শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ

ড. নূরুল ইসলাম 9885 বার পঠিত

শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ (৮৫) একজন খ্যাতনামা সঊদী বংশদ্ভূত মুহাদ্দিছ। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। এক সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রো-ভিসি হিসাবেও তিনি সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি ১৪০৬ হিজরী থেকে মসজিদে নববীতে হাদীছ, আক্বীদা ও অন্যান্য গ্রন্থের দারস দিয়ে আসছেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও শেষ বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারানো এই অশীতিপর মুহাদ্দিছের তাদরীসী খেদমত এখনো জারী আছে। বর্তমানে অদ্যাবধি তিনি মসজিদে নববীতে ছহীহ বুখারীর দারস দিয়ে যাচ্ছেন। নিম্নে তাঁর জীবন ও কর্ম আলোচিত হল।-

জন্ম :

শায়খ আব্দুল মুহসিন বিন হামাদ বিন আব্দুল মুহসিন বিন আব্দুল্ল­াহ বিন হামাদ বিন উছমান আলে বদর ১৩৫৩ হিঃ/ ১৯৩৪ সালের রামাযান মাসে এশার ছালাতের পর রিয়াদের উত্তরে অবস্থিত আয-যুলফী নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। শায়খ আব্দুল মুহসিনের দ্বিতীয় দাদা আব্দুল্ল­াহর উপাধি ছিল আববাদ। সেকারণ তঁার নামের শেষে আল-আববাদ উপাধি যুক্ত হয়েছে। তাঁর বংশ আলে বদর আদনানী গোত্র সমূহের অন্যতম আনাযাহ গোত্রের আলে জাল্লাস বংশোদ্ভূত।

প্রাথমিক শিক্ষা :

যুলফীতে আব্দুল মুহসিনের শৈশব কাটে। সেখানকার মক্তবে তঁার শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। ১৩৬৮ হিজরীতে যুলফীতে সর্বপ্রথম ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৩৭১ হিজরীতে তিনি ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপ্ত করেন। যুলফীতে যেসব শিক্ষকের কাছে তিনি বিদ্যার্জন করেন তঁারা হলেন, শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আল-মানী, শায়খ যায়েদ বিন মুহাম্মাদ আল-মুনায়ফী, শায়খ আব্দুল্ল­াহ বিন আব্দুর রহমান আল-গায়েছ ও শায়খ ফালিহ বিন মুহাম্মাদ আর-রূমী।

উচ্চশিক্ষা :

নিজ শহরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি রিয়াদে যান এবং ‘মা‘হাদুর রিয়াদ আল-ইলমী’তে ভর্তি হন। এ বছরই শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্ল­াহ বিন বায খারজ থেকে রিয়াদে আসেন এবং এখানে প্রথম বর্ষে পাঠদান করেন। অতঃপর তিনি রিয়াদের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী‘আহ অনুষদে ভর্তি হন। এখানে শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৩৭৯ হিজরীতে ‘মা‘হাদু বুরায়দা আল-ইলমী’তে শিক্ষক নিযুক্ত হন। শিক্ষাবর্ষের শেষের দিকে তিনি রিয়াদে ফিরে এসে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ৮০ জন ছাত্রের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন মসজিদে বড় বড় শায়খের দারসে অংশগ্রহণ করে ইলমী তারাক্কী অর্জন করেন। তঁার শিক্ষকগণের মধ্যে উল্লে­খযোগ্য হলেন, ১. প্রথম সউদী গ্র্যান্ড মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে শায়খ ২. সাবেক গ্রান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্ল­াহ বিন বায ৩. শায়খ মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানকীতী ৪. শায়খ আব্দুর রহমান আফ্রীকী ৫. শায়খ আব্দুর রায্যাক আফীফী। ৬. শায়খ আব্দুল্লাহ ছালেহ আল-খুলায়ফী। শায়খ আব্দুর রহমান আফ্রীকীর কাছে তিনি ১৩৭২ হিজরীতে রিয়াদে হাদীছ ও মুছতালাহুল হাদীছ অধ্যয়ন করেন। শায়খ আববাদ তাঁর সম্পর্কে বলেন, كان مدرساً ناصحاً وعالماً كبيراً، وموجّهاً ومرشداً وقدوة في الخير رحمه الله تعالى  ‘তিনি হিতাকাঙ্ক্ষী শিক্ষক, একজন বড় আলেম, নির্দেশক, গাইড এবং সৎকাজের আদর্শ ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তঁার উপর রহম করুন।[1]

শায়খ বিন বায (রহঃ)-এর সাথেও তঁার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৩৭২ হিজরীতে তঁার সাথে শায়খ আববাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। ৪র্থ বর্ষে শরী‘আহ অনুষদে তিনি তঁার কাছে নিয়মতান্ত্রিক পাঠ গ্রহণ করেন। পাঠের বিরতির সময় এবং মসজিদে তাঁর সাথে শায়খ আববাদের বেশীর ভাগ যোগাযোগ হ’ত। তিনি বাড়িতেও তঁার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তিনি সবমিলিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর তঁার সাহচর্য লাভ করেন।

মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন :

১৩৮০ হিজরীতে শায়খ আববাদ পুনরায় ‘মা‘হাদুর রিয়াদ আল-ইলমী’তে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৩৮১ হিজরীতে (১৯৬২ খ্রি.) মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি শরী‘আহ অনুষদে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনিই প্রথম মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের শুভ সূচনা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৩৯৩ হিজরী পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৩৯৩ হিজরীতে তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি নিযুক্ত হন। বাদশাহ ফয়ছাল (রহ.) তাঁকে এই পদে মনোনায়ন দিয়েছিলেন। ১৩৯৯ হিজরী পর্যন্ত মোট ৬ বছর তিনি এ গুরুদায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। তন্মধ্যে প্রথম দুই বছর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় দায়িত্বশীল ছিলেন। শায়খ বিন বায সঊদী কেন্দ্রীয় দারুল ইফতার প্রেসিডেন্ট মনোনীত হওয়ার পর রিয়াদে চলে গেলে   শেষ চার বছর তিনি প্রথম দায়িত্বশীল ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বড় দায়িত্ব পালন করেও তিনি শরী‘আহ অনুষদের ৪র্থ বর্ষে সাপ্তাহিক দু’টি ক্লাস নিতেন। তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর থাকাকালে হাদীছ ও সালাফী আক্বীদার প্রায় পঁাচ হাযার পান্ডুলিপি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফটোকপি করে আনা হয়। শায়খ হাম্মাদ আল-আনছারী বলেন, সালাফে ছালেহীনের যেসব গ্রন্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ফটোকপি করা হয় তঁার অধিকাংশই শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকাকালে করা হয়েছিল। তঁার আমলে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। মাস্টার্স ও পিএইচ.ডি প্রোগ্রাম চালু করা হয়। আল-কুরআন, আল-হাদীছ এবং আরবী ভাষা অনুষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ২০ হাযার ছাত্রের অধ্যয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির পরিধি বাড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেসও তঁার আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্যই মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক প্রফেসর শায়খ হাম্মাদ আল-আনছারী যথার্থই বলেছেন, الجامعة الإسلامية هي جامعة العباد والزايد والشيخ بن باز ‘মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শায়খ আল-আববাদ, (ড. আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ) আয-যায়েদ ও শায়খ ইবনে বায-এর বিশ্ববিদ্যালয়’।[2]

মসজিদে নববীতে দারস প্রদান :

১৪০৬ হিজরীতে তিনি মসজিদে নববীতে দারস প্রদান শুরু করেন। বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন তিনি অদ্যাবধি  নিয়মিত এখানে দারস প্রদান করে আসছেন। এখানে তিনি ছহীহ বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মুছতালাহুল হাদীছ ও আক্বীদার বিভিন্ন কিতাবের দারস প্রদান করছেন। উক্ত দারসে তিনি কুতুবে সিত্তাহর ব্যাখ্যা সমাপ্ত করেন। মসজিদে নববীতে তঁার প্রদানকৃত আবূদাউদের দারসটি শারহু সুনানে আবূদাঊদ শিরোনামে মাকতাবা শামেলায় যুক্ত হয়েছে। এটি অত্যন্ত উপকারী একটি শরাহ। বর্তমানে তিনি পুনরায় সেখানে ছহীহ বুখারীর দারস দিচ্ছেন। হাদীছে নববী পাঠদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তঁাকে ১৪৩৬ হিজরীতে রিয়াদে ‘আমীর নায়েফ বিন আব্দুল আযীয আলে সঊদ আত-তাক্বদীরিয়াহ লি-খিদমাতিস সুন্নাহ আন-নাবাবিয়্যাহ’ শীর্ষক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পুরস্কারের সমুদয় অর্থ তিনি দুই হাযারের অধিক দরিদ্র ছাত্রের মাঝে দান করে দেন। 

শায়খের দারসের স্মৃতিচারণ :

আমি (এই নিবন্ধের লেখক) ২০০৩-২০০৪ সালে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বাদ মাগরিব মসজিদে নববীতে শায়খের তিরমিযীর দারসে বসতাম। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মন্ডলী ছাড়াও শত শত জ্ঞানপিপাসু ছাত্র তাঁর দারসে বসত। অন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করে হাদীছের ব্যাখ্যা করতেন। সনদ ও মতন সম্পর্কে যে কোন প্রশ্নের উত্তর তাৎক্ষণিক প্রদান করতেন। রাবীদের পরিচয়ও তিনি মুখস্থ বলতেন। তাঁর বিস্ময়জাগানিয়া স্মৃতিশক্তি দেখে আমি রীতিমত স্তম্ভিত হতাম। কোন হাদীছের ব্যাখ্যায় ইশকাল থাকলে তিনি বলতেন,ماذا قال المباركفوري  ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী কী বলেছেন?’। এ বাক্যটি এখনো আমার কর্ণকুহুরে যেন প্রতিধ্বণিত হচ্ছে। দারস চলাকালে ছাত্রদের হাতে থাকত তিরমিযীর বিশ্ববিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ তুহফাতুল আওয়াযীর সুদৃশ্য কপি। এই মহিমান্বিত দৃশ্য স্মৃতির মণিকোঠায় চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

ছাত্রবৃন্দ :

১. আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (পাকিস্তান) ২. ড. আলী নাছির ফাক্বীহী ৩. শায়খ ইউসুফ বিন আব্দুর রহমান আল-বারকাভী ৪.  ড. ছালেহ আল-সুহায়মী ৫. ড. অছিউল্লাহ আববাস (ভারত) ৬. ড. আব্দুর রহমান ফিরিওয়াঈ (ভারত) ৭. হাফেয ছানাউল্লাহ মাদানী (পাকিস্তান) ৮. ড. বাসিম আল-জাওয়াবিরাহ ৯. ড. নাছির আশ-শায়খ ১০. ড. ছালেহ আর-রিফাঈ ১১. ড. আছেম বিন আব্দুল্লাহ আল-কারউতী ১২. ড. আব্দুর রহমান আর-রুশায়দান ১৩ . ড. ইবরাহীম আর-রুহায়লী ১৪. ড. মিস‘আদ আল-হুসায়নী ১৫. তাঁর ছেলে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আব্দুর রায্যাক আল-আববাদ আল-বদর ১৬. ড. মুহাম্মাদ বিন মাতার আয-যাহরানী।

রচনাবলী :

শায়খ আববাদের রচনাবলী রিয়াদের দারুত তাওহীদ থেকে ১৪২৮ হিজরীতে  ‘কুতুব ওয়া রাসাইল আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ আল-বদর’ শিরোনামে ৮ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৩২৫। তাঁর কয়েকটি বইয়ের নাম নিম্নরূপ :-

১. ইশরূনা হাদীছান মিন ছহীহিল ইমাম আল-বুখারী  ২. ইশরূনা হাদীছান মিন ছহীহিল ইমাম আল-মুসলিম ৩. আক্বীদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ ফিছ ছাহাবাতিল কিরাম ৪. আক্বীদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল আছার ফিল মাহদী আল-মুনতাযার ৫. ফাযলুল মাদীনাহ ওয়া আদাবু সুকনাহা ওয়া যিয়ারাতিহা ৬. ইজতিনাউছ ছামার ফী মুছতালাহি আহলিল আছার ৭. দিরাসাতু হাদীছ নায্যারাল্লাহু ইমরাআন সামি‘আ মাক্বালাতী রিওয়াতান ওয়া দিরায়াতান ৮. আল-হাছছু আলা ইত্তিবাইস সুন্নাহ ওয়াত তাহযীরু মিনাল বিদা ওয়া বায়ানু খাতারিহা ৯. মিন আখলাকির রাসূল আল-কারীম। ১০. বিআইয়ি আক্বলিন ওয়া দ্বীনিন ইয়াকূনুত তাফজীরু ওয়াত তাদমীরু জিহাদান?

আলেম-ওলামার সাথে সম্পর্ক :

সমকালীন আলেম-ওলামার সাথে শায়খ আববাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিশেষত শায়খ আলবানী, শায়খ বিন বায, শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন, শায়খ হাম্মাদ আল-আনছারী, শায়খ আব্দুল কাদের আরনাউত (রহঃ) প্রমুখের সাথে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের আহলেহাদীছ ও সালাফী আলেমদের সাথেও তঁার সুদৃঢ় সম্পর্ক ছিল।

সমকালীন আলেমদের মতামত :

  1. ইমাম মাহদীর ইমামতিতে ঈসা (আঃ)-এর ছালাত আদায় সম্পর্কিত হাদীছের আলোচনায় শায়খ আলবানী (রহঃ) শায়খ আববাদের ইলমে হাদীছে পারদর্শিতার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।[3]
  2. ইমাম মাহদী সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা বিষয়ে শায়খ আববাদ একটি বক্তৃতা প্রদানের পর শায়খ বিন বায (রহঃ) তঁার বক্তব্যের উচ্ছ্বসিত প্রসংসা করেন এবং সেটি গ্রন্থাকারে প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাছাড়া মদীনা থেকে কেউ রিয়াদে আসলে তিনি তঁার কাছে শায়খ আববাদ, শায়খ হাম্মাদ আল- আনছারী ও শায়খ ওমর ফাল্লাতার খোঁজ-খবর নিতেন।[4]
  3. মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর শায়খ হাম্মাদ আল-আনছারী বলেন, ان الشيخ عبد المحسن العباد ما رأت عيني مثله في الورع- ‘তাক্বওয়া-পরহেযগারিতায় শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদের মতো কাউকে আমার দু’চোখ দেখেনি’।[5]
  4. علماء وأعلام و أعيان الزلفي গ্রন্থে বলা হয়েছে, يعتبر مثالاً في العلم والعمل والاستقامة في دينه ، متواضعاً حليماً ذا أناة وتؤدة ‘ইলম, আমল ও দ্বীনের উপর সুদৃঢ় থাকার ক্ষেত্রে শায়খ আববাদকে দৃষ্টান্ত হিসাবে গণ্য করা হয়। তিনি বিনয়ী, ধৈর্যশীল ও ধীরস্থির’।[6]
  5. বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ শায়খ আব্দুল কাদের আরনাঊত বলেন, الشيخ عبد المحسن العباد أعرفه من قرابة أربعين عاما هذا الرجل في الحقيقة يعتبر من العلماء المعتدلين و رجل عالم فاضل- ‘শায়খ আব্দুল মুহসিন আল- আববাদকে আমি প্রায় ৪০ বছর যাবৎ চিনি। তঁাকে মধ্যপন্থী আলেমদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তিনি একজন সম্মানিত আলেম’।[7] 
  6. ড. ছালেহ বিন ফাওযান আলে ফাওযান তঁাকে সউদী আরবের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম হিসাবে গণ্য করেছেন।[8]
  7. কেউ কেউ তঁার সম্পর্কে বলেছেন, هو ابن باز المدينة ‘তিনি মদীনার ইবনে বায’।[9]

দ্বীনী ইলম শিক্ষার্থীদের প্রতি শায়খ আববাদের নছীহত :

দ্বীনী ইলম শিক্ষাকারীদেরকে তিনি নিম্নোক্ত উপদেশগুলি দিয়েছেন :

  1. একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সমুতষ্টি কামনার জন্য ইলম অন্বেষণ করতে হবে। সত্য ও হেদায়াতের পরিচয় লাভ এবং এর প্রতি আমল ও দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্যে দ্বীনী ইলম হাছিল করতে হবে।
  2. অলসতা, উদাসীনতা ও ইলম অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিষয় সমূহ থেকে দূরে থেকে একাগ্রচিত্তে পরিশ্রম করে ইলম অর্জনে ব্যস্ত থাকতে হবে ।
  3. উপকারী গ্রন্থ সমূহ সংগ্রহ করত তা পাঠ করে ইলমী ফায়েদা হাছিলে আগ্রহী হতে হবে।
  4. সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের সাহচর্য লাভ করতে হবে এবং অসৎ সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে হবে।
  5. আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের লক্ষ্যে ইখলাছ ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুসরণের মাধ্যমে সৎ আমল সম্পাদন করতে হবে, যাতে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।[10]

 

[লেখক : ভাইস প্রিন্সিপাল, আল-মারকাযুল ইসলামী  আস-সালাফী, নওদাপাড়া, সপুরা, রাজশাহী]


[1].http://www.saaid.net/Waratah/1/Abbad.htm?print_it=1

[2]. আব্দুল আউয়াল বিন হাম্মাদ আল-আনছারী, আল-মাজমূঊ ফী তারজামাতিল আল্লামা আল-মুহাদ্দিছ আশ-শায়খ হাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ আল-আনছারী, মদীনা: ১ম প্রকাশ, ১৪২২/২০০২, ২/৫৯৭

[3]. সিলসিলা ছহীহাহ, ৫/২৭৬, হা/২২৩৬-এর আলোচনা দ্রঃ।

[4]. ড.মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আল-হামাদ, জাওয়ানিব মিন সীরাতিল ইমাম আব্দুল আযীয ইবনে বায,পৃঃ ২৫৭

[5]. আল-মাজমূঊ ফী তারজামাতিল আল্লামা আল-মুহাদ্দিছ আশ-শায়খ হাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ আল-আনছারী, ২/৬২১)

[6]. https://shamela.ws/index.php/author/185

[7]. https://www.youtube.com/watch?v=7onnQQW6vfI

[8]. https://www.youtube.com/watch?v=U2YFZgQEcH0

[9]. https://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php ?t=334635

[10]. ttps://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php?t =2 81375)।



বিষয়সমূহ: মনীষীদের জীবনী
আরও