দক্ষিণ এশিয়ায় আহলেহাদীছ আন্দোলন

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব 533 বার পঠিত

আধুনিক যুগঃ ৩য় পর্যায় (ক)
دور الجديد: المرحلة الثالثة (الف)
মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী (السيد نذير حسين الدهلوى):
শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (১১১৪-১১৭৬/১৭০৩-১৭৬২)-এর শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শহীদায়েন (রহঃ) ও তাঁদের অনুসারী পাটনা ছাদিকপুরী পরিবারের নেতৃত্বে পরিচালিত কিঞ্চিদধিক সোয়াশো বছর (১৮১৬-১৯১৫ খৃঃ) ব্যাপী জিহাদ আন্দোলন সমগ্র উপমহাদেশে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টির সাথে সাথে আমল বিল-হাদীছের প্রতি মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্বানুভূতি সৃষ্টি করে। এর ফলে আহলেহাদীছ আন্দোলন একটি ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়।
অন্যদিকে শহীদায়েনের আদর্শে উদ্বুদ্ধ বিহারের মৌলবী নযীর হুসাইন (১২২০-১৩২০ / ১৮০৫-১৯০২ খৃঃ) ও কন্নৌজের মৌলবী ছিদ্দীক হাসান খান (১২৪৮-১৩০৭ / ১৮৩২-৯০ খৃঃ) দীর্ঘ শিক্ষকতা এবং গ্রন্থ রচনা ও প্রচারের মাধ্যমে চিন্তার জগতে পরিবর্তন সাধনের দ্বারা সর্বত্র যে নীরব বিপ্লবের সূচনা করেন, তা আহলেহাদীছ আন্দোলনকে ভারতবর্ষ ও বহির্বিশ্বে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ করে দেয়। মিয়াঁ নযীর হুসাইনের প্রায় পৌণে এক শতাব্দীকাল ব্যাপী (১২৪৬-১৩২০ হিঃ) শিক্ষকতার জীবনে প্রাপ্ত প্রায় সোয়া লক্ষ ছাত্রের  অধিকাংশ শহীদায়েন ও তাঁদের অনুসারীদের ন্যায় যুদ্ধের ময়দানে সশস্ত্র মুজাহিদ না হ'লেও ইল্মের ময়দানে তারা কুরআন-হাদীছের অস্ত্রে সমৃৃদ্ধ ইল্মী মুজাহিদ ছিলেন। যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আহলেহাদীছ আন্দোলন দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
ইমাম হুসাইন (৪-৬১ হিঃ)-এর বংশধর সাইয়িদ নযীর হুসাইন বিন জাওয়াদ আলীর বংশধারা ৩৫তম ঊর্ধতন স্তরে গিয়ে রাসূলুল্লাহ  (ছাঃ)-এর  সাথে  মিলে  যায়।  এই বংশে
দশজন ইমাম ও দশজন কাযী জন্মগ্রহণ করেন।  নযীর হুসাইনের ১৮তম ঊর্ধতন পুরুষ সাইয়িদ আহমাদ শাহ জাজনীরী দিল্লীর প্রথম মুসলিম সুলতান কুতুবুদ্দীন আয়বকের (৬০২-৬০৬/১২০৬-১০ খৃঃ) অন্যতম সৈন্যাধ্যক্ষ হিসাবে বিহারে প্রেরিত হলে সেই থেকে তিনি ও তাঁর বংশ বিহারের অধিবাসী হন। বিহারের মুংগের যেলার অন্তর্গত গঙ্গাতীরবর্তী সূর্যগড়ের অনতিদূরে বাল্থোয়া নামক গ্রামে নযীর হুসাইনের জন্মস্থানে তাঁর পিতা জাওয়াদ আলী মৃত্যুবরণ করলে তাঁর ভাইয়েরা সূর্যগড়ে উঠে আসেন।  পিতার জীবদ্দশাতেই নযীর হুসাইন শিক্ষার উদ্দেশ্যে দিল্লী গমন করেন ও সারা জীবন সেখানেই অতিবাহিত করেন।
১৭ বছর বয়স পর্যন্ত নযীর হুসাইন লেখাপড়ার প্রতি নযর দেননি। একদিন তাদের পরিবারের সুহৃদ জনৈক ব্রাহ্মণ তাকে বলেন ‘হে নযীর! তোমাদের বংশের সকলেই মৌলবী। অথচ তুমি জাহিল হ'য়ে রইলে?   ব্রাহ্মণের উক্ত বাক্য তরুণ নযীর হুসাইনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। প্রথমে পিতার নিকটে কিছু লেখা পড়া শিখেন। পরে ১২৩৭ হিঃ মোতাবেক ১৮২১ খৃষ্টাব্দের এক রাতে গোপনে পাটনা আযীমাবাদ চলে যান। সেখানে গিয়ে হজ্জের কাফেলা নিয়ে যাত্রাকারী শহীদায়েনের পক্ষকালব্যাপী ওয়ায শুনে তাঁর মধ্যে হাদীছ শিক্ষার উদগ্র বাসনা জেগে ওঠে।  ফলে ১২৪৩ হিজরীর ১৩ই রজব মোতাবেক ১৮২৮ সালের ৩০শে জানুয়ারী তিনি দিল্লীতে পৌঁছেন এবং পাঞ্জাবী কাট্রার আওরঙ্গাবাদী জামে মসজিদে অবস্থান করেন। সেখানে মুতাওয়াল্লী মাওলানা আবদুল খালেক-এর নিকটে তিনি প্রায় সাড়ে তিনবছর লেখাপড়া করে যোগ্যতা হাছিল করেন। অতঃপর ১২৪৬ হিজরীর শেষদিকে স্বনামধন্য উস্তাদ শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক (১১৯২-১২৬২/১৭৭৮-১৮৪৬Ñএর দরসে যোগ দেন।  শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক বিন আফযাল ফারূকী শাহ আবদুল আযীয (১১৫৯-১২৩৯/১৭৪৭-১৮২৪)-এর দৌহিত্র ও তাঁর মৃত্যুর পরে মাদরাসা রহীমিয়ায় তাঁর স্থলাভিষিক্তি ছিলেন। সাইয়িদ নাযীর হুসাইন দীর্ঘ তের বছর তাঁর নিকটে মা‘কূলাতে ও মান্কূলাতের বিভিন্ন শাখায় পারদর্শিতা লাভ করেন  অতঃপর ১২৫৮ হিঃ মোতাবেক ১৮৪৩ সালে উস্তাদ শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক স্থায়ীভাবে মক্কায় হিজরত করার সময় তাঁকে লিখিতভাবে স্বীয় স্থলাভিত্তিক্তি করে যান।  এবং অলিউল্লাহ পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী ‘শায়খুল হাদীছ’ হিসাবে তাঁকে ‘মিয়াঁ ছাহেব’ উপাধি প্রদান করেন। পরবর্তীতে হজ্জের সফরে গেলে আরবরা তাঁকে ‘শায়খুল কুল ফিল কুল’ (সর্বকালের সকলের সেরা বিদ্বান) ও ভারত সরকার তাঁকে ‘শামসুল উলামা’ (বিদ্বানগণের সূর্য) খেতাব দিলেও তিনি সর্বদা উস্তাদের দেওয়া ‘মিয়াঁ ছাহেব’ লকবই পসন্দ করতেন। সেই নামেই তিনি পরিচিত হয়েছেন।
আহলেহাদীছ আন্দোলনে মিয়াঁ ছাহেবের অবদান :
বিহারের এক মুকাল্লিদ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী সাইয়িদ নাযীর হুসাইন দিল্লীতে এসে নিরপেক্ষ ও খোলামনে হাদীছ অধ্যয়নের ফলে তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে। আমল বিল-হাদীছের জায্বা প্রচলিত তাকলীদ ধারার বাধ্যবাধকতা থেকে তাঁকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। কুরআন, হাদীছ, ফিক্হ সহ প্রচলিত প্রায় সকল ইল্মে গভীর পারদর্শী নযীর হুসাইন পাঠদানের সময় তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রদের সামনে হাদীছের সহজ-সরল পথ পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতেন। ফলে ফিক্হী বির্তক হ’তে বেরিয়ে ছাত্ররা সরাসরি কুরআন-হাদীছ অনুসরণে অধিক স্বস্তি লাভ করতেন। এরই ফলশ্রুতি হিসাবে দক্ষিণ এশিয়া ও বিহির্বিশ্ব থেকে জ্ঞানপিপাসু বহু ছাত্র প্রচলিত তকলীদ ছেড়ে দিয়ে ‘আহলেহাদীছ’ হয়ে যান। প্রত্যেক ছাত্র নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে তাঁর শিক্ষা প্রচার করতেন ও তাদের মাধ্যমে অনেকে আহলেহাদীছ হতেন। পঁচাত্তর বছরের এই ইল্মী মহীরুহের ছায়াতলে প্রায় এক লক্ষ পঁচিশ হাযার ছাত্র দ্বীনী ইল্ম লাভে ধন্য হন,  যাদের অধিকাংশই আহলেহাদীছ ছিলেন বা হয়েছিলেন বলে অনুমান করা চলে।  এক্ষণে আমরা তাঁর ছাত্রমন্ডলী সম্পর্কে আলোকপাত করব।
ছাত্রম-লী : পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের প্রায় সকল দেশেই মিয়র্ঁা ছাহেবের ছাত্র-ম-লী বিস্তৃত ছিল। সিরিয়া (শাম), মিশর, হেফায, নাজ্দ, ইয়ামন, আবিসিনিয়া (ইথিওপিয়া), বোখারা, বল্খ, সমরকন্দ, ইয়াগিস্তান, এশিয়া মাইনর (إيشيا كوچك) ইরান, খোরাসান, মাশহাদ, তিব্বত, চীন, জাপান, বার্মা, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ প্রভৃতি পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ ও এলাকা হ'তে ছাত্ররা হাদীছ শিক্ষার উদগ্র বাসনায় মিয়াঁ ছাহেবের দরসে যোগদান করতেন।
শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে মোটামুটি তিন স্তরের ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন তাঁর স্বনামধন্য পুত্র মৌলবী শরীফ হুসাইন (মৃঃ ১৩০৪ হিঃ), মাওলানা আব্দুল্লাহ গযনবী (১২৩০-৯৮/১৮১৪-৩০ খৃঃ) ঐ পুত্র মৌলবী মুহাম্মাদ, মৌলবী আবদুল জাব্বার, আবদুর রহীম, আব্দুল ওয়াহেদ ও তাঁর পাঁচ পুত্র। মৌলবী বশীর সাহসোয়ানী (১২৫০-১৩২৬/১৮৩৪-১৯০৮), মৌলবী আমীর হাসান (মৃঃ ১২৯১/১৮৭৪) ও তাঁর পুত্র আমীর আহমাদ সাহসোয়ানী (১২৬২-১৩০৬/১৮৪৬-১৮৮৮), মৌলবী আব্দুল্লাহ ওরফে গোলাম রসূল  পাঞ্জাবী, হাফেয মুহাম্মাদ বারাকাল্লাহ লাক্ষাবী পাঞ্জাবী, শামসুল উলামা মুহাম্মাদ হুসাইন বাটালভী লাহোরী (মৃঃ ১৩৩৮/১৯২০), হাফেয আবদুল্লাহ গাযীপুরী (১২৬০-১৩৩৭/১৮৪৪-১৯১৮), সা‘আদাত হুসাইন বিহারী (মৃঃ ১২৯৬ হিঃ), হাফেয ইবরাহীম আরাভী (১২৬৪-১৩১৯/১৮৪৯-১৯০১), হাফেয আবদুল মান্নান ওয়াযীরাবাদী (১২৬৭-১৩৩৪/১৮৫১-১৯১৫), রফীউদ্দীন শুক্রানওয়ারী বিহারী, মৌলবী তালাত্তুফ হুসাইন আযীমাবাদী (১২৬৪-১৩৩৪/১৮৪৮-১৯১৫), নূর আহমাদ ডিয়ানবী আযীমাবদী, বদীউয্যামান লাক্ষাবী (মৃঃ১৩০৪ হিঃ), মৌলবী অছিয়ত আলী, মৌলবী আসাদ আলী ইসলামাবাদী, ক্বাযী মাহফূযুল্লাহ পানিপথী, শায়খ আহমাদ দেহলভী, বখশিষ আহমাদ কাযীপুরী, সালামাতুল্লাহ আযমগড়ী, মৌলবী আবু আবদুর রহমান মুহাম্মাদ পাঞ্জাবী, আব্দুল গণী লা‘আলপুরী বিহারী, ইলাহীবখ্শ বারাকুরী, নাযীর হুসাইন আরাভী, আমীর আলী মালীহাবাদী লাক্ষাবী, নূর আহমাদ মুলতানী, আহমাদ হাসান ইস্তান্ভী বিহারী, আবদুল আযীয রহীমাবাদী (১২৭০-১৩৩৬/১৮৫৫-১৯১৮) ও তাঁর ভাই হাফেয মুহাম্মাদ ইয়াসীন, মৌলবী মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ পাঞ্জাবী গীলানী, মৌলবী মুহাম্মাদ তাহের সিলহেটী (বাংলাদেশ), আব্দুল জাব্বার ওমরপুরী, সাইয়িদ মুহাম্মাদ ইরফান টোংকী, মৌলবী মুহম্মাদ হুসাইন বিন আব্দুস সাত্তার হাযারভী, মৌলবী আলী নে‘মত ফলওয়ারী (মৃঃ ১৩৩১/১৯১২), মৌলবী মুহাম্মাদ আহ্সান ভূপালী, শায়খ আব্দুল্লাহ বিন ইদরীস হুসাইনী সানূসী মাগরেবী (মরক্কো), মুহাম্মাদ বিন নাছির বিন মুবারক, সা‘আদ বিন হামাদ বিন আতীক, শায়খ ইসহাক বিন আব্দুর রহমান আলে শায়খ (নাজ্দ), মুহাদ্দিছ শামসুল হক ডিয়ান্বী আযীমাবাদী (১২৭৩-১৩৩২৯/১৮৫৭-১৯১১)- আওনুল মা‘বূদ, গায়াতুল মাকছূদ, মুগ্নী শারহু দারাকুৎনী প্রভৃতির খ্যাতনামা রচিয়তা), শায়খ আবদুর রহমান মুবারকপুরী (১২৮৩-১৩৫৩/১৮৬৫-১৯৩৫) -তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, আব্কারুল মিনান প্রভৃতির রচয়িতা) প্রমুখ জগদ্বিখ্যাত বিদ্বানমন্ডলী।  
এছাড়াও রয়েছেন দেশে দেশে শত শত ইল্মী প্রতিভা, মিয়াঁ ছাহেবের র্দাস থেকে আলো নিয়ে যাঁরা স্ব স্ব এলাকা আমল বিল-হাদীছ-এর আলোকে উদ্ভাসিত করেছেন এবং এর মাধ্যমে আহলেহাদীছ আন্দোলনে অবদান রেখেছেন, যাদের সংখ্যা নিরূপণ করা একপ্রকার অসম্ভব। আল্লাহ্র সেনাবাহিনীর খবর তিনি ছাড়া আর কে রাখেন? তবে জীবনীকার ফযল হুসাইন বিহারী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হ'তে মিয়াঁ ছাহেবের পাঁটশত ছাত্রের একটি তালিকা দিয়েছেন। আমরা এখানে সংক্ষেপে তার কিছু তুলে ধরব।
এলাকাভিত্তিক উল্লেখযোগ্য ছাত্র মন্ডলী :
বিহার ঃ জেলা আরাহ ঃ ১। মাওলানা ইব্রাহীম আরীভী (১২৬৪-১৩১৯/১৮৪৯-১৯০১)। মক্কায় তৃতীয়বার হজ্জের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আরাহ-র ‘মাদরাসা আহমাদিয়াহ্’ তাঁর অমর স্মৃতি। জীবনের শেষদিকে তিনি তাছাউওফের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি খুবই হকপন্থী ছিলেন এবং কোন অবস্থাতেই হক পরিত্যাগ করে বাতিলের সঙ্গে আপোষ করতেন না।  ২। তাঁর ভাই মৌলবী মুহাম্মাদ ইদ্রীস আরাভী। ৩। মৌলবী মোহাম্মাদ কাসেম (মাদরাসা আলিয়া কলিকাতা-এর তত্ত্বাবধায়ক) ৪। মৌলবী শাহ নেয়ামাতুল্লাহ ৫। মৌলবী হাফেয নাযীর হাসান ওরফে যয়নুল আবেদীন সহ মোট ১১ জন।
জেলা পাটনা : মৌলবী হাকীম আলীমুদ্দীন হুসাইন নগরনাহ্সাভী (১২৬১-১৩০৬/১৮৪৫-১৮৮৮)। ইনি একজন উঁচুদরের আলিম, শিক্ষক, গ্রন্থকার ও বাগ্মী ছিলেন। ২। মৌলবী লুৎফে আলী বিহারী (বড় আলিম ও শিক্ষক ছিলেন)। ৩। মৌলবী আমীর হাসান বিহারী  ৪। মৌলবী আবুল হাসানাত আবদুল গফুর দানাপুরী ৫। মৌলবী ফযল হুসাইন মোযাফ্ফরপুরী বিহারী। মিয়াঁ ছাহেবের প্রথম উর্দূ জীবনী ‘আল-হায়াত বা‘দাল মামাত’-এর রচয়িতা। ৬। মৌলবী তালাত্তুক হুসাইন আযীমাবাদী (১২৬৪-১৩৩৪/১৮৪৮-১৯১৬)। ইনি প্রায় ২৬ বৎসর যাবত মিয়াঁ ছাহেবের খাদেম ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে মিয়াঁ সাহেবের মৃত্যু পর্যন্ত ইনি মিয়াঁ সাহেবের মুখলিছ সাথী ছিলেন এবং প্রধানতঃ তাঁর নিকট রক্ষিত ছাত্রদের নামের তালিকা থেকেই জীবনীকার ফযল হোসাইন মিয়াঁ ছাহেবের ছাত্রদের সংখ্যা ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ৭। মাওলানা আবুত্ ত্বাইয়িব মুহাম্মাদ শামসুল হক ডিয়ানবী আযীমাবাদী (১৮৫৭-১৯১১) ৮। মৌলবী মোহাম্মাদ ইদরীস বিন মাওলানা শামসুল হক আযীমাবাদী ৯। মৌলবী সা‘আদাত হুসাইন (সাবেক শিক্ষক মাদরাসা আহমাদিয়া আরাহ্ ও মাদরাসা আলিয়া কলিকাতা) ১০। মৌলবী শাহ মোহাম্মাদ আয়নুল হক ফলওয়ারী (১২৮৭-১৩৩৩/১৮৬৯-১৯১৫)। ইনি পাটনা যেলার অন্তর্গত ফলওয়ারী খান্ক্বাহের সাজ্জাদানশীন ছিলেন। ইনি সুন্নাতের পাবন্দী করার নিয়তে পায়ে হেটে হজ্জে গমন করেন এবং হজ্জ থেকে ফিরে এসে খান্ক্বাহ ছেড়ে দা‘ওয়াত ও তাবলীগের কাজে আত্মনিয়োগ করেন ১১। মৌলবী আলী নেয়ামত ফলওয়ারী। ইনি মৌলবী শাহ মুহাম্মাদ আয়নুল হক-এর উস্তাদ ছিলেন। ১২। মৌলবী শুহূদুল হক (ইনি মিয়াঁ ছাহেবের বিরুদ্ধে লিখিত ‘ইনতিছারুল হক’ -এর প্রতিবাদে  ‘বাহ্রে যাখার’ -এর লেখক)। ১৩। মৌলবী আবুল হাসান বিহারী (ইনি সিপাহী বিদ্রোহের পূর্বেকার শাগরিদ ছিলেন)। এতদসহ মোট ৭৩ জন।
[বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব প্রণীত ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ (পিএইচ.ডি থিসিস) শীর্ষক গ্রন্থ পৃঃ ৩২০-৩২৫]

আরও