শায়খ ছালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-লুহাইদান (রহঃ)

যহুরুল ইসলাম 768 বার পঠিত

সঊদী আরবের সাবেক প্রধান বিচারপতি, সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের আজীবন সদস্য এবং রাবেতা আলামে ইসলামীর সদস্য ছিলেন শায়খ ছালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-লুহাইদান (১৯৩২-২০২২)। তিনি গত ৫ই জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। শায়খ লুহাইদান ছিলেন সঊদী বিচার ব্যবস্থার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

নাম ও জন্ম: শায়খ ছালিহ বিন মুহাম্মাদ আল-লুহাইদান (রহঃ) সঊদী আরবের আল-ক্বাছীম যেলার অন্তর্গত বুকাইরাহ নামক শহরে সাবী‘ গোত্রের এক বিখ্যাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৩৫০ হিজরীতে।

শিক্ষা : তিনি সঊদী আরবের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার অধীনেই শিক্ষা জীবন শুরু করেন। উচ্চ মাধ্যমিকের পর তিনি রিয়াদস্থ শারী‘আহ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সনে সেখান থেকে ফারেগ হন। শারী‘আহ কলেজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর তিনি হায়ার জুডিশিয়াল ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৬৯ সনে সেখান থেকে মস্টার্স সম্পন্ন করেন। এখানে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল- ‘ইসলামী শরী‘আতে সাক্ষ্যদান’।

শিক্ষকবৃন্দ: তিনি অনেক বড় বড় আলিমের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেন। তাঁর কয়েকজন প্রখ্যাত শায়খ হলেন ইমাম মুহাম্মাদআল-আমীন আশ-শানক্বীত্বী, ইমাম আব্দুল আযীয বিন বায, ইমাম আব্দুর রাযযাক্ব আফীফী প্রমুখ জগৎবিখ্যাত আলেমেদ্বীন।

কর্মজীবন: শারী‘আহ কলেজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর শায়খ সঊদী আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ-শাইখ (রহঃ)-এর সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালে তিনি রিয়াদস্থ সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৮২ সালে তিনি সর্বোচ্চ আদালতের স্থায়ী কমিটির প্রধান নিযুক্ত হন।১৯৯২ সালে তিনি প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ২০০৯ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল থাকেন।

১৯৭১ সাল থেকেই তিনি সঊদী আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। এই পরিষদের শুরুকাল থেকেই এর সদস্য হিসাবে যুক্ত হন এবং মৃত্যু অবধি সদস্য হিসাবে বহাল ছিলেন। এছাড়াও তিনি রাবেতা আলাম আল-ইসলামীরও সদস্য ছিলেন।

তিনি ৫০ বছর যাবৎ ফতোয়া প্রদান, দা‘ওয়াহ ও দারস প্রদানের সাথে সাথে বিচারকার্যের সাথেও আমৃত্যু জড়িত ছিলেন। তিনি সঊদী বিচার ব্যবস্থায় এক উজ্জ্বল প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি মাসিক ‘রায়াতুল ইসলাম’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।

লেখনী ও দারস : শায়খের বিভিন্ন বিষয়ে লেখা বেশকিছু গ্রন্থও আছে, যা তাকে অমর করে রেখেছে। তাঁর রচিত বেশকিছু গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- তারাজুমির রিজাল বায়নাল জারহি ওয়াত তা’দীল, আল-জিহাদু ফিল ইসলাম বায়নাত তলাবি ওয়াদ দিফা’, নাক্বদু উছূলিশ শুয়ূইয়াহ প্রভৃতি। বেশকিছু গ্রন্থের উপর শায়খের দারস সিরিজও আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল শারহু কিতাবিত তাওহীদ, শারহু ক্বাওয়াইদ আল-আরবা’আহ, শারহু আরবাঈন লিন-নববী, শারহু উমদাতিল আহকাম, শারহু উমদাতিল ফিক্বহ প্রভৃতি।

তাঁর ব্যাপারে সুযোগ্য আলিমদের প্রশংসা:

১.সঊদী ফতোয়া বোর্ড এবং সঊদী আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য যুগশ্রেষ্ঠ ফক্বীহ আশ-শাইখুল আল্লামা ইমাম ছালেহ বিন ফাওযান আল ফাওযান শায়খ ছালেহ আল-লুহাইদান সম্পর্কে বলেন,

তিনি হলেন প্রশংসনীয় চরিত্রের অধিকারী, স্বীয়কর্মে অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং মতপ্রকাশ ও হুকুম প্রয়োগে সঠিক সিদ্ধান্ত দানকারী। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কাজের সাথে সাথে তিনি নূরুন আলাদ দার্বের (ফতোয়া মিডিয়া) প্রোগ্রামেও শরীক হন।

২. বর্তমান যুগে জারাহ ওয়াত তা‘দীলের ঝান্ডাবাহী মুজাহিদ আশ-শায়খুল আল্লামা আল-মুহাদ্দিছ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী বিন উমাইর আল-মাদখালী বলেন, ‘শায়খ আল-লুহায়দান হলেন সালাফী দা‘ওয়াহর খুঁটিসমূহের একটি খুঁটি’।

৩. আশ-শায়খুল আল্লামা হাম্মাদ আল-আনছারী বলেন, ‘শায়খ ছালেহ আল-লুহায়দান ইলমের এক জ্বলন্ত শিখা’।



আরও