রোগীর পরিচর্যা

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 709 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ- الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ- أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ-

(১) ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যাদের কোন বিপদ আসলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাব। তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে রয়েছে অফুরন্ত দয়া ও অনুগ্রহ। আর তারাই হ’ল সুপথপ্রাপ্ত’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫-১৫৭)

2- الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِينِ- وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ-وَإِذا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ- وَالَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحْيِينِ - وَالَّذِي أَطْمَعُ أَنْ يَغْفِرَ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ-

(২) ‌‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। যিনি আমাকে আহার দেন ও পান করান। যখন আমি পীড়িত হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন। আর যিনি আমাকে মৃত্যু দান করবেন। অতঃপর পুনরায় জীবিত করবেন। আমি আকাংখা করি যে, তিনি শেষ বিচারের দিন আমার পাপসমূহ ক্ষমা করবেন’ (শো‘আরা ২৬/৭৮-৮২)

হাদীছে নববী :

3- عَنْ أَبِى مُوسَى الأَشْعَرِىِّ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُودُوا الْمَرِيضَ وَفُكُّوا الْعَانِىَ -

(৩) আবু মুসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর’।[1]

4- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلَامِ، وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ-

(৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি যে, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটি- ১. সালামের জওয়াব দেয়া। ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া। ৩. জানাযার পশ্চাদানুসরণ করা। ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতাকে খুশী করা (আল-হামদুলিল্লাহর জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা)’।[2]

5- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِى. قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ. قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِى فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِى عِنْدَهُ-

(৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার খোঁজ-খবর রাখনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার খোঁজ-খবর করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে’।[3]

6- عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَتَى مَرِيضًا أَوْ أُتِىَ بِهِ قَالَ أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا-

(৬) আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাঁর নিকট যখন কোন রোগীকে আনা হত, তখন তিনি বলতেন, কষ্ট দূর করে দাও। ‘হে মানুষের রব, আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান কর যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে’।[4]

7- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَادَ مَرِيضًا نَادَى مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلًا-

(৭) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি রোগীকে দেখতে গেলে আকাশ থেকে একজন আহবানকারী তাকে ডেকে বলেন, তুমি উত্তম কাজ করেছো, তোমার পথ চলা কল্যাণময় হোক এবং তুমি জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্ধারণ করে নিলে’।[5]

8- عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلَّا صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِيَ وَإِنْ عَادَهُ عَشِيَّةً إِلَّا صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبِحَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنَّةِ-

(৮) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম সকাল বেলায় কোন অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ করতে থাকে। যদি সে তাকে সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত দো‘আ করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরী হয়’।[6]

9- عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ عَادَ مَرِيضًا لَمْ يَزَلْ فِى خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ-

(৯) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ছাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন রোগীর সেবা-শুশ্রুষা করে সে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করে’।[7]

10- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ عَادَ مَرِيضًا لَمْ يَحْضُرْ أَجَلُهُ فَقَالَ عِنْدَهُ سَبْعَ مِرَارٍ أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ إِلاَّ عَافَاهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ الْمَرَضِ-

(১০) ইবনু আববাস (রাঃ) সূত্রে নবী (ছাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোন রোগীকে দেখতে যায়, যার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়নি, সে যেন তার নিকট বসে এ দো‘আটি সাতবার পাঠ করে,أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ ‘আমি মহান আল্লাহর দরবারে দো‘আ করছি, যিনি মহান আরশের অধিপতি, যেন তিনি তোমাকে রোগমুক্ত করেন। এ দো‘আর ফলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে রোগ মুক্ত করবেন’।[8]

11- عَنْ أَبِى سَعِيدٍ أَنَّ جِبْرِيلَ أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ اشْتَكَيْتَ فَقَالَ نَعَمْ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ-

(১১) আবু সাঈদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, জিব্রাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলেন, হে মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থ? তিনি বলেন, হ্যাঁ। জিব্রাঈল (আঃ) নিম্নোক্ত দো‘আ পড়ে তাঁকে ঝেড়ে দেন, আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি সে সব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নযর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি’।[9]

12- عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِى تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى-

(১২) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিনদের দৃষ্টান্ত তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির দিক দিয়ে একটি মানব দেহের মত। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন তার সমগ্র দেহ আলোড়িত হয় জ্বর ও অনিদ্রায়’।[10]

13- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَى أَعْرَابِىٍّ يَعُودُهُ قَالَ وَكَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ عَلَى مَرِيضٍ يَعُودُهُ قَالَ لاَ بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ-

(১৩) ইবন আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) একদিন অসুস্থ একজন বেদুঈনকে দেখতে (তার বাড়িতে) গেলেন। রাবী বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর অভ্যাস ছিল যে, পীড়িত ব্যক্তিকে দেখতে গেলে বলতেন, কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই, ইনশাআল্লাহ (পীড়াজনিত দুঃখ কষ্টের কারণে) গুনাহ থেকে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে’।[11]

14- عَنْ مُعَاذٍ قَالَ عَهِدَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى خَمْسٍ مَنْ فَعَلَ مِنْهُنَّ كَانَ ضَامِناً عَلَى اللَّهِ مَنْ عَادَ مَرِيضاً أَوْ خَرَجَ مَعَ جَنَازَةٍ أَوْ خَرَجَ غَازِياً فِى سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ دَخَلَ عَلَى إِمَامٍ يُرِيدُ بِذَلِكَ تَعْزِيرَهُ وَتَوْقِيرَهُ أَوْ قَعَدَ فِى بَيْتِهِ فَيَسْلَمُ النَّاسُ مِنْهُ وَيَسْلَمُ-

(১৪) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচটির একটি করবে, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকবে- ১. যে কোন রোগীর সাথে সাক্ষাৎ করে ২. অথবা জানাযার সাথে বের হয় ৩. অথবা যোদ্ধা হয়ে বের হয়ে যায় ৪. অথবা সম্মান ও শ্রদ্ধা করার উদ্দেশ্যে নেতার নিকট উপস্থিত হয় ৫. অথবা নিজ ঘরে বসে থাকে ফলে মানুষ তার থেকে এবং সে মানুষ থেকে নিরাপদ থাকে’।[12]

15- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا. قَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه أَنَا. قَالَ فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً. قَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه أَنَا. قَالَ فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا. قَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه أَنَا. قَالَ فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا. قَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه أَنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا اجْتَمَعْنَ فِى امْرِئٍ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ-

(১৬) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মাঝে আজ কে ছিয়াম পালনকারী আছে? আবু বকর (রাঃ) বললেন, আমি আছি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কে জানাযার সাথে চলেছ? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কেউ রোগীর শুশ্রুষা করেছ? আবু বকর (রাঃ) বললেন, আমি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যার মধ্যে এই কাজ সমূহের সমাবেশ ঘটবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[13]

মনীষীদের বক্তব্য :

১. ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ওলামাগণ বলেন, রোগীর পরিচর্যা মহান আল্লাহর এমন এক মেহমানদারী, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সেবার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য এবং সম্মান দু’টিই লাভ করে’।[14]

২. ইবনুল কাইয়িম আল-জাওযী বলেন, ‘যদি দুনিয়ায় মানুষ অসুখ-বিসুখ, বালা-মুছীবতের মধ্যে না থাকত, তাহলে দুনিয়ায় মানুষ নিজেদের হিংসা, অহংকার, নিষ্ঠুরতায় ডুবে থাকত এবং ধ্বংস হয়ে যেত। ভাগ্যিস! দয়ালুদের রাজা মহান আল্লাহ মানবতার ধ্বংসকারী এসব মানব রোগের বিপরীতে অসুখ-বিসুখ ও বিপদাপদকে প্রতিষেধক হিসাবে সৃষ্টি করেছেন’।[15]

৩. কতিপয় সালাফ বলেন, ‘যদি দুনিয়ায় আমরা বিপদাপদে পতিত না হতাম, তবে ক্বিয়ামত আমাদের নিঃস্ব হাতে ফিরিয়ে দিত অর্থাৎ আমরা সকলে জাহান্নামী হয়ে যেতাম’।[16]

সারবস্ত্ত :

১ রোগীর পরিচর্যার মধ্যেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লুকিয়ে আছে। মনে রাখা উচিৎ যে, ক্বিয়ামতের মাঠে রোগী পরিচর্যার প্রশ্নবাণে বনু আদমকে জর্জরিত করা হতে পারে।

২. রোগীর পরিচর্যা করা নবী-রাসূলদের অনুশীলিত সুন্নাত এবং পারস্পারিক ভালবাসা ও মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ।

৩. ইসলাম মানবসেবার ধর্ম। রোগীর পরিচর্যাই মুখ্য, হৌক সে মুসলিম বা অমুসলিম।

৪. রোগীর পরিচর্যা মহান আল্লাহর দয়া-রহমত এবং ফেরেশতাদের ক্ষমা প্রাপ্তি নিশ্চিত করে। কেননা এটি মানব সেবার অনন্য নযীর।

৫. একজন মানুষের জীবন বাঁচানো মানে সমস্ত মানুষের জীবন বাঁচানো। সামান্য রোগীর পরিচর্যা বিপদাপদ রোধে মহা কল্যাণকর।

৬. বৃথা জন্ম এ জগতে তার, রোগীর পরিচর্যার মাধ্যমে জান্নাত লাভ হয়নি যার।


[1]. বুখারী হা/৫৩৭৩; আবুদাঊদ হা/৩১০৫; মিশকাত হা/১৫২৩।

[2]. বুখারী হা/১২৪০; মিশকাত হা/১৫২৪।

[3]. মুসলিম হা/২৫৬৯।

[4]. বুখারী হা/৫৬৭৫; মুসলিম ৩৯/১৯, হাঃ ২১৯১, আহমাদ ২৪২৩।

[5]. তিরমিযী হা/২০০৮ ইবনু মাজাহ হা/১৪৪৩; মিশকাত হা/১৫৭৫।

[6]. তিরমিযী হা/৯৬৯; ইবনু মাজাহ হা/১৪৪২।

[7]. মুসলিম হা/২৫৬৮।

[8]. আবুদাঊদ হা/৩১০৬।

[9]. মুসলিম হা/২১৮৬।

[10]. মুসলিম হা/২৫৮৬।

[11]. বুখারী হা/৩৬১৬।

[12]. আহমাদ হা/২২১৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৫৩; ইবনু হিববান হা/৩৭২।

[13]. মুসলিম হা/৬৩৩৩; মিশকাত হা/১৮৯১।

[14]. মির‘আত ৫/২১৭ (মিশকাত-এর ১৫৪১ নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।

[15]. যাদুল মা‘আদ ১৯৭ পৃ.।

[16]. যাদুল মা‘আদ ১৯৫ পৃ.।



আরও