ফযীলতপূর্ণ আমলসমূহ (৩য় কিস্তি)

মুহাম্মাদ আবুল কালাম 1430 বার পঠিত


১৫. কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত :

বিশ্ব মানবতার মহা সংবিধান হচ্ছে পবিত্র কুরআন। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জীবন ব্যবস্থা হিসাবে বিভিন্ন সময়ে জীবরাঈল (আঃ) মারফত বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর নাযিল করেছেন এবং এর হেফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিজেই নিয়েছেন। তিনি বলেন,

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ-

‘আমরা কুরআনুল কারীম নাযিল করেছি এবং আমরাই এর হেফাযত করব’ (হিজর-১৫/৯)। যা অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের  জন্য চূড়ান্ত জীবন বিধান হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। তাতে রয়েছে মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগের সমাধান। সুতরাং কুরআনের জ্ঞানার্জন করা, শিক্ষা দেওয়া, তেলাওয়াত করা এবং এর আদেশ-নিষেধগুলি বক্ষে ধারণ করা প্রতিটি বান্দার জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য যা প্রচুর ছওয়াব ও ফযীলতে পরিপূর্ণ। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عُثْمَانَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ  خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ-

হযরত ওছমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কুরআন শিখে ও অন্যকে শিখায়’।[1]

মসজিদে গিয়ে কুরআন শিক্ষা করা এবং অন্য শিক্ষা দেওয়ার ফযীলত অনেক বেশী। যা আরবের উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট মূল্যবান  উটের চেয়েও অধিক। এমনকি প্রতিটি আয়াতের বিনিময় একটি করে উটের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ فِى الصُّفَّةِ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ فَيَأْتِىَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِى غَيْرِ إِثْمٍ وَلاَ قَطْعِ رَحِمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ نُحِبُّ ذَلِكَ. قَالَ أَفَلاَ يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمَ أَوْ يَقْرَأَ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلاَثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلاَثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الإِبِلِ-

‘উক্ববাহ ইবনু আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (একদিন) মসজিদের প্রাঙ্গণে বসে ছিলাম । এ সময়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বের হয়ে আসলেন ও (আমাদেরকে) বললেন, তোমাদের কেউ প্রতিদিন সকালে ‘বুত্বহান’ অথবা ‘আক্বীক্ব' বাজারে গিয়ে দু’টি বড় কুঁজওয়ালা উটনী কোন অপরাধ সংঘটন ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়া নিয়ে আসতে পসন্দ করবে? এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেকেই এ কাজ করতে পসন্দ করবে। তখন তিনি বললেন, যদি তাই হয় তাহ’লে তোমাদের কেউ সকালে মসজিদে গিয়ে কুরআনের দু'টি আয়াত শিক্ষা করা কিংবা পাঠ করে না কেন ? অথচ এ দু'টি আয়াত শিক্ষা করা তার জন্য দু’টি উটনী অথবা তিনটি আয়াত শিক্ষা করা তার জন্য তিনটি উটনী অথবা চারটি আয়াত শিক্ষা করা তার জন্য চারটি উটনীর চেয়েও উত্তম। (অর্থাৎ কুরআনের যে কোন সংখ্যক আয়াত একই সংখ্যক উটনীর চেয়ে উত্তম)’।[2]

পৃথিবীতে এমন  কোন  গ্রন্থ নেই যা পাঠ করলে বিশেষভাবে নেকী হয়। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম হ’ল কুরআনুল কারীম। যা তেলাওয়াত করলে নেকী হয়। তেলাওয়াতকৃত প্রতিটি হরফে দশটি নেকী অর্জিত হয়। হাদীছে এসেছে,

عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم َرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ-  

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করল, সে একটি নেকী পেল। আর একটি নেকী হচ্ছে আমলের দশগুণ। আমি বলছি না যে, আলিফ, লাম, মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ’।[3] অর্থাৎ সর্বমোট ত্রিশ নেকী।

কুরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য জান্নাত ও জান্নাতের সবোচ্চ স্থান সুনিশ্চিত। কুরআন তেলাওয়াকারীকে কুরআন তার মানযীলে মাক্বছূদে পোঁছিয়ে দেবে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا-

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কুরআন তেলাওয়াতকারীকে ক্বিয়ামতের দিন বলা হবে তেলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক।  তারতীলের সাথে পাঠ করতে থাক যেভাবে দুনিয়াতে পাঠ করতে। কেননা তোমার মর্যাদা সর্বোচ্চ স্তর হ'ল তোমার পঠিত সর্বশেষ আয়াত’।[4] হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى مُوسَى عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَال الْمُؤْمِنُ الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَعْمَلُ بِهِ كَالأُتْرُجَّةِ ، طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَرِيحُهَا طَيِّبٌ ، وَالْمُؤْمِنُ الَّذِى لاَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَعْمَلُ بِهِ كَالتَّمْرَةِ ، طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَلاَ رِيحَ لَهَا ، وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالرَّيْحَانَةِ ، رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ ، وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِى لاَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالْحَنْظَلَةِ ، طَعْمُهَا مُرٌّ أَوْخَبِيثٌ وَرِيحُهَا مُرٌّ-

‘হযরত আবু মুসা (রাঃ) হ'তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে মুমিন কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল কওে তার দৃষ্টান্ত ঐ কমলা লেবুর মত, যা খেতে সুস্বাদু এবং গন্ধে চমৎকার। কিন্তু যে মুমিন কুরআন পাঠ  করেনা  তবে সে অনুযায়ী আমল করে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ  খেজুরের মত যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধ নেই। আর মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ রায়হানের মত, যার সুগন্ধ আছে কিন্তু খেতে একেবারে বিস্বাদ। আর ঐ মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করেনা, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতে বিস্বাদ এবং দুর্গন্ধময়’।[5] হাদীছে এসেছে,

عَنْ النَّوَّاسَ بْنَ سَمْعَانَ الكِلاَبِىَّ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ يُؤْتَى بِالْقُرْآنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَهْلِهِ الَّذِينَ كَانُوا يَعْمَلُونَ بِهِ تَقَدَّمُهُمْ سُورَةُ الْبَقَرَةِ وَآلِ عِمْرَانَ- وَضَرَبَ لَهُمَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَةَ أَمْثَالٍ مَا نَسِيتُهُنَّ بَعْدُ قَالَ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ ظُلَّتَانِ أَوْ سَوْدَاوَانِ بَيْنَهُمَا شَرْقٌ كَأَنَّهُمَا فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ يُحَاجَّانِ عَنْ صَاحِبِهِمَا-  

হযরত নাওয়াস ইবনু সাম'আন (রাঃ) হ'তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, কুরআন ও কুরআন অনুযায়ী আমলকারীদের ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে। তাদের সামনে দু’টি মেঘখন্ড অথবা দু’টি কালো ছায়ারূপে থাকবে সূরা আল-বাক্বারাহ ও আলে-ইমরান।    এদের মাঝখানে থাকবে দ্বীপ্তি। অথবা থাকবে প্রসারিত  পালক বিশিষ্ট পাখির দু’টি ঝাঁক। তারা আল্লাহর নিকট কুরআন পাঠকের পক্ষে সুপারিশ করবে’।[6] 

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সূরার পৃথকভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফযীলত বর্ণনা করেছেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ دُخُولَ الْجَنَّةِ إِلَّا الْمَوْتُ-

‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকবে না মৃত্যু ব্যতীত’।[7] 

এ ছাড়াও ‘যে ব্যক্তি শয়নকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকবে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হ'তে না পারে’।[8]

হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى مَسْعُودٍ الْبَدْرِىِّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الآيَتَانِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ مَنْ قَرَأَهُمَا فِى لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ-

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সূরা আল-বাকারা শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করবে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে’।[9]

হাদীছে এসেছে,  

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ نُورٌ مَا بَيْنَ الْجُمْعَتَيْنِ-

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা আল কাহফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এক জুম‘আ হ’তে আগামী জুম‘আ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে’।[10]

এ বিষয়ে অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الكَهْفِ عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ-

হযরত আবু দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ এর প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হ’তে নিরাপদ রাখা হবে’।[11]

হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ  أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ فِى لَيْلَةٍ ثُلُثَ الْقُرْآنِ. قَالُوا وَكَيْفَ يَقْرَأُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ قَالَ(قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) يَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ-

হযরত আবু দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন তেলাওয়াতে সক্ষম? ছাহাবীগণ বললেন, প্রতি রাতে কি করে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়া যাবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ (সূরা ইখলাছ) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান’।[12]

হাদীছে এসেছে,

 عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ رَجُلاً عَلَى سَرِيَّةٍ ، وَكَانَ يَقْرَأُ لأَصْحَابِهِ فِى صَلاَتِهِ فَيَخْتِمُ بِ(قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم  فَقَالَ سَلُوهُ لأَىِّ شَىْءٍ يَصْنَعُ ذَلِكَ . فَسَأَلُوهُ فَقَالَ لأَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمَنِ، وَأَنَا أُحِبُّ أَنْ أَقْرَأَ بِهَا . فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم  أَخْبِرُوهُ أَنَّ اللَّهَ يُحِبُّهُ-

হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) এক ছাহাবীকে একটি সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। ছালাতে তিনি যখন তার সাথীদের নিয়ে ইমামতি করতেন, তখন সূরা ইখলাছ দিয়ে ছালাত শেষ করতেন। তারা যখন অভিযান থেকে ফিরে আসল তখন নবী (ছাঃ)- এর নিকট ব্যাপারটি উল্লেখ করলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাকেই জিজ্ঞাসা কর কেন সে একাজটি করেছে? এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দিলেন, এ সূরাটিতে আল্লাহর গুণাবলী রয়েছে। এ জন্য সূরাটি পড়তে আমি ভালোবাসি। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, তাকে জানিয়ে দাও আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।[13]

হাদীছে এসেছে,

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ إِنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُحِبُّ هَذِهِ السُّورَةَ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ  قَالَ إِنَّ حُبَّكَ إِيَّاهَا أَدْخَلَكَ الْجَنَّةَ  -

হযরত আনাস (রাঃ) হ'তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি বলল হে আল্লাহর রাসূল, আমি এ ‘কুলহুয়াল্ল-হু আহাদ’ সূরাকে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমার এ সূরার প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’।[14]

১৬. দ্বীনি দাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযীলতঃ

পৃথিবীতে যত নবী রাসূল এসেছিলেন সকলেই তাওহীদের  দাওয়াত দিয়ে গেছেন। আল্লাহ বলেন, ,وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ’প্রত্যেক জাতির নিকট আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি (তারা যেন ঐ মর্মে দাওয়াত দেয়) তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগুত থেকে বেচেঁ থাক' (নাহল-১৬/৩৬)। এ দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আল্লাহ তাঁর প্রেরিত রাসূলকে সর্তকও করেছেন ।  যেমন আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ ‘হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা পৌঁছে দাও। তুমি যদি না কর, তবে তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলে না’ (মায়েদা-৫/৬৭)। আল্লাহ প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রদর্শিত অভ্রান্ত সত্যকে জনগণের মাঝে প্রচার করা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের কুরআন-সুন্নাহ-এর স্বনিষ্ট অনুসারীদের দায়িত্ব। শয়তানের ধোঁকায় প্ররোচিত হয়ে বান্দা অন্যায়ে প্রলুব্ধ হয়। দুনিয়ার নগদ চাকচিক্যের মোহে মানুষ আখেরাতকে ভুলে গিয়ে স্রষ্টার আদেশ-নিষেধকে অমান্য করে। দিকভ্রান্ত উম্মাহকে হেদায়েতের আলোকবর্তিকায় ফিরে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টাকারীদেও জন্য সুসংবাদ রয়েছে। দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ  ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়’ (নামল-১৬/১২৫)। 

আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

‘ঐ ব্যক্তির চাইতে কথায় উত্তম আর কে আছে, যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত’(হামীম সাজদাহ-৪১/৩৩)

হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা করত সুন্দরভাবে দাওয়াত দিতে হবে।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,            وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ   

‘তুমি তোমার পালনকর্তার দিকে (মানুষকে) দাওয়াত দাও। আর তুমি অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে না’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৭)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِى إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّار -

‘আমার কথা পোঁছিয়ে দাও, যদি তা এক আয়াতও হয়। আর বনী ইস্রারাঈলের ঘটনাবলী বর্ণনা কর। এতে কোন দোষ নেই। কিন্তু যে কেউ ইচ্ছা করে আমার উপর মিথ্যারোপ করল, সে যেন জাহান্নামকেই তার ঠিকানা নির্দিষ্ট করে নিল’।[15]

দাওয়াতী ময়দানে একাকী দাওয়াতের চেয়ে সমবেত প্রচেষ্টা  বেশী ফলপ্রসূ হয়। সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রতি ইঈিত দিয়ে আল্লাহ বলেন, قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ   'বলুন ইহাই আমার পথ আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র, আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত নয়' (ইউসুফ-১০৮)। আল্লাহ বলেন,وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ  وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই হবে সফলকাম’ (আল ইমরান ৩/১০৪)। সুতরাং  একাকী বা সংঘবদ্ধভাবে মানুষকে হক্বের দিকে দাওয়াত দিতে হবে। হক হ’ল আল্লাহর বিধান যা তাঁর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا-

‘আর তুমি বল হক আসে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে। অতঃপর যার ইচ্ছা তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক। আমরা সীমালংঘনকারীদের জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (কাহফ-১৮/২৯)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ  ‘তোমার প্রভুর বাক্য সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। তাঁর বাক্যের পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (আন’আম-৬/১১৫)। অথচ মানুষ বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে, সামাজিকতার দোহাই দিয়ে কিংবা অধিকাংশের দোহাই দিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত মাপকাঠি কুরআন ও সুন্নাহর বিধানকে এড়িয়ে চলছে। ধর্মের নামে বিভিন্ন শিরকী ও বিদ’আতী আমল করছে। অথচ এসব কখনই সত্যের মাপকাঠি নয়। এ বিষয়ে সতর্কতাবাণী দিয়ে আল্লাহ বলেন,وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ ‘আর যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহ’লে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ হ’তে বিপদগামী করে দিবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং অনুমানভিত্তিক  কথা বলে’ (আন’আম -৬/১১৬)। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে মানবজাতির কাছে দু’টি আমানত রেখে গেছেন।

তিনি বলেন, ترَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ- ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দু’টি বস্ত্ত শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না- ‘আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ’।[16]

অতএব অশান্তিময় বিশ্বকে যদি বাঁচাতে হয়, তাহ’লে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই। আর সেই সাথে ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,

عَنْ أبي سَعيدٍ الخُدريِّ قال : سَمِعتُ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم يَقولُ :مَنْ رَأَى مِنكُم مُنْكَراً فَليُغيِّرهُ بيدِهِ ، فإنْ لَمْ يَستَطِعْ فبِلسَانِهِ ، فإنْ لَمْ يَستَطِعْ فَبِقلْبِهِ ، وذلك أَضْعَفُ الإيمانِ-  

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কোন ব্যক্তি অপসন্দনীয় কাজ দেখলে সে যেন হাত দ্বারা বাধা প্রধান করে। সম্ভব না হ’লে কথার মাধ্যমে বাধা প্রদান করে। এটাও সম্ভব না হ’লে সে যেন অন্তর থেকে ঘৃণা করে। এটি সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক’।[17]

দাওয়াতের ফযীলত :

এ বিষয়ে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন -

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ يَتَّبِعُهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ يَتَّبِعُهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا-

আবু হুরাইরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন লোককে সৎ কাজের দিকে আহবান করবে, তার জন্যও সে পরিমাণ ছওয়াব রয়েছে যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে। অথচ এতে তাদের নেকী একটুও কমবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কাউকে গোমরাহীর দিকে আহবান করে তারও সে পরিমাণ গুনাহ হবে, যতটুকু গুনাহ তার অনুসারীদের হবে। অথচ অনুসারীদের গুনাহ একটুও কমবে না’।[18]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

 مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا وَلاَ يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً سَيِّئَةً فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ كُتِبَ عَلَيْهِ مِثْلُ وِزْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا وَلاَ يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَىْءٌ-

‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন নেক কাজ চালু করলো সে এটি চালু করার ছওয়াব তো পাবেই, তারপরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ নেকী হবে। অথচ তাদের নেকী কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করলো তার জন্য গুনাহ রয়েছে এবং পরবর্তীতে যারা এ মন্দ রীতির উপর আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ গুনাহ সে পাবে। তাদের গুনাহও কম করা হবে না’।[19]  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,  مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ  ‘যে ব্যক্তি কাউকে কোন কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শন করে, সে উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ নেকী পাবে’।[20] রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, فَوَاللَّهِ لأَنْ يُهْدَى بِكَ رَجُلٌ وَاحِدٌ خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ 'আল্লাহর কসম, যদি একটি ব্যক্তিও তোমার দ্বারা হেদায়াত লাভ করে, তবে তা তোমার জন্য আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ লাল রংয়ের উটের চেয়েও উত্তম’।[21]

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبُو عَبْسٍ هُوَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ جَبْرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِى سَبِيلِ اللَّهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ হযরত আবু আবস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে যে বান্দার পদদ্বয় ধূলায় ধূসরিত হয়, জাহান্নামের আগুন তার পদদ্বয় স্পর্শ করবে না’।[22]

অন্য হাদীছে এসেছে,عَنْ أَنَسِ عَنْ النَّبِىِّ  صلى الله عليه وسلم قَالَ لَغَدْوَةٌ فِى سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا-  হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার সমস্ত সম্পদ হ’তে সর্বোত্তম’।[23]

দাওয়াত না দেয়ার পরিণতি :

শয়তান প্রতিনিয়ত সমাজ দূষণে রত থাকে এবং মানুষকে তার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের মাধ্যমে শয়তানের প্ররোচনায় অন্যায়ে প্রলুব্ধ মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনা যায়। যদি দাওয়াতের এ মহান দায়িত্ব পালন না করা হয় তবে তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা সকলকে পাকড়াও করবেন। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

عَنِ ابْنِ جَرِيرٍ عَنْ جَرِيرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ  مَا مِنْ رَجُلٍ يَكُونُ فِى قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِى يَقْدِرُونَ عَلَى أَنْ يُغَيِّرُوا عَلَيْهِ فَلاَ يُغَيِّرُوا إِلاَّ أَصَابَهُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَمُوتُوا-

হযরত জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে জাতিতে কোন লোক পাপে লিপ্ত থাকে, আর ঐ ব্যক্তিকে পাপ থেকে ফেরাতে জাতির লোকদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও না ফেরায় তাহ’লে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করবেন’।[24]

হাদীছে এসেছে,  

عنْ أَبِى بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ قَالَ أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ هَذِهِ الآيَةَ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لاَ يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ) وَإِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الظَّالِمَ فَلَمْ يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ مِنْه-

হযরত বকর সিদ্দীক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হে জনগণ! তোমরা নিশ্চয়ই এ আয়াতটি পাঠ করেছ, (অর্থাৎ) হে ঈমানদারগণ তোমরা নিজেদের উপর এ কথা আবশ্যক করে নাও, যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা হেদায়াতের উপর স্থির থাকবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মানুষ যখন কোন খারাপ কাজ হ’তে দেখে, কিন্তু সেটাকে পরিবর্তন করে না, অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন’।[25]

অন্যত্র এসেছে, 

عَنْ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ رضى الله عنهما يَقُولُ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِى حُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا سَفِينَةً ، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَعْلاَهَا، فَكَانَ الَّذِى فِى أَسْفَلِهَا يَمُرُّونَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِينَ فِى أَعْلاَهَا، فَتَأَذَّوْا بِهِ، فَأَخَذَ فَأْسًا، فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِينَةِ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْ بِى، وَلاَ بُدَّ لِى مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ ، وَإِنْ تَرَكُوهُ أَهْلَكُوهُ وَ أَهْلَكُوا أَنْفُسَهُمْ-

হযরত নুমান ইবনু কাশীর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখার ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শনকারী এবং তা লংঘনকারীর উপমা হ’ল সেই যাত্রীদল, যারা লটারীর মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। ফলে কারো স্থান হলো নিচতলায় আর কারো স্থান হলো উপরতলায়। যারা নিচতলায় ছিল তারা পানি নিয়ে  উপরতলার লোকদের পাশ দিয়ে গমনাগমন করত। ফলে তারা বিরক্তি প্রকাশ করল। তখন নিচতলার এক লোক কুড়াল নিয়ে নৌযানের নিচের অংশ ফুটো করতে লেগে গেল। এ দেখে উপরতলার লোকজন তাকে এসে জিজ্ঞাসা করল তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমাদের কারণে তোমরা কষ্ট পেয়েছ। অথচ আমাদের পানির প্রয়োজন আছে। এমতাবস্থায় যদি তারা তার হস্তদ্বয় ধরে ফেলে, তাহ’লে তাকেও রক্ষা করবে, নিজেরাও রক্ষা পাবে। আর যদি তাকে তার কাজের উপর ছেড়ে দেয়, তাহ’লে তাকেও ধ্বংস করবে, নিজেদেরকেও ধ্বংস করবে’।[26]

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ.

হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ দিবে এবং খারাপ কাজ হতে নিষেধ করবে। নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ হ’তে তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা (আযাব থেকে মুক্তির জন্য) তাঁর নিকট দো’আ করবে, কিন্তু তোমাদের দো’আ কবুল হবে না’।[27]

আমলবিহীন দাঈর পরিণতি :

মহান আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ-كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ-

‘হে ঈমানদারগণ তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা কর না। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার যে, তোমরা বলবে এমন কথা যা তোমরা কর না’ (ছফ- ৬১/২-৩)। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِى رِجَالاً تُقْرَضُ شِفَاهُهُمْ بِمَقَارِيضَ مِنْ نَارٍ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ هَؤُلاَءِ خُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ يَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَيَنْسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ-

হযরত আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন মি‘রাজের রাতে আমি বহু লোককে দেখেছি যে, তাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম হে জিবরাইল! এরা কারা? জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা আপনার উম্মতের মধ্যে বক্তাগণ যারা লোকদেরকে ভাল কাজের আদেশ করত কিন্তু নিজেদেরকে ভুলে যেত অর্থাৎ নিজেরা সৎ কাজ করত না’।[28]

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِى النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُ بَطْنِهِ فَيَدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِالرَّحَى فَيَجْتَمِعُ إِلَيْهِ أَهْلُ النَّارِ فَيَقُولُونَ يَا فُلاَنُ مَا لَكَ أَلَمْ تَكُنْ تَأْمُرُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ فَيَقُولُ بَلَى قَدْ كُنْتُ آمُرُ بِالْمَعْرُوفِ وَلاَ آتِيهِ وَأَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ-  

হযরত উসামা ইবনু জায়েদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন একজন লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, সাথে সাথেই তার পেট থেকে নাড়ী-ভূড়ি বের হয়ে পড়বে। সে নাড়ি-ভূড়িকে কেন্দ্র করে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে যেভাবে আটার চাক্কিকে কেন্দ্র করে গাধা ঘুরতে থাকে, এটা দেখে জাহান্নামবাসীরা তার পাশে জমায়েত হবে। তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার ঐ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হ’তে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না। আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হ’তে নিষেধ করতাম, অথচ আমিই তা করতাম’।[29]

১৭. পরস্পর সালাম ও মুসাফাহার ফযীলত :

পরস্পরে অভিবাদন হলো সালাম। সাক্ষাত হ’লে মুসলিম সালাম বিনিময় করবে। এর মাধ্যমে মহববত বৃদ্ধি হয়। পারস্পারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। প্রচলিত কথাগুলি বিশেষ করে গুড মর্নিং, গুড নাইট, টাটা, বাই বাই, ইত্যাদি সব জাহেলী প্রথা। এগুলো থেকে বেঁচে থাকা যরূরী। সুতরাং ইসলামী রীতি অনুযায়ী সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো মুসলিমদের দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারো গৃহে প্রবেশ করো না। যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নিবে এবং গৃহবাসীদের সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’ (নূর ২৪/২৭)

হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رضى الله عنهما أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِىَّ  صلى الله عليه وسلم  أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ  السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ -

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন আমলটি উত্তম? তিনি বললেন, ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া’।[30] 

হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘একজন মুমিনের উপর অপর মুমিনের ছয়টি অধিকার  রয়েছে। ১. যখন সে রোগে আক্রান্ত হয় তখন তার সেবা শুশ্রুষা করবে, ২. মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযা ও দাফন-কাফনে উপস্থিত থাকবে, ৩. দাওয়াত করলে তা গ্রহণ করবে, ৪. সাক্ষাত হ’লে তাকে সালাম দিবে, ৫. হাঁচি দিলে জবাব দিবে, ৬. উপস্থিত-অনুপস্থিত উভয় অবস্থায় তার জন্য কল্যাণ কামনা করবে’।[31]

 (ক্রমশ)

 [লেখক : কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ ]


[1]. বুখারী হা/৫০২৭; মিশকাত হা/২১০৯।

[2]. মুসলিম হা/৮০৩; মিশকাত হা/২১১০।

[3]. তিরমিযী হা/২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭।

[4]. তিরমিযী হা/২৯১৪; মিশকাত হা/২১৩৪।

[5]. বুখারী হা/৫০৫৯, ৫০২০, ৫৪২৭, ৭৫৬০।

[6]. মুসলিম হা/৮০৫; মিশকাত হা/২১২১; রিযাযুস ছালেহীন হা/৯৯৯।

[7]. নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮।

[8]. বুখারী হা/২৩১১; মিশকাত হা/২১২৩।

[9]. বুখারী হা/৪০০৮, ৫০০৮, ৫০৪০, ৫০৫১, মিশকাত হা/২১২৫।

[10]. বায়হাকী; মিশকাত হা/২১৭৫।

[11]. মুসলিম হা/৮০৯; মিশকাত হা/২১২৬।

[12]. মুসলিম হা/৮১১; মিশকাত হা/২১২৭।

 

[13]. বুখারী হা/৭৩৭৫; মিশকাত হা/২১২৯।

[14]. তিরমিযী, দারিমী, আহমাদ, মিশকাত হা/২১৩০।

 

[15]. বুখারী হা/৩৪৬১; মিশকাত হা/১৯৮।

 

[16]. মুয়াত্ত্বা মালেক, মিশকাত হা/১৮৬।

[17]. মুসলিম, আবুদাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৩৭।

[18]. মুসলিম হা/২৬৭৪; মিশকাত হা/১৫৮।

[19]. মুসলিম হা/১০১৭; মিশকাত হা/২১০।

[20]. মুসলিম হা/১৮৯৩; মিশকাত হা/২০৯।

[21].বুখারি হা/২৯৪২,৩০০৯,৩৭০১,৪২১০, রিয়াযুস ছালিহীন হা/১৮০।

[22]. বুখারী হা/২৮১১; মিশকাত হা/৩৭৯৪।

[23]. বুখারী হা/২৭৯২; মিশকাত হা/৩৭৯২।

[24]. আবু দাঊদ হা/৪৩৩৯, ইবনু মাজাহ হা/ ৪০০৯ মিশকাত হা/৫১৪৩।

[25]. ইবনু মাজাহ হা/৪০০৫; তিরমিযী হা/২১৬৮;মিশকাত  হা/৫১৪২।

[26]. বুখারী হা/২৪৯৩,২৬৮৬, তিরমিযী হা/২১৭৩, মিশকাত হা/৫১৩৮।

[27]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৪০।

[28]. শারহুস সুন্নাহ, বায়হাকী, মিশকাত হা/৫১৪৯।

[29]. বুখারী হা/৩২৬৭,৭০৯৮,আহমাদ হা/২১৭৮৪।

[30]. বুখারী হা/১২, ২৮; মিশকাত হা/৪৬২৯।

[31]. নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৩০।



বিষয়সমূহ: আমল
আরও