গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও আকৃতি

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 471 বার পঠিত

পাকিস্তান রাষ্ট্রে ইছ্লামের নির্দ্দেশিত গণতন্ত্র (Democracy) প্রতিপালিত হইবে বলিয়া পাকিস্তান গণপরিষদ ভাবী শাসনতন্ত্রের উদ্দেশ্যে প্রস্তাব স্বীকার করিয়া লইয়াছেন, কিন্তু উদ্দেশ্য-প্রস্তাবের ভিতর বা তাহার বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইছ্লামের নির্দ্দেশিত গণতন্ত্রের স্বরূপ সম্বন্ধে কোন ইঙ্গিত করা হয় নাই। বর্ত্তমান সময়ে ওয়াইন এন্ড ফুডের হোটেল, রেস্তরাঁ, বিড়িফ্যাক্টরী, সুদী লেনদেনের প্রতিষ্ঠান, নাচঘর, সিনেমা ও মিনাবাযার হইতে আরম্ভ করিয়া ন্যাশ্নালিযম ও সোশিয়ালিযম পর্য্যন্ত ‘ইছলামি’ সাইনবোর্ড ও লেবেলে সুশোভিত হইয়া উঠিয়াছে। সুতরাং ইছ্লামি ও কুফরী পান শালা, ইছ্লামি ও কুফরী বিড়ি, ইছ্লামি ও কুফরী সুদ, ইছলামি ও কুফরী নাচ, ইছ্লামি ও কুফরী ব্যভিচার, ইছ্লামি ও কুফরী ন্যাশনালিযম ও সোশিয়ালিযমের মধ্যে প্রভেদ করা যেরূপ অসম্ভব, সেইরূপ ইছ্লামি ও কুফরী গণতন্ত্রের আকৃতি ও প্রকৃতি সম্বন্ধে ধারণা সুগঠিত না হওয়া পর্য্যন্ত ইছলামি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করা কাহারো সাধ্যায়ত্ত নয়।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সুদীর্ঘ পর্য্যায়ে স্বরাজ ও স্বাধীনতার অর্থ ও তাৎপর্য্য হেঁয়ালি করিয়া রাখার বিষময় ফল স্বরূপ যে সকল অনর্থের উদ্ভব ঘটিয়াছিল, পাক-ভারতের জনমন্ডলীকে আজো তাহার প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করিতে হইতেছে। স্বাধীন দেশের শাসনতন্ত্রের মূলমন্ত্র যাহা, তাহার অর্থের অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তার কুফল অতলস্পর্শী, কারণ ইহাকেই ভিত্তি করিয়া পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়িয়া উঠিবে। জাতীয় প্রাসাদের বুনিয়াদের বক্রতা সমস্ত জাতিকে, তাহার দৃষ্টিভঙ্গী ও পরিবেশকে, তাহার বিশ্বাস ও আচরণকে অনির্দ্দিষ্ট কালের জন্য বিপথগামী করিয়া ফেলিবে। আন্দোলন বিশেষের সাময়িক ও উদ্দেশ্যমূলক অস্পষ্টতার কুফল চিরঞ্জীবী ও বুনিয়াদী প্রহেলিকার ভয়াবহ পরিণতির তুলনায় নগণ্য। সুতরাং সুস্থ ও নিরপেক্ষ মন লইয়া জাতির ভবিষ্যত চিন্তা করিয়া দেখা কর্ত্তব্য।

خشت اول چو ں نهد معمار گج + تا ثريا مى رود ديوار گج!

মুছলমানগণের একক বা দলগত ভাবে অনুষ্ঠিত কোন কার্য্য বা পোষিত কোন মতবাদের নাম ইছলামি কার্য্য বা ইছলামি মতবাদ নয়। যে আচরণ ও ধারণার পিছনে ইছলামের প্রত্যক্ষ বা গৌণ সম্মতি বিদ্যমান আছে কেবলমাত্র তাহাকেই ইছলামি কার্য্য বা মতবাদ বলিয়া গণ্য করা হইবে। যাহার পিছনে এই সম্মতি বিদ্যমান নাই, আল্লাহ না করুন, সমস্ত মুছলমান এরূপ কোন কার্য্য সমর্থন বা মতবাদ বরণ করিয়া লইলেও তাহাকে কোন প্রকারেই ইছলামি মতবাদ বা কার্য্য বলিয়া অভিহিত করা চলিবে না। অনৈছলামিক মতবাদ বা কার্য্যকে ইছলামি বলিয়া গ্রহণ করা গুরুতর অন্যায়, এই আচরণের নাম বেদ্আৎ। বিরোধী দলের অস্তিত্ব অপরিজ্ঞাত থাকিতে পারে বটে, কিন্তু সমগ্রজাতির পক্ষে কোন বেদ্আতের জন্য সম্মতি প্রদান করা অসম্ভব।

সুখের বিষয় উদ্দেশ্য প্রস্তাবের সহিত ‘ইছলামি গণতন্ত্রের’ পরিবর্ত্তে ‘ইছলামের নির্দ্দেশিত গণতন্ত্র’ স্থান লাভ করিয়াছে। রচনা কৌশলের সাহায্যে ইহা পরিষ্কার ভাবে জানা যাইতেছে যে, প্রস্তাবের খসড়া প্রস্ত্তত করার সময়ে রচয়িতা ‘গণতন্ত্র বাদ’কে ইছলামি ও অনৈছলামিক শ্রেণীতে ভাগ করিয়া ফেলিয়াছিলেন। অর্থাৎ যে গণতন্ত্র ইছলাম কর্ত্তৃক নির্দ্দেশিত হয় নাই, তাহা অনৈছলামিক গণতন্ত্র এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রে তাহা প্রতিপালিত হইবে না। কিন্তু তথাপি আমরা ‘ইছলামের নির্দ্দেশিত গণতন্ত্রে’র সার্থকতা যে বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না, তাহা অকুণ্ঠভাবেই স্বীকার করিয়া লইতেছি।

ইছলামি রিয়াছতে (Islamic state) ইছলাম প্রতিপালিত হওয়ার কার্য্যকেই আমরা আবশ্যক ও যথেষ্ট মনে করি। ইছ্লামের মধ্য গণতান্ত্রিক যদি কোন ইঙ্গিত থাকে তজ্জন্য ‘গণতান্ত্রিক ইছলাম’ (Democratic Islam) নামে কোন বস্ত্ত পরিকল্পিত হইতে পারে না। রাজতন্ত্রের (Mona rchical state) ভিতরও যে গণতান্ত্রিক রীতি পাওয়া যাইতে পারে, রাজনীতি বিশারদগণ তাহা অস্বীকার করেন নাই। The limited monarchical state is infact a democratic or aristocratic state having a constitutional government in which the executive power is vested in a monarch যে রাজতন্ত্রের শাসন-পদ্ধতি নিয়মতান্ত্রিক, তাহা প্রকৃত প্রস্তাবে গণতন্ত্রের নামান্তর মাত্র; এইরূপ সীমাবদ্ধ রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসনক্ষমতা রাজার হস্তে জনবৃন্দের পক্ষ হইতে অর্পণ করা হয়।[1] কিন্তু তাই বলিয়া কোন রাজতন্ত্রই গণতন্ত্রের আখ্যা লাভ করিতে পারে না। ইছ্লামে গণতন্ত্রের আংশিক রূপ ও মন যে বিদ্যমান আছে তাহা আধুনিক বা তৎকালীন প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের সৃষ্টি নয়, ইছ্লামের নিজস্ব বৈশিষ্ট দ্বারাই তাহা সূচিত হইয়াছে।

দুনিয়ার বাযারে গণতন্ত্রের যে বেসাতির তেজারৎ চলিতেছে ইছলামের সহিত তাহার আপোষহীন বৈষম্যের জন্য তাহাকে ইছলামি মার্কা দিয়া স্বতন্ত্র করিয়া দেখাইবার প্রয়োজন উদ্দেশ্য প্রস্তাবের রচয়িতাগণ বোধ করিয়া থাকিলে, সেরূপ গণতন্ত্রকে টানিয়া হেঁচড়াইয়া শুদ্ধি করাইবার আবশ্যকতা কি ছিল? প্রকৃত প্রস্তাবে রাষ্ট্রসমূহ কেবল গণতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, পুরোহিততন্ত্র ও রাজতন্ত্রে বিভক্ত নয়, পঞ্চমশ্রেণীর আর এক প্রকার রাষ্ট্র আছে যাহার নাম ইছ্লামি রাষ্ট্র। ইছলামি রিয়াছৎ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন, উহা রাজতান্ত্রিক সামন্ততান্ত্রিক ও পুরোহিততান্ত্রিকও নয়, এই পঞ্চবিধ রাষ্ট্রের অমিশ্রযোগের প্রচেষ্টা নিরর্থক। বক্ষ্যমান নিবন্ধে ইহাই আলোচ্য।

(ক) রিয়াছতের (state) সাবর্বভৌম অধিকার (sovereign power) যাহাদের হাতে ন্যাস্ত, তাহাদের সংখ্যানুপাতের উপর গণতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের পার্থক্য নির্ভর করে। যে স্টেট রাজতন্ত্র Monarch নামে অভিহিত তাহা মাত্র এক ব্যক্তির ইচ্ছায় আর সামন্ত্রতন্ত্র Aristocracy অল্প সংখ্যক লোকের ইচ্ছায় পরিচালিত হয়। a democracy is a state in which the exercise of sovereignty rests with the mass of the population. যে রাষ্ট্রে সাবর্বভৌম অধিকার পরিচালনা করার কার্য্য রাষ্ট্রের অধিবাসী জনবৃন্দের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে তাহা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র (Democracy) নামে অভিহিত। ইহাই গণতন্ত্রের জনক এরিস্টটল, সিসেরো ও পলিবিয়স কর্ত্তৃক প্রদত্ত ত্রিবিধ রাষ্ট্রের ব্যাখ্যা।[2]

(খ) গণতন্ত্র শুধু সাবর্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়, তাহার পক্ষে স্বয়ংসিদ্ধ ও সবর্বশক্তিমান হওয়াও আবশ্যক। Among the characteristics of sovereignty is the quality of absolution. সাবর্বভৌম অধিকারের অন্যতম বৈশিষ্ট সবর্বশক্তিমানত্বের গুণে গুণান্বিত হওয়া। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিহত করিতে পারে এমন শক্তি থাকিতে পারে না এবং Sovereignty cannot be limited; it is an original not a derived power. As it is the Supreme power in the state, there cannot be any authority above it. and to speak of it as being limited by some higher power is a contradiction of term. Sovereignty can be bound only by its own will, that is, it can only be self-limited.

‘তাহাদের সার্বভৌম প্রভুত্ব সীমাহীন, অনন্ত ও মৌলিক, অন্যের নিকট হইতে পরিগৃহীত নয়। রাষ্ট্রের অধিনায়কগণ উচ্চতম শক্তির আধার বলিয়া তাহাদের উর্দ্ধতন কোন প্রধান্য থাকিতে পারে না; কোন উর্দ্ধতন কর্ত্তৃপক্ষ দ্বারা রাষ্ট্রের অবাধ ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করার কথা ‘গণতন্ত্র’ সংজ্ঞার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ। সাবর্বভৌমিকত্ব শুধু আপন ইচ্ছার কাছে আবদ্ধ থাকিবে অর্থাৎ উহা কেবল মাত্র নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ’।[3] 

(গ) সংখ্যাগরিষ্ঠ (Majority) দের প্রতিষ্ঠিত বিধান অনুসারে প্রত্যক্ষ ও ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত নাগরিক জনসাধারণের শাসন (Government) কে Thomas Jefferson গণতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতি বলিয়াছেন।[4] 

Hamilton এর উক্তি অনুসারে যে স্থলে ক্ষমতা জনসাধারণের হস্তে আছে এবং তাহারাই উক্ত ক্ষমতা তাহাদের প্রতিনিধিবর্গের সাহায্যে মধ্যস্থ ভাবে বা প্রত্যক্ষরূপে পরিচালিত করিতেছে এইরূপ শাসন ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক গভর্ণমেন্ট বলে।[5]

(২)

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট হইতেছে, তাহার জনসংখ্যা। কিন্তু ইছলামি স্টেটের জন্য জনসংখ্যার কোনই মূল্য স্বীকৃত হয় নাই। দ্বিতীয় শতকের শ্রেষ্ঠতম ফকিহ ও ব্যবহারশাস্ত্রবিদ (jurist) ইমাম আবুহানিফা (রহঃ) ইছ্লামি স্টেটের নিন্ম লিখিত সংজ্ঞা করিয়াছেন :- ان نواحي دار السلام تحت يد امام المسلمين ويده يد جماعة المسلمين-ইছলামি রাষ্ট্রের সমুদয় ভুভাগের তাবৎ অংশ মুছলিম জনমন্ডলীর একচ্ছত্র নেতার অধিকারভুক্ত থাকা আবশ্যক এবং তাঁহার ক্ষমতা মুছলিম জনমন্ডলীর ক্ষমতার নামান্তর মাত্র।[6] কাযী আবু ইউছুফ ও মোহাম্মদ বিনুল হাছান ইমামের উক্তির তাৎপর্য্যকে স্পষ্টতর করিয়া বলিয়াছেন যে, الدار انما ةنسب الى اهلها لثبرة يدهم القاهرة عليها وقيام ولا يةهم المحافظة- কোন ভুখন্ড ইছলামি রাষ্ট্র কিনা, তাহা পরীক্ষা করার উপায় এই যে, ইহা দর্শন করিতে হইবে, তথায় প্রভুত্ব ও অভিভাবকত্ব কাহাদের হস্তে রহিয়াছে? ইছলামি স্টেটের জন্য জনসংখ্যা দ্রষ্টব্য নয়। অর্থাৎ যে ভূখন্ডের উপর মুছলমানগণ প্রভুত্ব করিতেছেন এবং দেশ ও জনমন্ডলীর ধনপ্রাণ সুরক্ষিত করার দায়িত্ব তাহাদের হস্তে ন্যস্ত রহিয়াছে সেই দেশ ইছলামি রাজ্য বলিয়া স্বীকৃত হইবে।[7] 

উল্লিখিত ব্যাখ্যার উদ্দেশ্য এই যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র জনসংখ্যার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। তাহার সহিত আদর্শবাদের (Ideology) কোন সম্পর্ক নাই। পক্ষান্তরে ইছ্লামি রিয়াছাৎ আদর্শবাদের উপর স্থাপিত উহা Ideological state, জনসংখ্যার সহিত তাহার কোন সম্বন্ধ নাই। ফলে গণতন্ত্রে শ্রেণী ও দলের যেমন প্রাচুর্য্য দেখিতে পাওয়া যায়, ইছ্লামি রাষ্ট্রে সেরূপ বিভিন্ন শ্রেণী (class) ও দলের (party) অস্তিত্ব থাকিতে পারেনা।

পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণবৃত্তি আমাদের মানসলোক এতদূর বিকৃত করিয়া ফেলিয়াছে যে, অদলীয় শাসনরীতির (No Party system) কথা আমরা কল্পনা করিতে চাইনা, কিন্তু রাষ্ট্রের ভিতর নানাদলের অস্তিত্ব ও তাহাদের পরস্পর বিরোধী কর্ম্মসূচির (Programme) দরূণ অধিকার ও ক্ষমতালাভের যে অপরিসীম দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম আরম্ভ হইয়া যায় এবং বর্ত্তমান গণতন্ত্রের যাহা অনিবার্য্য শোচনীয় পরিণতি তাহা কাহারো পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভবপর নয়। গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য যাহা, আজ কোন স্থানেই তাহা অন্বেষণ করিয়া পাওয়া যাইবে না। শ্রেণী প্রাধান্য, সামাজিক সুবিধা ভোগ বস্ত্ততান্ত্রিক স্বার্থ গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদানে পরিণত হইয়াছে। রাজনৈতিক প্রাধান্যের সাহায্যে প্রত্যেক দল উল্লিখিত বিষয়গুলি হস্তগত করিতে সমুদয় গণতন্ত্র বদ্ধপরিকর। ইউরোপ ও আমেরিকার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ প্রচলিত গণতন্ত্রের বিষময় ফলের কথা ক্রমশঃ স্বীকার করিয়া লইতেছেন।

একদলীয় শাসনপদ্ধতি (One party system)ও ইছলামি রুচির অনুকূল নয়। একদলীয় শাসনের কথা বলিতে অন্তর্নিহিত বিরুদ্ধ দলের অস্তিত্ব অস্বীকৃত হয় না, বলপ্রয়োগের সাহায্যে তাহাদিগকে দমন করিয়া রাখা হয় মাত্র। সংখ্যাগরিষ্ঠের দল গণতন্ত্রের দোহাই দিয়া সংখ্যালঘিষ্টদের উপর যবরদস্তি ও স্বেচ্ছাচারমূলক শাসন চালাইতে থাকে। ন্যায়-অন্যায় নিবির্বচারে একদলীয় শাসন প্রতিপক্ষের সমুদয় অধিকার ও দাবী পদদলিত করে। স্বীয় ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের অনুকূলে তাহারা আইন প্রস্ত্তত করে এবং পরিশেষে তাহাই রাষ্ট্রের আইন (State Law) রূপে পরিচিত হইয়া উঠে। এক দলীয় শাসনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি স্বরূপ গুরুতর অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ভয়াবহ সামাজিক অসামঞ্জস্য আত্মপ্রকাশ করে। একদলীয় স্বেচ্ছাচার (Absolution) স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের স্থান অধিকার করিয়া বসে এবং সাম্রাজ্য নীতির গোটা দেহে (Body Potitics) ঘুণ ধরাইয়া দেয়।

(৩)

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট তাহার চরম প্রভুত্বের দাবী (Paramountcy) এবং সাবর্বভৌম অধিকার (sovereign power), তাহার প্রভুত্ব মৌলিক (Original) এবং অসীম (Unlimited)। যে রাষ্ট্রে এই চারটি গুণের অভাব আছে, তাহা গণতন্ত্র পদবাচ্য নয়। ইছলামি রাষ্ট্রের চরম প্রভুত্ব এবং সাবর্বভৌম অধিকার আললাহর জন্য নির্দিষ্ট। আল্লাহর চরম প্রভুত্ব ও সাবর্বভৌম অধিকার যাহারা মান্য করিয়া লইয়াছে, তাহারা ইছলামি স্টেটের নাগরিক। আল্লাহকে প্রভু মান্য করার যে বিশ্বাস, সেই বিশ্বাস পোষণ না করা পর্য্যন্ত কেহ মুছলমান বলিয়া গণ্য হইতে পারে না। ধর্মহীন (লা-দিনি) স্টেটের কর্ত্তৃপক্ষরা আল্লাহর পরিবর্ত্তে স্বয়ং চরম প্রভুত্বের দাবী করিয়া থাকে। ফির্আউন পরিষ্কার ভাবে ঘোষণা করিয়া ছিল- فَقَالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى আমিই তোমাদের সবর্বাপেক্ষা উর্দ্ধতন প্রভূ (Supreme authority) ৭১:২৪।

ফির্আউন পরিষদবর্গকে ডাকিয়া বলিল-يَاأَيُّهَا الْمَلَأُ مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرِي ‘হে নেতৃমন্ডলী, আমি ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন প্রভুকে আমি চিনি না’ (২৮ : ৩৮)। যে সকল ব্যক্তি তাহার চরম প্রভুত্বের দাবীকে অস্বীকার করিয়া আল্লাহকে পরম প্রভুরূপে মান্য করিতে চাহিয়াছিল, তাহাদিগকে সে কারারুদ্ধ করার ভয় প্রদর্শন করিয়াছিল। মুছা আলায়হিছ্ ছালামকে তাঁহার এই অপরাধের জন্যই সে জেলে পুরিতে চাহিয়াছিলلَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَهًا غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ (২৬ : ২৯)।

কালেডিয়ার সম্রাট যে সাবর্বভৌম অধিকার দাবী করিয়াছিল, ইব্রাহিম আলায়হিছ্ছালাম তাহার সেই মিথ্যা দাবীর বিরুদ্ধেই দন্ডায়মান হইয়াছিলেন। কোর্আনে সংক্ষিপ্ত ভাবে এই ঘটনা উল্লিখিত হইয়াছে।أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ أَنْ آتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ হে রছূল (দঃ)! আপনি কি সেই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করেন নাই, যে ইব্রাহিমের (দঃ) সহিত বিতর্কে প্রবৃত্ত হইয়াছিল। তাহার দুঃসাহসিকতার কারণ শুধু এই যে, আল্লাহ তাহাকে শাসন-ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান করিয়াছিলেন (২ : ৩৫)। বাবিলোনিয়া ও মিছরের অধিপতিরা দ্বিবিধ প্রভুত্ব দাবী করিয়াছিল- অন্নদাতারূপী প্রভুত্ব (رب) এবং পূজা ও অনুগত্যের অধিকারী প্রভুত্ব (اله)। তাহাদের দাবীর সারাংশ ছিল এই যে, কেবল তাহাদিগকেই সাবর্বভৌম শক্তির আধার বিবেচনা করিয়া তাহাদের পরিকল্পিত সমুদয় বিধান স্টেটের নাগরিকদের পক্ষে অবশ্য প্রতিপালনীয় বিবেচনা করিতে হইবে। ইবরাহিম, মুছা ও মোহাম্মদ আলায়হিমুছ্ছালাম অরাজকতা (Anarchism) প্রচার করিবার জন্য পৃথিবীতে আগমন করেন নাই, তাঁহারা মানুষের এবং সকল প্রকার শাসনতন্ত্রের সাবর্বভৌম অধিকার এবং চরম প্রভুত্বের অবসান ঘটাইয়া বিশ্বপতি রাববুল আলামিন এবং রাজরাজ্যেশ্বর মালেকুল্ মুলক আল্লাহর সাবর্বভৌম অধিকার এবং চরম প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করিতে আসিয়াছিলেন। রাজতন্ত্রই হউক আর পুরোহিততন্ত্র, সামন্ততন্ত্রই হউক আর গণতন্ত্র, যে স্টেটের নাগরিকগণ বা তাহাদের সমষ্টির প্রতীক এক বা একাধিক উর্দ্ধতন কর্ত্তৃপক্ষ চরম প্রভুত্ব ও সাবর্বভৌম প্রাধান্যের দাবী করিবে, তাহারা সকলেই নমরূদ ও ফির্আওনের দোসর।

আল্লাহকে শুধু প্রতিপালক ও উপাস্য বলিয়া মান্য করা যথেষ্ট নয়, আল্লাহকে ‘মালেকুল মুল্ক’- রাজরাজ্যেশ্বর ও রাজ্যাধিপতি অর্থাৎ স্টেটের (Supreme authority) বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে [কোরআন :- (৩) ২৫; (১৭) : ১১১; (৯৭) ১]। আল্লাহর প্রভুত্ব কল্পিত রাজের জন্য মানিয়া লইলে চলিবে না এবং তাঁহার রবুবিয়ৎ ও মালেকিয়তের আকিদা প্রাসঙ্গিকভাবে উচ্চারণ করিলে যথেষ্ট হইবে না। কোরআনের পরিষ্কার ঘোষণা যে, ভূমির প্রকৃত মালিকানা, সত্ত্ব ও অধিকার আল্লাহর জন্য নির্দ্দিষ্ট;إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ-। মানুষের অধিকার মৌলিক (Original) ও সীমাহীন (Unlimited) নয়, তাহার কাছে ক্ষমতা ও অধিকার হস্তান্তরিত (Delegated) হইয়াছে মাত্র (৭: ১২৮) আল্লাহ তদীয় রছুল (দঃ) কে আদেশ করিয়াছেন যে, قُلْ لِمَنِ الْأَرْضُ وَمَنْ فِيهَا إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ- سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ- আপনি সন্দেহবাদীদিগকে জিজ্ঞাসা করুন :- মৃত্তিকা ও মৃত্তিকার উপরি ভাগে যাহা কিছু আছে তৎসমুদয়ের অধিপতি কে? বল যদি তোমরা অবগত থাক। তাহারা বলিবে, সমস্ত বস্ত্তর অধিকার আল্লাহর জন্য। আপনি বলুন, তবে কেন চিন্তা করিয়া দেখিতেছ না? (২৩ : ৮৪-৮৫)।

‘জিজ্ঞাসা করুন, সপ্ত আকাশের প্রভুকে? তাহারা বলিবে, সমস্তের প্রভুত্ব আল্লাহর জন্য, বলুন তবে কেন তোমরা সাবধান হও না? জিজ্ঞাসা করুন কাহার সাবর্বভৌম ক্ষমতার অধীনে সকল জিনিস রহিয়াছে? তিনি কে যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁহার প্রতিকূলে কোন আশ্রয় পাওয়া যায় না? তাহার তৎক্ষণাৎ বলিবে সমস্তই আল্লাহর জন্য, বলুন, তবে কোন্ মন্ত্রে মুগ্ধ হইতেছ?’ (২৩: ৮৬ ও ৮৭)।

ইছলামি রিয়াছতের এই নীতিগত বৈশিষ্ট উদ্দেশ্য প্রস্তাবে স্বীকৃত হইয়াছে। আল্লাহর চরম প্রভুত্ব ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে ইহা মানিয়া লওয়া হইয়াছে যে, আল্লাহ সুনির্দ্ধারিত সীমারেখার ভিতর কর্ত্তৃত্ব করার অধিকার পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তরিত করিয়াছেন। এই ঘোষণার তাৎপর্য্যানুসারে পাকিস্তান রাষ্ট্র সাবর্বভৌম শক্তির (sovereignty) সঙ্গে সঙ্গে সবর্বশক্তিমানত্বের (Absolutism) অধিকার যেমন অস্বীকার করিয়াছে, তেমনি অসীম ও মৌলিক প্রভুত্বের দাবীও পরিহার করিয়াছে। যে জনপদের অধিবাসীবৃন্দ আল্লাহর চরম প্রভুত্ব এবং তাঁহার সাবর্বভৌম প্রাধান্য মান্য করিয়াছে, তাহা ইছলামি স্টেট গণতন্ত্র নয়। এই রিয়াছতের নাগরিকগণ আইনের কোন মৌলিক সুত্র রচনা করার অধিকারী নহেন, আল্লাহর মৌলিক প্রভুত্ব মান্য করিয়া লওয়ার দরুণ তাঁহার নির্দ্দেশ সমূহ বলবৎ করার ক্ষমতা পাকিস্তানের নাগরিক অথবা তাহাদের প্রতিনিধিবর্গের নিকট হস্তান্তরিত করা হইয়াছে মাত্র। এরূপ রিয়াছতে কোন দল থাকিতে পারে না, ব্যক্তিগত ও দলগত মতের প্রতিষ্ঠা ও স্বার্থোদ্ধারের এখানে স্থান নাই। এই রাষ্ট্রের নাগরিকগণের সম্মিলিত কর্ত্তব্য স্থান ও প্রয়োজন অনুসারে ইছ্লামি আইনের ব্যাপক সূত্রাবলীকে সীমাবদ্ধ রূপ প্রদান করা।

(৪)

ইছলামি রাষ্ট্রের দলহীন সমাজের নাম জামাআৎ। রছূলুল্লাহ (দঃ) ইছলামি জামাআতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলিয়াছেন,مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِى تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى- ‘প্রীতি দয়া ও সহানুভূতির দিক দিয়া ইছলামি জামাআৎ একটি দেহের ন্যায়। শরীরের একটি অঙ্গ পীড়িত হইলে সমস্ত দেহ তার জন্য বিনিদ্র ও জরাক্রান্ত হইয়া উঠে’।[8]

জামাআতের ব্যাখ্যা স্বরূপ রছূলুল্লাহ (দঃ) আরো বলিয়াছেন যে,إِنَّ الْمُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا وَشَبَّكَ أَصَابِعَهُ- ‘একজন অন্য মুছলমানের জন্য প্রাচীরের ইষ্টকরাজী সদৃশ, যাহা পরস্পর দৃঢ় ভাবে গ্রথিত রহিয়াছে। এই কথা বলার পর রছুলুল্লাহ (দঃ) দুই হাতের আঙ্গুলগুলি পরস্পরের ভিতর ঢুকাইয়া দিলেন’।[9] অধিকতর স্পষ্টভাবে রছুলুল্লাহ (দঃ) ইছলামি জামাআতের স্বরূপ বর্ণনা করিয়াছেন- হযরত (দঃ) বলিয়াছেন :الْمُسْلِمُونَ تَتَكَافَأُ دِمَاؤُهُمْ يَسْعَى بِذِمَّتِهِمْ أَدْنَاهُمْ وَيُجِيرُ عَلَيْهِمْ أَقْصَاهُمْ وَهُمْ يَدٌ عَلَى مَنْ سِوَاهُمْ ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, বয়ষ্ক, শিশু, নর, নারী, দাসদাসী, কুলীন ও অকুলীন নিবির্বশেষে সমস্ত মুছলমানের রক্তের মূল্য সমান, ক্ষুদ্রতম মুছলমানের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি সমগ্র জাতির পক্ষে প্রতিপালনীয়। শত্রুদলের জন্য তাহারা সম্মিলিত ভাবে একটি হস্তের ন্যায়।[10]

ইছলামি জামাআতের অন্তর্গত প্রত্যেকের রক্ত, ধন ও সম্ভ্রমকে অপরের জন্য মক্কা নগরীর মত এবং হজের দিবসের ন্যায় মহাপবিত্র বলিয়া রছুলুল্লাহ (দঃ) তাঁহার বিদায় হজের ঘোষণায় (charter) প্রচারিত করিয়াছেন ইহাদের পবিত্রতাকে নষ্ট করা মক্কার পবিত্রতাকে নষ্ট করার সমতুল্য।[11]

ইছলামি জামাআতের যে স্বরূপ ও ব্যাখ্যা রছুলুল্লাহর (দঃ) পবিত্র মুখে উচ্চারিত হইয়াছে তাহার মধ্যে শ্রেণী ও দলের কোন অস্তিত্ব থাকিতে পারে না। ইছলামি জামাআৎকে বিভক্ত করা এবং বিভিন্ন দলে ভাগ হওয়ার কার্য্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শ্রেণী স্বার্থ ও দলীয় সংগ্রামের কোন ইঙ্গিত ইছলামি রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে নাই, ওগুলি জাহেলি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট। তাহাদের নাম গনতন্ত্র রাখা হউক অথবা অন্য কোন নামে তাহাদের আখ্যায়িত করা হউক, ইছলামের সহিত তাহাদের কোন সম্পর্ক নাই। বুখারী ও মুছলিম আবদুল্লাহ বিন আববাছের (রাযিঃ) বাচনিক রেওয়ায়ৎ করিয়াছেন যে, রছুলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন : ‘যে ব্যক্তি জামাআৎ হইতে বিঘৎ পরিমাণ দূরে সরিয়া যাইবে, যদি সেই অবস্থায় তাহার মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে সে মৃত্যু অনৈছলামিক মৃত্যু হইবে’।

কিন্তু শুধু সদুপদেশ দ্বারা এবং কোর্আন ও হাদিছের নির্দ্দেশ বর্ণনা করিয়া ইছলামি জামাআৎ গঠিত হইতে পারিবে না। ইছলামের রুহ এবং ইছলামি পরিবেশ হইতে সুদীর্ঘ দুই শতাব্দী ধরিয়া বঞ্চিত ও বিচ্ছিন্ন হইয়া থাকার দরুণ যে সকল মানসিক, নৈতিক সামাজিক, আর্থিক ও ধর্মীয় অসামঞ্জস্য পুঞ্জীভূত হইয়া উঠিয়াছে, সমাজ জীবনকে সেই সকল আবিলতার অভিশাপ হইতে মুক্ত ও পবিত্র করিয়া নূতন ভাবে ইছলামি পরিবেশ সৃষ্টি না করা পর্য্যন্ত প্রকৃত ইছলামি জামাআৎ পুনর্গঠিত হওয়া সুদূর পরাহত, অথচ ইছলামি রিয়াছতের বৈশিষ্ট ইছলামি জামাআতের উপরেই পূর্ণভাবে নির্ভর করিতেছে।

ইছলামি রাষ্ট্রে ব্যক্তিগত অধিকারের মর্যাদা কতখানি এবং আল্লাহর প্রদত্ত সীমাবদ্ধ ক্ষমতা কিভাবে হস্তান্তরিত হইয়াছে স্বতন্ত্র প্রবন্ধে সে সকল কথা আলোচনা করার ইচ্ছা আছে।

-মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী

গৃহীত : তর্জুমানুল হাদীছ, ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, নভেম্বর ১৯৪৯ ইং; ছফর ১৩৬৯ হিঃ।

[1]. Political Science, p. p. 127.

[2]. Aristotle: politics,III 7; Ethics VIII 12; 

Cirero: De Republica I 26; Polybius: History of Rome, VI 3

[3]. Political Science. P. P. 250, 251.

[4]. Works, Vol X, P. P. 28.

[5]. Federalist No 9.

[6]. : الـمبسوط للسرخسي (১০) ৯৩ পৃঃ।

[7]. : الـمبسوط للسرخسي ১০/৯৩ পৃ.।

[8]. বুখারী হা/৬০১১; মুসলিম হা/২৫৮৬।

[9]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯৫৫।

[10]. আবূদাঊদ হা/২৭৫১, সনদ হাসান ছহীহ।

[11]. বুখারী হা/১৭৪২; মিশকাত হা/২৬৭০।



বিষয়সমূহ: রাজনীতি
আরও