আটজন হাফেয সন্তানের মা শরীফাহ মাসতুরা

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1268 বার পঠিত

[শরীফাহ মাসতুরা আল-জিফরী পেশায় একজন ইংরেজী অধ্যাপিকা। বর্তমানে তিনি সঊদীআরবের রিয়াদে অবস্থিত প্রিন্স সুলতান ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত আছেন। সিংগাপুরিয়ান বংশোদ্ভূত এই শিক্ষিকা সাংসারিক ও পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর আটজন সন্তানকে কুরআন হিফয করিয়েছেন। কিভাবে এটা সম্ভব হ’ল এ বিষয়ে জনপ্রিয় ইসলামিক ওয়েবসাইট ‘প্রোডাকটিভ মুসলিম’-এ দেয়া তার এই সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন ফারিযা বিনতে বুলবুল এবং সম্পাদনা করেছেন তাওহীদের ডাক-এর সহকারী সম্পাদক মুখতারুল ইসলাম]

প্রশ্ন : শুরুতেই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে পাঠকদের একটু পরিচয় করানো যাক। A-level শেষ করার পর আপনি একটি দু’বছরের টিচার্স ট্রেনিং কোর্স করেছিলেন যেটা ছিল মূলত প্রারম্ভিক শিশু শিক্ষার উপর। এরপর আপনি ইংরেজী সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্বের উপর UK থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রী নেন। এরপর আপনি একটি দু’দিনের ওয়ার্কশপ করেন যেটা হয়ত আপনাকে মেধাবী সন্তান লালনে উৎসাহিত করে। সংক্ষেপে কোন অভিজ্ঞতা বা ধারণা আপনি শিখেছেন বা প্রয়োগ করেছেন এই মেধাবী সন্তানদের প্রতিপালনে?

শরীফাহ মাসতুরা : মূলতঃ আমি দু’টো নীতি প্রয়োগ করতাম।-

ক. আপনার সন্তানকে উদ্দীপ্ত করুন। আপনার শিশুর সেন্সগুলোকে উদ্দীপ্ত করুন। তার দৃষ্টি, শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণ, স্বাদ সবকিছু। বিভিন্নভাবে তা করতে পারেন। তার সাথে কথা বলা, গল্প বলা, গল্পের বই পড়া, বিস্কিট গোনা, রান্নার সময় পেঁয়াজের ঘ্রাণ নেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। তার সামনে শিক্ষার উপকরণ রেখে তার মধ্যে আগ্রহ জাগান। সবচেয়ে উত্তম হ’ল তার সামনে বই পড়া। গর্ভাবস্থা থেকেই আপনার শিশুকে উদ্দীপ্ত করুন। কারণ সে ভ্রুণাবস্থা থেকেই আপনাকে শুনতে পায়।

খ. আপনার সন্তানকে নিজের দখলে নিন। আপনার সময়কে সন্তানের পিছনে ইনভেস্ট করুন। আমি তাদের সাথে ড্রয়িং করতাম, নন-টক্সিক রংপেন্সিল দিতাম তাদের আঁকিবুকির জন্য। বাচ্চার সামনে কেবল এক বালতি খেলনা ঢেলে দিয়েই ক্ষান্ত হবেন না, বরং তাদের সাথে বসুন। তাদের কল্পনাশক্তিধর ও সৃজনশীল হ’তে উৎসাহিত করুন। যেখানে তারা আটকে যাচ্ছে, সেখানে সামান্য দেখিয়ে দিলেই তারা সেটা পারবে।

এই দুইটা নীতি যদিও আমার ভিত্তি ছিল, কিন্তু আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের মাঝে ধার্মিকতা এবং আল্লাহভীতি তৈরী করা। শুধুমাত্র মেধা একজন মানুষকে ভাল বা নীতিবান করতে পারে না। বরং এটি মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে এমনকি ধ্বংসও করে দিতে পারে। আর তাই আমি এটিকে ঐ দুই নীতিরও উপরে রেখেছিলাম। সন্তানদের তাকওয়া ও জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনাকে তাদের কুরআন, আরবী ভাষা ও দ্বীন শিক্ষা দিতে হবে। তাই আমি সবসময় খেয়াল রাখতাম যাতে আমার গর্ভের শিশুটি যথেষ্ট পরিমাণ কুরআন শুনতে পায়। আর যখনই ওদের সাথে সময় কাটাতাম, কথা বলতাম, কুরআন, হাদীছ, নবী, ছাহাবীদের আমল নিয়ে ধারণা দিতাম। তাদের ইসলামী আদব-কায়দা শেখাতাম।

প্রশ্ন : আপনার ১২-২৪ বছর বয়সী আটজন সন্তান রয়েছে, যারা প্রত্যেকেই ১৩/১৪ বছরেই হাফেয মাশাআল্লাহ! এবং তারা সবাই আরবী মিডিয়াম স্কুলে পড়ত। একইসাথে আপনি বাসায় তাদের যুগপৎভাবে মালয় ও ব্রিটিশ কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা দিতেন। কোন জিনিসটা আপনাকে সন্তানদের ব্যাপারে এই অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গী তৈরীতে সাহায্য করেছিল?

শরীফাহ মাসতুরা : আমি এবং আমার স্বামী দু’জনেই চেয়েছিলাম সন্তানদের উপযুক্তভাবে কুরআন ও দ্বীনশিক্ষা দিতে। এজন্য হিফয স্কুলে পড়াটা যরূরী ছিল, যেখানে তারা কুরআন, দ্বীন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা আরবীতে শিখতে পারত। একই সময়ে আমরা চেয়েছিলাম, তারা উম্মাহর জন্য কল্যাণকর হোক। আমরা চেয়েছিলাম ওদের দক্ষতা ও জ্ঞান বাড়াতে যাতে তারা দক্ষ ও প্রোডাক্টিভ মুসলিম হিসেবে সমাজে অবদান রাখতে পারে। সুতরাং আমাদের বাচ্চারা কুরআন হিফয করা শুরু করে দু’বছর থেকে। একই সময়ে তারা লেখার টেকনিক সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে শুরু করে এবং পড়ার প্রতি তাদের ভালবাসা শুরু হয়।

স্কুলে যাওয়ার সময় তারা কুরআনের কিছু জুয (পারা) হিফয করে ফেলেছিল এবং আরবী দেখে পড়তে শিখেও গিয়েছিল মাশাআল্লাহ। এমনকি তারা আরবী হরফ এবং সংখ্যাও লিখতে জানত। স্বাভাবিকভাবেই এগুলো তাদের পড়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখে। যখন তারা আরবী স্কুলে ভর্তি হয়, তখন সিংগাপুরের কারিকুলাম অনুযায়ী তারা গ্রেড-টু’র ইংলিশ ও ম্যাথ পর্যন্ত জানত।

আলহামদুলিল্লাহ আমার টার্গেট ছিল তাদের মাঝে একটা ভিত তৈরী করে দেয়া যাতে তারা দ্রুত শিখতে পারে। স্কুলের পড়ার সাথে সাথে তারা তাদের নিজেদের গতিতে হিফয করতে থাকত। স্কুলের পড়াটা তাদের জন্য ছিল রিভিশন। এভাবে তারা স্কুলের হিফয প্রোগ্রামের বেশ আগেই হিফয করে ফেলেছিল মাশাআল্লাহ।

এখানে আমি দুটো প্রয়োজনীয় টিপস দিতে চাই-

ক. প্রথম সন্তানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী পরিশ্রম করুন। আপনি যেটা সন্তানদের কাছ থেকে অর্জনের আশা করেন, সেটা নিয়ে প্রথম সন্তানের দিকে মনযোগ দিন। পরের জন বড়টিকে দেখেই শিখে যাবে।

খ. কুরআনকে আপনার জীবনযাত্রার মধ্যমণি করে নিন। আপনি কখনই এটা আশা করতে পারেন না যে আপনার সন্তান হিফয করবে, যেখানে তার বাবা টিভি দেখে সময় নষ্ট করবে এবং মা আইপড টিপবে। বাবা-মা যখন কুরআন নিয়ে সময় দেয়, বাচ্চাও তখন কুরআনের প্রতি আগ্রহী হয়।

প্রশ্ন : আপনি এবং আপনার সন্তানেরা কি করে এতকিছু ম্যানেজ করত? সাধারণত আপনাদের রুটিন কি ছিল?

শরীফাহ মাসতুরা : আমাদের দিন শুরু হত ফজর থেকে। সকালের নাস্তা, গোসল এবং পড়ালেখার সময় ছিল ৬-১১টা। মূল জিনিসটা ছিল মাল্টি-টাস্কিং। এক সন্তান হয়ত লিখছে, আরেজনকে গোসল করতে পাঠানো, আরেকজনের পোশাক পরিয়ে দেয়া। বাচ্চার বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় একজনকে গল্পের বই পড়ে শোনানো, এরকম। যখন সবাই রেডি হয়ে যেত, একেকদিন একেকজন একটি বই দিত আমাকে পড়ে শোনানোর জন্য। তারপর যে যার পড়ার অংশ করতে লেগে যেত। পড়ালেখা শেষ হলে আমি ওদের নিয়ে বিভিন্ন মজার মজার হস্তশিল্প তৈরী করতাম।

আরেকটি টিপস হল, শেখাটাকে আনন্দময় করে তোলা। আমি নিজেই তাদের ওয়ার্কশীট বানাতাম। সেটা হ’ত অনেক কালারফুল, যাতে ওরা মজা পায়।

সাড়ে দশটার দিকে ওদের ক্ষুধা লাগলে কিছু স্ন্যাক্স দিতাম। ফজর থেকেই ওরা যেহেতু মন দিয়ে পড়ালেখা করেছে, তাই এসময় ওরা খানিকটা বিশ্রাম নিত। এ সময় আমি আমার নিজের হিফজ নিয়ে বসতাম। এইভাবে আমি আটটা বাচ্চা লালনপালনের পাশাপাশি হিফয করার চেষ্টা করেছি মাশাআল্লাহ। যদিও সময় অনেক বেশী লেগেছে কিন্তু তাতে করে বাচ্চারা আমার অংশটুকুও শিখে ফেলেছিল এবং আমার আগেই হিফয করে ফেলেছিল মাশাআল্লাহ!

পুরো আটজন বাচ্চার ক্ষেত্রেই আমি এই রুটিন অনুসরণ করেছি। এতে করে তারা রুটিন মেনে চলায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনার বাচ্চার দখল নিন। না হলে ওরাই আপনাকে দখল করবে! তারা হয় আপনাকে বিরক্ত করবে, নয়ত অন্যকে বিরক্ত করবে। ছুটির দিনে আমরা পার্কে যেতাম কিংবা পিকনিকে।

প্রশ্ন : বাচ্চারা এবং তাদের বাবা-মারা সাধারণত স্কুল, হোমওয়ার্ক ইত্যাদি নিয়ে দিনের অধিকাংশ সময়েই ব্যস্ত থাকে। কি করে মাত্রাতিরিক্ত না করে বাচ্চাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা বের করে আনা যায়?

শরীফাহ মাসতুরা : যখন আপনার বাচ্চা হবে এবং পরিবার বড় হবে, কর্মশক্তিও বাড়বে। আপনি ভাবতেই পারবেন না আপনি এত বেশী কাজ করতে পারছেন! আমার যেমনটা ইচ্ছা ছিল, আমার বাচ্চারা কুরআন হিফয করবে আবার স্কুলেও ভাল করবে। আল্লাহ আমার সামর্থ্য সেভাবেই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আলহামদুলিল্লাহ। মা হিসেবে ক্লান্ত হওয়াটা তো অবশ্যই স্বাভাবিক ছিল কিন্তু সেটা কখনই মাত্রাতিরিক্ত ছিল না আলহামদুলিল্লাহ। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, তাদের বোঝানো দরকার কেন আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, বাবা-মার এটা বোঝানোই কর্তব্য। নিয়তের উপরই সব নির্ভর করে। আমরা যা করছি, সবই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, এটা তাদের একেবারে ছোট থেকেই বোঝাতে হয়। আরেকটা জিনিস হল, বাবা-মার প্রতি অনুগত হ’তে শিক্ষা দেয়া। যদি বাচ্চা বোঝে যে, বাবা-মায়ের অনুগত হ’লে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, তাহ’লে তাকে খুব সহজেই ম্যানেজ করা যায়। সুতরাং বাচ্চারা যখন দেখল, তারা সারাক্ষণ যা করছে, তার উদ্দেশ্য হ’ল আল্লাহর সন্তুষ্টি, এটা তাদেরকে জীবনের সত্যিকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দিল।

আল্লাহ জানেন, আমি কখনই বাচ্চাদের উপর কোন উচ্চাকাঙ্খা চাপিয়ে দেইনি, একমাত্র হিফয করা ও উম্মাহর জন্য কল্যাণকর হওয়া বাদে। ওটাই আমার একমাত্র চাওয়া ছিল।

প্রশ্ন : আট বাচ্চার অভিভাবক হিসেবে লক্ষ্যপূরণের যাত্রাটা নিশ্চয়ই সহজ ছিলনা। একটা বিশেষ গুণ এখানে অত্যাবশ্যকীয় তা হ’ল অধ্যবসায়। বিশেষ করে কঠিন সময়ে আপনি কি করে ধৈর্য্য ধরেছেন?

শরীফাহ মাসতুরা : তাওফীক সবসময় আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। আমি সবসময়েই আল্লাহর কাছে দো‘আ করতাম যাতে তারা উম্মাহর জন্য কল্যাণকর হয়। সেই দো‘আ ও লক্ষ্য আমায় থেমে না যাওয়ার শক্তি দিয়েছিল। তাছাড়া আমি যেহেতু হিফয করার জন্য খুব চেষ্টা করছিলাম, সেটা আমাকে বুঝিয়েছিল যে বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই ধরণের অধ্যবসায় অবলম্বন প্রয়োজন। কুরআন শেখাটা অধ্যবসায়ের সমার্থক ছিল।

সবশেষে আমি সবসময় সব বাচ্চার প্রতি সমান কর্তব্য পালনের চেষ্টা করেছি। যেমন বড়টার ক্ষেত্রে, তেমনি ছোটটার ক্ষেত্রে। শেষ সন্তানের ক্ষেত্রে ও একা পড়ে গিয়েছিল। বাকিরা সবাই স্কুলে যাবার কারণে ওর সাথে আমরা আরো বাচ্চাদের শেখাতাম যাতে ও আনন্দ নিয়ে শেখে। মাঝে মাঝে পরিস্থিতির কারণে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের সমান সুযোগ দেননা। এটা যাতে না হয় তা আমার মাথায় সবসময় ছিল।

প্রশ্ন : সন্তানদের অধ্যবসায়, ধৈর্যের মত ভাল অভ্যাস ও বিশ্বাস তৈরীতে কিভাবে মানুষ আদর্শ পিতামাতা হিসাবে ভুমিকা রাখতে পারে?

শরীফাহ মাসতুরা : ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের মত ভাল গুণাবলী ও বিশ্বাস তৈরীতে বাস্তবসম্মত কোন পন্থা আমার জানা নেই। তবে এক্ষেত্রে আমার সোজসাপ্টা উত্তর হলো যে, আপনি যতটা পারেন আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করুন। যদি আপনার ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের পথ পরিচ্ছন্ন না হয়, তবে আপনাকে বুঝতে হবে অধ্যবসায় বা আদর্শ পিতামাতা যা-ই হওয়ার স্বপ্ন দেখুন না কেন, তা ভেস্তে যাবে। ইচ্ছা পূরণে আপনার আক্বীদা-বিশ্বাস ও আমলে সচেতন হন। যদি আপনি মুসলিম হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনার সন্তানকে খাঁটি মুসলিম বানাতে আপনার অগ্রণী ভুমিকা অত্যাবশ্যক। কেননা আপনার অনুসরণীয় নৈতিক গুণাবলীই সন্তানের বড় পাথেয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে যে কোন ইবাদতের মাধ্যমে আপনাকে লেগে থাকতে হবে। তবেই আপনি পুরস্কৃত হবেন। এই বিশ্বাস এবং ইবাদত আপনাকে ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের মত মহৎ গুণ অর্জনে সহায়তা করবে। তবে মনে রাখতে হবে দুনিয়া অর্জনের জন্য কোন ইবাদত পরিচালিত হলে, তা আপনাকে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত করে তুলবে। এভাবে নিজের কাজের বাস্তবায়নের মাধ্যমে আপনার সৎ সন্তান গড়ে উঠবে যা আপনার মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও কাজে আসবে। তবে মনে রাখতে হবে, সবকিছুর মূলে কঠোর পরিশ্রমই আপনাকে অভীষ্ট লক্ষ্যস্থলে পৌঁছিয়ে দিতে পারে।

প্রশ্ন : আপনার এমন ঈর্ষণীয় অর্জনে আপনার স্বামীর কি ধরণের ভুমিকা ছিল। তিনি আপনার কার্যবিধি এবং পরিকল্পনার সাথে কিভাবে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন?

শরীফাহ মাসতুরা : আমি এবং আমার স্বামী উভয়ে মিলেই সন্তান-সন্ততিগণকে আদর্শবান মানুষ গড়ার লক্ষ্য কাজ করেছি। এতে আমাদের মাঝে কোন কাজে ব্যত্যয় ঘটেনি, আলহামদুলিল্লাহ। আমি ভাবতেই পারিনি যে, আমার স্বামী পরিবারের জীবিকার্জনে বাড়ির বাইরে থাকা সত্বেও এভাবে আমার সাথে সমসঙ্গ দিতে পারবে। এর বেশী আমি আর তার কাছে আর কোন কিছুই আশা করতে পারিনা। কেননা যখনই পরিবারে আমার শূন্যতাবোধ হয়েছে, তখনই তিনি পরিবার ও সন্তানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন; স্বতঃস্ফুর্ত ও সাগ্রহে তার সময় ব্যয় করেছেন।

আদর্শ স্বামী হিসাবে তার জুড়ি মেলা ভার। কেননা তিনি সর্বদা আমার সন্তান লালন-পালনে ছায়ার মত পাশে থেকেছেন। তিনি বাচ্চাদের সাথে খেলা করতেন; গল্পের বই পড়ে শোনাতেন; তিন-চার বছরে ঘটে যাওয়া জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করতেন; সর্বদা বাচ্চাদের রুচিবোধের খেয়াল রাখতেন এবং তিনি তাদের সাথে সেভাবে মিশতেন।

সন্তান-সন্তাতিদের লালন-পালনের ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান হল, তিনি বাচ্চাদের মায়ের সাথে কিভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং তাতে কিভাবে উদ্দেশ্য সাধিত হয় সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। তিনি বাসায় বসে অনেক সময় শিক্ষকের কাজটাও করতেন। তিনি বিশুদ্ধ উচ্চারণে রিডিং পড়ার ব্যাপারে বাচ্চাদের প্রচুর সহযোগিতা করতেন। বিশেষ করে আমার তৃতীয় সন্তানকে ‘পিটার এন্ড জেন’-এর গল্প পড়াতেন এবং পড়ে শুনাতেন। এভাবে আমার তৃতীয় সন্তান ভাল একজন পাঠকে পরিণত হয়। আমি যখন খুব ব্যস্ত থাকতাম, তখন তিনি বাচ্চাদের কুরআন হিফয পড়ার খেয়াল রাখতেন এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদেরকে পড়া ধরতেন।

শুধু তাই নয়, তিনি বাড়ির বিভিন্ন ছোটখাট কাজেও সাহায্য করতেন যেমন তিনি বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানো, গোসল করানো, খাওয়ানো, রান্নবান্না ইত্যাদি। এক কথায় বলতে গেলে বাড়ির সার্বিক কাজে আমরা একে অপরের খেয়াল রাখতাম।

অনেক সময় বাচ্চাদের কাছ থেকে অবাধ্য বা অসহযোগিতামূলক কিছু পেলে আমি সোজা তার আববার কাছে পাঠিয়ে দিতাম। বাড়ির প্রধান হিসাবে বাচ্চারা তার পিতাকে যথেষ্ট সমীহ করত। তিনি তাদের ‘লাইফ ডিসিপ্লিন’ শিক্ষা দিতেন। অনেক সময় তার অল্প কথাতে অনেক কাজ হ’ত। ফলে এভাবেই তাকে ‘হায়ার অথরিটি’ তথা বাড়ির প্রশাসনিক কাজও আঞ্জাম দিতে হ’ত।

বাড়ির বাইরে প্রতিষ্ঠানে দেখভাল আমার স্বামীর উপরেই বর্তাতো। বাচ্চাদের মসজিদে ছালাত পড়তে নিয়ে যাওয়া, কুরআনের হালাকায় বসা, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিতে তাকে আমি একজন আদর্শ পিতা হিসাবে পেয়েছি মাশাআল্লাহ।

আমার স্বামী সন্তান লালন-পালন ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাধনে শুধুমাত্র একজন সঙ্গী এবং সহযোগীই ছিলেন না; বরং জীবনের বিভিন্ন জটিল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন হিমাদ্রির ন্যায়। বাচ্চারা আমাদের অভিন্ন চিন্তা-চেতনা ও মুহাববতের মেলবন্ধন ঠাওর করত। সত্য বলতে কি, সন্তান-সন্তানাদিকে আদর্শবান মানুষ হিসাবে গড়তে গেলে এর বিকল্প নেই।

প্রশ্ন : আপনার প্রত্যেকটি সন্তান বিভিন্ন উন্নয়ন ও দক্ষতামূলক কাজকে নিজেদের শখের কাজে পরিণত করেছে, মাশাআল্লাহ। তাদের বিভিন্ন শখের ব্যাপারে আমাদের অবহিত করুন। আর তারা তাদের অবসরে কি ধরণের উন্নয়নমূলক কাজে জড়িয়ে থাকে, যদি কিছু বলতেন?

শরীফাহ মাসতুরা : আমি এটি নিশ্চিত করে বলতে পারব না যে, আমার প্রত্যকটি সন্তানের নিদিষ্ট কোন শখ রয়েছে। তবে আমি এবং আমার স্বামী এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম যে, আমাদের বাড়িতে সন্তানরা টিভি দেখার পরিবেশ ছাড়াই বেড়ে উঠবে। ফলে ছোটকাল থেকেই সময়ের সদ্ব্যবহারের মধ্যে দিয়েই তাদের সময় অতিবাহিত হয়েছে। যেমন ধরুন, আমরা অধিকাংশ সময় হস্তশিল্প এবং উদ্ভাবনমূলক কাজে সময় ব্যয় করেছি।

ছোটকাল থেকেই তারা মালা গাঁথা, কাগজ কাটাকাটি, আঠা লাগানো ইত্যাদি কাজে অভ্যস্থ। আমরা তাদেরকে বিভিন্ন রংয়ের কাজ, কাদামাটি দিয়ে জগ, গ্লাস তৈরী, অরিগামী, কাগজের ফুল, তাস, পুঁথিরমালা ইত্যাদি তৈরীতে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছি। এতদ্ব্যতীত গল্প লেখা, বই এবং বইয়ের কভার পেজ তৈরীর কাজ তারা শিখেছে। ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনীয়  বিভিন্ন ধরণের কাজও তারা শিখেছে। তারা নিজেরা বিভিন্ন কাজে আনন্দের সাথে বেশী বেশী করার চেষ্টা করেছে। আমি তাদেরকে মেয়েদের সাধারণ এমব্রোডারী এবং সেলাইয়ের বিভিন্ন কাজও শিখিয়েছিলাম।

অবশেষে তারা কাজকর্মে ইয়াং টিনেজারে পরিণত হয়; সেলাই মেশিন চালাতে ভীষণ দক্ষ হয়ে উঠে; নিজেদের প্রয়োজনীয় পর্দা, মনোহর কাপড়চোপড় বানাতে শুরু করে। হাতে তৈরী বিভিন্ন প্রকার ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় ছোটখাট সামগ্রীর নিয়ে তারা রিয়াদে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। ব্যবসায়িক পণ্যগুলো চমৎকার বলে মানুষেরা সেগুলো সানন্দে ক্রয় করেছিল মাশাআল্লাহ।

বর্তমানে তারা বুননে, কাটি-কুরুশে খুবই এগিয়ে গেছে। আমার এক মেয়ে খুবই ভাল একজন আর্টিষ্ট। কোন কিছুতে রং করতে অত্যন্ত ভালবাসে এবং মেকাপেও সে খুব দক্ষ। আমার আরেক মেয়ে একজন দক্ষ স্থপতি, বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের ডিজাইনে খুব পটু। এ কথার বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, তাদের দক্ষতা তাদের জ্ঞানকেও পিছনে ফেলেছে। তবে এতকিছু এগিয়ে যাওয়ার গল্পে ইউটিউব তাদের খুবই কাজে দিয়েছে।

আমি বাচ্চাদের পসন্দের বিষয়গুলোতে খুবই খেয়াল রাখি এবং তাদের ব্যস্ত রাখি। কেননা আমি এ কথা বিশ্বাস করি যে, কোন মানুষ মায়ের পেট থেকে দক্ষ ও সৃষ্টিশীল হয়ে জন্ম গ্রহণ করেনা। বরং তাকে তার বিশেষ অর্জনে অনেক পরিশ্রম করতে হয়।

আমি আরেকটি বিষয়ে খুবই জোর দিয়ে বলব, তাদেরকে টিভি দেখা পরিবেশে মানুষ করবেন না। তাদের মনের চাহিদাটা বুঝুন; তা অর্জনে অনুপ্রেরণা জোগান। তারা নিজেরাই নিজেদের অর্জনে মনোনিবেশ করবে। নিশ্চয় তারা নতুন নতুন আবিস্কারের আনন্দ সৃষ্টি করবে এবং যোগ্য হয়ে স্বাধীন জগৎ সৃষ্টিতে সক্ষম হবে। পসন্দের ক্ষেত্রে আমার ছেলেরা সাধারণত ফটোগ্রাফী, দেওয়ালে ছবি অংঙ্কন, টি-শার্ট রাইটিং, ছুতোরের কাজ, দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নগুলো বেশী দেখে মাশাআল্লাহ। 

প্রশ্ন : আপনি একজন শিক্ষক, তথাপিও কিভাবে আপনি সবকিছু ফেলে আপনার সমস্ত সময় তাদের পিছনে উৎসর্গ করেছেন? আপনার সব ছোট সন্তান কুরআন মাজীদ হিফয শেষ করেছে। আর আপনিও তো হাফেযে কুরআন মাশাআল্লাহ। এর মধ্য দিয়ে আপনি রিয়াদের কিং সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী পাঠদানে কর্মরত। পাশাপাশি স্নাতকোত্তর ইংরেজী শিক্ষা ডিপ্লোমা কোর্স (ডেলটা)-তে ভর্তি হয়েছেন এবং প্রিন্স সুলতান বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করান। আসলে কোন জিনিসটি আপনাকে এত বছর ধরে শিক্ষা ও নিজের ঈর্ষান্বিত ক্যারিয়ার গঠনে উদ্বুদ্ধ করেছে?

শরীফাহ মাসতুরা : এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, আপনি যেভাবে চাকচিক্যময়ভাবে প্রশ্নটি উপস্থাপন করেছেন, আসলে আমি মোটেও এর যোগ্য নই। আমার কর্মকান্ডের পেছনে যে অনুপ্রেরণা কাজ করে, তা আসলে কোন ক্যারিয়ার গঠনের জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে দু‘টি বিষয় এ ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল। তা হ’ল- ১. শিক্ষকতা ও ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনই আমার নিকট সুখকর ২. বাড়িতেও কাজে ব্যস্ত থাকতাম, তবুও উনিশ বছরে আমি কখনো শিক্ষকতা বন্ধ করেনি।

১৯৯৮ সালে আমার প্রিয় বন্ধুদের অনুরোধে (হোম স্কুল প্রোগ্রাম) বাড়িতে শিক্ষা প্রোগ্রাম চালু করি। আমার শিক্ষা প্রোগ্রামের বন্ধুদের নিয়ে আমার বাড়িতে বিভিন্ন ঘরকে ক্লাস রুম বানিয়ে বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া শুরু করি। প্রত্যেক ক্লাসে ১.২ আনুপাতিক হারে শিক্ষকের প্রচেষ্টায় সে বছর আমরা বিস্ময়কর ফলাফল অর্জনে সমর্থ হই মাশাআল্লাহ। প্রতিষ্ঠানের অভাবনীয় সাফল্যে নতুন নতুন অভিভাবকরা নির্দিষ্ট ফী দিয়ে তাদের বাচ্চাদের আমাদের মাদরাসায় ভর্তি করাতে থাকে। আমাদের ‘দারুল কুরআন’ মাদরাসাটি  তাকওয়া (আধ্যাত্মিক) এবং একাডেমিক শিক্ষায় সফলতার শীর্ষে ছিল। আমিই মাদরাসাটিতে টিচার এবং ট্রেনার হিসাবে প্রধান শিক্ষিকার পদে অধিষ্ঠিত ছিলাম। ছাত্র-ছাত্রীর মায়েরাই শিক্ষিকা হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির সফলতায় দারুণ ভূমিকা রাখত।

আমার খুব খারাপ লাগত, বাচ্চারা আমাদের মাদরাসা শেষ করে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হলেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকাদের আমরা হারাতাম। কেননা তারা বাচ্চাদের বিদায়ের সাথে সাথে সঙ্গত কারণে তারাও প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিয়ে নিত। এভাবে আমার শেষ মেয়েটি প্রতিষ্ঠানে আসা পর্যন্ত পাঁচ বছর প্রতিষ্ঠানটি আমার তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে। দারুল কুরআন মাদরাসায় যখন আমার বড় মেয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে, তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজকর্ম শুরু করেছিলাম।

চাকুরীটা বাড়ির পাশেই হওয়াতে বাচ্চাদের সাথে কর্মস্থলে যাওয়া-আসাতে আমার সাক্ষাৎ হত। বাচ্চাদেরকে দীর্ঘক্ষণ মাতৃস্নেহের ছায়ায় আগলে রাখতে পারতাম। আসলে আমার মনের মধ্যে ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন কোন উন্মাদনাই ছিলনা।

পারিবারিক কাজ, পড়াশোনার সাথে সাথে (ডেলটা) কোর্স মানসিক ও শারীরিকভাবে শ্রমসাধ্য বিষয় ছিল, যা আমার চাকুরীর প্রয়োজনে করতে হয়েছিল। প্রথমদিকে সন্তান, স্বামীকে সময় দিতে না পেরে আমি ডেলটার ব্যাপারে খুবই অস্বস্তিবোধ করতাম। ফোর গ্রেডের বাচ্চাদের পবিত্র কুরআন হিফযের শেষ পর্বে যখন আমার বড় ছেলেমেয়েরা ছোটদের বরকতময় কুরআন শিক্ষার প্রোগ্রামে সময় দিতে শুরু করে, আলহামদুলিল্লাহ তখন থেকে পারিবারিক কাজ ও পড়াশোনার পেছনে সময় ও শক্তি ব্যয়ে তেমন কোন সমস্যা হয়নি।

প্রশ্ন : একটি কথা বারবার আপনার কথায় উঠে এসেছে, সেটি হলো সন্তান জন্মের বিশ বছর পূর্বেই আপনার সন্তানের শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছে। বিষয়টি যদি আমাদের পাঠকদের সামনে বিস্তারিত বলতেন।

শরীফাহ মাসতুরা : এটি নিদ্বির্ধায় বলা যায় যে, সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে গভীর জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করতে হবে। অনেকেই মনে করে, পিতামাতা হ’তে অনেক দেরী রয়েছে এবং এটি খুবই কঠিন বিষয়। কিন্তু না, এটি খুব দেরি বা দূরের বিষয় নয়। বরং সময় আসার পূর্বেই জ্ঞার্নাজনের মাধ্যমে নিজেদের ভুলগুলি শুধরান। এতদ্ব্যতীত এখনই আপনার সন্তানাদিকে প্রস্ত্তত করার প্রকৃত সময়। ফলে সকল সুযোগ-সুবিধা তাদের পিছনে ব্যয় করুন। প্রকৃত পিতামাতা হিসাবে আপনি জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে সন্তানকে যোগ্য করে তুলুন। সন্তানের ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী বা ভাল চাকুরীই যেন আপনার লক্ষ্য হয়ে না দাঁড়ায়। তাদেরকে কুরআন ও দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আসলে প্রকৃত জ্ঞান হ’ল পড়া, বুঝা এবং তার মধ্যেই বেঁচে থাকা। আপনি আপনার সন্তানকে আগামী দিনের শিক্ষিত এবং ধার্মিক পিতামাতা হিসাবে গড়ে তুলুন।  

প্রশ্ন : আপনি এবং আপনার স্বামী এমন কোন আধ্যাত্মিক কোন রুটিন মেনে চলেন যা আপনাদের প্রাত্যহিক জীবন বরকতময় করে তোলে?

শরীফাহ মাসতুরা : আসলে সত্য বলতে কি আমাদের এ  বিষয়ে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু বলার নেই। তবে আমার যতদূর মনে পড়ে, আমি অনেক বছর আগে শিশু লালন-পালনের উপর একটি আরবী বই পড়েছিলাম। বইটির লেখকের নাম ও শিরোনাম কোন কিছুই ঠিক এখন আমার মনে নেই। বইটিতে লেখক মহোদয় বলেছিলেন, ‘আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে কিছু করতে বলেন, তবে তারা সেটি করবেনা, যতক্ষণ না আপনি সেটি নিজে তা তাদেরকে না করে দেখান। এক কথায় তার অর্থ হ’ল আপনি তাদেরকে যা করতে চান, সে বিষয়ে আপনি নিজেই নিজেকে তাদের সামনে একজন অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে উপস্থাপন করুন। আপনি ধার্মিক, পুত্রোচিত এবং কন্যাচিত পিতামাতায় পরিণত হন; দেখবেন আপনার সন্তানরাও আপনার স্বপ্নের ব্যক্তিতে পরিণত হবে। বিশেষ করে আপনাকে ইবাদতের ক্ষেত্রে সন্তানদের নিকট একজন অনুসরণীয় পিতামাতায় পরিণত হ’তে হবে।

প্রশ্ন : উচ্চাকাক্ষী পিতামাতা হওয়ার জন্য আপনি সর্বশেষ কী উপদেশ দিবেন?

শরীফাহ মাসতুরা : উপরোক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষা নিন; নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করুন এবং আপনি নিজেই নিজেকে ঠিক-বেঠিকের প্রশ্ন করুন। মহান আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কোন বাড়তি বোঝাই আপনার উপর চাপাননি। আমি আমার জীবন এ পথেই পরিচালনা করছি। আপনিও আপনার পথ ও পন্থা নির্ধারণ করুন। তবে আমাদের উভয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একটাই; তা হ’ল আপনি এমন দ্বীনদার সন্তানের পরিচর্যা করুন যারা জাতির সেবক হতে পারে। আর আপনাকে এ কথা সর্বদা মনে রাখতে হবে সঠিক ইসলামী জ্ঞান ব্যতীত কখনও কোন সন্তান জাতির সামান্য উপকার করতেও সক্ষম নয়।



আরও