সাংগঠনিক মযবুতির উপায়

শেখ রফিকুল ইসলাম 12626 বার পঠিত

ইসলাম আল্লাহ তা‘আলা মনোনীত জীবন ব্যবস্থা। মহান আল্লাহর সৃষ্টি হিসাবে মানুষ তাঁরই বিধান মানবে এটাই স্বাভাবিক। মানুষকে ইসলামী বিধান ব্যতীত অন্য কোন মতাদর্শ গ্রহণ করার কোন প্রকার সুযোগ আল্লাহ রাববুল আলামীন দেননি। কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন মতবাদ গ্রহণ করে তাহলে তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِيْناً فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ- ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত’ (আলে ইমরান ৮৫)

আল্লাহর বিধান আপনা-আপনি কায়েম হয় না। তার জন্য প্রয়োজন হয় প্রচার ও আন্দোলনের। আর আন্দোলন একাকী করা যায় না। প্রয়োজন হয় সংঘবদ্ধ জনসমষ্টির। আর সংগঠিত জনগণকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় সংগঠনের। মেরুদন্ডবিহীন প্রাণী যেমন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তেমনি সংগঠন ছাড়া কোন আন্দোলন, কোন লক্ষ্য বাস্তবায়ন কখনই সম্ভব হতে পারে না।

সাধারণ অর্থে সংগঠন বলতে এমন একদল জনসমষ্টিকে বুঝায় যারা কোন বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নেতৃত্বের অধীনে একত্রিত হয়ে সুশৃংখলভাবে কাজ করে। মানুষ সামাজিক জীব হিসাবে জামা‘আতবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালবাসে। শুধু মানুষ কেন? প্রাণীজগতের অন্য সকল জীব-জন্তুর মধ্যেই সাংগঠনিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। কুরআন ও হাদীছে জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা সম্পর্কে জোর তাকীদ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعاً وَلاَ تَفَرَّقُواْ - ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (আলে ইমরান ১০৩)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِي سَبِيْلِهِ صَفّاً كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ- ‘আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায়’ (ছফ ৪)

প্রখ্যাত ছাহাবী হারিছ আল-আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ، اللهُ أمَرَنِي بِهِنَّ : بِالْجَمَاعَةِ، وَالسَّمْعِ، وَالطَّاعَةِ، وَالْهِجْرَةِ، وَالْجِهَادِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ الْجَمَاعَةِ قيْدَ شِبْرٍ، فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلا أَنْ يُرَاجِعَ، وَمَنْ دَعَا بِدَعْوى الْجَاهِلِيَّةِ، فَهُوَ مِنْ جُثَى جَهَنَّمَ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ، وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى ؟ قَالَ : وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি, যে বিষয়ে আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। (১) জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা (২) আমীরের নির্দেশ শ্রবণ করা (৩) তাঁর আনুগত্য করা (৪) হিজরত করা ও (৫) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। যে ব্যক্তি জামা‘আত হতে এক বিঘত পরিমাণ বের হয়ে গেল তার গর্দান হতে ইসলামের গন্ডী ছিন্ন হল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। যে ব্যক্তি মানুষকে জাহেলিয়াতের দাওয়াত দ্বারা আহবান করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামীদের দলভুক্ত হল। যদিও সে ছিয়াম পালন করে, ছালাত আদায় করে ও ধারণা করে যে সে একজন মুসলিম’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৬৯৪)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, مَنْ سَرَّهُ بُحْبُحَةُ الجَنَّةِ فَلْيَلْزَمِ الْجَمَاعَةَ ‘যে ব্যক্তি জান্নাতের আনন্দ উপভোগ করতে চায় তার কর্তব্য হচ্ছে জামা‘আতকে অাঁকড়ে ধরা’ (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬০০৩, সনদ হাসান)। ছাহাবী আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,..فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ ‘তোমার উচিৎ হচ্ছে জামা‘আতভুক্ত থাকা। কেননা পাল থেকে বিচ্ছিন্ন ভেড়াকেই নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলে’ (আবু দাঊদ, মিশকাত হা/১০৬৮)

উপরোক্ত আয়াত, হাদীছসমূহ জামা‘আতবদ্ধভাবে জীবন যাপনের অপরিহার্যতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। এমনকি নেতার কোন আচরণ অপছন্দনীয় হলেও জামা‘আত থেকে পৃথক হওয়া যাবে না। বরং ধৈর্য ধারণ পূর্বক জামা‘আতভুক্ত থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ رَأَى مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئاً يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ، فَإِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يُفَارِقُ الْجَمَاعَةَ شِبْراً فَيَمُوْتُ إِلاَّ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যখন কেউ তার আমীরের মধ্যে অপসন্দনীয় কোন আচরণ দেখবে তখন সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত হতে এক বিঘত পরিমাণ পৃথক হয়ে মৃত্যুবরণ করে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৩৮)

দুর্বল মানুষ দিয়ে যেমন বড় কিছু আশা করা যায় না। তেমনি দুর্বল সংগঠন দিয়ে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাছিল করা সম্ভব নয়। সেজন্য প্রয়োজন সাংগঠনিক মযবুতি। সাংগঠনিক মযবুতির কিছু উপায় নিম্নে আলোচনা করা হলো।

যোগ্য নেতা নির্বাচন :

যোগ্য নেতা নির্বাচন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংগঠনের নেতা হন একজন নির্বাচিত ব্যক্তি। একজন ব্যক্তি যতই যোগ্যতাসম্পন্ন হোন না কেন, তিনি নিজেই নিজকে নেতা ঘোষণা দিয়ে অন্যদের আনুগত্য দাবী করবেন, ইসলামী বিধি-বিধানে এরূপ কোন নিয়ম নেই। ইসলামে নেতৃত্ব চাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّا وَاللهِ لَا نُوَلِّي عَلَى هَذَا الْعَمَلِ أَحَدًا سَأَلَهُ وَلَا أَحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ  ‘আল্লাহর শপথ! আমরা এই দায়িত্বপূর্ণ কাজে এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করব না, যে তা পাওয়ার জন্য প্রার্থী হবে। অথবা এমন কাউকেও নয়, যে তা পাওয়ার জন্য লালায়িত হবে’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৮৩)। নেতৃত্ব চেয়ে নিলে তাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং না চাইতেই যদি তা অর্পিত হয়, তাহলে তাতে আল্লাহর রহমত ও বরকত বিদ্যমান। আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تَسْأَلِ الإِمَارَةَ فَإِنَّكَ إِنْ أُعْطِيتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا وَإِنْ أُعْطِيتَهَا عَنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا ‘তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিয়ো না। নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়ার কারণে তা প্রাপ্ত হলে তোমার উপরে তা চাপিয়ে দেয়া হবে। আর নেতৃত্ব না চেয়ে পরিবর্তে প্রাপ্ত হলে তুমি তাতে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৮০)

নেতা নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে নেতা নির্বাচিত হয়, তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আম জনসাধারণের দ্বারা যোগ্য নেতা নির্বাচন করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। এজন্য প্রয়োজন সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ, নিঃস্বার্থ, দূরদর্শী ও অভিজ্ঞ নির্বাচকের। কোন অসৎ, অযোগ্য, স্বার্থান্ধ, অদূরদর্শী ও অনভিজ্ঞ নির্বাচকের দ্বারা যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা নির্বাচন করা আদৌও সম্ভব নয়। যোগ্য নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচকের মতামত একটি পবিত্র আমানত। সেজন্য যোগ্যতম ব্যক্তিকে নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করা হলে আমানতদারির মূল দাবী পূরণ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤدُّوْا الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আমানতসমূহ তার হকদারের হাতে অর্পণ করার আদেশ দিয়েছেন...’ (নিসা ৫৮)

ইসলামী বিধানে জামা‘আতবদ্ধভাবে বসবাসের যেমন গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে, তেমনি নেতা শূন্য জামা‘আতও ইসলামী বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এক কথায় সর্বাবস্থায় যেকোন ধরনের জামা‘আত অথবা সংগঠন বা দলের একজন যোগ্য নেতা থাকবেন, এটাই ইসলামী নিয়ম। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَا يَحِلُّ لِثَلَاثَةِ نَفَرٍ يَكُوْنُوْنَ بِأَرْضِ فَلَاةٍ إِلَّا أَمَّرُوْا عَلَيْهِمْ أَحَدَهُمْ ‘তিনজন লোকের জন্যেও কোন নির্জন ভূমিতে অবস্থান করা, বৈধ নয়, তাদের মধ্যে থেকে একজনকে আমীর নিযুক্ত করা ব্যতীত’ (আহমাদ হা/৬৬৪৭, সনদ হাসান)। ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِذَا خَرَجَ ثَلاَثَةٌ في سَفَرٍ فَليُؤَمِّرُوْا أحَدَهُمْ ‘যখন তিনজন একত্রে সফরে বের হবে, তখন তাদের মধ্যে একজনকে তারা যেন আমীর নিযুক্ত করে নেয়’ (আবু দাঊদ, মিশকাত হা/৩৯১১)

অযোগ্য ব্যক্তিকে নেতা নির্বাচন না করা :

যোগ্য নেতা নির্বাচন করা যেমন ইসলামী শরী‘আতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তদ্রূপ অযোগ্য ব্যক্তিকে নেতা হিসাবে নির্বাচিত করা আমানতের খিয়ানত করার শামিল। সেজন্য নেতা নির্বাচনের সময় নির্বাচকদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন অবস্থাতেই অযোগ্য ব্যক্তিকে নেতা নির্বাচন করা না হয়। ছাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হুঁশিয়ারী উচ্চরণ করে বলেন, إِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ، قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا إِضَاعَتُهَا؟ قَالَ : إِذَا أُسْنِدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ ‘যখন আমানত বিনষ্ট হতে দেখবে তখন ক্বিয়ামতের অপেক্ষা করবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কীভাবে আমানত বিনষ্ট করা হবে? উত্তরে তিনি বললেন, যখন কোন দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তির উপর ন্যস্ত করা হবে তখন ক্বিয়ামতের অপেক্ষা করবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫৪৩৯)

নেতার আনুগত্য করা :

নেতার আনুগত্য ছাড়া সংগঠন শক্তিশালী হয় না। যে জামা‘আত তার নেতার প্রতি যতবেশী অনুগত, সে জামা‘আত তত বেশী মযবুত ও শক্তিশালী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ أَطِيْعُواْ اللهَ وَأَطِيْعُواْ الرَّسُوْلَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً- ‘হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং তোমাদের মধ্যে থেকে উলুল আমরগণের। অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের পরস্পরে মতবিরোধ দেখা দিলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যার্পন কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক’ (নিসা ৫৯)। আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্ত বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই বা কোন অজুহাতে তার খিলাফ করা যাবে না।

নেতা যদি পরামর্শের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করেন এবং সে সিদ্ধান্ত যদি আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে নেতার সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) তাকীদ প্রদান করে বলেন, مَنْ أَطَاعَنِىْ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيْرِى فَقَدْ أَطَاعَنِىْ وَمَنْ عَصَى أَمِيْرِى فَقَدْ عَصَانِىْ ‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে ব্যক্তি আমীরের (নেতা) আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমার অবাধ্যতা করল’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬১)

নেতা যদি নাফরমানির নির্দেশ ব্যতীত কোন নির্দেশ প্রদান করেন এবং সে নির্দেশ যদি সংগঠন বা জামা‘আতের কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগতভাবে অপসন্দ হয়, তথাপিও নেতার সে নির্দেশ মান্য করতে হবে। ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) তাঁর উম্মাতকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيْمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ ‘প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে নেতার নির্দেশ শুনা ও মানা, চাই সে নির্দেশ তার পসন্দ হোক বা অপসন্দ হোক। যদি তা নাফরমানির নির্দেশ না হয়। আর নাফরমানির নির্দেশ দিলে তা শুনা ও মানা যাবে না’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬৩)। আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا طَاعَةَ فِيْ مَعْصِيَةِ اللهِ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوْفِ ‘গুনাহের কাজে আনুগত্য করা যাবে না; বরং আনুগত্য শুধুমাত্র ন্যায়সংগত কাজে’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬৫)। অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِيْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই’ (শারহুস সুন্নাহ, মিশকাত হা/৩৬৯২)

নেতার উত্তম আচরণ ও ব্যবহার :

নেতা ও কর্মীদের মাঝে সুসম্পর্ক সংগঠনকে সুসংহত করে। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে সংগঠনের অগ্রগতি তরান্বিত হয়। নেতার আচরণ ও ব্যবহার অতি উত্তম হওয়াই দরকার। নেতার রূঢ় আচরণে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। নেতাকে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظّاً غَلِيْظَ الْقَلْبِ لاَنْفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ- ‘অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয়ের হয়েছেন এবং আপনি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয়ের হতেন, তাহলে তারা আপনার সংসর্গ ত্যাগ করত’ (আলে ইমরান ১৫৯)

নেতার কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর কথা ও কাজ এমন পর্যায়ের হবে না যা তাঁর কর্মের পরিপন্থী। ফলশ্রুতিতে এমন একটা সময় উপনীত হয়, যখন কর্মীরা তাঁর সমালোচনা করতে দ্বিধা করে না বা তাঁর সম্মুখে উচিৎ কথা বলে ফেলে। তখন উভয়ের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং সংগঠনে ফাটল ধরে। এজন্য আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত ঘোষণার দিকে সকলের খেয়াল রাখা প্রয়োজন। يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آَمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ- كَبُرَ مَقْتاً عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُوْلُوْا مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক’ (ছফ ২,৩)

সংগঠনে নেতার ব্যবহারের বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, তাঁর ব্যবহারে কর্মীরা যেন কোন অবস্থাতেই কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলের (ছাঃ) নিম্নের বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, اَللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِيْ شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের সামষ্টিক কাজের কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি তাদেরকে কষ্টে ফেলে তবে তুমি তাকে কষ্টে ফেলো। আর সে যদি তাদের প্রতি নম্রতা অবলম্বন করে তাহলে  তুমিও তার প্রতি নম্রতা অবলম্বন কর’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৮৯)

আওফ বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِيْنَ تُحِبُّوْهُمْ وَيُحِبُّوْنَكُمْ، وَتَدْعُوْنَ لَهُمْ وَيَدْعُوْنَ لَكُمْ، وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِيْنَ تُبْغِضُوْنَهُمْ وَيُبْغِضُوْنَكُمْ، وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَيَلْعَنُوْنَكُمْ ‘তোমাদের উত্তম নেতা তো তারাই যাদেরকে তোমরা ভালবাস, তারাও  তোমাদেরকে ভালবাসে। তোমরা তাদের জন্য দো‘আ কর, তারাও তোমাদের জন্য দো‘আ করে। তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা তো তারাই যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর, তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দেও, তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৭০)

আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, اسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا وَإِنْ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيْبَةٌ ‘তোমরা নেতার আদেশ শ্রবণ কর এবং তা পালন কর, যদিও নেতা হাবশী গোলাম হন যার মাথা কিশমিশের ন্যায় (বুখারী, মিশকাত হা/৩৬৬৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে- إِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ مُجَدَّعٌ أَسْوَدُ يَقُودُكُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى فَاسْمَعُوا لَهُ  وَأَطِيعُوا ‘যদি নাক-কান কাটা কৃষ্ণকালো দাসও তোমাদের নেতা নিযুক্ত হন, যিনি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী তোমাদেরকে পরিচালনা করেন তাহলে তোমরা তার কথা শুনবে ও আনুগত্য করবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬২)

ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَهُ وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্যের হাত ছিনিয়ে নিল সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, তার জন্য কোন দলীল থাকবে না। যে ব্যক্তি তার গর্দানে আমীরের আনুগত্যের বায়‘আত ব্যতীত মৃত্যুবরণ করল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৭৪)

পরামর্শভিত্তিক কাজ করা :

সংগঠনের অগ্রগতি ও মযবুতির জন্য পরামর্শভিত্তিক কাজ করার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী। নেতা তাঁর সাংগঠনিক কর্মকান্ডে মজলিসে শূরার সাথে পরামর্শ করে কাজ করবেন এটাই ইসলামের মৌলিক নীতি। সংগঠনের সকল স্তরের কর্মীদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নেতার পক্ষে আদৌও সম্ভব নয়। তাই কর্মীদের মাঝ থেকে সংগঠন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে মজলিসে শূরা গঠন করবেন এবং তাদের সাথে পরামর্শ করে নেতা কাজ করবেন। মজলিসে শূরার সদস্যগণ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহকে সামনে রেখে খোলা মনে সংগঠনের অগ্রগতি ও মযবুতির স্বার্থে সুচিন্তিত যুক্তিপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করবেন। কারো মুখের দিকে তাকিয়ে বা কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য বা কেউ অসন্তুষ্ট হবেন এ চিন্তায় বা ভয়ে মতামত ব্যক্ত করা থেকে বিরত থাকা শূরা সদস্যদের কোন অবস্থাতেই উচিৎ নয়। মতামত প্রদানে দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তিকে শূরা সদস্য মনোনীত করা ঠিক নয়। তাতে সংগঠনের অগ্রগতি ও মযবুতী তো দূরের কথা বরং ক্ষতির সম্ভাবনাই প্রবল। নিজ মতামত অপেক্ষা অধিকতর যুক্তিনির্ভর অভিমতকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য প্রত্যেক শূরা সদস্যকে প্রস্ত্তত থাকতে হবে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে অবশ্যই সংগঠনের অগ্রগতি ও মযবুতী বৃদ্ধি পাবে। মজলিসে শূরার সাথে পরামর্শক্রমে কাজ করায় নেতার স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ থাকে না। শরী‘আতে যেসব বিষয়ের স্পষ্ট দলীল বিদ্যমান তা ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে পরামর্শভিত্তিক কাজ করার গুরুত্ব অত্যধিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ- ‘আপনার কর্মকান্ডে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ১৫৯)

পবিত্র আল-কুরআনে মুমিনদের বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَالَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُوْرَى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ- ‘যারা তাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য করে, ছালাত কায়েম করে, পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে’ (শূরা ৩৮)

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) বলেন, مَا رَأَيْتُ رَجُلاً أَكْثَرَ اسْتِشَارَةً لِلرِّجَالِ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আমি এমন কোন ব্যক্তিকে দেখিনি, যিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অপেক্ষা বেশী পরামর্শ করতেন’ (শারহুস সুন্নাহ ১/৮৪৯ পৃঃ)। আমীরুল মুমিনীন ওমর (রাঃ) বলেন, لاَ خِلاَفَةَ إِلاَ عَنْ مَشُوْرَةٍ ‘পরামর্শ ব্যতীত খিলাফত চলে না’ (নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/৭১৫৪, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/৩৮১৯৭)। খলীফা হিসাবে বায়‘আত গ্রহণ বিষয়ে ওমর (রাঃ)-এর বক্তব্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, مَنْ بَايَعَ رَجُلًا عَنْ غَيْرِ مَشُوْرَةٍ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ فَلَا يُبَايَعُ هُوَ وَلَا الَّذِيْ بَايَعَهُ تَغِرَّةً أَنْ يُقْتَلَا ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের সাথে পরামর্শ ছাড়া কাউকে খলীফা হিসাবে বায়‘আত করল, তার বায়‘আত সিদ্ধ হবে না। সে এবং তার হাতে বায়‘আতকারী উভয়ে নিজেদেরকে কতলের শিকার বানিয়ে নিল’ (বুখারী হা/৬৮৩০)

নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী :

সংগঠনের মযবুতী ও অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন একদল নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী। যারা হবে নির্ভেজাল তাওহীদী আক্বীদা-বিশ্বাসের অধিকারী। আল্লাহ ও রাসূলের উপর পূর্ণ ঈমান রেখে হক গ্রহণে যাদের অন্তরে থাকবে না কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। তারা পালন করবে শরী‘আত অনুমোদিত সৎকর্মসমূহ। সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণে থাকবে অবিচল। পরিণামে পাওয়া যাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও সফলতা। তারা হবে না কখনও ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَالْعَصْرِ- إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ- إِلاَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ- ‘মহাকালের কসম! নিশ্চয়ই সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করেছে। পরস্পরে হক্ব গ্রহণ করেছে ও পরস্পরে ধৈর্য ধারণ করেছে’ (আছর ১-৩)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা দুর্বল হয়ো না ও বিষণ্ণ হয়ো না এবং তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও’ (আলে ইমরান ১৩৯)। প্রতিটি কাজই হতে সম্পূর্ণ আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত। ইবনুল কাইয়িম বলেন, العمل بغير إخلاص ولا اقتداء كالمسافر يملأ جرابه رملا ينقله ولا ينفعه ইখলাছবিহীন কাজ হল ঐ পথিকের মত, যে পথিক তার পানির জগে বালু ভর্তি করে। সে ওটা বহন করে ঠিকই, কিন্তু তা থেকে কোন উপকার পায় না (আল-ফাওয়ায়েদ, পৃঃ ৪৭)

সংগঠন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা :

সকল পর্যায়ের কর্মীদের সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা একান্ত প্রয়োজন। লক্ষ্য সম্পর্কে যথার্থ উপলব্ধির ঘাটতি কর্মীকে সংগঠন থেকে নিমিষেই ছিটকে দিতে পারে। তাই বিশেষ করে সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও কর্মসূচী সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকা দরকার। সংগঠনের কর্মীদের মনে কোন প্রকার সংশয় থাকলে সংগঠনের অগ্রগতি হবে বাধাগ্রস্ত এবং ফাটল ধরবে সাংগঠনিক মযবুতিতে। তাই লক্ষ্যের প্রতি আস্থা ও বিশ্বস্ততা থাকতে হবে এমনই অবিচল- ‘বলুন! নিশ্চয় আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ কেবলই বিশ্বচরাচরের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই’ (আন‘আম ১৬২)। ‘বলুন! এটাই আমার পথ, আমি আহবান করি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আমি এবং আমার অনুসারীবৃন্দ; আল্লাহ শিরক থেকে পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই (ইউসুফ ১০৮)। ইবনুল কাইয়িম বলেন, الغاية أول في التقدير، آخر في الوجود، مبدأ في نظر العقل، منتهى في منازل الوصول ‘লক্ষ্য হল মর্যাদা ও গুরুত্বে সর্বপ্রথম এবং টিকে থাকার জন্য চূড়ান্ত অবলম্বন আর জ্ঞান-বুদ্ধির মূলমন্ত্র এবং গন্তব্যে পৌঁছনোর  অন্তীম কেন্দ্র’ (আল ফাওয়ায়েদ, পৃ:৪৭)।   

যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন :

কর্মীদের সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট করা, আস্থাশীল রাখা ও সর্বদা সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত রাখার সবচেয়ে বড় পন্থা হল দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে ইসলামী শরী‘আত অনুমোদিত যুগোপযোগী কর্মপন্থা প্রদান করা। ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের অধঃস্তন কর্মীদের সম্পর্কে সর্বদা খোঁজ-খবর রাখা একান্ত প্রয়োজন। কোন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হলে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা দরকার। দায়িত্বশীলদের সাংগঠনিক সফর, সার্বক্ষণিক যোগাযোগ এবং সকলের মানোয়ন্ননের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা একান্ত প্রয়োজন। তাহলে একে অপরের  সাথে সৃষ্টি হবে সুদৃঢ় বন্ধন এবং বৃদ্ধি পাবে সাংগঠনিক মযবুতী।

দায়িত্বশীলদের যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন :

সাংগঠনিক মযবুতী ও অগ্রগতির জন্য দায়িত্বশীলদের যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব প্রদান করা একান্ত যরূরী। যোগ্য কর্মীকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কর্মীকে দায়িত্বশীল মনোনীত করলে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা সৃষ্টি হবে। নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আনুগত্য ও শ্রদ্ধা লোপ পাবে। যোগ্য কর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হবে হতাশা এবং অযোগ্য কর্মীদের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে অহংবোধ। ফলে কাজের পরিবর্তে হবে শুধু অকাজ। দুর্বল হবে সংগঠন।

দায়িত্বশীলদের যথাযথ মূল্যায়ন ও দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহিতা :

সংগঠনের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী থাকে এবং যোগ্যতার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে ভিন্নতা দেখা যায়। কোন কর্মী বা দায়িত্বশীল সংগঠনের প্রতি আন্তরিক হয়ে কোন কাজ সম্পাদন করলে তার যথাযোগ্য মূল্যায়ন প্রয়োজন। সাথে সাথে  প্রত্যেক কর্মী বা দায়িত্বশীলকে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। সুচারুভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে এবং প্রত্যেকটি কাজের জবাবদিহিতার জন্য নিজেকে সদা প্রস্ত্তত রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই  অর্পিত দায়িত্বকে ছোট ও অবহেলার চোখে দেখা ঠিক হবে না। সকলকে জবাবদিহিতার তোয়াক্কা না করার মন-মানসিকতা পরিহার করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ‘সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫)

ধৈর্য ধারণ :

সংগঠনের সকল পর্যায়ের কর্মী ও দায়িত্বশীলকে সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ছবর বা ধৈর্যকে সফলতার চাবিকাঠি হিসাবে মনে করতে হবে। ছবর ব্যতীত কোন কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। মানুষ যখন অভাব-অনটন ও দুঃখহীন সুখ-শান্তিতে বসবাস করে, তখন তার পাশব প্রবৃত্তি অসৎ ও অন্যায় কাজ করার জন্য জাগ্রত হয়। সে সময় পাশব প্রবৃত্তিকে দমন করার জন্য প্রয়োজন হয় ছবর বা ধৈর্যের। অপর দিকে কঠিন কাজ সম্পাদন করা, দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত প্রভৃতিতে ধৈর্যধারণ করা মুমিনের লক্ষণ। এক কথায় সকল অবস্থায় ছবর বা ধৈর্য অবলম্বন একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ يَا عِبَادِ الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا رَبَّكُمْ لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوْا فِيْ هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দাহগণ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়াতে সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা ছবরকারী তারাই অগণিত পুরস্কার পায়’ (যুমার ১০)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَالصَّابِرِيْنَ فِيْ الْبَأْسَاءِ والضَّرَّاءِ وَحِيْنَ الْبَأْسِ أُولَـئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ ‘(মুমিন হল তারা) যারা অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ছবরকারী। তারাই হল সত্যাশ্রয়ী আর তারাই মুত্তাকী’ (বাক্বারাহ ১৭৭)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, مَا عِنْدَكُمْ يَنْفَدُ وَمَا عِنْدَ اللهِ بَاقٍ وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِيْنَ صَبَرُواْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُوْنَ- ‘তোমাদের কাছে যা আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে কখনও তা শেষ হবে না। যারা ছবর করে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত’ (নাহল ৯৬)

নিরাশ না হওয়া :

সাংগঠনিক মযবুতী ও অগ্রগতির জন্য বড় বাধা হল কর্মীদের মাঝে নিরাশ হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হওয়া। আর হতাশার জন্ম হয় তখন, যখন কেউ আন্দোলনের তড়িৎ ফল পেতে চায়, অন্যদের দুনিয়াবী জৌলুসে প্রতারিত হয় এবং পরস্পরের আমানতে সন্দেহ পোষণ করে। অপর দিকে সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও কর্মসূচী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকা এবং সংগঠন কি চায়, কেন চায়, কিভাবে চায়, এর পরিণতি কি? এসব বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অভাব কর্মীদেরকে সাংগঠনিক কাজে নিরাশ করে দেয়। ফলে সংগঠন আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে, যা পরিহার করা সংগঠনের কর্মীদের একান্ত আবশ্যক। আল্লাহ বলেনوَلاَ تَهِنُوْا وَلاَ تَحْزَنُوْا وَأَنْتُمُ الأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ-  ‘তোমরা হীনবল হয়ো না, হতাশ হয়ো না, তোমরাই তো বিজয়ী, যদি তোমরা মুমিন হও’ (আলে ইমরান ১৩৯)। আল্লাহ আরো বলেন, أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوْا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ ‘তোমরা কি ধারণা করেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ জানবেন না তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য ধারণ করেছে? (আলে ইমরান ১৪২)। 

সাংগঠনিক শৃংখলা বজায় রাখা :

সংগঠনের মযবুতির জন্য সাংগঠনিক শৃংখলা (Chain of Command) বজায় রাখা অত্যন্ত যরূরী। বিশৃংখলভাবে কাজ করলে তাতে ভাল ফল আশা করা যায় না। ঊর্ধ্বঃতন থেকে অধঃস্তন আবার অধঃস্তন থেকে ঊর্ধ্বঃতন সকল ক্ষেত্রে নিয়ম-শৃংখলার প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি কেন্দ্র তার পরবর্তী অধঃস্তন সাংগঠনিক স্তর যেলা/উপযেলা সংগঠনকে বাদ দিয়ে একেবারে নিম্ন  স্তরের শাখা সংগঠনকে কোন বিষয়ে নির্দেশনা দেয়, অনুরূপ শাখা সংগঠন তার ঊর্ধ্বঃতন সংগঠন উপযেলা/যেলাকে বাদ দিয়ে সরাসরি কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখে, যে বিষয়ে মধ্যবর্তী সংগঠন কোন খবর না রাখে; সেক্ষেত্রে নিয়ম-শৃংখলা (ঈযধরহ ড়ভ ঈড়সসধহফ) বিঘ্নিত হওয়ার কারণে মধ্যবর্তী সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হওয়াই স্বাভাবিক। আবার যদি কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল মাঝখানের সংগঠনের দায়িত্বশীলকে কোন কিছু না জানিয়ে একেবারে নিম্নস্তরের দায়িত্বশীলকে সাংগঠনিক বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে ও শাখা পর্যায়ের দায়িত্বশীল মধ্যবর্তী সংগঠনের দায়িত্বশীলকে তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে, তাহলে মধ্যবর্তী সংগঠনের দায়িত্বশীলগণ উভয়ের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। যার ফলাফল একটা সংগঠনের জন্য শুভকর হয় না। এজন্য সাংগঠনিক শৃংখলার (Chain of Command) প্রতি সকলের সুদৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। জনৈক মনীষী বলেন, Conduct yourself in this world as if you are here to stay forever; prepare for eternity as if you have to die tomorrow’ অর্থাৎ এই পৃথিবীতে তুমি নিজেকে এমন সুশৃংখলভাবে পরিচালিত কর যেন তুমি এখানে চিরকাল অবস্থান করবে, আর আখিরাতের জন্য এভাবে প্রস্ত্ততি গ্রহণ কর যেন তুমি আগামীকালই মৃত্যুবরণ করবে।’   

অহংকার বর্জন ও প্রশংসা বিমুখ হওয়া :

সমস্ত অসৎগুণের মধ্যে সবচাইতে বড় অসৎগুণ হচ্ছে অহংকার ও অন্যের প্রশংসা প্রত্যাশী হওয়া (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮)। এটা শয়তানী কাজ বৈ অন্য কিছু নয়। অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য (জাছিয়া ৩৭)। لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ كِبْرٍ ‘যার অন্তুরে সরিষাদানা পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৭)। মানুষের সকল প্রকার দুর্বলতার মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল নিজেকে বড় জ্ঞানী মনে করা। আর এটা যখন কোন মানুষের মধ্যে জাগ্রত হয়, তখন সে নিজেকে ত্রুটিহীন ও সকল প্রকারের গুণসম্পন্ন মনে করে নিজ দোষ ও দুর্বলতা সম্পর্কে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে সে নিজেকে সবদিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা বড় ও ভাল বলে মনে করে। একারণে নিজেই নিজের সংশোধনের দ্বার রুদ্ধ করে দেয়। তারপর আমি সর্বাপেক্ষা ভাল ও যোগ্য এ অনুভূতি পোষণ করায় অন্যরাও তাকে তাই মনে করুক এ আকাংখা তার মনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তখন সে চারিদিক থেকে শুধু শুনতে চায় প্রশংসা আর প্রশংসা। নিজ দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে সমালোচনা তার নিকট অসহ্য মনে হয়। সংশোধনের লক্ষ্যে তার দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে তাকে কিছু বললে সে ভীষণ গোস্সা হয় ও উত্থাপনকারীর প্রতি রাগান্বিত হয় এবং মনে মনে তার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করতে থাকে। দায়িত্বশীল নেতা ও কর্মীদের জন্য যা আদৌও কাম্য নয়।

নেতা-কর্মীদের মাঝে সুদৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখা :

যে সকল কাজ নেতা-কর্মীদের মাঝে সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয় সে সকল কাজ পরিহার করা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত কর্মী ও দায়িত্বশীলদের উচিৎ। নেতা ও কর্মীদের মাঝে সুদৃঢ় সম্পর্ক বজায় না থাকলে সাংগঠনিক মযবুতী বিনষ্ট হয়। সংগঠনের অগ্রগতি থমকে যায়। সাংগঠনিক মযবুতির জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঝে সুদৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখা একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর যারা সাথী তারা কাফিরদের বিরুদ্ধে রুদ্রকঠোর এবং পরস্পরের মধ্যে দয়া ও সহানুভূতিশীল’ (ফাত্হ ২৯)

নিজকে যোগ্য করে গড়ে তোলা :

সংগঠনের সকল স্তরের কর্মী ও দায়িত্বশীল প্রত্যেককে সংগঠনের স্বার্থে সবদিক দিয়ে সাধ্যমত যোগ্য করে গড়ে তোলা দরকার। এতে কর্মীরা স্বীয় কর্মে আত্মবিশ্বাস ও সমাজকে পরিচালনার জন্য স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করে, ফলে সংগঠনের মযবুতী বৃদ্ধি পায়। যে সকল গুণাবলী অর্জন করলে নিজকে যোগ্য করে গড়ে তোলা যায়, সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখা প্রয়োজন। দায়িত্ব সচেতনতা বা দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ও যত্নবান হওয়া এবং নিজকে বিশ্বস্ত ও আমানতদার হিসাবে গড়ে তোলা একান্ত কর্তব্য। বেশী বেশী করে সৎ আমল করা ও সকল প্রকার অন্যায় কাজ পরিহার করে চলা যরূরী। সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্যসহ হকের উপর অবিচল থাকা এবং সকল প্রকার বাতিলের সাথে আপোষকামী মনোভাব পরিহার করা সকলের জন্য অতীব প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায়, কোন মহৎ লক্ষ্য অর্জনে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করাই মূল কথা নয়; বরং সংগঠনকে লক্ষ্য অর্জনে গতিশীল করাই মূল কথা। যেমনভাবে বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতা অর্জন সহজ কিন্তু স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা কঠিন। ঠিক তেমনি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা আয়াসসাধ্য নয়, কিন্তু সংগঠনকে স্বীয় লক্ষ্যে অবিচল ও চলমান রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হতে গেলে অবশ্যই সংগঠনের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে হয়, ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলার উপযোগী করতে হয়। নতুবা সময়ের ব্যবধানে সামান্য আঘাতেই সংগঠন নিমিষেই শক্তিহীন, নির্জীব হয়ে পড়ে। তাই ইসলামী আন্দোলনের যে কোন পর্যায়ের সংগঠককে আপন পরিমন্ডলকে মযবুত করার জন্য সাধ্যমত প্রয়াস চালাতে হবে। তবেই কাংখিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন-আমীন!!

  • লেখক: সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ ও সহকারী অধ্যাপক, পাইকগাছা ডিগ্রী কলেজ, খুলনা।


আরও