ভারত উপমহাদেশে হাদীছের ধারক ও বাহকগণ

ড. নূরুল ইসলাম 8950 বার পঠিত

হিজরী দ্বাদশ শতকে ভারতগুরু শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভীর (১১১৪-১১৭৬/১৭০৩-১৭৬২) আবির্ভাব ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সে সময় ভারতীয় মুসলিম সাম্রাজ্য মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত নাযুক পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। ইসলামের স্রেফ নাম অবশিষ্ট ছিল। কুরআনের তরজমা নিষিদ্ধ ছিল। ইল্মে হাদীছের চর্চা বন্ধ ছিল। দরবারী আলেমদের চালুকৃত ফৎওয়ার বিরোধিতা করা রীতিমত দুঃসাহসের ব্যাপার ছিল। খান্ক্বাহ ও দরগাহের বিদ‘আতী পীরদের আশীর্বাদ-অভিশাপই যেন মানুষের ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে উঠেছিল। জ্যোতিষীর গণনা ছাড়া রাজা-বাদশারাও বড় কোন কাজে হাত দিতেন না। তাছাউওফের নামে শতাধিক দল, দেহতত্ত্বের নামে প্রায় অর্ধশত দল এবং নবাবিষ্কৃত হাকীকত, তরীকত ও মা‘রেফাতের ধূম্রজালে শরী‘আতের স্বচ্ছ আলো থেকে মানুষ বঞ্চিত ছিল। হিন্দু ও মুসলমানের পার্থক্য প্রায় মুছে গিয়েছিল। সংস্কারের যে বীজ শায়খ আহমাদ সারহিন্দী ওরফে মুজাদ্দিদে আলফে ছানী (৯৭১-১০৩৪/১৫৬৪-১৬২৪ খৃ.) বপন করেছিলেন, শতবর্ষের ব্যবধানে তা স্তিমিত হয়ে এসেছিল। সম্রাটের প্রাসাদ হ’তে গরীবের পর্ণকুটীর পর্যন্ত বিস্তৃত কুসংস্কারের মূল উৎপাটনের জন্য সমগ্র সমাজ একজন দূরদর্শী চিন্তানায়ক ও সমাজবিপ্লবীর আগমনের জন্য উন্মুখ হয়েছিল (আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ২৪৫)। এহেন দুর্যোগ মুহূর্তে ভারতীয় মুসলমানদের ত্রাতা হিসাবে আবির্ভাব ঘটে শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভীর। হাদীছের নিষ্প্রভ প্রদীপ পুনরায় প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে স্ব-মহিমায়। ‘মাদরাসা রহীমিয়া’ ক্বালাল্লাহ ও ক্বালার রাসূল-এর সুমধুর ধ্বনিতে গুঞ্জরিত হ’তে থাকে। দিল্লী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ, উত্তর ভারত এবং সুদূর সিন্ধু ও কাশ্মীর থেকে হাদীছ প্রেমিক ছাত্ররা এসে ভীড় জমায় এ দরসগাহের আঙ্গিনায়। কুরআন ও সুন্নাহ্কে অাঁকড়ে ধরার লক্ষ্যে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত এক নতুন প্রজন্ম সৃষ্টিতে তাঁর দরস-তাদরীস অব্যাহত থাকে। তিনি সারাজীবন হাদীছে নববীর পঠন-পাঠন, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, প্রচার ও প্রসারে অতিবাহিত করেন।

তদানীন্তন সময়ের আলেমগণ দলীলের তোয়াক্কা না করে অতিমাত্রায় মাযহাবী ফিক্বহের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলেন। তিনি তাদের অবস্থা দর্শনে ব্যথিতচিত্তে বলেন, اشتغالهم بعلم الحديث قليل قديما وحديثا ‘অতীত ও বর্তমানে হাদীছের সাথে ঐ সকল আলেমের যোগসূত্র কম’ (আল-ইনছাফ ফী বায়ানে আসবাবিল ইখতেলাফ, পৃঃ ৮৪)। এ অবস্থার অবসানকল্পে তিনি প্রচলিত কালামভিত্তিক মাযহাবী ফিক্বহের পরিবর্তে ‘ফিক্বহুল হাদীছ’ তথা হাদীছভিত্তিক ফিক্বহের তূর্যধ্বনি করেন। স্বীয় আত্মজীবনীতে তিনি স্পষ্টভাষায় বলেন, ‘মাযহাব চতুষ্টয়ের গ্রন্থসমূহ ও এর উছূলে ফিক্বহের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন এবং যেসব হাদীছ থেকে ফকীহরা দলীল গ্রহণ করেন সেগুলি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পর আল্লাহ্র ইচ্ছায় আমার মনে মুহাদ্দিছ ফকীহগণের মানহাজের প্রতি ভাললাগা জন্ম নেয়’ (আল-জুযউল লাতীফ ফী তারজামাতিল আব্দিয যঈফ, মাজমূ‘আ রাসায়েলে ইমাম শাহ অলিউল্লাহ, ১/২৫)। ফিক্বহ ও হাদীছের মধ্যে বৈপরীত্য নিরসন এবং মাযহাব চতুষ্টয়ের মাঝে সমন্বয় সাধনের জন্য তিনি প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছিলেন। জনগণকে তিনি হাদীছভিত্তিক জীবন গঠনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন (তারীখে দাওয়াত ওয়া আযীমাত, ৫/১৫৯)। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর অছিয়তনামায় বলেন, ‘এই ফক্বীরের প্রথম অছিয়ত এই যে, আক্বীদা ও আমল উভয়ক্ষেত্রে কিতাব ও সুন্নাতের সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকুন এবং এ দু’টি জিনিসকেই সমান গুরুত্ব ও অভিনিবেশ সহকারে ধারণ করুন।.. আক্বীদাগত বিষয়ে পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরামের পথ অনুসরণ করুন এবং যুক্তিবাদী পথকে পরিহার করুন।.... প্রশাখাগত বিষয়ে ওলামায়ে মুহাদ্দিছীন-এর অনুসরণ করুন যারা একাধারে ফিক্বহ ও হাদীছ উভয়ের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। ফিক্বহের প্রশাখাগত বিষয়গুলিকে সর্বদা কিতাব ও সুন্নাতের সম্মুখে পেশ করুন। যা অনুকূলে পাওয়া যাবে, তা গ্রহণ করুন, আর যা বিপরীত হবে তা বর্জন করুন। ..সে সকল শুকনো চিন্তাধারার ফকীহদের কথা শুনবেন না আর না তাদের প্রতি দৃকপাত করবেন, যারা নির্দিষ্ট একজন আলেমের তাক্বলীদ করতঃ সুন্নাতের অনুসরণকে পরিত্যাগ করেছে। তাদের থেকে দূরে থেকে আল্লাহ্র নৈকট্য কামনা করুন’ (অছিয়তনামা, মাজমূ‘আ রাসায়েলে ইমাম শাহ অলিউল্লাহ,  ২/৫২৫-২৬)

অতঃপর ত্রিশ হাযার হাদীছের হাফেয, আহলেহাদীছ আন্দোলনের বীর সিপাহসালার, শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ)-এর পৌত্র, হুজ্জাতুল ইসলাম শাহ ইসমাঈল শহীদ (১৭৭৯-১৮৩১) ছিলেন তাঁর চিন্তাধারার বাস্তব রূপকার। আবুল হাসান নাদভী বলেন, ‘তাঁর রচনাবলী ও ইলমে হযরত শাহ অলিউল্লাহ ছাহেবের রচনাশৈলীর ঝলক পরিদৃষ্ট হয়। সেই  ইলমের পরিপক্কতা, দলীল সাব্যস্তকরণের দক্ষতা, সূক্ষ্মদর্শিতা, সুরুচি, কুরআন ও হাদীছে বিশেষ পান্ডিত্য, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও বাকপটুতা’ (তারীখে দাওয়াত ওয়া আযীমাত ৫/৩০০)। একদিকে তিনি যেমন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী শক্তির মোকাবিলা করেছেন, অন্যদিকে তেমনি দাওয়াত, তাবলীগ ও গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর ‘তাকভিয়াতুল ঈমান’ গ্রন্থটি পড়ে তাঁর জীবদ্দশাতেই দুই/আড়াই লাখ লোক আক্বীদা সংশোধন করে নিয়েছে (ঐ, ৫/৩০০)। ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন এর প্রমাণে ‘তানভীরুল আইনাইন ফী ইছবাতে রাফ‘ইল ইয়াদায়েন’ তাঁর একটি অনবদ্য গ্রন্থ। গ্রন্থটি সম্পর্কে শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলেছিলেন, ‘আল্লাহ্র শোকর যে, এই ঘর ইলমে হাদীছের মুহাক্কিক থেকে শূন্য নয়’ (ইতহাফুন নুবালা, পৃঃ ৪৫)

হিজরী ত্রয়োদশ শতকের শেষ দিকে ভারতবর্ষে অত্যন্ত জোরালোভাবে ইলমে হাদীছ পুনরুজ্জীবনের আন্দোলন শুরু হয় এবং এ আন্দোলনের তেজোদীপ্ত রশ্মিতে দিল্লী, বিহার, বাংলা, উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, সিন্ধু, গুজরাট, দাক্ষিণাত্য, সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহ, পাঞ্জাব প্রভৃতি আলোকিত হয়ে উঠে। এমনকি এর বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি অন্যান্য মুসলিম বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ে। এ বরকতময় আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন দু’জন বিশ্ববরেণ্য আহলেহাদীছ মনীষী। একজন হ’লেন ‘শায়খুল কুল ফিল কুল’ (সর্বকালের সকলের সেরা বিদ্বান) মিয়াঁ নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভী (১২২০-১৩২০ হিঃ/১৮০৫-১৯০২ খৃঃ)। যার ছাত্রসংখ্যা ছিল প্রায় সোয়ালক্ষ। অপরজন হ’লেন অভূতপূর্ব প্রতিভা, বিশ্ববরেণ্য মুহাদ্দিছ, ২২২টি গ্রন্থের অমর রচয়িতা নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (১২৪৮-১৩০৭/১৮৩২-১৮৯০)। কুরআন, হাদীছ, ফিক্বহ সহ প্রচলিত প্রায় সকল ইলমে গভীর পারদর্শী মিয়াঁ নাযীর হুসাইন পাঠদানের সময় তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রদের সামনে হাদীছের সহজ-সরল পথ পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতেন। ফলে ফিক্বহী বিতর্ক হ’তে বেরিয়ে ছাত্ররা সরাসরি কুরআন-হাদীছ অনুসরণে অধিক স্বস্তি লাভ করত। এরই ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ এশিয়া ও বহির্বিশ্ব থেকে আগত জ্ঞানপিপাসু বহু ছাত্র প্রচলিত তাক্বলীদ ছেড়ে দিয়ে ‘আহলেহাদীছ’ হয়ে যান। প্রত্যেক ছাত্র নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে তাঁর শিক্ষা প্রচার করতেন ও তাদের মাধ্যমে অনেকে আহলেহাদীছ হতেন (আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ৩২২)। পঁচাত্তর বছরের এই ইলমী মহীরুহের ছায়াতলে প্রায় এক লক্ষ পঁচিশ হাযার ছাত্র দ্বীনী ইলম লাভে ধন্য হন (আল-বুশরা, পৃঃ ৫৩), যাদের অধিকাংশই আহলেহাদীছ ছিলেন বা হয়েছিলেন বলে অনুমান করা চলে।

অন্যদিকে নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী গ্রন্থ রচনা, হাদীছ ও ফিক্বহুল হাদীছের দুর্লভ গ্রন্থাবলী নিজ খরচে ছাপিয়ে ও ক্রয় করে ফ্রি বিতরণ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও লাইব্রেরীতে অনুদান হিসাবে প্রদান, হাদীছ মুখস্থ প্রতিযোগিতার আয়োজন, মাসোহারা প্রদান করে ওলামায়ে কেরামকে গ্রন্থ রচনা ও দাওয়াতী কাজে উদ্বুদ্ধকরণ প্রভৃতিভাবে সুন্নাহ্র খিদমত আঞ্জাম দেন। এভাবে গ্রন্থ রচনা ও প্রচার করে চিন্তাজগতে মৌলিক পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে তিনি যে নীরব বিপ্লবের সূচনা করেন, তা আহলেহাদীছ আন্দোলনকে ভারতবর্ষ ও বহির্বিশ্বে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ করে দেয়। আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মাদ মুনীর দামেশকী তাঁর অবদানের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘এ ছিল একটি বিরাট পুনর্জাগরণ, যা অন্যান্য মুসলিম দেশেও প্রভাব বিস্তার করেছিল। অতঃপর এই পদাঙ্ক অনুসরণ করে অধিকাংশ মুসলিম দেশ তাফসীর ও হাদীছের গ্রন্থাবলী মুদ্রণে এগিয়ে এসেছিল’ (নামূযাজ মিনাল আ‘মালিল খায়রিয়াহ, পৃঃ ৪৬৮)। তাছাড়া ইলমে হাদীছ জনগণের নাগালের মধ্যে এসে যাবার ফলে তারা তাক্বলীদ ও মাযহাবী ফিক্বহের বেড়াজাল ছিন্ন করে খোলা মনে হাদীছ গবেষণা শুরু করেন এবং অগণিত মানুষ সরাসরি হাদীছ অনুযায়ী জীবন গড়ার সুযোগ পেয়ে আহলেহাদীছ হয়ে যান।

মিসরীয় পন্ডিত রশীদ রিযা (মৃঃ ১৩৫৩ হিঃ) এঁদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করতে গিয়ে বলেন, ولولا عناية إخواننا علماء الهند بعلوم الحديت في هذا العصر لقضي عليها بالزوال من أمصار الشرق-  ‘যদি এ যুগে আমাদের ভারতীয় আলেম ভ্রাতৃমন্ডলী ইলমে হাদীছের প্রতি গুরুত্ব না দিতেন, তাহ’লে প্রাচ্যের দেশগুলি থেকে তা বিলুপ্ত হয়ে যেত’ (মিফতাহু কুনূযিস সুন্নাহ-এর ভূমিকা দ্রঃ)। আরেকজন মিসরীয় বিদ্বান আব্দুল আযীয আল-খাওলী বলেছেন, وفي الهند الآن طائفة كبيرة تهتدي بالسنة في كل أمور الدين ولا تقلد أحدا من الفقهاء ولا المتكلمين و هي طائفة المحدثين-  ‘বর্তমানে ভারতে একটি বড় দল রয়েছে যারা দ্বীনের সকল বিষয়ে হাদীছ দ্বারা দিকনির্দেশনা লাভ করে এবং ফকীহ ও দার্শনিক কারোরই তাক্বলীদ করে না। এঁরা হলেন মুহাদ্দিছগণের জামা‘আত’ (মিফতাহুস সুন্নাহ)। অনুরূপভাবে মাওলানা মানাযির আহসান গিলানী হানাফী বলেন, ‘এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, দ্বীনের মৌলিক উৎস সমূহের (কুরআন ও হাদীছ) দিকে ভারতীয় হানাফী মুসলমানদের প্রত্যাবর্তনে আহলেহাদীছ ও গায়রে মুক্বাল্লিদদের আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে। সাধারণ জনগণ গায়ের মুক্বাল্লিদ হয়নি বটে, তবে গোঁড়া তাক্বলীদ ও অন্ধ অনুকরণের ভেল্কিবাজি অবশ্যই ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে’ (মাসিক বুরহান, দিল্লী, আগস্ট ১৯৮৫)

‘মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ’-এর সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব খালজী  একবার বিশ্বনন্দিত মুহাদ্দিছ, অতুলনীয় ইলমী প্রতিভা শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ما رأي فضيلتكم عن خدمات علماء أهل الحديت في الهند- ‘ভারতের আহলেহাদীছ আলেমদের হাদীছে অবদান সম্পর্কে আপনার মতামত কি’? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, أنا حسنة من حسنات أهل الحديت في الهند  ‘আমি তো ভারতের আহলেহাদীছ আলেমদের পুণ্যকর্মসমূহের একটি ফসল’ (আব্দুল গাফফার সালাফী, আহলেহাদীছ কা তা‘আরুফ, পৃঃ ৫৬)

এঁদেরই উত্তরসুরী হলেন মাওলানা আব্দুল্লাহ গযনভী (১৮১৪-১৮৮০), মাওলানা ইবরাহীম আরাভী (১৮৪৯-১৯০১), আবুদাঊদের বিশ্ববিখ্যাত ভাষ্য ‘আওনুল মা‘বূদ’ রচয়িতা শামসুল হক আযীমাবাদী (১৮৫৭-১৯১১), তিরমিযীর জগদ্বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ প্রণেতা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (১৮৬৫-১৯৩৫), ‘উস্তাযুল আসাতিযাহ’ হাফেয আব্দুল্লাহ গাযীপুরী (১৮৪৪-১৯১৮), ‘উসতাযে পাঞ্জাব’ খ্যাত অন্ধ মুহাদ্দিছ হাফেয আব্দুল মান্নান ওয়াযীরাবাদী (১২৬৭-১৩৩৪হিঃ), মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী (১৮৬৬-১৯৩৩), মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (১৮৬৮-১৯৪৮), পঞ্চাশের অধিকবার বুখারীর দরস প্রদানকারী মুহাদ্দিছ হাফেয মুহাম্মাদ গোন্দলবী (১৩১৫-১৪০৫হিঃ), ‘সীরাতুল বুখারী’ রচয়িতা মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (১৮৬৫-১৯২৪), মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী (১৮৯০-১৯৪১), মাওলানা আবুল কাসেম সায়ফ বেনারসী (১৮৯০-১৯৪৯), ‘আত-তা‘লীকাতুস সালাফিয়াহ আলা সুনানিন নাসাঈ’ প্রণেতা মাওলানা মুহাম্মাদ আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানী (১৯১০-১৯৮৭), ‘মিশকাতুল মাছাবীহ’-এর খ্যাতিমান ভাষ্যগ্রন্থ ‘মির‘আতুল মাফাতীহ’ প্রণেতা আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (১৯০৯-১৯৯৪), রাশেদী বংশের উজ্জ্বল নক্ষত্র সাইয়েদ বদীউদ্দীন শাহ রাশেদী (১৯২৬-১৯৯৬), আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপুরী (১৯৪২-২০০৬), সুনান ইবনু মাজাহ্র ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ইনজাযুল হাজাহ’ প্রণেতা মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জানবায (১৯৩৪-২০০৮), হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ (১৯৫৭-২০১৩), শায়খ ইরশাদুল হক আছারী (জন্ম : ১৯৪৮), অনন্য হাদীছ সংকলন ‘আল-জামে আল-কামেল ফিল হাদীছ আছ-ছহীহ আশ-শামেল’ প্রণেতা ড. যিয়াউর রহমান আ‘যমী (জন্ম : ১৯৪৩)  প্রমুখ। এঁরা ও এঁদের অনুসারীরাই হলেন ভারত উপমহাদেশে হাদীছের প্রকৃত ধারক ও বাহক।

সুতরাং হক্বপিয়াসী তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমাদের আহবান, আসুন আমরা পূর্বসূরী বিদ্বানদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবং তাদের ইলমী ধারাবাহিকতা বজায় রেখে হাদীছের পঠন-পাঠন, গবেষণা এবং হাদীছের জ্ঞান নিজের জীবনে সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়নে আত্ননিয়োগ করি। সেই সাথে কুরআন ও ছহীহ হাদীছভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলি। তবেই এ সমাজে ইসলামের মহান সভ্যতার প্রকৃত আলো, প্রকৃত জৌলুস আবারও প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন! আমীন।



বিষয়সমূহ: সম্পাদকীয়
আরও