হাজরে আসওয়াদে প্রশান্তির চুমু

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 633 বার পঠিত

জীবনের বাঁকে বাঁকে চলার পথে নানা ঘটনা ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যার কিছু সুখকর কিছু হয়তো বিব্রতকর। কিছু ঘটনা কালের পরিক্রমায় স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকে। এ রকম একটি স্মৃতির অবতারণা করার জন্য কলম ধরা।

২০০৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী থেকে মারকাযের দ্বিতীয় ছাত্র হিসাবে উচ্চশিক্ষার্থে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করি। বরাবরই আমি কালসে প্রথম ছিলাম। তাই মারকাযের শিক্ষকমন্ডলীসহ সবার আশা ছিল মারকায থেকে প্রথমবার একজন ছাত্র নিলেও আমিই হব সেইজন। কিন্তু দেখা গেল, প্রথমবার সেখানে পড়ার সুযোগ পেল সহপাঠী হাফেয আব্দুল মতীন। একেই বলে ভাগ্য। যাহোক, বর্তমান মুসলিম বিশ্বে ইসলামী জ্ঞান ও সঠিক আক্বীদা চর্চার আলোকস্তম্ভ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হলাম আল-হাদীছ বিভাগে। অন্ততঃ এক বছরের জন্য আরবী ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম আরবী ভাষায় দক্ষ হওয়ার জন্য। কিন্তু ভাইভার সময় পরীক্ষকগণ সম্মত হননি। তাই হাদীছ বিভাগে ভর্তি হয়ে শুরু হল জীবনের এক নব অধ্যায়ের। ইতিমধ্যে হজ্জের সময় সমাগত হল। হজ্জ করার এক দুর্নিবার আগ্রহ মনের মধ্যে আকুলি-বিকুলি করতে লাগল। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি নিয়ে ১৪২৪ হিজরীতে হজ্জ সম্পাদনের জন্য পবিত্র মক্কায় গেলাম। কা‘বাঘর তাওয়াফ করার সময় হাজরে আসওয়াদকে চুমু খেতে হয়। তারুণ্যদীপ্ত বয়স হওয়ার কারণে আমার মনের মধ্যে প্রবল আকাঙ্খা ছিল, যেকোন মূল্যে হাজরে আসওয়াদকে চুমু খাব। হাজরে আসওয়াদ থেকে প্রায় এক হাত দূরত্বে অবস্থান করছিলাম। এইতো আর একটু পরেই তাতে চুমু খেতে পারব ভেবে মনটা আধ্যাত্মিকতার আভায় আলোকিত হয়ে উঠছিল। কিন্তু হঠাৎ ভীড়ের চাপে এক নিমিষেই সরে গেলাম হাজরে আসওয়াদ থেকে অনেক দূরে। মনটা বিষাদের কালো মেঘে ভরে গেল। এতো কাছাকাছি এসেও হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার স্বপ্নটা অধরাই রয়ে গেল। বুকের ভিতরটা কষ্টে দুমড়ে-মুচড়ে গেল। কি আর করা। ঐ যাত্রায় দূর থেকে ইশারা করে তাওয়াফ শেষ করলাম। হজ্জের কিছুদিন পর হাদীছ বিভাগ থেকে ওমরা ট্যুরের আয়োজন করা হল। বাসে চেপে রওয়ানা দিলাম মক্কাভিমুখে। পৌঁছলাম ঠিক দুপুর বেলা। প্রচন্ড রোদ ও গরম। মরু আবহাওয়ার উষ্ণতার তীব্রতায় গায়ের চামড়া জ্বলে যাওয়ার দশা। দুপুর দু’টা আড়াইটা হবে। কা‘বাঘর তাওয়াফ শুরু করলাম। তাওয়াফকারীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। এসে গেল হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেওয়ার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কোন ভীড় নেই। চাপাচাপি নেই। নেই সুঠামদেহী কৃষ্ণাঙ্গদের ঠেলাঠেলি। একেবারে নির্বিঘ্নে হাজরে আসওয়াদকে চুমু খেলাম। ফালিল্লাহ-হিল হামদ। হাজরে আসওয়াদকে প্রত্যক্ষ করলাম খুব কাছ থেকে নিবিড়ভাবে। এ আমার পরম সৌভাগ্য। কি কালো কুচকুচে পাথর! মনে পড়ে গেল রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ-‘হাজরে আসওয়াদ প্রথমে দুধ বা বরফের চেয়েও সাদা ও মসৃণ অবস্থায় জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর  আদম সন্তানের পাপ সমূহ তাকে কালো করে দেয়’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/২৫৭৭; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৭৩৩)। এভাবে হাজরে আসওয়াদকে চুমু খাওয়ার যে সুবর্ণ সুযোগ হজ্জের সময় অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল তা ওমরা করার সময় পূর্ণ হল। আজও সেই ঘটনা মনে পড়লে অন্তরে এক অজানা প্রশান্তি অনুভূত হয়। হৃদয়ে জাগে শিহরণ। আল্লাহর জন্যই কোটি কোটি শুকরিয়া, যিনি এই সুযোগ করে দিয়েছিলেন।



আরও