কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমানের শাখা

হাফেজ আব্দুল মতীন 1297 বার পঠিত

(২১) ইতিকাফ করা :

মহান আল্লাহ বলেন,

وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ

‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে ছালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাইলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী ও রুকূকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর’ (বাক্বারাহ ২/১২৫)। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,

كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ.

‘নবী করীম (ছাঃ) রামাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিনীগণও (সে দিনগুলোতে) ই‘তিকাফ করতেন’।[1]

(২২) হজ্জ আদায় করা :

মহান আল্লাহ বলেন, وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা সেসব মানুষের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য, যারা শারীরিক ও আর্থিকভাবে ঐ পথ অতিক্রমে সামর্থ্য রাখে’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, যে ব্যক্তি শারীরিক ও আর্থিক উভয় দিক দিয়ে হজ্জ করতে সমর্থবান, তাদের উপর হজ্জ করা ওয়াজিব।[2] মহান আল্লাহ আরো  বলেন,

وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ-

‘আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে’ (হজ্জ ২২/২৭)। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ সম্পন্ন  কর’ (বাক্বারাহ ২/১৯৬)

হাদীছে এসেছে, ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, ‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন,

بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ.

‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর দন্ডায়মান। এ মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বান্দা। ছালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হাজ্জ সম্পাদন করা ও রামাযানের ছিয়াম পালন করা’।[3]

(২৩) আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর যমীনে সমুন্নত করার জন্য জিহাদ করা :

মহান আল্লাহ বলেন, وَجَاهِدُوا فِي اللهِ حَق جِهَادِهِ ‘এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ (হজ্জ ২২/৭৮)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, তোমাদের ধন সম্পদ দিয়ে, তোমাদের জিহবা-কথার দ্বারা এবং নফস-আত্মার মাধ্যমে আল্লাহর পথে জিহাদ করার মত জিহাদ কর।[4] মহান আল্লাহ আরো বলেন, يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ  ‘তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না’ (মায়েদাহ ৫/ ৫৪)। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً ‘তোমরা ঐ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ কর যারা তোমাদের আশে-পাশে অবস্থান করে, আর যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা পায়’ (তাওবা ৯/১২৩)।

মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِين  عَلَى الْقِتَال  ‘হে নবী মু’মিনদেরকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ কর’ (আনফাল ৮/৬৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ  صلى الله عليه وسلم سُئِلَ أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ  إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ. قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ  الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللهِ. قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ-  

‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, কোন আমল উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হ’ল, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। প্রশ্ন করা হ’ল, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, মাক্ববূল হজ্জ সম্পাদন করা’।[5]

قَالَ أَيُّهَا النَّاسُ، لاَ تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ، وَسَلُوا اللَّهَ الْعَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا، وَاعْلَمُوا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে মানবমন্ডলী! তোমরা শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলায় অবতীর্ণ হবার কামনা করবে না বরং আল্লাহর তা‘আলার নিকট নিরাপত্তার দো‘আ করবে। অতঃপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়ার নীচে অবস্থিত’।[6] মোদ্দাকথাঃ জিহাদের বিষয়টি খুব কঠিন, জিহাদের জন্য অনেক শর্ত রয়েছে। সেগুলো আগে জানতে হবে, না জেনে হঠাৎ করে মানুষকে হত্যা করা, দুনিয়াবী স্বার্থে একে অপরকে হত্যা করা, এর নাম জিহাদ নয় বরং এরূপ কাজ হচ্ছে সন্ত্রাস। তাই এ সম্পর্কে আলেম-ওলামা ও যারা কুরআন সুন্নাহ ও সালাফে ছালেহীনের পথ ধরে মানুষকে ডাকে ঐসব আল্লাহ ভীরু ওলামায়ে রববানীদের জিজ্ঞেস করবে।

(২৪) আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দেওয়া : মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ  لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُون-  

‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও’ (আলে ইমরান ৩/২০০)। হাদীছে এসেছে,

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِىِّ  رضى الله عنه  أَنَّ رَسُولَ اللهِ  صلى الله عليه وسلم - قَالَ  رِبَاطُ يَوْمٍ فِى سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا-

সাহল ইবনু সা‘দ সাঈদী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তার চেয়ে ও উত্তম’।

وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا ، وَالرَّوْحَةُ يَرُوحُهَا الْعَبْدُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ أَوِ الْغَدْوَةُ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا-

‘জান্নাতে তোমাদের কারো চাবুক পরিমান জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চেয়ে উত্তম। আল্লাহর পথে বান্দার একটি সকাল বা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সব কিছুর চেয়ে উত্তম’।[7]

(২৫) শত্রুর মোকাবিলায় যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ় থাকা  : মহান আল্লাহ বলেন, إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা কোন দলের মুখোমুখি হও, তখন অবিচল থাক, আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও’ (আনফাল ৮/৪৫)। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ.  وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

‘হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন কাফিরদের মুখোমুখি হবে বিশাল বাহিনী নিয়ে, তখন তাদের থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না। আর যে ব্যক্তি সেদিন তাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তা’হলে সে আল্লাহর গযব নিয়ে ফিরে আসবে। তবে যুদ্ধের জন্য (কৌশলগত) দিক পরিবর্তন অথবা নিজ দলে আশ্রয় গ্রহণের জন্য হ’লে ভিন্ন কথা এবং তার আবাস জাহান্নাম আর সেটি কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল’ (আনফাল ৮/ ১৫-১৬)। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ- َ

‘হে নবী মু’মিনদেরকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ কর, তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন ধৈর্যশীল মুজাহিদ থাকে তবে তারা দু’শ জন কাফিরের উপরে জয়যুক্ত হবে’ (আনফাল ৮/৬৫) ।

(২৬) গণীমতের মাল এক পঞ্চমাংশ বায়তুল মাল এবং বাকী অংশ যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য : মহান আল্লাহ বলেন,

وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى عَبْدِنَا-    

‘আর তোমরা যেনে রেখে যে, যুদ্ধে তোমরা যা কিছু গণীমতের মাল লাভ করেছ, এর এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তাঁর রাসূল নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন এবং মুসাফিরের জন্যে, (এই নিয়ম মেনে চলবে)। যদি তোমরা ঈমান এনে থাকো আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের প্রতি যা আমি অবতীর্ণ করেছি’ (আনফাল ৮/৪১)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَغُلَّ وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘আর কোন নবীর পক্ষে আত্মসাৎ করা শোভনীয় নয় এবং যে কেউ আত্মসাৎ করেছে তবে যা সে আত্মসাৎ করেছে তা উত্থান দিবসে আনয়ন করা হবে’ (আলে ইমরান ৩/১৬১)।হাদীছে এসেছে,

أَبُو هُرَيْرَةَ  رضى الله عنه  قَالَ قَامَ فِينَا النَّبِىُّ  صلى الله عليه وسلم  فَذَكَرَ الْغُلُولَ فَعَظَّمَهُ وَعَظَّمَ أَمْرَهُ قَالَ  لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ شَاةٌ لَهَا ثُغَاءٌ عَلَى رَقَبَتِهِ فَرَسٌ لَهُ حَمْحَمَةٌ يَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَغِثْنِى. فَأَقُولُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا، قَدْ أَبْلَغْتُكَ. وَعَلَى رَقَبَتِهِ بَعِيرٌ لَهُ رُغَاءٌ، يَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِى. فَأَقُولُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا، قَدْ أَبْلَغْتُكَ. وَعَلَى رَقَبَتِهِ صَامِتٌ، فَيَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِى. فَأَقُولُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا، قَدْ أَبْلَغْتُكَ. أَوْ عَلَى رَقَبَتِهِ رِقَاعٌ تَخْفِقُ، فَيَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِى . فَأَقُولُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا، قَدْ أَبْلَغْتُكَ-   

‘আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (ছাঃ) একদিন আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে গণীমতের অর্থসম্পদ আত্মসাতের ভয়াবহতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখলেন এবং ভয়াবহ পরিণামের বিষয়েও আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় দেখতে চাই না যে, সে ঘাড়ে একটি চিৎকাররত বকরী, একটি হেষ্রারত অশ্ব বহন করছে এবং আমাকে দেখে বলছে যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এ বিপদ থেকে (রক্ষা) উদ্ধার করুন। তখন আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারছি না। আমি তো আল্লাহর বিধি-বিধান তোমাদের নিকট পেঁŠছিয়ে দিয়েছিলাম। (অথবা) আমি তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় ও দেখতে চাই না যে, সে একটি চিৎকাররত উট ঘাড়ে বহন করে আমার কাছে এসে বলছে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বিপদমুক্ত করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারছি না, আল্লাহর বাণী বা আদেশ-নিষেধ তো আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম। (অথবা) তোমাদের কাউকে আমি এমন ও দেখতে চাই না যে, সে সম্পদের বোঝা ঘাড়ে করে আমার কাছে আগমন করে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমি বলব, আমি আল্লাহর বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছিলাম। (অথবা) তোমাদের কোন ব্যক্তি কাপড়ের গাঁটটি ঘাড়ে বহন করে আগমন করবে আর বাতাসে কাপড় তার ঘাড়ের উপরে উড়তে থাকবে। সে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বিপদমুক্ত করুন। আমি বলব, আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। আল্লাহর বাণী তো আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম’।[8] ‘আব্দুল কায়েস এর প্রতিনিধি দল আল্লাহর রাসূলের নিকট আসলে,

তিনি তাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ এবং চারটি বিষয় হ’তে নিষেধ করলেন। তাদেরকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের নির্দেশ দিলেন, এবং বললেন, এক আল্লা্র প্রতি কী ভাবে বিশ্বাস করতে হয় তা কি তোমরা জান? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, তা হচ্ছে, এ মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল ও (বান্দা)। ছালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রামাযানের ছিয়াম পালন করা। আর তোমরা গণীমতের সম্পদ হ’তে এক পঞ্চমাংশ আদায় করবে। তিনি তাদেরকে চারটি বিষয় হ’তে বিরত থাকতে বললেন, আর তা হচ্ছে, সবুজ কলস, শুকানো কদুর খোল, খেজুর বৃক্ষের গুড়ি হতে তৈরী বাসন এবং আলকাতরা দ্বারা রাঙানো পাত্র। তিনি অরো বলেন, তোমরা এ বিষয় গুলো ভালো করে জেনে নাও এবং অন্যদেরকেও এগুলো অবগত কর।[9] 

(২৭) আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য ক্রীতদাস আযাদ করা : মহান আল্লাহ বলেন, فَلَا اقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ. وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْعَقَبَةُ فَكُّ رَقَبَةٍ.  ‘কিন্তু সে দুর্গম গিরি পথে প্রবেশ করলো না। তুমি কি জান দুর্গম গিরি পথটি কি? এটা হচ্ছে, কোন দাসকে মুক্ত করা’ (বালাদ ৯০/১১-১৩)। অন্য হাদীছে এসেছে,

أَبُو هُرَيْرَةَ  رضى الله عنه  قَالَ النَّبِىُّ  صلى الله عليه وسلم   أَيُّمَا رَجُلٍ أَعْتَقَ امْرَأً مُسْلِمًا اسْتَنْقَذَ اللَّهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنْهُ مِنَ النَّار. قَالَ سَعِيدٌ ابْنُ مَرْجَانَةَ فَانْطَلَقْتُ إِلَى عَلِىِّ بْنِ حُسَيْنٍ فَعَمَدَ عَلِىُّ بْنُ حُسَيْنٍ رضى الله عنهما  إِلَى عَبْدٍ لَهُ قَدْ أَعْطَاهُ بِهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ عَشَرَةَ آلاَفِ دِرْهَمٍ  أَوْ أَلْفَ دِينَارٍ  فَأَعْتَقَهُ .

‘আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বণির্ত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবে, তার (আযাদ কৃত দাসের) প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার (মুক্তি দানকারী ব্যক্তির) প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। সা’ঈদ ইবনে মারজানা  বলেছেন, আমি আলী ইবনে হুসাইন এর নিকট গিয়ে হাদীছটি বর্ণনা করলে আলী ইবনে হুসাইন-তাঁর এমন একটি ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দেয়ার সংকল্প করলেন, যাকে খরিদ করার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে জা‘ফর দশ হাযার দিরহাম অথবা এক হাযার দীনার দিতে প্রস্ত্তত ছিলেন। এরপর তিনি তাকে (দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে) মুক্ত করেছিলেন’।[10]   

(২৮) কাফ্ফারা আদায় করা : কুরআন সুন্নাহতে বর্ণিত কয়েকটি কাফফা্রা সর্ম্পকে নিমেণ বর্ণিত হ‘ল।

(ক) হত্যার কাফ্ফারা :

মহান আললাহ বলেন,

 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ذَلِكَ تَخْفِيفٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ فَمَنِ اعْتَدَى بَعْدَ ذَلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ. وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ -

‘হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! নিহতগণের সম্বন্ধে তোমাদের জন্যে প্রতিশোধ গ্রহণ বিধিবদ্ধ হ’ল; স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী; কিন্তু যদি কেউ তার ভাই কর্তৃক কোন বিষয়ে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়, তবে যেন ন্যায়ভাবে তাগাদা করে এবং তা পরিশোধ করে। এটা তোমাদের প্রতিপালনের পক্ষ হ’তে লঘু বিধান ও করুণা। অতঃপর যে কেউ সীমালংঘণ করবে তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। হে জ্ঞানবান লোকেরা! কিছাছ (প্রতিশোধ) গ্রহণে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে যেন তোমরা আল্লাহভীরু হও’  (বাক্বারাহ ২/ ১৭৮-১৭৯)। হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, কুরআনের বিধানটা মানব জাতি যদি মেনে নিত তা’হলে কতই না ভালো হ’ত! অন্যায় ভাবে হত্যা কারীকে, হত্যার বদলে হত্যা করা হলে মানুষের অনেক জীবন বাঁচত, যখন কেউ জানবে যে, আমি কাউকে হত্যা করলে আমাকেও হত্যা করা হবে, তখন সে অবশ্যই নিজের জীবনের ভয় করবে এবং অন্যকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে।[11] মহান আল্লাহ বলেন,

وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ-

‘আর আমরা তাদের প্রতি তাদের (তাওরাতে) এটা ফরয করেছিলাম যে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং বিশেষ যখমেরও বিনিময় রয়েছে। ফলে যে ব্যাক্তি ক্ষমা করে দেয় তবে এটা তার জন্যে (পাপের)  কাফ্ফারা হয়ে যাবে’ (মায়েদাহ ৫/৪৫)। অন্যত্র তিনি বলেন,

‘আর কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত হ’লে (ভিন্ন কথা)। যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহ’লে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি ছাদাক্বা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহ’লে দিতে হবে না)। আর সে যদি তোমাদের শত্রু কওমের হয় এবং সে মুমিন, তাহ’লে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি এমন কওমের হয় যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে তাহ’লে দিয়াত দিতে হবে , যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিবারের কাছে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করতে হবে। তবে যদি না পারে তা’হলে একাধারে দু’মাস ছিয়াম পালন করবে। এটি আল্লাহর  পক্ষ থেকে ক্ষমাস্বরূপ। আর আল্লাহসর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

আর যে ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা‘নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আযাব প্রস্ত্তত করে রাখবেন’ (আল-নিসা ৪/৯২-৯৩) ।

উল্লেখ্য যে, জমহুর সালাফ উম্মাহ এবং খালাফের মতে, হত্যাকারীর জন্য আল্লাহ এবং তার মাঝে তাওবা রয়েছে। যদি সে খুশু-খুযূ-ভয়-ভীতি সহকারে আল্লাহর নিকট তাওবা করে ও অনুতপ্ত হৃদয়ে মহান আল্লাহর দিকে রুজূ হয়, সৎ আমল করে তা’হলে মহান আল্লাহ তার-খারাপ আমল টি পরিবর্তন করে ভাল কাজে রূপান্তরিত করবেন, বরং হত্যাকৃত ব্যক্তিকে (হত্যাকারী ব্যাক্তির) যুলুমের ক্ষতিপূরণ দিবেন, এবং তার চাওয়াতে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا  وَمَنْ تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا

‘যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করে না এবং যারা আল্লাহ যাকে হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, ন্যায়সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং যারা ব্যভিচার করে না। যারা এগুলি করবে তারা শাস্তি ভোগ করবে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তারা সেখানে লাঞ্চিত অবস্থায় চিরকাল থাকবে। তবে তারা ব্যতীত, যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎকর্ম করে সে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে’ (ফুরকান ২৫/ ৬৮-৭১)।

মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

‘তুমি বল, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (যুমার ৩৯/৫৩)। এ আয়াতটি হ’ল আম যা সমস্ত পাপকে শামিল করে। যদিও সেটি কুফরী হয়, শিরকী হয়, সন্দেহজনক হয় অথবা নিফাকবী হয়, হত্যার মাধ্যমে হোক অথবা ফিসক্বীর মাধ্যমে হোক ইত্যাদি। যে সমস্ত ব্যক্তিরা তার পাপ থেকে খালেস নিয়তে তাওবা করবে, মহান আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا-

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্যান্য পাপ যার জন্য তিনি চান। আর যে আললাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে’ (নিসা ৪/ ৪৮)।  এ আয়াতটিও  আম যা সমস্ত গুনাহ এর মধ্যে প্রবেশ করবে, তবে শিরক ব্যতীত। আল্লাহ অধিক জানেন।[12]  অতএব পাপ করলেই তাওবাতুন নাছুহা করতে হবে অনতিবিলম্বে।

যিহারের কাফফারা : এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْكُمْ مِنْ نِسَائِهِمْ مَا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنْكَرًا مِنَ الْقَوْلِ وَزُورًا وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ- وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا ذَلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ - فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ذَلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ-

‘তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে,[13] তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা তো কেবল তারাই যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। আর তারা অবশ্যই অসঙ্গত ও অসত্য কথা বলে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক পাপ মোচনকারী, বড়ই ক্ষামাশীল। আর যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ করে অতঃপর তারা যা বলেছে তা থেকে ফিরে আসে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করবে। এর মাধ্যমে তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। কিন্তু যে তা পারবে না, সে লাগাতার দু’মাস ছিয়াম পালন করবে, একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে। আর যে (এরূপ করার) সামর্থ্য রাখে না সে ষাটজন মিসকীনকে খাবার খাওয়াবে। এ বিধান এজন্য যে, তোমরা যাতে আল্লাহও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন। আর এগুলো আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা এবং কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব’ (মুজাদালাহ ৫৮/ ২-৪) ।

কসম ভঙ্গের কাফফারা : এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُمُ الْأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ-

‘আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন শপথের ব্যাপারে, কিন্তু যে শপথ তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে শপথের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফ্ফারা হ’ল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন ছিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের শপথের কাফ্ফারা, যদি তোমরা শপথ কর, আর তোমরা তোমাদের শপথ হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর’ (মায়িদাহ ৫/ ৮৯)।

রামাযানে স্ত্রী সহবাসের কাফফারা : হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ  رضى الله عنه  جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ  صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنَّ الأَخِرَ وَقَعَ عَلَى امْرَأَتِهِ فِى رَمَضَانَ فَقَالَ أَتَجِدُ مَا تُحَرِّرُ رَقَبَةً قَالَ لاَ قَالَ  فَتَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ  قَالَ لاَ . قَالَ  أَفَتَجِدُ مَا تُطْعِمُ بِهِ سِتِّينَ مِسْكِينًا. قَالَ لاَ . قَالَ فَأُتِىَ النَّبِىُّ - صلى الله عليه وسلم - بِعَرَقٍ فِيهِ تَمْرٌ  وَهُوَ الزَّبِيلُ  قَالَ  أَطْعِمْ هَذَا عَنْكَ. قَالَ عَلَى أَحْوَجَ مِنَّا مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا أَهْلُ بَيْتٍ أَحْوَجُ مِنَّا . قَالَ  فَأَطْعِمْهُ أَهْلَكَ-

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে  গেছি। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার কী হয়েছে। সে বলল, আমি ছিয়াম অবস্থায় আমার স্ত্রী সাথে মিলিত হয়েছি। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কী? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি একাধারে দু’মাস ছিয়াম পালন করতে পারবে? সে বলল না, এরপর তিনি বললেন, ষাট জন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। রাবী বলেন, তখন নবী (ছাঃ) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে ‘আরাক’ তথা খেজুর ঝুড়ি পেশ করা হ’ল। আবার নবী করীম (ছাঃ) বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেন, এগুলো নিয়ে ছাদাক্বা করে দাও। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার চাইতেও অভাবগ্রস্থকে ছাদাক্বা করব? আল্লাহর শপথ! মদীনার উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্ত আর কেউ নেই। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হেঁসে উঠলেন এবং তার দাঁত (আন-ইয়াব) দেখা গেল। অতঃপর তিনি বললেন, এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও’।[14]

[লেখক :  লিসান্স ও এম.এ, মদীনা ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, সউদী আরব ]


[1]. আহমাদ হা/২৪৬৫৭; বুখারী হা/২০২৬; মুসলিম হা/২৮৪১

[2]. তাফসীর ইবনে কাছীর ৩/১২০ পৃঃ

[3]. আহমাদ হা/৬০১৫; বুখারী হা/৮; মুসলিম হা/১৬; ইমাম বায়হাক্বী, আল-জামে শুআবিল ঈমান ৫/৪৩৮ পৃঃ।

[4]. তাফসীর ইবনে কাছীর ১০/৯৯।

[5]. আহমাদ হা/ ৭৫৮০; বুখারী হা/ ২৬; মুসলিম হা/ ৮৩

[6]. আহমাদ হা/ ১৯১১৪; বুখারী হা/২৯৬৬; মুসলিম হা/১৭৪২

[7]. বুখারী হা/ ২৮৯২; আহমাদ হা/২২৯২৩।

[8].  বুখারী হা/৩০৭৩ ।

[9]. বুখারী হা/৫৩

[10]. বুখারী হা/২৫১৭; আহমাদ হা/১০৮০১; মুসলিম হা/ ১৫০৯

[11]. ইবনে কাছীর হা/১৬৬

[12]. ইবনে কাছীর ৪/২০৯

[13]. স্ত্রীকে মায়ের সাথে অথবা মায়ের কোন অংগের সাথে তুলনা করাকে ‘যিহার’ বলে। প্রাচীন আরব সমাজে স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হ’ত। ইসলামে এর মাধ্যমে সরাসরি বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয় না। তবে অসঙ্গত কথা বলার কারণে কাফ্ফারা দিতে হয়।

[14]. বুখারী হা/১৯৩৬; আহমাদ হা/৭২৯০; মুসলিম হা/১১১১।



আরও