মার্কিন নারী তেরেসা কিম ক্রানফিল এর ইসলাম গ্রহণ

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 925 বার পঠিত

আত্মিক প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত বস্ত্ততান্ত্রিক পাশ্চাত্যের শিক্ষিত ও সত্য-সন্ধানী চিন্তাশীল মানুষেরা নানা কারণে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন। এইসব কারণের মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল, ইসলামের মধ্যে তারা খুঁজে পাচ্ছেন মানুষের আধ্যাত্মিক চাহিদার জবাব। তেরেসা কিম ক্রানফিল হচ্ছেন এমনই এক সৌভাগ্যবান মার্কিন নারী। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি নিজের জন্য লায়লা নামটি বেছে নিয়েছেন।

মার্কিন নওমুসলিম নারী তেরেসা ওরফে লায়লা জন্ম নিয়েছিলেন এক খ্রিস্টান পরিবারে। খ্রিস্ট ধর্মের সঙ্গে পুরোপুরি পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও এ ধর্মের মধ্যে তিনি খুঁজে পাননি কয়েকটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর, যে প্রশ্নগুলো তার মধ্যে জেগেছিল কৈশোরের দিনগুলোতেই। প্রশ্নগুলো হ’ল : কেন আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে এবং কেন আমরা স্রষ্টার ইবাদত করব? তেরেসা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বহু প্রশ্নই জেগেছিল মনে। কিন্তু কোথাও পাইনি সেসবের কোনো উত্তর। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মুসলমানের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর তাঁর আচার-আচরণ, ধর্ম ও বিশ্বাসগুলো আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হ’ল। সত্যি বলতে কি তার ইসলামী নৈতিক গুণগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছিল।

তার সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে পরিচিত হই পবিত্র কুরআনের সঙ্গে। এই আসমানী কিতাবের মধ্যে আমি ফিরে পেলাম আমার হারানো আত্মাকে। এর আগেই আমি এ সত্য বুঝতে পেরেছিলাম যে পার্থিব জীবনের সব কিছুই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, কেবল টিকে থাকবে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব, যিনি চিরঞ্জীব ও কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন অথচ অন্য সব কিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী। পরে গবেষণা করে জানলাম, ধর্মগুলোর মধ্যে কেবল ইসলামই মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং এ ধর্মেই রয়েছে যৌক্তিক ও পরিপূর্ণ বিধি-বিধান। এ ধর্মেই আমি পেয়েছি আমার সব প্রশ্নের উত্তর।

পবিত্র কুরআন সত্য-সন্ধানীদের চিন্তাশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছে, এটি এক বরকতমন্ডিত কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি। যাতে লোকেরা এর আয়াত সমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ছ-দ ৩৮/২৯)

মার্কিন নওমুসলিম নারী তেরেসা কিম ক্রানফিল মনে করেন, পবিত্র কুরআন মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কুরআনের সঙ্গে পরিচয় আমার জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর ও আকর্ষণীয় ঘটনা। আমার জীবনে যেসব শূন্য স্থান ছিল সেগুলো পূরণ করে দিয়েছে এই মহাগ্রন্থ। কুরআনের সহায়তায় প্রকৃত ইসলামকে জানতে পারাটা ছিল আমার জন্য এক অলৌকিক ঘটনা। কুরআন আমাকে এটা শিখিয়েছে যে, ইহকালের এই পার্থিব জগত ও জীবন ছাড়াও রয়েছে আরো একটি জগত এবং সেই চিরস্থায়ী জগতে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য আশাবাদী হওয়া উচিত।

এসবই আমাকে দিত উৎসাহ ও ইসলামের ওপর অবিচল থাকার আশা আর প্রেরণা। ইসলাম আমার এই দুনিয়ার জীবনের সব কিছুর মধ্যে দান করতো এলাহী রং এবং আমার অন্তর ভরে যেত অবর্ণনীয় প্রশান্তিতে।

ইসলামের হিজাব বা পর্দার বিধান নারীর সম্মান রক্ষার পাশাপাশি সমাজের সবাইকে রাখে নিরাপদ। পারিবারিক বন্ধন ও মানসিক প্রশান্তি যোরদারের জন্যও এই বিধান যরূরী। মার্কিন নওমুসলিম নারী তেরেসা ওরফে লায়লা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর এর বিধি-বিধান মেনে চলার সিদ্ধান্ত নেই। এইসব বিধান আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হতো। তবে এইসব বিধি-বিধানের মধ্যে হিজাবের বিধানকে প্রিয় বলে মনে হতো না। সম্ভবত আমি লজ্জা পেতাম হিজাব পরতে। এক ধরনের উদ্বেগও ছিল আমার মনে। সমাজের অন্য সবার চেয়ে আমার এই ভিন্নতা নিয়ে উদ্বেগ আমাকে পীড়া দিচ্ছিল। কিন্তু হিজাব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলো পড়ার পর হিজাব পরতে শুরু করি এবং বুঝতে পারলাম যে এ নিয়ে আমার উদ্বেগগুলো ছিল সম্পূর্ণ অলীক বা কাল্পনিক।

ফলে বিশেষ প্রশান্তি অনুভব করলাম। প্রথমদিকে হিজাব পরাকে ইসলামের সবচেয়ে কঠিন বিধান বলে মনে হতো। কারণ, অন্যদের জন্য ও নিজের কাছেও এটাকে আমার বাহ্যিক দিকের ক্ষেত্রে এক বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মনে করতাম। কিন্তু হিজাব পরতে শুরু করার পর বুঝতে পারলাম যে এটা হ’ল মানসিক প্রশান্তির মাধ্যম এবং নারীর নারীসুলভ নম্রতা রক্ষার মাধ্যম হ’ল এই হিজাব।

ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মুহাম্মাদ (ছাঃ) বর্তমান যুগের এক জীবন্ত কিংবদন্তী। জুলুম ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও বিপ্লবী আপোষহীন কঠোর অবস্থান তাঁকে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা এবং তাঁর অসীলায় বিশ্বব্যাপী মুক্তিকামী সাধারণ ও এমনকি অমুসলিম জনগণের কাছেও ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিশ্বের মযলুম মানবতা আবারও দেখছে মুক্তির স্বপ্ন। এই মহান ব্যক্তিত্ব তথা মুহাম্মদ (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন বহু বছর আগে। কিন্তু আজও বহু মানুষকে আকৃষ্ট করছেন তিনি। বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে আজও তাঁর বাণী গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন নওমুসলিম নারী তেরেসা ওরফে লায়লা বলেছেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নূরানী চেহারা আমাকে সব সময়ই আকৃষ্ট করতো। পৃথিবীর একজন মানুষ যে এমন আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হ’তে পারেন এবং মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে এত গভীর ও বিস্ময়কর প্রভাব ফেলতে পারেন তা আমার কাছে অবিশ্বাস্য বলেই মনে হয়। ইসলামের ইরফানি বা আধ্যাত্মিক পরিচিতির দৃষ্টিভঙ্গি আমার কাছে মধুরতম ও সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃষ্টিভঙ্গি। এটা এমন এক জ্ঞান যা দেখা যায় না, কেবল মানুষের ভেতরে এর অস্তিত্বের অনুভূতি প্রমাণ করা যায়। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ব্যক্তিত্ব ছিল ইরফানি ব্যক্তিত্ব যিনি আমাকে দেখিয়েছেন প্রকৃত ও খাঁটি ইসলাম।

আসলে ইসলাম জীবনের সব দিকের নির্দেশনা দেয় বলেই এ ধর্মের পরিপূর্ণতার মহাসাগরে অভিভূত হন সত্য-সন্ধানী মানুষেরা। সেই সঙ্গে ইসলামের ন্যায়বিচারবোধ যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী এ ধর্মের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধির আরো এক মোক্ষম চালিকা শক্তি। আর ইসলামের এ দু’টি বিশ্বজনীন ও চিরন্তন বৈশিষ্ট্যের কথা বিমুগ্ধ ও অকুণ্ঠ-চিত্তে উল্লেখ করেছেন প্রখ্যাত মুসলিম প্রাচ্যবিদ ও ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিজা ল্যাথি।

[সূত্র : ইন্টারনেট]



বিষয়সমূহ: ইসলামগ্রহণ
আরও