ইলম (জ্ঞান)

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 855 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1-أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ،

‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালের ভীতিশঙ্কা রাখে এবং তার পালনকর্তার রহমত কামনা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না। বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে যারা বুদ্ধিমান’(যুমার ৯)

2-وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِّ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ كَذَلِكَ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ،

‘মানুষ, জন্তু ও চতুষ্পদ প্রাণীর মধ্যে বহু বর্ণ রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মাঝে প্রকৃত জ্ঞানীরাই কেবল তাকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল’ (ফাতির ২৮)

3- يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ،

‘তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণকর বস্ত্ত প্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে যারা জ্ঞানবান’ (বাক্বারা ২৭৯)

4-قُلْ آمِنُوا بِهِ أَوْ لا تُؤْمِنُوا إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذا يُتْلى عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقانِ سُجَّداً ،

‘তোমরা মান্য কর অথবা অমান্য কর, যারা পূর্ব থেকে জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের কাছে এর তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা নত মস্তকে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে’ (বনী ইসরাঈল ১০৭)

5-هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُوا عَلَيْهِمْ آياتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُبِين ٍ،

‘তিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা ছিল ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট’(জুম‘আ ২)

6-أَفَمَنْ يَعْلَمُ أَنَّمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَى إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ،

‘যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে তা সত্য, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান যে অন্ধ? তারাই বোঝে যারা বোধশক্তিসম্পন্ন’ (রা‘দ ১৯)

7- يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجاتٍ وَاللَّهُ بِما تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ،

‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উঁচু করে দিবেন। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা খবর রাখেন’ (মুজাদালাহ ১১)

৮- ‘এই (কুরআন) যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরে সুস্পষ্ট নিদর্শন’। (আনকাবূত ৪৯) 

৯- ‘তোমাদেরকে খুব অল্পই জ্ঞানদান করা হয়েছে’ (ইসরা ৮৫)

হাদীছে নববী থেকে :

1-إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ،  ( مسلم: 4310 عن أبي هريرة)-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল (ও ছওয়াব) বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি আমল ব্যতীত (যেগুলোর ছওয়াব বন্ধ হয় না) : (১) ছাদাকায়ে জারিয়া, (২) ইলম যার দ্বারা (লোকের) উপকার সাধিত হয় এবং (৩) সুসন্তান, যে তার (পিতা-মাতা) জন্য দো‘আ করে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩)

২- فَضْلُ الْعِلْمِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ فَضْلِ الْعِبَادَةِ ، وَخَيْرُ دِينِكُمُ الْوَرَعُ ، (عن حذيفة)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জ্ঞানের মর্যাদা আমার নিকট ইবাদতের চেয়ে বেশী। তোমাদের দ্বীনের সর্বোত্তম দিক হলো তোমাদের আল্লাহভীতি’ (হাকেম, ত্ববারানী, বায্যার, ছহীছুল জামে‘ হা/ ৪৩১৪)

৩- مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وإنما أنا قاسم والله يعطي،   (البخاري: 71، ومسلم، 1037 عن معاوية)-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকে দ্বীনের সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন। আর আমি নিছক বণ্টনকারী। মূলতঃ দান করেন আল্লাহই’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০০)

৪- مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ طَالِبَ الْعِلْمِ يَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ حَتَّى الْحِيتَانِ فِي الْمَاءِ وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ إِنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ إِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ ،

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সহজ করে দিবেন। তাদের সম্মানে ফেরেশতারা নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেয় এবং তাদের জন্য যমীন ও আসমানের সকল কিছু এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে। একজন ইবাদতকারীর উপর জ্ঞানীর মর্যাদার তুলনা হল সমস্ত তারকারাজির উপর চাঁদের মর্যাদার তুলনা। জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীগণ উত্তরাধিকার হিসাবে দীনার বা দিরহাম (অর্থ-সম্পদ) রেখে যান না বরং তারা জ্ঞানকে রেখে যান। যে তা গ্রহণ করলো সে যেন পূর্ণ অংশই পেল’ (আবুদাঊদ, তিরমীযী, ইবনে মাজাহ, সনদ ছহীহ)

৫-وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ ، (مسلم: 2699 عن ابي هريرة)-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখনই কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করে এবং ঐ বিষয়ে পরস্পর আলোচনা করে তখনই তাদের উপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) শান্তি অবতীর্ণ হতে থাকে। আল্লাহর রহমত তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখে। ফেরেশতারাও তাদেরকে ঘিরে রাখেন এবং আল্লাহ তাদের কথা তার ফেরেশতাদের নিকট উল্লেখ করেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪)

৬- خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآن وَعَلَّمَهُ، ( البخاري: 5027 عن عثمان)-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’ (বুখারী, মিশকাত হা/২১০৯)

বিদ্বানদের কথা

  • লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে বলেন, হে বৎস! তুমি এ জন্য জ্ঞানার্জন করো না যে তুমি জ্ঞানীদের সাথে অহংকার করবে কিংবা মূর্খদের উপর নিজেকে জাহির করবে অথবা বিভিন্ন মজলিসে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করবে। তুমি জ্ঞানকে উদাসীনতায় পরিত্যাগ করো না বা মূর্খতার মাঝে নিক্ষেপ করো না। হে বৎস! তুমি আপন চোখ দিয়ে দ্বীনী মজলিস বাছাই করে নাও। যখন কোন দলকে আল্লাহর স্মরণ করতে দেখবে তখন তাদের সাথে যোগ দিবে। তুমি যদি আলোচ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখ তাহলেও তা তোমার জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আর যদি তা তোমার অজানা থাকে তবে তোমার নতুন কিছু জানা হবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের উপর রহমত নাযিল করবেন যার একটি অংশ তুমিও প্রাপ্ত হবে। আর যে দল আল্লাহকে স্মরণ করে না তাদের সাথে বসবে না। কেননা যদি আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে তোমার জ্ঞান থাকে তাহলে তা তোমাকে কোন ফায়দা দেবে না। পক্ষান্তরে যদি তা তোমার অজানা থাকে তাহলে তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট ও অক্ষম করে ফেলবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন যা তোমাকেও স্পর্শ করবে (আহমাদ হা/১৬৫১, দারেমী হা/৩৭৭, সনদ হাসান)
  • আলী (রাঃ) বলেন, জ্ঞান অর্থ-সম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা জ্ঞান তোমাকেই পাহারা দেয় কিন্তু অর্থকে পাহারা দিতে হয়। অথচ জ্ঞান হলো শাসক, আর অর্থ হলো শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায় (গায্যালী, ইহয়াউল উলূম, ১/১৭-১৮)
  • মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, তোমরা জ্ঞানার্জন কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জনের অর্থ তাঁকে ভয় করা। জ্ঞানের আকাংখা করা ইবাদত। জ্ঞান চর্চা করা হলো তাসবীহ। জ্ঞানের অনুসন্ধান করা জিহাদ। অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেওয়া ছাদাকা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের কারণ। আর তা হালাল-হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, সুখ-দুঃখের ধ্রুবক, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা স্থায়ীভাবে তাকে অনুসরণীয় করে রাখে (আল-আজুরী, আখলাকুল ওলামা, পৃঃ ৩৪-৩৫)
  • আবু দারদা (রাঃ) বলেন, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপার্জিত হয় যেমন ধৈর্য ধৈর্যধারণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। যে ব্যক্তি কল্যাণের খোঁজে ব্যতিব্যস্ত হয় সে কল্যাণ লাভ করে। যে অকল্যাণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে সে অকল্যাণ থেকে রক্ষা পায় (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)
  • তিনি বলেন, কোন মানুষ জ্ঞানী হয়ে জন্ম নেয় না। তাকে জ্ঞান অর্জন করতে হয় (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)
  • হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, অজ্ঞ আমলকারী পথহারা পথিকের ন্যায়। সে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশী করে। অতএব তুমি জ্ঞানার্জন কর এমনভাবে যাতে তা ইবাদতকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, আবার ইবাদত কর এমনভাবে যেন তা জ্ঞানার্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। একদল লোক এমনভাবে ইবাদতে ডুবে থাকে যে তারা জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায় না, অথচ তারা উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর তরবারী চালিয়ে দেয়। যদি জ্ঞান থাকত তাহলে তারা এরূপ কর্মে লিপ্ত হতে পারত না।
  • মুজাহিদ বিন জুবায়ের বলেন, লজ্জা ও ভয় হলো জ্ঞানার্জনের প্রতিবন্ধকতা (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী , ১/২২৮ পৃঃ)
  • ইবনে শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন, ইলম হলো সংরক্ষিত সম্পদ, আর এই সম্পদ ভান্ডারটির চাবী হলো প্রশ্ন।
  • ইয়াহইয়া বিন খালেদ বলেন, তুমি অল্প হলেও জ্ঞানের প্রতিটি শাখাকে আয়ত্ব করো। কারণ প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞানলাভ মানুষকে উচ্চকিত করে। আর যে বিষয়টি তোমার নিকট অজ্ঞাত তা তোমার জন্য শত্রুস্বরূপ। জ্ঞানের মাধ্যমেই তুমি তার হাত থেকে নিরাপদ হতে পার।
  • মাসরুক (রহঃ) বলেন, একজন ব্যক্তির জ্ঞানী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে আল্লাহকে ভয় করে আর মূর্খ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে নিজের জ্ঞান নিয়ে চমৎকৃত হয়।
  • আওন বিন আব্দুল্লাহ বলেন, তোমার যদি জ্ঞানী হওয়ার সাধ্য থাকে জ্ঞানী হও, যদি সাধ্য না থাকে তাহলেও জ্ঞানান্বেষী হও। যদি জ্ঞানান্বেষী হওয়ার সাধ্যও না থাকে তবে জ্ঞানীদের প্রতি ভালবাসা রাখ, তাও যদি না পার কমপক্ষে তাদেরকে ঘৃণা করো না।
  • ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, তুমি যখন কোন বিষয় জানবে, তোমার চেহারায় তার চিহ্ন, প্রভাব, প্রশান্তি, মর্যাদা ও ধৈর্যশীলতা ফুটে উঠবে। জ্ঞানীরা কখনো বাচালের মত কথা বলেন না, মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি রয়েছে যারা একমাসের কথা এক ঘণ্টায় বলে (ইবনুল হাজ, আল-মাদখাল, ২/১২৪)
  • মুহাম্মাদ ইবনুল ফাযল (রহঃ) বলেন, বহু মূর্খ ব্যক্তি রয়েছে যার কাছে জ্ঞান উপস্থিত হয়েছে কিন্তু সে তা দূরে নিক্ষেপ করেছে। বহু দুনিয়াত্যাগী আমলকারী রয়েছে যে জাহেলিয়াতের আমল করে তার আমলগুলো নষ্ট করে ফেলেছে। মানুষের সর্বপ্রথম বের হওয়া জিনিসটি হলো তার জিহবা (কথা বলা) আর জ্ঞান থেকে বের হওয়া প্রথম জিনিসটি হল ধৈর্য (শু‘আবুল ঈমান ৭/৪২৮)
  • ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, খাদ্য, পানীয়ের চেয়ে জ্ঞানের গুরুত্ব অধিক। কেননা খাদ্য দিনে একবার বা দু’বার প্রয়োজন হয়। কিন্তু জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে প্রতিটি নিঃশ্বাসের সমপরিমাণে (মাদারিজুস সালেকীন ২/৪৭০)
  • সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, যে বিষয় আমি জেনেছি তা যদি আমল করি তবেই আমি মানুষের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী, আর যদি প্রাপ্ত জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করি তবে দুনিয়ার বুকে আমার চেয়ে অজ্ঞ আর কেউ নেই।
  • ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে আর মু’মিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশ হয় তার আমলের মাধ্যমে।
  • জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেন, জ্ঞান হলো আমলের দাস। আর আমল হলো জ্ঞানের চূড়ান্ত লক্ষ্য। যদি আমলের প্রয়োজন না থাকত তবে জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন হত না। যদি জ্ঞান না থাকত তবে আমলেরও প্রয়োজন হত না। তাই সত্য জানার পর তা পরিত্যাগকারীর চেয়ে সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি অধিক উত্তম।
  • ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যদি জ্ঞানের অধিকারীগণ জ্ঞানকে সংরক্ষণ করতেন এবং যথার্থ স্থানে তাকে রাখতেন তবে তাঁরা দুনিয়াবাসীর উপর জয়লাভ করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তাঁরা জ্ঞানকে দুনিয়াদারদের কাছে সমর্পণ করেছেন দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের অভিপ্রায়ে। ফলে তাঁরা অপদস্ত হয়েছেন।

সারবস্ত্ত

  1. আল্লাহকে জানা ও তাঁর ইবাদত করার মাধ্যম হলো জ্ঞান।
  2. বিশুদ্ধ বিশ্বাস ও সঠিক আমলের মাধ্যম জ্ঞান।
  3. জ্ঞানার্জন একটি ইবাদত ।
  4. জ্ঞানই আল্লাহভীতির উপাদান।
  5. জ্ঞান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ দান।
  6. জ্ঞান দুনিয়া ও আখেরাতে মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি।
  7. জ্ঞান সত্য-মিথ্যা ও কল্যাণ-অকল্যাণের একমাত্র মানদন্ড।
  8. যে জ্ঞান আল্লাহর স্মরণ বহির্ভূত তা প্রকৃত জ্ঞান নয়।
  9. মানবকল্যাণের সর্বোত্তম মাধ্যম জ্ঞান। কেননা জ্ঞানের মাধ্যমেই    মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে সত্য ও কল্যাণের আলোয় উদ্ভাসিত করা যায়।
  10. জ্ঞান বিতরণ ছাদাকায়ে জারিয়া, যার পুরষ্কার অন্তহীন।
  11. জ্ঞান মানুষকে নবীগণের (আঃ) পরই স্থান দেয়।
  12. জ্ঞান চূড়ান্ত সফলতা তথা জান্নাত লাভের কারণ।


আরও