মৃত্যুর জন্য উত্তম প্রস্ত্ততি

মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম 801 বার পঠিত

ভূমিকা : দুনিয়ায় মানব জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর এবং বড় বিপদ হ’ল মৃত্যু। মৃত্যু এমন এক সত্য বিষয় যাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সেজন্য মৃত্যু ও তার পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা আবশ্যক। কারণ মানুষ জানেনা দিনে বা রাতে কখন এই বিপদ হাযির হয়ে যাবে। এজন্য মৃত্যুর প্রস্ত্ততি কেমন হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।

মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততির গুরুত্ব : মৃত্যু এমন এক সাথী যা কখনো সঙ্গ ত্যাগ করে না। যে কোন সময় মৃত্যু সাথে করে নিয়ে চলে যাবে। মৃত্যুর সাথে প্রতিটি জীব একদিন সাক্ষাৎ করবে। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি নিতে বলেছেন। কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا اِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ- ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে ব্যক্তি সফলকাম হবে। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)

তিনি আরও বলেন,أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مَّشَيَّدَةٍ، ‘যেখানেই তোমরা থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর’ (নিসা ৪/৭৮)। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবীকে বলেন,إِنَّكَ مَيِّتٌ وَّإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ ‘নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে’ (যুমার ৩৯/৩০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর শোকাতুর ছাহাবীদের সান্ত্বনা দিয়ে হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) অত্র আয়াতটি পাঠ করেছিলেন’।[1]

একজন মানুষ কোথায় মারা যাবে সে বিষয়েও সে ওয়াকিফহাল নয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করে বলেন, وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ- ‘আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত’ (লোকমান ৩১/৩৪)। তিনি আরও বলেন, فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ ‘অতঃপর যখন সেই মেয়াদকাল এসে যায়, তখন তারা সেখান থেকে এক মুহূর্ত পিছাতেও পারে না, আগাতেও পারে না’ (নাহল ১৬/৬১)

আর এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَىْءٌ ، يُوصِى فِيهِ يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ ، إِلاَّ وَوَصِيَّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ- ‘যে মুসলিমের নিকট অছিয়ত করার মত কোন কিছু আছে, তার জন্য সে অছিয়তনামা তার নিকট লিখিত (প্রস্ত্তত) না রেখে দু’রাত কাটানোও জায়েয নয়। মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় তিন রাত কাটানোর কথা রয়েছে। ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,مَا مَرَّتْ عَلَيَّ لَيْلَةٌ مُنْذُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ذَلِكَ إِلَّا وَعِنْدِي وَصِيَّتِي- ‘আমি যখন থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, তখন থেকে আমার উপর এক রাতও পার হয়নি এমন অবস্থা ছাড়া যে আমার অছিয়তনামা আমার নিকট প্রস্ত্তত আছে’।[2]

আল্লাহ তা‘আলা পরকালীন প্রস্ত্ততির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ- হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর। আর প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ এ বিষয়ে ভেবে দেখা যে, সে আগামী দিনের জন্য কী অগ্রিম প্রেরণ করছে? আর তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত’ (হাশর ৫৯/১৮)। সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,جَاءَ جِبْرِيلُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، عِشْ مَا شِئْتَ فَإِنَّكَ مَيِّتٌ، وَاعْمَلْ مَا شِئْتَ فَإِنَّكَ مَجْزِيٌّ بِهِ، وَأَحْبِبْ مَنْ شِئْتَ فَإِنَّكَ مُفَارِقُهُ، وَاعْلَمْ أَنَّ شَرَفَ الْمُؤْمِنِ قِيَامُ اللَّيْلِ، وَعِزِّهُ اسْتِغْنَاؤُهُ عَنِ النَّاسِ- ‘জিবরীল এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যতদিন খুশী জীবন যাপন কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি মৃত্যুবরণ করবে। যার সাথে খুশী বন্ধুত্ব কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি তাকে ছেড়ে যাবে। যা খুশী তুমি আমল কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি তার ফলাফল পাবে। জেনে রেখ, মুমিনের মর্যাদা হ’ল ইবাদতে রাত্রি জাগরণে এবং তার সম্মান হ’ল মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যে’।[3]

ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা হাত দিয়ে আমার দু’কাঁধ ধরলেন। তারপর বললেন, كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ . وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ: إِذَا أَمْسَيْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ وَمِنْ حياتك لموتك ‘দুনিয়ায় তুমি এমনভাবে থাক যেমন- তুমি একজন অপরিচিত আগন্তুক অথবা পথিক। (এরপর থেকে) ইবনু ওমর (রাঃ) লোকদের বলতেন, সন্ধ্যা হ’লে আর সকালের অপেক্ষা করবে না। আর যখন সকাল হবে, সন্ধ্যার অপেক্ষা করবে না। নিজের সুস্থতার সুযোগ গ্রহণ করবে অসুস্থতার আগে ও জীবনের সুযোগ গ্রহণ করবে মৃত্যুর আগে’।[4]

আমরা যেভাবে মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করব :

১. ফরয ইবাদতসমূহ পালন করা এবং কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা : মৃত্যুর প্রস্ত্ততির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ইসলামের মৌলিক চারটি ইবাদত পালন করা। যেমন ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ ও যাকাত। আর যারা এই আমলের উপর অটল থাকবে, জানতে হবে সে পরকালের প্রস্ত্ততির উপরে আছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدٍ خَيْرًا اسْتَعْمَلَهُ فَقِيلَ: كَيْفَ يَسْتَعْمِلُهُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: يُوَفِّقُهُ لِعَمَلٍ صَالِحٍ قَبْلَ المَوْت- ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন বান্দার কল্যাণ কামনা করেন তখন তাকে ভাল কাজে নিয়োজিত করেন। প্রশ্ন করা হ’ল হে আল্লাহর রাসূল! কিরূপে তার দ্বারা ভাল কাজ করান? তিনি (ছাঃ) বললেন, মৃত্যুর আগে তাকে ভাল কাজ করার তাওফীক দান করেন’।[5]

রাসূল (ছাঃ) বলেন,بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ- ‘পাঁচটি ভিত্তির উপর দ্বীন ইসলাম স্থাপিত- (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। (২) ছালাত প্রতিষ্ঠা করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) বায়তুল্লাহর (কা‘বা গৃহের) হজ্জ করা এবং (৫) রামাযানের ছিয়াম পালন করা’।[6] 

উপরোক্ত ইবাদতগুলো পালনরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে তার পরবর্তী জীবন সুখময় হবে বলে আশা করা যায়। ফরয ইবাদতগুলো যেমন সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে আদায় করতে হবে, তেমনি কবীরা গুনাহগুলো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا- ‘যদি তোমরা কবীরা গোনাহসমূহ হ’তে বিরত থাক, যা থেকে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তাহ’লে আমরা তোমাদের (ছগীরা) গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক গন্তব্যে (জান্নাতে) প্রবেশ করাব’ (নিসা ৪/৩১)। তিনি আরও বলেন, الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ ‘যারা বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কর্মসমূহ হ’তে বেঁচে থাকে ছোটখাট পাপ ব্যতীত, (সে সকল তওবাকারীর জন্য) তোমার প্রতিপালক প্রশস্ত ক্ষমার অধিকারী (আন-নাজম ৫৩/৩২)

২. একনিষ্ঠ তওবা করা : মৃত্যুর আসার পূর্বেই তওবা করতে হবে। কারণ তওবা এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَتُوبُوا إِلَى اللهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার (নূর ২৪/৩১)। তিনি আরও বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। যেদিন আল্লাহ স্বীয় নবী ও তার ঈমানদার সাথীদের লজ্জিত করবেন না (তাহরীম ৬৬/৮)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ ‘গুনাহ হ’তে তওবাকারী ঐ ব্যক্তির মত যার কোন গুনাহ নেই’।[7] অন্য বর্ণনায় এসেছে, অনুশোচনাই হ’ল তওবা’।[8]

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কুরাইশরা নবী করীম (ছাঃ)-কে বলল, তুমি তোমার রবের নিকট দো‘আ কর যেন ছাফা পাহাড়কে আমাদের জন্য স্বর্ণ বানিয়ে দেন, তাহ’লে আমরা তোমার ওপর ঈমান আনব। তিনি বললেন, তোমরা তাই করবে? তারা বলল, হ্যাঁ। ইবনে আববাস বলেন, অতঃপর তিনি দো‘আ করেন, ফলে তার নিকট জিবরীল আগমন করেন ও বলেন, তোমার রব তোমাকে সালাম করেছেন, তিনি বলছেন, যদি তুমি চাও তাহ’লে ছাফা পাহাড়কে তাদের জন্য স্বর্ণ বানিয়ে দিব, অতঃপর যে কুফরী করবে, তাকে আমি এমন আযাব দিব যা দুনিয়ার কাউকে দিব না। যদি চাও আমি তাদের জন্য তওবা ও রহমতের দরজা খুলে দিব। তিনি বলেন, বরং তাদের জন্য তওবা ও রহমতের দরজা খোলা রাখা হৌক’।[9]

রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ، فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ، صُقِلَ قَلْبُهُ، فَإِنْ زَادَ، زَادَتْ، فَذَلِكَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَهُ اللهُ فِي كِتَابِهِ: كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘মুমিন বান্দা যখন গুনাহ করে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। এরপর সে ব্যক্তি তওবা করল ও ক্ষমা চাইল, তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে গেল (কালিমুক্ত হ’ল), আর যদি গুনাহ বেশী হয় তাহ’লে কালো দাগও বেশী হয়। অবশেষে তা তার অন্তরকে ঢেকে ফেলে। এটা সেই মরিচা, যার ব্যাপারে কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, এটা কক্ষনো নয়, বরং তাদের অন্তরের উপর (গুনাহের) মরিচা লেগে গেছে, যা তারা প্রতিনিয়ত উপার্জন করেছে’।[10]

রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন, ‘কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, হে আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, (হে আমার ফেরেশতা)! আমার বান্দা কি জানে, তার একজন রব আছেন? যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেকো) আমি তাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ করল ও বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ কর। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন রব আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন, সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন রব আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক’।[11] অতএব পরকালের প্রস্ত্ততির জন্য তওবা করা একান্ত প্রয়োজন।

৩. বেশী বেশী মৃত্যুকে স্মরণ করা : মৃত্যুর প্রস্ত্ততির জন্য প্রয়োজন অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করা।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَادِمِ اللَّذَّاتِ يَعْنِي الْمَوْتَ فَإِنَّهُ مَا ذَكَرُهُ أَحَدٌ فِي ضِيقٍ إِلَّا وَسَّعَهُ اللهُ وَلَا ذَكَرُهُ فِي سَعَةٍ إِلَّا ضَيَّقَهَا عَلَيْهِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আনন্দ বিনাশকারী বস্ত্ত অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ কর। কারণ যে ব্যক্তি কোন সঙ্কটে তা স্মরণ করবে, সে ব্যক্তির জন্য সে সঙ্কট সহজ হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি তা কোন সুখের সময়ে স্মরণ করবে, সে ব্যক্তির জন্য তা অনুপভোগ্য হয়ে উঠবে’।[12] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَعُدَّ نَفْسَكَ فِي أَصْحَابِ الْقُبُورِ ‘আর তুমি নিজেকে কবরবাসী মনে করবে’।[13] আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, وَاعْدُدْ نَفْسَكَ فِي الْمَوْتَى، وَاذْكُرِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ عِنْدَ كُلِّ حَجَرٍ وَعِنْدَ كُلِّ شَجَرٍ ‘আর তুমি নিজেকে মৃতদের মধ্যে গণ্য করবে। আর প্রত্যেক গাছপালা এবং পাথরের নিকট আল্লাহ্কে স্মরণ করবে’।[14]

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ছিলাম। এমন সময় এক আনছারী ব্যক্তি এসে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ الْمُؤْمِنِينَ أَفْضَلُ؟ قَالَ: أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا ، قَالَ: فَأَيُّ الْمُؤْمِنِينَ أَكْيَسُ؟ قَالَ: أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا، وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا، أُولَئِكَ الْأَكْيَاسُ- ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোন মুমিন সর্বশ্রেষ্ঠ? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের মধ্যে চরিত্রে যে সর্বশ্রেষ্ঠ। ছাহাবী বললেন, কোন মুমিন সবচেয়ে জ্ঞানী? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে বেশী মরণকে স্মরণ করে এবং মরণের পরবর্তীকালের জন্য বেশী ভাল প্রস্ত্ততি নেয়। তারাই হ’ল জ্ঞানী লোক’।[15]

عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ: كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ، ثُمَّ بَدَا لِي فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُرِقُّ الْقَلْبَ وَتُدْمِعُ الْعَيْنَ وَتُذَكِّرُ الْآخِرَةَ فَزُورُوا وَلَا تَقُولُوا هُجْرًا-

আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন আমার নিকট মনে হচ্ছে তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কারণ তা অন্তরকে কোমল করে, চোখকে পানি ঝরাতে উৎসাহিত করে এবং পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত কর এবং অপ্রয়োজনীয় কথা বল না’।[16]

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ اذْكُر المَوْتَ في صَلاَتِكَ فإِنَّ الرَّجُلَ إذا ذَكَرَ المَوْتَ في صَلاَتِهِ لَحَرِيٌّ أنْ يُحْسِنَ صلاتَهُ وَصَلِّ صلاةَ رَجُلٍ لا يَظُنُّ أنَّهُ يُصَلِّي صلاةً غَيْرَها وإِيَّاكَ وكُلَّ أمْرٍ يُعْتَذَرُ مِنْهُ-

আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তুমি তোমার ছালাতে মরণকে স্মরণ কর। কারণ মানুষ যখন তার ছালাতে মরণকে স্মরণ করে, তখন যথার্থই সে তার ছালাত সুন্দর করে। আর তুমি সেই ব্যক্তির মত ছালাত পড়, যে মনে করে না যে, এ ছাড়া সে অন্য ছালাত পড়তে পারবে। তুমি প্রত্যেক সেই কর্ম থেকে দূরে থাক, যা করে তোমাকে (অপরের নিকটে) ক্ষমা চাইতে হয়’।[17]

আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, ‘একদা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন,اسْتَحْيُوا مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ. قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا نَسْتَحْيِي وَالحَمْدُ لِلَّهِ، قَالَ: لَيْسَ ذَاكَ، وَلَكِنَّ الِاسْتِحْيَاءَ مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ أَنْ تَحْفَظَ الرَّأْسَ وَمَا وَعَى، وَالبَطْنَ وَمَا حَوَى، وَلْتَذْكُرِ المَوْتَ وَالبِلَى، وَمَنْ أَرَادَ الآخِرَةَ تَرَكَ زِينَةَ الدُّنْيَا، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ اسْتَحْيَا مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ- ‘তোমরা আল্লাহ্কে যথাযথভাবে লজ্জা কর। সকলে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমরা তো আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ্কে লজ্জা করে থাকি। তিনি বললেন, না, ঐরূপ নয়। আল্লাহ্কে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, মাথা ও তার সংযুক্ত অন্যান্য অঙ্গ (জিহবা, চোখ এবং কান) কে (অবৈধ প্রয়োগ হ’তে) হিফাযত করবে, পেট ও তার সংশ্লিষ্ট অঙ্গ (লিঙ্গ, হাত, পা ও হৃদয়) কে (তাঁর অবাধ্যাচরণ ও হারাম হ’তে) হেফাযত করবে এবং মরণ ও তার পর হাড় মাটি হয়ে যাওয়ার কথা (সর্বদা) স্মরণে রাখবে। আর যে ব্যক্তি পরকাল (ও তার সুখময় জীবন) পাওয়ার ইচ্ছা রাখে, সে ইহকালের সৌন্দর্য পরিহার করবে। যে ব্যক্তি এ সব কিছু করে, সেই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্কে যথাযথভাবে লজ্জা করে’।[18]

عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اثْنَتَانِ يَكْرَهُهُمَا ابْنُ آدَمَ الْمَوْتُ وَالْمَوْتُ خَيْرٌ لِلْمُؤْمِنِ مِنْ الْفِتْنَةِ وَيَكْرَهُ قِلَّةَ الْمَالِ وَقِلَّةُ الْمَالِ أَقَلُّ لِلْحِسَاب-

মাহমূদ ইবনে লাবীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আদম সন্তান দু’টি জিনিসকে অপসন্দ করে। সে মৃত্যুকে অপসন্দ করে অথচ মু’মিনের পক্ষে ফিৎনায় পতিত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু অনেক উত্তম। আর সে মাল-সম্পদের স্বল্পতাকে অপসন্দ করে অথচ মালের স্বল্পতায় (পরকালে) হিসাব-নিকাশ কম হয়’।[19]

আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, مَنْ أَكْثَرَ مِنْ ذِكْرِ الْمَوْتِ قَلَّ حَسَدُهُ وَقَلَّ فَرَحُهُ ‘যে ব্যক্তি অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করবে তার হিংসা-বিদ্বেষ কমে যাবে এবং আনন্দ খুশী কমে যাবে’।[20]

দাক্বাক্ব (রহঃ) বলেন, من أكثر من ذكر الموت أكرم بثلاثة أشياء: تعجيل التوبة وقناعة القلب، ونشاط العبادة. ومن نسي الموت عوقب بثلاثة أشياء: تسويف التوبة، وترك الرضى بالكفاف، والتكاسل في العبادة، فتفكر يا مغرور في الموت وسكرته- ‘যে ব্যক্তি অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করবে তাকে তিনটি বস্ত্ত দ্বারা সম্মানিত করা হবে, ১. দ্রুত তওবা করার সুযোগ প্রদান ২. অন্তরে পরিতৃপ্তি দান ও ৩. ইবাদতে উদ্যমতা। আর যে মৃত্যুকে ভুলে যাবে তাকে তিনটি বস্ত্ত দ্বারা শাস্তি দেওয়া হবে, ১. তওবায় বিলম্বতা ২. অল্পে অতুষ্টি ও ৩. ইবাদতে অনিহা। অতএব হে মৃত্যু ও মৃত্যু যন্ত্রনা সম্পর্কে প্রতারিত ব্যক্তি একটু চিন্তা করে দেখ’।[21]

৪. অধিকহারে কবরের আযব ও পরকালকে স্মরণ : মৃত্যুর প্রস্ত্ততির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হ’ল কবরের আযাব বা বারযাখী জীবনকে স্মরণ করা। সাথে পরকালীন সুখময় জীবন বা দুর্বিষহ জীবনকে স্মরণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللهُ مَا يَشَاءُ ‘আল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্য দ্বারা মযবূত রাখেন ইহকালে ও পরকালে এবং যালেমদের পথভ্রষ্ট করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যা চান তাই করেন (ইবরাহীম ১৪/২৭)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সেদিন তোমাদেরকে (আল্লাহর সামনে) পেশ করা হবে এবং তোমাদের থেকে কোনকিছুই গোপন থাকবে না। অতঃপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, এসো তোমরা আমার আমলনামা পড়ে দেখ! আমি নিশ্চিতভাবে জানতাম যে, আমি অবশ্যই হিসাবের সম্মুখীন হব। অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে সুউচ্চ জান্নাতে। যার ফলসমূহ থাকবে নাগালের মধ্যে। (বলা হবে) খুশী মনে খাও ও পান কর বিগত দিনে যেসব সৎকর্ম তোমরা অগ্রিম প্রেরণ করেছিলে, তার প্রতিদান হিসাবে। পক্ষান্তরে যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! যদি আমাকে এ আমলনামা না দেওয়া হ’ত! যদি আমি আমার হিসাব না জানতাম! হায়! মৃত্যুই যদি আমার শেষ পরিণতি হ’ত! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজে আসল না। আমার ক্ষমতা বরবাদ হয়ে গেছে। অতঃপর জাহান্নামে প্রবেশ করাও ওকে। অতঃপর সত্তর হাত লম্বা শিকলে পেঁচিয়ে বাঁধা ওকে। সে মহান আল্লাহ্তে বিশ্বাসী ছিল না। সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহ প্রদান করত না। অতএব আজকে এখানে তার কোন বন্ধু নেই। আর তার জন্য কোন খাদ্য নেই দেহ নিঃসৃত পুঁজ-রক্ত ব্যতীত। যা কেউ খাবে না পাপীরা ব্যতীত’ (হাক্কাহ ৬৯/১৮-৩৭)

ওছমান বিন আফফান (রাঃ) যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এত কাঁদতেন যে, চোখের পানিতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। কেউ তাঁকে বলল,تَذْكُرُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ وَلاَ تَبْكِي وَتَبْكِي مِنْ هَذَا ؟ قَالَ : إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنَازِلِ الآخِرَةِ فَإِنْ نَجَا مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ منْهُ قَالَ : وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ إِلاَّ وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ- ‘জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনাকালে আপনি তো কাঁদেন না, আর এই কবর দেখে এত কাঁদছেন? উত্তরে তিনি বললেন, যেহেতু আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, পরকালের (পথের) মনযিলসমূহের প্রথম মনযিল হ’ল কবর। সুতরাং যে ব্যক্তি এ মনযিলে নিরাপত্তা লাভ করে তার জন্য পরবর্তী মনযিলসমূহ অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে যায়। আর যদি সে এখানে নিরাপত্তা লাভ না করতে পারে তবে তার পরবর্তী মনযিলগুলো আরও কঠিনতর হয়। আর তিনি একথাও বলেছেন যে, আমি যত দৃশ্যই দেখেছি, সে সবের চেয়ে অধিক বিভীষিকাময় হ’ল কবর’।[22]

রাসূল (ছাঃ) আযাবের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, ‘বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সঙ্গীগণ (আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব) সেখান থেকে চলে আসে, আর তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। তার নিকট (কবরে) দু’জন ফেরেশতা পৌঁছেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, তুমি দুনিয়াতে এই ব্যক্তির (মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর) ব্যাপারে কী জান? এ প্রশ্নের উত্তরে মুমিন বান্দা বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) নিঃসন্দেহে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, ঐ দেখে নাও, তোমার ঠিকানা জাহান্নাম কিরূপ (জঘন্য) ছিল। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তোমার সে ঠিকানা (জাহান্নামকে) জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে বান্দা দু’টি ঠিকানা (জান্নাত-জাহান্নাম) একই সঙ্গে দেখবে। কিন্তু মুনাফিক ও কাফিরকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, দুনিয়াতে এ ব্যক্তি তথা মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে তুমি কী ধারণা পোষণ করতে? তখন সে উত্তর দেয়, আমি বলতে পারি না (প্রকৃত সত্য কী ছিল)। মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হয়, তুমি বিবেক-বুদ্ধি দিয়েও বুঝতে চেষ্টা করনি এবং (আল্লাহর কুরআন) পড়েও জানতে চেষ্টা করনি। এ কথা বলে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে কঠিনভাবে মারতে থাকে, এতে সে তখন উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে। এ চিৎকারের শব্দ (পৃথিবীর) জিন আর মানুষ ছাড়া নিকটস্থ সকলেই শুনতে পায়’।[23]

অন্য বর্ণনায় এসেছে,فَيُقَالُ لِلْأَرْضِ: الْتَئِمِي عَلَيْهِ، فَتَلْتَئِمُ عَلَيْهِ فَتَخْتَلِفُ أَضْلَاعُهُ، فَلَا يَزَالُ فِيهَا مُعَذَّبًا حَتَّى يَبْعَثَهُ اللهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ- ‘অতঃপর যমীনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও। সুতরাং যন তার উপর এমনভাবে চেপে যাবে, যাতে তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে। কবরে সে এভাবে আযাব ভোগ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবর থেকে না উঠাবেন’।[24]

তিনি আরও বলেন, إِنَّ هَذِهِ الْأُمَّةَ تُبْتَلَى فِي قُبُورِهَا، فَلَوْلَا أَنْ لَا تَدَافَنُوا، لَدَعَوْتُ اللهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِي أَسْمَعُ مِنْهُ- ‘এ উম্মাত তথা কবরবাসীরা তাদের কবরে পরীক্ষায় পড়েছে (শাস্তির কবলে পড়েছে)। তোমরা মানুষকে ভয়ে কবর দেয়া ছেড়ে দিবে (এ আশংকা না থাকলে) আমি আল্লাহর কাছে দো‘আ করতাম, তিনি যেন তোমাদেরকেও কবরের আযাব শুনান, যে কবরের আযাব আমি শুনতে পাচ্ছি’।[25]

(ক্রমশঃ)

-আব্দুর রহীম

[লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।]


[1]. বুখারী হা/৩৬৬৮।

[2]. বুখারী হা/২৭৩৮; মুসলিম হা/১৬২৭; মিশকাত হা/৩০৭০।

[3]. ছহীহাহ হা/৮৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩।

[4]. বুখারী হা/৬৪১৬; মিশকাত হা/১৬০৪।

[5]. ছহীহুত তারগীব হা/৩৩৫৭।

[6]. বুখারী হা/৮; মিশকাত হা/৩-৪।

[7]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৮।

[8]. ছহীহুল জামে‘ হা/৬৮০৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৪৬।

[9]. আহমাদ হা/২১৬৬; ছহীহাহ হা/৩৩৮৮।

[10]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৪১।

[11]. বুখারী হা/৭৫০৭; মুসলিম হা/২৭৫৮; মিশকাত হা/২৩৩৩।

[12]. তাবারানী আওসাতব হা/৮৫৬০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৩৩৩।

[13]. ছহীহুত তারগীব হা/৩৩৪১।

[14]. ছহীহুত তারগীব হা/৩১৫৯; ছহীহাহ হা/১৪৭৫।

[15]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯; ছহীহাহ হা/১৩৮৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩৩৩৫।

[16]. আহমাদ হা/১৩৫১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫৮৪।

[17]. ছহীহাহ হা/১৪২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৮৪৯।

[18]. তিরিমিযী হা/২৪৫৮; ছহীহুত তারগীব হা/১৭২৪,২৬৩৮,৩৩৩৭; মিশকাত হা/১৬০৮।

[19]. আহমাদ হা/২৩৬৭৪; মিশকাত হা/৫২৫১; ছহীহাহ হা/৮১৩।

[20]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৪৫৮৩।

[21]. কুরতুবী, আত-তাযকিরাহ ১/১২৬।

[22]. আহমাদ হা/৪৫৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩৫৫০।

[23]. বুখারী হা/১৩৭৪; মিশকাত হা/১২৬।

[24]. তিরমিযী হা/১০৭১; মিশকাত হা/১৩০; ছহীহাহ হা/১৩৯১।

[25]. মুসলিম হা/২৮৬৭; মিশকাত হা/১২৯।



বিষয়সমূহ: মৃত্যু
আরও