আদর্শবান স্বামীর প্রতি উপদেশ

মফীযুল ইসলাম 966 বার পঠিত

শুরুর কথা :

আদি পিতামাতা হযরত আদম (আঃ) এবং হাওয়া (আঃ)-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ এ বসুন্ধরা আবাদ শুরু করেন। যারা দুনিয়াতে আদর্শ স্বামী-স্ত্রী হিসাবে মানবতার শিক্ষাগুরু স্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন। পারিবারিক রূপ-কাঠামো অদ্যবধি সেরূপই রয়ে গেছে। মানব সভ্যতার মৌলিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ভালবাসার এই বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানটি চলবে ইসলামের শারঈ জ্ঞানের ভিত্তিতে। একজন স্বামী হচ্ছেন পরিবারের প্রধান কর্তা। একটি আর্দশ পরিবার গঠনে যার দায়িত্ব বহুবিধ। আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা একজন আদর্শবান স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

পরিবারের আদি কথা :

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ঐ দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন’ (নিসা ৪/১)।

এরপর তাদের পারিবারিক জীবন জান্নাত থেকে শুরু হয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَقُلْنَا يَاآدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ- অতঃপর আমরা বললাম, হে আদম তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান কর এবং সেখান থেকে যা চাও খুশীমনে খাও। কিন্তু তোমরা দু’জন এই গাছটির নিকটে যেয়ো না। তাহ’লে তোমরা সীমা লংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (বাক্বারাহ ২/৩৫)।

তারা উভয়ে নির্বিঘ্নে জান্নাতে বসবাস করতে থাকলো। অতঃপর শয়তান তাদেরকে ফুসলিয়ে আল্লাহর নির্দেশের লঙ্ঘন করিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করলো। আদম ও হাওয়া (আঃ) তাদের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে তাওবা করেন। অতঃপর আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন এবং দুনিয়াতে উত্তম পারিবারিক বন্ধন তৈরির সুযোগ করে দেন।

আল্লাহ বলেন,قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ‘আমরা বললাম, তোমরা সবাই জান্নাত থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে কোন হেদায়াত পৌঁছবে, তখন যারা আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/৩৮)।

স্ত্রীর অধিকার সমূহ :

সামাজিক ও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে একজন স্ত্রীর রয়েছে নানাবিধ অধিকার। যেমন-

১. মোহরের অধিকার :

স্ত্রীর যে সকল অধিকার আদায় হওয়া আবশ্যক তন্মধ্যে মোহরের অধিকার অন্যতম। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়। শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে স্ত্রীকে মোহর প্রদান করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেন, فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ‘তাকে তার ফরয মোহরানা প্রদান কর’ (নিসা ৪/২৪)। আল্লাহ বলেন, وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৪)।

মোহর বাবদ স্ত্রীকে টাকা-পয়সা জমি-জায়গা, স্বর্ণ-রেŠপ্য, কাপড়-চোপড়, কুরআন শিক্ষাদানও মোহর দেওয়া যেতে পারে’।[1]

খাদিজা (রাঃ)-এর মোহর ছিল ২০টি উটনী। আয়েশা (রাঃ)-এর মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম রৌপ্য মুদ্র। সাফিয়্যাহ (রাঃ)-এর মোহর ছিল তার মুক্তি। উম্মে হাবীবা (রাঃ)-এর মোহর ছিল ৪০০০ দিরহাম, যা বাদশাহ নাজাশী আদায় করে দিয়েছিলেন’।[2]

২. ভরণ পোষনের অধিকার :

মহান আল্লাহ বলেন, وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ-জন্মদাত্রী মাতাগণ তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে, যদি তারা দুধপানের মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়। আর জন্মদাতা পিতার দায়িত্ব হ’ল ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রসূতি মায়েদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। সাধ্যের অতিরিক্ত কাউকে বাধ্য করা যাবে না। আর সন্তানের কারণে প্রসূতি মাকে এবং জন্মদাতা পিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। উত্তরাধিকারীদের প্রতিও একই বিধান। তবে যদি পিতা-মাতা পরস্পরে সম্মতি ও পরামর্শের ভিত্তিতে বাচ্চার দুধ ছাড়াতে চায়, তাহ’লে তাদের উপর কোন দোষ বর্তাবে না। আর যদি তোমরা অন্যের কাছে তোমাদের সন্তানদের দুধপান করাতে চাও, তাহ’লে তাকে সমর্পণের সময় ন্যায়সঙ্গতভাবে কিছু প্রদান করায় কোন দোষ নেই। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ যে, তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন (বাক্বারাহ ২/২৩৩)।

সুতরাং স্বামী তার সাধ্যমত স্ত্রী-পরিজনের জন্য যাবতীয় ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

৩. খাওয়া ও পরার চাহিদা পূরণ :

আল্লাহ বলেন, وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا- ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর। তবে তারা যদি তা থেকে খুশী মনে তোমাদের কিছু দেয়, তাহ’লে তা তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর’ (নিসা ৪/৩৪)

স্ত্রী যদি ভালো খেতে চায়, ভালো পরতে চায়, এজন্য তার উপর ক্ষেপে না গিয়ে প্রথমত তার এই উন্নত মানসিকতার জন্য ধন্যবাদ জানান। মনে রাখবেন, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, সব সময় একই ধরনের খাবার গ্রহণ করা নবী (ছাঃ) এর পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। কেননা সর্বদা একই খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দ্বিতীয়ত সে আপনার সাধ্যের বাইরে কিছু দাবি করলে উত্তম পন্থায় নিজের আয়ের কথা বলে বুঝানোর চেষ্টা করুন।

عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ قَالَ أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ،

মুআবিয়াহ ইবনে হাইদা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর স্ত্রীর অধিকার কতটুকু? তিনি বললেন, তুমি খেলে তাকে খাওয়াবে এবং তুমি পরলে তাকে পরাবে’।[3]

বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (ছাঃ) হাযার হাযার জনতার সামনে স্বামীর দায়িত্ব তুলে ধরে বলেন, أَلَا وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ শুনে রেখো, তোমাদের উপর স্ত্রীদের অধিকার হ’ল তাদেরকে উত্তমরূপে খেতে-পরতে দিবে’।[4] আল্লাহ বলেন, وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ- ‘স্ত্রীদের উপর যেমন স্বামীদের হক্ব আছে তেমনি স্বামীদের উপরেও স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/২২৮)

খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলামী আদবের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। খাওয়ার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে ও একত্রে খাবার গ্রহণে বরকত আছে’।[5]

ওয়াহশী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা আহার করি, কিন্তু পরিতৃপ্ত হ’তে পারি না। তিনি বলেন, তোমরা হয়ত পৃথক পৃথকভাবে আহার করো। তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন,فَاجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ، وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ، يُبَارَكْ لَكُمْ فِيهِ- ‘তোমরা একত্রে আহার করো এবং আহারকালে আল্লাহর নাম স্মরণ কর অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বল, তাহলে তোমাদের খাদ্যে তোমাদের জন্য বরকত দেয়া হবে’।[6] এছাড়া খাবার প্রস্ত্ততকারীকে সাথে নিয়ে খাওয়া অথবা তা থেকে কিছু প্রদান করা রাসূলের (ছাঃ) সুন্নাত’।[7]

সুতরাং এসকল হাদীছ থেকে বুঝা যায় পরিবারের কর্তা স্ত্রী- পরিজনকে নিয়ে একত্রে খাবার গ্রহণ করলে আল্লাহ খাবারে বরকত দিবেন। স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দিলেও তাতে ছাদাক্বার নেকী লাভ হবে’।[8]

এছাড়াও পরিবারে পিছনে ছওয়াবের প্রত্যাশায় বৈধ পন্থায় যা কিছু ব্যয় করা হোক না কেন তাতে ছাদাক্বার নেকী হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَفْضَلُ دِينَارٍ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ، دِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ- ‘ছাওয়াবের দিক দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ দীনার সেটি, যে দীনারটি ব্যক্তি তার পরিবারের উপর খরচ করে’।[9]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, একটি দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দীনার গোলাম আযাদ করার জন্য করলে, একটি দীনার মিসকীনকে দান করলে এবং আর একটি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করলে। এর মধ্যে ঐ দীনারটিই উত্তম, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করলে’।[10]

অপর এক হাদীছে রয়েছে, عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِى وَقَّاصٍ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِى بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلاَّ أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِى فِى امْرَأَتِكَ সা’দ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তুমি যে সম্পদই ব্যয় করো তার জন্য তুমি পুরস্কার হবে। এমন কি তুমি যে খাবার তোমার স্ত্রীকে খাওয়াও, তার জন্য তুমি পুরস্কৃত হবে’।[11]

আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ-

‘বল, আমার প্রতিপালক তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রূযী বাড়িয়ে দেন ও সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু (তাঁর পথে) পথে ব্যয় করবে, তিনি তার বদলা দিবেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ রূযীদাতা’ (সাবা ৩৪/৩৯)।

অন্য বর্ণনায় আছে, ‘তুমি নিজেকে, সন্তানদেরকে, স্ত্রীকে ও খাদেমকে যা খাওয়াবে তা তোমার জন্য ছাদাক্বা’।[12]

সুতরাং একজন ন্যায়পরায়ণ আদর্শবান পরিবারের কর্তা এসব ছওয়াবের কথা খেয়াল রেখে পরিবারের পিছনে খরচ করবেন, মোটেও কৃপণতা করবেন না। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يَضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ- ‘যে পাপী হওয়ার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার উপর নির্ভরশীলদের রিযিক নষ্ট করে’।[13]

সব কিছুর সুন্দর ব্যবস্থা থাকার পরও যদি স্ত্রী অকৃতজ্ঞ হয়, তাহ’লে মনে রাখতে হবে এটা তার স্বভাব বা প্রকৃতি’।[14]

রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا يَشْكُرُ اللَّهَ مَنْ لَا يَشْكُرُ النَّاسَ ‘সেই ব্যক্তি আল্লাহর শুকরিয়া করে না, যে মানুষের শুকরিয়া করে না’।[15] অন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ لَمْ يَشْكُرِ الْقَلِيلَ لَمْ يَشْكُرِ الْكَثِيرَ ‘যে ব্যক্তি অল্প পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে বেশী পেলেও কৃতজ্ঞ হবে না’।[16]

অল্পে তুষ্ট থাকার মধ্যেই রয়েছে সুখী জীবনের ঠিকানা। যা স্ত্রীকে বুঝাতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেছে এবং তার নিকট নুন্যতম রিযিক রয়েছে ও আল্লাহ তাকে তাতে সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক দিয়েছেন, সেই সফলকাম হয়ে গেছে’।[17]

তিনি আরো বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ ‘সেই ব্যক্তি কতইনা সৌভাগ্যবান যাকে ইসলামের পথে হেদায়াত দান করা হয়েছে এবং তার জীবিকা নূন্যতম প্রয়োজন মাফিক ও সে তাতেই খুশি’।[18]

বহু স্ত্রী লোক আল্লাহ প্রদত্ত নে’মত ও স্বামীর অবদান বুঝতে পারে না। দূর থেকে দেখে অপর নারী সুখে আছে, ভালো খায়, ভালো পরে এবং বিলাসে ভেসে চলে। এগুলো দেখে চিন্তা করে পরিবারে অশান্তি বাড়ায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, (সুখে থাকতে চাও) ‘তাহ’লে পার্থিব ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে কম সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিবর্গের দিকে দৃষ্টি দাও এবং তোমাদের চেয়ে অধিক সমৃদ্ধশালী লোকদের দিকে তাকিওনা। তাহলে তোমাদেরকে দেয়া আল্লাহর নে’মত তোমাদের নিকট তুচ্ছ মনে হবে না’।[19]

আল্লাহ ও আখিরাতকে কবুলকারী স্ত্রীগণ কখনও অধিক অধিক ভরণ-পোষণের দাবীদার হন না। দুনিয়ার ক্ষুদ্র স্বার্থের কাছে আখিরাত বিক্রয় করে দেন না।

৪. বাসস্থানের অধিকার :

আল্লাহ বলেন, أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ قَرْنٍ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّنْ لَكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاءَ عَلَيْهِمْ مِدْرَارًا وَجَعَلْنَا الْأَنْهَارَ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ وَأَنْشَأْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ ‘তোমরা তাদের থাকতে দাও যেখানে তোমরা থাক, তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী। তোমরা তাদের ক্ষতি করো না কষ্ট দেওয়ার জন্য। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তাহ’লে তাদের জন্য ব্যয় করবে, যতদিন না গর্ভ খালাস হয়। যদি তারা তোমাদের সন্তানদের দুধ পান করায়, তাহ’লে তোমরা তাদের পারিশ্রমিক দাও। আর এ বিষয়ে তোমরা আপোষে সুন্দরভাবে পরামর্শ করবে। কিন্তু যদি তোমরা সংকট সৃষ্টি কর, তাহ’লে অন্য নারী তাকে স্তন্য দান করাবে’ (তালাক্ব ৬৫/৬)

পর্দা দ্বারা আবেষ্টিত গৃহ হ’ল স্ত্রীর মান-সম্মান ইজ্জত-আব্রুর ও সম্ভ্রম রক্ষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। যেখানে অবস্থান করে মার্জিত-ভদ্র, শালীন স্ত্রী নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করবে এবং তাসবীহ-তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ, কুরআন তেলাওয়াত ও ফরজ-নফল ছালাত আদায় করে গৃহকে সজীব করে রাখবে। এজন্য দায়িত্ববান স্বামী স্ত্রী-পরিজনের জন্য পর্দায় ঘেরা প্রশস্ত বাড়ি তৈরি করবেন। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন,من سعادة المرء المسلم المسكن الواسع والجار الصالح والمركب الهنىء- ‘একজন মুসলমানের জন্য প্রশস্ত বাসগৃহ, সৎপ্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন সৌভাগ্যের নিদর্শন’।[20]

একটি মুসলিম পরিবারে কর্তার আবশ্যকীয় দায়িত্ব হ’ল স্ত্রী- পরিজনের জন্য আবদ্ধ গোসল খানা নির্মাণ করা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে গণগোসলখানায় প্রবেশ না করায়’।[21]

আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে একথা বলতে শুনেছি, الحمَّام حرام على نساء أمتي ‘আমার উম্মাতের নারীদের জন্য হাম্মাম অর্থাৎ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত গোসলখানায় প্রবেশ করা হারাম’।[22]

অন্যত্র তিনি বলেন,مَا مِنْ امْرَأَةٍ تَضَعُ ثِيَابَهَا فِي غَيْرِ بَيْتِ زَوْجِهَا إِلَّا هَتَكَتِ السِّتْرَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ رَبِّهَا- ‘যে নারী স্বামীর গৃহ ছাড়া অন্যত্র কাপড় খুলবে সে তার ও তার প্রভুর মাঝের পর্দা ধ্বংস করে দিবে’।[23] [চলবে]

[সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, ঝিনাইদহ সাংগঠনিক যেলা]


[1]. বুখারী, মিশকাত হা/৩২০২-৩২০৯।

[2]. বুখারী হা/৩৭১; ৪২০০।

[3]. আবুদাঊদ হা/২১৪২; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫০, হাদীছ হাসান।

[4]. তিরমিযী হা/১১৬৩; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫১; হাদীছ হাসান।

[5]. তিরমিযী হা/১৮৫৮; ইবনু মাজাহ হা/৩২৬৪, ছহীহ।

[6]. ইবনু মাজাহ হা/৩২৮৬; হাদীছ হাসান।

[7]. বুখারী হা/৫৪৬০, ২৫৫৭, মুসলিম হা/১৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/৩২৮৯।

[8]. বুখারী হা/৫৬।

[9]. মুসলিম হা/৯৯৪; তিরমিযী হা/১৯৬৬।

[10]. মুসলিম হা/২২০১।

[11]. বুখারী হা/৬৭৩৩।

[12]. ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯৫৫।

[13]. আবু দাঊদ হা/১৬৯২; হাসান ।

[14]. বুখারী হা/৪৩১, ৭৪৮।

[15]. আবু দাউদ হা/৫৮১১, তিরমিযী হা/১৯৫৪।

[16]. ছহীহ আত-তাগরীব হা/৯৭৬, হাসান ছহীহ।

[17]. মুসলিম হা/২৩১৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১৩।

[18]. তিরমিযী হা/২৩৪৯; হাদীছ ছহীহ।

[19]. তিরমিযী হা/২৫১৩।

[20]. আদাবুল মুফরাদ হা/১১৬।

[21]. তিরমিযী হা/২৮০১; নাসাঈ হা/১৯৮; তারগীব হা/১৬৪।

[22]. ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬৫, সনদ ছহীহ।

[23]. আবু দাঊদ হা/৪০১০; তিরমিযী হা/২৮০৩; হাদীছ ছহীহ।



বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
আরও