ইসমাঈলী শী‘আদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস (২য় কিস্তি)

মুখতারুল ইসলাম 880 বার পঠিত

(গ) অছি ও অছাইয়াহ :

ইসমাঈলীরা অছি ও অছাইয়াহকে নবী-রাসূলের রেসালতের মত মনে করে। তারা এও মনে করে যে, এ দু’টির তেমন কোন তফাৎ নেই। ইসমাঈলী দলের বিখ্যাত মিছরী আলেম ও লেখক পূর্বসূরীদের মতামত উল্লেখ করে বলেন, অছি নবীর চেয়ে সম্মানিত। কেউ কেউ বলেন, নবী-অছি উভয়টি সমান মর্যাদার। তবে তাদের মূল বিশ্বাস হ’ল, অছি সাধারণ ইমামের উপর মর্যাদাবান। অছাইয়াহ ও ইমামতের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। প্রত্যক নবীর অছি রয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর অছি। তাদের মধ্যে মান-মর্যাদার কোন তফাৎ নেই।[1]

তাদের ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহ নিম্নরূপ :

১. কিরমানী বলেন, তাওহীদের দাওয়াত ও হুদুদ কায়েমের জন্য প্রথমেই অছির প্রয়োজন, যা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। নবী ও অছির মাঝে পরিপূর্ণতায় কোন পার্থক্য নেই।[2]

২. তারা আলী (রাঃ)-এর উপর মিথ্যারোপ করে বলে, আলী (রাঃ) বলেন, আমি ও মুহাম্মাদ আল্লাহর একই নূরের সৃষ্টি। আল্লাহ তা‘আলা নূরকে দু’ভাগে ভাগ হতে বললেন। নূর দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। আল্লাহ প্রথম ভাগকে বললেন, তুমি মুহাম্মাদ হয়ে যাও। আর দ্বিতীয় ভাগকে বললেন, তুমি আলী হয়ে যাও।[3]

৩. নু‘মান রাসূল (ছাঃ)-এর উপর মিথ্যারোপ করে বলেন, আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে আমার ও আমার অছি আলীর খবর দিয়েছেন এবং আমার ও তার বংশধর, ইমামের বংশধরের সকলের ব্যাপারে পূর্ববতী সকল নবীর নিকট থেকে বায়‘আত নিয়েছেন এবং আমাদের ব্যাপারে তাদের সুসংবাদও দিয়েছেন।[4]

৪. জা‘ফর ইবন মানছূর ইয়ামন বলেন, আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করো না, অর্থাৎ আলী (রাঃ)-এর পথ পরিস্কার কর। কেননা সেটিই আল্লাহর পথ এবং তার অনুসরণ ব্যতীত কারো কোন ইবাদত কবুল হবে না।[5]

৫. হেবাতুল্লাহ সিরাজী বলেন, অছি (আঃ) না থাকলে, আল্লাহর অস্তিত্বই অসার হয়ে পড়বে।[6]

পর্যালোচনা ও জবাব :

অছি ও অছাইয়াহ সংক্রান্ত সমস্ত বর্ণনা রাসূল (ছাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-এর নামে জালিয়াতি ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ। তাদের এ সমস্ত বল্গাহীন কথাবার্তা ও মিথ্যাচারের সাথে ইসলামের কোনই সম্পর্ক নেই।[7] 

(ঘ) ইমামত ও ইমামগণ :

ইমামত ও ইমামগণ সংক্রান্ত আক্বীদা ইসমাঈলী দ্বীনের মূল ভিত। ইমামত ও ইমামগণই ইসমাঈলী মতাদর্শের মূল কেন্দ্রবিন্দু, যার উপর ভিত্তি করেই ইসমাঈলী আক্বীদা টিকে আছে।[8]

তাদের ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহ নিম্নরূপ :

১. ইমামত হ’ল আল্লাহর ফরযকৃত বিধান ও দ্বীনের পরিপূর্ণতা। এটা ব্যতীত দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। দ্বীনের হুজ্জাত ইমামতে ঈমান না আনলে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান দুরস্ত হয় না। ইমামতের কারণে দ্বীন ও শরী‘আত টিকে আছে। আল্লাহ বান্দাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দিবেন না। দ্বীনের ফরয ইমামতের হিসাব নিবেন এবং বান্দাদেরকে তার মাধ্যমে হেদায়াতের পথে অটুট রাখবেন। রাসূলই এ বিষয়ে তাকীদ দিয়েছেন এবং সকলে এ ব্যাপারে একমত।[9]

২. শারফ আলী ইসমাঈলী বলেন, বেলায়েত হ’ল ইসলামের চূড়ান্ত ভিত্তি।[10]

৩. তারা বলে, আল্লাহর সম্মানিত বান্দাদের জন্য এটি দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা।[11]

৪. জা‘ফর ইবন মানছূর ইয়ামন বলেন, আলী ও আলীর বেলায়েতের উপর আনুগত্য ব্যতীত দ্বীন নেই। তার ভালবাসা ও আন্তরিকতায় নে‘মতের পরিপূর্ণতা ও বান্দার ফরয, সুন্নাতের কবুলিয়াত রয়েছে। তার পরবর্তীতে তার ছেলে-সন্তান, ইমামরা সে সম্মানের ভাগীদার হবে।[12]

৫. হাসান ইবন নূহ হিন্দী বলেন, পৃথিবী কখনো আল্লাহর দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে থাকে না এবং তিনি বান্দাদের হেদায়াতে নিমগ্ন থাকেন। সেটি হয় প্রকাশ্যে সুবিদিতভাবে অথবা অপ্রকাশ্যে প্রচ্ছন্নভাবে।[13]

৬. কারমানী আল্লাহর আদেশের ব্যাপারে বলেন, আল্লাহর আদেশ হ’ল ইমামের মু‘জিযা।[14]

৭. হিবাতুল্লাহ সিরাজী বলেন, ইমামের সাহায্যে আকাশের সমস্ত ফেরেশতা এগিয়ে আসে।[15]

পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন

তারা বলে, যে ব্যক্তি ইমামকে না চিনেই মারা গেল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল, নিষ্পাপ ইমাম শুরু এবং শেষ সমস্ত গায়েবের খবর রাখেন, তাদের কর্মকান্ড অস্বীকার করা যাবে না, ইমামের পরবর্তীজন ইমাম জীবিত থাকতে ইমাম হবে না, পিতা বেঁচে থাকতে পুত্র ইমাম হবে না, শুধুমাত্র ইমামের বড় ছেলে ইমাম হতে পারবে; অন্য কোন ব্যক্তি ইমাম হিসাবে সম্বোধিত হতে পারবে না, ইমামের উচিৎ তার দাফনের পূর্বেই ইমামতের মহান দায়িত্ব অন্যের নিকট অর্পণ করা। ইমামকে সিজদা করা জায়েয। কেননা ইমামের বিশেষ ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তি রয়েছে।[16]

কুরআনের জাহেরী তাফসীরের সাথে সাথে তারা বাতেনী তাফসীসের বিশ্বাস করে। যেমন মহান আল্লাহর বাণী- كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ ‘প্রত্যেক বস্ত্তই ধ্বংস হবে তাঁর চেহারা ব্যতীত’। [17] তারা বলে, এখানে ইমামের চেহারাকে বুঝানো হয়েছে।[18]

তারা ক্বাদারিয়া, জাবারিয়া, মু‘তাযিলা ও মু‘আত্তিলা বা নির্গুণবাদীদের মত আক্বীদা পোষণ করে। কুরআন-সুন্নাহকে তারা দেয়ালে ছুঁড়ে মেরেছে এবং নতুন বাতেনী চিন্তা তথা এরিষ্টটল, প্লেটো, পীথাগোরাসের কুফুরী দর্শনের সাথে মাজূসী বা অগ্নি উপাসক, মূর্তিপূজক, ইহুদী দর্শনের মিশ্রণ তৈরী করে নতুন ধর্ম আবিস্কার করেছে, যার সাথে ইসলামের মূল বিষয়বস্ত্ত, ভাষা, বর্ণনার পদ্ধতি, বর্ণনার পরম্পরা কোন মিল নেই। এর উদ্দেশ্য একটাই তা হ’ল মানুষদেরকে সহজ-সরল কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া ও মুহাম্মাদ (ছাঃ) আনীত আল্লাহর অবিমিশ্র শ্বেত-শুভ্র দ্বীনকে কালিমালিপ্ত করা ও এর আলোকোজ্জ্বল বাতিকে চিরতরে নিভিয়ে দেয়া। মহান আল্লাহ বলেন, يُرِيدُونَ أَنْ يُطْفِئُوا نُورَ اللهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللهُ إِلَّا أَنْ يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ ‘তারা চায় মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতিকে নিভিয়ে দিতে। অথচ আল্লাহ স্বীয় জ্যোতিকে পূর্ণতায় পৌঁছানো ব্যতীত ক্ষান্ত হবেন না। যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপসন্দ করে।[19]

পর্যালোচনা ও জবাব :

ইমাম ও ইমামত সংক্রান্ত ভ্রান্তি নিরসনে কয়েকটি বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল-

ক. বংশীয় বিধিবিধান বিলুপ্তিকরণ :

তাদের নীতি হ’ল ইমামের পর ইমাম হওয়া। কিন্তু জা‘ফর ইবন মুহাম্মাদ বাক্বের মারা গেল। তার পরবর্তীতে তার বড় ছেলে ইসমাঈল ইমাম হবে। কিন্তু তার জীবদ্দশাতেই ইসমাঈল মারা যায়। তাদের দলীল হ’ল- মহান আল্লাহর বাণী- وَجَعَلَهَا كَلِمَةً بَاقِيَةً فِي عَقِبِهِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ‘আর এ কথাটিকে সে অক্ষয় বাণীরুপে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে স্থায়ীভাবে রেখে গেছে, যাতে তারা আল্লাহর দিকেই ফিরে আসে’।[20] অথচ উপরোক্ত দলীলটি মোটেই ভাই থেকে ভাই ইমামতের পরিবর্তন তথা হাসানের পরে হুসাইনের ইমাম হওয়ার প্রমাণ বহন করেনা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হ’ল তারা নিজেরাই এ বিষয়ে সাথে নিজেদের সাথে ইখতিলাফে মত্ত। অনুরূপভাবে আব্দুল্লাহ মারা গেলে তার ভাই আযীয ইমাম হন। এখানে তো সন্তান ইমাম হয়নি। এভাবে ইসমাঈলীরা মূলত নিজেরাই তাদের মাযহাবের ভিত্তি নষ্ট করে দিয়েছে। অন্যান্য দল বিশেষ করে শী‘আ ইছনা আশারিয়া, যায়াদিয়াহরা হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে মেনে নিয়েছে। কিন্তু তারা পিতার পর সন্তান ইমাম হবে বলে ভিত্তিহীন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তবে কিভাবে জা‘ফর ইবন মুহাম্মাদ বাক্বেরের পর ইসমাঈলের নেতৃত্বের সমন্বয় হবে? এগুলোই প্রমাণ করে যে, ইসমাঈলী ধর্মের ভিত সম্পূর্ণ বাতিলের উপর দন্ডায়মান।[21]

খ. বড় সন্তানের ইমামত রহিতকরণ :

তাদের আরেকটি বিতর্কিত বিষয় হ’ল পিতার বড় সন্তান ইমাম হবে। কিন্তু দেখা গেছে যে, ভাইয়ের পরে ভাই ওয়ারিছসূত্রে দায়িত্বে এসেছে। এ ধরণের প্রচুর বর্ণনা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে পাওয়া যাবে। অথচ আব্দুল্লাহর পরে তার দ্বিতীয় পুত্র ইমাম হয়েছেন।[22]

গ. পর্যায়ক্রমে ইমামতের ধারাবাহিকতা :

পিতার পরপরই পুত্র ইমাম হওয়ার ইসমাঈলীদের চিরন্তন নীতিমালায় বিপরীত আচরণই লক্ষ্যণীয়। কেননা তাদের হাকেম বি আমরিল্লাহ নামে খ্যাত তিনি তার কথা রাখেননি। তিনি সাধারণের মানুষের সন্তান আব্দুর রহীম ইবনে ইলইয়াস ইবন আহমাদ ইবন মাহদীকে ইমাম নির্বাচন করে যান।

উল্লেখ থাকে যে, আলী হ’ল ইবন হাকেম বি আমরিল্লাহ-এর সন্তান, যাকে যাহেরও বলা হয়। ৩৯৪ হিজরীতে জন্ম গ্রহণকারী তাদের তথাকথিত ইসমাঈলী ইবন হাকেম বিআমরিল্লাহ তার কথা রেখে যাননি। তিনি অন্য একজন ব্যক্তিকে তার ইমামতের স্থলভিষিক্ত করে যান। এভাবে তারা প্রকাশ্যে তাদের নীতিমালা লংঘন করেছেন।[23]

ঘ. ইমাম নির্বাচন :

ইসমাঈলীরা বিশ্বাস করে যে, একজন ইমাম জীবিত থাকতে অপরজন ইমাম হতে পারবে না এবং একই সময়ে দুই জন ইমামের ব্যাপারে ভাবাটাও অন্যায়। একজন ইমাম মারা গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার বংশধরদের থেকে বড় সন্তান ইমাম হবে। কিন্তু তাদের এ নীতির ক্ষেত্রে বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়। কেননা পিতা জা‘ফরের রুযী থাকতেই ইসমাঈলের নাম ঘোষণা করায় দু’জন ইমামের ইমামতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, যা তাদেরই নীতি বর্হিভূত।[24]

ঙ. মৃত ইমামের দাফনের পূর্বেই নতুন ইমামের হুজ্জত কায়েম হবে :

পূর্ববর্তী ইমামের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে নতুন ইমামের হুজ্জত কায়েম হতে হবে। কেননা তারা বলে, ইমামের পর হুজ্জত বৈধ নয়, যতক্ষণ না ইমামের দাফনের পর সে নিজে হুজ্জত কায়েম করেন।[25]

খুবই আশ্চর্যের বিষয় হ’ল- তাদের কোন ইমাম এই আক্বীদা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করে গেছেন বলে মনে হয় না। যেমন তাদের ইমাম মুঈযুদ্দীন আব্দুল্লাহ তার হুজ্জত কায়েম করেননি তার পিতা মানছূরের দাফনের পূর্বে।[26]

চ. ইমামের বয়স :

ইসমাঈলীদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইমাম বালক বা কিশোর হ’লে গ্রহণীয় নয়। অবশ্যই ইমামকে সাবালক বয়সের হতে হবে। অথচ তাদের ইমাম মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল ইবন জা‘ফর মাত্র তিন বছর বয়সে ইমামতের আসন অলংকৃত করেন।[27]

এভাবে ইসমাঈলীরা নিজেরাই নিজেদের আক্বীদা ও বিশ্বাসকে ভঙগুর ও অবাস্তব প্রমাণ করেছে।

(ঙ) মাবদা বা সৃষ্টির শুরু :

ইসমাঈলীরা মনে করে যে, মহান আল্লাহ জ্ঞান দ্বারা সৃষ্টির সূচনা করেছেন।[28] ইখওয়ানুছ ছাফারা মনে করে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল জ্ঞান দ্বারা, যা প্রাচুর্যের পথ থেকে উঠে এসেছে। কিন্তু কারমানী, শীরাজী, হারেছী, ছূরী, শিহাবুদ্দীন প্রমুখ আধুনিক দার্শনিকগণ মনে করেন, জ্ঞান আবিস্কার দ্বারা যাত্রা শুরু করেছিল, প্রাচুর্যের পথে নয়।[29]

তাদের ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহ নিম্নরূপ :

১. সিজিস্তানী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রথম সৃষ্টির মাধ্যমে তার আদেশমালা শুরু করেছেন। তার নাম দিয়েছেন জ্ঞান। সৃষ্টিকর্তা যখন রুবূবিয়্যাত থেকে খালি হয়ে সৃষ্টিজীবের মধ্যে নিজের গুণাগুণ ঢেলে দিলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান ব্যতীত আর কিছু সৃষ্টি করলেন না।[30]

আল্লাহ জ্ঞান সৃষ্টি করলেন একবারে, নাকি বারেবারে- এ প্রশ্নের জবাবে তাদের অধিকাংশ বিদ্বান একবারেই সব সৃষ্টিজীব সৃজন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। অপরদিকে শীরাজী, কিরমানী, সিজিস্তানীসহ অন্যান্যরা বারে বারে প্রয়োজনানুসারে আল্লাহ সৃষ্টিজীব সৃজন করেছেন বলে মত প্রকাশ করেছেন।

২. হামেদী বলেন, দুনিয়া সৃষ্টি এবং এর পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে একবারে, বারেবারে নয়। দুনিয়ার প্রথম ও শেষ, আবার শেষ ও প্রথম বলে কিছু নেই।[31]

৩. বারে বারে সৃষ্টির পক্ষে সিজিস্তানী বলেন, আল্লাহর আদেশের প্রথম সৃষ্টি- জ্ঞান। অতঃপর তিনি কলম, আরশ, ভাগ্য, আত্মা ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন।[32]

পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন :

ইসমাঈলীদের বিশ্বাস আল্লাহ সর্বপ্রথম জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তার জ্ঞানের আলোয় অনেক কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি বা চেহারা দান করেছেন ও অদৃশ্য লোকে আরো অনেক কিছু সৃজিত হয়েছে।[33]

ইসমাঈলীরা মূলতঃ এবিষয়ে নিজেরা বিভ্রান্ত হয়েছে এবং অন্যদের বিভ্রান্ত করেছে। কেননা এই আক্বীদা পোষণের ক্ষেত্রে মূলত আধুনিক যুগের দার্শনিকদের পথ অনুসরণ করেছে, যারা বলে, আল্লাহ বলে কিছু ছিলনা। অথচ তাদের কাছ থেকে দ্বীন কেন্দ্রিক কোন কিছুই গ্রহণীয় নয়।[34] মহান আল্লাহ বলেন, أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا ‘তারা কেন কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? যদি এটা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারু নিকট থেকে আসত, তাহলে তারা এর মধ্যে বহু গরমিল দেখতে পেত।[35]

উল্লেখ্য যে, মানুষ ও সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে এ ধরণের চিন্তাচেতনা আল্লাহর কালাম ও তদীয় রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক প্রমাণিত যাবতীয় বর্ণনা পরিপন্থী। কেননা এটি সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম পানি সৃষ্টি করেছেন। আর এটি এমন একটি সুপ্রসিদ্ধ বিষয় যা শিক্ষিত, অশিক্ষিত ছোট, বড় সকলে ভাল করেই জানে।[36](চলবে)


[1]. আল-ইসমাঈলিয়াহ : তারীখ ওয়া আক্বাইদ, পৃ. ৩৫০।

[2]. তদেব, পৃ. ৩৫০।

[3]. তদেব, পৃ. ৩৫০-৩৫১।

[4]. তদেব, পৃ. ৩৫৭।

[5]. তদেব।

[6]. তদেব, পৃ. ৩৬৫।

[7]. তদেব, পৃ. ৩৪৯।

[8]. তদেব, পৃ. ৩৬৭।

[9]. তদেব, পৃ. ৩৬৭।

[10]. তদেব, পৃ. ৩৬৮।

[11]. তদেব, পৃ. ৩৭০

[12]. তদেব, পৃ. ৩৭০-৩৭১।

[13]. তদেব, পৃ. ৩৭৪।

[14]. তদেব, পৃ. ৩৭৬।

[15]. তদেব, পৃ. ৩৭৭; গৃহীত : শীরাজী, দিওয়ানুল মুওয়াইইদ ফি দ্বীনিল্লাহ, পৃ. ২৪৪।

[16]. তদেব, পৃ. ৩৮৪।

[17]. আল-কুরআন, সূরা ক্বাছাছ, আয়াত-২৮/৮৮।

[18]. আল-ইসমাঈলিয়াহ : তারীখ ওয়া আক্বাইদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৯২।

[19]. আল-কুরআন, সূরা তাওবাহ, আয়াত-৯/৩২; আল-ইসমাঈলিয়াহ : তারীখ ওয়া আক্বাইদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬৮।

[20]. আল-কুরআন, সূরা যুখরুফ, আয়াত-৪৩/২৮।

[21]. আল-ইসমাঈলিয়াহ : তারীখ ওয়া আক্বাইদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬৮।

[22]. তদেব, পৃ. ২৬৪।

[23]. তদেব, পৃ. ৬৬৯।

[24]. তদেব, পৃ. ৬৬৯।

[25]. তদেব, পৃ. ৬৭৪।

[26]. তদেব, পৃ. ৬৭৪।

[27]. তদেব, পৃ. ৬৭৯।

[28]. তদেব, পৃ. ৩৯৮।

[29]. তদেব, পৃ. ৩৯৮।

[30]. তদেব, পৃ. ৩৯৯।

[31]. তদেব, পৃ. ৪০৪।

[32]. তদেব, পৃ. ৪০৭।

[33]. তদেব, পৃ. ৪০৯।

[34]. তদেব, পৃ. ৩৯৬-৩৯৭।

[35]. আল-কুরআন, সূরা নিসা, আয়াত-৪/৮২।

[36]. আল-ইসমাঈলিয়াহ : তারীখ ওয়া আক্বাইদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪১৮।



বিষয়সমূহ: আক্বীদা
আরও