অনুগ্রহ কখনও বৃথা যায় না

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 350 বার পঠিত

সঊদী আরবের রাজধানী রিয়াদের এক কলেজ ছাত্রী অসুস্থ হ’লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে জানা যায় তার ক্যান্সার হয়েছে। চিকিৎসকরা দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু মেয়েটির পরিবার তার চিকিৎসার খরচ বহনে সক্ষম ছিল না, মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত সুস্থ হয় না, তাই তারা অযথা অর্থ অপচয়ে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু অত্যন্ত মেধাবী মেয়েটি শেষ চেষ্টা চালাতে তার একমাত্র সহোদর ভাইকে অনুরোধ করে। কারণ তার বাবা-মা দু’জনেই অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেন। আর রেখে যান তিন স্ত্রীর ১৮ জন সন্তান-সন্ততি।

ভাই তার একমাত্র বোনটির অনুরোধ রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এল। কিন্তু চাকুরির বেতন ছাড়া আর কোন অবলম্বন তার ছিল না। তবে তার একটি ছোট্ট বাড়ি ছিল। কিন্তু তার স্ত্রী বাড়ি বিক্রি করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে সাত-পাঁচ ভেবে লোকটি বাড়িটি বন্ধক রেখে প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করল। ইতোমধ্যে তার স্ত্রী রাগ, ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে বাপের বাড়িতে গিয়ে উঠল। লোকটি প্রায় ছয়মাস ধরে বিদেশে নিয়ে বোনের চিকিৎসা চালিয়ে গেল। অবশেষে বোনটি মারা যায়। লোকটি বোনের লাশ নিয়ে রিয়াদ ফিরল। এদিকে লোকটির চাকুরী চলে গেছে। আয়ের কোন উৎস না পেয়ে সে ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে জীবন যাত্রা শুরু করল। অন্যদিকে বাড়ি বন্ধক রাখার কারণে স্ত্রী আর ফিরে আসবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। ড্রাইভার হিসাবে তার জীবন বড়ই কষ্টে অতিবাহিত হতে লাগল। এক রাতে লোকটি শুয়ে শুয়ে বোনের স্মৃতিচারণ করছিল। সে (বোন) মৃত্যুর আগে দু‘হাত তুলে আল্লাহর দরবারে মুনাজাতে বলেছিল, হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার ভাই চাকুরি হারিয়েছেন, স্ত্রী হারিয়েছেন, বাড়িটি বন্ধক রেখেছেন। সুতরাং তুমি তাকে বৃষ্টির পানির মতো অঢেল সম্পদ ও সম্মান দিও। তার মনে আকাশ-কুসুম ভাবনা জাগতে থাকে। ভাবতে ভাবতে রাত শেষ হয়ে যায়।

সকালে তার ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়; কারণ রাতে ঘুম হয়নি। বেলা ১১টার দিকে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় হঠাৎ এসে একটি সুসংবাদ দিলেন যে, তোমার অমুক আত্মীয়ের কোন সন্তান-সন্ততি না থাকায় ‘কালালা’ নীতিমালার আলোকে তুমি কিছু সম্পদ পাবে। লোকটি তথায় গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানল, সত্য সত্যই সে রিয়াদ এয়ারপোর্ট এলাকা সংলগ্ন বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছে। সে প্রাপ্ত সম্পত্তির সামান্য অংশ বিক্রি করে প্রথমে স্বহস্তে তৈরি বন্ধক রাখা বাড়িটি মুক্ত করে। তারপর স্ত্রীর নামে রেজিষ্ট্রেশন করে এর কাগজপত্র ও তালাকনামা স্ত্রীর নামে পাঠিয়ে দেয়। যদিও স্ত্রী বেচারী নিজের ভুল বুঝতে পেরে (ফেরত নেয়ার) অনুরোধ জানায়। এবিষয়ে জোর-যবরদস্তি করে। কিন্তু লোকটি কিছুতেই সেই প্রাণহীন পাত্রটি আর ফেরত নিতে রাজি হয়নি। সত্য সত্যই লোকটির জীবনের শেষ দিনগুলো বড়ই সুখের ছিল। ভাল স্ত্রী, বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য সুসন্তান কোন কিছুর অভাব ছিল না। এভাবে সাকরাতুল মাউতের সময় মৃত্যুর দুয়ারে বসে বোনের অন্তর থেকে উচ্চারিত দো‘আ একজন নিষ্ঠাবান ভাইয়ের কপাল খুলে দিল। আমরা নিকটাত্মীয়দের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে পারলে কোন না কোন ভাবে আল্লাহ আমাদের রিযিকে বরকত দেবেন ইনশাআল্লাহ।

[সত্য ঘটনা অবলম্বনে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত]



আরও