আসমানী সাহায্য

লতিফুল ইসলাম শিবলী, ঢাকা 626 বার পঠিত

এই জীবনে যে কয়বার অসহায় অবস্থায় সাহায্যের আশায় আসমানের দিকে তাকিয়ে তাঁর সাহায্য চেয়েছি, কোনবারই আমি নিরাশ হইনি। আমার উপন্যাস ‘আসমান’-এর সামারীতে আমি লিখেছিলাম- ‘চেনা সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, একটা অচেনা দরজা খুলে যায়’।

অবিশ্বাসীরা এই সব ঘটনাকে কাকতালীয় বললেও এসব আমার বিশ্বাসকে দিন কে দিন শক্তিশালী করেছে। আমি পাপ-পুণ্যে ভরা মানুষ, আমার প্রতি তাঁর অসীম দয়ার প্রকাশ আমাকে স্তব্ধ করে দেয়।

একটা ছোট্ট ঘটনা বলি-

একবার গভীর রাতে আমার গাড়ি রাস্তার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেল। রাত তখন প্রায় ২টা বাজে। গাড়ির বনেট খুলে আমি আমার সাধ্যমত যা যা করার সব চেক করে হতাশ হয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে আছি। এখন আমার হাতে দুইটা অপশন, হয় গাড়িটা রাস্তার মধ্যে ফেলে চলে যেতে পারি অথবা বাকি রাতটুকু গাড়িতে বসে সকালের জন্য অপেক্ষা করতে পারি।

এসব ভাবছি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছি।

ঠিক কিছু সময় পরেই একটা সাইকেল আরোহী এসে থামল  আমার গাড়ির কাছে।

জিজ্ঞেস করল- কি হয়েছে?

উটকো লোক ভেবে আমি কোন পাত্তা দিলাম না।

গাড়ির বনেটটা উঠানো ছিল তাও বললাম, ‘না ঠিক আছে কিছু হয় নি’।

লোকটা বলে- ভাই আমি ইঞ্জিন মিস্ত্রি, বলেন কি হইসে।

আমি সন্দেহ নিয়ে লোকটার দিকে ভালোভাবে লক্ষ করলাম। চেহারা-সুরত দেখে মনে হল অন্য কোন ধান্দা আছে বুঝি। তবুও তাকে বাজিয়ে দেখার জন্য বললাম- ঠিক আছে দেখ দেখি।

সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত থেকে চাবি নিয়ে দুই বার শেল্ফ মেরে বলল- প্লাগ বদলাইসেন কতদিন হল।

বল্লাম- অল্প কয়দিন হয়েছে।

সে বলল- ময়লা জমছে।

গাড়ির টুলবক্স নিয়ে ধুপধাপ করে প্লাগ খুলে পরিষ্কার করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল।

আমি অবাক বিস্ময় নিয়ে বললাম- ‘ভাই তুমি কই থেকে আসলে?

সে বলল- ‘আমার গ্যারেজ থ্যাইকা, এক স্যারের যরূরী কাজ ছিল, শেষ করতে করতে রাত হয়ে গেছে।

আমি খুশি হয়ে তাকে একটা ৫শ’ টাকার নোট এগিয়ে দিলাম। আলো-আধারীর মধ্যে আমার টাকার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে সে বলল- ‘ভাই অনেক রাত হইসে বাড়ি যান’, বলেই টাকা না নিয়ে হন হন করে সাইকেল চালিয়ে চলে গেল।

আমার ধাতস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল।

জানি এসব ঘটনার অনেক জাগতিক ব্যাখ্যা আছে। আমি সে সব কেয়ার করি না। আমি জানি এসব সাহায্য কোথা থেকে আসে। তাই চেষ্টা করি নিজেকেও কারও সাহায্যে লাগাতে।

আপনি যখন কারও বিপদে এগিয়ে যাবেন তখন আপনি আর মানুষ থাকবেন না, পরিণত হবেন ফেরেশতায়।

কারন একজন অসহায়কে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ্ আপনাকে দূত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। যেভাবে আল্লাহ্  যমীনে ফেরেশতা প্রেরণ করে থাকেন।

সুযোগ পেলে আল্লাহর দূত হওয়ার সেই সুযোগ কেউ ছেড়ে দিবেন না।

এই সব সাহায্য আপনার জীবনেই বার বার ফিরে ফিরে আসবে।



আরও