যবানের পাপ ও পুণ্য

ফায়ছাল মাহমূদ 307 বার পঠিত

ভূমিকা : মহান আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানকে যত নে‘মত দ্বারা সম্মানিত করেছেন তন্মধ্যে বাকশক্তি বা যবান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যবান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর সদ্ব্যবহারে পুণ্য অর্জন হয়, যা আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে। আর অসদ্ব্যবহারে জাহান্নামের পথ প্রশস্ত হয়। সেজন্য আমাদের যবানের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আলোচ্য প্রবন্ধে যবানের পাপ-পুণ্য বিষয়ে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

যবান হেফাযতের কারণ : আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদের প্রতিটি কর্মের ভাল-মন্দের হিসাব সংরক্ষণ করেন। এমনকি আমাদের বলা প্রতিটি শব্দও সংরক্ষণ করা হয়। সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার নিকট যেন আমাদের যবানের কৈফিয়ত দেওয়া না লাগে সেভাবে যবানের হেফাযত করতে হবে। কেননা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ- ‘যখন দু’জন ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমলনামা লিপিবদ্ধ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী রয়েছে’ (কাহাফ ৫০/১৭-১৮)

যবান হেফাযতের প্রয়োজনীয়তা : যারা যবানের হেফাযত করে, তাদের দ্বারা অনর্থক কথা ও কাজ সংঘটিত হয় না। ফলে সে ইসলামে সর্বোত্তম ব্যক্তিতে পরিণত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيْهِ ‘কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হ’ল অনর্থক আচরণ পরিত্যাগ করা’।[1]

আর মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল যবান সংযত রাখা। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا ‘যখন তারা অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হয়, তখন তারা সম্মান বাঁচিয়ে তা অতিক্রম করে’ (ফুরক্বান ২৫/৭১)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,

عُمْدَةُ الدِّينِ عِنْدَنَا كَلِمَاتٌ + أَرْبَعٌ قَالَهُنَّ خَيْرُ الْبَرِيَّةْ

اتَّقِ السَّيِّئَاتِ، وَازْهَدْ، وَدَعْ مَا + لَيْسَ يَعْنِيكَ، وَاعْمَلَنَّ بِنِيَّةْ

‘আমাদের নিকট দ্বীনের উত্তম কথা হ’ল চারটি। যা বলেছেন সৃষ্টির সেরা ব্যক্তি অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ) : (১) মন্দ থেকে বেঁচে থাক (২) দুনিয়াত্যাগী হও (৩) অনর্থক বিষয় পরিহার কর এবং (৪) সংকল্পের সাথে কাজ কর’।[2]

কথাবার্তায় যবানকে সংযত ও নিয়ন্ত্রণ করা যরূরী। কেননা অসংলগ্ন কথাবার্তার কারণে পরকালে শাস্তি পেতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَا يَسْتَقِيْمُ إِيْمَانُ عَبْدٍ حَتَّى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهُ، وَلَا يَسْتَقِيْمُ قَلْبُهُ حَتَّى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهُ- ‘কোন বান্দার ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক হবে না যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হবে। আর অন্তর ঠিক হবে না যতক্ষণ না তার জিহবা ঠিক হবে’।[3] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ فَإِنَّ الْأَعْضَاءَ كُلَّهَا تُكَفِّرُ اللِّسَانَ فَتَقُولُ اتَّقِ اللهَ فِينَا فَإِنَّمَا نَحْنُ بِكَ فَإِنْ اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا وَإِنْ اعْوَجَجْتَ اعْوَجَجْنَا- ‘মানুষ সকালে ঘুম হ’তে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহ’লে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহ’লে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য’।[4]

আব্দুল্লাহ বিন বুস্র (রাঃ) বলেন, ‘জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামের বিধি-বিধান অনেক। আপনি আমাকে সংক্ষেপে কিছু বলে দিন। যা আমি সবসময় ধরে রাখতে পারি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,لاَ يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا مِنْ ذِكْرِ اللهِ ‘তোমার জিহবা যেন সর্বদা আল্লাহর যিকরে সিক্ত থাকে’।[5] সুতরাং যবানের হেফাযত যতবেশী হবে পুণ্য অর্জন ততবেশী হবে।

যবানের হেফাযতে জান্নাত প্রাপ্তি : কোন ব্যক্তি যদি যথাযথভাবে যবানের হেফাযত করতে পারে তাহ’লে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ يَضْمَنْ لِى مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দু’চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্ত্তর এবং তার দু’ পায়ের মধ্যস্থিত বস্ত্তর যামিন হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হব’।[6]

যবানের পাপ সমূহ :

১. মিথ্যা বলা : মিথ্যা বলার পরিণতি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, তার দাদা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,وَيْلٌ لِلَّذِى يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ- ‘সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক’।[7] তাই মিথ্যা বলে যবানের পাপ বৃদ্ধি করা অনুচিত।

২. গীবত করা : কথাবার্তায় গীবত ও চোগলখুরী বর্জন করা যরূরী। গীবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ ‘আর তোমরা ছিদ্রান্বেষণ কর না এবং একে অপরের পিছনে গীবত কর না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? বস্ত্ততঃ তোমরা সেটি অপছন্দ করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বাধিক তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১২)

৩. চোগলখোরী করা : চোগলখোরী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِيْنٍ، هَمَّازٍ مَشَّاءٍ بِنَمِيْمٍ ‘আর তুমি তার আনুগত্য করবে না যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত। যে পশ্চাতে নিন্দা করে ও একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়’ (ক্বলম ৬৮/১০-১১)

হাদীছে এসেছে, হুযায়ফা (রাঃ)-এর নিকট খবর পৌঁছাল যে,أَنَّ رَجُلاً يَنِمُّ الْحَدِيثَ فَقَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ ‘এক ব্যক্তি চোগলখোরী করে বেড়ায়। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[8]

৪. গালিগালাজ করা : মানুষকে গালি দেওয়াকে ফাসেক্বী বলা হয়েছে। এটা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেক্বী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী’।[9]

মুসলমানকে গালি দেয়া নিজেকে ধ্বংসে নিপতিত করার শামিল। রাসূল (ছাঃ) বলেন,سَابُّ الْمُؤْمِنِ كَالْمُشْرِفِ عَلَى الْهَلَكَةِ، ‘মুসলমানকে গালি দেয়া নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিপতিত করার ন্যায়’।[10] উভয় গালিদাতাকে রাসূল (ছাঃ) শয়তান বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন,الْمُسْتَبَّانِ شَيْطَانَانِ يَتَكَاذَبَانِ وَيَتَهَاتَرَانِ، ‘উভয় গালমন্দকারী দুই শয়তান। এরা পরস্পরের উপর মিথ্যা দোষারোপ করে এবং অসত্য বলে’।[11]

গালিদাতাদের মধ্যে যে প্রথমে শুরু করবে সব গুনাহ তার উপরে বর্তাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْمُسْتَبَّانِ مَا قَالاَ فَعَلَى الْبَادِئِ مَا لَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُومُ، ‘পরস্পর গালিগালাজকারীর মধ্যে যে প্রথমে আরম্ভ করে উভয়ের দোষ তার উপর বর্তাবে, যতক্ষণ না অপরজন সীমালঙ্ঘন করে’।[12]

এমনকি গালিদাতা পরকালে নিঃস্ব হবে এবং নেকী দিয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে নিঃস্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোন সম্পদও নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে নিঃস্ব, যে ক্বিয়ামত দিবসে ছালাত, ছিয়াম, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারও রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হ’তে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সৎআমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[13] সুতরাং মুসলমানকে গালি দিয়ে তাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে পরকালে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হ’তে না হয়।

৫. উপহাস করা : বিকলাঙ্গ কোন মানুষকে অথবা অসম্পূর্ণ কাজের জন্য কাউকে উপহাস করা উচিত নয়। এতে মানুষ অত্যন্ত কষ্ট পায়। যা আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُوْنُوْا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! কোন সম্প্রদায় যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম’ (হুজুরাত ৪৯/১১)

৬. অভিশাপ ও অপবাদ দেওয়া : কোন মানুষকে অভিসম্পাত করা উচিত নয়। কেননা এটা মানুষকে অত্যন্ত কষ্ট দেয়। অভিসম্পাত করা মুমিনের বৈশিষ্ট্যও নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَلَعْنُ الْمُؤْمِنِ كَقَتْلِهِ، ‘ঈমানদারকে লা‘নত করা, তাকে হত্যা করার সমতুল্য’।[14] তিনি আরও বলেন,لاَ يَنْبَغِى لِلْمُؤْمِنِ أَنْ يَكُوْنَ لَعَّانًا ‘মুমিন ব্যক্তি কখনো অভিশাপকারী হ’তে পারে না’।[15] আরেকটি হাদীছে মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الْفَاحِشِ وَلاَ الْبَذِىءِ، ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী হ’তে পারে না, অভিসম্পাতকারী হ’তে পারে না। সে অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না’।[16]

অভিশাপ করার পার্থিব পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا لَعَنَ شَيْئًا صَعِدَتِ اللَّعْنَةُ إِلَى السَّمَاءِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ دُوْنَهَا ثُمَّ تَهِبْطُ إِلَى الأَرْضِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُهَا دُوْنَهَا ثُمَّ تَأْخُذُ يَمِيْنًا وَشِمَالاً فَإِذَا لَمْ تَجِدْ مَسَاغًا رَجَعَتْ إِلَى الَّذِى لُعِنَ فَإِنْ كَانَ لِذَلِكَ أَهْلاً وَإِلاَّ رَجَعَتْ إِلَى قَائِلِهَا- ‘যখন কোন বান্দা কোন ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, তখন ঐ অভিশাপ আকাশের দিকে উঠতে থাকে। অতঃপর আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা পুনরায় দুনিয়ায় প্রত্যার্বতনের জন্য রওয়ানা হয়। কিন্তু দুনিয়াতে আসার পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন সে ডানে বামে যাওয়ার চেষ্টা করে। অবশেষে অন্য কোন পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ করা হয়েছে, তার নিকটে ফিরে আসে। অতঃপর সে যদি ঐ অভিশাপের যোগ্য হয়, তাহ’লে তার উপর ঐ অভিশাপ পতিত হয়। অন্যথা অভিশাপকারীর উপরেই তা পতিত হয়’।[17]

অভিশাপ করার পরকালীন পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ يَكُونُ اللَّعَّانُونَ شُفَعَاءَ وَلاَ شُهَدَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘অভিসম্পাতকারীরা (ক্বিয়ামতে) সুপারিশকারী হ’তে পারবে না এবং সাক্ষীদাতাও হ’তে পারবে না’।[18] সুতরাং কাউকে অভিশাপ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৭. তর্ক-বির্তক ও বাচালতা : তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া বা বাক-বিতন্ডা কখনো ভাল ফল বয়ে আনে না। কাজেই অপ্রয়োজনে এসব থেকে দূরে থাকা উচিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِى رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا وَبِبَيْتٍ فِى وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِى أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ- ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের পার্শ্বদেশে এক গৃহের যামিন হচ্ছি, যে ব্যক্তি সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও তর্ক-বিতর্ক বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যদেশে এক গৃহের যামিন হচ্ছি, যে ব্যক্তি উপহাসছলেও মিথ্যা বলে না। আর সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের ঊর্ধ্বদেশে এক গৃহের যামিন হচ্ছি, যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সুন্দর করে’।[19]

অন্যত্র তিনি বলেন,مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوْا عَلَيْهِ إِلَّا أُوتُوْا الْجَدَلَ ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ-بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُوْنَ ‘হেদায়াত লাভের পর কোন জাতি গোমরাহ হয়নি, যারা ঝগড়ায় লিপ্ত হয়নি। অতঃপর তিনি পাঠ করেন ‘বরং তারা হ’ল ঝগড়াকারী সম্প্রদায়’ (যুখরুফ ৪৩/৫৮)

৮. অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয়তা কথা বলা : অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার করতে হবে। কেননা এতে কোন উপকারিতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ ‘মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা’।[20] এছাড়া মানুষের ব্যক্ত করা কথাবার্তার কারণে তাকে শাস্তি পেতে হ’তে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ، لَا يَرَى بِهَا بَأْسًا، فَيَهْوِيْ بِهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا- ‘মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে এবং তাকে দূষণীয় মনে করে না। অথচ এই কথার দরুন সত্তর বছর ধরে সে জাহান্নামে পতিত হ’তে থাকবে’।[21]

যবানের অপব্যবহার মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। দীর্ঘ এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, হযরত মু‘আয (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন,وَهَلْ نُؤَاخَذُ بِمَا تَكَلّمَتْ بِهِ أَلْسِنَتُنَا؟ ‘কথার কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয (রাঃ)-এর উরুতে মৃদু আঘাত করে বললেন-يَا مُعَاذُ ثَكِلَتْكَ هَلْ يُكَب النّاس عَلَى مَنَاخِرِهِمْ فِي جَهَنّمَ إِلّا مَا نَطَقَتْ بِهِ أَلْسِنَتُهُمْ.فَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ عَنْ شَرٍّ، قُولُوا خَيْرًا تَغْنَمُوا وَاسْكُتُوا عَنْ شَرٍّ تَسْلَمُوا- ‘হে মু‘আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! আরে, মানুষকে তো তার যবানের কথাই উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। যে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী সে যেন ভাল কথা বলে বা অন্তত মন্দ কথা থেকে বিরত থাকে। তোমরা ভাল কথা বল, লাভবান হবে। মন্দকাজ থেকে বিরত থাক, নিরাপদ থাকবে’।[22]

যবানের পুণ্য

১. সত্য বলা : রাসূল (ছাঃ) বলেন,عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّهُ مَعَ الْبِرِّ وَهُمَا فِى الْجَنَّةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّهُ مَعَ الْفُجُوْرِ وَهُمَا فِى النَّارِ ‘তোমরা সত্য গ্রহণ কর। সত্য নেকীর সাথে রয়েছে। আর উভয়টি জান্নাতে যাবে। আর মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। মিথ্যা পাপের সাথে রয়েছে। উভয়ই জাহান্নামে যাবে’।[23] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِيْ إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِيْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا--‘তোমাদের উপরে আবশ্যিক হ’ল সত্য কথা বলা। কেননা সততা কল্যাণের পথ দেখায় এবং কল্যাণ জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। আর তোমরা মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাক। কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’।[24]

সত্য বললে আল্লাহ ও রাসূলের ভালবাসা লাভ করা যায়। আব্দুর রহমান ইবনু হারিছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমরা একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে ছিলাম। তিনি ওযূর পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তাতে হাত ডুবালেন এবং ওযূ করলেন। আমরা তাকে অনুসরণ করলাম এবং তার নিকট হ’তে অঞ্জলী ভরে ওযূর পানি নিলাম। তিনি বললেন, তোমরা এ কাজ করতে উৎসাহিত হ’লে কেন? আমরা বললাম, এটা হ’ল আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালবাসা। তিনি আরও বললেন,فَإِنْ أَحْبَبْتُمْ أَنْ يُحِبَّكُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُوْلَهُ، فَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَحْسِنُوْا جِوَارَ مَنْ جَاوَرَكُمْ ‘তোমরা যদি চাও যে, আল্লাহ ও তার রাসূল তোমাদেরকে ভালবাসবেন তাহ’লে তোমাদের নিকট আমানত রাখা হ’লে, তা প্রদান করবে এবং কথা বললে, সত্য বলবে। আর তোমাদের প্রতিবেশীর সাথে ভাল আচরণ করবে’।[25]

২. হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা ও কথা বলা : মানুষকে আনন্দিত করার একটি বিশেষ উপায় হ’ল ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার সাথে সর্বদা হাসি মুখে কথা বলা। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ، وَإِنَّ مِنَ الـمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ، وَأَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِي إِنَاءِ أَخِيكَ، ‘প্রতিটি ভাল কাজই ছাদাক্বা স্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির পানি দিয়ে তোমার ভাইয়ের পাত্র ভর্তি করে দেওয়াও নেক আমলের অন্তর্ভূক্ত’।[26] অন্যত্র তিনি বলেন, تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيْكَ لَكَ صَدَقَةٌ ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ’।[27]

৩. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ভাল ও কল্যাণকর কথা বলা : আমাদেরকে সর্বদা ভাল কথা বলতে হবে। যদি ভাল কথা বলার কিছু না থাকে তাহ’লে চুপ থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[28] আল্লাহ বলেন,لَا خَيْرَ فِيْ كَثِيْرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوْفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا- ‘তাদের অধিকাংশ শলা-পরামর্শে কোন মঙ্গল নেই। কিন্তু যে পরামর্শে তারা মানুষকে ছাদাক্বা করার বা সৎকর্ম করার কিংবা লোকদের মধ্যে পরস্পরে সন্ধি করার উৎসাহ দেয় সেটা ব্যতীত। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সেটা করে, সত্ত্বর আমরা তাকে মহা পুরস্কার দান করব’ (নিসা ৪/১১৪)

প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বললে বেশী ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ভুল মানুষের জন্য মন্দ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ لاَ يُلْقِى لَهَا بَالاً، يَرْفَعُ اللهُ بِهَا دَرَجَاتٍ، وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ لاَ يُلْقِى لَهَا بَالاً يَهْوِى بِهَا فِى جَهَنَّمَ- ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা বলে অথচ সে কথা সম্পর্কে তার জ্ঞান নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’।[29]

৪. সর্বদা জিহবাকে যিকিরে ব্যস্ত রাখা : বান্দার হৃদয় থেকে যখন কোন পবিত্র বাক্য ও কথা উৎসারিত হয়, তখন আল্লাহ সেটা তার কাছে তুলে নেন। তিনি বলেন,إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ ‘তার দিকেই আরোহন করে পবিত্র বাক্য। আর সৎকর্ম তাকে উচ্চ করে’ (ফাতির ৩৫/১০)। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, এখানে ‘পবিত্র বাক্য’ বলতে আল্লাহর যিকির, তাসবীহ-তাহমীদ, কুরআন তিলাওয়াত, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ প্রভৃতিকে বুঝানো হয়েছে, যা নিয়ে ফেরেশতামন্ডলী আকাশে আরোহণ করেন এবং আল্লাহ তার ছওয়াব প্রদান করেন’।[30]

৫. মিষ্টভাষী হওয়া : মিষ্টভাষী হওয়া মানুষের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বিনয় মানুষকে উচ্চাসনে সমাসীন ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে সহায়তা করে। বিনয়ীকে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। যে যত বেশী বিনয়ী ও নম্র হয় সে তত বেশী উন্নতি লাভ করতে পারে। এ পৃথিবীতে যারা আজীবন স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আসন লাভ করে আছেন তাদের প্রত্যেকেই বিনয়ী ও নম্র ছিলেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহঃ) বলেছেন,رَأْسُ التَّوَاضُعِ أَنْ تَضَعَ نَفْسَكَ عِنْدَ مَنْ هُوَ دُوْنَكَ فِيْ نِعْمَةِ الدُّنْيَا، حَتَّى تُعْلِمَهُ أَنْ لَيْسَ لَكَ بِدُنْيَاكَ عَلَيْهِ فَضْلٌ، وَأَنْ تَرْفَعَ نَفْسَكَ عَمَّنْ هُوَ فَوْقَكَ فِي نِعْمَةِ الدُّنْيَا، حَتَّى تُعْلِمَهُ أَنَّهُ لَيْسَ لَهُ بِدُنْيَاهُ عَلَيْكَ فَضْلٌ-‘বিনয় ও নম্রতার মূল হ’ল, তুমি তোমার দুনিয়ার নে‘মতের ক্ষেত্রে নিজেকে তোমার নীচের স্তরের লোকদের সাথে রাখ, যাতে তুমি তাকে বুঝাতে পার যে, তোমার দুনিয়া নিয়ে তুমি তার চেয়ে মর্যাদাবান নও। আর নিজেকে উঁচু করে দেখাবে তোমার চেয়ে দুনিয়াবী নে‘মত নিয়ে উঁচু ব্যক্তির নিকট, যাতে তুমি তাকে বুঝাতে পার যে, দুনিয়া নিয়ে সে তোমার উপর মর্যাদাবান নয়’।[31]

সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) তার শিষ্যদের বলেন,أتدرون ما الرفق) قالوا: قل يا أبا محمد! قال: أن تضع الأمور في مواضعها: الشدة في موضعها، واللين في موضعه، والسيف في موضعه، والسوط في موضعه ‘তোমরা কি জানো নম্রতা কী? তারা বলল, আপনি বলুন, হে আবু মুহাম্মাদ! তিনি বললেন, প্রত্যেক বিষয়কে যথাস্থানে রাখা। কঠোরতাকে স্ব-স্থানে, নম্রতাকে তার স্থানে, তরবারিকে যথাস্থানে, চাবুককে তার স্থানে রাখা’।[32]

উপসংহার : উপরোক্ত গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব। পরিশেষে বলব, মার্জিত কথা, নম্র ও নিম্নস্বরে বলার চেষ্টা করতে হবে। সাথে সাথে অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা পরিত্যাগ করতে হবে। যে কথার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে এমন কথা বলতে হবে এবং যাতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে তা পরিত্যাগ করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে যবানের পাপ থেকে মুক্তি দিন এবং যবানের যথাযথ ব্যবহারের তাওফীক দান করুন।-আমীন!

[লেখক : ফায়ছাল মাহমূদ, কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ।]


[1]. ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৬; মিশকাত হা/৪৮৩৯।

[2]. মিরক্বাত ভূমিকা অংশ পৃ.২৪।

[3]. আহমাদ হা/১৩০৪৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৫৪।

[4]. তিরমিযী হা/২৪০৭, মিশকাত হা/৪৮৩৮; সনদ হাসান।

[5]. তিরমিযী হা/৩৩৭৫; ইবনু মাজাহ হা/৩৭৯৩; মিশকাত হা/২২৭৯।

[6]. বুখারী হা/৬৪৭৪; মিশকাত হা/৪৮১২।

[7]. আবূদাঊদ হা/৪৯৯০; তিরমিযী হা/২৩১৫; মিশকাত হা/৪৮৩৪।

[8]. মুসলিম হা/১৬৮/১০৫, ছহীহ আত-তারগীব হা/২৮২১।

[9]. বুখারী হা/৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪।

[10]. বায্যার, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৮০।

[11]. আহমাদ হা/১৭৫২২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৯৬।

[12]. মুসলিম হা/২৫৮৭; আবূদাঊদ হা/৪৮৯৪; মিশকাত হা/৪৮১৮।

[13]. মুসলিম হা/২৫৮১; তিরমিযী হা/২৪১৮; মিশকাত হা/৫১২৭।

[14]. বুখারী হা/৬১০৫; ৬৬৫২; মুসলিম হা/১১০।

[15]. তিরমিযী হা/২০১৯; মিশকাত হা/৪৮৪৮; ছহীহাহ হা/২৬৩৬।

[16]. তিরমিযী হা/১৯৭৭; মিশকাত হা/৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৮১।

[17]. আবূদাঊদ হা/৪৯০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৭২।

[18]. মুসলিম হা/২৫৯৮; আবূদাঊদ হা/৪৯০৭।

[19]. আবূদাঊদ হা/৪৮০০; তিরমিযী হা/১৯৯৩; ছহীহাহ হা/২৭৩।

[20]. ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৬, তিরমিযী হা/২৩১৭; মিশকাত হা/৪৮৩৯।

[21]. তিরমিযী হা/২৩১৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭০; মিশকাত হা/৪৮৩৩।

[22]. মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৭৭৭৪।

[23]. ইবনু হিববান, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮৬।

[24]. বুখারী, মুসলিম হা/২৬০৭; মিশকাত হা/৪৬২৪।

[25]. ত্বাবারাণী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮০।

[26]. তিরমিযী হা/১৯৭০; মিশকাত হা/১৯১০, ছহীহ হাদীছ।।

[27]. তিরমিযী হা/১৯৫৬; ছহীহাহ হা/৫৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯০৮।

[28]. বুখারী হা/৬০১৮-১৯; মুসলিম হা/৪৭-৪৮; মিশকাত হা/৪২৪৩।

[29]. বুখারী হা/৬৪৭৮; মুসলিম হা/২৪৯৩; মিশকাত হা/৫৮১৫।

[30]. ফাৎহুল কাদীর ৪/৩৪১।

[31]. ইবনু আবিদ দুনিয়া, আত-তওয়াযু ওয়াল খামূল পৃ. ১৬৫।

[32]. ফায়যুল কাদীর ৪/৭৩ পৃ.।



বিষয়সমূহ: পাপ
আরও