শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষাক্রম মনিটরিং-এর গুরুত্ব

মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলাম 1251 বার পঠিত

ভূমিকা :

শিক্ষাক্রম হচ্ছে শিক্ষার একটি বহুমুখী পরিকল্পনা- যা সমগ্র সমাজের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নির্ণীত হয়। ফলে উদ্দেশ্যগুলো সাফল্যের সাথে সম্পাদিত হয়ে থাকে। তবে মানুষের চাহিদা নিত্য পরিবর্তনশীল বলেই শিক্ষাক্রম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হচ্ছে। শিক্ষাক্রমের এ পরিবর্তনের ভিত্তি হচ্ছে মূলতঃ ধর্ম, সম্পদ, সমাজ, দর্শন, মনোবিজ্ঞান ও ভৌগোলিক পরিবেশ। শিক্ষাক্রম উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন এর রূপরেখা, উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, সাংগঠনিক বিন্যাস ও যথাযথ উপকরণ। আবার এটি বাস্তবায়ন করতে দরকার সাংগঠনিক কাঠামো, পাঠ্যবই, শিক্ষক নির্দেশিকা, শিক্ষা উপকরণ, যোগ্য শিক্ষক, সৎ ও দক্ষ প্রশাসক, পরিমিত অর্থ এবং মূল্যায়ন কৌশল। তাছাড়াও শিক্ষাক্রমের  উন্নয়নের জন্য একান্ত দরকার শিক্ষাক্রম মনিটরিং। শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তার জন্য দরকার সঠিক মনিটরিং। শিক্ষাক্রম মনিটরিং আলোচনার পূর্বে আমাদের শিক্ষাক্রম সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার।

শিক্ষাক্রমের ধারণা ও সংজ্ঞাঃ Curriculum এর পরিভাষা হচ্ছে শিক্ষাক্রম। ল্যাটিন শব্দ ‘currere’ হতে উদ্ভূত, যার অর্থ হ’ল দৌড়ানো বা ঘোড়দৌড়ের নির্দিষ্ট পথ। আভিধানিক অর্থে শিক্ষাক্রম বলতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার একটি ধারাকে বুঝায়।

১৯৩০ সালের পর থেকেই শিক্ষাক্রমের প্রাচীন ও সংকীর্ণ ধারণা পরিবর্তন হতে থাকে। অধুনা শিক্ষাক্রম বলতে বিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত সব শিখন অভিজ্ঞতার সমষ্টিকে  বোঝানো হয়।

১৯৩৫ সালে প্রদত্ত Caswell and Cambell-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘শিক্ষাক্রম হলো শিক্ষকের পরিচালনায় শিক্ষার্থীর অর্জিত সকল অভিজ্ঞতা’।

১৯৫৬ সালে প্রদত্ত Tyler-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘বিদ্যালয় শিক্ষাক্রম হ’ল শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃক পরিকল্পিত ও পরিচালিত শিক্ষার্থীদের সকল শিখন অভিজ্ঞতা’।

১৯৬৭ সালে প্রদত্ত হুইলার সংজ্ঞায় এসেছে, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিখন অভিজ্ঞতা নির্বাচন, বিষয়বস্ত্ত সনাক্তকরণ, বিষয়বস্ত্তর সংগঠন, মূল্যায়ন ইত্যাদির একটি বৃত্তাকার প্রক্রিয়া শিক্ষাক্রম বলে’।

১৯৭৬ সালে প্রদত্ত জেনকিন্স ও শিপম্যান-এর মতে, ‘বিদ্যালয় অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের জন্য এমন একটি প্রস্তাবনার গঠন ও প্রয়োগই শিক্ষাক্রম, যার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান শিক্ষাদানের যৌক্তিকতা, যথার্থ প্রয়োগ এবং এর ফলাফলের দায়িত্ব গ্রহণ করবে’।

পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষাক্রম হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক রূপরেখা। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে কোর্স তাই শিক্ষাক্রম অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রণীত শিখন অভিজ্ঞতা, পঠন-পাঠন সামগ্রী এবং শিক্ষাদান কার্যাবলীর সমন্বিত রূপরেখা, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।

শিক্ষাক্রম মনিটরিং (Curriculum Monitoring) :  একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর জন্য কোনকিছু দেখা, পর্যবেক্ষণ করা, শোনা বা যাচাই করাকে Monitoring বলা হয়। আর Curriculum Monitoring বা শিক্ষাক্রম মনিটরিং হ’ল শিক্ষাক্রম ব্যবস্থাপনা সিদ্ধান্তে দিক-নির্দেশনা দিতে এবং শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে পেঁŠছানোর কার্যক্রমে অগ্রগতি চিহ্নিত করতে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া।

লক্ষ্য : শিক্ষাক্রম মনিটরিং-এর লক্ষ্য হ’ল- সামগ্রিক স্কুল ব্যবস্থাকে নিরাপদ করা যেটি শিক্ষার্থীর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে সহায়তা করবে যাতে করে শিক্ষণ-শিখণের কার্যকারিতা দিয়ে সামগ্রিক মানের উন্নয়ন ঘটানো যায় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।

উদ্দেশ্য : মূলতঃ শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত অর্জনকে উৎসাহিত করা। তাদের শিক্ষাগত, ব্যক্তিগত, আবেগিক এবং সামাজিক উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ণ করা এবং শিক্ষাক্রমের ধারাবাহিকতা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করা। এছাড়া আরো কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন-

  • স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীর চাহিদাগুলি আলাদা করতে শিক্ষাক্রম পরিকল্পনার উন্নয়ন করা।
  • তথ্য সংরক্ষরণ এবং মূল্যায়ন কৌশলের উন্নয়ন করা।
  • তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ উন্নয়নে সহায়তা করা।
  • শিক্ষাক্রম উন্নয়নের পরিকল্পনা করা।
  • শিক্ষণ-শিখণ কার্যকারিতার উন্নয়ন করতে মূল্যায়ন করা।
  • সমাজের লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করা।
  • সম্পদের কার্যকারী ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
  • শিক্ষকদের চলমান, ধারাবাহিক, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচী গ্রহণ করা।
  • শিক্ষার্থী ও সমাজের রুচি, প্রবণতা ও চাহিদানুযায়ী শিক্ষার বিষয়বস্ত্ত নির্ধারণ করা।
  • শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু ও সার্বিক বিকাশ সাধন করা।
  • কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা।
  • শিক্ষা সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান করা।
  • শিশুদের সৃজনশীল বিকাশ করা।
  • শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

মনিটরিং চক্র ঃ মনিটরিং চক্রে আমরা যে জিনিসটি দেখতে পায় তার পর্যাক্রমিক ধারা হলো এরূপ-

প্রথমে Measure বা পরিমাপ।

তারপর Assess বা মূল্যায়ন

এবং শেষে Improve বা উন্নয়ন।

মনিটরিং এর  বিষয়সমুহ ঃ সমাজ সচেতনরা পূর্ণমাত্রায় উপলদ্ধি করেন যে, শিক্ষা ছাড়া উন্নত জীবন লাভ সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন একটি উন্নত শিক্ষাক্রম, যাতে শিক্ষকরা তাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির প্রয়োগ এবং পরিবেশের কাঙ্খিত পরিবর্তন করতে সম্ভব হয়। আর শিক্ষাক্রমকে উন্নত করতে দরকার শিক্ষাক্রম মনিটরিং। তাই শিক্ষাক্রম মনিটরিং-এর ক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য করা হয়, তা নিমণরূপ:

  • শিখনের বিষয়বস্ত্ত
  • শিক্ষাদান পদ্ধতি
  • মূল্যায়ন কৌশল
  • শিক্ষাক্রমের বিতরণ ও বাস্তবায়ন
  • যৌর্থ কর্মকান্ড
  • বর্ধিত শিক্ষাক্রম কর্মসূচী

মনিটরিং এর উপকরণ ঃ

নিচের এই বিষয়গুলোর দ্বারা সঠিক ভাবে মনিটরিং করা হয়ে থাকে।

তথ্য বিশ্লেষণঃ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাক্রমের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পরীক্ষার ফলাফল এবং স্কুলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন থেকে তথ্য নিয়ে তা বিশ্লেষণপূর্বক প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ মনিটরিং করবেন। তিনি ‘স্কুলটি একটি মানসম্মত পর্যায়ে পৌঁছেছে’-এটা নিশ্চয়তা দিয়ে বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ লক্ষ্যকে ঠিক করবেন।

বাৎসরিক প্রতিফলন ঃ বাৎসরিক প্রতিফলনের দ্বারা উপরোক্ত বিষয়সমূহ মনিটরিং করা হয়। শিক্ষার্থীদের এবং তাদের পিতা-মাতাদের চাহিদা ও প্রয়োজন মেটাতে সংবিধিবদ্ধ নিয়মে বাৎসরিক প্রতিফলনটি লেখা হয়। দায়িত্বশীল ব্যক্তি অগ্রগতিটিকে মনিটর করেন এটা নিশ্চিত করতে যে, তারা নির্ধারিত চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

বাৎসরিক প্রতিবেদন ঃ বাৎসরিক প্রতিবেদন শিক্ষাক্রমের উপেক্ষিত বিষয়গুলো মনিটর করতে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষকরা অভিভাবকদের নিকট বাৎসরিক প্রতিবেদন জমা দিবেন। ছাত্রছাত্রীরা কোন মানের এবং কী বুঝতে পেরেছে তা যাচাই করতে প্রধান শিক্ষক এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তি এই রিপোর্টটি মূল্যায়ন করবেন। তারা তদারকি করবেন যে এই অগ্রগতিটি  প্রত্যেকটি বিষয়ে হয়েছে কিনা। আর অভিভাবকদের ফলাবর্তন প্রদানের সুযোগ থাকবে ।

মনিটরিং কার্ডঃ মনিটরিং কার্ডের দ্বারা মনিটরিং-এর বিষয়সমূহ মনিটর করা হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রত্যেক বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে তাদের অভিভাবকদের অর্ধবার্ষিকী কার্ডটি দেখা হবে। এই কার্ডটি প্রদান করা হবে যাতে প্রত্যেক অভিভাবক শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন।

অন্তর্ভুক্তি ঃ মূলধারার এবং বাইরের সংস্থাসহ অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রমসমুহ মূল্যায়ন করা হয়, পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং নীতি বা বিধানের যথার্থতা মূলায়ন করা হয়। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন/অগ্রগতি ফোল্ডারে সকল প্রজেক্ট ও কোর্সসমূহ সংরক্ষিত করা হয়। কলেজ লিংক ও রুপান্তরিত কার্যক্রমসমূহ অর্ন্তভুক্তি মনিটরিং-এর অংশ। এছাড়াও বিদ্যালয়ে শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্তি পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়।

পাঠ পর্যবেক্ষণ ঃ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা, পারদর্শিতা নীতি এবং শিক্ষনের গুণগতমানের ভিত্তিতে ও OFSTED  ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ সংরক্ষণ করা হয়। পাঠটি শেষ করার সাথে সাথে মৌখিক ফলাফল দেওয়া হয়। ফলাফলটির সকল দিক এবং যেখানে উন্নতি করা যেতে পারে সেখানে জোর দেওয়া হবে। লিখিত পর্যবেক্ষণের রেকর্ড কপি ৫ দিনের মধ্যে শিক্ষককে দেওয়া হয় এবং ১টি কপি দক্ষতা ব্যবস্থাপনা ফোল্ডারে রাখা হয়।

সংখ্যাতত্ত্বঃ সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সংখ্যাতত্ত্ব ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা হয়। মনিটরিং করে অগ্রগতিটি পরিমাপ করা হয় এবং রিপোর্ট করা হয়। প্রত্যেককে অথবা কোন দলকে তাদের অতিরিক্ত প্রয়োজন চিহ্নিত করে অতিরিক্ত শিক্ষাক্রম সহযোগিতার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়।

কাজের পোর্টফলিওঃ শিক্ষক নিজের অগ্রগতির তথ্যটি সংরক্ষণ করবেন। বার্ষিক প্রতিফলন, বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন এবং CASPA -র মাধ্যমে অগ্রগতির পর্যবেক্ষণ রেকর্ড করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের দক্ষতা মনিটরিং করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়। অধ্যায় শেষের প্রতিফলন এবং বাৎসরিক প্রতিফলন ব্যবহার করে তাদের অগ্রগতিতে উৎসাহ দেওয়া হয়।

মনিটরিং-এর সময়কালঃ সাধারণত সারা বছর ব্যাপি শিক্ষাক্রম মনিটরিং করা হয়। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ভূমিকা বর্ণনা হিসাবে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যক্রম এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও প্রতিফলনের বাৎসরিক চক্র সংঘটিত হয়।

মনিটরিং ব্যক্তিবর্গঃ শিক্ষাক্রমকে সুচারুরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে সৎ ও দক্ষ প্রশাসন আবশ্যক। এতে থাকবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ, যোগ্যতাসম্পন্ন এবং সৎ রাজনৈতিক নেতা প্রভৃতি। শিক্ষাকে গতিশীল ও গ্রহণ উপযোগী করার জন্য প্রয়োজন শিক্ষক নির্দেশিকা। এ নির্দেশিকায় থাকবে বিষয়বস্ত্তর সঠিক বর্ণনা, শিক্ষার্থীরা কী কী অধ্যয়ন করবে, তার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, শিক্ষা শেষে কতটুকু জ্ঞান লাভ করবে, পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির নিয়মাবলী, শিক্ষার্থীর শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধানের কলা-কৌশল এবং এর যথাযথ মূল্যায়ন।

আর এসব বিষয়গুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখা জন্য মনিটরিং অত্যন্ত যরূরী। শিক্ষাক্রম কার্যক্রম মনিটরিং পদ্ধতি স্কুলের উন্নতির নিশ্চয়তা বিধান করে। আর এ উদ্দেশ্য সফল করতে বিদ্যালয় সম্পৃক্ত সকলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যেমন- অভিভাবক পরিচালক, বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, স্কুল পরিচালনা কমিটি এমনকি ছাত্র-ছাত্রীদের অবদান রাখতে হবে।

শিক্ষাক্রম মনিটরিং-এ শিক্ষকের ভূমিকাঃ শিক্ষাক্রম মনিটরিং -এ শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষার প্রতিটি স্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন শিক্ষাক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। মূলতঃ শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন নির্ভর করে বহুলাংশে শিক্ষকের নৈপুণ্য, আন্তরিকতা, যোগ্যতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠার ওপর। তাই একথা বলা যায় যে, শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়গুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে বিধায়  শিক্ষাক্রম মনিটরিং-এ একজন শিক্ষকের ভূমিকা অনেক বেশী।

মনিটরিং করার কৌশলঃ

১. শ্রেণীকক্ষে অনুশীলন, ব্যবহারিক কার্যক্রম, অতিরিক্ত এবং সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমগুলো মনিটরিং করা।

২. অডিট বা নিরীক্ষা করা।

৩. দলীয় শিক্ষণ মনিটরিং করতে হবে।

৪. পরিকল্পনা মনিটরিং করতে হবে। (ক) বিষয়ভিত্তিক পরিকল্পনা (খ) দলীয়  পরিকল্পনা।

৫. কাজের পরিকল্পনার উন্নয়ন করতে হবে।

৬. ছাত্র-ছাত্রীদের কাজের পদ্ধতিগত প্রতিফলন পর্যালোচনা করতে হবে।

৭. শিক্ষার্থীদের নথিপত্রের নমুনায়ন করতে হবে।

৮. শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা, সাক্ষাৎকার পর্যালোচনা করতে হবে।

৯. ফলাফল অভীক্ষায়নের মাধ্যমে মনিটরিং করতে হবে।

১০. বহিরাগত সংস্থা, কর্তৃপক্ষরা মনিটরিং করবে।

১১. পেশাগত উন্নয়নের জন্য নিয়মিত স্টাফদের অডিট করতে হবে।

১২. বাজেট বিবেচনা করে সম্পদের সঠিক ব্যবহার তদারকি করতে হবে।

শিক্ষাক্রমে মনিটরিং-এর গুরুত্ব ঃ

শিক্ষাক্রম প্রাসঙ্গিক এবং কার্যকর কিনা এটি নিশ্চিত করতে শিক্ষাক্রম মনিটরিং-এর গুরুত্ব অপরিসীম।শিক্ষাক্রমটি কাজ করছে কিনা এটি জানতে মনিটরিং শিক্ষাক্রম মনিটরিং গুরুত্ব বহন করে। কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে উন্নতি করা যাবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে মনিটরিং এর গুরুত্ব রয়েছে। কার্যক্রম গুলোর সহিত আরো কিছু যুক্ত করতে হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে এর গুরত্ব অনেক। সর্বোপরি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের গুণগত মান উন্নত করার জন্য শিক্ষাক্রম মনিটরিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।

উপসংহার ঃ সুষ্ঠু, পরিপূর্ণ ও আদর্শ শিক্ষার জন্য আদর্শ শিক্ষাক্রম অপরিহার্য। আর শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বিস্তরণ ও বাস্তবায়ন, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, এমনকি শিক্ষার্থীর উন্নত শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করতে এবং জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে শিক্ষাক্রম মনিটরিং প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলাম

[লেখক : প্রভাষক (ইংরেজী), লালপুর মডেল কলেজ, তানোর, রাজশাহী ও প্রাক্তন শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহী ]



বিষয়সমূহ: শিক্ষা-সংস্কৃতি
আরও