আলোকপাত

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 8374 বার পঠিত

বর্তমানে ফিলিস্তীন, আফগানিস্তান, ইরাকসহ বিশ্বের নানা দেশে মুসলমানরা কাফিরদের হাতে নির্যাতিত-নিপীড়িত হচ্ছে। দূর থেকে আমরা তাদের দুর্দশায় শোকাকুল হয়ে পড়ি, কিন্তু করণীয় খুঁজে পাই না। তাদের প্রতি আমাদের কোন কর্তব্য আছে কি? তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি? 

-রায়হানুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

          একজন মুসলিমের জন্য তার অপর বিপদগ্রস্থ মুসলিম ভাইয়ের প্রতি হক হল তাকে সম্ভব্য সকল উপায়ে সাহায্য করা। উল্লিখিত দেশগুলোতে মুসলমানদের উপর যে নির্যাতন নেমে এসেছে তাতে তাদেরকে সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে সহযোগিতা করা বিশ্বের সকল মুসলমানদের জন্য ঈমানী কর্তব্য। দূরবর্তী স্থান থেকে সহযোগিতার সম্ভব্য কিছু উপায় হল- ১. প্রথমতঃ ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া, যা পরস্পরের মাঝে ভালবাসার অটুট বন্ধন গড়ে তোলে। কেননা এ বোধ না থাকলে সহযোগিতার গুরুত্ব উপলব্ধি ও সেমতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ কোন কিছুই সম্ভব নয়। ২. অর্থনৈতিকভাবে সাহায্যের জন্য প্রচেষ্টা নেয়া। ৩. বক্তব্য-বিবৃতি, পত্র-পত্রিকায় লেখনী প্রভৃতির মাধ্যমে সকল মুসলমানদেরকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানানো এবং বিশেষ বিশেষ লোকদের কাছে তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরা ও তাদেরকে সেসব দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করা। ৪. সর্বোপরি ধৈর্য্য সহকারে আল্লাহর কাছে রাত্রির গভীরে, দিনের প্রন্তসমূহে তাদের জন্য খাছভাবে দো‘আ করা। মনে রাখতে হবে দো‘আ মু’মিনের জন্য সার্বক্ষণিক অস্ত্র। বিশেষতঃ বিপদ-আপদ ও বিপর্যয়ের সময়। আল্লাহ খালিছ অন্তরে কৃত দো‘আকে কবুল করেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর অঙ্গীকার মিথ্যা নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’ (মু’মিন ৬০)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘বল কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন, আর তোমাদেরকে পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন। আছে কি আল্লাহর সাথে আর কোন উপাস্য? তোমরা অতি সামান্যই স্মরণ কর’ (নামল ৬২)

       আমি আল্লাহর কাছে সবসময় আমার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। কিন্তু আমার মনে হয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না। আমাকে কথনই পাপের পথ থেকে ফিরাবেন না। বিশেষ করে যখন একই পাপ বার বার করি। আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কি করতে পারি? কিভাবে বুঝব আল্লাহ আমার তওবা কবুল করেছেন?  

- হিযবুল্লাহ, সাতক্ষীরা।

          আল্লাহ ক্ষমা করবেন না- এ ধারণা শয়তানের কুমন্ত্রণা, যেন মানুষ তাওবা-ইস্তিগফার থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং পাপের সাগরে ডুবে থাকে। কোন অবস্থাতেই আপনি তাওবা-ইস্তিগফার পরিত্যাগ করবেন না। জেনে রাখুন, যদি বান্দার অনুশোচনা, তাওবা সত্যিকার অর্থে হয়ে থাকে তবে অপরাধ যত বড়ই হোক না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিতে পারেন। আপনার তাওবা আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে কি না তা বুঝবেন যখন নিজের মধ্যে তাওবা-ইস্তিগফারের অনুভূতি ও সৎআমল আগের চেয়ে বেশী মাত্রায় পাবেন। আল্লাহ যখন আপনার তাওবা কবুল করবেন তখন আপনাকে পাপ থেকে প্রত্যাবর্তনের পথ সহজ করে দেবেন। আর তখনই শয়তানের

কুমন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। আর আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা যত বৃদ্ধি পাবে শয়তানের ওয়াসওসাহ থেকে ততই দ্রুত মুক্তি লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ!    

          লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কি একই জিনিস নয়? কোন পরিকল্পনা গ্রহণে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৃথকভাবে ব্যক্ত করার কারণ কি?

        -আরব আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

          লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত একটি আদি ও মৌলিক অনুষঙ্গ। এ দু’টো সমার্থক শব্দ নয়। একই ধারার হলেও উভয়টির মাঝে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। লক্ষ্য বলতে বুঝায় সেই পথকে যার মাধ্যমে আমরা উদ্দেশ্য পূরণ করি। যেমন পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করা, কোন কাজে সফল হওয়া এটা আমাদের লক্ষ্য থাকে। কিন্তু কেন? এর পিছনে কোন মৌলিক লক্ষ্য নিশ্চয়ই আছে। সেটাই হল উদ্দেশ্য। অর্থাৎ উদ্দেশ্য হল একটি সর্বোচ্চ বিষয় যা মানুষ আকাংখা করে। আর লক্ষ্য হল সাময়িক কোন চাহিদা যা মানুষ পেতে ইচ্ছুক হয়। প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু লক্ষ্য থাকে তবে উদ্দেশ্য সবার থাকে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, উদ্দেশ্য হল ক্রমস্তর বিশিষ্ট একটি উচ্চতম বিমূর্ত অবস্থানের নাম যা অর্জনের জন্য বিশেষ যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয় এবং মানুষ মর্যাদা ও শ্রদ্ধার সাথে তা আকাংখা করে। নিষ্ঠাবান প্রচেষ্টার মাধ্যমে উদ্দেশ্য পুরণের কাছাকাছি হওয়া যায় তবে পুরোপুরি তা অর্জন সম্ভব নয়। আর লক্ষ্য হল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও পরিমাপযোগ্য বিষয় যা পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব। অর্থাৎ সেটা এমন একটি কামনা যা সামর্থের মধ্যে থাকা অবস্থায় নির্ধারিত ও প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা যায়।

সুতরাং উদ্দেশ্য হল মানুষের কর্মস্পৃহার অনুঘটক। এটি এমন একটি গুরুত্ববহ ও উচ্চতম দৃষ্টিভঙ্গি যাকে আশ্রয় করে মানুষ কোন বিশেষ লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং তা অর্জনে সচেষ্ট হয়।

পশ্চিমী চিন্তাধারার সাথে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক পার্থক্য হল উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে। পাশ্চাত্যের কাছে সময়নির্ধারিত, পরিকল্পনা মাফিক লক্ষ্য অর্জন যেখানে মূখ্য, ইসলাম সেখানে প্রাধান্য দেয় উদ্দেশ্যের সততা ও বিশুদ্ধতার দিকে। ইসলামে মানুষের সমস্ত কর্মকান্ডের একমাত্র উদ্দেশ্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর পাশ্চাত্য চিন্তাধারায় আত্মতুষ্টিই (Indivisualism) প্রধান উদ্দেশ্য।

        আমি আপন কর্মস্থলে যথাসম্ভব খুলুছিয়াতের সাথে কাজ করি। কিন্তু সহকর্মীরা আমার প্রতি সন্তুষ্ট নয়, যদিও আমার কর্মতৎপরতাকে তারা স্বীকার করে। আমি জানি না আমার কাজে তার অসন্তুষ্ট না আমার আচরণে। ফলে সবসময় আমাকে একটা গুমোট পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে। এমতবস্থায় মানসিক দ্বিধা-সংকট কাটিয়ে উঠা ও তাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আমার করণীয় কি?

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

         আপনার উপলব্ধি দেখে বোঝা যায় আপনি সমস্যাটি বোঝার চেষ্টা করেছেন। মূলতঃ এ সময় সমস্যাটি চিহ্নিত করাই বেশী যরূরী। নিজ থেকেই যদি সমস্যাটি ধরতে পারেন তাহলে নিজেই সহকর্মীদের সাথে আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব মিটিয়ে নিন। যদি সমস্যাটি হয় আচরণগত তাহলে নিজেকে শুধরে নেওয়ার জন্য সাধ্যমত প্রচেষ্টা নিন। সহকর্মীরা যা যা অপছন্দ করে তা থেকে দূরে থাকুন (যদি তা পাপ না হয়)। দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় ইতিবাচক রাখার চেষ্টা করুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর সাহায্যে আপনার কর্মস্থল আপনার জন্য প্রশান্তিময় হয়ে আসবে। তারপরও যদি সমস্যা থেকে যায় তবে আল্লাহর উপর সবকিছু ছেড়ে দিন। মনে রাখবেন মানুষের প্রশংসা বা নিন্দা যেন আপনার খুলুছিয়াতকে নষ্ট করে না ফেলে। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই অন্তর অবনত থাকলে একজন প্রকৃত মু’মিন সর্ববস্থায় আপন মর্যাদায় সমুন্নত থাকে যদিও মানুষ তাকে নিন্দা-অপমান করে। প্রশংসাকারীর প্রশংসায় যেমন সে বিগলিত হয় না, নিন্দুকের নিন্দায়ও সে তেমন ভেঙ্গে পড়ে না। কেননা সে তো যা করে আল্লাহর জন্যই করে; মানুষের জন্য নয়।   



বিষয়সমূহ: আলোকপাত
আরও