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করতে পারে, আবার তা অস্বীকারও করতে পারে। মূলতঃ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্যই আল্লাহ তাদেরকে এ ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই নিজের ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করতে গিয়ে সত্য, ন্যায় ও অহি-র পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় এবং আল্লাহকে ভুলে প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়। চিরশত্রু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে নিজের অজান্তেই ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আর উক্ত পথ থেকে অহি-র পথে, অকল্যাণের পথ থেকে কল্যাণের পথে, অন্যায়ের পথ থেকে ন্যায়ের পথে, অসত্যের পথ থেকে সত্যের পথে পরিচালনার জন্যই আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ‘আমরা প্রত্যেক ক্বওমের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি এই জন্য যে, তারা যেন বলে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূতকে বর্জন কর’ (নাহল ১৬/৩৬)। পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণের আগমনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল আল্লাহর বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠা। দুনিয়াবী ধন-সম্পদ, মান-মর্যাদা, বিত্ত-বৈভব, ক্ষমতা দখল ইত্যাদি তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের মাধ্যমে নবুওয়তের ধারা সমাপ্ত হয়েছে। ফলে এ দায়িত্ব পড়েছে উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর। মহানবী (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম এবং তৎপরবর্তী একদল হক্বপন্থী কাফেলা পৃথিবীব্যাপী ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করে আসছেন। বাংলার পথ ভোলা যুবসমাজের কাছে ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরার জন্যই মূলতঃ ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর আগমন। আলোচ্য প্রবন্ধে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর অবদান তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ : পটভূমি ও প্রতিষ্ঠাকাল

পৃথিবীর বুকে কাল পরিক্রমায় পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন আহলেহাদীছগণ। নির্ভীকচিত্তে দৃঢ় পদক্ষেপে অহি-র বিধান প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় এবং উহার গর্বিত মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় তারাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের রূপকার সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভী, শাহ ইসমাঈল শহীদ, এনায়েত আলী, বেলায়েত আলী এবং বাঁশের কেল্লা ইতিহাসের জনক সৈয়দ নেছার আলী তিতুমীর প্রমুখ তার জ্বলন্ত সাক্ষী। অতঃপর এ ঐতিহাসিক সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে শুরু করেছিল এবং মানুষের মধ্যে এ ধারণা জন্ম নিয়েছিল যে, ছালাতে পায়ে পা মিলানো, রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা, বুকের উপর হাত বাঁধা ও সরবে আমীন বলাই তাদের কাজ। অন্যদের ধারণা ছিল ইসলাম কেবল ফাযায়েলে আমল ও চিল্লার মধ্যেই বন্দী। কারো বিশ্বাস দরগা, খানকা পীর ও বাবার মাযারে ওরস করা, মীলাদ, শবেবরাত ইত্যাদি পালনের মধ্যেই ইসলাম সীমাবন্ধ। কেউ ইক্বামতে দ্বীনের নামে ব্যালট না হয় বুলেটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি শিরকী মতবাদের মধ্যে কেউ কেউ ছুটাছুটি করছিল। স্কুল, মাদরাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ও যুবক ছাত্ররা এসব বাতিল ফের্কাবন্দীর লোভনীয় শিকারে পরিণত হয়েছিল। এভাবে মুসলিম জাতি শিরক ও বিদ‘আতের হিংস্র থাবা ও মরণ ফাঁদে পড়ে ক্ষত-বিবত হচ্ছিল। মানুষ সুন্নাতকে বিদ‘আত এবং বিদ‘আতকে সুন্নাত মনে করছিল। আহলেহাদীছ ছাত্র ও তরুণ সমাজও এসবের বাইরে ছিল না। একদিকে ধর্মীয় দুরবস্থা, অন্যদিকে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নৈতিক বিপর্যয়। এভাবে সর্বদিক দিয়ে মানুষ ছিল মস্তিষ্কপ্রসূত মতবাদের বিষবাষ্পে নিষ্পিষ্ট। ঠিক সেই মুহূর্তে যুবসমাজকে তাওহীদ ও সুন্নাতের পথে পরিচালনার নেক নিয়তে এবং ইসলামের মূল আদর্শ তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন মেধাবী ছাত্র, ত্যাগের আদর্শ, প্রাণোচ্ছল যুবক বর্তমানে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১৯৭৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী মুতাবিক ২৬ ছফর ১৩৯৮ হিঃ রবিবার প্রতিষ্ঠা করেন হক্বের অতন্দ্রপ্রহরী, বাতিলের ভিত কাঁপানো মারণাস্ত্র, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে খড়গ, মাযহাবীদের অন্তর্জ্বালা ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’। নির্ভেজাল তাওহীদের ঝা-াবাহী এ যুবকাফেলা হক্বের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় শত-সহস্র বাধা পদপিষ্ট করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে তাবলীগী প্রতারণা, করবপূজারীদের হামলা, মা‘রেফতী শয়তানী, বিদ‘আতী রাজনীতি ও বিজাতীয় মতবাদকে তারা কখনো তোয়াক্কা করেনি। সর্বদা হক্বের পথে দৃঢ় হিমাদ্রির ন্যায় অটল ও অবিচল থেকেছে তার দিগ্বিজয়ী আদর্শের পতাকাতলে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

প্রত্যেক সংগঠনের একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। যার মাধ্যমে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হ’ল, ‘নির্ভেজাল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে কিতাব ও সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধন আহলেহাদীছ আন্দোলনের সামাজিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য’।

মানুষের জীবনে আক্বীদাগত ও আমলগত দু’টি প্রধান দিক রয়েছে। এর মধ্যে আক্বীদা বা বিশ্বাসের জগতই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালিত হয়। তাই আগে আক্বীদা সংশোধন করতে হবে। তাহ’লে আমল তদানুযায়ী সংশোধিত হবে। আক্বীদা ও আমল সংশোধনের মাধ্যমে সার্বিক জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর বিধান অনুসরণের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব। অতঃপর এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই ইক্বামতে দ্বীন অর্থ ইক্বামতে তাওহীদ। সকল নবীই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য মানব জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। ‘যুবসংঘ’-এর কর্মীরা সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে স্বীয় জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করে এবং সে অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করে থাকে। তাই ‘যুবসংঘ’ নবী-রাসূলের তরীকায় আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহভীতি মানুষ তৈরীর এক অনন্য পস্নাটফরম।

ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় ‘যুবসংঘ’-এর অবদান :

‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর চারদফা কর্মসূচী রয়েছে। ১. তাবলীগ বা প্রচার ২. তানযীম বা সংগঠন ৩. তারবিয়াত বা প্রশিক্ষণ ৪. তাজদীদে মিল্লাত বা সমাজ সংস্কার। ইসলাম একটি কল্যাণময় ও প্রচারভিত্তিক জীবনব্যবস্থা। তাই ‘যুবসংঘ’ কল্যাণমুখী পরিবার ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ইসলামের বাস্তব ও প্রকৃত রূপ বাংলাদেশসহ পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে তাবলীগ বা প্রচারকে প্রথম কর্মসূচী হিসাবে গ্রহণ করেছে।

প্রচারেই প্রসার। বেশী বেশী প্রচারের মাধ্যমে কোন আদর্শ সমাজে প্রস্ফুটিত হয়। তাই কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উপযুক্ত প্রচার না থাকায় ইসলামের মূল আদর্শ সমাজ থেকে আজ বিদায় নিতে চলেছে এবং বাতিল হক্বের স্থান দখল করে নিচ্ছে। যা যুবকদেরকে ক্ষতির দারপ্রান্তে উপনীত করছে। সুতরাং ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চাই উপযুক্ত প্রচার। ইসলামের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্য তাই প্রতিটি মুসলিমের আত্মনিয়োগ করা ঈমানী দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, যাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)। অন্যত্র বলেন, وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘তোমাদের মধ্যে একটি দল থাকা চাই, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং ন্যায়ের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করবে। বস্ত্ততঃ তারাই হবে সফলকাম’ (আলে ইমরান ৩/১০৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইসলামের প্রচার ও প্রসারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে নির্দেশ প্রদান করেন।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِى إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা আমার পক্ষ হতে একটি কথা হলেও তা পৌঁছে দাও এবং বনী ইসরাঈলের ঘটনা বর্ণনা কর, তাতে কোন দোষ নেই। তবে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়’।[1] আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে যুবক ও তরুণদের মাঝে এ কাজটিই নিরবচ্ছিন্নভাবে করে চলেছে হক্বের অতন্দ্রপ্রহরী ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’। তাবলীগ বা প্রচারের ব্যাপারে ‘যুবসংঘ’-এর বক্তব্য হ’ল, ‘তরুণ ছাত্র বা যুবসমাজের নিকট তাওহীদের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। তাদেরকে যাবতীয় শিরক ও বিদ‘আত এবং তাক্বলীদী ফির্কাবন্দী হতে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও খোলা মনে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ অনুযায়ী নিজের জীবন ও পরিবার গঠনে উদ্ধুদ্ধ করা। তাদেরকে সঠিক ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং জীবনের সকল দিক ও বিভাগে উহার পূর্ণাঙ্গ অনুশীলনের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা’।[2] দাওয়াতের পদ্ধতি ও গতি সম্প্রসারণের জন্য ‘যুবসংঘ’ যে কর্মসূচী ও করণীয় নির্ধারণ করেছে তা নিমণরূপ :

(ক) ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ও সম্প্রীতি স্থাপন :

ইসলামের প্রচার ও প্রসারে এবং দাওয়াতী কাজে এটিই হল সর্বোত্তম পন্থা। ভূমি তৈরী না করে বীজ ফেললে যেমন ভাল চারা গজায় না, তেমনি বন্ধু সৃষ্টি না করে আন্দোলনের দাওয়াত দিলে তাতে কোন ফল হয় না। তাই একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিঃশর্তভাবে বন্ধু নির্বাচন করে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা স্থাপন করতঃ দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। এদিকেই ইঙ্গিত দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلاَلِى الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِى ظِلِّى يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّى.

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন বলবেন, আমার সুমহান মর্যাদার কারণে যারা পরস্পর ভালবাসা স্থাপন করেছে, তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার সুশীতল ছায়ার নীচে স্থান দিব, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না’।[3] এছাড়া ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে বিশেষ গুণসম্পন্ন বন্ধু নির্বাচন করতে হবে। মহল্লা, গ্রাম, ছাত্রাবাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের ছাত্র ও তরুণদের মাঝে দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে হবে এবং মেধাবী, চরিত্রবান, কর্মঠ ও নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন বন্ধু টার্গেট করে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে উত্তম বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব নিমেণর হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

عَنْ أَبِى مُوسَى عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً.

আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গের দৃষ্টান্ত যথাক্রমে কস্তূরী বিক্রেতা ও কামারের হাঁপরে ফুঁকদানকারীর ন্যায়। কস্তূরী বিক্রেতা হয়ত এমনিতেই তোমাকে কিছু দিবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিনে নিবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ অবশ্যই পাবে। আর কামারের হাঁপরের ফুলকি তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পুড়িয়ে দিবে অথবা তার নিকট থেকে তুমি দুর্গন্ধ অবশ্যই পাবে’।[4] উল্লেখ্য যে, গ্রম্নপভিক্তিক দাওয়াতী কার্যক্রম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ‘আম জনসাধারণের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে খোলামেলা সাক্ষাৎ করতঃ পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে একটি সাধারণ ভাব সৃষ্টি করা যায়। এটি দাওয়াতী কাজে বিশেষ সহায়তা দান করবে এবং জনমনে নির্ভেজাল ইসলাম সম্পর্কে জানবার ও বুঝবার কৌতূহল জাগ্রত হবে। ফলে আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্ত্তত হবে এবং দাওয়াত কার্যকর হবে ইনশাআল্লাহ।[5]

(খ) প্রতিদিন বাদ এশা মহল্লার মসজিদে ব্যাখ্যাসহ কুরআন ও হাদীছ শুনানো :

ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে আহলেহাদীছ যুবসংঘের এটি একটি স্থায়ী প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে ‘যুবসংঘ’ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অমীয় বাণীসমূহকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এনে দিতে চাই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ, একটি কথা বা আয়াত জানা থাকলেও তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।[6] ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত মানুষ ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান জানতে পারবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আল্লাহর কালাম ও নবী (ছাঃ)-এর হাদীছের বরকতে সমাজে নতুন জাগরণের আবহ সৃষ্টি হবে। যেমন হাদীছে এসেছে,

 عَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَىُّ الْعَمَلِ كَانَ أَحَبَّ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتِ الدَّائِمُ .

মাসরূক্ব (রাঃ) বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট কোন্ আমল সর্বাধিক প্রিয় ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, যে আমল নিয়মিত সম্পাদন করা হয়।[7]

(গ) তাবলীগী সফরে বের হওয়া :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় তাবলীগী টীম প্রেরণ করতেন। তিনি নিজেও ১০ম নববী বর্ষের শাওয়াল মাস মুতাবিক ৬১৯ খৃষ্টাব্দের মে মাসের শেষ কিংবা জুন মাসের শুরুতে প্রচ- দাবদাহের মধ্যে বিশ্বস্ত গোলাম যায়েদ বিন হারেছা (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে পায়ে হেঁটে ৬০ মাইল দূরে স্রেফ দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য তায়েফ অভিমুখে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে তিনি বিভিন্ন গোত্রের নিকট দাওয়াত দেন। অবশেষে তথায় পৌঁছে দাওয়াত দিলে তারা তাঁকে চরমভাবে নিরাশ করেছিল। এমনকি তারা তাঁর পিছনে তরুণদের লেলিয়ে দেয়, যারা তাঁকে মারপিট করে রক্তাক্ত অবস্থায় তাড়িয়ে দেয় এবং তিন মাইল দূরে এক আঙ্গুর বাগানে এসে তিনি আশ্রয় নেন। এখানে বসেই তিনি তায়েফবাসীর হেদায়াতের জন্য প্রসিদ্ধ দো‘আটি করেন।[8] অনুরূপভাবে ছাহাবীগণও জান-মাল বাজি রেখে দ্বীনে হক্বের তাবলীগে বের হতেন। অনেকেই রিরোধী পক্ষের হাতে শহীদ হয়ে যেতেন। তবুও দ্বীন প্রচারের মহান দায়িত্ব পালন করা হতে তাঁরা বিন্দুমাত্র পিছপা হতেন না। সুতরাং জান-মাল নিয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে দ্বীনের প্রচারে বের হওয়ার পর মনের মধ্যে যে ত্যাগের অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তা ছাহাবায়ে কেরামের অতুলনীয় ত্যাগের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ‘যুবসংঘ’ তাই একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের তরীকায় দ্বীন প্রচারের জন্য এ কাজ যথাসাধ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দ্বীনের তাবলীগে বের হয়ে নিমেণাক্ত বিষয়গুলোর উপর বক্তব্য রাখার জন্য ‘যুবসংঘ’ দাঈদের প্রতি বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।

(১) নির্ভেজাল তাওহীদ বা আল্লাহর একত্বের প্রতি বিশ্বাস ও ঈমান : তাওহীদে রুবূবিয়াত বা সৃষ্টি ও পালনে একত্ব, তাওহীদে আসমা ওয়াছ-ছিফাত বা নাম ও গুণাবলীর একত্ব এবং তাওহীদে ইবাদত বা উলূহিয়াত তথা ইবাদত বা উপাসনায় একত্ব। সার্বিক জীবনে এই তিন প্রকার তাওহীদকেই গ্রহণ করতে হবে এবং সেভাবেই আল্লাহর উপর ঈমান পোষণ করে জীবন গঠন করতে হবে। এর মাধ্যমে ‘যুবসংঘ’ ইক্বামতে দ্বীনের অপব্যাখ্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকেই মূল ইবাদত মনে করে না; বরং নবীদের তরীকায় ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

(২) শিরক ও তার পরিণাম : পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় পাপ হ’ল শিরক। যার পরিণামে জাহান্নাম অবধারিত হয় ও জান্নাত হারাম হয়ে যায়।[9]

(৩) ইত্তেবায়ে সুন্নাত : ইত্তেবায়ে সুন্নাতের মাধ্যমেই কেবল ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ লাভ সম্ভব। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا ‘রাসূল তোমাদেরকে যা প্রদান করেন, তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَلاَ إِنِّى أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ ‘জেনে রাখো! আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি এবং তার ন্যায় আরেকটি বস্ত্ত অর্থাৎ হাদীছ’।[10]

(ঘ) সুন্নাত বনাম বিদ‘আত ও বিদ‘আতের পরিণতি।

(ঙ) ইত্তেবা ও তাক্বলীদ ও তাক্বলীদের কুফল।

(চ) ইসলামই একমাত্র মানব জীবনের সকল সমস্যার সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান।

(ছ) ইক্বামতে দ্বীন : পথ ও পদ্ধতি এবং তার প্রয়োজনীয়তা।

(জ) আহলেহাদীছ আন্দোলন : পরিচিতি ও তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।

(ঝ) আজকের যুবসমাজ ও আহলেহাদীছ আন্দোলন, অভিভাবকদের করণীয় এবং যুবচরিত্র গঠনে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর ভূমিকা।

(ঞ) জিহাদ ও তার ফযীলত। জিহাদ ও ক্বিতালের মধ্যে পার্থক্য। জিহাদের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা, আত্মঘাতি হামলা নিষিদ্ধ।[11]

দাঈদের গুণাবলী :

‘যুবসংঘ’ ইসলামের নির্ভেজাল বিষয়গুলো তরুণ ও যুবকদের মাঝে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে কতটা তৎপর তা উপরিউক্ত বিষয়গুলোতে উদ্ভাসিত হয়েছে। সাথে সাথে এই সংগঠনের সদস্য, কর্মী ও দায়িত্বশীল ভাইদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে যে, পার্থিব সুনাম, অর্থোপার্জন ও শ্রোতার মনস্ত্তষ্টি নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি হাছিলের জন্যই তাদেরকে শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপর ভিত্তি করে বক্তৃতা করতে হবে। তবে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে তারা যে সব বিষয়ের উপর খেয়াল রাখবেন সে সম্পর্কেও ‘যুবসংঘ’ পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। যেমন,

১. ব্যবহারে অমায়িক হওয়া : নম্র, ভদ্র ও উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমেই আদর্শ প্রচারিত হয়। নবী ও রাসূলগণ তাদের অমায়িক ব্যবহারের মাধ্যমেই সমাজের পরিবর্তন ঘঠিয়েছেন, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নয়। তাই দ্বীনের দাঈকে রুক্ষ ও কঠোর মেযাজের পরিবর্তে নম্র ও কোমল মেযাজের হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ ‘আল্লাহর অনুগ্রহেই আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয়ের হয়েছেন। যদি আপনি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হতেন, তাহলে তারা আপনার নিকট হতে দূরে সরে যেত। অতএর আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। আর যখন কোন কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর প্রতি নির্ভরশীলদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ يُحْرَمِ الْخَيْرَ যাকে কোমলতা হতে বঞ্চিত করা হয়, তাকে কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়।[12]

عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِى عَلَى الرِّفْقِ مَا لاَ يُعْطِى عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لاَ يُعْطِى عَلَى مَا سِوَاهُ.

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ কোমল। তিনি কোমলতাকেই ভালবাসেন। আর তিনি কঠোরতা এবং অন্য কিছুর জন্য যা দান করেন না, তা কোমলতার জন্য দান করেন।[13]

২. কথা কম বলা : আরবীতে একটা প্রবাদ আছে, المكثار كحاطب الليل ‘বাচাল ব্যক্তি রাত্রির অন্ধকারে কাঠ সংগ্রহকারীর ন্যায়’। অর্থাৎ প্রয়োজনাতিরিক্ত কথা ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর। তাই ‘যুবসংঘ’-এর একজন দাঈ কম কথা বলবেন এবং কথায় অতিরঞ্জন হতে বিরত থাকবেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى أُمَامَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْحَيَاءُ وَالْعِىُّ شُعْبَتَانِ مِنَ الإِيمَانِ وَالْبَذَاءُ وَالْبَيَانُ شُعْبَتَانِ مِنَ النِّفَاقِ.

আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, লজ্জা ও কম কথা বলা ঈমানের দু’টি শাখা আর অশ্লীল ও অসার কথা বলা মুনাফিকীর দু’টি শাখা।[14]

৩. সর্বদা হাসিমুখে থাকা : এটি একজন নিবেদিত প্রাণ দাঈর উত্তম গুণ ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, মুচকি হাসি ও মিষ্টি কথা, আকর্ষণীয় চাহনি মানুষের হৃদয়কে প্রশান্তির পরশে ভরিয়ে দেয়। ফলে এগুণ সম্পন্ন দাঈর মাধ্যমে দ্বীনে হক প্রচার সহজতর হয় এবং সমাজে তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ جَزْءٍ قَالَ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ تَبَسُّمًا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.

আবদুল্লাহ ইবনুল হারেছ ইবনু জাযই (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চেয়ে অধিক কাউকে মুচকি হাসি হাসতে দেখিনি।[15] অন্য হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমরা তাকে অনুমতি দাও। লোকটি স্বীয় গোত্রের সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির লোক ছিল। যখন সে বসল, তখন নবী (ছাঃ) তার সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাৎ করলেন এবং হাসি মুখে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি চলে গেলে আয়েশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এই লোকটি সম্পর্কে প্রথমে আপনি খারাপ উক্তি করলেন। আবার তার সাথে হাসি মুখে কথা বললেন কেন? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কি আমাকে কখনো অশ্লীলভাষী পেয়েছ? ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদায় ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে মন্দ হবে, যার অনিষ্টের কারণে মানুষ তাকে পরিত্যাগ করেছে।[16]

. অহেতুক তর্ক পরিহার করা : আল্লাহর পথের একজন একনিষ্ঠ দাঈর অন্যতম করণীয় হল বৃথা তর্ক, ঝগড়া ও মারামরি এড়িয়ে চলা। কেননা তর্ক ও ঝগড়া ফাসাদ সৃষ্টি করে দ্বীনে হক্ব প্রচার সম্ভব নয়। মহান আল্লাহর বাণী, قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ- وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ ‘সফলকাম মুমিন তারাই, যারা ছালাতে রত থাকে ভীত সন্ত্রস্ত ভাবে এবং যারা অসার বাক্যালাপ হতে বিরত থাকে’ (মুমিনূন ২৩/১-৩)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত্য কর এবং পরস্পর ঝগড়া বিবাদ করো না। তাহলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (আনফাল ৮/৪৬)। হাদীছে এসেছে,

৫. দ্বীনী আলাপে ব্যস্ত থাকা : ‘যুবসংঘ’-এর একজন দাঈ অহেতুক ক্রিয়াকলাপ, বাজে গল্প এবং এগুলোর আসর থেকে সর্বদা দূরে থাকবেন। এজন্য তিনি সর্বদা ভাল ভাল আলাপ-আলোচনা, কথা-বার্তা ও দ্বীনী আলোচনায় নিজেকে মশগুল রাখবেন। যেমন হাদীছে এসছে,

عَنْ أَبِى شُرَيْحٍ الْخُزَاعِىِّ قَالَ سَمِعَ أُذُنَاىَ وَوَعَاهُ قَلْبِى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ... وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ.

আবু শুরাইহ আল খুযাই (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার দু’কান নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছে এবং অন্তর তা হিফাযত করে রেখেছে যে,... যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা নিরব থাকে।[17]

৬. আলেমদের সম্মান করা এবং অজানা বিষয় দলীলসহ জেনে নেয়া : দ্বীনী ইলমে পারদর্শী হক্বপন্থী আলেমগণকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া এবং অজানা বিষয়গুলো দলীল-প্রমাণসহ জেনে নেয়া একজন ইসলাম প্রচারকারীর জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ ‘নিশ্চয়ই আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি। বরং তারা (দ্বীনী) ইলমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা অর্জন করল, সে পূর্ণ অংশ লাভ করল।[18] দলীল প্রমাণসহ জানার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ- بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ ‘তোমরা যারা জান না তারা আহলে যিক্রের নিকট থেকে শক্ত দলীল সহ জেনে নাও’ (নাহল ১৬/৪৫-৪৫)

৭. সবসময় নিজের ত্রুটিগুলোর কথা স্মরণ করা : একজন দাঈ সর্বদা নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহর নিকট অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন। কেননা সর্বশ্রেষ্ঠ দাঈ মহানবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) দৈনিক ১০০ বার তওবা করতেন।[19] হাদীছে এসেছে

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّالْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ-

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যখন কোন বান্দা পাপ স্বীকার করে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।[20]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلاَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِى ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِى وَأَنَا رَبُّكَ. أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ.

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, বান্দাহ যখন আল্লাহর নিকট তওবা করে, তখন তিনি খুবই আনন্দিত হন। তোমাদের মধ্যকার সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক, যার বাহন মরুপ্রান্তরে তার নিকট হতে ছুটে পালায় এমতাবস্থায় যে, এর উপর থাকে তার খাদ্য ও পানীয়। এতে সে হতাশ হয়ে একটি গাছের নিকট এসে উহার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। সে তার বাহন সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ। এই অবস্থায় সে হঠাৎ দেখে বাহন তার নিকট দাঁড়ানো। অতঃপর সে উহার লাগাম ধরে এবং আনন্দের আতিশয্যে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু। সে ভুল করেছে আনন্দের আতিশয্যে।[21]

৮. বড়দের প্রতি সম্মান ও ছোটদের প্রতি সেণহ করা : আল্লাহভীরু একজন ইসলামের দাঈ তার বড়দের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন এবং ছোটদের আদর, সেণহ ও সোহাগ করেন। এসম্পর্কে হাদীছে এসেছে, مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ছোটদের সেণহ করে না এবং বড়দের অধিকার সম্পর্কে ভ্রূক্ষেপ করে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।[22]

(ঘ) তাবলীগী ইজতেমার আয়োজন করা :

‘যুবসংঘ’ তরুণ ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের নিকট নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাতের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাপ্তাহিক বৈঠক, তাবলীগী সভা, মাসিক তাবলীগী ইজতেমার আয়োজন করে থাকে। ইজতেমাকে সঠিকভাবে সফল করার জন্য সকলে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। এতে পারস্পারিক সাক্ষাৎ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং দ্বীনের প্রচারে অর্থনৈতিক কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى وَجَبَتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ وَالْمُتَجَالِسِينَ فِيَّ وَالْمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ وَالْمُتَبَاذِلِينَ فِيَّ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় পরস্পরকে ভালবাসে, কোন সমাবেশে উপস্থিত হয়, পরস্পর সাক্ষাৎ করে এবং নিজেদের মাল সম্পদ ব্যয় করে তাদের জন্য আমার ভালবাসা ওয়াজিব হয়ে গেছে।[23]

এ ছাড়া প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন যেলা ও এলাকা সম্মেলন সহ বিভিন্ন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ইজতেমা বা সম্মেলন সমূহের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, দ্বি-বার্ষিক কর্মী সম্মেলন। প্রতিটি সম্মেলনে এ সংগঠন ইসলামের বিধি-বিধানসহ দেশের সার্বিক বিষয় উল্লেখপূর্বক কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা পেশ করে আসছে, যা পরবর্তীতে স্মারকলিপি আকারে সরকারের নিকট পেশ করা হয়। এ সমস্ত সম্মেলনে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ওলামায়ে কেরাম ও বিদ্বানগণ বিষয় ভিত্তিক ও তথ্যবহুল আলোচনা পেশ করেন। ফলে বহু পথ ভোলা তরুণ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পেয়ে সত্য পথে ফিরে আসছে।

(ঙ) সেমিনার ও সিম্মোজিয়াম :

জ্ঞানী ব্যক্তিরা ইসলামী শরী‘আতে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। জ্ঞানী ও মূর্খ কখনো সমান নয়। যেমন মহান আল­াহ বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ ‘আপনি বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান? বোধ সম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে’ (যুমার ৩৯/৯)। আল্ল­াহ আরো বলেন, قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ‘আপনি বলুন, অন্ধ ও চক্ষুমান (জ্ঞানী ও মূর্খ) কি সমান? তোমরা কি চিন্তা ভাবনা কর না?’ (আন‘আম ৬/৫০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِى الدِّينِ ‘আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করেন’।[24] তাই দেশের জ্ঞানী মহলের নিকট দ্বীনের সঠিক বিষয় ও সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য ‘যুবসংঘ’ সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের ব্যবস্থা করে থাকে।

(চ) বিভিন্ন প্রকাশনা ও প্রচার কার্যক্রম :

পৃথিবীতে মহান আল্ল­াহর পক্ষ থেকে যে আসমানী তারবার্তা অবতীর্ণ হয়েছে তা হল পড়ালেখা ও জ্ঞানার্জন সম্পর্কিত। আল্লাহ পাক বলেন, اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ - خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ - اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ - الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ - عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ‘পড়! তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপি- হতে। পড়, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি বড়ই দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দান করেছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানতো না’ (আলাক্ব ৯৬/১-৫)। মহানবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে যাচ্ছি, যতদিন তোমরা ঐ দু’টি বস্ত্ত অাঁকড়ে ধরে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। বস্ত্ত দু’টি হল আল্ল­াহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত’।[25] তাই দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমতঃ কুরআন ও হাদীছ অধ্যয়ন করা। সেই সাথে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধান প্রচারে কার্যকরী ও স্থায়ী পদক্ষেপ হিসাবে প্রকাশনার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ প্রকাশনার মাধ্যমে দাওয়াত যত দ্রম্নত সম্প্রসারিত হয়, অন্য কোন মাধ্যমে তা হয় না। তাই ‘যুবসংঘ’ প্রকাশনার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিচিতি ‘ক’ ও ‘খ’, কর্মপদ্ধতি, সিলেবাস, প্রচারপত্র, রামাযান উপলক্ষে তুহফায়ে রামাযান ও আমাদের আহবান, বিভিন্ন প্রোগ্রাম উপলক্ষে পোষ্টার ইত্যাদি ছাপানোর কাজ করে আসছে ‘যুবসংঘ’। বর্তমানে ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকা প্রতি দুই মাস অন্তর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।

(ছ) সামষ্টিক পাঠ ও চা চক্রের আয়োজন করা :

সামষ্টিক পাঠের অর্থ হল একটি সুন্দর ও উপযোগী বই উপস্থিত সকলে মিলে পাঠ করা। প্রত্যেকেই দু-এক পৃষ্ঠা করে পড়া এবং পরিচালকের মাধ্যমে সকলের নিকট প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে পঠিত বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল একটি শিক্ষণীয় উপযুক্ত বই বাছাই করা। বিশিষ্ট খ্যাতনামা দার্শনিক ও গণিতবিদ ওমর খৈয়াম বলেন, Here with a loat of bread beneth the bough a flask of wine, a book of verse and thou, Beside my singing in the wilderness and wilderness in Paradise Enow. ‘রুটি মদ ফুটিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে কিন্তু বই খানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়’। ‘যুবসংঘ’ এ ধরনের সামষ্টিক পাঠ ও চা চক্রের মাধ্যমে ছাত্র ও তরুণদের মাঝে ইসলামের বাণী প্রচারের ব্যবস্থা করে থাকে।

উপসংহার :

ইসলামের মূল প্রচারক আল্ল­াহ তা‘আলা নিজে। তিনি বলেন, أُولَئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ ‘তারা আহবান জানায় জাহান্নামের দিকে আর আল্ল­াহ আহবান করেন স্বীয় নির্দেশে জান্নাতের দিকে এবং ক্ষমার দিকে’ (বাক্বারাহ ২/২২১)। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হলেন নবী-রাসূলগণ। আল্ল­াহ তাঁর মনোনীত জীবন ব্যবস্থা ইসলাম প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার বাহন দিয়ে নবী-রাসূলগণকে মানব জাতির নিকট প্রেরণ করেছেন। নবী-রাসূলগণের পরে যারা এই কাজে আত্মনিয়োগ করবে তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হবে। রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, فَوَاللَّهِ لأَنْ يَهْدِىَ اللَّهُ بِكَ رَجُلاً خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ ‘যদি তোমার দ্বারা আল্ল­াহ একজন ব্যক্তিকেও হেদায়াত দান করেন, তবে সেটি তোমার জন্য মূল্যবান লাল উটের উত্তম হবে’।[26] তাই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য পথভোলা যুবকদের পরিচালনার এবং আক্বীদা ও সমাজ সংস্কারের ঐকান্তিক কামনা নিয়ে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ তার প্রচার ও প্রসারের কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে অসংখ্য যুবক ও তরুণ ছাত্র ভাই ও বোনেরা এ যুবকাফেলায় যুক্ত হয়ে মুক্তির সন্ধান পাচ্ছে। আল্লাহ আমাদেরকে আমৃত্যু এই হক্বের অতন্দ্রপ্রহরী নির্ভেজাল তাওহীদের ঝা-াবাহী যুবকাফেলায় শামিল থাকার তাওফীক্ব দান করুন আমীন! 

 আব্দুল হালীম বিন ইলিয়াস

 কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ ও শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী


[1]. বুখারী হা/৩৪৬১; মিশকাত হা/১৯৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৮৮, ২/৩ পৃঃ ‘ইলম’ অধ্যায় ।

[2]. ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কর্মপদ্ধতি, পৃঃ ১।

[3]. মুসলিম হা/৬৭১৩; মিশকাত হা/ ৫০০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৭৮৭, ৯/১৪৪ পৃঃ ‘আদব’ অধ্যায়, ‘আল্লাহর সাথে এবং আল্লাহর জন্য ভালবাসা’ অনুচ্ছেদ।

[4]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫০১০, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৭৯১, ৯/১৪৫ পৃঃ।

[5]. কর্মপদ্ধতি পৃঃ ২।

[6]. বুখারী, মিশকাত হা/১৯৮।

[7]. বুখারী হা/১১৩২ ও ৬৪৬১; মিশকাত হা/১২০৭, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘রাত্রির ছালাত’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৩৯, ৩/১০৯ পৃঃ।

[8]. আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃঃ ১২৬, ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ইক্বামতে দ্বীন পথ ও পদ্ধতি, পৃঃ ১৬।

[9]. মায়েদা ৫/৭২; বুখারী হা/২৬৫৪।

[10]. আবুদাঊদ হা/৪৬০৪; মিশকাত হা/১৬৩ ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘কিতাব ও সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।

[11]. কর্মপদ্ধতি পৃঃ ৪-৫।

[12]. মুসলিম হা/৬৭৬৩; মিশকাত হা/৫০৬৯।

[13]. মুসলিম হা/৬৭৬৬; মিশকাত হা/৫০৬৮।

[14]. তিরমিযী হা/২০২৭; মিশকাত হা/৪৭৯৬, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৫৮৭, ৯/৭১ পৃঃ ‘আদব’ অধ্যায়, ‘বক্তৃতা প্রদান ও কবিতা’ অনুচ্ছেদ; ।

[15]. তিরমিযী হ/৩৬৪১; মিশকাত হা/৪৭৪৮।

[16]. মুক্তাফাক্ব আলাই, মিশকাত হা/৪৭২৯;।

[17]. ছহীহ বুখারী হা/৬৪৭৬।

[18]. তিরমিযী হা/২৬৮২; ইবনু হিববান হা/৮৮; দারেমী হা/৩৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৯৭; মিশকাত হা/২১২ ‘ইলম’ অধ্যায়।

[19]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২২১৭,৫/৯৭ পৃঃ।

[20]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৩৩০ ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২২২২, ৫/১০০ পৃঃ।

[21]. মুসলিম হা/৭১৩৬; মিশকাত হা/২৩৩২, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২২২৪, ৫/১০০।

[22]. আবুদাঊদ হা/৪৯৪৩; মুসনাদে আহাদ হা/৭০৭৩; ইমাম বুখারী (রহঃ), আদাবুল মুফরাদ হা/৩৫৩, ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৪০।

[23]. মালেক, মিশকাত হা/৫০১১, ‘আদব’ অধ্যায়, ‘আল্লাহর শানে এবং আল্লাহর জন্য ভালবাসা’ অনুচ্ছেদ বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৭৯২, ৯/১৪৬ পৃঃ।

[24]. মুত্তাফাক আলাইহ, বুখারী হা/৭১, মিশকাত হা/২০০ ‘ইলম’ অধ্যায়।

[25]. মুয়াত্তা, মিশকাত হা/১৮৬।

[26]. মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৬০৮০।



বিষয়সমূহ: সংগঠন
আরও