কুরবানী : করণীয় ও বর্জনীয়

আব্দুর রহীম 9146 বার পঠিত

আল্লাহর নৈকট্য লাভের যে সকল মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে কুরবানী অন্যতম। আরবী কুরবান শব্দের ফার্সী ও উর্দূ রূপ কুরবানী যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য, উৎসর্গ ইত্যাদি। আর পরিভাষায় القُرْبَانُ مَا يُتَقَرَّبُ بِهِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى  ‘কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হয়’।[১] এই অর্থে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তুমি তাদের নিকট বর্ণনা কর আদম পুত্রদ্বয়ের ঘটনা সত্যসহকারে। যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজনের কুরবানী কবুল হ’ল, কিন্তু অন্যেরটা কবুল হ’ল না’ (মায়েদাহ ৫/২৭)। তিনি আরো বলেন, ‘যেসব লোক বলে যে, আল্লাহ আমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন এই মর্মে যে, আমরা কোন রাসূলের উপর ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তিনি আমাদের নিকট এমন কুরবানী নিয়ে আসবেন, যা (আল্লাহর পক্ষ হ’তে) আগুন এসে খেয়ে নিবে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৩)। এ অর্থে রাসূল (ছাঃ) বলেন, الصَّلاَةُ قُرْبَانٌ ‘ছালাত হচ্ছে কুরবানী। অর্থাৎ আল্লাহ নৈকট্য লাভের মাধ্যম’।[২]

আর ব্যাপক অর্থে ঈদুল আযহা তথা যিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শারঈ তরীকায় যে পশু  যবেহ করা হয়, তাকে ‘কুরবানী’ বলা হয়’। সকালে রক্তিম সূর্য উপরে ওঠার সময়ে ‘কুরবানী’ করা হয় বলে এই দিনটিকে ‘ইয়াওমুল আযহা’ বা ‘ইয়াওমুয যুহা বলা হয়ে থাকে।[৩] যদিও কুরবানী ঈদুল আযহার দিন ও পরবর্তী তিনদিন সহ মোট চারদিন করা যায়।[৪]

কুরবানীর ইতিহাস

আদম (আঃ)-এর দুই পুত্র ক্বাবীল ও হাবীল-এর দেওয়া কুরবানী থেকেই কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল। তবে সেই সব কুরবানীর নিয়ম-কানূন আমাদেরকে জানানো হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ-

‘তুমি তাদের নিকট বর্ণনা কর আদম পুত্রদ্বয়ের ঘটনা সত্যসহকারে। যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজনের কুরবানী কবুল হ’ল, কিন্তু অন্যেরটা কবুল হ’ল না। তখন সে বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। জবাবে অপরজন বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ কেবল মুত্তাক্বীদের আমলই কবুল করে থাকেন’ (মায়েদাহ ৫/২৭)। আদম সন্তানদ্বয়ের উক্ত আমল থেকে প্রমাণিত হয় যে, কুরবানীর সূচনা তাদের মাধ্যমেই হয়েছিল। এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, আদম (আঃ)-এর সময় কুরবানীর অস্তিত্ব ছিল। নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী তারই প্রমাণ বহন করে।

وَلِكُلِّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ مبَهِيْمَةِ الْأَنْعَامِ ط فَإِلـَهُكُمْ إِلـهُ وَّاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوْا ط وَ بَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ-

‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমরা কুরবানীর বিধান নির্ধারণ করেছিলাম, যাতে তারা যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এজন্য যে, তিনি চতুষ্পদ গবাদি পশু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। অনন্তর তোমাদের উপাস্য মাত্র একজন। অতএব তাঁর নিকটে তোমরা আত্মসমর্পণ কর এবং আপনি বিনয়ীদের সুসংবাদ প্রদান করুন’ (হজ্জ ২২/৩৪)। আল্লাহ প্রত্যেক জাতির নিকট নবী পাঠিয়েছিলেন। আর আদম (আঃ) তাঁর সন্তানদের নবী ছিলেন। ফলে আদম সন্তানদের জন্য কুরবানীর বিধান জারী ছিল। আর এটিই ছিল মানব ইতিহাসে কুরবানীর প্রথম ঘটনা। তবে তখনকার কুরবানীর পদ্ধতি বর্তমান পদ্ধতির মত ছিল না। সে সময়ের নিয়ম ছিল এই যে, কবুলযোগ্য কুরবানীটি আকাশ থেকে আগুন এসে জ্বালিয়ে নিয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ عَهِدَ إِلَيْنَا أَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُولٍ حَتَّى يَأْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ تَأْكُلُهُ النَّارُ ‘যেসব লোক বলে যে, আল্লাহ আমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন এই মর্মে যে, আমরা কোন রাসূলের উপর ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তিনি আমাদের নিকট এমন কুরবানী নিয়ে আসবেন, যা (আল্লাহর পক্ষ হ’তে) আগুন এসে খেয়ে নিবে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৩)।

তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারী ছিল। তবে সে সব কুরবানীর নিয়ম-কানূন আমাদেরকে জানানো হয়নি। মুসলিম উম্মাহর প্রতি কুরবানীর যে নিয়ম নির্ধারিত হয়েছে, তা মূলতঃ ইবরাহীম (আঃ) কর্তৃক পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-কে আল্লাহর রাহে কুরবানী দেওয়ার অনুসরণে ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ হিসাবে চালু হয়েছে।[৫] যা মুক্বীম ও মুসাফির সর্বাবস্থায় পালনীয়।[৬] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিজরত পরবর্তী মাদানী জীবনে দশ বছর নিয়মিত কুরবানী করেছেন।[৭]

আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীমী কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন,

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْىَ قَالَ يَابُنَىَّ اِنِّىْ اَرَى فِى الْمَنَامِ اَنِّىْ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَىط قَالَ ياَأَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِىْ إِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ- فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِيْنِ- وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَّا إِبْرَاهِيْمُ- قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا ج إِنَّا كَذَالِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ- إِنَّ هذَا لَهُوَ الْبَلاَءُ الْمُبِيْنُ- وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ- وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْآخِرِيْنَ- سَلاَمٌ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ-

‘যখন সে (ইসমাঈল) তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হ’ল, তখন তিনি (ইবরাহীম) তাকে বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি। অতএব বল, তোমার মতামত কি? ছেলে বলল, হে আব্বা! আপনাকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রতিপালন করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। অতঃপর যখন পিতা ও পুত্র আত্মসমর্পণ করল এবং পিতা পুত্রকে উপুড় করে ফেলল। তখন আমরা তাকে ডাক দিলাম, হে ইবরাহীম! নিশ্চয়ই তুমি তোমার স্বপ্ন সত্যে পরিণত করেছ। আমরা এমনিভাবে সৎকর্মশীল বান্দাদের পুরষ্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমরা তার (অর্থাৎ ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী। এবং আমরা এটিকে (অর্থাৎ কুরবানীর এ প্রথাটিকে) পরবর্তীদেরকে মধ্যে রেখে দিলাম। ইবরাহীমের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক’(ছাফফাত ৩৭/১০২-১০৯)!

ইবরাহীম (আঃ)-এর ৮৬ বৎসর বয়সে ইসমাঈল বিবি হাজেরার গর্ভে এবং ৯৯ বছর বয়সে ইসহাক্ব বিবি সারাহর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। ইবরাহীম (আঃ) সর্বমোট ২০০ বছর বেঁচে ছিলেন। [৮]

যবহের সময় ইসমাঈলের বয়স ছিল ১৩ বছর। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ঐ সময় তিনি কেবল সাবালকত্বে উপনীত হয়েছিলেন।[৯] এমন সময় পিতা ইবরাহীম স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান নয়নের পুত্তলি ইসমাঈলকে কুরবানী করছেন। নবীদের স্বপ্ন ‘অহী’ হয়ে থাকে।[১০] তাদের চক্ষু মুদিত থাকলেও অন্তরচক্ষু খোলা থাকে। ইবরাহীম (আঃ) একই স্বপ্ন পরপর তিনরাত্রি দেখেন। প্রথম রাতে তিনি স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠে ভাবতে থাকেন, কি করবেন। এজন্য প্রথম রাতকে (৮ই যিলহাজ্জ) ‘ইয়াউমুত তারবিয়াহ’ (يوم التروية)  বা ‘স্বপ্ন দেখানোর দিন’ বলা হয়। দ্বিতীয় রাতে পুনরায় একই স্বপ্ন দেখার পর তিনি নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেন যে, এটা আল্লাহর পক্ষ হ’তে নির্দেশ হয়েছে। এজন্য এ দিনটি (৯ই যিলহাজ্জ) ‘ইয়াউমু আরাফা’ (يوم عرفة) বা ‘নিশ্চিত হওয়ার দিন’ বলা হয়। তৃতীয় দিনে পুনরায় একই স্বপ্ন দেখায় তিনি ছেলেকে কুরবানী করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য এ দিনটিকে (১০ই যিলহাজ্জ) ‘ইয়াউমুন নাহর’ (يوم النحر) বা ‘কুরবানীর দিন’ বলা হয়।[১১]

এই সময় ইবরাহীম (আঃ) শয়তানকে তিন স্থানে তিনবার সাতটি করে কংকর ছুঁড়ে মারেন।[১২] উক্ত সুন্নাত অনুসরণে উম্মতে মুহাম্মাদীও হজ্জের সময় তিন জামরায় তিনবার শয়তানের বিরুদ্ধে কংকর নিক্ষেপ করে থাকে এবং প্রতিবারে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে থাকে।[১৩]

ইবরাহীম (আঃ) ছেলেকে কুরবানী করার প্রস্তুতি নিলেন এবং তাকে মাটিতে উপুড় করে শোয়ালেন। এমন সময় পিছন থেকে আওয়ায এলো- (يَا اِبْرَاهِيْمُ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا) ‘হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ’ (ছাফফাত ৩৭/১০৫)। কারণ ইবরাহীম (আঃ) স্বপ্নে স্বীয় সন্তানকে যবেহ করার মত কিছু করতে দেখেছিলেন। কিন্তু গলায় ছুরি চালিয়ে পশু যবেহের মত কিছু দেখেননি। ফলে উপুড় করে শোয়ানোতেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। ইবরাহীম (আঃ) পিছন ফিরে দেখেন যে, একটি সুন্দর শিংওয়ালা ও চোখওয়ালা সাদা দুম্বা  (كَبْشٌ أَبْيَضُ أَقْرَنُ أَعْيَنُ)  দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি সেটি মিনা প্রান্তরে (‘ছাবীর’ টীলার পাদদেশে) কুরবানী করেন।[১৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এজন্য আমরা কুরবানীর সময় অনুরূপ ছাগল-দুম্বা খুঁজে থাকি। অতঃপর জিব্রীল (আঃ) তাঁকে নিয়ে জামরায়ে কুছয়ায় গেলেন। সেখানে শয়তান সামনে আসলে তাকে সাতটি পাথর মারা হ’লে সে পলায়ন করে। এরপর জিব্রীল (আঃ) তাঁকে নিয়ে মিনায় গমন করে বলেন, এই হ’ল মিনা। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারী ইউনুস বলেন, এটি জনবহুল স্থল। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ছালাত জমা‘ করার স্থানে নিয়ে এসে বললেন, এটি মাশ‘আরুল হারাম। অতঃপর তিনি তাঁকে আরাফার ময়দানে আগমন করলেন। ইবনু আব্বাস ইউনুসকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আরাফার নামকরণ সম্পর্কে কিছু জান? ইউনুস বলল, না। তখন তিনি বললেন, জিব্রীল (আঃ) ইবরাহীম (আঃ)-কে সাথে নিয়ে আরাফায় আসলে জিজ্ঞেস করেন,  عَرَفْتَ؟‘আপনি চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন থেকে এর নাম আরাফা হয়ে যায়। তিনি আরো জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি জান তালবীয়াহ কেমন ছিল? সে বলল, কেমন ছিল? তিনি বললেন, যখন আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ)-কে লোকদের মাঝে হজ্জের ঘোষণা দিতে বললেন, তখন তাঁর জন্য পাহাড়-পবর্ত মাথা অবনত করে নিচু হয়ে গেল এবং  গ্রামসমূহ ভেসে উঠল। তখন তিনি লোকদের মাঝে হজ্জের ঘোষণা পাঠ করলেন।[১৫]

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ঐ দুম্বাটি ছিল হাবীলের কুরবানী, যা জান্নাতে সংরক্ষিত ছিল, যাকে আল্লাহ ইসমাঈলের ফিদ্ইয়া হিসাবে পাঠিয়েছিলেন।[১৬] ইবরাহীম উক্ত দুম্বাটি ছেলের ফিদ্ইয়া হিসাবে কুরবানী করলেন ও ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন (يَا بُنَىَّ اَلْيَوْمَ وُهِبْتَ لِىْ) ‘হে পুত্র! আজই তোমাকে আমার জন্য দান করা হ’ল।[১৭]

এখানে সন্তান যবেহ মূল উদ্দেশ্য ছিল না, বরং উদ্দেশ্য ছিল পিতা-পুত্রের আনুগত্য ও তাক্বওয়ার পরীক্ষা নেওয়া। সে পরীক্ষায় উভয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন পিতার পূর্ণ প্রস্তুতি এবং পুত্রের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ও আনুগত্যের মাধ্যমে।

ইমাম কুরতুবী উপরোক্ত ১০৭ নং আয়াত وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ  উল্লেখ করে বলেন, এ আয়াতটি দলীল হ’ল এ বিষয়ে যে, উট ও গরুর চেয়ে ছাগল কুরবানী করা উত্তম’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজেও দু’টো করে শিংওয়ালা ‘খাসি’ কুরবানী দিতেন। অনেক বিদ্বান বলেছেন, যদি এর চাইতে উত্তম কিছু থাকত, তবে আল্লাহ তাই দিয়ে ইসমাঈলের ফিদ্ইয়া দিতেন’।[১৮] তবে উট, গরু, ভেড়া বা ছাগল দ্বারা কুরবানীর ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীছ রয়েছে এবং আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হজ্জের সময় গরু ও উট কুরবানী করেছেন।

যিলহজ্জ মাসে করণীয় :

যিলহজ্জের প্রথম দশকে বেশী বেশী নফল ইবাদত করা : যিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার সাথে সাথে এর ফযীলত শুরু হয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ  أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هذِهِ الْاَيَّامِ الْعَشَرَةِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَلاَ الْجِهَادُ فِى سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ وَلاَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْئٍ-

‘এই দশদিনের (অর্থাৎ যুলহিজ্জাহর প্রথম দশদিনের) আমলের চাইতে প্রিয়তর কোন আমল আল্লাহর কাছে নেই। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি নয়’? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তি, যে স্বীয় জান ও মাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়েছে। কিন্তু কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি’। অর্থাৎ শহীদ হয়ে গেছে’।[১৯] আল্লাহ যে সকল বিষয়ে কসম খেয়েছেন তার মধ্যে এ মাসের প্রথম দশদিন অন্যতম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘শপথ দশ রাত্রির’ (ফজর ৮৯/২)। ইবনু আব্বাস, ইবনু যুবায়ের, মুজাহিদ, সুদ্দী, কালবী প্রমুখ বিগত ও পরবর্তী যুগের অধিকাংশ বিদ্বান এর দ্বারা যুলহিজ্জাহর প্রথম দশদিন অর্থ নিয়েছেন।[২০] আল্লাহ যে বস্তুর শপথ করেন তার গুরুত্ব অনেক বেশী। উক্ত দশ দিনের ফযীলত বেশী হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল এই যে, ঐ সময় মুমিনগণ হজ্জের প্রস্তুতি ও ইবাদতসমূহ পালনে লিপ্ত থাকেন। যারা হজ্জে আসেন না, তারা আরাফার দিনে নফল ছিয়াম পালন করেন, যা বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করে। এতদ্ব্যতীত এ সময় হাজী ছাহেবদের সফরের প্রস্তুতিতে সহযোগিতা ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে মুমিন বান্দাগণ প্রচুর নেকী উপার্জনে লিপ্ত থাকে। হজ্জের মৌসুমে ও উক্ত দশদিনে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আল্লাহর মেহমানগণ ‘লাব্বায়েক’ বলতে বলতে বায়তুল্লাহতে সমবেত হন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, যাতে তারা তাদের (দুনিয়া ও আখেরাতের) কল্যাণের জন্য সেখানে উপস্থিত হ’তে পারে এবং রিযিক হিসাবে তাদের দেওয়া গবাদিপশুগুলো যবেহ করার সময় নির্দিষ্ট দিনগুলিতে তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে (হজ্জ ২২/২৮)। ইবনু আব্বাস সহ অন্যান্য ছাহাবীগণের নিকট নির্দিষ্ট দিন হ’ল যিল হজ্জের প্রথম দশদিন।[২১]

বেশী বেশী তাকবীর, তাহলীল ও তাসবীহ পাঠ করা : এ দশদিন বেশী বেশী আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সহ এমন সব ইবাদত করা যা করলে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আল্লাহ বলেন, وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ‘এবং তারা নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে’ (হজ্জ ২২/২৮)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অর্থাৎ যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে।[২২]

এ সময় কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত তাকবীর-তাহলীল ও তাসবীহ বেশী বেশী পাঠ করা উচিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ أَيَّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ وَلاَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعَمَلُ فِيهِنَّ مِنْ هَذِهِ الأَيَّامِ الْعَشْرِ فَأَكْثِرُوا فِيهِنَّ مِنَ التَّهْلِيلِ وَالتَّكْبِيرِ وَالتَّحْمِيدِ- ‘আল্লাহর নিকট এই দশদিন অপেক্ষা মহান কোন দিন নেই (অর্থাৎ যুলহিজ্জাহর প্রথম দশদিনের) এই দিনগুলোতে আমলের চাইতে প্রিয়তর কোন আমল আল্লাহর কাছে নেই। অতএব তোমরা এই দিনগুলোতে বেশী বেশী তাহলীল (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুল্লিাহ) বল’।[২৩] অন্য বর্ণনায় তাসবীহ তথা সুবহা-নাল্লাহ বলার কথা এসেছে।[২৪] এজন্য নি¤েœর দো‘আটিও পড়া যেতে পারে। سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ (সুবহানা-ল্লাাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।[২৫]

وَكَانَ عُمَرُرضى الله عنه  يُكَبِّرُ فِى قُبَّتِهِ بِمِنًى فَيَسْمَعُهُ أَهْلُ الْمَسْجِدِ، فَيُكَبِّرُونَ وَيُكَبِّرُ أَهْلُ الأَسْوَاقِ، حَتَّى تَرْتَجَّ مِنًى تَكْبِيرًا. وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُكَبِّرُ بِمِنًى تِلْكَ الأَيَّامَ وَخَلْفَ الصَّلَوَاتِ، وَعَلَى فِرَاشِهِ وَفِى فُسْطَاطِهِ، وَمَجْلِسِهِ وَمَمْشَاهُ تِلْكَ الأَيَّامَ جَمِيعًا-

ওমর (রাঃ) মিনায় নিজের তাবুতে তাকবীর বলতেন। মসজিদের লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলতেন এবং বাজারের লোকেরাও তাকবীর বলতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরের আওয়াযে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত। ইবনু ওমর (রাঃ) সে দিনগুলোতে মিনায় তাকবীর বলতেন এবং ছালাতের পরে, বিছানায়, তাঁবুতে, মজলিসে এবং চলার সময় এ দিনগুলোতে তাকবীর বলতেন।[২৬]

وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ وَأَبُو هُرَيْرَةَ يَخْرُجَانِ إِلَى السُّوقِ فِى أَيَّامِ الْعَشْرِ يُكَبِّرَانِ، وَيُكَبِّرُ النَّاسُ بِتَكْبِيرِهِمَا. وَكَبَّرَ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِىٍّ خَلْفَ النَّافِلَةِ-

ইবনু ওমর ও আবু হুরায়রা (রাঃ) এই দশদিনে তাকবীর বলতে বলতে বাজারে যেতেন। তাদের তাকবীর শুনে লোকেরাও তাকবীর দিত। মুহাম্মাদ ইবনু আলী নফল ছালাতের পর তাকবীর দিতেন।[২৭]

অপর দিকে এই দশদিন প্রবেশ করলে সাঈদ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) বিরামহীন ইবাদতে মশগূল হয়ে পড়তেন এবং এজন্য নিরলস চেষ্টা ও টানা পরিশ্রম করতেন।[২৮]

আরাফার দিনে ছিয়াম পালন করা :

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِىْ بَعْدَهُ- ‘আরাফার দিনের নফল ছিয়াম (যারা আরাফাতের বাইরে থাকেন তাদের জন্য) আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তা বিগত এক বছরের ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে’।[২৯] উল্লেখ্য যে, উক্ত ছিয়াম যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে নয়, বরং হাজীরা যেদিন আরাফায় অবস্থান করবেন হবে সেদিন ছিয়াম পালন করতে হবে। কারণ এই ইবাদতটি স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট, সময়ের সাথে নয়। তবে অন্যান্য ছিয়াম দিন ও তারিখ অনুযায়ী করতে হবে।

যিলহজ্জের প্রথম নয়দিন ছিয়াম পালন করা :

عَنْ هُنَيْدَةَ بْنِ خَالِدٍ قَالَتْ: حَدَّثَتْنِى بَعْضُ نِسَاءِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم، أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَتِسْعًا مِنْ ذِى الْحِجَّةِ وَثَلاَثَةَ أَيَّامٍ مِنَ الشَّهْرِ أَوَّلَ اثْنَيْنِ مِنَ الشَّهْرِ وَخَمِيسَيْنِ-

হুনায়দা ইবনু খালেদ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর কতিপয় স্ত্রী আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, নবী (ছাঃ) আশূরা, যিলহাজ্জ মাসের নয়দিন এবং প্রতি মাসে তিনটি করে ছিয়াম পাল করতেন। যা মাসের প্রথম সোমবার ও দুই বৃহঃস্পতিবারে সমাপ্ত করতেন।[৩০] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এই নয়দিন বিশেষতঃ আরাফার দিনে ছিয়াম পালন করা অত্যান্ত পসন্দনীয় আমল।[৩১]

কুরবানী করা :

ঈদের দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হ’ল কুরবানী করা। রাসূল (ছাঃ) ঈদের ছালাত শেষে কুরবানী করে কুরবানীর পশুর গোশত দিয়ে সকালের খাবারের সূচনা করতেন। তিনি বলেন, أَعْظَمُ الأَيَّامِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمُ النَّحْرِ ثُمَّ يَوْمُ النَّفْرِ ‘আল্লাহর নিকট মহান দিন হ’ল কুরবানীর দিন এবং তা পরের দিন’।[৩২] মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ، وَ إِنَّهُ لَيُؤْتَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلاَفِهَا، وَ إِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَّقَعَ بِالْأَرْضِ، فَطِيْبُوْا بِهَا نَفْسًا-

‘কুরবানীর দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় আমল আল্লাহর নিকটে আর কিছু নেই। ঐ ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন কুরবানীর পশুর শিং, লোম ও ক্ষুর সমূহ নিয়ে হাযির হবে। আর কুরবানীর রক্ত যমীনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর নিকটে বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা কুরবানী দ্বারা নিজেদের নফ্সকে পবিত্র কর’।[৩৩]

নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি পশু কুরবানী দেওয়াকে যথেষ্ট মনে করা :

(ক) মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন, ...অতঃপর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়লেন, بِسْمِ اللهِ أَللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَّآلِ مُحَمَّدٍ وَّمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ- ‘আল্লাহর নামে (কুরবানী করছি), হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে, তার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তার উম্মতের পক্ষ হ’তে’। এরপর উক্ত দুম্বা কুরবানী করলেন’।[৩৪] আবু আইয়ুব আনছারী (রাঃ) বলেন, ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি করে বকরী কুরবানীর রেওয়াজ ছিল।[৩৫] ধনাঢ্য ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) বলেন, সুন্নাত জানার পর লোকেরা পরিবারপিছু একটি বা দু’টি করে বকরী কুরবানী দিত। অথচ এখন প্রতিবেশীরা আমাদের বখীল বলছে’।[৩৬] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় মুক্বীম অবস্থায় নিজ পরিবার ও উম্মতের পক্ষ হ’তে দু’টি করে ‘খাসি’ এবং হজ্জের সফরে গরু ও উট কুরবানী করেছেন।[৩৭]

যবেহকালীন সময়ে দো‘আ পাঠ করা :

কুরবানীর পশু যবেহকালীন সময়ে হাদীছে বর্ণিত দো‘আ পাঠ করা উচিত । যবেহকালীন সময়ে নিম্নের দো‘আ পাঠ করা যেতে পারে। (১) বিসমিল্লা-হি আল্লা-হু আকবার (অর্থ: আল্লাহর নামে, আল্লাহ সর্বোচ্চ) (২) বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী ওয়া মিন আহলে বায়তী (আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ হ’তে)। এখানে কুরবানী অন্যের হ’লে তার নাম মুখে বলবেন অথবা মনে মনে নিয়ত করে বলবেন, ‘বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাব্বাল মিন ফুলান ওয়া মিন আহলে বায়তিহী’ (...অমুকের ও তার পরিবারের পক্ষ হ’তে)। এই সময় দরূদ পাঠ করা মাকরূহ’।[৩৮] (৩) যদি দো‘আ ভুলে যান বা ভুল হবার ভয় থাকে, তবে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মনে মনে কুরবানীর নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে।[৩৯]

নিজ হাতে কুরবানী করা :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাতে কুরবানীর পশু যবেহ করেছেন। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,

ضَحَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ، ذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ، وَسَمَّى وَكَبَّرَ، وَوَضَعَ رِجْلَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا-

নবী (ছাঃ) মোটা-তাজা শিঙ ওয়ালা দু’টি দুম্বা নিজ হাতে কুরবানী করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও তাকবীর বলেছেন এবং পশুর গলায় পা রেখে যবেহ করেছেন।[৪০] তবে যারা নিজে যবেহ করতে পারে না তারা অন্যের মাধ্যমে যবেহ করে নিতে পারে। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কিছু উট নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং কিছু উট অন্যের মাধ্যমে যবেহ করালেন’।[৪১]

কুরবানীর গোশত তিনভাগে বণ্টন করা :

কুরবানীর গোশত তিনভাগে ভাগ করে একভাগ নিজে খাবে একভাগ প্রতিবেশীদের দিবে ও আরেকভাগ ফকীর-মিসকীদের মাঝে বিতরণ করবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,ويطعم أهل بيته الثلث ويطعم فقراء جيرانه الثلث ويتصدق على السؤال بثلث ‘রাসূল (ছাঃ ) তাঁর পরিবারকে এক-তৃতীয়াংশ খাওয়াতেন, এক-তৃতীয়াংশ দরিদ্র প্রতিবেশীকে খাওয়াতেন ও এক তৃতীয়াংশ ফকীর-মিসকীনকে ছাদাক্বাহ করে দিতেন’।[৪২]

‘মুসিন্নাহ’ দ্বারা কুরবানী :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ تَذْبَحُوْ ا إِلاَّ مُسِنَّةً إِلاَّ أَنْ يَّعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوْا جُذْعَةً مِّنَ الضَّأْنِ- ‘তোমরা দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা (মুসিন্নাহ) পশু ব্যতীত যবেহ করো না। তবে কষ্টকর হ’লে এক বছর পূর্ণকারী ভেড়া (দুম্বা বা ছাগল) কুরবানী করতে পার’।[৪৩] ‘মুসিন্নাহ’ পশু ষষ্ঠ বছরে পদার্পণকারী উট এবং তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু বা দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী ছাগল-ভেড়া-দুম্বাকে বলা হয়।[৪৪] কেননা এই বয়সে সাধারণতঃ এই সব পশুর দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত উঠে থাকে। তবে অনেক পশুর বয়স বেশী ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ে দাঁত ওঠে না। এসব পশু দ্বারা কুরবানী করা ইনশাআল্লাহ কোন দোষের হবে না।[৪৫]

কুরবানীর ক্ষেত্রে বর্জনীয়

চুল-নখ কাটা :

যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর হ’তে কুরবানী সম্পন্ন করা পর্যন্ত  চুল ও নখ কর্তন করা হ’তে বিরত থাকতে হবে।

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ:  إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَ أَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُّضَحِّىَ فَلاَ يَمُسَّ مِنْ شَعْرِهِ وَ أَظْفَارِهِ شَيْئًا-

উম্মে সালামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেওয়ার ইচ্ছা রাখে, তারা যেন (যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর হ’তে কুরবানী সম্পন্ন করা পর্যন্ত) স্ব স্ব চুল ও নখ কর্তন করা হ’তে বিরত থাকে’।[৪৬]

 

কুরবানী দিতে অক্ষম ব্যক্তিগণ কুরবানীর খালেছ নিয়তে এটা করলে ‘আল্লাহর নিকটে তা পূর্ণাঙ্গ ‘কুরবানী’ হিসাবে (فذلك تمامُ أُضحِيَتِكَ عِنْدَ الله)’ গৃহীত হবে।[৪৭]

ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানী না দেওয়া :

কুরবানীর পশু সুঠাম, সুন্দর ও নিখুঁত হ’তে হবে। চার শ্রেণীর পশু কুরবানী দিতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন।

نِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ مَاذَا يُتَّقَى مِنَ الضَّحَايَا فَأَشَارَ بِيَدِهِ وَقَالَ أَرْبَعًا الْعَرْجَاءُ الْبَيِّنُ ظَلَعُهَا وَالْعَوْرَاءُ الْبَيِّنُ عَوَرُهَا وَالْمَرِيضَةُ الْبَيِّنُ مَرَضُهَا وَالْعَجْفَاءُ الَّتِى لاَ تُنْقِى-

বারা ইবনু আযেব (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কুরবানীতে কি ধরনের পশু হ’তে বেঁচে থাকা উচিত? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাতের ইশারা করে বললেন, চার রকমের পশু হ’তে বেঁচে থাকা উচিত (১) স্পষ্ট খোঁড়া (২) স্পষ্ট কানা (৩) স্পষ্ট রোগী এবং (৪) অতি জীর্ণশীর্ণ।[৪৮] আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের নিদের্শ দিয়েছেন, ‘আমরা যেন কুরবানীর পশুর চোখ ও কান উত্তম রূপে দেখে নেই’।[৪৯] তবে নিখুঁত পশু ক্রয়ের পর যদি নতুন করে খুঁত হয় বা পুরানো কোন দোষ বেরিয়ে আসে, তাহ’লে ঐ পশু দ্বারাই কুরবানী বৈধ হবে’।[৫০]

ঈদের ছালাতের পূর্বে কুরবানী করা :

ঈদের ছালাতের পূর্বে কুরবানী করা যাবে না। কেউ তা করলে সেটি কুরবানী হিসাবে গৃহীত হবে না। হাদীছে এসেছে,

وَعَنْ جُنْدُبِ بْنِ سُفْيَانَ رضي الله عنه قَالَ: شَهِدْتُ اَلْأَضْحَى مَعَ رَسُولِ اَللَّهِ  صلى الله عليه وسلم  فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ بِالنَّاس، نَظَرَ إِلَى غَنَمٍ قَدْ ذُبِحَتْ، فَقَالَ: مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ اَلصَّلَاةِ فَلْيَذْبَحْ شَاةً مَكَانَهَا, وَمَنْ لَمْ يَكُنْ ذَبَحَ فَلْيَذْبَحْ عَلَى اسْمِ اَللَّهِ-

জুনদুব ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ঈদুল আযহায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি লোকদের সাথে ছালাত স¤পন্ন করে একটি বকরী দেখতে পেলেন, যা পূর্বেই যবেহ করা হয়েছে। তখন বললেন, ছালাতের পূর্বে যে ব্যক্তি যবেহ করেছে, সে যেন এর স্থলে অন্য একটি বকরী যবেহ করে। আর যে যবেহ করেনি সে যেন এখন আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করে।[৫১]

যবেহ কালীন সময়ে কুরবানীর পশুকে কষ্ট দেওয়া :

কুরবানী দাতা ধারালো ছুরি নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ পড়ে নিজ হাতে খুব জলদি যবহের কাজ সমাধা করবেন, যেন পশুর কষ্ট কম হয়। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের ডান পা দিয়ে পশুর ঘাড় চেপে ধরতেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، قَالَ: ثِنْتَانِ حَفِظْتُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ اللهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ-

শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে আমি দু’টি কথা স্মরণ রেখেছি, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের উপর ইহসান (যথাসাধ্য সুন্দর রূপে স¤পাদন করা) অত্যাবশ্যক করেছেন। সুতরাং তোমরা যখন (কাউকে) হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থার সাথে হত্যা করবে। আর যখন যবেহ করবে তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার ছুরি ধার করে নেয় এবং তার যবেহকৃত জন্তুকে আরাম প্রদান করে’ (অহেতুক কষ্ট না দেয়)।[৫২]

যবেহকালীন সময়ে অন্য পশু থেকে আড়াল না করা :

কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় একটি পশু থেকে অন্য পশু আড়ালে রাখতে হবে। কারণ যবেহ করতে দেখলে অন্য পশুটি ভয় পাবে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,       أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِحَدِّ الشِّفَارِ وَأَنْ تُوَارَى عَنِ الْبَهَائِمِ وَقَالَ إِذَا ذَبَحَ أَحَدُكُمْ فَلْيُجْهِزْ ‘রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে ছুরি শান দিতে এবং একটি পশু থেকে আরেকটি পশু আড়াল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমাদের কেউ যখন পশু যবেহ করবে সে যেন তা দ্রুত সম্পন্ন করে’।[৫৩]

কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করে নিজে ভোগ করা :

কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রয় করে তা নিজে ভোগ করা যাবে না। বরং ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَاعَ جِلْدَ أُضْحِيَّتِهِ فَلَا أُضْحِيَّةَ لَهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার কুরবানীর চামড়া বিক্রয় (ভোগ করবে) করবে তার কুরবানী হবে না’।[৫৪]

কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট প্রাণী পরিবর্তন করা :

পোষা বা খরিদ করা কোন পশুকে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করলে ও সেই মর্মে ঘোষণা দিলে তা আর বদল করা যাবে না। অবশ্য যদি নির্দিষ্ট না করে থাকেন, তবে তার বদলে উত্তম পশু কুরবানী দেওয়া যাবে।[৫৫]

কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করা :

কুরবানী না করে পশুটি ছাদাক্বা বা বিক্রয় করে মূল্য দান করা যাবে না। ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, ‘অর্থ ছাদাক্বাহ করা অপেক্ষা কুরবানী করা উত্তম। সুতরাং কারো নিকট যদি অর্থ থাকে আর সে তা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় তাহ’লে সে যেন কুরবানী করে’।[৫৬] ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, কুরবানী ছাদাক্বার চাইতে উত্তম, যেমন ঈদের ছালাত অন্য সকল নফল ছালাতের চাইতে উত্তম।[৫৭]

কুরবানীর পশুর গোশত দ্বারা কসাইকে মজুরী দেওয়া :

কুরবানীর পশু যবেহ করা কিংবা কুটা-বাছা করার কুরবানীর গোশত বা চামড়ার পয়সা হ’তে কোনরূপ মজুরী দেওয়া যাবে না। ছাহাবীগণ নিজ নিজ পকেট থেকে এই মজুরী দিতেন। অবশ্য ঐ ব্যক্তি দরিদ্র হ’লে হাদিয়া স্বরূপ তাকে কিছু দেওয়ায় দোষ নেই।[৫৮]

وَعَنْ عَلِيِّ رضي الله عنه قَالَ أَمَرَنِي اَلنَّبِيُّ  صلى الله عليه وسلم أَنَّ أَقْوَمَ عَلَى بُدْنِهِ وَأَنْ أُقَسِّمَ لُحُومَهَا وَجُلُودَهَا وَجِلَالَهَا عَلَى اَلْمَسَاكِينِ, وَلَا أُعْطِيَ فِي جِزَارَتِهَا مِنْهَا شَيْئاً-

আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে এ মর্মে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন তাঁর কুরবানীর উঁটে আরোহন করি, তার গোশত, চামড়া এবং হাওদাজ মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দেই ও তার গোশত থেকে কোন কিছইু কসাইকে না দেই’।[৫৯]

গোশত এক বছরের বেশী সংরক্ষণ করা :

কুরবানীর গোশত সারা বছর সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। এমনকি ‘এক যুলহিজ্জাহ থেকে আরেক যুলহিজ্জাহ পর্যন্ত’ এক বছর। তবে এক বছরের বেশী সময় জমা রাখা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلُوهُ مِنْ ذِى الْحِجَّةِ إِلَى ذِى الْحِجَّةِ ‘তোমরা তা (কুরবানীর গোশত) এক যুলহিজ্জাহ থেকে আরেক যুলহিজ্জাহ পর্যন্ত খাও।[৬০]

এছাড়াও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বড় পশু কুরবানী করা, অহংকার করা, আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হওয়া, মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে কুরবানী দেওয়া ইত্যাদি কাজ বর্জনীয়।

উপসংহার : কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আর এতে আল্লাহভীতি ও নেকীর উদ্দেশ্য থাকলেই  কেবল তা অর্জন করা সম্ভব। আল্লাাহ বলেন, لَنْ يَّنَالَ اللَّهَ لُحُوْمُهَا وَلاَ دِمَاؤُهَا وَ لَكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ- ‘কুরবানীর পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর নিকটে পৌঁছে না। বরং তাঁর নিকটে পৌঁছে কেবলমাত্র তোমাদের ‘তাক্বওয়া’ বা আল্লাহভীতি’ (হজ্জ ২২/৩৭)। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নেক নিয়তে তাক্বওয়ার সাথে কুরবানী করতে হবে। অন্যথা কাবীলের মত আমাদের কুরবানীও প্রত্যাখ্যাত হবে। পক্ষান্তরে যাবতীয় ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,

إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ- لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ-

‘আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ, সবই বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর এ ব্যাপারেই  আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম’ (আন‘আম ৬/১৬২-১৬৩)। আল্লাহ আমাদের সকলকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবনের প্রতিটি আমল সম্পন্ন করার তাওফীক দান করুন- আমীন।

 [লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]

 

[১]. ইবনুল আছীর, আশ-শাফী, ২/১৮২; মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব (বৈরূুত ছাপা : ১৪০৬/১৯৮৬) পৃ. ১৫৮।

[২]. আহমাদ হা/১৫৩১৯; ইবনু হিব্বান হা/১৭২৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৮৬৬।

[৩]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার (কায়রো ছাপা : ১৩৯৮/১৯৭৮) ৬/২২৮ পৃ.।

[৪]. আহমাদ হা/১৬৭৯৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৫৫৪০; ছহীহাহ হা/২৪৭৬।

[৫]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার  ৬/২২৮ পৃঃ।

[৬]. তাফসীরে কুরতুবী  ১৫/১০৯ পৃঃ; নায়লুল আওতার ৬/২৫৫পৃঃ।

[৭]. আহমাদ হা/৪৯৫৫; তিরমিযী হা/১৫০৭; মিশকাত হা/১৪৭৫, এ হাদীছের সনদ যঈফ হ’লেও রাসূল (ছাঃ)-এর বিভিন্ন আমল ও উক্তি তাঁর নিয়ামিত কুরবানী করার প্রমাণ বহন করে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে জনগণ! নিশ্চয়ই প্রত্যেক পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী রয়েছে’ (আবুদাউদ হা/২৭৮৮; তিরিমিযী হা/১৫১৮।

[৮]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ৪/১৬; তাফসীরে কুরতুবী ২/৯৮-৯৯ পৃঃ, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[৯]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/৯৯।

[১০]. বুখারী হা/১৩৮।

[১১]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০২; তাফসীরে বাগাবী ১/২২৯; মাসায়েলে কুরবানী দ্রষ্টব্য।

[১২]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৬।

[১৩]. বুখারী হা/১৭৪৯; মুসলিম হা/১২৯৬; মিশকাত হা/২৬২১, ২৬২৬।

[১৪]. তাফসীরে ইবনু কাছীর ৭/৩১, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[১৫]. বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৯৪৭৭; আহমাদ হা/২৭০৭; শু‘আবুল ঈমান হা/৪০৭৭, সনদ ছহীহ।

[১৬]. ইবনু কাছীর ৭/৩১; তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৭ পৃঃ।

[১৭]. তাফসীরে তাবারী, দুররুল মানছূর, কুরতুবী ১৫/১০৭, ৩৭/১০, আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[১৮]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৭ পৃঃ।

[১৯]. বুখারী হা/৯৬৯; মিশকাত হা/১৪৬০।

[২০]. ইবনুু কাছীর ৮/৩৯০, সূরা ফজরের ২নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[২১]. ইবনু কাছীর ৫/৪১৫, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[২২]. বুখারী ৪/১২২।

[২৩]. আহমাদ হা/৫৪৪৬, ৬১৫৪, সনদ ছহীহ।

[২৪]. ছহীহ আত-তারগীব হা/১২৪৮।

[২৫]. আদাবুল মুফরাদ হা/৬২২; মুসলিম হা/২১৩৭; মিশকাত হা/২২৯৪।

[২৬]. বুখারী, বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৬০৬১।

[২৭]. বুখারী তা‘লীক, ইরওয়া হা/৬৫১।

[২৮]. দারেমী হা/১৭৭৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/১২৪৮।

[২৯]. মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৪ ‘ছওম’ অধ্যায়।

[৩০]. নাসাঈ হা/২৩৭২; আবুদাউদ হা/২৪৩৭, সনদ ছহীহ।

[৩১]. শারহুন নববী আলা মুসলিম হা/১১৭৬-এর ব্যাখ্যা।

[৩২]. হাকেম হা/৭৫২২; মিশকাত হা/২৬৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৬৪।

[৩৩]. তিরমিযী হা/১৪৯৩; ইবনু মাজাহ হা/৩১২৬; মিশকাত হা/১৪৭০; মির‘আত সহ হা/১৪৮৭, সনদ ‘হাসান’। আলবানী হাদীছটিকে প্রথমে ছহীহ বললেও পরবর্তী তাহক্বীকে যঈফ বলেছেন। দ্র: (যঈফাহ হা/৫২৬; যঈফ আত-তারগীব হা/৬৭১)। ইবনুল ‘আরাবী বলেন যে, কুরবানীর ফযীলত বর্ণনায় কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না’। ছাহেবে মির‘আত বলেন, বিভিন্ন ‘শাওয়াহেদ’-এর কারণে সম্ভবতঃ ইমাম তিরমিযী হাদীছটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। দ্রঃ  মির‘আত  ২/৩৬২-৬৩ পৃঃ; ঐ, ৫/১০৪; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী (কায়রো ছাপাঃ ১৯৮৭) ৫/৭৫ পৃঃ।

[৩৪]. মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪।

[৩৫]. বুখারী হা/৭২১০; তিরমিযী হা/১৫০৫; ইরওয়া হা/১১৪২।

[৩৬]. ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৮।

[৩৭]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৫৩।

[৩৮]. মির‘আত ২/৩৫০ পৃঃ; ঐ, ৫/৭৪ পৃঃ।

[৩৯]. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী (বৈরূত ছাপা : তারিখ বিহীন), ১১/১১৭ পৃঃ।

[৪০]. বুখারী হা/৫৫৫৬; মুসলিম হা/১৯৬৬।

[৪১]. আহমাদ হা/২৩৫৯; নাসাঈ হা/৪৪১৯; ইবনু হিব্বান হা/৩৯৪৩।

[৪২]. ইরওয়া হা/১১৬০, সনদ হাসান; মুগনী ৮/৬৩২।

[৪৩]. মুসলিম হা/১৯৬৩; মিশকাত হা/১৪৫৫।

[৪৪]. মির‘আত, ২/৩৫২ পৃঃ।

[৪৫]. মাাসায়েলে কুরবানী পৃঃ ১৫ দ্রষ্টব্য।

[৪৬]. মুসলিম হা/১৯৭৭; মিশকাত হা/১৪৫৯।

[৪৭]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৯; মিশকাত হা/১৪৭৯; আলবানী, সনদ যঈফ; আহমাদ হা/৬৫৭৫; আরনাউত্ব, সনদ হাসান।

[৪৮]. আহমাদ হা/১৮৬৯৭; তিরমিযী হা/১৪৯৭; মিশকাত হা/১৪৬৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৮৮৬।

[৪৯]. ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৩; নাসাঈ হা/৪৩৭৬; মিশকাত হা/১৪৬৩, সনদ হাসান।

[৫০]. মির‘আত ৫/৯৯ পৃঃ।

[৫১]. বুখারী হা/৫৫০০; মুসলিম হা/১৯৬০; মিশকাত হা/১৪৩৬।

[৫২]. মুসলিম হা/১৯৫৫; মিশকাত হা/৪০৭৩।

[৫৩]. ইবনু মাজাহ হা/৩১৭২; ছহীহাহ হা/৩১৩০।

[৫৪]. হাকেম হা/৩৪৬৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১০৮৮;

[৫৫]. মাসায়েলে কুরবানী পৃঃ ২৬।

[৫৬]. মাজমু‘ ফাতাওয়া ২৬/৩০৪।

[৫৭]. তাফসীরে কুরতুবী, ছাফফাত ৩৭/১০২-আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[৫৮]. আল-মুগনী, ১১/১১০ পৃঃ।

[৫৯]. বুখারী হা/১৭১৭; মুসলিম হা/১৩১৭।

[৬০]. আহমাদ হা/২৫২৫৯; ইবনু হিব্বান হা/৫৯৩৩; ছহীহাহ হা/৩১০৯।



আরও