আল্লাহর পথে দাওয়াত

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9332 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- قُلْ هَذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْا إِلَى اللَّهِ عَلى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ وَسُبْحانَ اللَّهِ وَما أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ-

‘বলুন (হে মুহাম্মাদ!) ইহাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে এবং আল্লাহ পবিত্র। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১০৮)। 

২- قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ وَلا أُشْرِكَ بِهِ إِلَيْهِ أَدْعُوْا وَإِلَيْهِ مَآبِ-

‘বলুন (হে মুহাম্মাদ!) আমি তো আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই দিকে আহবান করি এং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন’ (রা‘দ ৩৬)

৩- أُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ-

‘আপনি আপনার পালনকর্তার পথের দিকে আহবান করুন হিকমতের সাথে ও উত্তম উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়’ (নাহল ১২৫)

4- إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَإِنْ مِنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ-

‘নিশ্চয়ই আপনাকে সত্য (দাওয়াত) সহকারে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। আর এমন কোন জাতি নেই যার নিকট সতর্ককারী গমন করেনি’ (নাহল ৩৬)

৫- وَلاَ يَصُدُّنَّكَ عَنْ آيَاتِ اللَّهِ بَعْدَ إِذْ أُنْزِلَتْ إِلَيْكَ وَادْعُ إِلى رَبِّكَ وَلاَ تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ-

‘তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে কিছুতেই সেগুলো হতে বিমুখ না করে। তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান কর এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (কাছাছ ৮৭)। 

৬- يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِداً وَّمُبَشِّراً وَّنَذِيْراً وَّداعِياً إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجاً مُّنِيْراً-

‘হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ রূপে’ (আহযাব ৪৫-৪৬)

৭- وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صالِحاً وَقَالَ إِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ-

‘তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার, যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহবান করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম’? (হা-মীম সাজদাহ ৩৩)

৮- فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَما أُمِرْتَ وَلا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَقُلْ آمَنْتُ بِما أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ-

‘সুতরাং আপনি এর প্রতিই দাওয়াত দিন এবং সুদৃঢ় থাকুন তার উপর যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন; আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না এবং বলুন, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি’ (শূরা ১৫)

- كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللَّهِ-

‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের জন্য তোমাদের আবির্ভাব। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে’ (আলে ইমরান ১১০)

১০- وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ-

‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল সর্বদাই থাকা প্রয়োজন যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, ন্যায়ের আদেশ করবে এবং অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম’ (আলে ইমরান ১০৪)

11-وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ-

‘আমি প্রতিটি কওমের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি  মানুষের জন্য এই দাওয়াত নিয়ে যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে এবং ত্বাগূতকে বর্জন করে’ (নাহল ৩৬)

হাদীছে নববী থেকে :

12- عَنْ أَبِي مُوسَى ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : إِنَّمَا مَثَلِي وَمَثَلُ مَا بَعَثَنِيَ اللَّهُ بِهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَتَى قَوْمًا ، فَقَالَ : يَا قَوْمِ ، إِنِّي رَأَيْتُ الْجَيْشَ بِعَيْنَيَّ ، وَإِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْعُرْيَانُ ، فَالنَّجَاءَ ، فَأَطَاعَهُ طَائِفَةٌ مِنْ قَوْمِهِ ، فَأَدْلَجُوا ، فَانْطَلَقُوا عَلَى مَهْلِهِمْ ، فَنَجَوْا ، وَكَذَّبَتْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ ، فَأَصْبَحُوا مَكَانَهُمْ ، فَصَبَّحَهُمُ الْجَيْشُ ، فَأَهْلَكَهُمْ وَاجْتَاحَهُمْ ، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ أَطَاعَنِي ، فَاتَّبَعَ مَا جِئْتُ بِهِ ، وَمَثَلُ مَنْ عَصَانِي ، وَكَذَّبَ بِمَا جِئْتُ بِهِ مِنَ الْحَقِّ"-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার এবং যে বিষয় দিয়ে আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন তার উদাহরণ- এক ব্যক্তি তার কওমের নিকট এসে বলল, হে আমার কওম! আমি আমার এই দুই চোখে শত্রু সৈন্য দেখে এসেছি এবং আমি হচিছ তোমাদের জন্য উলঙ্গ সতর্ককারীর মত। তোমরা দ্রুত মুক্তির পথ অমেবষণ কর! এটা শুনে তার কওমের একদল তার কথা মানল এবং রাতারাতিই চলে গেল। তাতে তারা ধীরে সুস্থে যেতে পারল এবং মুক্তি পেল। আর অপর দল তাকে মিথ্যুক মনে করে ভোর পর্যন্ত নিজেদের স্থানেই রয়ে গেল। ভোরে শত্রু তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করল এবং তাদেরকে ধ্বংস ও সমূলে বিনাশ করে দিল। এটা হল সে ব্যক্তির উদাহরণ- যে আমার আনুগত্য স্বীকার করেছে এবং আমি যা এনেছি তার অনুসরণ করেছে এবং সে ব্যক্তির উদাহরণ যে আমার অবাধ্য হয়েছে এবং আমি যে সত্য তার নিকট এনেছি তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮)

13- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِىَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً ، ..... وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ "-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘একটিমাত্র আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ থেকে মানুষের নিকট পৌঁছে দাও....যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যা আরোপ করল সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্ত্তত করে নেয়’ (বুখারী; মিশকাত হা/১৯৮)

14- قال رسول الله صلي الله عليه وسلم:" إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِىٌّ قَبْلِى إِلاَّ كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ "-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার পূর্বে কোন নবীকেই এই দায়িত্ব ব্যতীত প্রেরণ করা হয়নি যে, তিনি তার কওমকে যা কিছু কল্যাণকর তা সম্পর্কে অবগত করবেন এবং যা কিছু অকল্যাণকর তা সম্পর্কে সতর্ক করবেন’ (ছহীহুল জামে‘ হা/২৪০৩)।

15-وعن سهل بن سعد أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يوم خيبر...." فَوَاللَّهِ لأَنْ يَهْدِىَ اللَّهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ " . متفق عليه -

রাসূল (ছাঃ) খায়বার যুদ্ধের দিন বলেন, ‘আল্লাহর কসম! তোমার মাধ্যমে আল্লাহ যদি একজন ব্যক্তিকেও হেদায়াত দান করেন, তবে সেটা হবে তোমার জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৬০৮০)

16-عن أبي مسعود الأنصاري... قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ " . رواه مسلم -

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কেউ যদি কোন নেক কাজের পথনির্দেশ দেয়, সে ঐ নেক কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য ছওয়াব পায়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৯)।

17-وعن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : " مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا " . رواه مسلم-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে হেদায়াতের দিকে আহবান করে, এ হেদায়াতের যত অনুসরণকারী হবে, তাদের প্রতিদানের সমতুল্য প্রতিদান সে পাবে। অথচ তা তাদের প্রতিদানকে কমিয়ে দিবে না। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে, তার যত অনুসরণকারী হবে, তাদের পাপ সমতুল্য পাপ তার উপর চাপানো হবে। অথচ তা তাদের পাপ লাঘব করবে না’। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৮)

18-عن عبد اللّه بن مسعود- رضي اللّه عنه- عن النّبيّ صلّى اللّه عليه وسلّم قال: نَضَّرَ اللَّهُ امْرَأً سَمِعَ مَقَالَتِى فَوَعَاهَا ثُمَّ أَدَّاهَا إِلَى مَنْ لَمْ يَسْمَعْهَا وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ–

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কথা শুনেছে অতঃপর তা যথাযথভাবে স্মরণ রেখেছে ও রক্ষা করেছে অতঃপর তা যথাযথভাবে এমন ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিয়েছে যে তা শুনেনি। অনেক জ্ঞানের বাহক রয়েছেন যিনি তার চেয়ে অধিক জ্ঞানীর নিকট জ্ঞানের কথা পৌঁছিয়ে দেন’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২২৮, সনদ ছহীহ)

19-عن أبي سعيد الخدري عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : " مَنْ رَأَى مِنكُم مُنْكَراً فَليُغيِّرهُ بيدِهِ ، فإنْ لَمْ يَستَطِعْ فبِلسَانِهِ ، فإنْ لَمْ يَستَطِعْ فَبِقلْبِهِ ، وذلك أَضْعَفُ الإيمانِ " . رواه مسلم-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে, সে যেন তা স্বহস্তে পরিবর্তন করে দেয়, যদি সে ক্ষমতা না থাকে তবে মুখ দ্বারা তার প্রতিবাদ করবে, আর যদি সে ক্ষমতাও না থাকে তবে নিজের অন্তরে তাকে ঘৃণা করবে। আর এটাই হল ঈমানের দুর্বলতম স্তর’ (মুসলিম, মিশকাত হা/ ৫১৩৭)

20-عن حذيفة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : " وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ " . رواه الترمذي-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর নিকট দো‘আ করবে কিন্তু তোমাদের দো‘আ কবুল করা হবে না’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৪০, সনদ হাসান)

বিদ্বানদের কথা :

  1. আল্লামা ইবনুল কাইয়েম বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন মানুষকে জানিয়ে দেন যে, আল্লাহর দিকে আহবানই তাঁর চলার পথ। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহবান করে সে রাসূল (ছাঃ) অনুসৃত পথেই রয়েছে। সে জাগ্রতজ্ঞানের অধিকারী ও তার অনুসারী। আর যে ব্যক্তি এতদ্ভিন্ন অন্য পথে আহবান করে সে রাসূলের অনুসৃত পথে নেই, জাগ্রত জ্ঞানের উপরও নেই এবং জাগ্রতজ্ঞানের অনুসারীও নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহর পথে দাওয়াত প্রদান আল্লাহ প্রেরিত পুরুষ ও তাদের অনুসারীদের কর্তব্য। তারা তাদের কওমের নিকট রাসূলদের খলীফা এবং সাধারণ মানুষ তাদের অনুসরণকারী। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বীয় প্রভুর পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা প্রচার করার জন্য এবং তার রক্ষক ও হেফাযতকারী হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য। মুবাল্লিগগণও একইভাবে দ্বীনের প্রচারের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। রাসূল (ছাঃ) একটি আয়াত জানলেও তা প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। উম্মাতের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার এই কর্তব্যটি শত্রুর ঘাড়ে বর্শার আঘাত পৌঁছে দেওয়ার চেয়েও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বর্শা হানার কাজটি বহু মানুষ করে থাকে কিন্তু দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর দায়িত্বটি কেবল আম্বিয়ায়ে কেরামের উত্তরাধীকারীরাই পালন করেন’ (আত-তাফসীর আল-কাইয়েম, পৃঃ ৪৩০-৪৩১)
  2. আল্লামা ইবনে বায বলেন, ‘ওলামা, মুবাল্লিগ ও শাসকবর্গের উপর অবশ্য কর্তব্য হল মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করা, যাতে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে যায়। এই নির্দেশই বিবৃত হয়েছে পবিত্র কুরআনে- ‘হে রাসূল! আপনি আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে যা কিছু নাযিল হয়েছে তা (মানুষের কাছে) পৌঁছে দিন (মায়েদা ৬৭)। অতএব জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য অপরিহার্য হল মানুষের নিকট আল্লাহর আহবানকে পৌঁছে দেওয়া এবং এ পথে ধৈর্যের সাথে অবস্থান করা। আর তাদের দাওয়াত যেন হয় আল্লাহর কিতাব, রাসূল (ছাঃ)-এর ছহীহ সুন্নাত এবং রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি তথা সালাফে ছালেহীনের মানহাজের উপর ভিত্তিশীল’ (মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া ১/২৪৮ ও ৩৩৩)

সারবস্ত্ত

  1. দাওয়াত প্রদান আল্লাহ নির্দেশিত একটি ফরয আমল।
  2. দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে কল্যাণ ও সঠিক পথ প্রদর্শন করা সম্ভব।
  3. দাওয়াতের মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ সম্ভব।
  4. ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনের মাধ্যম হল দাওয়াত।
  5. দ্বীন ইসলামের বিশ্বজোড়া অবস্থান সৃষ্টি দাওয়াতের অন্যতম লক্ষ।
  6. পৃথিবীর সর্বাধিক উত্তম কথা সেই ব্যক্তির যে আল্লাহর দিকে আহবান করে।
  7. সমাজের সর্বনিম্নস্তর থেকে সর্বোচ্চস্তর পর্যন্ত সমস্ত মানুষই দাওয়াতের মুখাপেক্ষী।
  8. আল্লাহর বাণী ও রাসূলের সুন্নাত থেকে মাত্র একটি বিষয় জানা থাকলেও তা প্রচার করতে হবে।
  9. দাওয়াতদাতার ছওয়াব হল তার দাওয়াতে সঠিক পথে আগমনকারী সমস্ত লোকের ছওয়াবের সমপরিমাণ।
  10. সর্বোপরি ঈমান আনার পর আমলে ছালেহ হল মুমিনের প্রথম কর্তব্য এবং দ্বিতীয় কর্তব্য হল দ্বীনের দাওয়াত প্রদান।


আরও