করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

রবীউল ইসলাম 9025 বার পঠিত

ভূমিকা :

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বভাবজাত প্রেরণা। তাই স্বভাব যদি বিকৃত না হয় তাহ’লে মানুষ নিজেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পসন্দ করে এবং চারপাশের পরিবেশ ও লোকজনকেও পরিচ্ছন্ন দেখতে ভালবাসে। মানুষের শারীরিক সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে পরিচ্ছন্নতার উপরে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ইসলাম অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অংশ বলে আখ্যায়িত করেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ ‘পবিত্রতা হ’ল ঈমানের অর্ধেক’।[1] সুস্থ সবল দেহ এবং উৎফুল্ল মন কামনা করলে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বিশেষকরে বিভিন্ন প্রকার ভাইরাসজনিত রোগব্যাধি থেকে বাঁচতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। ভাইরাসজনিত মরণব্যাধি করোনা আমাদের এলাহী গযব হিসাবে দেখা দিয়েছে। ফলে আমাদের এলাহী সমাধানের পথেই হাটতে হবে। তবেই মুক্তি। আলোচ্য নিবন্ধে এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে বিস্তারিত আলোকপাত করা হ’ল।

করোনা ভাইরাস :

আমরা প্রথমেই জানবো করোনা ভাইরাস কী এবং এটি কিভাবে একজনের শরীর থেকে অপরজনের শরীরে সংক্রমিত হয়। করোনা ভাইরাসের পূর্ণ নাম হ’ল রয়েল ‘করোনা’ (কোভিড ১৯)। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তির কারণ বিশ্লেষণে যতগুলো কারণ পাওয়া গেছে তন্মধ্যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপিরচ্ছন্নতাও একটি। প্রথমে একজন রোগী এ রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণতঃ শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং জ্বর ও কাশি হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের সম্পূর্ণ লক্ষণ দেখা দিতে ১৪ দিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কেউ বলছেন, এতে প্রথমে প্রচন্ড মাথা ব্যাথাসহ কাঁপুনি জ্বর আসে। এরপর গলা ব্যাথা, খুবই ক্লান্তিবোধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া। কোনো ব্যক্তি উক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসলে, সে-ও আক্রান্ত হয়। আর এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, যেন সর্বদা জীবনুযুক্ত স্থান এড়িয়ে চলা হয় এবং বাহির থেকে ঘরে প্রবেশকালে ভালভাবে হাত পরিষ্কার করে নেয়া হয়। সেই সাথে হাঁচি-কাশি যত্র-তত্র নিক্ষেপ না করা হয়।

সুতরাং এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হ’লে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ইসলামের দিক-নির্দেশনাগুলো আলোচনা করা হ’ল।  

১. ঘুমানোর শুরুতে পরিচ্ছন্নতা :

ঘুম মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নে‘মত। দিনের বেলায় কঠোর প্ররিশ্রমের ফলে মানুষের শারীরিক যত ক্লান্তি, কষ্ট-ক্লেশ থাকে তা ঘুমের মাধ্যমে দূরীভূত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘুমানোর শুরুতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ঘুমাতেন। সুন্দরভাবে ছালাতের ন্যায় ওযূ করতেন। কারণ যে ব্যক্তি পরিচ্ছন্ন হয়ে ওযূ করে ঘুমায় স্বয়ং ফেরেশতারা তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ بَاتَ طَاهِرًا بَاتَ فِي شِعَارِهِ مَلَكٌ، لاَ يَسْتَيْقِظُ سَاعَةً مِنْ لَيْلٍ، إِلاَّ قَالَ الْمَلَكُ اللهمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِكَ فُلاَنٍ، فَإِنَّهُ بَاتَ طَاهِرًا ‘যে ব্যক্তি ওযূ করে শয্যা গ্রহণ করে, তার শরীরের সাথে থাকা বস্ত্রের মাঝে একজন ফেরেশতা রাত্রি যাপন করেন। যখনই সে ব্যক্তি জাগ্রত হয়, তখন ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ আপনি অমুক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় সে ওযূ করে শয়ন করেছে।[2]

শুধু তাই নয় একজন মুমিন ওযূ করে ঘুমালে রাত্রিতে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর কাছে যা চাইবে তা পাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَبِيتُ عَلَى ذِكْرٍ طَاهِرًا فَيَتَعَارُّ مِنَ اللَّيْلِ فَيَسْأَلُ اللَّهَ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ ‘যে কোন মুসলমান রাতে যিকর-আযকার (দো‘আ পাঠ) করে এবং ওযূ করে শয়ন করে, সে যদি রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কোন কল্যাণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তাহ’লে তাকে তা দান করা হবে’।[3] মহান আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত একজন পরিচ্ছন্ন মুমিন বান্দা কখনো অসুস্থ হতে পারে না। তার সবধরণের মনোষ্কামনা পূর্ণ হবে এবং সে বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।

২. বিছানা ঝাড়ু দিয়ে ঘুমানো :

ঘুমানোর শুরুতে বিছানা ঝেড়ে পরিষ্কার করে ঘুমানো উচিত। অনেক সময় বিছানায় পোকা-মাকড় বা জীবাণু থাকে যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘুমানোর শুরুতে বিছানা ভালভাবে ঝেড়ে ঘুমাতেন। তিনি বলেন, إِذَا أَوَى أَحَدُكُمْ إِلَى فِرَاشِهِ فَلْيَنْفُضْ فِرَاشَهُ بِدَاخِلَةِ إِزَارِهِ، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِى مَا خَلَفَهُ عَلَيْهِ، ثُمَّ يَقُولُ بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِى، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِى فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ الصَّالِحِينَ  ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করতে যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গীর ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে, বিছানায় তার অবর্তমানে কষ্টদায়ক কোন কিছু রয়েছে কিনা। তারপর পড়বে- হে আমার প্রতিপালক! আপনারই নামে আমার দেহখানা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠবো। যদি আপনি ইতোমধ্যে আমার জান কবয করে নেন; তা হ’লে তার উপর দয়া করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হিফাযত করবেন, যেভাবে আপনি নেককারদের হিফাযত করে থাকেন’।[4]

৩. ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে হাত ও মুখমন্ডল ধৌত করা :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বদা পরিচ্ছন্ন থাকতেন। রাত্রি বেলায় ঘুম থেকে জাগ্রত হ’লে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে আবার ওযূ করে ঘুমাতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে কাযায়ে হাজত সেরে মুখমন্ডল ও দু‘হাত ধৌত করে পুনরায় ঘুমাতেন’।[5]

৪. জুনুবী অবস্থায় ওযূ করে ঘুমানো :

স্ত্রী মিলনের পর গোসল ছাড়াই কেউ ঘুমাতে চাইলে ঘুমাতে পারে। তবে ওযূ করে ঘুমানো উত্তম। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘অপবিত্রাবস্থায় যখন শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন তিনি স্বীয় লজ্জাস্থান ধৌত করতেন এবং ছালাতের ন্যায় ওযূ করতেন’।[6]

৫. ঘুম থেকে উঠে পরিচ্ছন্নতা :

মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তার হাত সম্পর্কে খবর রাখেনা। ঘুমন্ত অবস্থায় হাতে কোন ময়লা বা জীবাণু লেগে যেতে পারে। এজন্য ঘুম থেকে উঠে ওযূর পাত্রে হাত ডুবাতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রথমে হাত ভালভাবে পরিষ্কার করে পাত্রে প্রবেশ করাতে কোন দোষ নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلْيَغْسِلْ يَدَهُ قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَهَا فِى وَضُوئِهِ فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِى أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয় তখন সে যেন ওযূর পানিতে হাত ঢুকানোর পূর্বে তা ধুয়ে নেয়; কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে’।[7]

৬. ছালাতে পরিচ্ছন্নতা :

ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হ’ল ছালাত। ছালাত আমাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হ’তে শিক্ষা দেয়। অপবিত্র অবস্থায় ছালাত আদায় করলে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبَلُ صَلاَةً بِغَيْرِ طُهُورِ ‘নিশ্চয় আল্লাহ অপবিত্র অবস্থায় ছালাত কবুল করেন না’।[8] ছালাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কতিপয় পদ্ধতি নিম্নরূপ :

(ক) ওযূ : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার যত মাধ্যম আছে তার অন্যতম মাধ্যম হ’ল ওযূ। ছালাত আদায় করলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হ’তে হবে। অর্থাৎ সুন্দরভাবে ওযূ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতে দ-ায়মান হবে,তখন (তার পূর্বে বে-ওযূ থাকলে ওযূ করার জন্য) তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর’ (মায়েদাহ ৫/৬)

(খ) মিসওয়াক করা : মিসওয়াক করলে মানুষের মুখের দুর্গন্ধ দূরীভূত হয়। আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হয়ে মানুষের মুখ পরিচ্ছন্ন থাকবে এবং অন্য মুছল্লীরা কষ্ট পাবে না এটাই ইসলামের কাম্য। সে জন্য ওযূর শুরুতে মিসওয়াক করার গুরুত্ব অত্যাধিক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বদা মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেন। এমনকি রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ইস্তিঞ্জা বা প্রয়োজন পূরণের পর মিসওয়াক করতেন। হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন, يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ 'তখন তিনি মিসওয়াক করে স্বীয় মুখ পরিষ্কার করতেন’।[9]

অনুরূপভাবে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِى لأَمَرْتُهُمْ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ بِوُضُوءٍ أَوْ مَعَ كُلِّ وُضُوءٍ سِوَاكٌ ‘আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টসাধ্য না হ’ত, তাহ’লে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক ছালাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[10] 

(গ) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক : ছালাতে পোশাক-পরিচ্ছদ মূল্যবান হওয়া অপরিহার্য নয়। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া যরূরী। কেননা মুমিনকে দুনিয়ার জীবন-যাপনেও সুরুচির পরিচয় দিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি অপরিচ্ছন্ন থাকে তাহ’লে আল্লাহর নে‘মতের নাশোকরী করা হবে। এজন্য সব সময় পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বলেন, وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ‘আপনার পোশাক পবিত্র করুন’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৪)। বিশেষত ছালাতের সময় আরো গুরুত্ব দিতে হবে। আল্লাহ বলেন, يَابَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ ‘হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক ছালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান কর (আ‘রাফ ৭/৩১)

(ঘ) স্থান পরিষ্কার : পৃথিবীর সমস্ত স্থান মসজিদ কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত।[11] তবে ছালাতের স্থান অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হ’তে হবে। অপবিত্র স্থানে ছালাত সিদ্ধ নয়।

(ঙ) কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুনের দুর্গন্ধ হ’তে পরিচ্ছন্নতা : কাঁচা রসুন ও পেঁয়াজ খেলে মুখে দুর্গন্ধ তৈরী হয়। এতে মুছল্লীরা কষ্ট পায়। এ জন্য রাসূল (ছাঃ) কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন খেয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,  مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلاً فَلْيَعْتَزِلْنَا ، أَوْ لِيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا. ‘যে ব্যক্তি কাঁচা রসুন বা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের হতে দূরে থাকে। অথবা তিনি বলেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে হতে দূরে থাকে।[12] 

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাঁচা রসুন কিংবা পেঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের থেকে কিংবা আমাদের মসজিদ থেকে আলাদা থাকে। আর সে যেন তার ঘরে বসে থাকে’।[13] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছের (পেঁয়াজ ও রসুনের) কিছু খাবে সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ ফেরেশতাগণ কষ্ট পান যেসব জিনিসে মানুষ কষ্ট পায়।[14]

এসকল হাদীছ হতে স্পষ্ট যে, কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়া বৈধ। তবে মুখ দুর্গন্ধ থাকা পর্যন্ত মানুষের কাছাকাছি আসা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কেননা এতে মানুষেরা যেমন কষ্ট পায় তেমনি ফেরেশতাগণও কষ্ট পান।

৮. খাদ্যে পরিচ্ছন্নতা :

বাঁচতে হ’লে খেতে হবে। খাওয়া ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারেনা। তবে মানুষ কী খাবে আর কী খাবেনা ইসলাম তার নির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী দান করেছি, সেখান থেকে পবিত্র বস্ত্ত সমূহ ভক্ষণ কর। আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই দাসত্ব করে থাক’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)

শয়তান মানুষকে হারাম ও অপবিত্র খাদ্য খেতে প্ররোচিত করে। ফলে মানুষ পচা খেজুর ও পচা খেজুর রসের তৈরী মদ খেতে ও সকল হারাম বস্ত্ত ভক্ষণ করতে সর্বদা প্রলুব্ধ হয়। চুরিকৃত পবিত্র কলা অথবা নিজের গাছে উৎপাদিত পচা কলা কোনটিই মুমিনের জন্য ভোগ্য নয়। মুমিনের খাদ্য সর্বদা হালাল ও পবিত্র হতে হবে। অতএব মনের মধ্যে শয়তানী হারাম ও অপবিত্র খাদ্যের কথা এলেই তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। নিম্নে খাবারের কিছু আদবের কথা উল্লেখিত হ’ল।

(ক) দস্তরখানা বিছানো : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাওয়ার শুরুতে দস্তরখানা বিছাতেন। যাতে প্লেট থেকে খাবার পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়া যায়। কারণ এতে বরকত আছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمِطْ عَنْهَا الْأَذَى وَلْيَأْكُلْهَا، وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ، وَأَمَرَنَا أَنْ نَسْلُتَ الْقَصْعَةَ، قَالَ: فَإِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ فِي أَيِّ طَعَامِكُمُ الْبَرَكَةُ، ‘তোমাদের কারো খাবারের লোকমা হাত থেকে পড়ে গেলে তার ময়লা দূর করে সে যেন তা খেয়ে ফেলে। আর শয়তানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়। তিনি আমাদেরকে প্লেট চেঁটে খাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন খাবারে বরকত আছে’।[15]

ইসলাম খাবার নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে যেমন সতর্ক তেমনি অপরিচ্ছন্ন খাবার খাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক। পরিচ্ছন্ন দস্তরখানায় খাবার পড়ে গেলে তা থেকে উঠিয়ে খেতে কোন অসুবিধা নেই। সমস্যা হ’ল আমরা প্লেট থেকে পড়ে যাওয়া খাবার উঠিয়ে খাওয়ার কথা বলি। কিন্তু দস্তরখানা বিছানোর কথা খুব কম বলি। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ দস্তরখানা উঠানোর সময় আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আবূ উমামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর দস্তরখানা তুলে নেওয়া হ’লে তিনি বলতেন, الْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ، غَيْرَ مَكْفِىٍّ، وَلاَ مُوَدَّعٍ وَلاَ مُسْتَغْنًى عَنْهُ، رَبَّنَا পবিত্র বরকতময় প্রশংসা অনেক অনেক আল্লাহর জন্য। হে আমাদের প্রতিপালক, এ থেকে কখনো মুখ ফিরিয়ে নিতে পারব না, বিদায় নিতে পারব না এবং এ থেকে বেপরোয়াও হ’তে পারব না’।[16]

(খ) ভালভাবে হাত ধোয়া : খাওয়ার শুরুতে ভালভাবে হাত ধুতে হবে। যাতে কোন প্রকার ময়লা বা জীবাণু খাদ্যের সাথে পেটে প্রবেশ না করে। ঠিক তেমনি খাওয়া শেষে হাতকে চর্বিমুক্ত করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ بَاتَ وَفِى يَدِهِ رِيحُ غَمَرٍ فَأَصَابَهُ شَىْءٌ فَلاَ يَلُومَنَّ إِلاَّ نَفْسَهُ ‘যে লোক নিজের হাতে (গোশত ইত্যাদি) খাবারের ময়লা নিয়ে রাত অতিবাহিত করল এবং তাতে তার কোন প্রকার ক্ষতি হ’লে সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে’।[17]

(গ) খাদ্য ও পানীয়তে ফুঁক দিয়ে না খাওয়া : ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে বা তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন’।[18]  আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, পানীয় দ্রব্যের মধ্যে ফুঁ দিতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। একজন বলল, পানির পাত্রে ময়লা দেখতে পেলে? তিনি বললেন, তা ঢেলে দাও। লোকটি বলল, আমি এক নিঃশ্বাসে তৃপ্ত হ’তে পারি না। তিনি বললেন, পাত্রটিকে নিঃশ্বাসের সময় তোমার মুখ হ’তে সরিয়ে রাখ’।[19]

রাসূল (ছাঃ)-এর এরূপ নির্দেশনার পিছনে হেকমত এমন হ’তে পারে যে, মানুষ তার শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর অনেক নে‘মত উপভোগ করে থাকে। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করার ক্ষেত্রে গাছের সাথে উভয়ের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- মানুষ গ্রহণ করে অক্সিজেন, ত্যাগ করে কার্বনডাই অক্সাইড। গাছ গ্রহণ করে কার্বনডাই অক্সাইড আর ত্যাগ করে অক্সিজেন। মানুষ গ্রহণ করে গাছের নিকট হ’তে একেবারে নির্মল ও স্বচ্ছ বায়ু অক্সিজেন, যা দেহের জন্য উপকারী। পক্ষান্তরে মানুষ যা ত্যাগ করে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আর এই দূষিত বায়ু কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে গাছ। তাই যখন পানপাত্রে নিঃশ্বাস পড়বে তখন পানি দূষিত হয়ে যাবে। এই দূষিত পানি পানের ফলে আমাদের পেটের ভিতর নানাবিধ রোগের জন্ম নিবে। এজন্য শরীআতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞান পানি পানের সময় আরো কতিপয় নিয়ম মেনে চলার কথা বলেছে। যেমন-

১. পানি পানের সময় চুমুক দিয়ে অল্প অল্প পান করা।

২. একবার মুখে পানি নিয়ে নূন্যতম ৩০ সেকেন্ড রেখে লালাসহ পান করা।

৩.  দুই ঢোকের মাঝে ৩০ সেকেন্ড ব্যবধান রাখা।

(ঘ) হেলান দিয়ে খাদ্যগ্রহণ নিষেধ : আবূ জুহাইফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, لاَ آكُلُ مُتَّكِئًا ‘আমি হেলান দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করি না’।[20] ইসলাম হেলান দিয়ে বসে খানা খেতে নিষেধ করেছে। কেননা হেলান দিয়ে খাবারের মধ্যে তিনটি অপকারিতা রয়েছে।

১. সঠিকভাবে খাবার চিবানো যায় না, ফলে যে পরিমাণ লালা খাদ্যের সাথে মিশ্রিত হওয়ার কথা ছিল তা হয় না যার কারণে পাকস্থলীতে মাড় বিশিষ্ট খাবার হজম হয় না, ফলে হজম প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২. হেলান দিয়ে বসলে পাকস্থলি প্রশস্ত হয়ে যায়। ফলে অপ্রয়োজনীয় খাবার পেটে গিয়ে হজম প্রক্রিয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

৩. হেলান দিয়ে খাবারের ফলে অন্ত্র এবং যকৃতের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। একথা অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত।[21] 

(ঙ) খাবার শেষে কুলি করা : কোন কিছু খাওয়ার পর মুখ ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। মুখ পরিষ্কার না করলে খাদ্যকণা অনেক সময় দাঁতের ফাকে লুকিয়ে থাকে। পরে তা পচে দাঁতে ক্ষত সৃষ্টি হয়। আবার পচা খাদ্য পেটে প্রবেশ করে যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোন কিছু খেলে বা দুধ পান করলে কুলি করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দুধ পান করে কুলি করলেন এবং বললেন, এতে তৈলাক্ত বস্ত্ত রয়েছে’।[22]  

(চ) খাবার ঢেকে রাখা : প্রয়োজন শেষে খাবার পাত্র বা পানির পাত্র ঢেকে রাখতে হবে। খোলা পাত্রে অনেক সময় জীবাণু প্রবেশ করে। আবার কখনো পোকা-মাকড় প্রবেশ করে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে তখন তোমরা পানি রাখার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। সামান্য কিছু হ’লেও তার ওপর দিয়ে রেখে দাও’।[23]

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,غَطُّوا الإنَاءَ، وَأَوْكِئُوا السِّقَاءَ، وَأَغْلِقُوا الأَبْوَابَ. وَأطْفِئُوا السِّرَاجَ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَحُلُّ سِقَاءً، وَلاَ يَفْتَحُ بَاباً، وَلاَ يَكْشِفُ إنَاءً . فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلاَّ أَنْ يَعْرُضَ عَلَى إنَائِهِ عُوداً، وَيَذْكُرَ اسْمَ اللهِ، فَلْيَفْعَل، فَإِنَّ الفُوَيْسِقَةَ تُضْرِمُ عَلَى أَهْلِ البَيْتِ بَيْتَهُمْ ‘(রাত্রে ঘুমাবার আগে) তোমরা পাত্র ঢেকে দাও, পানির মশকের মুখ বেঁধে দাও, কেননা, শয়তান মুখ বাঁধা মশক খুলে না, বন্ধ দরজাও খুলে না এবং পাত্রের ঢাকনাও উন্মুক্ত করে না। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি পাত্রের মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আড় করে রাখার জন্য কেবল একটি কাষ্ঠখন্ড ছাড়া অন্য কিছু না পায়, তাহ’লে সে যেন তাই করে। কারণ ইঁদুর ঘরের লোকজনসহ ঘর পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়’।[24] 

(ছ) পাত্রে মাছি পড়লে : মাছির একটি ডানায় মারাত্মক জীবাণু থাকে। আর অপর ডানায় তার প্রতিষেধক থাকে। মাছি কখনো কোন পানপাত্রে পড়লে প্রথমে জীবাণুযুক্ত পাখাটি নিচে রাখে। তাই পানীয়কে জীবাণুমুক্ত করার জন্য মাছিটির দু’টি পাখাকে পানিতে ডুবিয়ে দিতে হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا وَقَعَ الذُّبَابُ فِى شَرَابِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْمِسْهُ ، ثُمَّ لِيَنْزِعْهُ، فَإِنَّ فِى إِحْدَى جَنَاحَيْهِ دَاءً وَالأُخْرَى شِفَاءً ‘যখন তোমাদের কারো পানীয় দ্রব্যে মাছি পড়বে, তখন তাকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দিবে। তারপর তাকে বাইরে ফেলে দিবে। কারণ তার দু’টি ডানার মধ্যে একটিতে আছে রোগজীবাণু এবং অপরটিতে আছে রোগমুক্তি’।[25]

৯. কুকুরের লালা থেকে পরিচ্ছন্নতা :

কুকুরের লালায় র‌্যাবিস ভাইরাস জীবাণু থাকে। এ লালা পুরানো ক্ষতের বা দাঁত বসিয়ে দেয়া ক্ষতের বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে আসলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। আমাদের  দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক রোগ হয় কুকুরের কামড়ে।

কুকুরের লালার নাপাকী এবং মারাত্মক জীবাণু থেকে মুক্ত থাকার জন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِى الإِنَاءِ فَاغْسِلُوهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ أُولاَهُنَّ بِالتُّرَابِ ‘যখন কোন পাত্রে কুকুর মুখ দেয় তখন তা সাতবার ধৌত করবে। আর প্রথম বার মাটি দিয়ে মাজবে’।[26] 

উল্লেখ্য যে, কুকুরের শরীর নাপাক নয়। সুতরাং কুকুর যদি কারো শরীর অথবা কাপড় ছুঁয়ে নেয় তাহ’লে তা নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা যেহেতু নাপাক তাই কাপড়ে, শরীরে বা অন্য কোনো জিনিসে লালা লেগে যায় তবে তা নাপাক হয়ে যাবে।  

১০. হাঁচি ও হাই থেকে পরিচ্ছন্নতা :

হাঁচি আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর হাই আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। তাই হাই আসলে সাধ্যমত মুখ চেপে রাখতে হয়। যাতে মুখের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করতে না পারে। পক্ষান্তরে হাঁচি আল্লাহ ভালবাসেন। সুতরাং হাঁচি আসলে আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে এবং মুখ পরিষ্কার করতে হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা হাঁচি দেওয়া পসন্দ করেন এবং হাই তোলা অপসন্দ করেন। কাজেই কেউ হাঁচি দিলে  اَلْحَمْدُ الله বলবে। যারা তা শুনবে তাদের প্রত্যেককে তার জবাব দেওয়া ওয়াজিব হবে। আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। তাই যথাসম্ভব তা রোধ করা উচিত। কারণ কেউ যখন মুখ খুলে হা করে তখন শয়তান তাতে হাসে’।[27]  

১১. থুথু থেকে পরিচ্ছন্নতা :

থুথুর মধ্যে অনেক সময় জীবাণু থাকে। এ জন্য থুথু যেখানে সেখানে ফেলা উচিত নয়। নির্দিষ্ট স্থানে থুথু ফেললে এক দিকে যেমন জীবাণুমুক্ত থাকা যাবে। অন্যদিকে পরিবেশ সুন্দর থাকবে। তবে যারা পান খান তারা পানের পিক এমন জায়গাতে ফেলেন যা কোন রুচিশীল মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। মানুষ সদা পরিচ্ছন্ন থাকবে কাউকে কষ্ট দিবে না। এজন্য রাসূল (ছাঃ) থুথু ফেলার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন,عُرِضَتْ عَلَىَّ أَعْمَالُ أُمَّتِى حَسَنُهَا وَسَيِّئُهَا فَوَجَدْتُ فِى مَحَاسِنِ أَعْمَالِهَا الأَذَى يُمَاطُ عَنِ الطَّرِيقِ وَوَجَدْتُ فِى مَسَاوِى أَعْمَالِهَا النُّخَاعَةَ تَكُونُ فِى الْمَسْجِدِ لاَ تُدْفَنُ ‘আমার উম্মতের সমস্ত আমল বা কাজ-কর্ম (ভাল-মন্দ উভয়ই) আমার সামনে পেশ করা হয়েছিল। আমি দেখলাম তাদের সমস্ত উত্তম কাজের মধ্যে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূরীকরণও একটা উত্তম কাজ। আর আমি এটাও দেখলাম যে, তাদের খারাপ আমলের মধ্যে রয়েছে মসজিদের মধ্যে কাশি বা থুথু ফেলা এবং তা মিটিয়ে না ফেলা’।[28]

১২. প্রস্রাব-পায়খানায় পরিচ্ছন্নতা :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন। প্রসাব-পায়খানার প্রয়োজন হ’লে তিনি নিম্নভূমিতে চলে যেতেন। যাতে কেউ তাকে দেখতে না পায়। সাথে ইস্তিঞ্জার জন্য পানি নিয়ে যেতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ছাঃ) যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হ’তেন তখন আমি এবং আমাদের অন্য একটি ছেলে তাঁর পিছনে পানির পাত্র নিয়ে যেতাম’।[29]

পানি না পেলে তিনের অধিক বোজোড় সংখ্যায় ঢিলা ব্যবহার করতেন। এভাবে তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীকে পরিচ্ছন্ন থাকতে শিক্ষা দিয়েছেন। সালমান (রাঃ) বলেন, ‘মুশরিকরা একবার আমাকে বলল, আমরা দেখছি তোমাদের সঙ্গী [রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)] তোমাদেরকে সব কাজই শিক্ষা দেয়; এমনকি প্রসাব-পায়খানার নিয়ম-কানুনও তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়! (জবাবে) তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন ডান হাতে শৌচকাজ করতে, (ইস্তিঞ্জার সময়) ক্বিবলামুখী হয়ে বসতে এবং তিনি আমাদেরকে আরো নিষেধ করেছেন, গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে। তিনি বলেছেন,لاَ يَسْتَنْجِى أَحَدُكُمْ بِدُونِ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ ‘তোমাদের কেউ যেন তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিঞ্জা না করে’।[30] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইস্তিঞ্জার সময় ডান হাত ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْخَلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ ‘তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় (শৌচাগারে) যায় তখন সে যেন ডান হাত দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে’।[31]

ইসলাম মানুষকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন থাকতে সাহায্য করে। কখনো কেউ অজ্ঞাতসারে অপরিচ্ছন্ন হোক এটাও ইসলাম চায় না। এজন্য চলাফেরার রাস্তায় ও গাছের নিচে প্রসাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা লা‘নতকারী দু’টি কাজ থেকে দূরে থাক। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল লা‘নতের সে কাজ দু’টি কি? তিনি বললেন, মানুষের (যাতায়াতের) চলাফেরার রাস্তায় অথবা তাদের (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়ায় প্রসাব-পায়খানা করা’।[32]

১৩. প্রস্রাব-পায়খানার অপরিচ্ছন্নতা থেকে সতর্ক না থাকার পরিণতি :

প্রসাব-পায়খানার অপবিত্রতা থেকে সাবধান থাকার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ প্রসাবের অপবিত্রতার জন্য কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তিনি বললেন, এদের আযাব দেওয়া হচ্ছে, কোন গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রসাব হ’তে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত। তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙ্গে দু’ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের উপর একখানি করে দিলেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, আশা করা যেতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি শুকিয়ে না যায় তাদের আযাব কিছুটা হালকা করা হবে’।[33]

১৪. সর্বাবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা :

মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন (ত্বীন ৯৫/৪)। মানুষ যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহ’লে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বিকশিত হবে। তাই নিয়মিত পোশাক-পরিচ্ছদ, শরীরের বিভিন্ন স্থানের লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) আমাদের এখানে এসে এক বিক্ষিপ্ত চুলওয়ালাকে দেখে বললেন,أَمَا كَانَ يَجِدُ هَذَا مَا يُسَكِّنُ بِهِ شَعْرَهُ وَرَأَى رَجُلاً آخَرَ وَعَلَيْهِ ثِيَابٌ وَسِخَةٌ فَقَالَ أَمَا كَانَ هَذَا يَجِدُ مَاءً يَغْسِلُ بِهِ ثَوْبَهُ  ‘লোকটি কি তার চুলগুলোকে অাঁচড়ানোর জন্য কিছু পায়না? তিনি ময়লা কাপড় পরিহিত অপর এক ব্যক্তিকে দেখে বলেন, লোকটি কি তার কাপড় ধোয়ার জন্য কিছু পায় না?’।[34] অন্যত্র আনাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, নাভীর নীচের লোম পরিষ্কার করা এবং বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলার জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর তা যেন চল্লিশ দিনের বেশী রেখে না দেয়া হয়’।[35] 

ঘর ও বাড়ির চারপাশকে পরিষ্কার রাখা মুমিনের কর্তব্য। ঘরের চারপাশে যদি ময়লা-আবর্জনা থাকে তাহ’লে প্রতিবেশী ও অন্যান্য মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কাউকে কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। অপরিচ্ছন্ন লোকদের ব্যাপারে মানুষ নিচু ধারণা পোষণ করে। কোন দ্বীনদার পরিবারে অপরিচ্ছন্নতার অভ্যাস থাকলে অনেকে দ্বীন সম্পর্কেও ভুল ধারণায় পড়ে যায়। এজন্য সচেতন থাকা উচিত। ঘরবাড়িতে ঐ স্থান ভালভাবে পরিষ্কার করা উচিত যেগুলো বেশি ময়লা হয়। যেমন রান্নাঘর, গোসলখানা, টয়লেট ইত্যাদি। আর একাজ যে শুধু ঘরের মহিলাদেরকেই করতে হবে তা অপরিহার্য নয়, পুরুষরাও যখন গোসলখানা ব্যবহার করেন তখন তা পরিষ্কার করে ফেলতে পারেন। দৈনিক অন্তত একবার টয়লেট পরিষ্কার করার নিয়ম করা ভাল। বেশী ব্যবহৃত হ’লে দৈনিক দুইবার পরিষ্কার করা উচিত। কোনো কোনো মসজিদেরও টয়লেট ও অযূখানা অপরিচ্ছন্ন থাকে। এসব বিষয়ে সচেতনতা কাম্য। ময়লা ফেলার ঝুড়ি বা ডাস্টবিন পরিষ্কারের ব্যাপারেও খুব বেশী অবহেলা করা হয়। অনেক সময় ময়লার ঝুড়িতে এত বেশী ময়লা হয় যে, তা ধরে পরিষ্কার করাও কষ্টকর হয়ে যায়। এটাতে ময়লা ফেলা হয় বলে কি এটা অপরিচ্ছন্ন রাখা অনুচিৎ।

উপসংহার :

পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনের জন্য পরিচ্ছন্ন রুচি অপরিহার্য। কারো যদি রুচিবিকৃতি ঘটে তাহ’লে শত অর্থ-সম্পদের মধ্যেও সে অপরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করবে। পক্ষান্তরে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রুচি স্বল্প সামর্থ্যের মধ্যেও মানুষকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনে সহায়তা করবে। এজন্য ছোট থেকেই শিশুদের মধ্যে ভদ্র, শালীন, সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রুচি গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত। আমাদের সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ দান করেছেন। সেই আদর্শের যথার্থ অনুসরণের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে সুস্থ রুচি গড়ে উঠতে পারে। ইসলাম তো শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়, পবিত্রতার নির্দেশনাও দিয়েছে। অপবিত্রতার কারণ আর পবিত্রতা অর্জনের উপায় সম্পর্কে যেভাবে ইসলামে বলা হয়েছে তার মতো বাস্তব ও স্বভাবসম্মত নির্দেশনা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এই নির্দেশনার অনুসরণের মাধ্যমে মানুষের মাঝে পবিত্র রুচিবোধ তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের এ কথা ভুললে চলবে না যে, আজকের করোনা ভাইরাস আমাদের দু’হাতের কামাই। যার জন্য আমাদের দুনিয়াবী শাস্তি শুরু হয়ে গেছে এবং আখেরাতের শাস্তি এখনো বাকি রয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদের সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে, সুস্থ-সুন্দর জীবন গড়তে এবং আসমান ও যমীনের বালা-মুছিবত থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করুন- আমীন!

[লেখক : কেন্দ্রীয় সহকারী পরিচালক, সোনামণি ]


[1]. মুসলিম হা/২২৩; আহমাদ হা/২২৯৫৩; দারেমী হা/৬৫৩; মিশকাত হা/২৮১।

[2]. ইবনু হিববান হা/১০৫১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫৩৯।

[3]. আবূদাঊদ হা/৫০৪২; মিশকাত হা/১২১৫।

[4]. বুখারী হা/৬৩২০; আবূদাঊদ হা/৫০৫০; আহমাদ হা/৯৫৮৭; মিশকাত হা/২৩৮৪।

[5]. মুসলিম হা/৩০৪; বায়হাক্বী হা/৯১৯।

[6]. বুখারী হা/২৮৮; মুসলিম হা/৩০৫; আবূদাঊদ হা/২২২; ইবনু মাজাহ হা/৫৮৪।

[7]. বুখারী হা/১৬২; আহমাদ হা/৭৯৬২।

[8]. নাসাঈ হা/২৫২৪; আহমাদ হা/৫১২৩।

[9]. বুখারী হা/২৪৫; মুসলিম হা/২৫৫; আবূদাঊদ হা/৫৫।

[10]. বুখারী হা/৮৮৭; আহমাদ হা/৭৫০৪; আবূদাঊদ হা/৪৭; ইবনু মাজাহ হা/২৮৭; মিশকাত হা/৩৭৬।

[11]. আবূদাঊদ হা/৪৯২; তিরমিযী হা/৩১৭; ইবনু মাজাহ হা/৭৪৫; মিশকাত হা/৭৩৫।

[12]. বুখারী হা/৫৪৫২

[13]. বুখারী হা/৭৩৫৯,৮৫৫; মিশকাত হা/৪১৯৭

[14]. বুখারী হা/৮৫৪; মুসলিম হা/৫৬৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৬৫;  মিশকাত হা/৭০৭

[15]. মুসলিম হা/২০৩৪; আবূদাঊদ হা/৩৮৪৫।

[16]. বুখারী হা/৫৪৫৮; আবূদাঊদ হা/৩৮৫১; আহমাদ হা/২২২২২। 

[17]. তিরমিযী হা/১৮৬০ ইবনু মাজাহ হা/৩২৯৭। 

[18]. তিরমিযী হা/১৮৮৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৪২৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/২১১৭।

[19]. তিরমিযী হা/১৮৮৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/২১১৫।

[20]. বুখারী হা/৫৩৯৮; আবূদাঊদ হা/৩৭৬৯; ইবনু মাজাহ হা/৩২৬২; মিশকাত হা/৪১৬৪।

[21]. সুন্নাতে রসূল (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) ও আধুনিক বিজ্ঞান- ডা. মুহাম্মাদ তারেক মাহমূদ।

[22]. বুখারী হা/২১১; আহমাদ হা/১৯৫১; মিশকাত হা/৩০৭।

[23]. বুখারী হা/৩২৮০।

[24]. বুখারী হা/৩২৮০; মুসলিম হা/২০১২; তিরমিযী হা/১৮১২।

[25]. বুখারী হা/৩৩২০; আবূদাঊদ হা/৩৮৪৪।

[26]. মুসলিম হা/২৭৯; আবূদাঊদ হা/৭১; মিশকাত হা/৪৯০।

[27]. বুখারী হা/৬২২৩; আবূদাঊদ হা/৫০২৮; তিরমিযী হা/২৭৪৭; মিশকাত হা/৪৭৩২।

[28]. মুসলিম হা/৫৫৩; আহমাদ হা/২১৫৮৯; মিশকাত হা/৭০৯।

[29]. বুখারী হা/১৫১; আহমাদ হা/১৩৭৪৩।

[30]. মুসলিম হা/২৬২।

[31]. মুসলিম হা/২৬৭; নাসাঈ হা/২৫।

[32]. মুসলিম হা/২৬৯; আহমাদ হা/৮৮৪০।

[33]. বুখারী হা/২১৮।

[34]. আবূদাঊদ হা/৪০৬২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৯৩।

[35]. মুসলিম হা/২৫৮; মিশকাত হা/৪৪২২।



আরও