চিকিৎসাবিজ্ঞানী টমাস লডার ব্রুন্টন যেভাবে মুসলিম হন

হাবীবা রহমান উজরা 431 বার পঠিত

চিকিৎসক ও পদার্থবিদ স্যার টমাস লডার ব্রুন্টন ১৮৪৪ সালে স্কটল্যান্ডের রক্সবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেন ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের ‘ফার্মাকোলজি’ বিভাগে এবং সেন্ট বার্থলোমিউজ হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯০০ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক সম্মানজনক ‘নাইটহুট’ এবং  ১৯০৮ সালে সম্মানজনক ‘বেরনট’ খেতাব লাভ করেন। ‘এনজিনা পেকটোরিজ’-এর চিকিৎসায় ‘এমেল নাইট্রিট’-এর ব্যবহার চিকিৎসা শাস্ত্রে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান বলে মনে করা হয়। ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত উৎসাহ ও গবেষণার পথ ধরে ইসলামের সন্ধান পান এবং মহানবী (ছাঃ)-এর জীবন ও শিক্ষা তাঁকে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। মুসলিম হওয়ার পর তিনি স্যার জালালুদ্দীন লডার ব্রুন্টন নামধারণ করেন। ‘ইসলাম আওয়ার চয়েজ’ গ্রন্থে প্রকাশিত তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায় তিনি নিজের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী সম্পর্কে লেখেন, আমি খ্রিস্টান মা-বাবার প্রভাবেই প্রতিপালিত হই। অল্প বয়সেই ধর্মতত্ত্বের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। আমি চার্চ অব ইংল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অনিয়মিতভাবে মিশনারীতে কাজ করতেও ইচ্ছুক ছিলাম। কয়েক বছর আগে আমি ‘দুঃখ চিরন্তন’ মতবাদের প্রতি মনোযোগী হই। যার মূলকথা হ’ল সীমিতসংখ্যক মানুষ ছাড়া পৃথিবীর সব মানুষ দুঃখে নিমজ্জিত। এ মতবাদ আমার কাছে ঘৃণ্য হয়ে উঠেছিল এবং আমি সংশয়বাদী হয়ে উঠেছিলাম। আমার যুক্তি ছিল স্রষ্টা নিজের শক্তি ব্যবহার করে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন যে তারা চিরদিন ব্যথিত হবে; জ্ঞানী, ন্যায়পরায়ণ ও প্রেমময় হবে না। তাঁর এই অবস্থান বহু মানুষের চেয়ে নিচুমানের। এরপর নিজেকে প্রশান্ত করতে আমি অন্য ধর্মগুলো পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিই।

আমার ভেতর ইবাদত ও প্রকৃত স্রষ্টার আনুগত্যের ইচ্ছা প্রবল হয়ে ওঠে। খ্রিস্টধর্মের অনুসারীরা বলে আমরা বাইবেলের অনুসারী। কিন্তু অনুসন্ধান করে দেখি তাদের দাবী বাস্তবতাবিরোধী। আমার ভেতর প্রশ্ন জাগল এটা কি সম্ভব বাইবেল ও যিশুখ্রিস্টের শিক্ষাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে? সুতরাং গভীর মনোযোগসহ বাইবেল পাঠ শুরু করলাম। অধ্যয়নের পর বুঝলাম আমার আরো জানার প্রয়োজন আছে। আমি সত্য জানতে এবং নিজেকে মূল্যবান মুক্তায় পরিণত করতে ইসলাম অধ্যয়ন শুরু করি। ইসলামে এমন কিছু বিষয় আছে, যা আমাকে সে সময় আকর্ষণ করছিল।

অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবনী পাঠ করি। আগে আমি তাঁর সম্পর্কে খুব সামান্যই জানতাম। কিন্তু এটা জানতাম যে খ্রিস্টানরা আরবের এই নবীর নিন্দা করে। আমি সেসব নিন্দা পেছনে ফেলে নিরপেক্ষভাবে তাঁর জীবনী পাঠ করলাম। কিছুটা পাঠের পরই বুঝতে পারলাম মহান স্রষ্টা ও চিরন্তন সত্য সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন তাতে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই। তিনি মানবতার পক্ষে যে অবদান রাখেন, তারপরও তাঁর সমালোচনা চরম অন্যায়। যেসব মানুষ ছিল বন্যমূর্তির উপাসনাকারী, অপরাধের মধ্যে বেঁচে থাকত; নোংরামি, উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতায় মগ্ন ছিল, তিনি তাদের কাপড় পরিয়েছেন, তাদের পরিচ্ছন্নতা শিখিয়েছেন, তাদের ব্যক্তিত্ববান, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও অতিথিপরায়ণ করেছেন এবং তাদের মূর্তিগুলো ধ্বংস করে তাদের একমাত্র আল্লাহর সন্ধান দিয়েছেন। ফলে ইসলাম ধর্মান্তরিত মানুষের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়। মানবসভ্যতায় উল্লেখ করার মতো অগণিত অবদান তাঁর রয়েছে। ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম যে, তাঁর মতো একজন পবিত্র ব্যক্তির সমালোচনা করছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। আমি যখন ধর্ম নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন, তখন ভারত থেকে মিয়া আমীরুদ্দিন আসেন। তিনি লাহোরের প্রথম মেয়র ও বেলুচিস্তানের চিফ কমিশনার ছিলেন। তিনি আমার ভেতরের আগুনকে স্ফূলিঙ্গে পরিণত করেন। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় আমি ইসলাম গ্রহণ করি-ফালিল্লাহিল হামদ।



আরও