ছালাতে আমীন বলা : একটি পর্যালোচনা

আহমাদুল্লাহ 1562 বার পঠিত

ভূমিকা : ছালাতে নীরবে আমীন নাকি সরবে আমীন। এ নিয়ে বাক-বিতন্ডার, বাহাছ-মুনাযারার শেষ নেই। এমনকি সরবে আমীন বলার কারণে মসজিদ ভাঙ্গা, মসজিদ হ’তে বের করে দেয়া, মারধর করা, সমাজে একঘরে করা ইত্যাদি ন্যাক্কারজনক নির্যাতনও চালানো হয়। যা আদৌ কাম্য নয়। নিম্নে আমরা ছালাতে নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে সকল দলীল পেশ করা হয়, সেগুলির পর্যালোচনা উপস্থাপন করব। আশা করি সত্য পিয়াসী মুমিনদের জন্য প্রবন্ধটি সহায়ক হবে ইনশাল্লাহ।

আমীন আস্তে বলার পক্ষে বর্ণিত রেওয়ায়াত সমূহ :

নিম্নে আমীন আস্তে বলার পক্ষে যে সকল দলীলসমূহ পেশ করা হয়, তা বিবৃত হ’ল এবং তার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা উপস্থাপিত হ’ল।

বর্ণনা-১ :

 حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ قَالَ سَمِعْتُ عَلْقَمَةَ يُحَدِّثُ عَنْ وَائِلٍ أَوْ سَمِعَهُ حُجْرٌ، مِنْ وَائِلٍ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا قَرَأَ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ قَالَ آمِينَ وَأَخْفَى بِهَا صَوْتَهُ-

ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত পড়লেন। যখন তিনি غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ বলেন, তখন আমীন বলেন। আর আমীন বলার আওয়াযকে তিনি নিমণ করলেন’।[1]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি মুযত্বারিব।

(১) শায়েখ আলী যাঈ (রহঃ) একে মুযত্বারিব বলেছেন নিমাবীর বরাতে’।[2]

(২) মুসনাদে আহমাদের টীকাকারগণ বলেছেন, حديث صحيح دون قوله: وأخفى بها صوةه، فقد أخطأ فيها شعبة ‘তিনি আমীনের আওয়াযকে নিমণ করলেন’ কথাটি ব্যতীত হাদীছটি ছহীহ। শুবাহ এখানে ভুল করেছেন’।[3]

(৩) ইমাম তিরমিযী বলেছেন,سَمِعْت مُحَمَّدًا يَقُولُ حَدِيثُ سُفْيَانَ أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ شُعْبَةَ فِي هَذَا وَأَخْطَأَ شُعْبَةُ فِي مَوَاضِعَ مِنْ هَذَا الحَدِيثِ ‘আমি মুহাম্মাদ (ইমাম বুখারীকে) বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, এই ক্ষেত্রে শুবার চাইতে সুফিয়ানের হাদীছটি অধিক ছহীহ। আর শুবাহ এই হাদীছে একাধিক ভুল করেছেন’।[4]

(৪) ত্বারহুছ তাছরীব গ্রন্থে আছে,وَأَمَّا رِوَايَةُ شُعْبَةَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ فَهِيَ خَطَأٌ ‘তিনি তার শব্দকে নিম্ন করলেন’ শুবার বর্ণিত এই হাদীছে থাকা অত্র বাক্যটি ভুল’।[5] (৫) ইমাম শাওকানী বলেছেন,وَقَدْ أُعِلَّتْ بِاضْطِرَابِ شُعْبَةَ فِي إسْنَادِهَا وَمَتْنِهَا وَرَوَاهَا سُفْيَانُ وَلَمْ يَضْطَرِب فِي الْإِسْنَادِ وَلَا الْمَتْن শু‘বার বর্ণিত এই হাদীছের মধ্যে ইযত্বিরাবের ক্রটি ধরা হয়েছে। আর সুফিয়ান এটা বর্ণনা করেছেন। তিনি সনদ এবং মতনে কোন ইযত্বিরাব ঘটান নি’।[6]

সুতরাং আস্তে আমীন বলা সম্পর্কে শু‘বা বর্ণিত রেওয়ায়াত সুফিয়ান ছাওরীর জোরে আমীন বলার হাদীছের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়।

বর্ণনা-২ :

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ المُثَنَّى قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى عَنْ سَعِيدٍ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ الحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ قَالَ سَكْتَتَانِ حَفِظْتُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَنْكَرَ ذَلِكَ عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ وَقَالَ حَفِظْنَا سَكْتَةً، فَكَتَبْنَا إِلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ بِالمَدِينَةِ، فَكَتَبَ أُبَيٌّ أَنْ حَفِظَ سَمُرَةُ، قَالَ سَعِيدٌ فَقُلْنَا لِقَتَادَةَ مَا هَاتَانِ السَّكْتَتَانِ؟ قَالَ إِذَا دَخَلَ فِي صَلَاتِهِ وَإِذَا فَرَغَ مِنَ القِرَاءَةِ ثُمَّ قَالَ بَعْدَ ذَلِكَ وَإِذَا قَرَأَ وَلَا الضَّالِّينَ قَالَ وَكَانَ يُعْجِبُهُ إِذَا فَرَغَ مِنَ القِرَاءَةِ أَنْ يَسْكُتَ حَتَّى يَتَرَادَّ إِلَيْهِ نَفَسُه-

সামুরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর দু’টি সাকতা (নীরবতা) স্মরণ রেখেছি। ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) এটা অস্বীকার করলেন। তিনি বলেন, আমরা তো একটি সাকতা স্মরণ রেখেছি। পরে আমরা মদীনায় উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর নিকটে পত্র লিখলাম। তিনি উত্তর লিখে পাঠালেন যে, সামুরা সঠিক স্মরণ রেখেছে। সাঈদ বলেন, আমরা ক্বাতাদাকে জিজ্ঞাস করলাম, ঐ দু’টি সাকতা কোথায় কোথায় ছিল? তিনি বলেন, যখন (ছাঃ) ছালাত শুরু করতেন। আর যখন ক্বিরাআত পাঠ সমাপ্ত করতেন। এরপর ক্বাতাদা বলেছেন, যখন ‘ওয়ালদ-দ্বল্লীন’ পাঠ শেষ করতেন। তিনি আরো বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পসন্দ ছিল, যখন তিনি ক্বিরা‘আত পাঠ সমাপ্ত করতেন তখন শ্বাস স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকতেন’।[7]

তাহক্বীক্ব : এখানে ক্বাতাদা নামক একজন প্রসিদ্ধ রাবী রয়েছেন। তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি তাদলীস করতেন। অতএব তাঁর এই বর্ণনাটি মুহাদ্দিছদের নিকট দুর্বল। তিনি ৬০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন’।[8] তার সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্য নিমণরূপ-

(১) হাফেয যাহাবী (রহঃ) বলেছেন, ‘তিনি হাফেয, ছিক্বাহ। কিন্তু মুদাল্লিস রাবী। আর তাকে ক্বাদরিয়া হওয়ার দোষে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেছেন, তা সত্বেও আছহাবে ছিহাহ-গণ তার দ্বারা দলীল পেশ করতেন। বিশেষভাবে যখন তিনি বলতেন আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন’।[9]

(২) হাফেয আলাঈ বলেছেন,قتادة بن دعامة السدوسي أحد المشهورين بالتدليس وهو أيضا يكثر من الإرسال عن مثل النعمان بن مقرن وسفينة ونحوهما ‘ক্বাতাদা বিন দি‘আমাহ অন্যতম প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী। তিনি প্রচুর পরিমাণে মুরসাল বর্ণনা উদ্ধৃত করতেন’।[10]

(৩) আল-মুদাল্লিস গ্রন্থে আছে, قتادة بن دعامة السدوسي مشهور به أيضاً ‘ক্বাতাদা বিন দি‘আমাহ তাদলীসের কারণেও প্রসিদ্ধ’।[11]

(৪) আত-তাবঈন লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন গ্রন্থে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে’।[12]

(৫) ইবনু হাযার আসক্বালানী বলেছেন, قتادة بن دعامة السدوسي البصري صاحب أنس بنمالك رضي الله تعالى عنه كان حافظ عصره وهو مشهور بالتدليس وصفه به النسائي وغيره ক্বাতাদা বিন দি‘আমাহ আস-সাদূসী আল-বছরী আনাস বিন মালেক (রাঃ)-এর ছাত্র। তিনি তার যামানার যুগশ্রেষ্ঠ হাফেয ছিলেন এবং তিনি তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ। নাসাঈ এবং অন্যরা তাকে মুদাল্লিস রাবী হিসাবে উল্লেখ করেছেন’।[13] (৬) শায়েখ আলী যাঈ (রহঃ) তার মুদাল্লিস রাবী হওয়ার বিষয়ে দলীলসমূহ পেশ করেছেন এবং স্বীয় পর্যালোচনা উপস্থাপন করেছেন’।[14]

বর্ণনা-৩ :

حَدَّثَ سَمُرَةُ بْنُ جُنْدُبٍ أَنَّهُ حَفِظَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَكْتَتَيْنِ: سَكْتَةً إِذَا كَبَّرَ وَسَكْتَةً إِذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ-

সামুরা বিন জুনদুব বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী করীম (ছাঃ) হ‘তে এই মর্মে স্মরণ রেখেছেন যে, একটি সাকতা হ’ত তাকবীরে তাহরীমার পর, আরেকটি সাকতা হ’ত غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ বলার পর।[15]

তাহক্বীক্ব : এখানেও ক্বাতাদা (রহঃ) তাদলীস করেছেন।

বর্ণনা-৪ :

قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ يُخْفِي الْإِمَامُ أَرْبَعًا التَّعَوُّذُ، وَبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَآمِينَ وَرَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ-

উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেছেন, ইমাম চারটি বিষয় নিঃশব্দে পড়বে। আঊযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও রববানা লাকাল হামদ’।[16]

তাহক্বীক্ব : এটা সনদবিহীন বর্ণনা। যদি বিদ্বান বর্ণনাটি হাসান বা ছহীহ সনদে পেশ করেন তবেই সেটি গ্রহণযোগ্য হবে।

বর্ণনা-৫ :

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ يُخْفِي الْإِمَامُ ثَلَاثًا الِاسْتِعَاذَةُ وَبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ বলেছেন, ইমাম তিনটি বিষয় নিঃশব্দে পড়বে। আঊযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ এবং আমীন’।[17]

তাহক্বীক্ব : প্রথমত : এখানে পুরো সনদ নেই। দ্বিতীয়ত : এখানে ইবরাহীম নাখাঈ তাদলীস করেছেন। সুতরাং বর্ণনাটি দুর্বল। আর ইবরাহীম নাখঈ সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য হ’ল-

(১) ইবনু হাযার বলেন, ইবরাহীম বিন ইয়াযীদ আন-নাখাঈ একজন প্রসিদ্ধ ফক্বীহ। তিনি তাবেঈদের অন্তর্ভুক্ত, কূফার অধিবাসী। হাকেম উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তাদলীস করতেন। আবূ হাতেম বলেছেন, আয়েশা (রাঃ) ব্যতীত তিনি কোন ছাহাবীকে পাননি। তবে তিনি তার হ’তে কিছু শ্রবণ করেননি। আর তিনি প্রচুর ইরসাল করতেন। বিশেষভাবে ইবনু মাসঊদ হ’তে। তিনি আনাস এবং অন্যদের হ’তে মুরসালরূপে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[18]

(২) ‘আল-মুদাল্লিসীন’, ‘আল-মুগনী ফিয যুআফা’ (জীবনী নং ২০৯), ‘আত-তাবঈন লি-আসমাঈল মুদাল্লিসীন’ (জীবনী নং ২), ‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’ (জীবনী নং ১) প্রভৃতি গ্রন্থসমূহে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

(৩) হাফেয আলাঈ (রহঃ) লিখেছেন, كان يدلس وهو أيضا مكثر من الإرسال ‘তিনি তাদলীস করতেন। এছাড়াও তিনি অত্যাধিক মুরসালকারী’।[19]

বর্ণনা-৬ :

عَنْ أَبِي وَائِلٍ قَالَ كَانَ عُمَرُ وَعَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا لَا يَجْهَرَانِ بِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَلَا بِالتَّعَوُّذِ وَلَا بِالتَّأْمِين-

আবূ ওয়ায়েল (রহঃ) হ’তে বর্ণিত। ওমর (রাঃ) এবং আলী (রাঃ) বিসমিল্লাহ, আঊযুবিল্লাহ এবং আমীন স্বশব্দে পড়তেন না’।[20]

তাহক্বীক্ব : এটা যঈফ বর্ণনা। আবূ সাঈদ মুদাল্লিস রাবী। যেমন-

(১) ইবনু হাযার (রহঃ) বলেছেন, سعيد بن المرزبان أبو سعيد البقال من أتباع التابعين ضعيف مشهور بالتدليس وصفه به أحمد وأبو حاتم والدارقطني وغيرهم- সাঈদ ইবনুল মারযুবান আবূ সাঈদ তাবে তাবেঈন। তিনি যঈফ রাবী। তাদলীসের জন্য প্রসিদ্ধ’।[21] ইমাম আহমাদ, আবূ হাতেম, দারাকুৎনী প্রমুখ তাঁর সম্পর্কে অনুরূপ বিবরণ দিয়েছেন।

(২) আল-মুদাল্লিসীন গ্রন্থে আছে, أبو سعد متكلم فيه আবূ সাঈদ একজন সমালোচিত রাবী (জীবনী নং ৭৯)।

(৩) আত-তাবয়ীন গ্রন্থে আছে, سعيد بن المرزبان قال أبو زرعة صدوق يدلس ذكره الذهبي في ميزانه সাঈদ ইবনুল মারযুবানকে আবূ যুরআহ সত্যবাদী বলেছেন। তিনি তাদলীস করতেন। যাহাবী তাকে মীযান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (জীবনী নং ২৪)। এছাড়াও ‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে (জীবনী নং ৭১)।

বর্ণনা-৭ :

 حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْحَضْرَمِيُّ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ أَبِي سَعْدٍ الْبَقَّالِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: كَانَ عَلِيٌّ، وَابْنُ مَسْعُودٍ لَا يَجْهَرَانِ بِبِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَلَا بِالتَّعَوُّذِ، وَلَا بِآمِينَ-

আবূ ওয়ায়েল বলেছেন, আলী ও ইবনু মাসঊদ বিসমিল্লাহ, আঊযুবিল্লাহ এবং আমীন স্বশব্দে পড়তেন না।[22]

তাহক্বীক্ব : এখানেও উপরোক্ত আবূ সাঈদ বাক্কাল নামক মুদাল্লিস রাবী রয়েছেন। স্বয়ং আব্দুল মতীন ছাহেব লিখেছেন, ‘হায়ছামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ গ্রন্থে বলেছেন, তিনি ছিক্বাহ-মুদাল্লিস’।[23] তবে কথাটি তিনি আরবীতে লিখেছেন। এর বাংলা অনুবাদ তিনি করেননি।

বর্ণনা-৮ :

عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ أَرْبَعٌ يُخْفِيهُنَّ الْإِمَامُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَالِاسْتِعَاذَةِ، وَآمِينَ، وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ قَالَ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ-

হাম্মাদ ইবরাহীম নাখঈ হ’তে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম চারটি কথা নীরবে বলবে। বিসমিল্লাহ, আঊযুবিল্লাহ, আমীন এবং রববানা লাকাল হামদ’।[24]

তাহক্বীক্ব : সনদ যঈফ। হাম্মাদ বিন আবী সুলায়মান তাদলীস করেছেন এবং তিনি মস্তিষ্ক বিকৃতির শিকার হয়েছিলেন। ইবনু হাযার ‘ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন’ (জীবনী নং ৪৫) গ্রন্থে তাকে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাম্মাদ বিন আবী সুলায়মান ফক্বীহ, সত্যবাদী। তার কতিপয় ভ্রান্তি রয়েছে। তাকে মুরজিয়া হওয়ার অভিযোগ দেয়া হয়েছিল’।[25]

মাওলানা আব্দুল মতীন ছাহেব ইবনু আবী শায়বাহর উদ্ধৃতিও প্রদান করেছেন। হাদীছটির সনদ হ’ল- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: ثنا وَكِيعٌ، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ ..... ।[26]

আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন আবূ বকর। তিনি বলেছেন,... আমাদেরকে ওয়াকী হাদীছ বর্ণনা করেছেন ইবনু আবী লায়লা হতে, তিনি হাকাম হতে, তিনি ইবরাহীম হতে’।

এখানে মুহাম্মাদ বিন আবী লায়লা নামক যঈফ রাবী আছেন। যার সম্পর্কে ইমামগণের বক্তব্য হ’ল-

(১) আব্দুর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) বলেছেন, হাফেয যাহাবী তাযকিরাতুল হুফফায গ্রন্থে বলেছেন, তার হাদীছ হাসান স্তরের হয়ে থাকে। ছহীহ পর্যন্ত উন্নীত হয় না। কেননা তিনি মুতক্বিন (নিপুণতাসম্পন্ন) নন মুহাদ্দিছদের নিকটে’।[27] (২) ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, سَأَلته عَن مُحَمَّد بن عبد الرَّحْمَن بن أبي ليلى فَقَالَ مُضْطَرب الحَدِيث قَالَ أبي فقه بن أبي ليلى أحب إِلَيْنَا من حَدِيثه حَدِيثه فِيهِ اضْطِرَاب আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা সম্পর্কে। তিনি বলেন, তিনি মুযত্বারিবুল হাদীছ। আমার পিতা বলেন, ইবনু আবী লায়লার ফিক্বহ তার হাদীছের চাইতে আমার নিকটে অধিক পছন্দনীয়। (কারণ) তার হাদীছের মধ্যে ইযত্বিরাব আছে’।[28]

(৩) ইমাম ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) বলেছেন, আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা তার পিতা হ’তে হাদীছ শ্রবণ করেন নি’।[29] (৪) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা আবূ আব্দুর রহমান আনছারী কুফার বিচারক। শা’বী, আত্বা হ’তে (বর্ণনা করেছেন)।[30]

(৫) ইমাম ইজলী (রহঃ) তাকে ছিক্বাহ রাবী হিসাবে উল্লেখ করে তার প্রশংসা করেছেন’।[31]

(৬) ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেছেন, তিনি বিচারক ছিলেন। শা’বী, আত্বা হ’তে বর্ণনা করেছেন। তার থেকে ছাওরী এবং শুবাহ বর্ণনা করেছেন’।[32]

(৭) ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেছেন, مُحَمَّد بن عبد الرَّحْمَن بن أبي ليلى قَاضِي الْكُوفَة أحد الْفُقَهَاء لَيْسَ بِالْقَوِيّ فِي الحَدِيث ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা কুফার বিচারক। অন্যতম ফক্বীহ। হাদীছের ব্যাপারে শক্তিশালী ছিলেন না’।[33] (৮) ইবনু হিববান (রহঃ) তাঁকে সমালোচিত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করে তার সম্পর্কে সমালোচনামূলক উক্তিসমূহ বর্ণনা করেছেন’।[34]

(৯) ইবনু আদী (রহঃ) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ইবনু আবী লায়লা যঈফ। এবং আত্বা হ’তে তার অধিকাংশ বর্ণনা ভুল’।[35] (১০) ‘তারীখু আসমাইয যু‘আফা ওয়াল কাযযাবীন’ গ্রন্থে আছে, ইবনু আবী লায়লা শক্তিশালী নন’।[36]

(১১) ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ) যঈফ এবং বর্জিত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তার সম্পর্কে অসংখ্য সমালোচনামূলক উক্তি বর্ণনা করেছেন’।[37]

(১২) হাফেয যাহাবী (রহঃ) লিখেছেন, আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন, তিনি মন্দ হিফযধারী। আবূ হাতেম বলেছেন, তিনি সত্যবাদী স্তরের’।[38]

(১৩) ‘আল-মুগনী ফিয-যু‘আফা’ গ্রন্থে আছে, مُحَمَّد بن عبد الرَّحْمَن بن أبي ليلى القَاضِي صَدُوق إِمَام سيء الْحِفْظ وَقدوثق قَالَ شُعْبَة مَا رَأَيْة أَسْوَأ من حفظه وَقَالَ الْقطَّان سيء الْحِفْظ جدا وَقَالَ ابْن معِين لَيْسَ بِذَاكَ وَقَالَ النَّسَائِيّ وَغَيره لَيْسَ بِالْقَوِيّ وَقَالَ الدَّارَقُطْنِيّ رَدِيء الْحِفْظ كثير الْوَهم وَقَالَ أَبُو أَحْمد الْحَاكِم عَامَّة أَحَادِيثه مَقْلُوبَة তিনি ক্বাযী, সত্যবাদী ইমাম। মুখস্তশক্তিতে অতি দূর্বল ছিলেন। কেউ কেউ তাকে ছিক্বাহ বলেছেন। শুবাহ বলেছেন, তার চাইতে নিকৃষ্ট স্মৃতিধারী আর কাউকে দেখিনি। আল-ক্বাত্ত্বান বলেছেন, তিনি খুবই বাজে স্মৃতিধারী। ইবনু মাঈন বলেছেন, তিনি শক্তিশালী নন। নাসাঈ এবং অন্যরা বলেছেন, তিনি শক্তিশালী নন। দারাকুৎনী বলেছেন, মন্দ হিফযধারী, অত্যধিক ভুলকারী। আহমাদ এবং হাকেম বলেছেন, তার অধিকাংশ হাদীছই উলট-পালটকৃত (রাবী নং ৫৭২৩)

(১৪) হাফেয যাহাবী লিখেছেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা আল্লামাহ, ইমাম, কুফার মুফতী এবং বিচারক’।[39] অতঃপর তিনি বলেছেন, তিনি ফিক্বহে আবূ হানীফার সদৃশ ছিলেন। আহমাদ বলেছেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ ইবনু আবী লায়লাকে যঈফ বলতেন (ঐ)। তারপর তিনি বলেছেন, ইজলী বলেছেন, তিনি ফক্বীহ, সুন্নাতধারী, সত্যবাদী, জায়েযুল হাদীছ ছিলেন। আর তিনি কুরআনের ক্বারী এবং এ সম্পর্কে আলেম ছিলেন’।[40] তার সম্পর্কে হাফেয যাহাবী আরো কিছু সমালোচনামূলক এবং প্রশংসাসূচক উক্তি বর্ণনা করেছেন।

(১৫) ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) তার সম্পর্কে সমালোচনামূলক উক্তিসমূহ বর্ণনা করেছেন। সেখানে তিনি তার ফক্বীহ হওয়ার পক্ষেও ইমামদের কতিপয় উক্তি উল্লেখ করেছেন’।[41]

(১৬) ‘বাহরুদ দাম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘তিনি অন্যতম ইমাম। আহমাদ বলেছেন, তিনি বাজে স্মৃতিধারী, মুযত্বারিবুল হাদীছ। তার ফিক্বহ আমার নিকটে অধিক প্রিয় তার হাদীছের চাইতে’।[42] (১৭) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেছেন, ইজলী বলেছেন, নাসাঈ এবং অন্যরা তাকে যঈফ বলেছেন এবং আহমাদ বলেছেন, তিনি বাজে হিফযের অধিকারী। মুযত্বারিবুল হাদীছ। তিনি ফক্বীহ, সুন্নাতধারী, সত্যবাদী, জায়েযুল হাদীছ ছিলেন। তিনি ১৪৮ হিজরীতে মারা গিয়েছেন’।[43]

(১৮) শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) বলেছেন, ‘এর সনদ যঈফ’।[44] (১৯) ইমাম আলবানী (রহঃ) ‘যঈফুল ইসনাদ’ বলেছেন’।[45] (২০) ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) বলেছেন, তিনি যঈফুল হাদীছ। বাজে স্মৃতির অধিকারী’।[46]

সুতরাং এই বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়।

বর্ণনা-৯ :

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: ثنا هُشَيْمٌ، عَنْ مُغِيرَةَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ أَنَّهُ كَانَ إِذَا كَبَّرَ سَكَتَ هُنيْهَةَ، وَإِذَا قَالَ: {غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ} سَكَتَ هُنيْهَةً-

মুগীরা বলেছেন, ইবরাহীম নাখঈ তাকবীর দিয়ে কিছু সময় নীরব থাকতেন। আবার যখন গইরিল মাগযূবী আলাইহিম ওলায য-ল্লীন পড়তেন তখনও কিছু সময় নীরব থাকতেন।[47]

তাহক্বীক্ব : সনদ যঈফ।

প্রথমত : ইবরাহীম নাখঈর আমল বা ফৎওয়া স্বতন্ত্রভাবে দলীল নয়।

দ্বিতীয়ত : এখানে হুশাইম নামক মুদাল্লিস রাবী আছেন। ইবনু হাযার বলেছেন, হুশাইম বিন বাশীর আল-ওয়াসিত্বী তাবে তাবেঈনদের অন্যতম। তিনি তাদলীসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিক্বাহ হওয়া সত্ত্বেও’।[48]

তৃতীয়ত : হুশাইমের উস্তাদ মুগীরাও মুদাল্লিস রাবী। ইবনু হাযার বলেছেন, মুগীরাহ বিন মিক্বসাম আয-যববী আল-কূফী হলেন ইবরাহীম নাখঈর ছাত্র। তিনি ছিক্বাহ, প্রসিদ্ধ। নাসাঈ তাকে তাদলীসের অভিযোগ অভিযুক্ত করেছেন’।[49]

বর্ণনা-১০ :

 حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنِي أَبِي، ثنا سَعْدُ بْنُ الصَّلْتِ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ: آمِينَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ"

আমি দেখলাম রাসূল (ছাঃ) ছালাত শুরু করলেন। তিনি যখন সূরা ফাতেহা শেষ করলেন, তখন তিনবার আমীন বলেন।[50]

তাহক্বীক্ব : সনদ যঈফ। এখানে আ‘মাশ এবং আবূ ইসহাক্ব নামী দু’জন মুদাল্লিস রাবী রয়েছেন যারা তাদলীস করেছেন।

রাবী-১ : আ‘মাশ তাদলীস করেছেন। এ সম্পর্কে মুহাদ্দিছদের সাক্ষ্য তুলে ধরা হ’ল-

(১) হাফেয ইবনু আব্দুল বার্র (রাঃ) লিখেছেন,وَقَالُوا لَا يُقْبَلُ تَدْلِيسُ الْأَعْمَشِ এবং তারা বলেছেন, আ‘মাশের তাদলীস গ্রন্থে করা হয় না’।[51] (২) ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) লিখেছেন, وَلَعَلَّ الْأَعْمَشَ دَلَّسَهُ عَنْ حَبِيبٍ এবং সম্ভবত আ‘মাশ হাবীব হ’তে এটি তাদলীস করেছেন’।[52] (৩) ইমাম আবূ হাতেম (রহঃ) বলেছেন, الأعمشُ ربَّما دَلَّس আ‘মাশ কদাচিৎ তাদলীস করতেন’।[53]

(৪) ‘যিকরুল মুদাদিল্লিসীন’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে তাকে মুদাল্লিস রাবী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে’।[54]

(৫) হাফেয যাহাবী (রহঃ) লিখেছেন, সুলায়মান বিন মিহরান আমাশ অন্যতম ছিক্বাহ ইমাম। তাকে ছোট তাবেঈনদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তারা (মুহাদ্দিছগণ) স্রেফ তাদলীসের কারণে তার উপর ক্রদ্ধ হয়েছেন’।[55] অতঃপর তিনি লিখেছেন,قلت وهو يدلس وربما دلس عن ضعيف ولا يدرى به আমি বলেছি, তিনি তাদলীস করতেন এবং কখনো কখানো অজ্ঞাতসারে যঈফ রাবী হ’তে তাদলীস করতেন (ঐ)।

(৬) হাফেয আলাঈ (রহঃ) বলেছেন, এই আ‘মাশ তাবেঈনদেন অন্তর্ভুক্ত। আর তুমি তাকে হাসান বিন উমারাহ হ’তে তাদলীস করতে দেখেছ’।[56]

(৭) ইবনুল ইরাক্বী (রহঃ) তাকে ‘আল-মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন, سليمان الأعمش مشهور بالتدليس أيضاً সুলায়মান আ‘মাশও তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ’।[57]

(৮) হাফেয বুরহানুদ্দীন আল-হালবী (রহঃ) লিখেছেন, سليمان بن مهران الأعمش مشهور به সুলায়মান বিন মিহরান আল-আ‘মাশ তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ’।[58]

(৯) ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) লিখেছেন, سليمان بن مهران الاعمش محدث الكوفة وقارؤها وكان يدلس وصفه بذلك الكرابيسي والنسائي والدارقطني وغيرهم সুলায়মান বিন মিহরান কূফার মুহাদ্দিছ এবং সেখানকার ক্বারী এবং তিনি তাদলীস করতেন। কারাবীসী, নাসাঈ এবং দারাকুৎনী ইত্যাদি (বিদ্বানগণ) তাকে মুদাল্লিসের সাথে উল্লেখ করেছেন’।[59]

(১০) হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ রহেমাহুল্লাহ তাঁকে ‘প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস’ বলেছেন’।[60]

(১১) হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেছেন, সুলায়মান আ‘মাশ তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ’।[61]

(১২) ইবনুল কাত্তান বলেছেন, فَإِنَّهُ مُدَلّس নিশ্চয়ই তিনি মুদাল্লিস’।[62]

সুতরাং সারাংশ হ’ল, আমাশ একজন ছিক্বাহ এবং মুদাল্লিস রাবী। আর মুদাল্লিস রাবীর আনআনাহ যইফ হয়ে থাকে। আব্দুল মতীন ছাহেব স্বয়ং লিখেছেন, ‘আর স্বীকৃত কথা যে, মুদাল্লিস রাবী যদি عن (হ’তে বা থেকে) শব্দ যোগে বর্ণনা করেন, তবে সেটি অবিচ্ছিন্ন সূত্র বলে বিবেচিত হয় না (পৃঃ ৮৭)’।

রাবী-২ : আবূ ইসহাক্ব সম্পর্কে ইমামদের মতামত নিমণরূপ-

অপর রাবী আবূ ইসহাক্ব একজন প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী। তিনি মুদাল্লিস রাবী হিসাবে অনেকেই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যেমন ‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে আছে যে, كثير التدليس ويعرف بالإمام তিনি অত্যাধিক তাদলীসকারী এবং ইমাম হিসাবে পরিচিত (রাবী নং ৪৫)। ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) তাঁকে স্বীয় ‘ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (রাবী নং ৯১)। ‘যিকরুল মুদাল্লিসীন’ (রাবী নং ৯), ‘আল-মুদাল্লিসীন’ প্রভৃতি বইয়ে তাকে প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (রাবী নং ৪৭)।

শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) তাঁকে মুদাল্লিস রাবী হিসাবে অভিহিত করেছেন’।[63] অন্যত্র তিনি বলেছেন, الثانية: أبو إسحاق السبيعي، ثقة ولكنه على اختلاطه مدلس দ্বিতীয়ত, আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ ছিকাহ। কিন্তু তিনি তার ইখতিলাত্বের সময় মুদাল্লিস’।[64]

স্মর্তব্য যে, একজন রাবী নির্ভরযোগ্য হওয়ার সাথে সাথে মুদাল্লিসও হ’তে পারেন। অতএব এই রেওয়ায়াতটি ‘মুআনআন’ যা যঈফ। ‘দলিলসহ নামাযের মাসায়েল’ গ্রন্থে আবূ ইসহাক্ব সম্পর্কে কিছু না বলে সত্য গোপন করা হয়েছে।

রাবী-৩ : আব্দুল জাববার বিন ওয়ায়েল তার পিতা হ’তে শ্রবণ করেননি। তাই এটার সনদে বিচ্ছিন্নতাও রয়েছে।

বর্ণনা-১১ :

 عَنْ وَائِلَ بْنَ حُجْرٍ الْحَضْرَمِيَّ يَقُولُ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ فَرَغَ مِنَ الصَّلَاةِ حَتَّى رَأَيْتُخَدَّهُ مِنْ هَذَا الْجَانِبِوَمِنْ هَذَا الْجَانِبِ وَقَرَأَغَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ فَقَالَآمِينَ يَمُدُّ بِهَا صَوْتَهُ مَا أَرَاهُ إِلَّا يُعَلِّمُنَا-

ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম ফেরানোর সময় আমি তার ডান গাল এবং বাম গাল দেখেছি। আর তিনি গইরিল মাগযূবী আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন পড়ার পর লম্বা আওয়াযে আমীন বলেন। আমার মনে হ’ল আমাদেরকে শেখানোর জন্যই তিনি এমন করেছিলেন’।[65] 

তাহক্বীক্ব : প্রখ্যাত দেওবন্দী উস্তাদ মাওলানা আব্দুল মতীন একে যঈফ বলেছেন’।[66]

দূলাবী সম্পর্কে ইয়াহইয়া মুআল্লিমী বলেছেন, الدولابي حافظ حنفي فيه مقال ‘দূলাবী হাদীছের হাফেয। হানাফী মাযহাবের অনুসারী। তাকে নিয়ে সমালোচনা রয়েছে’।[67]

বর্ণনা-১২ : সুফিয়ান ছাওরী বলেছেন, ‘যখন তুমি সূরা ফাতেহা সমাপ্ত করবে তখন নিঃশব্দে আমীন বলবে’।[68]

তাহক্বীক্ব : এটি সনদবিহীন উক্তি। অতএব প্রত্যাখ্যাত।

বর্ণনা-১৩ :

وروي ذلك عن ابن مسعود وروي عن النخعي والشعبى وابراهيم التيمى كانوا يخفون بآمين والصواب ان الخبر بالجهر بها والمخافة صحيحان وعمل بكل من فعليه جماعة من العلماء وان كنت مختارا خفض الصوت بها إذا كان اكثر الصحابة والتابعين على ذلك-

ইবনু মাসঊদ, ইবরাহীম নাখঈ, শা‘বী, ইবরাহীম তায়মী প্রমুখ হ’তে বর্ণিত আছে যে, তারা আমীন আস্তে বলতেন। সঠিক হ’ল, আমীন জোরে এবং আস্তে উভয়ভাবে বলা ছহীহ। এবং দু’টি পন্থা অনুযায়ী আলেমদের একটি জামা‘আত আমল করেছেন। যদিও আমি (বর্ণনাকারী) আমীন আস্তে বলাই পসন্দ করি। কারণ অধিকাংশ ছাহাবী এবং তাবেঈ আস্তে আমীন বলার আমলের উপর ছিলেন’।[69]

তাহক্বীক্ব : (১) দু’টি গ্রন্থ থেকে এর উদ্ধৃতি প্রদান করা হয়ে থাকে। ১. আল-জাওহারুন নাক্বী। ২. ইমাম ইবনু বাত্তালের শারহুল বুখারী। গ্রন্থদ্বয়ে এটা বিনা সনদে উল্লেখ হয়েছে। (২) ইবনু বাত্তালের মৃত্যু সন হ’ল ৪৪৯ হিজরীতে। পক্ষান্তরে ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) ৩১০ হিজরীতে মারা গিয়েছেন। অতএব ইবনু বাত্তালের পক্ষ হ’তে ইবনু জারীরের কোন উক্তি পেশ করতে গেলে সেটার সনদ দেখাতে হবে। অথবা ইবনু জারীরের স্বহস্তে রচিত বা তার কোন ছিক্বাহ ছাত্র কর্তৃক রচিত গ্রন্থ দেখাতে হবে। (৩) এটা ছীগায়ে তামরীয তথা দুর্বলতাবাচক শব্দ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।

অতএব বর্ণনাটি শক্তিশালী হাদীছসমূহের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়।

উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হ’ল যে, ছালাতে নিরবে আমীন বলা সংক্রান্ত হাদীছগুলো দুর্বল ও মুহাদ্দিছগণের নিকট অগ্রহণীয়, আমলযোগ্য নয়। এর বিপরীতে ছালাতে জোরে আমীন বলার দলীলসমূহ বিশুদ্ধতার মানদন্ডে অধিক শক্তিশালী ও আমলযোগ্য। আর দুর্বল বা অশুদ্ধ হাদীছের পরিবর্তে বিশুদ্ধ হাদীছই হ’ল মুমিন জীবনের উৎকৃষ্ট পাথেয়।

 

[1]. আহমাদ হা/১৮৮৫৪; দলীলসহ নামায পৃ. ১৮৪-৮৫।

[2]. আল-ক্বওলুল মাতীন পৃ. ১০৫।

[3]. অত্র হাদীছের টীকা দ্রঃ।

[4]. তিরমিযী হা/২৪৮।

[5]. ২/২৬৮।

[6]. নায়লুল আওত্বার হা/৭০৪ এর ব্যাখ্যা ২/২৬০।

[7]. সুনানু তিরমিযী হা/২৫১; আবূ দাঊদ হা/৭৮০; দলীলসহ নামায পৃঃ ১৯১; ইবনে মাজাহ হা/৮৪৪; ইবনু হিববান হা/১৮০৭; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৩০৮০।

[8]. সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ১৩২।

[9]. মীযানুল ই‘তিদাল, রাবী নং ৬৮৬৪।

[10]. জামেউত তাহছীল, রাবী নং ৬৩৩।

[11]. আল-মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৪৯।

[12]. রাবী নং ৫৭।

[13]. রাবী নং ৯২।

[14]. আল-ফাতহুল মুবীন পৃঃ ১১১, ক্রমিক ৯২।

[15]. আবূ দাঊদ হা/৭৭৯; দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃ. ১৯২।

[16]. ইবনে হাযম আল-মুহাল্লা ২/২৮০; দলীলসহ নামায পৃ. ১৯৪।

[17]. ইবনু হাযম ঐ; দলীলসহ নামায পৃ.১৯৫।

[18]. ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৩৫।

[19]. জামেউত তাহছীল, জীবনী নং ১৩।

[20]. শারহু মাআনিল আছার হা/১২০৮; দলিলসহ নামায পৃ. ১৯৫।

[21]. ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১৩৭।

[22]. ত্বাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর হা/৯৩০৪; দলীলসহ নামায পৃ. ১৯৫।

[23]. পৃ. ১৯৫।

[24]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/২৫৯৬; দলীলসহ নামায পৃঃ ১৯৬।

[25]. তাক্বরীবুত তাহযীব,জীবনী নং ১৫০০; আল-ফাতহুল মুবীন, পৃঃ ৬১; তাহরীরু তাক্বরীবিত তাহযীব ১/৩১৯।

[26]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৮৮৪৮; দলীলসহ নামায পৃঃ ১৯৬।

[27]. তুহফাতুল আহওয়াযী হা/১৯৪ -এর আলোচনা দ্রঃ।

[28]. আল-ইলাল ওয়া মা‘রিফাতুর রিজাল, রাবী নং ৮৬২।

[29]. ইবনু আবী হাতেম, আল-মারাসীল, জীবনী নং ৬৭১।

[30]. আত-তারীখুল কাবীর, রাবী নং ৪৮০।

[31]. আছ-ছিক্বাত, জীবনী নং ১৪৭৬।

[32]. আল-কুনা ওয়াল আসমা, রাবী নং ২০৪৫।

[33]. আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, জীবনী নং ৫২৫।

[34]. আল-কামিল, জীবনী নং ১৬৬৩।

[35]. আল-মাজরূহীন, রাবী নং ৯২১।

[36]. রাবী নং ৫৮০।

[37]. আয-যুআফাউল মাতরূকীন, জীবনী নং ৩০৭২।

[38]. আল-কাশিফ, জীবনী নং ৫০০০।

[39]. সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ৯৬৪।

[40]. সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ৯৬৪।

[41]. তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং ৫০৩।

[42]. রাবী নং ৯১৫।।

[43]. ত্বাবাক্বাতুল হুফ্ফায, রাবী নং ১৫৮।

[44]. আনওয়ারুছ ছহীফা, যঈফ তিরমিযী হা/১৯৪।

[45]. যঈফ তিরমিযী হা/১৯৪।

[46]. সুনানে দারাকুৎনী হা/৯৩৬।

[47]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৮৪১; দলীলসহ নামায পৃ. ১৯৬।

[48]. ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১১১; আল-ফাতহুল মুবীন পৃ. ১৩০, ১৩১।

[49]. ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১০৭; আল-ফাতহুল মুবীন পৃ. ১২৬।

[50]. ত্বাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর হা/৩৮; দলিলসহ নামাযের মাসায়েল পৃ. ১৯৭।

[51]. আত-তামহীদ ১/৩০।

[52]. আল-ইলালুল ওয়ারিদাহ, মাসআলা-১৮৮৮।

[53]. ইবনু আবী হাতেম, ইলালুল হাদীছ হা/৯।

[54]. মুলহাক্ব পৃ. ১২৫।

[55]. মীযানুল ই‘তিদাল, জীবনী নং ৩৫১৭।

[56]. জামে‘উত তাহছীল ১/১০১।

[57]. মীযানুল ই‘তিদাল, জীবনী নং ৩৫১৭।

[58]. আত-তাবঈন লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৩০।

[59]. ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৫৫।

[60]. বিস্তারিত দ্রঃ তাহক্বীক্বী মাক্বালাত ১/২৬৭-২৭২।

[61]. আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ২১।

[62]. বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম হা/৪৪১।

[63]. ছহীহাহ হা/১৭০।

[64]. ঐ, হা/২০৩৫।

[65]. দূলাবী, আল-কুনা ওয়াল আসমা ক্রমিক ১০১৯০; দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃ. ১৯৮।

[66]. দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃঃ ১৯৮।

[67]. আত-তানকীল ২/৬১৯।

[68]. দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃঃ ১৯৯।

[69]. আল-জাওহারুন নাক্বী ২/৫৮; দলীলসহ নামায পৃ. ১৮৩।



বিষয়সমূহ: ছালাত বিধি-বিধান
আরও