অধ্যাপক দুর্রুল হুদা

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 873 বার পঠিত

[আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা দুর্রুল হুদা (৫৩)। রাজশাহীর গোদাগাড়ীস্থ মহিষালবাড়ী মহিলা ডিগ্রী কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত থাকার পাশাপাশি দীর্ঘ প্রায় তিন দশক যাবৎ তিনি অত্র অঞ্চলে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সমাজ সংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহী গোদাগাড়ী ও তানোর উপযেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে তাঁর বিস্তৃত পদচারণা। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হকের দাওয়াত পৌঁছে দিতে তিনি ইখলাছের সাথে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাঁর সাংগঠনিক জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানার জন্য সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন তাওহীদের ডাক-এর নির্বাহী সম্পাদক ড. মুখতারুল ইসলাম]

তাওহীদের ডাক : আপনার জন্মস্থান ও আপনার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : ১৯৬৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতুলী গ্রামে আমার জন্ম। জন্মের দুই বছর পর আমার পরিবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপযেলার সারাংপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। পরিবারে অন্য সদস্য বলতে আমার একটা ছোট বোন আছে। ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় আববা তার বিয়েশাদী দিয়ে দেন।

তাওহীদের ডাক : আপনার পিতা-মাতার পরিচয়?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : আমার পিতার নাম মুহাম্মাদ মুয্যাম্মিল হক এবং মাতার নাম আফরোজা বেগম। দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে এখন তারা পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত নছীব করুন। দিয়াড় বা চরাঞ্চলে আমাদের বেশকিছু জমি ছিল। আববা কৃষি কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তিনি দ্বীনদার-পরহেযগার মানুষ ছিলেন। আববারা চার ভাই, তিনি সবার বড় ছিলেন। এরপর ছিলেন চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মাদানী ও সাঈদুর রহমান রিয়াদী, যারা উভয়ে এক সময় নওদাপাড়া মারকাযের শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া আব্দুর রশীদ নামের উনার আরেক ভাই ছিলেন।

তাওহীদের ডাক : আপনার প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : মসজিদে মক্তবের পাশাপাশি গ্রামের সারাংপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার ছাত্র জীবন শুরু হয়। সেখানে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর আমি গোদাগাড়ী স্কুল এ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কওমী মাদ্রাসায় আমার চাচা আবুল কাশেম মাদানী লেখাপড়া করতেন। কিরাআতে বিশেষ পারদর্শী আমার চাচা আবুল কাসেম পরে আহলেহাদীছদের প্রখ্যাত ও শক্তিমান আলেমে দ্বীন, উস্তাযুল আসাতিযা, আপোষহীন ব্যক্তিত্ব মাওলানা রেযাউল্লাহ ছাহেবের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ‘আল-জামে‘আ আল-ইসলামিয়া, সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ীতে চলে আসেন। কেননা সঊদী আরবের মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তখন মাদ্রাসাটির মু‘আদালা সম্পন্ন হয়েছিল। আমাদের বাড়িতে সুলতানগঞ্জ মাদ্রাসার আব্দুর রঊফ (রংপুর) নামক একজন ছাত্র লজিং থাকত এবং সারাংপুর জামে মসজিদে খুৎবা দিত। তার সাপ্তাহিক খুৎবা আমার খুব ভাল লাগত এবং অন্তরে গেঁথে যেত। এসব দেখে চাচা ও আম্মা স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় পড়ার ব্যাপারে আমাকে খুব উদ্বুদ্ধ করতেন। আমারও প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল যে, আমি মাদ্রাসায় পড়ব এবং বড় আলেম হব। যেই কথা সেই কাজ। বাড়িতে আমার চাচার কাছেই আমি প্রথম বিশুদ্ধ কুরআনের তা‘লীম নেই। অতঃপর ফার্সী ভাষায় পারদর্শী আব্দুর রঊফের নিকট ফার্সী কি পেহেলী কিতাব, মীযান, পাঞ্জেগাঞ্জ প্রভৃতি বইগুলো পড়ে ফেলি। তখন মাদ্রাসার ক্লাসগুলোর কওমী ধাঁচের নাম ছিল আদনা আলিফ, আদনা বা ইত্যাদি। ১৯৮২ সালে আমাকে শিক্ষকতুল্য চাচা সুলতানগঞ্জ মাদ্রাসায় বছরের শুরুতে আদনা আলিফ ক্লাসে ভর্তি করেছিলেন। পরবর্তীতে রংপুরের আব্দুর রঊফ ও আবুল কাসেম চাচা উভয়েরই এই মাদ্রাসা থেকে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির মু‘আদালা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে আমার ছোট শ্বশুর আব্দুছ ছামাদ সালাফী সাহেবের ছোট ভাই রফীকুল ইসলাম মাদানী মাদ্রাসাটির প্রিন্সিপালের দায়িত্বে আছেন।

তাওহীদের ডাক : আপনি তো ‘বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস’-এর কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার ছাত্র ছিলেন। কখন ও কিভাবে সেখানে গিয়েছিলেন?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : ১৯৮৫ সালের দিকে আমি যখন সুলতানগঞ্জ মাদ্রাসায় জামাতে উলাতে উঠলাম, তখন নিজেদের দ্বন্দ্বের জেরে মাদ্রাসাটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এমতাবস্থায় নাচোলে এক বছর পড়লাম। তারপর যাত্রাবাড়ীতে যাই। তৎকালীন সময়ে আমার শ্বশুর মাওলানা বদরুয্যামান মাদানী যাত্রাবাড়ীর শিক্ষক ছিলেন এবং চাচা মাওলানা সাইদুর রহমান ছিলেন ছাত্র। ১৯৮৬ সালের শাওয়াল মাসে আমি সেখানে ভর্তি হই।

ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছিলেন আহলেহাদীছদের একজন প্রথিতযশা আলেমে দ্বীন মাওলানা আহমাদুল্লাহ রহমানী। তিনি ভর্তি পরীক্ষায় মিশকাতের إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ হাদীছ থেকে কিছু ব্যাকরণগত প্রশ্ন করেছিলেন এবং ঠিকঠাক উত্তর দিতে পেরেছিলাম। আমার সাথে পরীক্ষার্থী অনেকেই ভর্তি হতে পারেনি। উস্তাদজী আমাকে বললেন, যাও, তুমি ভর্তি হয়ে যাও। আমি ছানাবিয়াতে অর্থাৎ মিশকাত জামাতে ভর্তি হই।

তাওহীদের ডাক : মাওলানা আহমাদুল্লাহ রহমানীর নিকট আপনার কোন কোন কিতাব পড়ার সুযোগ হয়েছিল?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : তাঁর নিকট ছানাবিয়াহ থেকে কুল্লিয়া পর্যন্ত অনেক কিতাব পড়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। তিনি খুব যত্ন করে হেদায়া পড়াতেন। হেদায়া গ্রন্থের প্রথমেই লেখা আছে, ইন্নাল হেদায়া কাল কুরআন অর্থাৎ ‘হেদায়া কুরআনের মত’। তিনি এ কথার বিরোধিতা করে বলেন, ‘দেখ! দুর্রুল হুদা, এরা এই হাদীছ থেকে ঐ হাদীছ কারচুপি করে মিলিয়ে ফৎওয়া দিয়েছে। আর তাকেই কুরআনের মর্যাদা দিয়েছে!’।

ইজতিহাদী কিছু মাসআলায় আমাদের সাথে দ্বিমত থাকলেও উনি খুবই দক্ষ মুহাদ্দিছ ছিলেন। হাদীছ শাস্ত্রে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। উনি প্রচুর পড়াশোনা করতেন। ছাত্রদের দারস প্রদানে তার কোন ত্রুটি ছিলনা। দরদমাখা উস্তাদের সেই কথা এখনও আমার স্মৃতিপটে ভাসে। প্রকৃতপক্ষেই তিনি ছিলেন অনেক আলেমের উস্তাদ। আমার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন সঊদী মাবঊছ হাফেয আনীসুর রহমান মাদানী, যিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন বিভাগ থেকে ফারেগ হয়ে বর্তমানে যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। এছাড়া আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম মাদানী, আকমাল হোসাইন মাদানী, আমানুল্লাহ বিন ইসমাইল মাদানী, মিয়া হাবীবুর রহমান মাদানী কুয়েতের ইহইয়াউত তুরাছে চাকুরীরত। এছাড়া রইসুদ্দীন (দিনাজপুর), তালেবুল ইসলাম নওগাঁ নিয়ামতপুরের একটি কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। তারা সবাই এখন বড় বড় জায়গায় আছে। এ তো শুধু আমার সহপাঠীদের কথা বললাম। আরো নাম না জানা উনার কত ছাত্র দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে তার ইয়ত্তা নেই!

তাওহীদের ডাক : আপনি যাত্রাবাড়ী ছাড়া কি আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : জী, হ্যাঁ। আমি কিছু দিনের জন্য বগুড়ার জামীল মাদ্রাসায় পড়েছি। আব্দুল হামীদ নামে আমার এক আরবী ব্যাকরণে দক্ষ বন্ধু ছিল। পরবর্তীতে সে অনেক ভাল শিক্ষক হয়েছিল। সে হানাফী প্রতিষ্ঠান বগুড়া জামীল মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে আমাকে চিঠি মারফত জামীলে যাওয়ার অনুরোধ করেছিল। সে বলল, এখানে আরবী ব্যাকরণ খুব ভাল পড়ায়, তুমি এখানে চলে এস। পরবর্তীতে আমি কাফিয়া ক্লাসে ভর্তি হলাম। কিন্তু আমি বেশি দিন থাকতে পারিনি। কারণ হচ্ছে ওখানে খাওয়া-দাওয়া খুব সাধারণ মানের। ডাউলে পানি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যেত না। দাদা শ্বশুর আলহাজ্জ্ব সাঈদ আলী মোল্লা শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী ছাহেবের পিতা ছিলেন আমার জীবনের একটা বড় গাইড লাইন। উনিও বললেন, তোমার আর হানাফী মাদ্রাসায় পড়া লাগবেনা, তুমি চলে এস। ফলে সেখান থেকে চলে এলাম। মাদ্রাসা জীবন শেষ করে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করি।

তাওহীদের ডাক : মুহাতারাম আমীরে জামা‘আতের সাথে আপনার কিভাবে পরিচয় হয়?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : আমি তখন মাদ্রাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া যাত্রাবাড়ীর ছাত্র। তৎকালীন সময়ে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যার মাদ্রাসায় গিয়ে আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কুরায়শী ছাহেবের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার লাইব্রেরীতে প্রচুর পড়াশোনা করতেন। এমনকি উনি কখনও রাতে বিছানা পেতে লাইব্রেরীতেই ঘুমাতেন। মাদ্রাসা মসজিদে নিয়মিত তা‘লীমও দিতেন। আমি একদিন আমার সহপাঠী মিয়াঁ হাবীবুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি কে? সে বলল, উনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। উনি খুবই বিজ্ঞ মানুষ। এটা ১৯৮৭ সালের দিকের কথা। স্যারও মিয়া হাবীবুর রহমানের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, আমার বাসা রাজশাহীতে এবং আমি সালাফী ছাহেবের ভাতিজা। স্যার আমাকে যুবসংঘের সাথে কাজ করার দাওয়াত দেন।

আমরা জন্মগতভাবে আহলেহাদীছ ছিলাম। ছালাতে রাফঊল ইয়াদায়েন করতাম। তবে আহলেহাদীছ শুধু একটা আদর্শ নয়, একটা আন্দোলনও বটে-  সেটা বুঝতাম না। আমীরে জামা‘আত আমার চোখ খুলে দিলেন। তখন আমি ‘যুবসংঘ’-এর কার্যক্রম ও কর্মসূচী সম্পর্কে অবগত হই। আমার এক বন্ধু হাফেয রফীকুল ইসলাম মাদ্রাসায় শাখার দায়িত্বশীল ছিল এবং সে বর্তমানে মাদ্রাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার শিক্ষক। সেও আমাকে উদ্বুদ্ধ করে। পরবর্তীতে ‘যুবসংঘ’-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, তাবলীগ, তানযীম, তারবিয়াত ও তাজদীদে মিল্লাত সম্পর্কে জানি এবং পরিচিতি ক ও খ মুখস্থ করে ফেলি। আমীরে জামা‘আত নিয়মিত আমাদের নিয়ে বসতেন এবং পরিচিতি থেকে পড়া ধরতেন। এভাবে মনের অজান্তেই আমীরে জামা‘আত ও যুবসংঘের প্রতি হৃদয়ের ভাললাগা ও ভালাবাসার টান অনুভব করলাম।

পরবর্তীতে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জুম‘আর খুৎবা ও তা‘লীমী বৈঠকে আমাদেরকে তিনি পাঠাতেন। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চলে সাংগঠনিক সফরে আমি ও আমানুল্লাহ ভাই গিয়েছি। এইভাবে আমরা যুবসংঘের দাওয়াতী কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যাই। আহলেহাদীছ জামা‘আতকে নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমীরে জামা‘আত যেভাবে স্বপ্ন দেখতেন, তদানীন্তনকালে আর কাউকে সেই ময়দানে দেখা যায়নি। আসলে আদর্শবান ব্যক্তির ব্যক্তিত্বটাই ভিন্নভাবে গড়ে উঠে। আদর্শ জাতি গঠনে তাঁর নিরলস পরিশ্রম তো তোমরা এখন নিজেরাই দেখতে পাচ্ছ। আল্লাহ তাঁকে নেক হায়াত দান করুন। আমীন!

কুখ্যাত নাস্তিক সালমান রুশদী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবনীকে বিকৃত করে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস (The Satanic Verses) নামের একটি জঘণ্য বই ১৯৮৮ সালে প্রকাশ করে। এর প্রতিবাদে আমীরে জামাআ‘তের নেতৃত্বে রাজধানীর বুকে যুবসংঘের কর্মী হিসাবে জীবনে প্রথম আমি মিছিলে যোগদান করেছিলাম। তরতাযা যুবক আমি বেশ লম্বা গলাতে সেদিন স্লোগান তুলেছিলাম। কোথায় গেল আমার ফেলে আসা যুবসংঘের সেই দিনগুলি!

তাওহীদের ডাক : আপনার শিক্ষকতা জীবন কোত্থেকে ও কিভাবে শুরু হয়েছিল?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : ইসলামের ইতিহাসে পড়াকালীন আমীরে জামা‘আত আমাকে বললেন, তুমি ভাল কোন বই পাবেনা। আমার নিকট একটা ভাল বই আছে, সেটা নিয়ে গিয়ে পড়। তিনি আমাকে একটা লাল রঙের বই দিয়েছিলেন। দেখি সত্যিই তাই। স্যারের বইটা পড়লাম আর কিছু নোটপত্র করলাম। তাতেই আমার সেকেন্ড ক্লাস হয়ে গেল। আমি মাদ্রাসায় আসার পূর্বে আব্দুছ ছামাদ সালাফী ছাহেবের বাড়িতে থেকে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া এবং সংগঠনের কাজকর্ম সবকিছুই দেখভাল করার জন্য তিনি আমাকে আব্দুছ ছামাদ সালাফী ছাহেবকে বলে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেন।

১৯৯১ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫ জন শিক্ষক নিয়ে নওদাপাড়া মাদ্রাসা শুরু হয়েছিল। তখন এই নওদাপাড়া সেই নওদাপাড়া ছিল না। পরিবেশ খুবই নোংরা ছিল। মাদ্রাসার পাশে কড়ই তলায় গাজা ও তাড়ির আড্ডা বসত। মাদ্রাসার পাশেই একটি বসতি ছিল। তখনও পর্যন্ত মাওলানা বদীউয্যামান, হাফেয লুৎফর রহমান ছাহেব কেউই আসেননি। প্রাথমিক অবস্থায় স্থানীয় কিছু ছাত্র নিয়ে মাদ্রাসার ছোট ক্লাসগুলো শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে এখনও মারকাযের বর্তমান ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম, ডাঙ্গীপাড়ার যিয়াউর রহমান, সুলায়মান ও আব্দুল আযীযের কথা মনে পড়ছে। ধীরে ধীরে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগলো। আমার যতদূর মনে পড়ে প্রথমে আসলেন জনাব আফতাবুদ্দীন (চাঁপাই নবাবগঞ্জ)। তারপর আসলেন তার ভাই মাওলানা আব্দুর রহীম। আমি ছাত্রদের পড়ানোর জন্য হেদায়াতুন নাহু, শরহে মিয়াতে আমেল ক্লাস পেলাম। আমীরে জামা‘আতের ছেলে ছাকিব ও নাজীব ছিল আমার ছাত্র। এভাবে নওদাপাড়ায় আমার শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়েছিল।

১৯৯৭ সালে শেখ রফীকুল ইসলাম ভাই চাকুরী পেয়ে যখন নিজ এলাকায় চলে গেলেন, তখন আমারও বাড়ির পাশের গোদাগাড়ী কলেজ থেকে চাকুরীর অফার আসল। কিন্তু সেখানে থার্ড টিচার হিসাবে বেতন কম বিধায় মহিষালবাড়ী মহিলা ডিগ্রী কলেজে চাকুরীর সুযোগ হলে সেখানেই ১৯৯৭ সালে যোগদান করি। এবার আমার চলে যাবার পালা। এই প্রাণের মারকায ছেড়ে চলে যাব, আমীরে জামা‘আত তা ভালভাবে নেননি। আমি যখন বিদায় নিতে যাচ্ছি, তখন আমীরে জামা‘আত বললেন, আমি তোমাকে বিদায় দিতে পারছি না। তিনি একটা কুরআন মাজীদ আমাকে দিয়ে বললেন, তুমি যখন চলেই যাচ্ছ, তাহলে আব্দুল মতীন সালাফী ভাইয়ের এই কুরআনটা সঙ্গে করে নিয়ে যাও। তিনি সেই কুরআনে একটা স্বাক্ষরও দিয়ে দিলেন। তিনি আরো বললেন, তুমি রাতে যদি এখানে থাক, তাহলে আমার প্রতিষ্ঠানটা ভালো চলবে। আমি ভাবলাম, আমীরে জামা‘আতের কথা ঠিকই। কিন্তু একসঙ্গে দুই চাকুরী করাকে অনেকেই ভালভাবে নিবে না। আমার তো বেতন হয়ে গেছে। খামোখা মানুষের সমালোচনার পাত্র হব কেন? অবশেষে কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে ১৯৯৯ সালে আমীরে জামা‘আতের নিকট থেকে বিদায় নিয়েছিলাম।

তাওহীদের ডাক : মারকাযের সেই সময়কার পরিবেশ কেমন ছিল?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : সেই সময়ের ছাত্ররা অনেক মেধাবী ছিল। ক্লাসে সবাই প্রাণ খুলে কথাবার্তা বলতে পারত। ক্লাসে আমি ছাত্রদের বন্ধু হয়ে যেতাম আবার বাইরে আমি বোর্ডিং ও প্রশাসনিক দু’টি দায়িত্বই পালন করতাম। ছাত্ররা আমায় অত্যন্ত ভয় করত আবার শ্রদ্ধাও করত। মাদ্রাসায় কোন কিছু হলেই আমীর জামা‘আত বলতেন, দুর্রুল হুদা দেখ তো কি হয়েছে?

তাবলীগী ইজতেমা শুরু হ’ল। আমীরে জামা‘আতের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মারকায ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলল। ইজতেমায় দিনে দিনে লোক সমাগম বৃদ্ধি পেতে লাগল। আন্দোলন, ইজতেমা এবং মাদ্রাসার পরিসর একই সাথে দিন দিন বৃহত্তর হতে থাকল। সবকিছুই আজ আমার চোখে সামনে। রাণীবাজারে যুবসংঘের অফিস বন্ধ হয়ে গেলে শেখ রফীকুল ইসলাম ভাই আমাদের সাথে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করলেন। মাওলানা বদীউযযামান, হাফেয লুৎফর রহমান, আব্দুর রাযযাক সালাফী, শামসুল আলম, মুফাক্ষার হোসাইন, হাফেয ইউনুস, আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ প্রমুখ মিলিয়ে আমাদের শিক্ষকদের মিলনমেলা। অল্পদিনেই বহু আলেমের সাথে পরিচিত হয়ে গেলাম। প্রত্যেক শিক্ষক আমার রুমে আসত। একই সাথে খাওয়া-দাওয়া করতাম। শিক্ষকদের সাথে খুবই সুসম্পর্ক ছিল আমার। শিক্ষকরাও খুবই আন্তরিক ছিলেন এবং ছাত্রদের পাঠদানের জন্য খুবই উদগ্রীব ছিলেন। তারা সেই সময়ে ছাত্রদেরকে যোগ্য আলেম ও দাঈ বানানোর জন্য খুবই মেহনত করতেন। তারা যতটুকু জানতেন ততটুকু ছাত্রদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। আর এই আন্তরিকতার ফলে এই প্রতিষ্ঠানের একটা সুনাম চলে আসে। সাথে সাথে আল্লাহর কবূলিয়াতের কারণে এটি আজ আহলেহাদীছদের সুবিশাল মারকাযে পরিণত হয়েছে। ফালিল্লাহিল হাম্দ।

তাওহীদের ডাক : ২০০৫ সালে সংগঠনের উপর যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল সেই সময়ের কথা যদি কিছু বলতেন?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : ২০০৫ সালে জোট সরকার আমীরে জামা‘আতকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেফতার সত্যিই সংগঠনের বিষাদময় একটি অধ্যায়। আমি এ চক্রান্তের মাঝে বিজয় দেখেছি। সত্যসেবীদের বাতিলপন্থীরা কিছুই করতে পারবেনা, রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের সত্যতা স্বচক্ষে দেখেছি। স্যার গ্রেফতার হলে প্রথমে কিছুটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে সাংগঠনিকভাবে আমরা তার মোকাবিলা করি এবং ঘোর অমানিশা কেটে নতুন ভোরের আভা ফুটে ওঠে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্যারের গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের কিছু নেতাদের পদস্খলন হয়ে গেল। তারা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র নির্ভেজাল, আপোষহীন সালাফী দাওয়াতকে প্রচলিত গণতন্ত্রী দাওয়াতে রূপ দিতে চাইল। পরবর্তীতে আল্লাহর ফযলে-করমে আমীরে জামা‘আত মুক্তি পেলেন। কিন্তু তারা নিবৃত না হয়ে তথাকথিত ১৮/১৯ দফায় মেতে উঠলেন। এক পর্যায়ে সংগঠন থেকে ছিটকে পড়লেন। আমীরে জামা‘আত তাদেরকে এই ভুল পথ থেকে ফিরে আসার জন্য বারবার আহবান করেছিলেন। তাদের জন্য দরজা খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু তারা সাড়া না দিয়ে হঠকারিতামূলকভাবে চলে গেলেন। আহলেহাদীছ জামা‘আতের বৃহত্তর স্বার্থকেও ক্ষতিগ্রস্ত করলেন। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন।- আমীন!

তাওহীদের ডাক : আপনার জীবনের বিশেষ কোন স্মরণীয় স্মৃতি যদি উল্লেখ করতেন?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : সাংগঠনিক জীবনের স্মৃতিগুলো আমাদের সবসময় দোলা দেয়। আমার জন্য খুব কষ্টকর দিন ছিল ১৯৮৯ সালে যুবসংঘকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার সেই দিনগুলো। হঠাৎ করে মাদ্রাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ায় যুবসংঘের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা এল। এক ঘন্টার নোটিশে তদানীন্তন জমঈয়ত সভাপতি আব্দুল মতীন সালাফী ছাহেবকে (ভারত) কালো তালিকাভুক্ত করে বিদায় করে দিলেন। বংশাল মসজিদের দ্বিতীয় তলায় দীর্ঘক্ষণ মিটিং হওয়ার পরে যুবসংঘে’র সাথে জমঈয়ত সম্পর্কের ইতি টানল। আমীরে জামা‘আত এবং সালাফী ছাহেবরা ঢাকা ত্যাগ করলেন। শুরু হ’ল যুবসংঘের কর্মী কুল্লিয়া শেষ বর্ষের ১১ জন ছাত্রের উপর নানা রকম অপবাদ, তোহমত এবং অমানুষিক নির্যাতন। শিক্ষকরা বলল, আজ থেকে যুবসংঘ বাদ দিয়ে তোমাদের শুববান করতে হবে। ছানাবিয়ার কাগজ কুল্লিয়া শেষ বর্ষে গিয়ে মদীনায় পাঠানো হত। অবশেষে আমরা সব ছাত্র একমত হয়ে গেলাম আমাদের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে, কিন্তু যুবসংঘ ছাড়ব না। কেননা যুবসংঘের কোন অন্যায় আমরা দেখতে পাইনি। তারা ভাল করেই জানত যুবসংঘ করা ছেলেগুলো ট্যালেন্ট। এদেরকে শুববানে ঢুকাতে পারলেই সারা দেশ ঠিক হয়ে যাবে। তারা আমাদেরকে শুববানে যোগদান করাতে ব্যর্থ হওয়ায় চারজনকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিল। আমি, মিয়া হাবিবুর রহমান, আকমাল, আমানুল্লাহ। আমরা ঢাকার মেয়র মরহুম হানিফ ছাহেবের সাথে দেখা করে তাকে বললাম, যুবসংঘ করার অপরাধে আমাদেরকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি শুনে বললেন, তোমরা আমার সন্তানতুল্য, থাম দেখছি।

তিনি ড. আব্দুল বারীর কাছে টেলিফোন করলেন। স্যার কি হয়েছে? আপনার সন্তান যদি কোন অপরাধ করে তাহলে আপনি কি ক্ষমা করবেন না? তিনি আমাদের শিখিয়ে দিলেন, আমরা মিটিংয়ে বসব, সেখানে তোমরা নিজেদের ভুল স্বীকার করবে। আর মাত্র কয়েক মাস আছে। তারপর তোমরা এখান থেকে ফারেগ হয়ে চলে যেও।

মাগরিব পরে জমঈয়ত অফিসে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হল। সেখানে ড. আব্দুল বারী, মেয়র হানিফ ছাহেবসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। থমথমে ও ভীতিকর পরিবেশ। প্রথমে হাবীবুর রহমান, তারপর আমানুল্লাহ, তারপর আমাকে, তারপর আকমালকে ডাকা হ’ল। আমাকে ড. আব্দুল বারী ছাহেব বললেন, ও! তুমি সেই শ্রীমান দুর্রুল হুদা, যে রাতের অন্ধকারে ১০২ নং কক্ষে আব্দুল কুদ্দূসকে হত্যার জন্য গিয়েছিলে। না, স্যার আপনাকে আমার ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্ন তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি (১৯৮৮ সাল) হয়েছ। তুমি কি জানো না যে, এই মাদ্রাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়াহ (উচ্চারণগুলো খুবই সুন্দরভাবে করতেন)-এ পড়াকালীন সময়ে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে পড়া যায় না? আমি চুপ থাকলাম। মূল সমস্যা যুবসংঘ কেন্দ্রিক হলেও সে বিষয়ে কোন প্রশ্ন করা হল না। অতঃপর মেয়র হানিফ ছাহেবের কথামত মাদ্রাসায় গিয়ে কুল্লিয়া শেষ করলাম। কিন্তু যুবসংঘ না ছাড়ার অপরাধে মদীনায় কাগজ পাঠানোর জন্য সনদ আমাদের কাউকে দেওয়া হল না।

অবশ্য আকরামুয্যামান বিন আব্দুস সালাম মাদানী, আকমাল হোসাইন মাদানী, আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী, মিয়া হাবীবুর রহমান মাদানী এঁরা পরে ছানাবিয়ার পবিবর্তে আলিমের কাগজ পাঠিয়ে মদীনায় চলে যান। আর আমি চলে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করলাম।

তাওহীদের ডাক : আব্দুল মতীন সালাফী ছাহেবকে কেন দেশ ছাড়া করা হয়েছিল? কী ছিল তার অপরাধ?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : এদেশে তিনি সঊদী মাবঊছ হিসাবে ছিলেন। উনি আসলে চেয়েছিলেন ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব আহলেহাদীছ আন্দোলনকে যে দুর্বার গতিতে পরিচালন করছেন তা অব্যাহত থাক। কেননা আমীরে জামা‘আতের মুভমেন্ট হ’ল ব্যক্তির সার্বিক জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা, ইসলামের প্রকৃত রূপকে সমাজে বাস্তবায়ন করা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আহলেহাদীছদের মধ্যে যদি কোন খাঁটি লোক থাকে, তিনি হচ্ছেন ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। তিনি যে আন্দোলন করছেন, তা দিয়ে একদিন এদেশে বিপ্লব সৃষ্টি হবে। তাই তিনি আমীরে জামাআ‘তকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতেন। জমঈয়ত নেতৃত্ব তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সহ্য করতে পারেননি। ফলে আমীরে জামা‘আতের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হওয়ার অপরাধে সরকারীভাবে গোপন যোগসাজশে তাকে এদেশ থেকে বের করে দেয়া হয়।

তাওহীদের ডাক : আপনি একাধারে কওমী ও জেনারেল উভয় শিক্ষায় শিক্ষিত। দীর্ঘদিন শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষকদেরকে দক্ষ দাঈ, সংগঠক ও আলেম হিসাবে তৈরীতে আপনার নছীহত কী?

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : আসলে ভাল দাঈ, সংগঠক ও আলেম বানানোর জন্য যেটা আমাদের প্রয়োজন সেটি হল কওমী ও জেনারেল সমন্বিত সিলেবাস। যাতে করে একজন ছাত্র আরবী ভাষায় দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে এবং কুরআন-হাদীছ ভালভাবে বুঝতে পারে। অপরদিকে আধুনিক ইসলাম প্রচারের জন্য যে ভাষাগুলো জানা প্রয়োজন যেমন মাতৃভাষা বাংলা, আরবী, ইংরেজী, উর্দূ ইত্যাদি ভাষাগুলোতে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। আর ছাত্রদের লক্ষ্য থাকতে হবে চাকুরী নয়, ঈমানে-আমলে দক্ষ মানুষে পরিণত হওয়া। শিক্ষার লক্ষ্যই থাকতে হবে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী করা। যাতে করে ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা নিয়ে তারা ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে পারে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। এজন্য মুহাতারাম আমীরে জামা‘আত মাদ্রাসার সিলেবাস নিয়ে যথেষ্ট পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ডও এ বিষয়ে নিরলস কাজে করে যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী এই সমন্বিত সিলেবাসের মাধ্যমে ছাত্ররা একাধারে জ্ঞানার্জন করবে, অপরদিকে জাতির মেধাবী পথপ্রদর্শক হিসাবে গড়ে উঠবে। যোগ্য দাঈ, সংগঠক ও আলেম হিসাবে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত হতে হবে ইনশাআল্লাহ।

তাওহীদের ডাক : ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর মুখপত্র ‘তাওহীদের ডাক’ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? বর্তমান যুবসমাজের উদ্দেশ্যে আপনার মূল্যবান নছীহত কামনা করছি।

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকাটি যুবকদের প্রথম হাতে খড়ি দেওয়ার মত। এই পত্রিকায় যে আর্টিকেলগুলো প্রকাশিত হয়, তা অত্যন্ত চমৎকার। আমি মাঝে মাঝেই পড়ি আর ভাবি এভাবে যদি ‘যুবসংঘে’র ছেলেরা দক্ষ হয়ে ওঠে, তবে তারা জাতির জন্য যুগান্তকারী কাজ করতে পারবে। আজকের যুবকরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, আগামীর আন্দোলন, আগামীর নেতা ও শাসক। আল্লাহ চাইলে একদিন যুবকদের হাতেই দেশের শাসন ক্ষমতা আসতে পারে। তখন শাসন ক্ষমতা চালানোর জন্য এই যুবকরাই হবে এদেশের কর্ণধার ইনশাআল্লাহ। আর একটা কথা আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, যদি যুবকরা দক্ষ ও আদর্শবান না হয়ে চাকুরী-বাকুরীকেই মুখ্য মনে করে, তাহ’লে তাদের দ্বারা কাংখিত বিপ্লব কখনই সাধিত হবে না। আমি আশাবাদী যে, যুবসংঘের ছেলেরাই আগামীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ইন্ডাস্ট্রি, শিল্প-কারখানা তৈরি করবে। প্রত্যেকটা জায়গাতে যেন তারা সঠিক কাজটি করতে পারে। যার যেখানে দক্ষতা সে সেখানে কাজ করবে এবং দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখবে। দেশ ও সমাজ চালাতে গেলে একজন ইঞ্জিনিয়ারও দরকার, আধুনিক প্রযুক্তিবিদও দরকার, কুরআন ও হাদীছের সঠিক জ্ঞান সম্পন্ন আলেমও দরকার। যুবসংঘে’র ছেলেদের আদব ও আখলাক অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক হতে হবে। যুবসংঘে’র প্রতিটি সদস্য সবকিছুই করবে আল্লাহর জন্য; ইহকালীন শান্তি এবং পরকালীন মুক্তির জন্য। আমার নছীহত তোমরা খবরদার দুনিয়ার পেছনে পড়ে যেও না। আখেরাতই যেন হয় তোমাদের মূল লক্ষ্য।

তাওহীদের ডাক : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আগামীর যে দেশ ও সমাজের স্বপ্ন আপনি দেখছেন, যে যুবসংঘ আপনি কামনা করছেন, আমরা যেন তা হতে পারি। এজন্য আপনার নিকট আমরা দো‘আপ্রার্থী।

অধ্যাপক দুর্রুল হুদা : আল্লাহ তোমাদেরকে সফল করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য দো‘আ করি। বিশেষ করে সর্বদা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলো জীবনের সামনে রেখে চলবে। এটাই আমার শেষ কথা। আল্লাহ তোমাদের কল্যাণের ধারায় সিক্ত করুন। আর আমাকে তোমরা এখানে ডেকে সম্মানিত করেছ, এজন্য তোমাদের সকলকেই আন্তরিক ধন্যবাদ ও মুবারকবাদ জানাই। 



আরও