করোনা বিপর্যয়ে ইসলামে ফিরলেন যারা

আব্দুল্লাহ আল-মুছাদ্দিক 901 বার পঠিত

খাঁ খাঁ হৃদয়মরুতে যখন শরতের শিশিরে ভেজা ঘাসের ন্যায় স্বচ্ছ বসন্ত আসে, সে বসন্তের উদ্দীপনায় হৃদয়তন্ত্রীতে জাগে এক অদ্ভূত আলোর সঞ্চারণ। হৃদয়কাননে প্রস্ফুটিত এমনই এক শুভ্রতার নাম ইসলাম। পাপ পঙ্কিলতায় হাঁসফাঁস খেয়ে ক্লান্ত নাবিকেরা যখন পিছে রেখে আসা হতাশার দিকে তাকায়, ম্রিয়মান বৃক্ষ থেকে গজানো নতুন পল্লব স্বরূপ প্রস্ফুটিত ইসলাম তখন তাদের দেখায় নতুন আলোর হাতছানি। দিকভ্রান্ত মরীচিকা সদৃশ পাটাতন থেকে তখন জন্ম নেয় জীবনের নতুন অনুচ্ছেদ। পাপ-পংকিলতা আর হতাশার বলয় ভেঙে গায়ে অনুভূত হয় মুক্তির শীতল পরশ। নতুন করে লেখার প্রেরণা জাগে জীবনের নতুন জ্যামিতি।

একথা সর্বজনসিদ্ধ যে, পৃথিবীতে দ্রুত সম্প্রসারিত ধর্ম হ’ল ইসলাম। পিউ গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্ম হবে ইসলাম।

২০২০ সালে এসে করোনার বিপর্যয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে পৃথিবী। সভ্যতার রঙিন চশমা খুলে পৃথিবীর নিদারুণ বাস্তবতা বুঝতে শিখেছেন অনেকেই। করোনার ভয়ে মাকে রেখে চলে গেছে সন্তানরা। আক্রান্ত হওয়া মাত্রই ব্যক্তিকে রেখে পালিয়েছে তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি। দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন অনেকেই আবার দীর্ঘদিন পর পরিবারকে কাছ থেকে অনুভব করেছে। মোটকথা, জীবন যে হ’তে পারে নাটকের চেয়ে নাটকীয়, করোনা এসে এই বাস্তবিক হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছে চোখের পলকে। ফলশ্রুতিতে অনেকেই জীবনের মিথ্যা মোহ ত্যাগ করে বাস্তবতার সমীকরণ বুঝতে শিখেছে। ইসলামী আদর্শ বদলে দিয়েছে তাদের জীবনের রূপরেখা। ২০২০ সালে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, এমন কতিপয় বিখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করব, যাদের তথ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।

জেই পালফ্রে : জেই পালফ্রে একজন তরুণ মোটিভেশাল ইউটিউবার। এক সময় তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। মূলত এটিই ছিল তার ইসলামের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রাথমিক ধাপ। প্রথমে তিনি মিশর, তুরস্ক, ইরাক, পাকিস্তানের মত আরো বহু দেশ ভ্রমণ করেন। এসব দেশ ভ্রমণের কারণে তিনি খুব দ্রুত ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্ম সম্পর্কে পরিচিত হয়ে উঠেন। সর্বোপরি খুব কাছ থেকে ইসলামের সংস্পর্শে আসেন। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর তাওহীদের প্রতি অনুপ্রাণিত হন এবং একক স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস করা শুরু করেন। ২১শে আগস্ট ২০২০ সালে ইউটিউবে তাঁর একটি ভিডিও বের হয়। সেখানে তাকে শাহাদাহ পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করতে দেখা যায়।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘যখন আমি পৃথিবী ভ্রমণ শুরু করি তখন অনেক আশ্চর্যজনক মানুষের সাক্ষাৎ পাই। আমি অনেক কিছু জানতে পারি এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করি। ইসলামী দেশগুলোতে ভ্রমণের কারণে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো বুঝতে পারি এবং সত্য ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারি। ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে চমৎকার, শান্তিপূর্ণ কিন্তু ভুল বুঝাবুঝির ধর্ম।

এক সময় তিনি ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা করতে কুরআন পড়া শুরু করেন। মিশরে থাকাকালীন রামাযান মাসে তিনি কিছু চমৎকার মানুষের সাক্ষাৎ পান, যারা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। পুরো রামাযান মাস জুড়ে তিনি মানুষের মধ্যে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং সুখ প্রত্যক্ষ করেন। আর এটিই ছিল তাঁর ইসলামে ফেরার গল্প।

উইলহেম ওট : করোনা বিপর্যয়ের প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে উইলহেম ওট একজন। উইলহেম ওট একজন ৩৮ বছর বয়সী অস্ট্রিয়ান বক্সিং যোদ্ধা (MMA Fighter)। তিনি MMA তে রৌপ্য বিজয়ীও বটে, একসময় তিনি নিজেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। জীবনের সংকটময় এই সময়টাতে ইসলামী বিশ্বাস এবং ভাবধারা তাকে বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। ১৬ই এপ্রিল ২০২০ সালে উইলহেম ওট ইসলাম গ্রহণ করেন। করোনা ভাইরাসের সংকটময় মুহূর্তই মূলত তাঁকে ইসলাম গ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করে।

বিয়ং চান : দক্ষিণ কোরিয়ার অধিবাসী সাবেক ফুটবলার বিয়ং চান। ব্যক্তি জীবনে হতাশা থেকে যে বয়সে তাকে নেশার ঘোরে পড়ে থাকার কথা ছিলো, সে বয়সে তিনি ইসলামে ফিরে এসেছেন। আসুন! তার নিজের মুখ থেকেই সে ঘটনাটি শুনে নেই।

‘কৈশরের প্রারম্ভে আমি ছিলাম অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। একজন কর্মঠ ফুটবলার। একসময় অনুভব করলাম মানসিক ও শারীরিকভাবে আমি ভালো নেই। যদিও আমি মুহাম্মাদ সালাহ আর মেসুত ওজিলের ফ্যান ছিলাম। কিন্তু তারপরও খেলা চালিয়ে যাওয়ার মতো সাহস এবং অনুপ্রেরণা পাইনি। ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত ফুটবল খেলেছি। আমার ফুটবল ছেড়ে দেয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ ছিলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, আমার কাছে মনে হ’ল সময়ের সাথে সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আমি হতাশাগ্রস্ত ও পরাজিত হয়ে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিচ্ছিলাম। ধৈর্য এবং আশাহত হয়ে ভাবছিলাম জীবনে হয়তো কিছুই করতে পারবো না। সুবহানাল্লাহ! তারপর পরিবর্তন হয়ে হাইস্কুল শেষ করে  সেনাবাহিনীতে যোগদান করলাম। নিজের প্রচেষ্টায় ডিপ্লোমাও করলাম। এই সময়টাতে কিছু মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ হ’ল। তারা আমার কথা শুনতো। আমাকে বোঝার চেষ্টা করতো এবং আমার অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতো। এই বন্ধুরা ধীরস্থিরভাবে আমার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন ঘটাতে লাগলো। দিন থেকে সপ্তাহ গড়াতে লাগলো। তখন আমরা সব বিষয়ে প্রচুর আলোচনা করতাম। বিশেষত ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য আমার অনেক প্রশ্ন ছিলো। তারা আমাকে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতো এবং সমস্যাগুলো সমাধান করতো। এরপর আমি নিজের চেষ্টায় ইসলাম অধ্যয়ন শুরু করলাম। কুরআন পড়তে জানিনা তাই শুনতে শুরু করলাম। যখন ঘুমাতে যেতাম মনে হ’ল এই কাজগুলো আমাকে স্রষ্টার আরও কাছে নিয়ে যাচ্ছে। এটি আমাকে আরও আল্লাহতে বিশ্বাসী করলো। এভাবে টানা ৬ মাস ইসলামের মৌলিক এবং প্রয়োজনীয় বিষয় অধ্যয়ন শেষে মনে হ’ল আমি মনস্তাত্ত্বিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে প্রস্তুত। সুবহানাল্লাহ! আমি আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। আমি কালেমা পাঠ করে ইসলামের সৌন্দর্যে প্রবেশ করলাম। ইসলাম গ্রহণ করে আমি খুব খুশী এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে এই সুন্দর পথে পরিচালিত করেছেন। করোনার জন্যে মসজিদে যেতে পারিনা এবং সবার সাথে সাক্ষাৎ হয়না, এটি আমাকে খুব কষ্ট দেয়। কিন্তু আল্লাহ চান তো এটি সাময়িক মাত্র।

আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি পরিবার এখনো জানেনা। তবে শীঘ্রই তাদেরকে জানাবো। আমার ইসলাম সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানা এবং চর্চার প্রয়োজন। তাহ’লে ইসলাম সম্পর্কে তাদেরকে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারব। কে জানে? একদিন তারাও ইসলাম গ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ। রামাযান খুবই সন্নিকটে, পূর্বে কখনো ছিয়াম রাখিনি। জানিনা এটি কেমন কঠিন হবে। তারপরও ছিয়াম রাখা এবং সম্পূর্ণ কুরআন পড়ার চেষ্টা করবো।

মুনতাননা  লোনে : মুনতাননা লোনে ২৫ বছর বয়সী একজন অস্ট্রেলিয়ান রাগবি প্লেয়ার। সে উইলিয়াম ওটসের মাধ্যমে ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মূলতঃ ইসলাম একটি সুগন্ধির ন্যায়।  যার ঘ্রাণ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তার কাছে ইসলামের আবেদন পৌঁছার বিষয়টি ছিল একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। যেমনটা কেউ প্রত্যাশাও করে না। সম্প্রতি মুনতাননা এবং উইলিয়াম ওটসের মধ্যে কথাবার্তার একটি স্ক্রিনশট ব্লগে পোস্ট করা হয়। যেখানে মুনতাননা তাকে ধন্যবাদ জানান। মূলতঃ ওটসের ইসলাম গ্রহণের ভিডিওটি দেখে সে ইসলামের পথে অনুপ্রাণিত হয় এবং ১৩ ই জুলাই ২০২০ সে ইসলাম গ্রহণ করে।

লোয়াজি সবু : লোয়াজি সবু দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাস শুরু করেন। ইউটিউবে নিজের ভাব-ভঙিমার বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করে তিনি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। হুট করে একদিন তাকে নিজের চ্যানেলে দু’টি ভিডিও আপলোড করতে দেখা যায়। যেখানে তিনি মুফতি ইসমাইল মেনক এবং ডা. জাকির নায়েকের ভিডিওতে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। খুব কম সংখ্যক দর্শকই তখন জানতেন তিনি মূলতঃ তাঁদের বক্তব্যে প্রভাবিত হয়েছেন। ১লা সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে লোয়াজি সবু তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। তার আপলোডকৃত একটি ভিডিওতে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম মুহূর্ত কালেমা শাহাদাহ পাঠ করতে দেখা যায়।

দাউদ কীম পরিবার : দাউদ কীম একজন বিখ্যাত কোরিয়ান ইউটিউবার। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার রয়েছে ব্যাপক অনুসারী। সে ২০১৯ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। দাউদ তার ভক্তদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সৎ, সুস্পষ্টভাষী এবং শান্তশিষ্ট মানুষ হিসাবে পরিচিত। খুশীর সংবাদ হচ্ছে ১৬ই নভেম্বর ২০২০ সালে তার স্ত্রীও ইসলাম গ্রহণ করেন এবং শাহাদাহ পাঠের একটি যৌথ ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে দেখা যায় দাউদ কীম শাহাদাহ পাঠ করার পর স্ত্রীও শাহাদাহ পাঠ করেন। ইউটিউব ক্যারিয়ারের পূর্বে দাউদ একজন পপ শিল্পী হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী ‘আমি একটি অন্ধকার জগতে ছিলাম। অবশেষে ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে শান্তির পরশ খুঁজে পেয়েছি’।

রেবেহা কোহা : রেবেহা কোহা একজন লাটভিয়ান ভার উত্তোলক ক্রীড়াবিদ। এটি হচ্ছে পেশী শক্তির খেলা। সে জুনিয়র ইভেন্টে দুইবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং একবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন। ২৬শে জুলাই ২০২০ সালে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দেয়। তার ইসলাম গ্রহণের এ বার্তাটি নিম্নে তুলে ধরা হ’ল

প্রিয় বন্ধু, অনুসারী ও সর্বসাধারণগণ!

আমি আমার জীবনে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সবাইকে বলতে চাই যে আমি এতে খুশী এবং কৃতজ্ঞ। আমি নিশ্চিত যে নিজের জন্যে সঠিক কাজটি করেছি। ‘Today is special day for me, because I became a musilm’. ‘আজ আমার জন্য অসাধারণ দিন। কারণ আমি মুসলিম হয়েছি’। ৩টা ৪৮ মিনিটে শাহাদাহ পাঠ করে আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি। এখন থেকে আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করছি। যেহেতু আমি এখন একজন মুসলিম, তাই সবাইকে বলতে চাচ্ছি যে, কেউ আমার সতর খোলা ছবি পোস্ট অথবা শেয়ার দিবেন না। যারা আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ। আলহামদুলিল্লাহ, সবার জন্য শুভকামনা এবং আল্লাহ সবাইকে মহিমান্বিত করুন।

একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন যে, আমার ভবিষ্যৎ স্বামীর জন্যে মূলত আমি ইসলাম সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তাকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তার মাধ্যমে আমি আলোর সন্ধান পেয়েছি। আমি অত্যন্ত খুশী এবং সত্য খুঁজে পাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। উল্লেখ্য যে, রেবেকা কোহা গত মে মাসের শুরুতে কাতারের অধিবাসী মুয়াজ মুহাম্মাদের সাথে বাগদানের ঘোষণা দেন।

সিলভিয়া রোমানা : সিলভিয়া রোমানা পূর্বে বিখ্যাত কেউ ছিলেন না। রোমানা মূলত একজন ইতালিয়ান নারী। ইতালির একটি সাহায্য সংস্থার সাথে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে সে কেনিয়াতে অপহরণের শিকার হয়। সোমালিয়া ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আল-শাবাবের সদস্যরা ২০১৮ সালের নভেম্বরে তাকে অপহরণ করে।

৭ই মে ২০২০ সালে বিভিন্ন পত্রিকার প্রথম পাতায় একটি নিউজ ছাপানো হয়। সেখানে বলা হয় ২৪ বছর বয়সী একজন ইতালিয়ানের সাহায্যে সে অপহরণের ১৮ মাস পর আফ্রিকায় বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এ সংবাদে ইতালিয়ানরা আনন্দে উল্লোসিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যাই হোক দেশে আসার পর সম্পূর্ণ শরীর আবৃত হিজাব পরিহিত একজন নারীর বেশে তাকে দেখা গেল। প্রথম দেখাতেই সে সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেলো। সিলভিয়া ছিল খুবই খুশী। সে দাবী করল যে, তার ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত একান্ত নিজের। কেউ তাকে জোর করেনি।

সিলভিয়া রোমানা ইতালীয় বার্তা সংস্থা এ. এন. এস. এ- কে যা বলেছেন, ‘তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে আমাকে হত্যা করা হবে না এবং তা-ই হয়েছিল। আমি বন্দীদশার মধ্যে ইসলাম গ্রহণ করি। এটি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল এবং জোর করা হয়নি। বন্দীকালীন সময়ে তারা আমাকে একটি কুরআন দিয়েছিল এবং তাদের সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করেছিল। তাদের সাথে বৈবাহিক বা অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল না। সেখানে কেবল সম্মান ছিল।

ইয়ংস ওয়ার্ল্ড : ২০২০ সালের জানুয়ারীর ২ তারিখে বিখ্যাত কোরিয়ান ইউটিউবার ইয়ং তার ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা দেয়। তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সে ইসলাম নিয়ে পড়তে শুরু করে। ইয়ং বলছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এটা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা। অন্যান্য প্রত্যাবর্তনকারীদের ন্যায় ইসলাম সম্পর্কে ইয়ংসের প্রাথমিক ধারণাটি ইতিবাচক ছিল না। যাই হোক আল্লাহর দয়ায় ইয়ং শেষ পর্যন্ত সত্য পথ খুঁজে পায়’।

ইলি কোয়ে :  ইলি কোয়েন একজন প্রসিদ্ধ ইউটিউব ট্রাভেল ব্লগার এবং ভ্রমণ সংগঠক। তার একটি সক্রিয় ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানে ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। তিনি তাঁর মত নওমুসলিমদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভিডিও বানাচ্ছেন, যাতে করে অন্যদেরকে ইসলাম গ্রহণের পথ দেখাতে পারেন।

রোজী গ্যাব্রিয়েল : রোজী গ্যাব্রিয়েল একজন কানাডিয়ান সলো ট্রাভেলার এবং ইউটিউবার। মটর সাইকেলে চড়ে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করার পর ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২০ সালের ৯ই জানুয়ারী তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণের কাহিনী বর্ণনা করছিলেন তখন তিনি পাকিস্তান ও এর জনগণের দয়া ও মহানুভবতার প্রশংসা করেন। কেননা তিনি যে সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তা হ’তে মুক্ত করতে তারা তাকে সাহায্য করেছিল। তিনি মনে করেন প্রভুর প্রতি নিবেদন ও ধারণার কারণে তিনি অনেক আগ থেকেই একজন মুসলিম। তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে ইসলাম বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে সমালোচিত ও ভুলভাবে ব্যাখ্যাকৃত ধর্ম। অথচ ইসলামের মূল কথা হ’ল শান্তি, ভালাবাসা ও আল্লাহর একত্ব। এটা কোন ধর্ম নয়, বরং জীবন চলার পথ। এটি একটি মানবতাপূর্ণ, ভালবাসাময় জীবন চলার পথ।

রুবি জেসি মিসো :  টাইসন লেডি নামে সুপরিচিত রুবি জেসি মিসো ১৯শে নভেম্বর ২০২০ সালে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। সে একজন জনপ্রিয় বক্সিং তারকা। সে নেদারল্যান্ডে বেড়ে উঠেছেন এবং সেখানেই বাস করছেন। অবসর নেওয়ার পূর্বে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি একবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং একবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। হিজাব পরিহিত অবস্থায় নেদারল্যান্ডের একটি মসজিদে তার ইসলাম গ্রহণের ছবিটি অনলাইন দুনিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়। ইসলামী বিশ্বের অধিবাসীরা তার এই সিদ্ধান্তে স্বাগত জানায়। তার একটি টুইট বার্তা থেকে জানা যায় যে তিনি বলেছেন, ‘আমি খুব গর্বিত যে প্রায় এক বছর পড়াশোনা শেষে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। পূর্বে আমি ইসলামকে আত্মঘাতি মনে করলেও বর্তমানে আমি মসজিদে এসে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর ইচ্ছায় আমি খুব খুশী।

এইডেন লিকেলম্যান হেনরি :  এইডেন হেনরি তিনি মূলত কম উচ্চতার জন্য লিকেলম্যান হিসাবে পরিচিত। তিনি তিন ফুট উচ্চতার একজন বিখ্যাত বক্সার। আজ থেকে ২৬ বছর পূর্বে তিনি ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রিতে জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষুদ্র আকৃতির কারণে তিনি তার কাছের মানুষদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত এবং অবহেলার শিকার হয়েছিলেন। একটা সময় তিনি বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে জেলে যান। মার্চ ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন এবং পূর্বের জীবনের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। তার ভাষায়, ‘আমি সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছি। যখন আপনি একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে অর্ধেক আকারে জন্মগ্রহণ করবেন তখন আপনাকে কিছু পাওয়ার জন্য দ্বিগুণ সংগ্রাম করতে হবে।

আমি মাদক ও অপরাধের জগতে বেড়ে উঠেছি। আমি স্কুলে যাইনি, পড়তে পারিনি, আমার বাবা-মা নেই। আমার পিছনের ২৫টি বছর খারাপ কেটেছে। আমি দুঃখিত হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। এখন আমার ঘুরে দাঁড়াবার সময় এসেছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। যখন হেনরি এবং তার বন্ধুরা শাহাদাহ পাঠ করেন এটি ছিল এক চমৎকার মুহূর্ত।

উপসংহার :  ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। প্রত্যেকটা আদম সন্তান ইসলামী বিশ্বাসের উপর জন্মেছে। আল্লাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি দয়াশীল। দুনিয়ার মানুষ ভুলে গেলেও আমাদের রব কখনো আমাদের ভুলে যান না। বক্ষবান প্রতিবেদনে আল্লাহভোলা কিছু বান্দার নীড়ে ফেরার গল্প উপস্থাপিত হয়েছে। বান্দা যখন ইসলামে ফিরে আসে রহমতের দরিয়ার জোয়ার তখন নিমিষেই সকল পাপ-পঙ্কিলতা ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেয়। এক নিঃশ্বাসের কালিমা পঠনে সারাজীবনে পাপরাশি আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। মুহূর্তেই সাধিত হয় জীবনের এক আমূল পরিবর্তন। আর এভাবেই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেন-আলহামদুলিল্লাহ।

আব্দুল্লাহ আল-মুছাদ্দিক

লেখক : শিক্ষার্থী, বিএসএস সম্মান, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়




বিষয়সমূহ: ইসলামগ্রহণ
আরও