শাহাদাতাইন-এর শর্ত সমূহ

খায়রুল ইসলাম 1191 বার পঠিত

‘শাহাদাহ’ শব্দটি আরবী। এর অর্থ সাক্ষ্য। আর ‘শাহাদাতাইন’ দ্বিবচন শব্দ অর্থ হ’ল দু’টি সাক্ষ্য। আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় ও তিনি ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে আর কোন ইলাহ বা উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল বলে সাক্ষ্য প্রদান করাকেই শাহাদাতাইন বলা হয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথমটি হ’ল-

شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّه-

‘এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল’।[1]

উল্লেখিত শাহাদাতাইনের প্রথম অংশ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -এর সাক্ষ্য প্রদান করা। মহান আল্লাহ বলেন, فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। অন্যত্র তিনি বলেন,

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ-

‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ফেরেশতামন্ডলী ও ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’  (আলে ইমরান ৩/১৮)। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ.

ওছমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জেনে বুঝে এই বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[2]

রাসূল (ছাঃ)  আরো বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ قُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ تُفْلِحُوا- ‘হে মানব সকল! তোমরা বল, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই, তাহ’লে সফলকাম হবে’।[3]

 শাহাদাতাইনের প্রথম শাহাদাত কালেমায়ে ত্বাইয়েবাহ (পবিত্র বাক্য) : لآ اِلٰهَ اِلاَّ اللهُ  (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু) ‘নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত’। [হযরত আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) বলেন, الكلمةُ الطيبةُ لآاِلهَ الا اللهُ অর্থাৎ কালেমায়ে ত্বাইয়েবাহ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ।[4]

দ্বিতীয় শাহাদাত হ’ল কালেমায়ে শাহাদাত (সাক্ষ্য দানকারী বাক্য) :

 اَشْهَدُ اَنْ لآ اِلٰهَ اِلاَّ اللهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُه-

(আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু)

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।

উল্লেখ্য যে, উক্ত কালেমাটি সংক্ষেপে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলে প্রচলিত। এটি কালেমা ত্বাইয়েবাহ নয়, বরং কালেমা শাহাদাতের প্রচলিত রূপ। কালেমা শাহাদাত বুঝে মুখে উচ্চারণ, অন্তরে বিশ্বাস ও কাজে পরিণত না করা ব্যতীত কেউ ‘মুসলিম’ হ’তে পারবে না।

উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদীছে বর্ণিত শাহাদাতাইন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করত সফলতা অর্জন করে, জান্নাত পেতে হ’লে ৭টি শর্ত অবশ্যই মেনে চলতে হবে।[5]  নিম্নে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হ’ল। 

১ম শর্ত الْعِلْمِ (আল-ইলম) : এই বাক্য সম্পর্কে এমন জ্ঞান থাকতে হবে, যা মূর্খতা, অজ্ঞতা, বর্বরতা থেকে বাধা প্রদান করতে সক্ষম। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّه ‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই’। আয়াতের তাফসীর হ’লلا معبود بحق إلا الله  অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা‘বূদ নেই।[6]

এছাড়াও সূরা মুহাম্মাদের ১৯ নং আয়াতের বিশ্লেষণে সূরা   যুখরুফ-এর ৮৬ নং আয়াত পেশ করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,  إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ‘তবে যারা সত্য স্বীকার করত ও বিশ্বাস করত। অর্থাৎ তারা এ ব্যাপারে স্পষ্ট জ্ঞান রাখত। وَلِيَعْلَمُوا أَنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ وَلِيَذَّكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ- ‘এটা মানুষের জন্য একটি হুঁশিয়ারী বার্তা! যাতে এর মাধ্যমে তারা সতর্ক হয় এবং জানতে পারে যে, তিনিই একমাত্র উপাস্য। আর যাতে জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ইবরাহীম ১৪/৫২)। অত্র আয়াতে জেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, মুখে শুধু বলতে বলা হয়নি। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. يَبْتَغِى بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ-

‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন যে, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লা ইলাহা ইল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত মা‘বূদ নেই) বলে’।[7]

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ এর অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, বলার সাথে সাথে এ কথাও অন্তরে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এর মূল অর্থ হ’ল আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই। পৃথিবীতে অসংখ্য মিথ্যা ও অপ্রকৃত মা‘বূদ রয়েছে। এক শ্রেণীর লোক যাদের ইবাদত করে থাকে। কারণ মা‘বূদ তাকেই বলা হয় যার ইবাদত করা হয়। তাই অসংখ্য বাতিল মা‘বূদ রয়েছে বলে বিশ্বাস করাও ঈমানের অংশ। অন্যথা আয়াত অস্বীকারকারীর অর্ন্তভুক্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمْ آلِهَتُهُمُ الَّتِي يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ لَمَّا جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ- ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যেসব মা‘বূদকে ডাকত আপনার পালনকর্তার হুকুম যখন এসে পড়ল, তখন কেউ কোন কাজে আসল না’ (হূদ ১১/১০১)।  

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ فَتُلْقَى فِي جَهَنَّمَ مَلُومًا مَدْحُورًا- ‘অতএব তুমি আল্লাহর সাথে অন্যকে উপাস্য নির্ধারণ করো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (ইসরা ১৭/৩৯)। আল্লাহ আরো বলেন,

وَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ-

‘আর তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করো না। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। প্রত্যেক বস্ত্তই ধ্বংস হবে তাঁর চেহারা ব্যতীত। বিধান কেবল তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৮)। আরবের কাফির, মুশরিকগণ মনে করত এক স„ৃষ্টকর্তা সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তাই আরো ইলাহের ইবাদত করা প্রয়োজন। নবী করীম (ছাঃ)-এর বাণীতে যখন এক আল্লাহর উপাসনার কথা বলা হ’ল  তখন তারা বলতে লাগল أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ- ‘সে কি বহু উপাস্যের বদলে একজন উপাস্য সাব্যস্ত করতে চায়? নিশ্চয় এটি এক আশ্চর্য ব্যাপার’ (ছোয়াদ ৩৮/০৫)

এজন্যই তো মূসা (আঃ)-এর উম্মতের এক দল লোক এই আবেদন জানিয়েছিল যে,

اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ-

‘তখন তারা বলল, হে মূসা! আমাদের জন্যেও এরূপ উপাস্য বানিয়ে দাও, যেমন এদের অনেক উপাস্য (মূর্তি) রয়েছে! জবাবে মূসা তাদের বলল, তোমরা একটা মূর্খ জাতি’  (রাফ ৭/১৩৮)

পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ বলেন, اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর । তিনি ব্যতীত তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই’ (রাফ ৭/৫৯)। অর্থাৎ যাদের ইবাদত মুশরিকগণ করে থাকে তারা মূলত সত্যিকার মা‘বূদ নয়। ওরা হ’ল  মিথ্যা বা বাতিল মা‘বূদ। মহান আল্লাহ বলেন,

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ-

‘এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের পূঁজা করে সব মিথ্যা। আল্লাহ সর্বোচ্চ, মহান (লুক্বমান ৩১/৩০)। মুশরিকদের উপাস্য ও তাদের বিশ্বাস সর্ম্পকে আল্লাহ বলেন,

‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওয্যা সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? পুত্র সন্তান কি তোমাদের জন্য আর  কন্যা সন্তান কি আল্লাহর জন্য? এমতবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বণ্টন। এগুলো কতগুলো নাম বৈ কিছুই নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষেরা রেখেছে। যার সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা ধারণা ও প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথনির্দেশিকা এসেছে’ (নজম ৫৩/১৯-২৩)

আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে প্রভু বা ইলাহ হিসাবে মানা হয় তারা সকল প্রকার অক্ষমতার শিকার। মহান আল্লাহ  বলেন,

وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَهُمْ رِزْقًا مِنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ شَيْئًا وَلَا يَسْتَطِيعُونَ-

‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন বস্ত্তর পূজা করে যা তাদের জন্য আসমান ও যমীন থেকে সামান্য রূযীর ব্যবস্থা করার ক্ষমতা রাখে না এবং তারা এতে সক্ষম নয়’ (নাহল ১৬/৭৩)।

আল্লাহর অসীম ক্ষমতা উল্লেখ করে তিনি বলেন,

يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ-

‘তিনি রাত্রিকে দিবসের মধ্যে প্রবিষ্ট করান এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করান রাত্রির মধ্যে। আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে অনুগত করেছেন। প্রতিটিই পরিচালিত হবে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। তিনিই আল্লাহ। তোমাদের প্রতিপালক। তাঁরই জন্য সকল সাম্রাজ্য’ (ফাত্বির ৩৫/১৩)।

পরের অংশে বলেন,

وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ.إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ-

‘অথচ তাঁকে ছেড়ে তোমরা যাদের আহবান কর, তারা তো খেজুরের অাঁটির তুচ্ছ আবরণেরও মালিক নয়। যদি তোমরা তাদের ডাক, তাহ’লে তারা তোমাদের ডাক শুনবে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর তোমরা যে তাদের শরীক করতে, সে বিষয়টি তারা কিয়ামতের দিন অস্বীকার করবে। বস্ত্তত: সর্বজ্ঞ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ (গায়েবী খবর) অবহিত করতে পারবে না’ (ফাতির ৩৫/১৩-১৪)

القطمير: هو اللفافة التي تكون على نواة التمرة-

আয়াতে উল্লিখিত ‘ক্বিতমীর’ শব্দের অর্থ সর্ম্পকে ইবনু আববাস, মুজাহিদ, ইকরিামাহ্, আত্বা, হাসান এবং কাতাদাহ প্রমুখ মুফাস্সিরগণ বলেন, ‘কিত্বমীর’ হ’ল খেঁজুর বীজের উপরের পাতলা আবরণ’।[8]  যারা সামান্য পাতলা আবরণের মালিক নয় তারা একজন মানুষের কিভাবে উপকার করতে পারে? যারা আল্লাহ  ব্যতীত অন্য কাউকে আউলিয়া, বন্ধু, অভিভাবক হিসাবে ডাকে তাদের উদাহরণ দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنْكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنْكَبُوتِ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ-

‘যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়। সে (নিজের নিরাপত্তার জন্য) ঘর তৈরী করে। অথচ ঘর সমূহের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো সবচেয়ে দুর্বল। যদি তারা জানত (যে অন্য কেউ তাদের কোন উপকার করতে পারে না)’ (আনকাবূত ২৯/৪১)। অর্থাৎ তাদের আউলিয়া বা উপাস্য মাকড়সার জালের মতো দুর্বল যা অতি ক্ষণস্থায়ী সামান্য বাতাসেই ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর ক্ষমতার চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন,

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِضِيَاءٍ أَفَلَا تَسْمَعُونَ . قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ أَفَلَا تُبْصِرُونَ-

‘তুমি বল তোমরা ভেবে দেখছ কি, যদি আল্লাহ রাত্রিকে তোমাদের উপর ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তাহ’লে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন উপাস্য আছে, যে তোমাদের নিকট সূর্য কিরণ এনে দিবে? এরপরেও কি তোমরা কথা শুনবে না? বল, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ দিবসকে তোমাদের উপর ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তাহ’লে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন উপাস্য আছে যে তোমাদের নিকট রাত্রি এনে দিবে, যার মধ্যে তোমরা বিশ্রাম নিতে পার? এর পরেও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (ক্বাছাছ ২৮/৭১-৭২)। নমরূদের ক্ষমতার অসারতার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,

‘তুমি কি ঐ ব্যক্তির কথা শোনোনি, যে ব্যক্তি ইবরাহীমের সাথে তার প্রতিপালক সম্পর্কে বিতর্ক করেছিল? কারণ আল্লাহ তাকে রাজত্ব প্রদান করেছিলেন। যখন ইবরাহীম বলল, আমার প্রতিপালক তিনি, যিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। তখন সে বলল, আমিও বাঁচাতে পারি ও মারতে পারি। ইবরাহীম বলল, আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি ওটাকে পশ্চিম থেকে উদিত কর। একথায় কাফের হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৫৮)।

উপরোক্ত আয়াতে কারীমা থেকে তৈরীকৃত বানোয়াট, বাতিল, মিথ্যা ঘোষিত মা‘বূদ বা ইলাহ্দের অক্ষমতা প্রকাশিত হয়েছে। এ সকল মিথ্যা মা‘বূদ বা ইলাহ্কে যারা ইলাহ্ হিসাবে গ্রহণ করবে তারাই পরকাল হারাবে। আখিরাতে এরা হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভুক্ত। মহান আল্লাহ  বলেন,

وَالَّذِينَ آمَنُوا بِالْبَاطِلِ وَكَفَرُوا بِاللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ-

‘আর যারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে ও আল্লাহকে অস্বীকার করে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ’ (আনকাবূত ২৯/৫২)। মিথ্যা মা‘বূদ মানলে যালিম-মুশরিকদের অর্ন্তভুক্ত হবে। তিনি তাই আরো বলেন,

وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ-

‘আল্লাহ  ব্যতীত অন্য কাউকে ডেকো না। যে তোমার ভালোও করতে পারে না এবং মন্দও করতে পারে না বস্ত্তত তুমি যদি এমন কাজ করো, তাহ’লে তুমিও যালেমদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে’ (ইউনুস ১০/১০৬)। সর্বোপরি যারা নিজেদেরকে এক আল্লাহর বান্দা হিসাবে পরিচয় দেয় এবং অন্য ইলাহ্কে তার সাথে আহবান না করে, তারাই ইবাদুর রহমান তথা দয়াময় আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ ‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না’ (তারাই ইবাদুর রহমান)। (ফুরকান ২৫/৬৮) এমনিভাবে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -এর নির্দেশিকা অনুযায়ী ইলম অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী বিষয়। এ ব্যাপারে ছহীহ ইলম না থাকার কারণে সত্য মা‘বূদ ভুলে মিথ্যা, বানোয়াট, তৈরীকৃত ও জড়পদার্থকে মা‘বূদ হিসাবে গ্রহণ করে এক শ্রেণীর মুসলিম নামধারী শিরকে লিপ্ত।

লেখক : ভেরামতলী, শ্রীপুর, গাজীপুর।


[1]. বুখারী হা/৮তিরমিযী হা/২৬০৯ ।

[2]. মুসলিম হা/১৪৫।

[3]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৬০৬৬।

[4]. কুরতুবী ও ইবনু কাছীর, সূরা ইবরাহীম ২৪ আয়াতের তাফসীর দ্রঃ; তাফসীর ইবনে আববাস, বৈরূত ১৯৮৮, পৃ. ২৫৮]।

[5]. ফাতহুল মাজীদ ৭৩ পৃ.  (শারহু কিতাবুত তাওহীদ) মাকতাবা তালেবুল ইলম, ইহইয়াউত তুরাস আল ইসলামী। 

[6]. ফাতহুল মাজীদ ৩৪ পৃ. (শারহু কিতাবুত তাওহীদ)।

[7]. বুখারী হা/৪২৫

[8]. তাফসীরে ইবনু কাছীর ৬/৫৪১ পৃ.



বিষয়সমূহ: তাওহীদ
আরও