ফযীলতপূর্ণ আমলসমূহ (২য় কিস্তি)

মুহাম্মাদ আবুল কালাম 1104 বার পঠিত

৯. ফরয ছালাতের ফযীলত :

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম হ’ল ছালাত। ছালাত বান্দাকে তাক্বওয়াশীল করে গড়ে তোলে। আত্মশুদ্ধি অর্জনের বড় মাধ্যম ছালাত। বান্দাকে পাপের কাজ থেকে বিরত রাখে ছালাত। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ (আনকাবুত ২৯/৪৫)। ছালাতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিভিন্ন হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীছ নিম্নে পেশ করা হ’ল-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ لَمَّا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত এক জুম‘আ হ’তে পরবর্তী জুম‘আ এবং এক রামাযান হ’তে পরবর্তী রামাযান মধ্যকার যাবতীয় (ছগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, যদি সে কবীরা গোনাহসমুহ হ’তে বিরত থাকে যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না’।[1]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ قَالَ فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কারু ঘরের সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোন ময়লা বাকী থাকে কি? তারা বললেন, না পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন’।[2]

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللَّهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ، كَانَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ، وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ، وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ-

উবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) হ’তে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যেগুলিকে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের উপরে ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি এগুলির জন্য সুন্দরভাবে ওযূ করবে, ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করবে, রুকূ ও খুশু-খুযু পূর্ণ করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এগুলি করবে না, তার জন্য আল্লাহর কোন অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন তিনি ইচ্ছা করলে মাফ করতে পারেন’।[3]

عَنْ عُمَارَةَ بْنِ رُوَيْبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا يَعْنِي الْفَجْرَ وَالْعَصْرَ-

ওমারাহ ইবনু রুআয়বাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এমন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্য উঠার ও ডোবার আগে ছালাত আদায় করেছে, অর্থাৎ ফজর ও আছরের ছালাত’।[4]

عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ-

আবু মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা সময়ের ছালাত (অর্থাৎ) ফজর ও আছরের ছালাত) আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[5]

 عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْجَبُ رَبُّكَ مِنْ رَاعِي غَنَمٍ فِي رَأْسِ شَظِيَّةٍ لِلْجَبَلِ يُؤَذِّنُ بِالصَّلَاةِ وَيُصَلِّي، فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوا إِلَى عَبْدِي هَذَا، يُؤَذِّنُ وَيُقِيمُ الصَّلَاةَ، يَخَافُ مِنِّي، قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِي، وَأَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ-

উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রভু অত্যন্ত খুশী হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি যে পর্বতশিখরে দাঁড়িয়ে ছালাতের আযান দেয় এবং ছালাত আদায় করে এবং আমাকে ভয় করে। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করালাম’।[6]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ، فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي؟ فَيَقُولُونَ: تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ، وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের মাঝে রাতে একদল ও দিনে একদল ফেরেশতা আগমন করেন। দিবস ও রাত্রির ফেরেশতারা ফজর ও আছর ছালাতের সময় একত্রিত হয়। রাতের ফেরেশতারা আসমানে উঠে গেলে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এলে? যদিও তিনি সবকিছু অবগত। তখন ফেরেশতারা বলে যে, আমরা তাদেরকে পেয়েছিলাম (আছরের) ছালাত অবস্থায়’।[7]

১০. মসজিদে ছালাতের ফযীলত :

আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তর স্থান হ’ল মসজিদ’।[8] আললাহর বান্দাহগণ ছালাতের জন্য দিনে রাতে পাঁচবার সমবেত হয় মসজিদে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরীব, ছোট-বড়, সাদা-কালো সকল ভেদাভেদ ভুলে পায়ের সাথে পা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয় একই কাতারে একই সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে মশগুল থাকেন। ফলে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃদৃঢ় হয়। সামাজিক বন্ধন মযবুত হয় এবং নেকীর ঝুড়িও সমৃদ্ধ হয়। এ সম্পর্কিত হাদীছসমূহ নিম্নরূপ-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ أَوْ رَاحَ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُ نُزُلَهُ مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত) মসজিদ যাতায়াত করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্ত্তত রাখেন’।[9]

عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْظَمُ النَّاسِ أَجْرًا فِي الصَّلَاةِ، أَبْعَدُهُمْ فَأَبْعَدُهُمْ مَمْشًى، وَالَّذِي يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ حَتَّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الْإِمَامِ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنَ الَّذِي يُصَلِّي ثُمَّ يَنَامُ-

আবু মূসা আল আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘সবচেয়ে বেশী নেকী পান ঐ ব্যক্তি যিনি সবচেয়ে দূর থেকে মসজিদে আসেন। আর যে ব্যক্তি আগে এসে ইমামের সাথে ছালাত আদায় করার জন্য অপেক্ষায় থাকেন, তার নেকী সে ব্যক্তির চেয়ে বেশী হবে, যে একাকী ছালাত আদায় করে’।[10]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلَاةَ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً-

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘একা একা ছালাত আদায় করার চেয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে তা সাতশত গুণ ছওয়াব বেশী হয়’।[11] অন্যত্র হাদীছে বলা হয়েছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةُ الرَّجُلِ فِي الْجَمَاعَةِ تُضَعَّفُ عَلَى صَلَاتِهِ فِي بَيْتِهِ وَفِي سُوقِهِ خَمْسًا وَعِشْرِينَ ضِعْفًا وَذَلِكَ أَنَّهُ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا الصَّلَاةُ، لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلَّا رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ فَإِذَا صَلَّى، لَمْ تَزَلِ الْمَلَائِكَةُ تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا دَامَ فِي مُصَلَّاهُ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ وَلَا يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلَاةَ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَتِ الصَّلَاةُ تَحْبِسُهُ وَزَادَ فِي دُعَاءِ الْمَلَائِكَةِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তির জামা‘আতের সাথে ছালাতের ছওয়াব, তার নিজের ঘরে ও বাযারে আদায়কৃত ছালাতের ছওয়াবের চেয়ে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর কারণ এই যে, যখন উত্তমরূপে ওযু করলো। অতঃপর একমাত্র ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাবে তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। ছালাত আদায়ের পর যতক্ষণ নিজ ছালাতের স্থানে থাক, ফেরেশতা তার জন্য এ বলে দো‘আ করতে থাকেন, হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন। আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ ছালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ সে ছালাতে রত বলে গণ্য হয়’।[12]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ أَعْمَى، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ! إِنَّهُ لَيْسَ لِي قَائِدٌ يَقُودُنِي إِلَى الْمَسْجِدِ، فَسَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُرَخِّصَ لَهُ فَيُصَلِّيَ فِي بَيْتِهِ، فَرَخَّصَ لَهُ، فَلَمَّا وَلَّى دَعَاهُ، فَقَالَ هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ؟ قَالَ نَعَمْ، قَالَ فَأَجِبْ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে একজন অন্ধ লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কোন চালক নেই যে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। তিনি রাসূলের নিকট আবেদন করলেন তাকে যেন ঘরে ছালাত আদায়ের অবকাশ দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অবকাশ দিলেন। সে ফিরে চলে যাওয়া মাত্রই তিনি আবার তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি কি ছালাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললন, হ্যাঁ; নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তবে অবশ্যই আযানের সাড়া দিবে (অর্থ্যাৎ নিজেকে জামা‘আতে শরীক করবে)’।[13]

ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে যে সাতশ্রেণীর লোক আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হ’ল وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالْمَسْجِدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتَّى يَعُودَ إِلَيْهِ، ‘ঐ সকল ব্যক্তি যাদের অন্তর মসজিদের সাথে লটকানো থাকে। যখনই বের হয়, পুনরায় ফিরে আসে’।[14]

১১. জুম‘আর ছালাতের ফযীলত :

জুম‘আর দিনের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। এদিন আল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে মহিমান্বিত। এ দিনে দো‘আ কবুলের একটা বিশেষ সময় রয়েছে। যখন বান্দার যে কোন সঙ্গত প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন। এ সম্পর্কিত হাদীছসমূহ নিম্নরূপ-

 عَنْ أَبِي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَيِّدُ الْأَيَّامِ وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللَّهِ، وَهُوَ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ يَوْمِ الْأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ، فِيهِ خَمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللَّهُ فِيهِ آدَمَ، وَأَهْبَطَ اللَّهُ فِيهِ آدَمُ إِلَى الْأَرْضِ، وَفِيهِ تَوَفَّى اللَّهُ آدَمَ، وَفِيهِ سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ الْعَبْدُ فِيهَا شَيْئًا إِلَّا أَعْطَاهُ، مَا لَمْ يَسْأَلْ حَرَامًا، وَفِيهِ تَقُومُ السَّاعَةُ، مَا مِنْ مَلَكٍ مُقَرَّبٍ وَلَا سَمَاءٍ وَلَا أَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَحْرٍ إِلَّا هُوَ مُشْفِقٌ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ-

লুবাবা ইবনু আব্দুল মুনযির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘জুম‘আর দিন’ সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে মহিমান্বিত। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে। (১) আল্লাহ এ দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। (২) এদিন তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয়। (৩) এ দিনে তার মৃত্যু হয়। (৪) এ দিনে এমন একটা সময় আছে যখন বান্দা হারাম জিনিস ছাড়া ন্যায় সঙ্গত প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতাগণ, আকাশ, পৃথিবী, বায়ু, পাহাড় সমূহ সবই (ক্বিয়ামত হবার ভয়ে) এদিনকে ভয় করে’।[15]

عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلَا يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الْإِمَامُ، إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى-

হযরত সালমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করে, যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হ’তে ব্যবহার করে বা নিজের সুগন্ধি ব্যবহার করে। অতঃপর মসজিদের দিকে রওনা হয়। দু’ব্যক্তির মধ্যে ফাঁক করে না। অতঃপর তার নির্ধারিত ছালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে। তাহ’লে তার এক জুম‘আ হ’তে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত যাবতীয় গুনাহ মাফ করা হয়’।[16]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنِ اغْتَسَلَ، ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ، ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ، ثُمَّ يُصَلِّيَ مَعَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى، وَفَضْلُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি গোসল করে জুম‘আর ছালাত আদায় করতে এসেছে ও সাধ্যমত ছালাত আদায় করেছে। চুপচাপ ইমামের খুৎবা শ্রবণ করেছে। এরপর ইমামের সাথে জামা‘আতে ছালাত আদায় করেছে। তাহ’লে তার এ জুম‘আ হ’তে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত এবং আরও তিনদিনের গুনাহ মাফ করা হবে’।[17]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ، وَقَفَتِ الْمَلَائِكَةُ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ، يَكْتُبُونَ الْأَوَّلَ فَالْأَوَّلَ، وَمَثَلُ الْمُهَجِّرِ كَمَثَلِ الَّذِي يُهْدِي بَدَنَةً، ثُمَّ كَالَّذِي يُهْدِي بَقَرَةً، ثُمَّ كَبْشًا، ثُمَّ دَجَاجَةً، ثُمَّ بَيْضَةً، فَإِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ طَوَوْا صُحُفَهُمْ، وَيَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন জুম‘আর দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে পূর্বে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার পূর্বে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। অতঃপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি দুম্বা কুরবানী করে। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী কুরবানী ও তার পরবর্তীগণ ডিম কুরবানীর সমান নেকী পায়। অতঃপর খত্বীব দাঁড়িয়ে গেলে ফেরেশতাগণ দফতর গুটিয়ে ফেলে ও খুৎবা শুনতে থাকেন’।[18]

عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ، وَبَكَّرَ وَابْتَكَرَ وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ، وَدَنَا مِنَ الْإِمَامِ، وَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ، كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ: أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا-

আওস ইবনু আওস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করাবে এবং নিজে গোসল করবে, অতঃপর সকাল সকাল প্রস্ত্ততি নিবে এবং সকালে মসজিদে যাবে এবং আরোহণ না করে পায়ে হেঁটে যাবে আর মসজিদে গিয়ে ইমামের নিকটে বসবে। অতঃপর চুপ করে তার খুৎবা শুনবে এবং অনর্থক কিছু করবে না। তার প্রত্যেক কদমে এক বছরের ছিয়াম পালন এবং তাহাজ্জুদ পড়ার নেকী হবে’।[19]

عَنْ أَبِي الْجَعْدِ الضُّمَيْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَرَكَ ثَلَاثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا، طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ-

আবুল জা‘দ যুমায়রী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অবহেলাবশত তিন জুমু‘আর ছালাত ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দেন’।[20]

১২. ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ ছালাতের ফযীলত :

রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ নাম পরিচিত। রামাযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে ‘তারাবীহ’ এবং রামাযান ও অন্যান্য সময়ে শেষরাতে পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয়।

উল্লেখ্য যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামে রামাযান, ক্বিয়ামুল লায়েল সবকিছু এক কথায় ‘ছালাতুল লায়েল’ বা ‘রাত্রির নফল ছালাত’ বলা হয়।[21] এ সম্পর্কিত হাদীছগুলি নিম্নরূপ-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ، يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ؟ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ؟ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমাদের আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতেই এই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন, যখন রাত্রি শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে এবং বলতে থাকেন, কে আছ, যে আমায় ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আছ, যে আমার নিকট কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব এবং কে আছ, যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব’।[22]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحِمَ اللَّهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى، وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّتْ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ رَحِمَ اللَّهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَصَلَّى، فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِي وَجْهِهِ الْمَاءَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করুন, যে ব্যক্তি রাতে উঠে ছালাত আদায় করে এবং আপন স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয় এবং সেও ছালাত আদায় করেছে, আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়েছে। এরূপে আল্লাহ অনুগ্রহ বর্ষণ করুন সে স্ত্রীলোকের প্রতি, যে রাতে উঠে ছালাত আদায় করেছে এবং আপন স্বামীকেও জাগিয়ে দিয়েছে এবং সেও ছালাত আদায় করেছে। আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়’।[23]

عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ رِضَى اللَّهِ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ غُرَفًا، يُرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا، وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرِهَا أَعَدَّهَا اللَّهُ لِمَنْ أَلَانَ الْكَلَامَ، وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ، وَتَابَعَ الصِّيَامَ، وَصَلَّى بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ-

আবু মালেক আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে এমন সব বালাখানা আছে, যার বাহিরের জিনিসসমূহ ভিতর হ’তে এবং ভিতরের জিনিস সমূহ বাহির হ’তে দেখা যায়। সে সকল বালাখানা আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তির জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন, যে ব্যক্তি নরম কথা বলে, আহার্য দান করে, পর পর ছিয়াম পালন এবং রাতে ছালাত আদায় করে অথচ মানুষ তখন ঘুমে থাকে’।[24]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ عَلَى كُلِّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللَّهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ، كَسْلَانَ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন শয়তান তার মাথার পিছনে তিনটি গিরা লাগায়। প্রত্যেক গিরার সময় এ কথা বলে কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখনো রাত অনেক রয়ে গেছে, কাজেই ঘুমিয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর যদি সে ওযু করে তবে দ্বিতীয় গিরাও খুলে যায়। অতঃপর যদি সে ছালাত আদায় করে তবে তৃতীয় গিরাও খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষ অন্তর ও অলস্য সহকারে’।[25]

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ فِي اللَّيْلِ لَسَاعَةً، لَا يُوَافِقُهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ، يَسْأَلُ اللَّهَ فِيهَا خَيْرًا مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ، وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ-

জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছিলেন, রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যদি কোন মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের কোন কল্যাণ চায়, আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দেন। আর এই মুহূর্তটি প্রত্যেক রাতেই আছে’।[26]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمِ، وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘রামাযান মাসের ছিয়ামের পরে সর্বোত্তম ছিয়াম হ’ল মুহাররম মাসের (আশুরার) ছিয়াম। আর ফরয ছালাতের পরে সর্বোত্তম ছালাত হ’ল রাত্রির (নফল) ছালাত’।[27]

‘তারাবীহ’-এর ছালাতের ফযীলত :

তারাবীহ ছালাতের ফযীলত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لِرَمَضَانَ مَنْ قَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রামাযানের রাত্রিতে ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রাত্রির ছালাত (আদায়) করে, তার বিগত সকল গুনাহ মাফ করা হয়’।[28]

১৩. জানাযার ছালাতের ফযীলত :

প্রত্যেক মুসলিমের উপর জানাযার ছালাত ‘ফরযে কেফায়াহ’। অর্থাৎ মুসলমানদের কেউ জানাযা পড়লে উক্ত ফরয আদায় হয়ে যাবে। অন্যথায় না পড়লে সবাই দায়ী হবে। এক মুমিনের উপর আরেক মুমিনের অধিকার হ’ল কেউ মারা গেলে তার জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ করা’।[29] সুতরাং জানাযার ছালাত অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ যা আদায়কারীর জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অত্যন্ত চমকপ্রদ ফযীলত বর্ণনা করেছেন। যা নিম্নরূপ :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ مُسْلِمٍ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، وَكَانَ مَعَهُ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا، وَيُفْرَغَ مِنْ دَفْنِهَا، فَإِنَّهُ يَرْجِعُ مِنَ الْأَجْرِ بِقِيرَاطَيْنِ، كُلُّ قِيرَاطٍ مِثْلُ أُحُدٍ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ رَجَعَ قَبْلَ أَنْ تُدْفَنَ فَإِنَّهُ يَرْجِعُ بِقِيرَاطٍ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় কোন মুসলমানের জানাযায় গেল এবং জানাযার পড়া পর্যন্ত থাকল, অতঃপর তাকে দাফন করল, সে দু’ক্বিরাত নেকী নিয়ে বাড়ী ফিরল। আর প্রত্যেক ক্বিরাত হচ্ছে ওহূদ পাহাড় সমপরিমাণ। তারপর যে ব্যক্তি জানাযার ছালাত আদায় করল, অতঃপর দাফন করার পূর্বে বাড়ী ফিরল, সে এক ক্বিরাত নেকী নিয়ে বাড়ী প্রত্যাবর্তন করল’।[30]

১৪. ইশরাক্ব ও চাশতের ছালাতের ফযীলত :

শুরুক অর্থ উদিত হওয়া। ‘ইশরাক’ অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যোহা’ অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে একে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়। এই ছালাত বাড়ীতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন।[31] এ ছালাত অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। এ সম্পর্কিত হাদীছগুলি নিম্নরূপ-

 عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الْفَجْرَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ-

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতের সাথে পড়েছে, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকর করে, অতঃপর দু’রাক‘আত নফল ছালাত পড়ে, তার জন্য হজ্জ ও ওমরাহর ছওয়াবের ন্যায় ছওয়াব আছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (অর্থাৎ পূর্ণ হজ্জ ও ওমরাহর)’।[32]

عَنْ بُرَيْدَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي الْإِنْسَانِ ثَلَاثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصِلًا، فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ بِصَدَقَةٍ، قَالُوا وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ؟ قَالَ النُّخَاعَةُ فِي الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا، وَالشَّيْءُ تُنَحِّيهِ عَنِ الطَّرِيقِ، فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ-

বুরায়দা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের মধ্যে তিনশত ষাটটি গ্রন্থি আছে। সুতরাং তার পক্ষে প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে একটি ছাদাক্বাহ করা আবশ্যক। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর নবী! এ সাধ্য কার আছে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উত্তর করলেন, মসজিদে থুথু দেখলে তা মুছে দাও এবং কষ্টদায়ক বস্ত্ত রাস্তায় দেখলে তা দূর করে দাও। এটাই হবে তোমার জন্য ছাদাক্বাহ। যদি এই কাজগুলি করার সুযোগ না পাও, তবে চাশতের দু’রাক‘আত ছালাত তোমার জন্য যথেষ্ট হবে’।[33]

عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى-

আবু যার গিফারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রভাত হওয়া মাত্রই তোমাদের প্রত্যেকের প্রত্যেক গ্রন্থির জন্যই একটি ছাদাক্বাহ করা আবশ্যক হয়। তবে তোমাদের প্রত্যেক তাসবীহই একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাহমীদই একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাহলীলই একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাকবীরই একটি ছাদাক্বাহ এবং সৎ কাজের আদেশ একটি ছাদাক্বাহ এবং অসৎ কাজে নিষেধও ছাদাক্বাহ বিশেষ। অবশ্য চাশতের সময়ে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা এগুলির পরিবর্তে যথেষ্ট’।[34]      (ক্রমশ)

 [লেখক : কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ ]



[1]. মুসলিম হা/২৩৩; মিশকাত হা/ ৫৬৪।

[2]. বুখারী হা/৫২৮; মুসলিম হা/৬৬৭; মিশকাত হা/৫৬৫।

[3]. আহমাদ, আবু দাঊদ, মালেক, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৭০।

[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/ ৬২৪।

[5]. বুখারী হা/ ৫৭৪; মিশকাত হা/৬২৫।

[6]. আবু দাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৬৬৫।

[7]. বুখারী হা/৫৫; মিশকাত হা/৬২৬।

[8]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৬।

[9]. বুখারী হা/৬৬২; মিশকাত হা/৬৯৮।

[10]. বুখারী হা/৬৫১; মিশকাত হা/৬৯৯।

[11]. বুখারী হা/৬৪৫; মিশকাত হা/১০৫২।

[12]. বুখারী হা/৬৪৭; মিশকাত হা/৭০২।

[13]. মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৪।

[14]. বুখারী হা/৬৬০; মিশকাত হা/৭০১।

[15]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩৬৩।

[16]. বুখারী হা/৮৮৩; মিশকাত হা/১৩৮১।

[17]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৮২।

[18]. বুখারী হা/৯২৯; মিশকাত হা/১৩৮৪।

[19]. তিরমিযী, আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩৮৮।

[20]. তিরমিযী, আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩৭১।

[21]. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ.১৭১-১৭২।

[22]. বুখারী হা/১১৪৫; মিশকাত হা/১২২৩।

[23]. আবু দাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১২৩০।

[24]. বায়হাক্বী শুয়াবুল ঈমান, মিশকাত হা/১২৩২।

[25]. বুখারী হা/১১৪২,৩২৬৯; মিশকাত হা/১২১৯।

[26]. মুসলিম, মিশকাত হা/১২২৪।

[27]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৯।

[28]. বুখারী হা/৩৭, ২০০৮; মুসলিম হা/১৭৩; মিশকাত হা/১২৯৬।

[29]. নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪০৬০।

[30]. বুখারী হা/৪৭; মিশকাত হা/ ১৬৫১।

[31]. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৫৪ পৃঃ।

[32]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৭১।

[33]. আবু দাঊদ হা/৫২৪২; মিশকাত হা/১৩১৫।

[34]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১১।



বিষয়সমূহ: আমল
আরও