ইসলামের প্রথম সমাচার

আসাদ বিন আব্দুল আযীয 783 বার পঠিত

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা সৃষ্টি সমূহের মধ্যে প্রথম সৃষ্টি হ’ল কলম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ لَهُ اكْتُبْ. قَالَ رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَىْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম তৈরী করেন। এরপর তিনি কলমকে বলেন, লিখ। কলম বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি কি লিখব? তখন আল্লাহ বলেন, তুমি ক্বিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্ট সমস্ত জীবের তাকদীর লিখ’।[1]

আবার প্রতিবছর লাইলাতুল কদরের রাত্রিতেও তাক্বদীর লেখা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ‘সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়’ (দুখান ৪৪/৪)

এভাবে মায়ের গর্ভেও তাক্বদীর লেখা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,يَدْخُلُ الْمَلَكُ عَلَى النُّطْفَةِ بَعْدَ مَا تَسْتَقِرُّ فِى الرَّحِمِ بِأَرْبَعِينَ أَوْ خَمْسَةٍ وَأَرْبَعِينَ لَيْلَةً فَيَقُولُ يَا رَبِّ أَشَقِىٌّ أَوْ سَعِيدٌ فَيُكْتَبَانِ فَيَقُولُ أَىْ رَبِّ أَذَكَرٌ أَوْ أُنْثَى فَيُكْتَبَانِ وَيُكْتَبُ عَمَلُهُ وَأَثَرُهُ وَأَجَلُهُ وَرِزْقُهُ ثُمَّ تُطْوَى الصُّحُفُ فَلاَ يُزَادُ فِيهَا وَلاَ يُنْقَصُ ‘জরায়ুতে চল্লিশ কিংবা পঁয়তাল্লিশ দিন শুক্রবিন্দু স্থির থাকার পর সেখানে ফিরিশতা প্রবেশ করে। এরপর সে বলতে থাকে, হে পরওয়ারদিগার! সে কি দূর্ভাগা না পূণ্যবান? তখন লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর সে বলতে থাকে, সে কি পুরুষ না স্ত্রীলোক? তখন নির্দেশ অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়। তার আমল, আচরণ, নিয়তি ও জীবিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর ফলকটিকে ভাজ করে দেওয়া হয়। তাতে কোন সংযোজন করা হবে না এবং বিয়োজনও নয়’।[2]

প্রথম অবতীর্ণ ৫ আয়াতের মধ্যেও কলমের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে কলমের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা কোন জ্ঞান আহরণ করতে হ’লে কিতাবাদি পড়তে হবে আর সেটা লিখিত না হ’লে কিভাবে সম্ভব। মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ- عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ‘যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দান করেছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না’ (আলাক্ব ৯৬/৪-৫)

প্রথম দিন : রবিবার

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রথম একটি দিন সৃষ্টি করলেন এবং তার নাম রাখলেন ইয়াউমুল আহাদ বা রবিবার। অতঃপর আরেকটি দিন সৃষ্টি করলেন এবং তার নাম রাখলেন ইয়াউমুল ইছনাইন বা সোমবার। তৃতীয়বার আরেকটি দিন সৃষ্টি করলেন এবং তার নাম রাখলেন আছ-ছুলাছা যভ মঙ্গলবার। এরপর চতুর্থবার সৃষ্টি করলেন এবং তার নাম রাখলেন আরবিআ বা বুধবার। অতঃপর পঞ্চমবার সৃষ্টি করলেন এবং নাম রাখলেন আল-খামীস বা বৃহস্পতিবার। অতঃপর আল্লাহ রবিবার ও সোমবার পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। আর মঙ্গলবারের দিন পাহাড় সৃষ্টি করলেন। এই দিনটিকে মানুষ ‘ইয়াউমুন ছাকীল’ বলে থাকে। এরপর তিনি জনপদ, পাহাড়, নদী গাছ-পালা বুধবার সৃষ্টি করলেন। পশু-পাখি, চতুষ্পদ জন্তু, পোকা-মাকড় এবং আপদ-বিপদ সৃষ্টি করেন বৃহস্পতিবার। আর মানুষকে সৃষ্টি করেন শুক্রবারের দিন। আর সমস্ত সৃষ্টি শেষ করেন শনিবারের দিন’।[3]

প্রথম মানুষ : আদম (আঃ)

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আঃ)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।[4]

প্রথম নবী : আদম (আঃ)

প্রথম মানুষ হিসাবে আদম (আঃ) প্রথম নবীও ছিলেন। হযরত আবু যার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أول الأنبياء آدم وآخرهم محمد صلى الله عليهم وسلم أجمعين ‘প্রথম নবী হলেন আদম (আঃ) এবং তাদের সকলের শেষ নবী হলে মুহাম্মাদ (ছাঃ)’।[5]

প্রথম ক্বিয়াসকারী : ইবলীস

প্রথম ক্বিয়াসকারী হ’ল ইবলীস। ইবনু সীরীন বলেন, أَوَّلُ مَنْ قَاسَ إِبْلِيسُ، وَمَا عُبِدَتِ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ إِلَّا بِالْمَقَايِيسِ ‘প্রথম ক্বিয়াসকারী হ’ল ইবলীস। আর ক্বিয়াসের মাধ্যমেই সূর্য ও চন্দ্রের ইবাদত করা হয়েছিল’।[6]

হাসান (রহঃ) বলেন, আল্লাহর শত্রু ইবলীস প্রথম ক্বিয়াস করে বলে, قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ ‘সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। কেননা আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে’ (আরাফ ৭/১২)

প্রথম নারী : হাওয়া (আঃ)

আদম (রাঃ)-এর পর প্রথম নারী হলেন মা হাওয়া (আঃ), যাকে আদমের পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا ‘অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন’।[7] হাওয়া (আঃ)-এর মূল হ’লেন আদম, যিনি তখন জীবন্ত ব্যক্তি। তাই তাকে ‘হাওয়া’ বলা হয়, যা ‘হাই’ (জীবন্ত) থেকে উৎপন্ন’।[8]

আদম (আঃ)-কে প্রথম দর্শনকারী সৃষ্টি : ইবলীস

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন জান্নাতে আদমের আকৃতি তৈরী করলেন এবং যতদিন ইচ্ছা এভাবেই রেখে দিলেন, তখন ইবলীস তার চারিদিকে ঘুরছিল এবং লক্ষ্য করছিল এটা আবার কি? অতঃপর যখন সে দেখল যে এর ভিতরে ফাঁকা রয়েছে তখন সে বুঝল যে এটা এমন সৃষ্টি যে নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারবে না’।[9] 

মানবজাতির প্রথম গৃহ : কা‘বা

মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো মক্কায়, তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী’ (আলে ইমরান ৩/৯৬)

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى ذَرٍّ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِى الأَرْضِ أَوَّلُ قَالَ الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ الْمَسْجِدُ الأَقْصَى قُلْتُ كَمْ بَيْنَهُمَا قَالَ أَرْبَعُونَ سَنَةً وَأَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ فَصَلِّ فَهُوَ مَسْجِدٌ আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল? তিনি বললেন, মাসজিদুল হারাম- (কাবা গৃহ)। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, অতঃপর কোনটি। তিনি বললেন, মাসজিদুল আক্বসা (বায়তুল মুকাদ্দাস)। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই দু’টির মধ্যে কালের ব্যবধান কতটুকু? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। তবে যেখানেই ছালাতের ওয়াক্ত হবে, সেখানেই ছালাত আদায় করে নিবে। সেটিই মসজিদ’।[10]

আসমানে প্রথম পাপী :

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর সকলকে সিজদা করার নির্দেশ দিলেন। সকলে সিজদা করলে ইবলীস করেনি হিংসার বশবর্তী হয়ে। মহান আল্লাহ বলেন مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ ‘আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম, তখন কোন বস্ত্ত তোমাকে বাধা দিল যে তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে’ (‘আরাফ ৭/১২)

প্রথম ভুলকারী : আদম (আঃ)

প্রথম ভুলকারী ব্যক্তি হলেন হযরত আদম (আঃ)। তাঁর সম্পর্কে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَى آدَمَ مِنْ قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا ‘আর আমরা ইতিপূর্বে আদমের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম (এই মর্মে যে, ‘তুমি এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না)। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমরা তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি’ (ত্বহা ২০/১১৫)

এজন্য প্রবাদে আছে, ‘প্রথম মানুষ প্রথম ভুলকারী’।

ইবনু আববাস বলেন, ‘তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। আর এটা হয়েছিল অমনযোগিতা ও ভুলে যাওয়ার কারণে’।[11] অন্যত্র ইবনু আববাস বলেন, ‘এজন্য মানুষের নাম ইনসান’ বা মানুষ রাখা হয়েছে কারণ সে তার অঙ্গীকার ভুলে গিয়েছিল’।[12]

মানুষের উপর শয়তানের প্রথম আক্রম:

আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ানো এবং তাদের জান্নাতী পোষাক খুলে ফেলা। মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর বলেছিলেন, وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ ‘কিন্তু তোমরা দু’জন এই গাছটির নিকটে যেয়ো না। তাহ’লে তোমরা সীমা লংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (বাক্বারাহ ২/৩৫)। কিন্তু শয়তান তাদের প্ররোচনা দিয়েছিল এই বলে যে আল্লাহ তোমাদের এই গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন এই জন্য যে যাতে তোমরা দু’জন ফিরিশতা হয়ে যাও অথবা তোমরা চিরস্থায়ী হয়ে যাও। কুরআনের ভাষায় মহান আল্লাহ বলেন, فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِنْ سَوْآتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ ‘অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান যা পরস্পর থেকে গোপন ছিল তা প্রকাশ করে দেবার জন্য শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, তোমাদের প্রতিপালক এই বৃক্ষ থেকে তোমাদের নিষেধ করেছেন কেবল এজন্যে যে, তাহলে তোমরা দু’জন ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা এখানে চিরস্থায়ী বসবাসকারী হয়ে যাবে’ (আরাফ ৭/২০)

এরপর যা হ’ল তা কুরআনের ভাষায়-فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا ‘অতঃপর যখন তারা উক্ত বৃক্ষের স্বাদ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ল’ (আরাফ ৭/২২)। আর এটাই হ’ল শয়তানের প্রথম আক্রমণ।

পৃথিবীতে সংস্কৃতি বিকাশের প্রথম ধাপ :

পৃথিবীতে সংস্কৃতি বিকাশের প্রথম ধাপ হ’ল পোষাক। যদিও অনেক নাস্তিক পূর্ববর্তী জাতি-গোষ্ঠীকে পোষাক সংক্রান্ত অপবাদ দিয়ে থাকে। অথচ আদম ও হাওয়া (আঃ) তাদের থেকে জান্নাতী পোশাক খুলে যাওয়া পরপরই তারা জান্নাতের পাতা দ্বারা তাদের লজ্জাস্থান ঢাকার চেষ্টা করেছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ ‘ফলে তারা জান্নাতের পাতাসমূহ দিয়ে তা ঢাকতে লাগল’ (আরাফ ৭/২২)

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,يَابَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ ‘হে আদম সন্তান! আমরা তোমাদের উপর পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি বেশভূষার উপকরণ সমূহ। তবে আল্লাহভীতির পোষাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (আরাফ ৭/২৬)

সুতরাং বলাই যেতে পারে মানুষের প্রথম ফিৎরাত, প্রথম মমনশীলতার আবির্ভাব ঘটে পোষাকের মাধ্যমে’।[13]

পৃথিবীতে প্রথম কুরবানী :

পৃথিবীর প্রথম কুরবানী আদম (আঃ)-এর দুই পুত্র হাবীল ও কাবীলের। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ ‘তুমি তাদের নিকট বর্ণনা কর আদম পুত্রদ্বয়ের ঘটনা সত্যসহকারে। যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজনের কুরবানী কবুল হ’ল, কিন্তু অন্যেরটা কবুল হলো না। তখন সে বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। জবাবে অপরজন বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ কেবল মুত্তাক্বীদের আমলই কবুল করে থাকেন’ (মায়েদাহ ৫/২৭)

পৃথিবীতে প্রথম হত্যা :

পৃথিবীতে প্রথম হত্যাকান্ড আদম (আঃ)-এর দুই সন্তানের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। কাবীল তার ছোট ভাই হাবীলকে হিংসার বশবর্তী হত্যা করেছিল।[14] কিন্তু ছোট ভাই তাকে বাধা পর্যন্ত দেইনি। আল্লাহ বলেন,لَئِنْ بَسَطْتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لِأَقْتُلَكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ ‘যদি তুমি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তোমার হাত বাড়াও, তবুও আমি তোমাকে হত্যার জন্য আমার হাত বাড়াবো না। আমি বিশ্ব প্রভু আল্লাহকে ভয় করি’ (মায়েদাহ ৫/২৮)

পৃথিবীতে প্রথম পাপকারী ও হত্যাকারী :

পৃথিবীতে প্রথম পাপকারী ও হত্যাকারী হ’ল কাবীল। তাই পৃথিবীতে যত অন্যায়ভাবে হত্যা হবে তার পাপের একটা অংশ তার আমলনামায় লিখা হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ نَفْسٍ تُقْتَلُ ظُلْمًا إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا وَذَلِكَ لأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ أَسَنَّ الْقَتْلَ ‘যে কাউকেই অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় তার খুনের হিস্যা আদম পুত্র (কাবিল)-এর উপরও গিয়ে বর্তাবে। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার প্রথা চালু করে’।[15]

অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ ‘কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে, তার এ খুনের পাপের একাংশ আদম (আঃ)-এর প্রথম ছেলের (কাবিলের) উপর বর্তায়। কারণ সে-ই সর্বপ্রথম হত্যার প্রচলন করেছে’।[16]

প্রথম রাসূল : নূহ (আঃ)

প্রথম রাসূল হলেন হযরত নূহ (আঃ)। শাফা‘আতের হাদীছে এসেছে, ক্বিয়ামতের মাঠে মানুষজন আদম (আঃ)-এর পর নূহ (আঃ)-এর নিকট এসে বলবে,يَا نُوحُ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى الأَرْضِ وَسَمَّاكَ اللَّهُ عَبْدًا شَكُورًا اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ ‘এ মাটির পৃথিবীতে আপনিই প্রথম রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে ‘কৃতজ্ঞ বান্দা’ বলে অভিহিত করেছেন। আমাদের জন্যে আপনার রবের কাছে সুফারিশ করুন’।[17] 

সর্বপ্রথম জানাযার ছালাত :

সর্বপ্রথম জানাযার ছালাত শুরু করেন ফেরেশতাগণ। মৃত ব্যক্তি ছিলেন আদম (আঃ)’।[18]

 লেখক : পিয়ারপুর, ধুরইল, মোহনপুর, রাজশাহী


[1]. আবু দাউদ হা/৪৭০০; তিরমিযী হা/৩৩১৯।

[2]. মুসলিম হা/২৬৪৪।

[3]. তাফসীরে তাবারী ২১/৪৩৩; আত-তারীখুল কাবীর ৭/১০০ পৃ.; আল-জারাহ ওয়াত তাদীল ৭/৪৭ পৃ.; আল-উজমা ৮৮১ পৃ.; তারীখে দেমাশক ১/৫০পৃ.।

[4]. মুমিনূন ২৩/১২; ছাফফাত ৩৭/১১; রহমান ৫৫/১৪; তীন ৯৫/৪ ইত্যাদি।

[5]. আস-সীরাত লি-হিববান ৩৮৪ পৃ.; ফৎহুল কাবীর ১/৪৬৬ পৃ.।

[6]. ইবনু আবী শায়বা ১৪/৮৬; দারেমী হা/১৮৯; বায়হাক্বীর আল-মাদখাল হা/২২৩; হিলইয়াতুল আউলিয়া ৩/১৯৬ পৃ.।

[7]. নিসা ৪/১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৩৮।

[8]. (কুরতুবী), বাক্বারাহ ৩৫; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬২ পৃঃ।

[9]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭০২।

[10]. বুখারী হা/৩৩৬৬; মুসলিম হা/৫২০; মিশকাত হা/৭৫৩।

[11]. কুরতুবী ১১/২৫১ পৃ.।

[12]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৫/৩২০; তাফসীরে তাবারী ১৮/৩৮৩।

[13]. পোষাক, ইবনু আশুর ৮/৮৩-৮৪।

[14]. তাফসীরে কুরতুবী ৬/১৩৩ পৃ.।

[15]. তিরমিযী হা/২৬৭৩; ইবনু মাজাহ হা/২৬১৬।

[16]. বুখারী হা/৩৩৩৫; মুসলিম হা/১৬৭৭; মিশকাত হা/২১১।

[17]. বুখারী হা/৩৩৪০; মুসলিম হা/১৯৪; মিশকাত হা/৫৫৭২।

[18]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৯১; আহমাদ হা/২১২৭০৮, সনদ ছহীহ, আলবানী, যঈফাহ হা/২৮৭২-এর আলোচনা।



বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও