ভারতে মুসলমানদের মুখোমুখি

ফিরোজ মাহবুব কামাল 1008 বার পঠিত

ভারতে গিয়ে সেদেশের মুসলমানদের দেখার ইচ্ছাটি ছিল আমার বহু দিনের। আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে ভারতীয় মুসলমানদের নাড়ীর সংযোগটি প্রায় ৮শত বছরের। মুসলিম রূপে আমাদের পরস্পরের যে আত্মার সম্পর্ক, সেটি সহজে বিচ্ছিন্ন হবার নয়। ইসলামের এটিই আন্তর্জাতিক ভাতৃত্বের বন্ধন। সে বন্ধন বিশ্বের সকল মুসলমানের সাথে। ঈমান থাকলে সে বন্ধন থাকবেই। না থাকলে সেটি হবে ঈমানহীনতা। ভারতে আমি একাধিকবার গিয়েছি। তবে সেটি মুম্বাই এবং পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদ ও কোলকাতাতে। এবং সেটিও স্বল্প সময়ের জন্য। ফলে বিশাল ভারতের অন্যান্য এলাকার সাধারণ মুসলমানদের মুখোমুখি হয়ে তাদের হাল-হকিকত জানার তেমন ফুরসত খুব একটা ঘটেনি। সে সুযোগটি আসে ১৯৯৬ সালে।

আমি তখন এক পোষ্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে ভারতের জয়পুর শহরে প্রায় ৬ মাসের জন্য অবস্থানের সুযোগ পাই। এটি আমার মনোবাসনা পূরণের এক প্রচন্ড সুযোগ এনে দেয়। কোর্সের ফাঁকে ফাঁকে চেষ্টা করেছি ভারতের বিভিন্ন শহরে বেড়াতে যাওয়ার এবং চেষ্টা করেছি সেসব শহরে মুসলমানদের সাথে কথা বলার। এভাবে সুযোগ করে নিয়েছিলাম জয়পুর, আজমির, আগ্রা, দিল্লী শহরকে দেখার এবং এসব শহরের মুসলমানদের সাথে কথা বলার। কোর্সের ফাঁকে দেশে ফিরতাম দিল্লী বিমানবন্দর হয়ে। ফলে ফেরার পথে দিল্লী শহরকে দেখার বাড়তি সুযোগ মিলতো। যেখানেই গেছি দেখেছি সবাই উর্দূ বুঝে। উর্দূ শুধু দিল্লী বা উত্তর ভারতের মুসলমানদের ভাষা নয়, সমগ্র ভারতের মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভাষা। ভারতীয় হিন্দুদের তেমন কোন সর্বভারতীয় ভাষা নেই। হিন্দি ভাষা এখনও দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ভাষাটি এতই সহজ যে শিখতে এক মাস বা দুই মাসের বেশী লাগে না। উর্দূ ভাষা জানা থাকার ফলে আমার পক্ষে তাদের সাথে কথা বলার একটি বাড়তি সুবিধা ছিল। তাদের সাথে কথা বলেছি কখনও বা মসজিদের মেঝেতে, কখনও দোকানে দাঁড়িয়ে, কখনও বা রাজপথে।

লক্ষ্য করেছি, ভারতীয় মুসলমানদের সামনে যখনই নিজেকে বাংলাদেশী ডাক্তার রূপে পরিচয় দিয়েছি, দেখেছি তৎক্ষণাৎ তারা আমাকে কনফিডেন্সে নিয়েছে। মন খুলে কথা বলেছে। তখন তাদের ক্ষোভের কথাগুলো নির্ভয়ে বেরিয়ে এসেছে। মনে হয় যেন এগুলো তাদের অনেকদিনের অব্যক্ত কথা। সেগুলো কেউ শুনবে বা লিখবে তেমন কোন লোকও যেন নেই। আমাদের ইন্সটিটিউটটি একটি প্রাইভেট হেলথ ম্যানেজম্যান্ট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ঢাকার আইসিডিডিআরবির সাথে তার সামান্য কিছু মিল আছে। প্রায় ৫০ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠা সে বিশাল প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন এক মারোয়ারি ধনিক পরিবার। জয়পুর হল রাজস্থানের রাজধানী। আর রাজস্থান হল মারোয়ারীদের আদি বাসভূমি। বাংলাদেশে বহু মারোয়ারি দেখেছি, তাদের রমরমা ব্যবসাও দেখেছি। ইচ্ছা ছিল তাদের আদি ভূমি দেখার। এবার সে সুযোগও মিলল। অবাক হলাম, এতবড় প্রতিষ্ঠানে কোন মুসলমান শিক্ষক নেই। কোন কেরানীও নেই। এমনকি কোন দারোয়ানও নেই। বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ১০ ভাগ। কিন্তু এমন কোন সরকারী ও বেসরকারী অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে কি যেখানে তারা নজরে পড়ে না? তারা নজরে পড়ে বাংলাদেশের ট্রেনে, বাসে, লঞ্চেও। কিন্তু লক্ষণীয় হল, ভারতীয় মুসলমানেরা সেদেশের বাসে ট্রেনে এতটা নজরে পড়ে। যাত্রাপথে তো তারাই বের হয় যাদের চাকুরি-বাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বচ্ছলতা আছে। লক্ষ্য করলাম, এতবড় প্রতিষ্ঠানে কোন ছালাতের ঘরও নেই। যেখানে মুসলমান কর্মচারীই নেই সেখানে থাকবেই বা কেন? ভারতে জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ মুসলমান। বিলেতে মুসলিম জনসংখ্যা শতকরা ৩ ভাগও নয়। লন্ডনে সে হার শতকরা ১০ ভাগের কিছু বেশী। তবুও লন্ডনে এমন কোন হাসপাতাল নেই যেখানে মুসলমানদের জন্য কোন ছালাতের ঘর নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটি নিজ থেকেই নির্ধারিত করে দিয়েছে। ইবাদতের অধিকার যে মৌলিক অধিকার সেটি ব্রিটিশ সরকার নীতিগত ভাবে স্বীকার করে। তাই এ আয়োজন। ভারত ধর্মনিরপেক্ষতার দাবী করলেও সেদেশে সংখ্যালঘুদের সে অধিকারটি যে কতটা অবহেলিত সেটি বুঝবার জন্য কোন গবেষণার প্রয়োজন পড়েনা। পথে-ঘাটে সেটি নজরে পড়ে। বিলেতের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে জুম‘আর ছালাত আদায় হয়। ছালাতের ঘর রয়েছে হিথ্রো এয়ারপোর্টে। অথচ ছালাতের কোন ঘর দেখিনি মুম্বাই বা দিল্লী এয়ারপোর্টে।

বাংলাদেশে বা পাকিস্তানে যত মুসলমানের বাস তার চেয়ে বেশী মুসলমানের বাস ভারতে। অথচ সমগ্র বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের কথা দূরে থাক, শুধুমাত্র ঢাকা বা করাচী বা লাহোরের মত একটি শহরে যে সংখ্যক মুসলিম ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাবিদ, হিসাববিদ, আইনবিদ বা চাকুরিজীবি আছেন সমগ্র ভারতের প্রায় বিশ কোটি মুসলমানের মাঝে তার অর্ধেকও নেই। শিক্ষাদীক্ষা ও চাকুরিতে তাদের বেড়ে উঠাকে কতটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এ হল তার নমুনা। জনসংখ্যায় শতকরা ১৫ ভাগ হলে কি হবে চাকুরিতে তাদের সংখ্যা শতকরা ৩ ভাগেরও নয়। ভারতীয় মুসলমানদের এ বঞ্চনার কিছু পরিচয় লন্ডনে বসেও বোঝা যায়। আমি বিলেতে সেসব হাসপাতালে কাজ করেছি সেখানে প্রচুর ভারতীয় ডাক্তার দেখেছি। তাদের অধিকাংশই হিন্দু। লন্ডনের হাসপাতালগুলোতে বহু বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী ডাক্তারও কাজও করে। কিন্তু হিন্দুস্থান থেকে আগত মুসলমান ডাক্তার খুব একটা নজরে পড়ে না। লিবিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৬০ লাখ। কিন্তু লন্ডনের হাসপাতালে যত লিবিয়ান ডাক্তার দেখিছি তত ভারতীয় মুসলমান ডাক্তার দেখিনি।

এ যাত্রায় আমার ভারত দেখা শুরু হয় জয়পুর শহর থেকে। রাজস্থান একটি মরুভূমিময় রাজ্য, জয়পুর তারই রাজধানী। ফলে শহরটির বাতাসে রুক্ষ্মতা। শহরটিতে গিয়ে যেটি প্রথম নজরে পড়ল সেটি বিল্ডিংগুলোর রং। অধিকাংশ ভবনগুলোর দেয়ালের রং গোলাপী। এজন্য শহরটি পরিচিত পিঙ্ক সিটি বা গোলাপী শহর রূপে। প্রচুর বিদেশী আসে এ শহর দেখতে। বিদেশীদের কাছে বড় আকর্ষণ শুধু জয়পুরে অবস্থিত রাজাদের প্যালেস ও তার স্থাপত্য নয়, বরং রাজস্থানের মরুভূমি। তারা ছুটে যায় জয়সালমীর, বিকানিরের মরুভূমিতে। সেখানে গিয়ে তারা উটের পীঠে চড়ে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আগত টুরিস্টদের জন্য সেটিও মজার ব্যাপার। আমাদের ইন্সটিটিউট জয়পুর শহর থেকে বেশ দূরে। সপ্তাহে একবার আমাদেরকে ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে বাসে জয়পুর শহরে শপিংয়ে আনা হত। শপিংয়ের তেমন কিছু থাকতো না, আমি সে সময়টি ব্যয় করতাম বেড়ানোর কাজে। আছরের বা মাগরিবের ছালাত পড়তাম একেকবার একেক মসজিদে গিয়ে, যাতে ছালাতের সাথে সেসব মসজিদগুলো ও তার মুছল্লীদের সাথে দেখা হয়। ছালাত শেষে চেষ্টা করতাম তাদের সাথে কথা বলার। জয়পুর শহরে গোটা চারেক মসজিদের সন্ধান পেয়েছিলাম। সবগুলো মসজিদ দেখেই মনে হত সেগুলো হাল-আমলের গড়া নয়। গড়া হয়েছে সম্ভবত ব্রিটিশ আমলে। বাংলাদেশের যেলা বা থানা পর্যায়ে আজকাল যে মানের ঝকমকা মসজিদ দেখা যায় সেটি জয়পুরের ন্যায় প্রাদেশিক রাজধানীর মসজিদেও দেখিনি। জুম‘আর দিন মসজিদগুলোতে স্থান সংকুলান হয় না। কারণ মুসলিম জনসংখ্যা বিগত ৫০ বছরে অনেক বেড়েছে কিন্তু সে তুলনায় মসজিদের সংখ্যা বাড়েনি। পুরানো মসজিদগুলোর আয়তনও বাড়েনি। এমনকি আগ্রায় গিয়ে শাহজাহানের গড়া ঐতিহাসিক মসজিদে ছালাত পড়তে গিয়ে তার জরাজীর্ণ দশা দেখে বিস্মিত হয়েছি। দারিদ্র্যতা ফুটে বেরুচ্ছে এ বিশাল মসজিদের মেঝে, জায়নামায, দেয়াল ও সিঁড়ি দিয়ে। কোন মসজিদেই কোন কার্পেট দেখিনি। অথচ কার্পেট দেখা যায় এখন বাংলাদেশের খুব সাধারণ মানের মসজিদেও। মনে হল, মসজিদকে ঠিকমত ঝাড়ুও দেয়া হয়না। আজমিরে গিয়ে তো অবাক। টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়ায় দরগাহ সংলগ্ন পাবলিক টয়লেটে গেলাম। দেখলাম মল-মূত্র সেখানে উপচিয়ে পড়ছে। অবস্থা দেখে আর সামনে এগুনোর হিম্মত হল না। পরে এক হোটেলে খেতে গিয়ে কাজ সারলাম। জুম‘আর ছালাত পড়তে আমার ইন্সটিটিউটের সবচেয়ে কাছের মসজিদে মাঝেমধ্যে যেতাম। সেখানে যেতে হলে আমাদেরকে টেম্পোতে চড়ে যেতে হত। একদিন মসজিদের জায়নামাযে বসে যে কাহিনী শুনলাম সেটি   নিতান্তই করুণ। মসজিদটি এককালে বিশাল ওয়াকফ সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সে জমি বেদখল হয়ে গেছে। আমাকে পাশের পাবলিক ওয়াকার্স ডিপার্টমেন্টের অফিস আর তার আশেপাশে স্তূপিকৃত নানা যন্ত্রপাতি দেখিয়ে বলা হল, এ অফিসটি মসজিদের জমির উপর। ১৯৪৭-এর পর মসজিদের জমি হিন্দুরা জোর পূর্বক দখল করে নেয়। মসজিদের ইমাম সাহেবের বসবাসের জন্য কোন ঘর নেই, ঘর নির্মাণের কোন স্থানও নেই। ইমাম সাহেবকে ঘুমাতে বা বিশ্রাম নিতে হয় মসজিদের মেঝেতে। তার কাপড়-চোপড় রাখতে হয় মসজিদের এক কোনায়। দেখলাম মসজিদের জবরদখল করা ভূমিতে বসে কিছু লোক গল্পগুজব করছে, তাদের আওয়াজও মসজিদে ভেসে আসছে। ভারতে অবস্থানকালেই একবার রামাযানের ঈদ এল। ঈদের ছালাত পড়তে গেলাম শহরতলীর এক মসজিদে। যারা ঈদের ছালাত পড়তে মসজিদে এসেছে তাদের চেহারা-সুরত, কাপড়-চোপড় ও দেহের ভাষা দেখে আমার নিজের আনন্দটাই মারা পড়ল। বাংলাদেশের ঈদের মাঠে গেলে মনটি যেন এমনিতেই আনন্দে নেচে উঠে। যারা সচরাচর হাসতে জানে না, তারাও সেদিন নির্মল হাসি দেয়। প্রাণ খুলে কথা বলে। চারিদিকে থাকে আনন্দের প্রচন্ড গুণগান। শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সবার মধ্যে থাকে উচ্ছল আনন্দের লেশ। সে আনন্দ শুধু মুখের ভাষায় নয়, দেহের ভাষা ও পোষাকের ভাষাতেও প্রকাশ পায়। আনন্দের সে প্রবল সুরটি ঘর-বাড়ি, মসজিদ-ঈদগাহ, রাস্তাঘাট, দোকান-পাট তথা সমগ্র পরিবেশে ধরা পড়ে। কিন্তু জয়পুরের ঈদের মাঠে সেটি আমার নজরে পড়েনি। বরং দেখেছি পুষ্টিহীনতা, দেখেছি মলিনতা। সেদিনেও দেখলাম মসজিদের মেঝেতে বিছানো ময়লাধরা বহু পুরনো জায়নামাজের সিট। নির্জীব মানুষগুলো মলিন বেশে মামুলী লেবাস পড়ে মসজিদে ঢুকছে। ইমাম সাহেব বড় কষ্ট করে খুৎবা পাঠ করলেন। তার দেহে যেমন পুষ্টিহীনতা, তেমনি পোষাকেও দারিদ্রতা। তার মধ্যেও সে জোশ, সে আবেগ, ঈদের সে ছবি দেখলাম না। সমগ্র ঈদের মাঠে যেন নীরব ক্রন্দনের সুর। ছালাত শেষে প্রাণঢালা মোলাকাত হয় সেটিও খুব একটা দেখলাম না।

জয়পুরের বড় মসজিদের মেঝেতে একদিন আলাপ হচ্ছিল এক মুছল্লির সাথে। বুঝা গেল, ভদ্রলোক তাবলীগ জামায়াত করেন। তিনি বললেন, তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে জয়পুরের শহরতলীতে একটি দোতলা মসজিদ নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তাবলীগ জামায়াত দীর্ঘ দিন ধরে তেমন একটি মসজিদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল। কিন্তু সেটির নির্মাণে রাজস্থান সরকার অনুমতি দেয়নি। অনুমতি দিয়েছে এক তলার। তাদের কথা, দোতলা মসজিদ নির্মাণ করা হলে তাতে মুসলিম স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটবে। ভারত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ, শহরের স্থাপত্যে একমাত্র সেটিরই প্রকাশ ঘটতে হবে। অন্য কোন স্থাপত্যে হিন্দু ঐতিহ্য ঢাকা পড়ুক বা খর্ব হোক সেটি সরকার চায় না। মসজিদ নির্মাণ এতটাই নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে যে জুম‘আর দিনে মসজিদগুলোর অভ্যন্তরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শত শত মুছল্লী উপচে পড়ে মসজিদের পাশের রাজপথে। এতে বন্ধ হয়ে যায় রাস্তাঘাট, সৃষ্টি হয় আশেপাশের রাস্তায় প্রচন্ড যানজট। সে চিত্র মোম্বাই, দিল্লী, হায়দারাবাদ, আহমেদাবাদের ন্যায় শহরগুলোতে অতি করুণ। স্বভাবতই তাতে গাড়িচালক ও পথচারীদের প্রচন্ড অসুবিধা হয়। অসন্তোষও গড়ে উঠে। আর সে অসন্তোষকে পুঁজি করে শিবসেনা, আরএসএস, বিশবহিন্দু পরিষদ, বজরং দলের ন্যায় কট্টোর সাম্প্রদায়িক দলগুলোর নেতারা সে যানজটের জন্য মুসলমানদের দায়ী করে। তারা সরকারের কাছে দাবী করে রাজপথে ছালাত পড়া বন্ধের। কিন্তু একথা বলে না, মুসলমানদের জন্য নতুন মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয়া হোক। সরকারকে তো তারাও ট্যাক্স দেয়। মসজিদ কোন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান নয়, এটি কম্যিউনিটির। সরকার থেকে জমি বরাদ্দ না পেলে কি কোন শহরে মসজিদ নির্মাণ করা যায়? অথচ সরকারের তাতে ভ্রুক্ষেপও নাই। এভাবেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ধর্মপালনের ন্যায় মুসলমানদের মৌলিক মানবিক অধিকার। আর এটিই হল ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা। অথচ জয়পুর শহরের রাস্তায় ঘন ঘন মন্দির দেখা যায়। অনেকগুলো গড়ে উঠেছে ফুটপাথ দখল করে। জয়পুর শহরের শতকরা ৪০ ভাগ বসতি মুসলমান। কিন্তু সে তুলনায় তাদের ধর্মীয় বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান দেখলাম না। 

জয়পুর শহরটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। মুসলিম প্রধান পুরানো শহর, এর অবস্থান শহরের মধ্যভাগে। আর সেটিকে ঘিরে রয়েছে হিন্দু প্রধান বিশাল আধুনিক শহর। মুসলমান জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, প্রচন্ড চাপ বাড়ছে পুরানো বসত বাড়ীর উপর। জয়পুরের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ মুসলমান হলেও শহরের শতকরা ১০ ভাগ জমির উপরও তাদের দখল নেই। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার রাস্তাঘাটও নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। রাস্তার উপর স্তূপিকৃত হয়ে আছে আবর্জনা। বুঝা গেল সেগুলি সরানোতেই রয়েছে গাফলতি। সে আবর্জনার পাশেই দেখলাম একটি মসজিদ। মসজিদটি পুরানো হলেও দেয়ালের কোন কোন স্থানে প্লাস্টারের কাজও এখনও শেষ হয়নি। পুরাপুরি ঘিঞ্জি এলাকা। কোন পার্ক নাই, স্কুল নাই, ড্রেন নাই, প্রশস্ত রাস্তাও নাই। অথচ যুগ যুগ ধরে মুসলমানগণ সেখানেই বসবাস করছে। চাইলেও তাদের পক্ষে সেখান থেকে বেরিয়ে আশা সম্ভব নয়। একে তো আধুনিক আবাসিক এলাকায় জমি কেনা ও বাড়ি নির্মাণের আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। আর সামর্থ্য থাকলেও হিন্দু প্রধান সে সব এলাকায় তাদের নিরাপত্তা নেই। শহরে দাঙ্গা বাধলে সর্বপ্রথম হামলা শুরু হয় হিন্দু এলাকায় ঘর বাঁধা মুসলিম পরিবারগুলোর উপর। ধর্ষণের শিকার হয় সেসব মহিলারা। আর সে সাথে নিহত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতীয় মুসলমানদের সে করুণ অভিজ্ঞতা বহু হাজার বার হয়েছে। মুসলিম-নির্মূল দাঙ্গাই ভারতীয় রাজনীতির প্রবলতম সংস্কৃতি। সেটি শুধু মোম্বাই, আহমেদাবাদ, হায়দারাবাদ, মিরাট বা সুরাটের ব্যাপার নয়, সমগ্র ভারতের। ফলে এটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু আছে সেখানে দাঙ্গা হবেই। তাই অবর্ণনীয় দুর্দশার শিকার হলেও জান-মাল ও ইজ্জত-আবরু রক্ষা খাতিরে তাদের সে ঘিঞ্জি এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নেই। এটি যেন আরোপিত জেলখানা।

১৯৪৭ সালে ভারত-বিভাগের সময় ব্যাপক দাঙ্গা শুরু হয় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। সে দাঙ্গা থেকে বাঁচবার তাগিদে ভারতীয় মুসলমানদের মাঝে বিপুল হারে মাইগ্রেশন শুরু হয়। সেটি হয় দুই ভাবে। এক, ভারত থেকে পূর্ব বা পশ্চিম পাকিস্তানে গমন। দুই, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মাঝের বসতি ছেড়ে ভারতেরই কোন মুসলিম প্রধান শহরে গিয়ে ঘরবাধা। ডেমোগ্রাফির ভাষায় এটি হল, আভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন। সাতচল্লিশের দাঙ্গার সে মহামারি আপাততঃ কমলেও ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা আজও থামেনি। এনডেমিক রূপে এখনও সেটি মাঝে মধ্যেই ভয়ংকর রূপ নেয়। তাই পাকিস্তানে যাওয়া থেমে গেলেও আভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন শেষ হয়নি। ফলে বাড়ছে ভারতীয় শহরগুলির মুসলিম প্রধান এলাকার উপর জনবসতির প্রচন্ড চাপ। অধিকাংশ বড় বড় শহর তাই হিন্দু-মুসলিম এ দুই এলাকায় বিভক্ত। বিভক্তির সে সীমারেখা দাঙ্গাকালে সীমান্ত রেখা রূপে কাজ করে। জিন্নাহর বিখ্যাত ‘টু-নেশন’ বা দ্বি-জাতি তত্ত্ব নিয়ে অনেকেরই ভীষণ আপত্তি, কিন্তু সে ‘‘দ্বি-জাতি’’ তত্ত্ব বিশাল বাস্তবতা নিয়ে সমগ্র ভারতে আজও প্রচন্ডভাবে বেঁচে আছে। সেটি বুঝা যায় ভারতের শহরগুলোর দিকে নজর দিলে। এককালে জার্মান, ফ্রান্স, রাশিয়া, পোলান্ডের ন্যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোতে ইহুদীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় বড় শহরে ghetto তথা ইহুদী বস্তি গড়েছিল। এভাবে তারা নিজেদেরকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ খৃষ্টান থেকে আলাদা করে ফেলেছিল। এটি শুধু তাদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে নয়, নিজেদের ধর্ম, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বাঁচানোর তাগিদেও। বহু হাযার বছরের পুরানো হিব্রু ভাষা তার জম্মস্থানে মৃত্যুবরণ করলেও ইউরোপের ইহুদীদের মাঝে তা আজও বেঁচে আছে বস্তুত ইহুদীদের এই ‘ঘেটো’ জীবনের কারণেই। দেখে মনে হয় ভারতীয় মুসলমানগণও সে স্ট্রাটেজী বা কৌশলই গ্রহণ করেছে। ফল দাঁড়িয়েছে, হিন্দী ভাষা ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রবল জোয়ারের মাঝে উর্দূ ভাষা ও মুসলিম কালচার এখনও বেঁচে আছে এসব মুসলিম ঘেটোগুলিতে।

আজমীরে গিয়ে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর মাযারের সম্মুখের বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। দেখি ৬ ফুটের বেশী লম্বা, কালো শিরোয়ানী ও টুপিধারি এক বিশাল ভদ্রলোক রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসছেন। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। আগ্রহ ভরে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে সালাম পেশ করলাম এবং পরিচয় দিলাম। ভদ্রলোক স্কুলশিক্ষক ছিলেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। তাঁর কাছে আজমীরের মুসলমানদের অবস্থা জানতে চাইলাম। ভদ্রলোক প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে উর্দূতে যা বললেন তার অর্থ হল, ‘আপনি এখানকার মুসলমানদের অবস্থা জানতে চাচ্ছেন? তাদের অবস্থা আর কি বলব? এই যে রাস্তার উপর সারি সারি বহু দোকান দেখছেন এর একটিও মুসলমানদের নয়। এর সবগুলো হিন্দুদের। মুসলমানদের কাজ এসব দোকানে মুটেগিরি করা। অনেকের কাজ এ মাযারে ভিক্ষে করে খাওয়া। আর চাকুরি-বাকুরি? আমার চারটি সন্তান। সবাই গ্রাজুয়েট। কিন্তু কারো কোন চাকুরি নাই।’ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল। দেখলাম, হতাশা আর কাকে বলে? আজমীরে মুসলিম জনসংখ্যা শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে তারা পঙ্গু। সত্যিই, মাযারে অনেককে ভিক্ষা করতে দেখলাম। কেউ কেউ মাযারের ধারে বিছানা পেতে কাওয়ালী গেয়ে পয়সা উপার্জন করেছে। সারা ভারতের নানা স্থান থেকে আসা মানুষের সেখানে ভীড়। সেখানে বাংলাদেশীরাও আসে। পরিচয় হল পশ্চিম বাংলা থেকে আগত কিছু গ্রামীণ মানুষের সাথে।

আগ্রায় গিযে তাজমহল দেখার পর এক দোকানে ঢুকলাম তাজমহলের রেপ্লিকা কিনতে। চেহারা সুরত ও পরিচয়ের মাধ্যমে বুঝলাম দোকানদার মুসলমান। বয়স সম্ভবত চল্লিশ হবে। তাঁকেও জিজ্ঞেস করলাম আগ্রার মুসলমানদের অবস্থা। ভদ্রলোকের কাছ থেকে যা জানলাম সেটিও চরম হতাশার। বললেন, ‘আমার পরিবারে কয়েকজন গ্রাজুয়েট, একজন ডাক্তার। কিন্তু কারোই কোন চাকুরি নেই।’ জিজ্ঞেস করলাম উত্তর প্রদেশের রাজনীতি নিয়ে। সেখানেও নিদারুণ হতাশা। এককালে মুসলমানগণ কংগ্রেস করতো। তারপর জনতা দল। এরপর ধরেছিল মোলায়েম সিংয়ের সমাজবাদী দল। কেউ কেউ যোগ দিয়েছিল মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টিতে। কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না। রাজনীতিবিদদের ব্যস্ততা নিছক ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে, মুসলমানদের সমস্যার সমাধান নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। মুসলমানের সমস্যা পরিণত হয়েছে নিছক রাজনৈতিক পণ্যে। প্রশাসন, রাজনীতি, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবীদের মাঝে মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িকতা এতটাই প্রকট যে তার সমাধান এতটা সহজ নয়। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণাই এখান সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সামাজিক রীতি। সে ঘৃণার বিষ দেশ জুড়ে ছিটানো হয়েছে প্রশাসন, ছাত্র-শিক্ষক, পুলিশ, মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। সে ঘৃণা থেকেই মাঝে মধ্যে জ্বলে উঠে মুসলিম বিরোধী ভয়ানক দাঙ্গা। শুকনো কাঠের উপর পেট্রোল ছিটানো থাকলে তাতে আগুণ জ্বালাতে কি বেশী কিছু লাগে? সে কাঠের উপর দূর থেকে সিগারেটের পিছনটুকু ছুঁড়ে ফেললেই তাতে বিস্ফোরণ শুরু হয়। ভারতের প্রকৃত অবস্থা মূলত তাই। তাই গোদরাতে কে বা কারা ট্রেনে বোমা ফাটালো সেটি জানা না গেলে কি হবে, সে খবরটুকু ছড়িয়ে পড়াতেই ব্যাপক মুসলিম নিধন শুরু হয়ে গেল গুজরাটে। হাযার হাযার মুসলমান তাতে নিহত হল। ধর্ষণের উৎসব শুরু হয়ে গেল। অথচ পরে তদন্তে জানা গেল, ট্রেনে সে বিস্ফোরণের জন্য কোন মুসলমান দায়ী ছিল না। সারা ভারতে এ যেন এক বিস্ফোরণ-উন্মুখ অবস্থা। এথেকে মুক্তির জন্য চাই বিশাল সমাজ বিপ্লব। চাই, হিন্দুদের দর্শন ও চিন্তারাজ্যে পরিবর্তন। শুধু রাজনৈতিক দলবদলে তা সম্ভব নয়। তাই বিজেপির বদলে কংগ্রেস আসছে কিন্তু দাঙ্গা থামছে না। এ অবস্থার প্রতিকারে চাই শত শত সত্যসেবক বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসংস্কারক। কিন্তু ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে সেটিরই প্রচন্ড অভাব। কোন নেতা বা দলকে নিছক ভোট দিয়ে পাহাড়সম এ সমস্যা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা নেই। সাতচল্লিশের পূর্বেই বহু মুসলিম চিন্তানায়ক হিন্দুদের মনের এ পরিচয়টি জেনেছিলেন। ফলে তারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাতে অন্ততঃ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলমানগণ ভয়াবহ এ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে গেছেন।

ভারতীয় মুসলমানগণ আজ নানা ভাবে নীরবে পিষ্ট হচ্ছে। রাজনীতির ময়দানে মাঝে মধ্যে এসব পিষ্ট মানুষের কিছু ক্রন্দন শোনা যায়, প্রতিবাদও উঠে। কিন্তু তাতে সে দুঃখের বোঝা নামে না। মুসলমানেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে সামনে এগুবে তাদের সামনে সে পথও নেই। আলীগড়, মুরাদাবাদ, আহমেদাবাদ, এলাহাবাদ বা মোম্বাইয়ের মত কিছু কিছু শহরের মুসলমানেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে সামনে এগুলেও হঠাৎ দাঙ্গা বাধিয়ে তাদের সারা জীবনের সম্বলকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয় বা লুট করে নেয়া হয়। সে দুর্ভোগ নিয়েও ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় কোন লেখালেখি নেই। সরকার মাঝেমধ্যে ঘটা করে কমিটি করে মুসলমানদের সমস্যা জানার জন্য। রিপোর্টও বের হয়। তাতে সুপারিশও থাকে। কিন্তু সেগুলো কখনও কার্যকর করা হয় না। জয়পুরে আমাদের অর্থনীতি পড়াতেন ভারতের একজন নামকরা অর্থনীতিবিদ। উনি এক সময় হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমআইটিতেও ছিলেন। সে সময় সেখানে তার সাথে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও ছিলেন। মনমোহন সিং হলেন উনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সে সময় ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। মাঝে মধ্যে মনমোহন সিংয়ের সাথে তার ফোনে আলাপ হত সেটি বলতেন। উনি কোর্সের ভিজিটিং প্রফেসর রূপে আমাদেরকে পড়াতেন হেলথ ইকোনমিকস। কেরালার মানুষ, মনে হত অর্থনীতির গুরু। পরে তিনি কেরালায়   আন্তর্জাতিক মানের একটি পোষ্টগ্রাজুয়েট ইন্সটিটিউটও খুলেছেন। উনি থাকতেন আমাদের ক্যাম্পাসেই। মেসে রাতের খাবার শেষে টেবিলে বসে উনার সাথে মনখুলে নানা বিষয়ে নানা আলাপ করেছি। এমনও হয়েছে, খাওয়া শেষে সবাই চলে গেছে কিন্তু আমরা দুই জন আলাপ চালিয়ে গেছি। প্রতিদিন আমার কাজ ছিল, বিকেলে লাইব্রেরীতে গিয়ে ভারতীয় পত্রিকাগুলোর খবর এবং সেসাথে রাজনৈতিক কলামগুলো পড়া। সে কাজ কখনও ক্লাসের ফাঁকেও করতাম। সেখানে থাকতো The Time of India, The Hindustan Times, The Hindu, The Pinoneer, India Today, The Front Line ইত্যাদি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা। হিন্দি পত্রিকাও ছিল। আমি ধীরে ধীরে হিন্দি পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করতাম। তখন চেষ্টা শুরু করেছিলাম হিন্দি ভাষা পড়তে শেখার। পত্রিকাগুলো পড়া যেন আমার নেশায় পরিণত হয়েছিল। কিন্তু প্রচন্ড হতাশ হতাম এসব পত্রিকার বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা দেখে। উক্ত প্রফেসরের সাথে আলাপে আমার সে হতাশার কথা নিঃসংকোচে বলতাম। আমার কথার যথার্থতা প্রমাণে প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধের উদাহরণও দিতাম। ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে ভারতীয় মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা যে অতি দুঃখজনক তা নিয়ে আমার ক্ষোভের কথা জানাতাম। আলোচনায় আনতাম, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও নেপালের প্রতি ভারত সরকারের দাদাগিরি নিয়ে। দেখতাম, তিনি আমার সাথে এসব বিষয়ে একমত। মনে হত আমার সে আলোচনা তিনি উপভোগ করছেন। আমি এই প্রথম একজন শিক্ষকের সাথে মনের কথা খুলে বলবার সুযোগ পেয়েছিলাম। এ সুযোগ এর আগে কোন কলেজে, এমনকি স্কুলেও পায়নি। আমার স্কুল ও কলেজ জীবনে তো শিক্ষকের সাথে কথা বলতেও ভয় হত। মনে হত, উনারা যেন লোহার তৈরি মানুষ, হাসতেও জানেন না। কিন্তু জয়পুরে যাদের শিক্ষক রূপে পেয়েছিলাম তারা সম্পন্ন ভিন্ন জগতের। ভারতের অনেক নামকরা শিক্ষকদের সেখানে আনা হত। অনেকে আসতেন মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্র থেকে। আমাদের ক্লাসের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশটাই ছিল ভিন্ন। বলতে দ্বিধা নেই, জয়পুরের ৬টি মাস ছিল আমার সমগ্র শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ সময়। শিক্ষাও যে এতটা আনন্দময় ও উপভোগ্য হতে পারে, তা এর আগে আমি বুঝতে পারিনি।

আবার ফিরে আসি মূল বিষয়ে। অনেকের মত, ভারতের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দেশের কট্টোর সাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদদের চেয়েও সাম্প্রদায়িক। ভারতীয় সরকারী কর্মচারীদের বহুবার মুখোমুখি হয়েছি মোম্বাই ও দিল্লী বিমান বন্দরে। ইরানে যখন চাকুরি করতাম দেশে ফেরার পথে মোম্বাইতে প্রায়ই ট্রানজিট থাকতো। ফলে বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হয়ে বেরুতে হত। আমাদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখার পরই তাদের দেহের ভাষা পাল্টে যেত। তখন বুঝা যেত তাদের মনের মুসলিম বিদ্বেষ। আমরা দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরাফেরা করি সেটিতেও যেন তাদের ক্ষোভ। তাদের ক্ষোভের সে সাথে আফসোসের কারণ বোধ হয় এই, ভারতের প্রায় ২০ কোটি মুসলমানকে যেভাবে খাঁচায় পুরে রেখেছে, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মুসলমানদের ক্ষেত্রে সেটি পারিনি। অথচ ১৯৪৭ সালের আগে সেটিই তো তাদের প্রবলতম বাসনা ছিল। সমুদ্রের তলায় লুকিয়ে থাকা বিশাল বরফ টুকরো যেমন ক্ষুদ্র শির তুলে নিজের গোপন উপস্থিতিটি জানিয়ে দেয়, এসব ইমিগ্রেশন পুলিশরাও তাদের মুসলিম বিদ্বেষ ও তাচ্ছিল্যের ভাবটি জানিয়ে দিতে কখনও ভুলতো না। ভারতীয় পত্রিকায় বহুবার প্রকাশ পেয়েছে, কি করে দাঙ্গার সময় পুলিশ গুন্ডাদের সাথে মিলে মুসলমান হত্যা করে। মিরাটের রায়টে এ পুলিশরাই তাদের কালিমালিপ্ত ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছিল। তারা মুসলিম নিধন অভিযানে নিহত মুসলমানদের সংখ্যা ভারতবাসী ও বিশ্ববাসীর সামনে কম করে দেখাবার জন্য শত শত লাশ ক্যানালে ফেলেছিল। মুসলিম নরনারীর সেসব লাশের ছবি ভারতীয় পত্রিকাতেও ছাপা হয়েছিল। তবে নিজেদের চরিত্রে কালিমা লিপ্ত করার কাজটি ভারতীয় পুলিশের কাছে কখনই থেমে যায়নি। তাদের সে চরিত্রটি আবার ধরা পড়ে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের সময়। ধরা পড়েছে মোম্বাই ও গুজরাটে মুসলিম নিধনযজ্ঞের দিনগুলিতে। হাযার হাযার দুস্কৃতিকারি যখন অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ধ্বংস করছিল, পুলিশ তখন কাছে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য উপভোগ করেছে। মসজিদ ধ্বংসের সে ঘটনাটি দুয়েক ঘণ্টার কাজ ছিল না, চলেছে বহু ঘণ্টা ধরে। বিশ্বের যে কোন আইনে সেটি ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এমনকি ভারতীয় আইনেও। মসজিদ রক্ষার পক্ষে ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের রায়ও ছিল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশ সে অপরাধে শামিল হাযার হাযার মানুষের মধ্য থেকে একজনকেও গ্রেফতার করতে পারিনি, আদালতে তুলে শাস্তিরও ব্যবস্থা করতে পারিনি। মুসলিম বিরোধী গণহত্যা, ধর্ষণ ও মসজিদে ধ্বংসের মত অপরাধের সাথে ভারতীয় পুলিশ যে কতটা জড়িত এ হল তার নজির। যেখানেই গেছি তাই পুলিশ নিয়ে প্রচন্ড হতাশা দেখেছি। মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সময় কিভাবে রাজনীতিবিদরা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে সে বিবরণও পড়েছি। সম্প্রতি গুজরাটের এক পুলিশ অফিসার ভারতীয় আদালতে বলেছে, কিভাবে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুলিশ অফিসারদের বলেছিল, ‘এবার মুসলমানদের একটু মজা দেখাবার সুযোগ দাও।’ গুজরাটের সে দাঙ্গায় হাযার হাযার মুসলমানকে হ্ত্যা করা হয়েছিল। ধর্ষিতা হয়েছিল বহু মুসলিম নারী। বহু শিশুকে সে দাঙ্গায় জ্বলন্ত আগুনে ফেলা হয়েছিল।  

মুসলিম বিরোধী হত্যাকান্ডগুলির সাথে যে শুধু অশিক্ষিত গুন্ডা প্রকৃতির মানুষ জড়িত হয় তা নয়। জড়িত হয় ভদ্রবেশী শিক্ষিতরাও, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীরাও। বেরেলীর এক ডাক্তার বলেছেন, কিভাবে তার মহল্লার এক প্রফেসরকে বন্দুক দিয়ে হত্যা করে তার শিক্ষিত প্রতিবেশী। সমস্যা শুধু এটুকু নয়, দাঙ্গা বাধিয়ে মুসলমানদের হত্যা ও তাদের সম্পদ শুধু দখলে নেয়া হচ্ছে না, বরং দখলে নেয়া হচ্ছে মুসলমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। ফলে পঙ্গু করার ব্যবস্থা হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুসলমানদের অর্থে। তখন হিন্দুদের জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল বেনারসের হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতীয় মুসলমানদের মাঝে শিক্ষার বিস্তারে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা বিশাল। বলা হয়, পাকিস্তান আন্দোলন গড়ে উঠেছিল আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রদের হাতে। কিন্তু এখন আলীগড় পরিচিত মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য, মুসলমানদের মাঝে শিক্ষাবিস্তারের জন্য নয়। বিখ্যাত সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রই বদলে দেয়া হয়েছে। এখন সেটি হিন্দুদের দখলে। শিক্ষক ও ছাত্রদের অধিকাংশই এখন হিন্দু। সেখান থেকে পাশ করা এক ডাক্তারের সাথে আলাপে জেনেছিলাম, মুসলিম বিদ্বেষী প্রফেসরগণ তাকে কিভাবে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে ঢুকতে দেয়নি। অথচ বেনারসের হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রে সে পরিবর্তন আনা হয়নি। মুসলমানগণ যদি নিজেদের পশ্চাদপদ জনগণের কল্যাণে বিদেশ থেকে দান-খয়রাতের অর্থ তুলে কোন স্কুল বা কলেজ প্রতিষ্ঠা করে তবে তাতেও হিন্দুরা ভাগ দাবী করে বসে। সেসব প্রতিষ্ঠানে হিন্দুদের ভর্তি করতে বাধ্য করা হয়। সরকারী অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়, ভারত সেকুলার দেশ, এখানে শুধু মুসলমানদের জন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা চলবে না।  

ভারতীয় সরকারী কর্মচারীরা যে কতটা সাম্প্রদায়িক ও মুসলিম বিদ্বেষী সেটি চিত্তরঞ্জন দাশের ন্যায় অনেক রাজনীতিবিদও হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন। ভারতীয় প্রশাসন ও রাজনীতিতে মুসলমানদের বঞ্চনার ইতিহাস যে কত গভীর ও করুণ সেটি বহু বিবেকমান ভারতীয় হিন্দু রাজনৈতিকও বুঝতেন। তাদের মধ্যে সেরূপ এক বিরল ব্যক্তিত্ব ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। তিনি দেখলেন, বাংলার জনসংখ্যার গরিষ্ঠ জনগণ হল মুসলমান। অথচ সরকারী চাকুরিতে তাদের হিস্যাটি শতকরা তিন ভাগও নয়। এ অবিচার বুঝার জন্য কি মহামানব হওয়া লাগে? কিন্তু সে ন্যূনতম মানবতা অধিকাংশ হিন্দু রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছিল না। রবীন্দ্রনাথ বা শরৎচন্দ্রের মত সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবীদেরও ছিল না। ফলে সে ভয়ানক অবিচারের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ বা শরৎচন্দ্র একটি বাক্যও লেখেননি। অথচ তাঁরা হিন্দুদের কল্যাণে সে সমাজের অনেক অনাচার নিয়ে কলম ধরেছেন। চিত্তরঞ্জন দাশই প্রথম সেটির সুরাহা করার লক্ষ্যে চাকুরিতে মুসলমানদের অধিক হারে নিয়োগের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাতে তেলেবেগুণে জ্বলে উঠে প্রশাসনের হিন্দু কর্মচারীরা। তারা বস্তুত ভারতীয় প্রশাসনকে কব্জা করেছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের নিষ্ঠাবান সেবক রূপে। ভারত স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু নিজেদের অধিকৃত সে স্থানকে ধরে রাখতে চায় নতুন প্রজন্মের জন্য। এটি তাদের প্রতিষ্ঠিত কায়েমী স্বার্থ। মুসলিম সন্তানকে সে চাকরিতে ভাগ দিয়ে তারা নিজেদের সন্তানকে বঞ্চিত করতে চায় না। এমন এক কায়েমী স্বার্থ চেতনার ফলে চিত্তরঞ্জন দাশ এবং সোহরাওয়ার্দী মিলে হিন্দু-মুসলিম বৈষম্য নিরসনে যে বেঙ্গল প্যাক্ট করেছিলেন, সেটি ডাস্টবিনে গিয়ে পড়ে। একই কারণে আজও বিফল হচেছ মুসলিম-বঞ্চনা প্রতিকারের সকল উদ্যোগ।    

দেখলাম, ভারতীয় হিন্দুদের মনে মুসলিম ভীতিও অতি প্রকট। সে ভীতিটি প্রকটভাবে ধরা পড়ে ভারতীয় পত্রিকার পাতায়। তাদের ভয়, মুসলিম জনসংখ্যা বিস্ফোরণে ভারতে তারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। উগ্রবাদী হিন্দুদের পক্ষ থেকে সরকারের উপর প্রবল চাপ, মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে আনা হোক। সে দাবী নিয়ে হিন্দুস্থান টাইমস, টাইম্স অব ইন্ডিয়া, পাইয়োনীয়ার ও ইন্ডিয়া টুডের ন্যায় পত্রিকাগুলোতে বহু নিবদ্ধ পড়েছি। লক্ষ্য করেছি, এ ভীতি বাঁচিয়ে রাখতে এ পত্রিকাগুলো এ বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্ট ছাপতো। এসব নিবন্ধে যে বিষয়টিকে তুলে ধরা হত তা হল, বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত হাযার হাযার মানুষ ভারতে প্রবেশ করছে। তারা দাবী করত যে, এর ফলে নাকি পশ্চিম বাংলা ও আসামের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা লোপ পেতে চলেছে। তাদের ভয়, এসব এলাকা নিয়ে অচিরেই আরেকটি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবী উঠবে। ভারত সরকার বাংলাদেশ ঘিরে যেভাবে কাঁটা তারের বেড়া দিচ্ছে তার কারণ তো এমন এক মুসলিম ভীতি। আদমশুমারীতে মুসলিম জনসংখ্যা কম করে দেখানোর জন্য পশ্চিম বাংলা ও আসামের বহু মুসলিমকে তারা ভারতীয় নাগরিক হিসাবে নথিভুক্তও করছে না। বলছে তারা ভারতীয় নাগরিক নয়, এসেছে বাংলাদেশ থেকে। বিজেপি, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, শিবসেনা, বজরং দলের ন্যায় উগ্র মুসলিম বিদ্বেষী দলগুলো দাবী করছে এসব মুসলমানদের সত্তর বাংলাদেশে পাঠানো হোক। অতীতে ভারত সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদের ঠেলে পাঠানোর উদ্যোগও নিয়েছিল। এটিকে তারা ‘পুশ ইন’ বলতো। কিন্তু সেটিও সফল হয়নি। দেখলাম বাংলাদেশ নিয়েও তাদের প্রচন্ড ভয়। এরশাদের সময় চীন থেকে বাংলাদেশ সরকার কয়েকখানি মিগ খরিদ করেছিল। দেখি তা নিয়ে সাপ্তাহিক ‘ইন্ডিয়া টুডে’ তে এক গুরুতর নিবদ্ধ। লেখকের মূল প্রশ্ন, বাংলাদেশের আবার মিগ কেনার কেন প্রয়োজন দেখা দিল? নিশ্চয়ই সেগুলি ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। ব্রিটিশরা যখন ভারত শাসন করতো তখন হায়দারাবাদের নিযাম ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। কিন্তু তাকে একখানি কামানও কিনতে দেয়নি। বড়জোর কিছু পুলিশ পালতে দিত। ফলে ১৯৪৭ সালে হায়দারাবাদের নিযাম যখন ভারতে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকার মনস্থ করল তখন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লব ভাই প্যাটেলকে হায়দারাবাদ দখলে কোন যুদ্ধ করতে হয়নি। যুদ্ধের ভয় দেখিয়েই মুহূর্তের মধ্যে সে রাজ্যকে তারা ভারতভুক্ত করেছিল। হায়দারাবাদের নিযামের রাজ্যের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সরকার যেমন নিজেদের পণ্য ও সৈন্য চলাচলের জন্য ইচ্ছামত রেললাইন বা ট্রানজিট গড়েছিল ভারত মূলতঃ সেটিই চাচেছ বাংলাদেশ থেকে। একাত্তরের আগে এমন দাবী তারা মুখেও আনতে পারিনি। অথচ এখন সেটি সহজেই পাচ্ছে। তাই বিপদ শুধু ভারতের মুসলমানদের জন্য নয়। মুসলমানদের শক্তিহানী করার যে প্রকল্প ভারতে দেখলাম সেটি এখন গ্রাস করছে বাংলাদেশকেও।

ফিরোজ মাহবুব কামাল

লেখক : লন্ডন প্রবাসী ডাক্তার



বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও