মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা)

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 775 বার পঠিত

[আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও খুলনা যেলার সম্মানিত সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (৫৪)। তিনি ছিলেন আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সূচনালগ্নের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সেসময়ের প্রতিটি জাগরণীর শুরুতে তাঁর গুরুগম্ভীর আর দরাজ কন্ঠের ডায়ালগ মানুষের হৃদয়ে অপূর্ব জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। সেই সংগ্রামী মানুষটি জীবনের শুরুকাল থেকেই একজন স্বচ্ছ বুদ্ধিসম্পন্ন, শুদ্ধভাষী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি খুলনা যেলার রুপসা থানার চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার হিসাবে থাকার পাশাপাশি বাংলার আনাচে-কানাচে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সমাজ গঠনের দাওয়াতী কাজ করে যাচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মনিকোঠায় তাঁর একনিষ্ঠ দাওয়াত যথেষ্ঠ গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। তাঁর ঘটনাবহুল জীবন সম্পর্কে জানার জন্য সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন তাওহীদের ডাক-এর নির্বাহী সম্পাদক ড. মুখতারুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি তাওহীদের ডাক পাঠকদের খেদমতে পেশ করা হ’ল]

তাওহীদের ডাক : আপনার জন্ম ও বেড়ে উঠা সম্পর্কে জানতে চাই।

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : আলহামদুলিল্লাহ আমার জন্ম ১৯৬৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী বর্তমান সাতক্ষীরা যেলার অন্তর্গত আশাশুনি থানার কচুয়া গ্রামে নানার বাড়ীতে। সেই সময় সাতক্ষীরা আলাদাভাবে কোন যেলা ছিল না। বৃহত্তর খুলনার একটি মহকুমা ছিল।

তাওহীদের ডাক : আপনার পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : আমার আববার নাম মকবুল হোসেন মালি আর মার নাম জরিনা বেগম। আমাদের গোষ্ঠীগত পদবী হচ্ছে মালি। আববা মারা গেছেন ২০০৯ সালের ৩১শে জুলাই শুক্রবার। আলহামদুলিল্লাহ আম্মা এখনও বেঁচে আছেন। আর আমরা চার ভাই ও দুই বোন। আমি সবার বড়।

তাওহীদের ডাক : আপনার প্রাথমিক পড়াশোনা কোথায় শুরু হয়?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : আমার পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছিল সাতক্ষীরা যেলার আশাশুনি থানার কচুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারী থেকে যখন আমি হাই স্কুলে ভর্তি হলাম তখন আমার অপুত্রক নানা আশাশুনির ‘গুনাগারকাটি খাইরিয়া আযীযিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা’য় ভর্তি করিয়ে দেন। এভাবে আমার মাদ্রাসার লেখাপড়া শুরু হয়েছিল। মূলতঃ আমি নানা-নানীর সাথেই থাকতাম। তাদের পুত্র সন্তান না থাকার কারণে আমাকেই পুত্রের মত লালন-পালন করতেন। আমার অন্যান্য ভাই-বোন পার্শ্ববর্তী গ্রামে আববা-আম্মার সাথেই থাকত।

আমি গুনাগারকাটি খাইরিয়া আযীযিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় দাখিল অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করি। তারপর সাতক্ষীরা যেলার কলারোয়া থানার অন্তর্গত কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হই। মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের শ্রদ্ধেয় পিতা মাওলানা আহমাদ আলী। কাকডাঙ্গা মাদ্রাসায় পড়াকালীন সময় যুবসংঘের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. এ এস এম আযীযুল্লাহদের বাড়িতে লজিং থাকতাম। ওরা ছিল তিন ভাই, তিন বোন। তার বড় ভাই আমার সম ক্লাসেই স্কুলে পড়ত। আযীযুল্লাহ ও তার মেঝ ভাইকে আমি আরবী শিখাতাম। ওর মাকে আমি মা বলতাম। তিনি আমাকে এতটাই স্নেহ-ভালোবাসা দিতেন যে বাইরে থেকে কেউ গেলে বুঝতে পারত না এই ভদ্রমহিলার তিনটা ছেলে না চারটা। মাতৃস্নেহে তারাও যেমন লালিত-পালিত হয়েছে আমিও তেমন মায়ের আদর পেয়েছি। সেই মাকে যেন মহান আল্লাহ জান্নাতবাসী করেন।-আমীন!

তারপর আমি কাকডাঙ্গা মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৩ সালে দাখিল, ১৯৮৫ সালে আলিম এবং ১৯৮৭ সালে ফাযিল পাশ করেছি। তারপর কামিল পড়তে যশোর যেলার কেশবপুর উপযেলার বাহারুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় গেলাম। ১৯৮৯ সালে সেখানে আমি হাদীছের উপর কামিল ডিগ্রি কৃতিত্বের সাথে অর্জন করি। এরপরে আমি সাতক্ষীরা সরকারী কলেজে থেকে ডিগ্রি পাশ করে মাস্টার্সের জন্য এডমিশন নিয়েছিলাম। আদম্য স্পৃহা থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক বিপর্যয়ের মুখে আমি আর ওটা চালিয়ে যেতে পারিনি।

তাওহীদের ডাক : কখন আপনার কর্মজীবন শুরু হয়?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : ১৯৯০ সালের ১৩ই মার্চ বাগেরহাট যেলার মোড়েলগঞ্জ থানার সোনাখালি আযীযিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় আরবী প্রভাষক হিসাবে যোগদান করি। ওটা আলিম মাদ্রাসা ছিল। সেখানে প্রায় আট বছর চাকুরীর পর ১লা জানুয়ারী ১৯৯৮ সালে খুলনা যেলার রূপসা থানার চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার হিসাবে যোগদান করি। বিগত ২৪ বছর যাবত আমি সেখানেই দায়িত্বরত আছি।

তাওহীদের ডাক : আপনার বিবাহ ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : বৈবাহিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। সবেমাত্র আলিম পাশ করেছি। হঠাৎ শুনলাম, আমার বিয়ে। আমার অপুত্রক নানা-নানী। তাদের পুত্রতুল্য নাতীর নাত বৌ দেখবে। আমার বিয়ের অফারটি এসেছিল গ্রামেরই এক ধনী, বুনিয়াদী ও শিক্ষিত পরিবার থেকে। আমার শ্বশুর আ. ক. ম. আলাউল হক কাদাকাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করে তিনি এখন অবসরে গেছেন। তিনি এখনও বেঁচে আছেন, তবে অসুস্থ। মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের দুই/তিনটা বোনের বিয়ে হয়েছে ঐ বংশে। সেই সুবাদে আমার শ্বশুর আমীরে জাআ‘আতকে মামা সম্বোধন করেন। আমার বিয়ের প্রস্তাব যখন এরকম একটা ফ্যামিলি থেকে আসলো, তখন তা প্রত্যাখ্যান করাটা সমীচিন মনে হ’ল না। যে কারণে ১৯৮৫ সালের ২৭শে নভেম্বর ছাত্রজীবনেই বিয়েটা হয়ে গেল। যদিও খুবই দুঃখজনক হ’ল, আমি তখন কামিল পাশ করে কেবল কর্মজীবনে যোগদান করি। চাকরি হ’ল কিন্তু বেতন হওয়ার আগেই আমার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী একলাম্পশিয়া হয়ে ১৯৯০ সালের ৮ই এপ্রিল ইন্তেকাল করে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। আল্লাহ তাকে মাগফেরাত নসীব করুন।-আমীন!

এটা আমার জীবনের খুব সাংঘাতিক মোড় বদলকারী ঘটনা ছিল। এরপরে ১৯৯০ সালের ১৫ই ডিসেম্বর বাগেরহাট যেলার মোড়েলগঞ্জ থানার সোনাখালি গ্রামের শেখ ইয়াকুব আলীর দ্বিতীয়া কন্যা রহিমা খাতুনকে বিয়ে করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, এই পক্ষে আমার দুই ছেলে এবং একটি মাত্র মেয়ে আছে। বড় ছেলেটা কামিল পরিক্ষার্থী। করোনার কারণে আটকে আছে। পরীক্ষা হলে কামিল উত্তীর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ। দ্বিতীয় ছেলেটা এবার খুলনা বিএল কলেজ থেকে সাইন্স নিয়ে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছে। সে খুলনা যেলা স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল। বড় মেয়েটা খুলনা নৌবাহিনী স্কুল এ্যান্ড কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী। সেও জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছিল।

১৯৯৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর আমি আরেকটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। সেখানে আমার একটি ছেলে ও দু’টি মেয়ে আছে। ছেলেটা অটিস্টিক। বয়স ২২ ছাড়িয়ে গেছে। ছেলেটাকে লালন-পালন করা যথেষ্ট কঠিন কাজ তার মায়ের জন্যে এবং আমার জন্যও। তার সমসাময়িক অনেক অটিস্টিক সন্তানগুলো পরপারে চলে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ! সে এখনও বেঁচে আছে। এই পক্ষের বড় মেয়েটা এবার চতুর্থ শ্রেণীতে ও সর্বকনিষ্ঠা মেয়েটা প্লে গ্রুপে। এদের নিয়েই আমার পারিবারিক জীবন।

তাওহীদের ডাক : আপনার আহলেহাদীছ হওয়ার সূত্রপাতটা কিভাবে হয়েছিল?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : আমার নানা জন্মসূত্রে আহলেহাদীছ ছিলেন আর আমাদের পূর্বপুরুষ হানাফী মাযহাবের অনুসারী। সেই হিসাবে আমিও হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলাম। তবে নানার বাড়িতে থেকে নানার কিছুটা কালচার অনুসরণ করে আহলেহাদীছ মসজিদে যাতায়াত করতাম। এভাবে আহলেহাদীছের আক্বীদা-মানহাজ আমার ভিতরে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। কিন্তু নানা যখন আমাকে একটা পীর ছাহেবের মাদরাসায় ভর্তি করে দিলেন তখন আমি তালেবুল ইলম হয়ে গেলাম। ওস্তাদজীদের সংস্পর্শে থেকে তাদের মত ছালাত-ছিয়াম পড়তে আরম্ভ করলাম। জোর কদমে পীর ছাহেবদের মিলাদ অনুষ্ঠানে শরীক হ’তে লাগলাম। তখন আমার ভিতরে বিলুপ্তপ্রায় হানাফী মাযহাব মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। লোকজন যখন বলাবলি করত তুমি লা-মাযহাবী হয়ে গেছ। তখন সাংঘাতিকভাবে আমার ভিতরে একটা বিদ্রোহ জাগ্রত হয়। সর্বনাশ! আমরা তো বড় মাযহাবের লোক ছিলাম। এই কালচারটি তো আসলে আমাদের নয়।

একদিন জুম‘আর ছালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়ার সময় নানাকে বললাম, তোমাদের মসজিদে তুমি যাও, আমাদের মসজিদে আমি যাচ্ছি। নানা বলল, কেন, কি হয়েছে? আমি বললাম, না তোমরা লা-মাযহাবী, তোমাদের পিছনে আমাদের ছালাত হয় না। নানা বলল, তাই! কার কাছে শুনেছ? বললাম, ওস্তাদজীদের কাছ থেকে শুনেছি? নানা বললেন, হ্যাঁ এরকম একটি ফৎওয়া আছে! তবে তার নিচে আরো একটি ফৎওয়া আছে যে, যাদের ভাত খাওয়া যায়, তাদের পিছনে ছালাত হয়। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে নানা আমাকে তার ভাত খাওয়ার খোটা দিচ্ছেন।

পরে আমাদের নিজস্ব বাড়িতে যেয়ে আববা-আম্মাকে বললাম, আমি আর নানাবাড়ী থাকব না, চলে আসব। কারণ আমার হানাফীয়াত হচ্ছে শক্ত ও মূল্যবান জিনিস। এটা নানার সংস্পর্শে থেকে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আববা বলল, না এটা হবে না আমি তোমার জন্মের পর পরই তোমাকে উনাদের কাছে দিয়ে দিয়েছি। তাদের ছেলে সন্তান নেই। তোমাকে ওখানেই থাকতে হবে। আববা আবার আমাকে সাথে নিয়ে নানাবাড়ি রেখে আসলেন। কিন্তু আমি তখন চরমভাবে হোঁচট খেতে লাগলাম। মাদ্রাসায় বড় ভাইয়েরা আমাকে লা-মাযহাবী, ওহাবী বলে কটাক্ষ করত। কারণ আমি নানাবাড়িতে থাকতাম। আর আমার নানা আহলেহাদীছ সমাজের একজন সম্মানিত মানুষ ছিলেন। সকলেই তাকে মূল্যায়ন করত। তিনি তাহাজ্জুদের ছালাত কখনো মিস করতেন না। আমি শুয়ে থেকে দেখতাম নানা রাতে উঠে ছালাত পড়ছেন, দো‘আ করছেন, কান্নাকাটি করছেন। তখন তাকে খুবই কামিল লোক মনে হত।

তাওহীদের ডাক : আপনার নানা কি আলেম ছিলেন? আর আপনার অবস্থা শেষ পর্যন্ত কিভাবে শুধরিয়ে নিলেন?

মাওলান জাহাঙ্গীর আলম: আমার নানার নাম মুন্সি ফজর আলী সানা। তিনি আলেম ছিলেন না। নানা লা-মাযহাবী, এইটা আমার কাছে খুবই খারাপ লাগত। নানার কাপড়ে প্যাঁচানো কিছু বইয়ের পুটলি ছিল। উনি কিসের ভিত্তিতে এসব করতেন তা খুঁজতে শুরু করলাম। পুটলি হাতড়িয়ে আমি দেখি যে ছোট ছোট বই। আমীন সমস্যার সমাধান, সূরা ফাতিহা পড়ার সমাধান, রাফঊল ইয়াদাঈন সমস্যার সমাধান প্রভৃতি নামের ছোট ছোট বই। নিচে লেখকের নাম লেখা আহকার আহমাদ আলী। আহকার মানে তখনও বুঝতাম না। পরবর্তীতে জানতে পারলাম মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের আববাজান এত বড় স্বনামধন্য আলেম ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা হওয়া সত্ত্বেও নামের আগে আহকার ব্যবহার করতেন। তিনি যে একজন দ্বীনের খাদেম এটাই প্রকাশ করতে বেশী ভালোবাসতেন। আমি সেই বইগুলো পড়তে শুরু করলাম। যুক্তিভিত্তিক দলীলগুলো আমার খুবই ভালো লাগত। ছোটবেলা থেকে আমি নিরপেক্ষতাসম্পন্ন মানুষ ছিলাম। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে কোন কাজ হলে সেটি বুঝতে পারতাম। মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষকদের কাছে ভালো সমাদৃত হতাম। প্রাইমারী স্কুলে আজীবন আমি প্রথমস্থান অর্জন করেছি। মাদ্রাসায় ভর্তি পরীক্ষায় আমি প্রথমস্থান অর্জন করেছিলাম। দাখিলে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। মোটামুটি ছাত্র হিসাবে খারাপ ছিলাম না। এরপর সেই বইগুলা পড়ে আমার ভালো লাগতে লাগল। যুক্তিপূর্ণ মনে হ’ত। তবুও আমি মিলাদ শিখতাম। মিলাদে যে বয়ান দেওয়া হয় এবং মিলাদের যে দরূদ, আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়েদিনা....ইত্যাদি রপ্তত করতাম। কারণ এগুলো পড়লে সকলেই আদর-আপ্যায়ন করত।

পাশাপাশি নানার সেই বইগুলা পড়ে সেই কথাগুলো যে একেবারে ফেলনা নয় এটাও মনে হত। এইরকম একটা দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে চলছিলাম। নানা আমাকে বলত, নানা ভাই! ‘তুমি লেখাপড়া করে তোমার যেটা ভালো লাগে তুমি সেটা করো। তোমাকে এটাই করতে হবে, আমি সেটা বলছি না। তুমি কুরআন হাদীছ পড়ে যেটা সঠিক মনে করবে, সেটা করবে’।

আমাকে নিয়ে ক্লাসের বন্ধু মহল টুকিটাকি কথা বলে। একদিন ক্লাসে এক ওস্তাদকে বললাম, আমার নানা যল্লীন বলে আর আমরা দ্বল্লীন বলি। যদ হবে, না দ্বদ্ব হবে? ওস্তাদজী তখন বললেন, ওটা আরবীতে দ্বদ্ব হবে আর উর্দূতে এসে যদ হবে। আমি আবার উস্তাদজীকে বললাম, মনে করেন, আপনার নাম তো ওমুক (উস্তাদজীর নামটা বললাম)। মাদ্রাসায় আপনার এই নাম আর বাড়িতে গেলে কি আপনার নামটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। স্থান পরিবর্তন হওয়ায় যদি নাম পরিবর্তন না হয় তাহ’লে আরবী বর্ণমালার উচ্চারণ উর্দূতে পরিবর্তন হয় কিভাবে?

আর যদি পরিবর্তন হয় তাহ’লে আপনারাও তো লা-মাযহাবী। কারণ আপনারা ‘ওযূ’ করে আসি বলেন, রামাযান মাস বলেন, আবার পীর ছাহেবের গোরস্থানে গেলে ‘রওযা মোবারকে যাচ্ছি বলেন। তখন উস্তাদজী গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘এই! বেত নিয়ে আই তো’। একজন ছুটে বেত আনতে গেল। আমি তখন মনে মনে বললাম, জীবনে কখনও বেত্রাঘাত খাই নাই, এবার বুঝি আমার নিস্তার নাই। আমি তখন ভয়ে ভয়ে বললাম, উস্তাদজী! না বুঝে বলেছি, আর এরকম বলবো না। উস্তাদজীর কাছে মাফ চেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

এসব পারিপার্শ্বিকতা আমার মনে দারুন ধাক্কা দিল। আমি বিভিন্ন বই পড়া শুরু করলাম। আমীরে জামা‘আতের কথা শুনতাম আর তার বই পড়তে লাগলাম। গল্প শুনতাম মাওলানা আহমাদ আলীর ছেলে আসাদুল্লাহ আল-গালিব বোর্ড স্ট্যান্ড করেছে। পরবর্তীতে স্যারের বইগুলো পড়াশোনার মাধ্যমে আহলেহাদীছ সম্পর্কে আরো বিশদভাবে জানতে পারলাম। এভাবেই আমি জেনেশুনে পুরোপুরি আহলেহাদীছ হয়ে গেলাম আলহামদুলিল্লাহ। আর আমার নানাজান আলেম না হলেও তার বইসমূহ থেকে ইলমের স্বাদ আস্বাদন করেছিলাম।

তাওহীদের ডাক : আপনার সাংগঠনিক জীবন কিভাবে শুরু হয়েছিল? মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের সাথে আপনার সরাসরি সাক্ষাৎ কোন সময় হয়েছিল, মনে পড়ে কি?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : কাকডাঙ্গা মাদ্রাসার একজন শিক্ষক ছিলেন মাওলানা মুহীউদ্দীন। তখন সংগঠন বলতে ‘ছাত্র শিবির’ এবং আদি সংগঠন জমঈয়তের ‘তালাবায়ে আরাবিয়া’ ছাত্রদের মাঝে কাজ করত। আমি শিবির সংগঠনের দিকে ঝুঁকে গিয়েছিলাম। এটা দেখে মুহীউদ্দীন উস্তাদজী বললেন, যে ওখানে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের একটা সংগঠন আছে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’। ১৯৮২ সালের দিকে হুজুর আমাদের কয়েকজনকে ট্রেন যোগে রাজশাহীতে নিয়ে আসলেন। আমি রাণীবাজারে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতকে দেখলাম উনি চেয়ারে বসা ছিলেন। উনি আমাদের সাক্ষাৎকার নিলেন। স্যারের সাথে কথা বলে খুবই ভালো লাগলো। তিনি আমাকে বললেন, ‘কাজ করা লাগবে’। তাঁর বইগুলো পড়া শুরু করলাম। এরপরই বিশদভাবেই জানতে পারলাম যে, আহলেহাদীছদের সব আমলই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত আর হানাফীদের অনেকটাই কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সাথে মিলে না।

পরবর্তীতে আমীরে জামা‘আত কাকডাঙ্গা মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন। তখন মাদ্রাসায় ‘যুবসংঘে’র শাখা গঠন করে আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এইখান থেকেই আমার সাংগঠনিক জীবন শুরু হয়।

আমি দীর্ঘ সময় ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ছিলাম এবং পরবর্তীতে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর দায়িত্বশীল হিসাবে আসলাম। ইস্রাফিল ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে অদ্যবধি আমি খুলনা যেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি।

তাওহীদের ডাক : আপনি সুমিষ্ট গায়ক, বলিষ্ট উপস্থাপক। সেই জায়গা থেকে ‘আল-হেরা’ শিল্পীগোষ্ঠী সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : আমি কামিল পাশ করে আরবী প্রভাষক হিসাবে এক মাদ্রাসায় সবেমাত্র যোগদান করেছি। ঐ সময় শিল্পীদের নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি অডিশনের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে আমি, মরহুম শফীকুল ইসলাম (জয়পুরহাট), আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), নিযামুদ্দীন (কুষ্টিয়া) সহ প্রমুখ শিল্পীদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। আমি সেখানে গেয়েছিলাম,

‘অনাদি, অনন্ত, হে মা‘বূদ সুবহান

দ্বীনহীন এ বান্দারে কর রহমদান’।

যাইহোক ১৯৯১ সালের ২৫ ও ২৬শে এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়াতে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর ২য় জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমার পরপরই মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যারের প্রস্তাবক্রমে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকের পরামর্শ অনুযায়ী জয়পুরহাটের নবাগত তরুণ শিল্পী শফীউল আলম (পরবর্তী নাম ‘শফীকুল ইসলাম’)-এর নেতৃত্বে আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠীর পদযাত্রা শুরু হয়।

আর উপস্থাপনার ব্যাপারটি শুরু হয়েছিল কাকতালীয়ভাবে। প্রথমদিকে আমরা বিভিন্ন কবিতাকে সুর দিয়ে জাগরণী বানাতাম। এভাবে একবার এক সপ্তাহব্যাপী মারকাযের পূর্ব পার্শ্বস্থ মসজিদে ভালো লাগা কবিতাগুলো বাণীবদ্ধ করার জন্য আমাদের রিহার্সেল চলছিল। শফীকুল ইসলাম ভাই গাইছেন,

‘দ্বার খুলে দে দ্বার খুলি

আহলেহাদীছ আন্দোলনে ধন্য আজি এই ধরণি’

হঠাৎ আমার মাথায় আসল যে, একটু ভিন্ন কিছু যোগ করা যায় কি না? আমি সবাইকে বললাম, আমি দরজায় ঠক ঠক করে শব্দে করে বলবো,

‘দ্বার খুলে দাও! আহলেহাদীছ আন্দোলনের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়েছে, এ বাতাস বইছে বাংলার আকাশে বাতাসে, ঘরে ঘরে, দ্বার খুলে দাও!

এভাবে ভয়েস দেওয়ার পরেই শফীকুল ইসলাম ভাই গাইতে শুরু করবে। তখনই শফীকুল ইসলাম বলে উঠেলন, হ্যাঁ, ঠিক ঠিক। এটা কোন পরামর্শ, পরিকল্পনা ছাড়াই কল্পনাতীতভাবেই শুরু হয়েছিল। তারপর আমরা টেপ-রেকর্ড করে আমীরে জামা‘আতের কাছে নিয়ে গেলে তিনি শুনে বললেন, সব জাগরণীগুলো এভাবেই করো। আমি তখন থেকে জাগরণী পড়ে ডায়লগটা নিজে লিখতাম। তারপর আমি আমীরে জামা‘আতের কাছে সংশোধন করে নিয়ে বলতাম। আলহামদুলিল্লাহ! এভাবেই আমাদের জাগরণীগুলো অসাধারণ হয়ে গেল। এভাবে উপস্থাপনার জগতে আসা।

তাওহীদের ডাক : আপনি একজন সুবক্তা। আপনার প্রথমদিন স্টেজের বক্তব্যের কথা মনে পড়ে কি?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : মাদ্রাসায় ছাত্র থাকাকালীন সময় স্টেজে ইসলামী গযল, হামদ, নাত, জাগরণী এবং বক্তৃতা দেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। প্রতিষ্ঠানে বাংলা বক্তৃতায় আমি বরাবরই প্রথমস্থান অধিকার করতাম। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমি যে পক্ষে অবস্থান নিতাম, সবার কাছে মনে হত যে বিজয়ের পাল্লাটা আমার দিকেই গড়াবে। তাদের ভালোবাসা আর সমর্থনটা আমাকে অনুপ্রাণিত করত।

আমি নবম-দশম শ্রেণীতে থাকাকালীন সময় বিভিন্ন ওয়ায মাহফিলে যেতাম। তখন আহলেহাদীছদের মধ্যে দেশ বরেণ্য ওয়ায়েযীন ছিলেন মাওলানা আব্দুল্লাহ ইবনে ফযল, আব্দুল্লাহ বিন কাযেম, আবু তাহের বর্ধমানী, আব্দুর নূর সালাফী প্রমুখ। আমি এসকল বক্তাদের হুবহু স্বর আর ঢং-এ বক্তব্য দিতে পারতাম। আমি তাদের সুরে বক্তৃতা দিলে আড়াল থেকে কেউ বুঝতে পারতো না। আমীরে জামা‘আতের সাথে কোন সফরে থাকলে আমার কাছ থেকে তিনি এসব দেশ বরেণ্য আলেমের বক্তব্য শুনতে চাইতেন। আমি হুবহু তাদের কণ্ঠ নকল করে তাকে শুনাতাম। এতে উপস্থিত সবাই অনেক মজা পেতেন।

একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকেই বক্তৃতায় বেশ পারঙ্গম ছিলাম। একটি স্মৃতি না বললেই নয়। ১৯৭৮ সালের দিকে আমাদের গ্রামে মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। তখন মক্তবের উস্তাদজী আমাদের ৮জন ছাত্রকে বললেন, তোমাদের ওয়াজ করতে হবে। ওয়াজ করতে হবে শুনে সবাই আঁতকে উঠল। আর ওদের আতঙ্কটা আমি বেশি করে তুলে ধরলাম। আমি চালাকি করে বন্ধুদের সাথে গল্প করলাম যে, অমুক জায়গায় ওয়ায করতে গিয়ে একজন দড়াম করে পড়ে গেছে, অমুক জায়গায় আরেকজন খুতবা দিতে গিয়ে হঠাৎ করে মেম্বার থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।

এদিকে আমি উস্তাদজীকে বললাম, আমি তেমন কিছু পারি না। আপনি যদি আমাকে সবার শেষে বলতে দেন তাহলে ওরা যা বলবে তা শুনে হয়তো দু-চার কথা বলতে পারতাম।

মাহফিলের আগেই অন্য এক মক্তবের উস্তাদজীর কাছ থেকে তা‘লীম নিয়ে বক্তব্যের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে স্টেজে বসে আছি। মাহফিলের দিন সহপাঠীরা বক্তব্য দেওয়ার ভয়ে তারা পালিয়ে বিভিন্ন কাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখল। মঞ্চে তাদের নাম ডাকলে কাউকেই খুঁজে পাওয়া গেল না। এমতাবস্থায় আমার নাম ঘোষণা হ’ল। আমি উঠে গিয়ে বক্তব্য পেশ করলাম। যখন আমি বক্তব্য শুরু করি তখন বন্ধুরা সব ছুটে আসল। তারপর আধা ঘন্টা পার হয়ে গেল। আমাদের গ্রামের হাজী ছাহেব আলহাজ্জ মুছলেহুদ্দীন উক্ত মাহফিলের সভাপতি আমার বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে আমাকে পাঁচ টাকা উপহার দিয়েছিলেন। সেই সময় পাঁচ টাকার অনেক দাম। সহপাঠীরা আমার উপর ক্ষেপে গিয়ে তারা বলল, আমাদের ভাগিয়ে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। আমি তাদের বললাম, আমি ওয়ায করতে পারি না। আমি তো ওখানে আছি আর আমাকে ধরে ফেলেছে, আমি আগে থেকে পালাতে পারি নাই। যেই নাম ডেকেছে সেই আমি দাঁড়িয়ে ভয়ে কি বলতে, কি বলে ফেলেছি তা আমি জানি না। তাদের বিশ্বাস না হওয়ায় আমি তাদেরকে বললাম, দেখ! ইসলামী শরী‘আতে এমন প্রতিযোগিতা জায়েয আছে। আমার লাইফে ঐ প্রথম মঞ্চের ওয়ায ছিল।

তাওহীদের ডাক : আপনি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র না হয়েও বিশুদ্ধ ভাষা চয়ন করে কথা বলেন। কিভাবে সম্ভব হয়? এর পেছনে বিশেষ কোন অনুপ্রেরণা আছে কী?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : আমার দীর্ঘদিনের সহপাঠী ঢাবির আইআর (ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ)-এর ছাত্র ও বর্তমান বাঁকাল মাদ্রাসার খন্ডকালীন ইংরেজী শিক্ষক, একজন নিবিড় সমাজ সংস্কারক কাওছার আলী আর আমি ছাত্রাবস্থায় মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁর ‘মোস্তফা চরিত’, গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’, আব্দুর রহীম ছাহেবের ‘সুন্নাহ ও বিদ‘আত’ প্রভৃতি বইগুলো কিনতাম ও পড়তাম। আর আমরা পরস্পরে উচ্চাঙ্গের ভাষা ব্যবহার করে চিঠি লিখতাম। কে কতটা ভাষার লালিত্ব, ছন্দের মাধুর্য, ব্যকরণের চাতুর্য করতে পারে সেটার প্রতিযোগিতা চলত। তারপর ৮০/৮২ সালের দিকে আমীরে জামা‘আতের ২/১টা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা হয়েছে। তাঁর সুর-স্বর ছাড়া বক্তৃতা শুনলাম। এছাড়াও মাওলানা আবু তাহের বর্ধমানী সুর-স্বর ছাড়া উচ্চাঙ্গের ভাষা ব্যবহার করতেন। তখন যে শিক্ষিত মহলে এ ধরণের ভাষার কদর আছে তা বুঝতে পারলাম।

এব্যাপারে জীবনে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় ঘটনাও ঘটেছে। একবার বর্তমান ‘আন্দোলন’-এর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক নূরুল ইসলাম ভাইয়ের গাংনী ডিগ্রি কলেজে দাওয়াত পেলাম। সেখানে প্রফেসর ও অধ্যক্ষ মানের সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে প্রধান আলোচক হিসাবে ড. লোকমান হুসাইন ও দ্বিতীয় আলোচক হিসাবে আমি। আলোচনা শেষ করে বের হয়ে আসার সময় অনেকেই বলল স্যার আপনি কি বাংলায় মাস্টার্স করেছেন? বললাম না, আমি একজন মাদ্রাসায় পড়া ছাত্র। কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ হয়নি। একজন প্রভাষক বলেই ফেলল, আজ আমার মাদ্রাসার ছাত্রদের উপর থেকে একটা ধারণা পাল্টে গেলো। আমি মনে করতাম, মাদ্রাসায় পড়লে শুধুমাত্র আযান, ইক্বামত দিবে ব্যাস এটাই শেষ।

তাওহীদের ডাক : দাওয়াতী ময়দানে কোন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন কী?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হ’তে হয়েছে। বিশেষকরে, হানাফী পরিবেশ থেকে সালাফী মানহাজে আসতে ব্যক্তিগত জীবনে বহু যুদ্ধ-জিহাদ করতে হয়েছে। যেহেতু আমার শিক্ষা ব্যাকগ্রাউন্ড আলিয়া। আর আলিয়া শিক্ষাব্যবস্থা মানেই প্রচলিত হানাফী মাযহাবের জয়জয়কার। যেমন কয়েকটি ঘটনা বলি-

প্রথমত : ১৯৮৯ সালে আমরা ১৮৮ জন ছাত্র কেশবপুর বাহারুল উলুম কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমাদের সবাইকে এক সেট করে ‘কুতুবে ছিত্তাহ’ কিতাব মাদ্রাসা থেকে দেওয়া হয়েছিল। তখন কিতাবগুলো ‘ছিয়া ছিত্তা’ বলে পরিচিত ছিল। আমি যখন বুখারী ও মুসলিমে ছালাত অধ্যায় পড়তাম, তখন আহলেহাদীছদের ছালাতের সাথে অনেক বেশী মিল পেতাম। হানাফীদের ছালাতের সাথে ভয়ানক গড়মিল দেখতাম। বুখারীর উস্তাদজীদের প্রশ্ন করতাম তারা বলত, ‘রফঊল ইয়াদাইন না কারনে কা হাদীছ তিরমিযী মে আয়েগাঁ’। তিরমিযীতে যখন হাদীছ আসল তখন দেখলাম, ‘লাম ইয়াছবুত হাদীছু ইবনে মাসঊদ আন্নান্নাবিয়্যা (ছাঃ) মান লাম ইয়ারফা‘ ইল্লা বিল ইবতিদা’ ‘নবী করীম (ছাঃ) একবারের বেশী হাত উত্তোলন করেননি মর্মে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছটি প্রমাণিত নয়’। একই হাদীছ আবু দাঊদে পেলাম, ‘হাযাল হাদীছ লাইছা বি ছহীহ’। তখন মনটা খারাপ হয়ে যেত। মনে মনে ভাবলাম কিতাবগুলো আমার নিজেরই কেনা দরকার।

ঐ সময় আমার এক বন্ধুর সাথে ঢাকায় গেলাম। সেটা ছিল জীবনের প্রথম রাজধানী ঢাকাতে যাওয়া। টাকার স্বল্পতা থাকার কারণে শুধুমাত্র বুখারী-মুসলিম দুই দুই চার খন্ড কিনলাম। কয়েক মাস পরে গিয়ে সুনানে আরবা‘আর কিতাবগুলোও নিয়ে আসলাম। এবার আমি নিজের কিতাব থেকে পড়ি। মাদ্রাসা থেকে নেয়া কিতাবগুলো ফেরত দিতে গেলাম। তখন বোর্ডিং সুপার তাচ্ছিল্য করে বললেন, কি পড়বে তুমি? আমি কিতাব কিনেছি। কি কিতাব কিনেছো? টাকা বেশী হয়ে গেছে, তাই না?। পরে বুঝতে পারলাম যে, তারা চায় না এই কিতাব সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছাক। পৌঁছালে তাদের গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। তারা চাচ্ছিল মফস্বল এলাকার লোকেরা তাদের নিকট আসবে আর তারা তাদের মত করে ঘটি বুঝ দিবে।

আমি কামিল পরীক্ষার পরে নিয়মিত অধ্যায়ন করতাম। আর আমার হাদীছের উপর দৃঢ়তা বেশী হ’তে লাগল। তখন তো বাংলা অনুবাদ শুধুমাত্র আধুনিক প্রকাশনীর ছিল। তার আগে অনুবাদ হয়েছিল আল্লামা আযীযুল হক্বেরটা। আর সেটা আসলে বুখারীর অনুবাদ না প্রতিবাদ তা বুঝাই দায়! এইভাবে ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে দ্বীন বুঝলাম, আলহামদুলিল্লাহ।

দ্বিতীয়ত : ১৯৯২ সালের মার্চ মাসের দিকে আমার গ্রামে আমার নেতৃত্বে একটা বিশাল জালসা হ’ল। এই জালসায় আমি বক্তব্য দিচ্ছি এমন সময় আমার আপন চাচার নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে জালসাটি পন্ড করার চেষ্টা চালাল। তখন আমাদের গ্রামের জুবায়দুল হক নামের ডানপিটে স্বভাবের ছেলেটি মিছিলকে লক্ষ্য করে টর্চ লাইটের ফোকাস দিয়ে রেখা টেনে বলল, ‘এই যে রেখা টেনে দিলাম যে এর মধ্যে আসবে সে আর মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারবে না’। চাচা মিছিল থামিয়ে দিয়ে বেফাস গালিগালাজ করতে লাগল। পরে জানতে পারলাম, তিনি গন্ডগোল বাঁধিয়ে মারামারি-রক্তারক্তির সব প্রস্ত্ততি নিয়ে এসেছিলেন। আমার অপরাধ আমি লা-মাযহাবী।

আমি তখন খুব বিনয়ের সাথে চাচাকে বললাম, এখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলে প্রশাসনিকভাবে আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হব। প্রোগ্রাম শেষ করে আমি তো বাড়িতে যাবো। আর আমাকে মেরে ফেললে যদি সমাধান হয় তাহ’লে সেটা আপনি বাড়ি গিয়েই করবেন। আমার বংশের চাচাসহ দশ-বারোজন মুরুববী তাদেরকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে মঞ্চে আসতে বলা হ’ল। তাদেরকে বলা হ’ল, আমার অপরাধ কি? তারা বলল, না অপরাধ কিছু না। কিন্তু আমরা তোমার পূর্ব পুরুষ। যারা মারা গেছেন সবাই আমরা হানাফী। তুমি অন্যরকম আমল করছ। তাহ’লে তুমি কোন বেহেশতে যাবে আর আমরা কোন বেহেশতে যাব? বেহেশত কি দু’জনের জন্য আলাদা হবে?

আপনার প্রশ্নটি সুন্দর। আমি উত্তর দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ। এর আগে আপনার কাছে আমার একটা ছোট্ট প্রশ্ন। একেবারে প্রস্ত্ততি ছাড়াই হঠাৎ করেই আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় এই বুদ্ধিটা আসল। এই জিজ্ঞাসার উত্তরটা যদি আপনি দেন তাহ’লে আমার উত্তর দিতে সুবিধা হবে। আমরা মাগরিবের ছালাত শেষ করে মাহফিলের কাজ শুরু করেছি। ধরুন এশার ছালাতের জন্য আযান হয়ে গেল। এবার ধরুন বাগদাদ থেকে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) চলে আসলেন এবং মদীনা থেকে নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। দুই জনই আমাদের সামনে উপস্থিত। বলুন তো এশার ছালাতের জন্য আমরা কাকে ইমাম হিসাবে সামনে দিব? আমার চাচা বললেন, কেন মুহাম্মাদ (ছাঃ) থাকতে অন্য কারোর প্রশ্নই আসে না। উনিই ইমামতি করবেন।

বুখারী শরীফ ডান হাতে উঁচু করে আমি বললাম, আজকে নবীজী নাই কিন্তু তার প্রতিনিধিত্ব করছেন এই বুখারী শরীফ। বাম হাতে হেদায়া উঁচু করে ধরে বললাম, আজকে ইমাম আবু হানীফা নাই কিন্তু তাঁর প্রতিনিধিত্ব করছে, এই হেদায়া। আপনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি হেদায়ার ইমামতি না মেনে বুখারীর ইমামতি মেনে নিয়েছি। অর্থাৎ আবু হানীফার ইমামতি না মেনে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ইমামতি মেনে নিয়েছি। আমি কি অপরাধ করেছি? এবার আমার চাচা মাইকটা টেনে নিয়ে সবাইকে বলল, ও হচ্ছে জাদুকর। তোমাদের ও কথায় ভুলিয়ে রাখবে, ওর সাথে যুক্তিতে পারা যাবে না। অবশেষে চাচা বলল, বংশীয়ভাবে ওকে আমরা বয়কট করবো।

তখন আমি একটু হেকমত খাটিয়ে বললাম, কে এই কথাগুলো বলছে? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কার কণ্ঠে ভেসে আসছে? কথকের পরিচয় যদি জানতে পারতাম, তাহ’লে আমি জিহবা টেনে ছিড়ে ফেলতাম। আমার বংশে যারা মুরুববী, যারা সম্মানিত, শিক্ষিত ব্যক্তি, তাদেরকে এভাবে ভৎর্সনা করা হচ্ছে, ডাক দেওয়া হচ্ছে। তারা কি কিছুই বুঝেন না? যারা এখানে আছেন তারা তো বুঝার জন্যই এসেছেন। তখন উপস্থিত অন্যান্য চাচারা আমাকে বলল, তোমার কিছু করতে হবে না, বেয়াদবটাকে আমরাই শাসন করছি। এই বলে তারা উঠে গেলেন। আর আমরা রাত্রি ১টা পর্যন্ত মাহফিল করলাম। তারপর আমি যে আহলেহাদীছ হয়ে গেছি তা জনসম্মুখে জোরেশোরে প্রচার হয়ে গেল, ফালিল্লাহিল হামদ!

তাওহীদের ডাক : ২০০৫ সালে ২২শে ফেব্রুয়ারীর আমীরে জামা‘আতের গ্রেফতারের সেই ভয়াল রাত্রির অনুভূতি জানতে চাই।

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : সে সময় ভিতরে-বাইরে বিভিন্ন চক্রান্তের কথা আমার খুব মনে পড়ে। দ্বিমুখী চরিত্রগুলো সেদিন পাখা মেলেছিল। এমনিতেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রশাসনিক ঝামেলায় আমীরে জামা‘আত সহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের অসহ্য যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছিল। ঠিক সেই সময় আমাদের সংগঠনের তদানীন্তন নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক স্পৃহা জাগ্রত হ’ল। রাজনৈতিক প্লাটফর্মে নেমে রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে। তা না হলে আমরা এই সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাব না। এই কথার সাথে অনেকেই একমত হ’ল। আর আমি তখন মজলিসে শূরা সদস্য এবং খুলনা যেলার সভাপতি। শূরা মিটিং-এ অনেকেই একমত, অনেকেই নিরব। বলতে গেলে আমি একাই সরব।

এ নিয়ে অনেক কথা। আমীরে জামা‘আতের মুক্তির দাবীতে খুলনার ঐতিহাসিক জিয়া হলে আমরা সম্মেলন করলাম। সেখানে হানাফী ঘরানার আলেম খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল শায়খ মানোয়ার মাদানী, ইসলামী আন্দোলনের নেতা সাখাওয়াত হোসেনসহ আহলেহাদীছদের দেশ বরেণ্য আলেমদের উপস্থিতিতে বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্টিত হ’ল। প্রশাসনের উপর এর অত্যন্ত ইতিবাচক একটা প্রভাব পড়েছিল। হানাফী ভাইয়েরাও আমীরে জামা‘আতের উপর খুব সংবেদন শীল হয়ে পড়েন। তারাও স্যারের মুক্তি কামনা করেন।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তৎকালীন সংগঠনের উর্ধ্বতন দায়িত্বশীল হোটেল টাইগার গার্ডেনে আমাকে খুব শক্ত করে ধরে রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি’ সম্পর্কে বললেন। তারা আমাকে প্রস্তাব দিলেন, খুলনার এই আসনে নির্বাচনী ক্যান্ডিডেট হিসাবে তোমাকে মনোনয়নপত্র কিনতে হবে। এটা শুনে আমি খুব আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলাম।

আমি বললাম, নির্বাচনে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, এ নীতিকে আমি কোনকালেই সমর্থন করতে পারি না। ঠিক আছে আমি দাঁড়াবো। এর আগে একটা কাজ করেন, মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের লেখনীগুলো সব আগে পুড়িয়ে দিন। যে স্তম্ভের উপর আমি দাঁড়িয়ে আছি, তা একটি পরিপূর্ণ সমাজ সংস্কারবাদী সংগঠন। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ বিরোধী কোন তন্ত্রমন্ত্রের পক্ষে আমি থাকতে পারব না বলে সাফ জানিয়ে দিলাম।

তাওহীদের ডাক : আপনি কত সালে পীস টিভিতে গিয়েছিলেন?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : ২০১৪ সালে।

তাওহীদের ডাক : আমীরে জামা‘আত আপনাকে খুব বেশী ভালোবাসে আবার ভুলক্রটিতে বকা দেয়। আপনাদের উপর তাঁর এত ভালবাসা, আপনার কেমন মনে হয়?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : মুহতারাম আমীরে জামা‘আত আমাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন কি না, তা জানি না। তবে আমার সাংগঠনিক জীবনে আমীরে জামা‘আতের নির্দেশনা বা বকা যাই বলি না কেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ‘আতীউল্লাহ ওয়া আতীঊর রাসূল ওয়া উলিল আমরে মিনকুম’ মনে করি। আমীরের আনুগত্য করতে গিয়ে যদি ব্যত্যয় হয় আর তিনি যদি আমাকে বকা বা তিরস্কার করেন, তবে সেটি আমি পুরষ্কার হিসাবে মনে করি।

একটা ঘটনা খুলেই বলি। আমি দীর্ঘদিন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য ছিলাম। একবার খুলনায় জমি কিনতে গিয়ে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। আমি একান্ত বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে চার লক্ষ টাকার লোন নিয়ে জমিটা কিনেছি। কোনভাবে এই তথ্যটি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত শুনে ফেলেন। তিনি একদিন আমাকে বললেন, তুমি কি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে জমি কিনেছ? আমি অকপটে বললাম, জী, স্যার। তাহ’লে তোমার এই কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য পদ বাতিল করা হ’ল, যেহেতু তুমি সূদী লেনদেন করেছ। আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ! আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন মহান আল্লাহ এই কারণে ক্বিয়ামতের মাঠে যেন আমাকে মাফ করে দেন। আমি একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপারগবশতঃ ঋণ নিয়ে ফেলেছিলাম। আর এ কারণে আমার ডিমোশন হচ্ছে। আমি কিছুই মনে করব না। আমি চাই ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ এই হকের পথে যেন আজীবন বেঁচে থাকে। এখান থেকে যেন অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। আমি এখন সাধারণ পরিষদ সদস্য। আমীরে জামা‘আত দো‘আ করেছিলেন, বিধায় দ্রুত সময়ের মধ্যে লোনটা পরিশোধ করে দিয়েছি। এটা আমার জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা। আমীরে জামাআত এমনই এক আপোষহীন ব্যক্তিত্বের স্বাক্ষর কর্মীদের উপর সর্বদা রাখেন যে, আমার মত একজন পুরোনো ও একান্ত ভালোবাসার পাত্র সাথীকেও তিনি অপরাধের শাস্তি দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। নিঃসন্দেহে কর্মীদের হক্বের উপর টিকে থাকার জন্য এমন ঘটনাগুলো প্রেরণা যোগাবে।

তাওহীদের ডাক : তাওহীদের ডাক পত্রিকার পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু জন্য নছীহত করুন?

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম : রাসূল (ছাঃ)-এর নাযিলকৃত অহীর প্রথম শব্দটিই হ’ল ‘পড়’। এজন্য অধিক পরিমাণে পড়তেই হবে এবং জানতে হবে। ‘তাওহীদের ডাক’ একটি বৈপ্লবিক চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ সম্বলিত একটি দ্বি-মাসিক পত্রিকা। আমি মনে করি, যুবসমাজের জন্য ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকাটি পড়ার কোন বিকল্প নেই। আমি পত্রিকাটির সার্বিক উন্নতি কামিনা করছি। তাওহীদের ডাক পত্রিকা সংশ্লিষ্ট সকলকেই আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।

তাওহীদের ডাক : জাযাকাল্লাহ খায়রান! আপনাকেও আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও মুবারকবাদ রইল। 



আরও