মৃত্যুকে স্মরণ

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 120 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَكُنْتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ-

(১) ‘কীভাবে তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করো? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। অতঃপর তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। আবার তিনি তোমাদের মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তিনি তোমাদের জীবিত করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৮)

2- اللهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِيْنَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِيْ مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَى إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ-

(২) ‘আল্লাহ প্রাণীজগতের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুকালে এবং যে মরেনা তার নিদ্রাকালে। অতঃপর তিনি যার মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেন, তার প্রাণ আটকে দেন এবং অন্যগুলিকে ছেড়ে দেন নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। অবশ্যই এতে আল্লাহর নিদর্শন সমূহ রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য’ (যুমার ৩৯/৪২)

3- كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُوْرَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ-

(৩) ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই-ই হবে সফলকাম। বস্ত্তত পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)

4- أَيْنَمَا تَكُوْنُوْا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِيْ بُرُوْجٍ مُشَيَّدَةٍ-

(৪) ‘যেখানেই তোমরা থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর’ (নিসা ৪/৭৮)

5- وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوْتُ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ-

(৫) ‘কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সকল বিষয়ে খবর রাখেন’ (লোকমান ৩১/৩৪)

6- وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِيْنَ يَمُوْتُوْنَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُوْلَئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيْمًا-

(৬) ‘আর ঐসব লোকদের কোন তওবা নেই, যারা মন্দকর্ম করতেই থাকে, যতক্ষণ না তাদের মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং বলে যে, আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা কবুল হয় না ঐসব লোকের, যারা মৃত্যুবরণ করে কাফের অবস্থায়। আমরা তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (নিসা ৪/১৮)

7- وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُ يَابَنِيَّ إِنَّ اللهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ-

(৭) ‘একই অছিয়ত করেছিল ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকূবও। হে আমার সন্তানেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্য এই ধর্মকে মনোনীত করেছেন। অতএব তোমরা অবশ্যই মরো না মুসলিম না হয়ে’ (বাক্বারাহ ২/১৩২)

8- يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ-

(৮) হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মরো না’ (আলে ইমরান ৩/১০২)

9- الَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفُوْرُ-

(৯) ‘যিনি মৃত্যু ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর আমলকারী? আর তিনি মহাপরাক্রান্ত ও ক্ষমাশীল’ (মুলক ৬৭/২)

হাদীছের বাণী :

10- عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ قَالَ: كُنْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَاءَهُ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ أَفْضَلُ؟ قَالَ: أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا، قَالَ: فَأَيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ أَكْيَسُ؟ قَالَ: أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا، وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا، أُوْلَئِكَ الْأَكْيَاسُ -

(১০) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ছিলাম। এমন সময় এক আনছারী ব্যক্তি এসে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন মুমিন সর্বশ্রেষ্ঠ? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে চরিত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ। ছাহাবী বললেন, কোন মুমিন সবচেয়ে জ্ঞানী? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে বেশী মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী কালের জন্য উত্তম প্রস্ত্ততি নেয়। তারাই হ’ল জ্ঞানী।[1]

11- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَكْثِرُوْا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ، فَمَا ذَكَرَهُ عَبْدٌ قَطُّ وَهُوَ فِيْ ضِيْقٍ إِلَّا وَسَعَهُ عَلَيْهِ، وَلَا ذَكَرَهُ وَهُوَ فِي سَعَةٍ إِلَّا ضَيَّقَهُ عَلَيْهِ-

(১১) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘স্বাদ বিনাশকারী বস্ত্ত অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ কর। কারণ যে ব্যক্তি কোন সঙ্কটে তা স্মরণ করবে, সে ব্যক্তির জন্য সে সঙ্কট সহজ হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি তা কোন সুখের সময়ে স্মরণ করবে, সে ব্যক্তির জন্য সুখ তিক্ত হয়ে উঠবে’।[2]

12- عَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَبْلَ وَفَاتِهِ بِثَلَاثٍ، يَقُوْلُ: لَا يَمُوْتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلَّا وَهُوَ يُحْسِنُ بِاللهِ الظَّنَّ-

(১২) জাবের ইবনু আব্দুুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর তিন দিন আগে আমি তাকে এ কথা বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় ব্যতীত মৃত্যুবরণ না করে’।[3]

13- عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلَاثَةٌ: فَيَرْجِعُ اثْنَانِ، وَيَبْقَى مَعَهُ وَاحِدٌ: يَتْبَعُهُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ، فَيَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ، وَيَبْقَى عَمَلُهُ-

(১৩) আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মাইয়েতের সাথে যায়। দু’টি ফিরে আসে এবং একটি তার সাথে থেকে যায়। তার সাথে যায় তার পরিবার, তার ধন-সম্পদ এবং তার আমল। অতঃপর তার পরিবার ও মাল-সম্পদ ফিরে আসে এবং থেকে যায় তার আমল’।[4]

14- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: أَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْكِبِيْ، فَقَالَ: كُنْ فِيْ الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيْبٌ، أَوْ عَابِرُ سَبِيْلٍ، وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُوْلُ: إِذَا أَمْسَيْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ-

(১৪) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার আমার দু’কাঁধ ধরে বললেন, ‘তুমি দুনিয়াতে থাক যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী’। আর ইবনু ওমর (রাঃ) বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হ’লে আর সকালের অপেক্ষা করো না এবং সকালে উপনীত হলে আর সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার সময় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য প্রস্ত্ততি নাও। আর তোমার জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি নাও’।[5]

15- عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ مِنْ ضُرٍّ أَصَابَهُ، فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ فَاعِلًا فَلْيَقُلِ: اللَّهُمَّ أَحْيِنِيْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِيْ، وَتَوَفَّنِيْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِيْ-

(১৫) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ দুঃখ-কষ্টে পতিত হওয়ার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করতেই চায়, তা’হলে সে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যাণকর হয়’।[6]

মনীষীদের বক্তব্য :

১. আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করে, তার হিংসা ও পাপ কমে যায়’।[7]

১. রাগেব আসফাহানী (রহঃ) বলেন, ‘মৃত্যুকে স্মরণ অতিরিক্ত কামনা-বাসনা দূর করে, আকাঙ্ক্ষার প্রবঞ্চনা হ্রাস করে, বিপদাপদকে হালকা করে দেয় এবং (স্রষ্টার) অবাধ্যতা ও ব্যক্তির মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে দেয়’।[8]

২. আবু হামীদ আল-লাফফাফ (রহঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করে, তাকে তিনভাবে সম্মানিত করা হয় : দ্রুত তওবা, অল্প জীবিকায় পরিতুষ্টি এবং ইবাদতের উদ্যমতা’।[9]

সারবস্ত্ত :

১. মৃত্যু এমন এক সত্য বিষয় যাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। ২. সৎআমলের উপর মৃত্যুবরণ করা আখেরাতে মুক্তির শুভ লক্ষণ। ৩. সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা আত্মশুদ্ধির সবচেয়ে বড় উপায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে মৃত্যুর পূর্বে উত্তম প্রস্ত্ততি নেওয়ার তাওফীক দান করুন।-আমীন!


[1]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯ ‘মৃত্যুকে স্মরণ ও তার প্রস্ত্ততি’ অনুচ্ছেদ; ছহীহাহ হা/১৩৮৪।

[2]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৯৯৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩৩।

[3]. মুসলিম হা/২৮৭৭; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৩৬।

[4]. বুখারী হা/৬৫১৪; মুসলিম হা/২৯৬২; মিশকাত হা/৫১৬৭।

[5]. বুখারী হা/৬৪১৬; মিশকাত হা/১৬০৪।

[6]. বুখারী হা/৫৬৭১; মুসলিম হা/২৬৮২; মিশকাত হা/১৬০০।

[7]. আহমাদ বিন হাম্বল, কিতাবুয যুহদ ১১৭ পৃ.।

[8]. আয-যারী‘আহ ইলা মাকরিমিশ শারী‘আহ ২৩৯ পৃ.।

[9]. সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফেলীন ৪১ পৃ.।



বিষয়সমূহ: মৃত্যু
আরও