পর্ণোগ্রাফীর আগ্রাসন ও তা থেকে মুক্তির উপায় (শেষ কিস্তি)

মফীযুল ইসলাম 8906 বার পঠিত

পর্ণোগ্রাফীর আগ্রাসন ও তা থেকে মুক্তির উপায় (শেষ কিস্তি)

পরকালীন জীবন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা :

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাঃ) বলেছেন, اللهم لا عيش إلا عيش الآخره-  ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন’।[1] মহান আল্লাহ বলেন,

 وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ-  

‘এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালীন জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানতো’ (আনকাবুত ২৯/৬৪) অন্যত্র আল্লাহ বলেন,  وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى- ‘আখেরাত হলো উত্তম ও চিরস্থায়ী’ (আলা ৮৭/১৭) আল্লাহ আরো বলেন, لَا يَمَسُّهُمْ فِيهَا نَصَبٌ وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ- ‘সেখানে তাদেরকে কোনরূপ বিষণ্ণতা স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখানে থেকে বহিস্কৃত ও হবে না’ (হিজর ১৫/৪৮)। যে ব্যক্তি দুনিয়ার ভোগ বিলাস) অন্বেষণে লিপ্ত থাকে, আখেরাতকে সে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর যে আখেরাতের পাথেয় অন্বেষণে লিপ্ত থাকে, সে দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতএব তোমরা চিরস্থায়ী আখেরাতের জন্য ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত কর’।[2] আখেরাতের সুখ-সম্ভার দুনিয়ার চাইতে কত উত্তম! সে বিষয়ে আল্ল­াহ বলেন,

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ-  

‘কেউ জানে না তার কর্মের প্রতিদান হিসাবে কী কী চক্ষু শীতলকারী বস্ত্ত তাদের জন্য লুকিয়ে আছে’ (সাজদাহ ৩২/১৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্ল­াহ বলেন,

أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ-

‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন সুখ-সম্ভার প্রস্ত্তত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শোনেনি এবং মানুষের অন্তর কখনো কল্পনা করেনি’।[3]

মহান আললাহ  বলেন, فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ ‘তোমরা দৌড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর’ (মায়েদা ৫/৪৮)। আর তা হ’ল জান্নাতের নায-নেয়ামত। আল্লাহ  অন্যত্র বলেন, -وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُون ‘প্রতিযোগীরা এটা লাভের প্রতিযোগিতা করুক’ (মুতাফফিফীন ৮৩/২৬)

হায়াত থাকতে কল্যাণের পথে ধাবিত হওয়া :

মহান আল্লাহ  আমাদের এ কথা জানিয়ে বলেন,

 وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ- فَاعْتَرَفُوا بِذَنْبِهِمْ فَسُحْقًا لِأَصْحَابِ السَّعِيرِ-

‘তারা বলবে, ( হায় আফসোস!) আমরা যদি শুনতাম অথবা বুঝতাম তাহ’লে আমরা জ্বলন্ত আগুনের বাশিন্দাদের অন্তর্ভুক্ত হতাম না। তারা তাদের অপরাধ শিকার করবে। অতএব দূর হোক জাহান্নামের অধিবাসীরা ! (মুলক ৬৭/১০-১১) তিনি আরও বলেন,

فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ - وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ -

‘অতঃপর কেউ অণুপরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণুপরিমাণ অসৎকর্ম করলেও তা দেখতে পাবে’ (যিলযাল ৯৯/৭-৮)। অন্যত্র আল্লাহ  আরো বলেন,

يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا-  

‘যেদিন প্রত্যেকে চোখের সামনে উপস্থিত দেখতে পাবে যেসব ভাল কাজ সে করেছে এবং যা কিছু মন্দ কাজ সে করেছিল। সেদিন সে কামনা করবে, যদি এইসব  কর্মের ও তার মধ্যকার ব্যবধান অনেক দূরের হতো’ (আলে ইমরান ৩/৩০) আল্লাহ  বলেন,

وَلَوْ تَرَى إِذِ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُو رُءُوسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ-

‘তুমি যদি দেখতে যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে (আর বলবে), হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম, কাজেই আমাদেরকে (দুনিয়াতে) আবার পাঠিয়ে দাও, আমরা ভাল-কল্যাণমূলক কাজ করব, আমরা এখন দৃঢ় বিশ্বাসী’ (সাজদাহ ৩২/১২) এ মর্মে আরও একটি বাণী স্মরণীয়,

وَهُمْ يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَا أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَاءَكُمُ النَّذِيرُ فَذُوقُوا فَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ نَصِيرٍ-

‘সেখানে তারা চিৎকার করে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, বের করুন আমাদেরকে, আমরা কল্যাণকর কাজ করব, আমরা যে কাজ করতাম তা করব না, আমি কি তোমাদেরকে এতটা সময় দেইনি যে, তখন কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে চাইলে উপদেশ গ্রহণ করতে পারতে?  আর তোমাদের কাছে সতর্ককারীও এসেছিল। কাজেই শাস্তি ভোগ কর। যালিমদের কোন  সাহায্যকারী নেই’ (ফাতির ৩৫/৩৭)

অন্যত্র কুরআন উপদেশ দিচ্ছে-

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ -

‘তুমি ঘোষণা করে দাও, নিশ্চয়ই আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম ও অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ’ (রাফ ৭/৩৩)। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, (আল্লাহ  তা‘আলা)  حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ‘হারাম করেছেন প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতাকে’।[4]

পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করা :

জীবনের সাথে সংশিস্নষ্ট বহু বৈধ-অবৈধ বিষয় মানুষ জানতে পারে ইসলামের বিধি-বিধান জানার মাধ্যমে। ইসলাম-ই মানবতার একমাত্র সমাধান। তাই আল্লাহ  বলেন,

 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ-

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন’ (বাক্বারাহ ২/২০৮)। ধর্মীয় ও বৈষয়িক উভয় জীবনে ইসলামের বিধি-বিধানের পুরাপুরি অনুসরণ করতে হবে।  

একনিষ্ঠ মনে ছালাত আদায় :

ছালাত এমন এক ইবাদত যা আদায় করা ব্যতীত মানুষ মুসলমান থাকতে না। ছালাতই পারে মানুষকে প্রকৃত মুসলিম বানাতে, শান্তি ও সকল প্রকার পর্ণোগ্রাফীর, অশ্লীলতা, নোংরামি থেকে হিফাযত করতে। মহান আল্লাহ  বলেন, إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ‘নিশ্চয়ই ছালাত সকল অশস্নীলত ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ২৯/৪৫)। জুন্দুব ইবনু সুফয়ান (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِى ذِمَّةِ اللَّهِ ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত আদায় করল, সে আল্লাহর জামানত লাভ করল’।[5] অনুরূপভাবে একানিষ্ঠভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করার মাধ্যমে মানুষ শয়তানের যাবতীয় নোংরামি, অশ্লীলতা থেকে রক্ষা পাবে। তাই ছালাত আদায়ে ব্রতী হওয়া যরূরী।

ধৈর্য ধারণ করা :

মহানবী (ছাঃ) বলেন,  الصَّبْرُ ضِيَاءٌ‘ধৈর্য হ’ল আলো’।[6]  আল্লাহ তা’আলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারনের প্রতিযোগিতা কর’ (আলে-ইমরান ৩/২০০)। তাই পর্ণোগ্রাফীর নোংরামি থেকে নিজেকে পবিত্র রাখতে ঢের ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করতে হবে। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি উহা থেকে অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ  তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ , তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন। আর কোন ব্যক্তিকে এমন  কোন দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম হ’তে পারে’।[7] ধৈর্যশীল প্রিয় বন্ধু! সকল বিপদে সকল পাপাচারের নিজেকে সংযত করায় রয়েছে মহা পুরস্কার। আল্লাহ  তা’আলা বলেন, وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى-  فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى‘যে স্বীয় প্রতিপালকের সামানে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং খেয়াল খুশী হ’তে মনকে বিরত রাখে, অবশ্যই জান্নাত হবে তার আবাসস্থল (নাযিআত ৭৯/৪০-৪১)। অন্যত্র তিনি আরোও বলেন, إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে’ (যুমার ৩৯/১০)। সেই পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে আল্লাহ  বলেন, وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا ‘আর তাদের ধৈর্য সহিষ্ণুতার বিনিময়ে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক’ (দাহর ৭৬/১২)। আল্লাহ  আরো বলেন,  وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ‘আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে হাজির হ’তে হবে এই ভয় রাখে (এবং সেই ভয়ে সকল নোংরামী, পাপ পঙ্কিলতা পরিহার করে) তার জন্য রয়েছে দু’টি জান্নাত’ (৫৫/৪৬)। অতএব পরকালে জান্নাত পাওয়ার আশায় পর্ণোগ্রাফী দেখা থেকে মনকে পাথরের মতো শক্ত কর। আল্লাহকে বল,

 رَبِّنَا لَمَّا جَاءَتْنَا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ-  

‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য ও দৃঢ়তা অবলম্বনের গুণে অভিষিক্ত কর আর তোমার প্রতি আত্মসমর্পিত অবস্থায় আমাদের জীবনের পরিসামাপ্তি ঘটাও’। (রাফ ৭/১২৬) 

আল্লাহকে লজ্জা করা :

মানুষ মানুষের সামনে, ক্যামেরার সামনে অশ্লীল কাজ করতে ভয় ও লজ্জা পায়। তার নোংরা কর্ম, অশ্লীল ভিডিও বিভিন্ন চ্যানেলে ও সামাজিক গণ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ পাওয়াটা বড় লজ্জাকর মনে করে। তাই আল্লাহকে প্রকৃতভাবে লজ্জা করার মাধ্যমে অশ্লীলতা থেকে বাঁচা সম্ভব। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। সকলে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমরা তো আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহকে লজ্জা করে থাকি। তিনি বললেন,  না ঐরূপ নয়। আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে মাথা ও তার সংযুক্ত অন্যান্য অঙ্গ (জিহবা, চোখ এবং কান) কে (অবৈধ প্রয়োগ হ’তে) হিফাযত করবে; পেট ও তার সংশ্লিষ্ট অঙ্গ (লিঙ্গ হাত পা ও হৃদয়কে) কে তার অবাধ্যাচরণ ও হারাম হতে) হিফাযত করবে এবং মরণ ও তার পর হাড় মাটি হয়ে যাওয়ার কথা (সর্বদা) স্মরণে রাখবে। আর যে ব্যক্তি পরকাল পাওয়ার ইচ্ছা রাখে, সে ইহকালের সৌন্দর্য পরিহার করবে। যে ব্যক্তি এসব কিছু করে, সেই প্রকতৃপক্ষে আল্লাহকে যথাযথ ভাবে লজ্জা করে’।[8] সাঈদ বিন ইয়াযীদ আযদী একদা নবী (ছাঃ)-কে বললেন, আপনি আমাকে অছীয়ত করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে অছীয়ত করছি যে, তুমি আল্লাহকে ঠিক সেইরূপ লজ্জা করবে, যেইরূপ লজ্জা করে থাক তোমার সম্প্রদায়ের নেক লোককে’।[9]

মানুষকে এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে না :

মুসলিম-অমুলিম সকল মানুষকে একথা মনে রাখতে হবে আল্লাহ এমনি এমনি আমাদের সৃষ্টি করেননি। আবার যথাযথ হিসাব-নিকাশ ছাড়া এমনি এমনি ছেড়ে দিবেন না। মহান আল্লাহ  বলেন, أَيَحْسَبُ الْإِنْسَانُ أَنْ يُتْرَكَ سُدًى  ‘মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে তাকে এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে। তাকে পুর্নজীবিত করা হবে না, আর বিচারের জন্য হাজির করাও হবে না? (ক্বিয়ামাহ ৭৫/৩৬) কখনো নয় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দেওয়া পর্যন্ত বনী আদম এক পাও নড়তে পারবে না। তন্মধ্যে একটি হলো গোটা জীবন কোন পথে অতিবাহিত করেছে। আল্লাহ  বলেন, فَيَوْمَئِذٍ لَا يُعَذِّبُ عَذَابَهُ أَحَدٌ- وَلَا  يُوثِقُ وَثَاقَهُ أَحَدٌ‘সে দিন তাঁর শাসিত্মর মত শাসিত্ম কেউ দিবেনা। সে দিন তাঁর মত বাধন কেউ বাধতে পারবে না (ফাজর ৮৯/২৫-২৬ )

আরশের ছায়া :

হাশরের ময়দানে পার্থিব জীবনের প্রতিফল লাভের জন্য সকল প্রাণি একত্রিত হবে। সেখানে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় স্থান না পেলে কঠিন দুর্দশায় পড়তে হবে। সেদিন সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর রহমতের ছায়া লাভ করবে। তন্মধ্যে এক শ্রেণী হলো এমন সব ব্যক্তি যারা নোংরামি, অশ্লীলতা, ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সেদিন সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর বিশেষ ছায়া স্থান পাবে। তন্মধ্যে এক শ্রেণী হ’ল,وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ إِلَى نَفْسِهَا قَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ- ‘এমন ব্যক্তি যাকে কোন সুন্দরী ও অভিজাত নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য আহবান জানায়, তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি’।[10] অতএব যে ব্যক্তি পর্ণোর ড্রাগে আসক্ত না হয়ে আল্লাহর অনুগত হবে এবং ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবে, আল্লাহ  তাকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন।

প্রতি রাকআত ছালাতে যা বলছি তা অনুধাবন করা :

মুসলমানদের জান-মালের শক্র হচ্ছে ইহুদী-খ্রিষ্টান। তাই তো মহান আল্লাহ  বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا  الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ ‘হে মুমিগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না’ (মায়েদাহ ৫/৫১)। চিরদিনই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করার অপতৎপরতায় মেতে আছে। মারণাস্ত্রের প্রয়োগ ও তার হুমকি দিয়ে মুসলমানদেরকে দমিয়ে রেখেছে। বর্তমানে মুসলমানদেরকে ধবংস করার জন্য অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে নামে বেনামে মাদক দ্রব্য ও অশস্নীল পর্নোগ্রাফি। সুন্দরী নারীর নগ্ন-অর্ধনগ্ন ও সেক্স দৃশ্য তৈরি করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মুহূ©র্তর মধ্যে (জঙ্গি বিমানের মত) ঝাঁকে ঝাঁকে পাঠিয়ে দিচ্ছে মুসলিম বিশ্বে। ভাসমান পতিতায় পরিণত হচ্ছে গোটা বিশ্ব’।[11] মুসলিম তুমি মনে রেখ। তোমার রব শিখিয়েছেন, غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ  তাদের পথে পরিচালিত কর না, যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট’ (ফাতিহা ১/৭) অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পরিচয় তুলে ধরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, هم اليهود والنصارى-তারা হল ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান’।[12] তবে হ্যাঁ নামধারী মুসলমানদের মধ্য থেকেও কেউ যদি তা তৈরি করে যুবসমাজ ধ্বংস করে সেও যে বড় পাপী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতি রাকাত ছালাতে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করছি। ছালাত শেষে আবার তাদের তৈরিকৃত নোংরামিতে নিমগ্ন হচ্ছি। ছি-ছি! কত  অসচেতন মুসলিম জাতি। তাই তাদের নোংরামি থেকে বাঁচার জন্য ছালাতে যা বলছি সে সম্বন্ধে গভীর অনুধাবনবোধ থাকা উচিত।

শয়তান থেকে রক্ষা পেতে কিছু আমল :

পর্ণোগ্রাফী জগতে শয়তানই মানুষকে অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আল্লাহ  বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ-   

‘হে ঈমনদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। কেউ শয়তানের পদাংক অনুসরণ করলে সে তাকে নিলজ্জতা ও অপকর্মের নির্দেশ দেয়’ (নূর ২৪/২১)। তাই শয়তানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য নিমণ আমলগুলো করা যরূরী। বাসায় ঢোকার সময়, بِسْمِ اللَّهِ বলা; বের হওয়ার সময়,

بِسْمِ اللّهِ تَوَكّلْت عَلَى اللّهِ ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوّةَ إلّا بِاَللّه-ِ  

দু’টি পাঠ করা। এছাড়া বাড়িতে সূরা বাক্বারা পাঠ করা বিশেষভাবে ঘুমানোর পূর্ব আয়তুল কুরসি পাঠ’।[13] সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইখলাছ, ফালাক, নাস তিন বার পাঠ করা।

জান্নাতী নারীদের রূপ-লাবণ্যের কথা স্মরণ রাখা :

যে নারীদের দিয়ে পর্ণোগ্রাফী তৈরি করা হচ্ছে তার চেয়ে জান্নাতী নারী কত সুন্দরী, কত নরম, কত তৃপ্তিদানকারী তা অবর্ণনীয়। তারা হবে চিরকুমারী, ষোড়শী, অনন্ত যৌবনা, সুনয়না, প্রবাল, পদ্মরাগ-সদৃশ, অফুরন্ত রূপসী। মহান আল্লাহ  বলেন,

وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ عِيْنٌ- كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ-

‘তাদের সঙ্গে থাকবে সংযত নয়না, সতীসাধ্বী, ডাগর ডাগর সুন্দর চক্ষু বিশিষ্টা সুন্দরীরা। তারা যেন সযত্নে ঢেকে রাখা ডিম (আছ-ছফফাত ৩৭/ ৪৮, ৪৯)

রাসূলুল্লাহ  ছাঃ বলেন,لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُوْرِ الْعَيْنِ يُرٰى مُخُّ سُوْقِهِنَّ مِنْ وَّرَاءِ الْعَظْمِ وَاللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ-

‘তাদের প্রত্যেকের জন্য আয়তলোচনা হুরদের মধ্য থেকে দু’জন দু’জন করে স্ত্রী থাকবে। বেশি সুন্দরী হওয়ার কারণে তাদের হাড় ও গোশতের উপর দিয়ে নলার ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে’।[14]

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐ সকল রমণীদের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করে বলেন,

وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِّنْ نِّسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى الْأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا-

‘যদি জান্নাতী কোন নারী দুনিয়াবাসীর দিকে তাকাত, তাহ’লে দুনিয়াতে যা আছে সব আলোকিত হয়ে যেত’’।[15] হে পর্ণো মুভিতে আসক্ত বন্ধু! এমন সুন্দরী রমণী গ্রহণের প্রস্ত্ততি নাও, যে কখনো তোমাকে ছেড়ে পর্নো তারকাদের মত ডাটা বন্ধ করলে চলে যাবে না এবং সর্বদা তোমাকে সন্তুষ্ট করে রাখবে। মহান আল্লাহ  বলেন,

وَلَهُمْ فِيْهَاۤ أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّهُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ-

‘সেখানে থাকবে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী, তারা সেখানে (তাদের সাথে) চিরস্থায়ী থাকবে’ (বাকারাহ ২/ ২৫)

চিরস্থায়ী এসব স্ত্রীগণ গানের সুরে বলবে, ‘আমরা সেই চিরস্থায়ী রমণী, যারা কখনই মারা যাব না; আমরা সেই নিরাপদ রমণী, যারা কখনো ভয় পাব না; আমরা সেই স্থায়ী বসবাসকারিণী, যারা কখনই চলে যাব না।’

তারা আরো বলবে, ‘আমরা চিরদিন থাকব, কখনও ধ্বংস হব না; আমরা সর্বদা সুখে-স্বাচছন্দে বসবাস করব, কখনও দুঃখ-দুশ্চিন্তায় পতিত হব না। অতএব চিরধন্য তিনি, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি।’’

যথা সময়ে বিবাহ সম্পন্ন করা :

পর্ণোগ্রাফী থেকে বাঁচার অন্যতম পন্থা হলো শরী‘আত সম্মত পদ্ধতিতে বিবাহ করা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘বিবাহ হলো যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী’।[16] মহান আল্লাহ  বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهاَ  ‘আর তাঁর নিদর্শনসমূহের  মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জন্য স্ত্রীদিগকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তোমরা তাদের কাছ থেকে শান্তি-তৃপ্তি লাভ কর’ (রূম ৩০/২১) যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

إنّ المَرْأَةَ إذا أقْبَلَتْ أقْبَلَتْ في صُورَةِ شَيْطانٍ فإذا رَأَى أحدُكُمُ امْرَأَةً فأعْجَبَتْهُ فَلْيَأْتِ أهْلَهُ فإنَّ الذي مَعَها مِثْلُ الَّذِي معَها- ‘মহিলা যখন সামনে আসে তখন শয়তানের আকৃতিতে আসে। তোমাদের কাউকে যখন কোন মহিলা মুগ্ধকরবে, তখন সে নিজ স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে মিলন করবে। কারণ তার কাছে যা আছে তার স্ত্রীর কাছেও তাই আছে’।[17]  কাজেই বিবাহের মাধ্যমে এ নোংরামি থেকে বাঁচা সম্ভব।

তওবা করা :

আল্লাহ  বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ-

‘নিশ্চয় আল্লাহ  তওবাকারীদের এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/২২২)। তিনি আরো বলেন,

وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ  -

‘যারা কোন পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিদেজদের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ  ব্যতীত গুনাহ সমূহের ক্ষমকারী কেই বা আছে এবং তারা জেনে শুনে নিজেদের (পাপ) কাজের পুনঃরাবৃত্তি করে না (আলে-ইমরান ৩/১৩৫)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে, তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন সামগ্রী ভোগ করতে দিবেন এবং প্রত্যেক মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার যথাযথ মর্যাদা দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহ’লে আমি তোমাদের জন্য কঠিন দিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি’ (হূদ ১১/৩)। মহানবী (ছাঃ) বলেছেন,

 قَالَ اللَّهُ يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِى وَرَجَوْتَنِى غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلاَ أُبَالِى يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِى غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِى يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِى بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِى لاَ تُشْرِكُ بِى شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً -

‘আল্লাহ  তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যখন তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, তখন আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যাই  হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক তাহ’লে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকটে উপস্থিত হব’।[18] আল্লাহ  বলেন, وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ ‘তিনিই তাঁর দাসদের তওবা কবুল করেন এবং পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা কর, তিনি তা জানেন’ (শুরা ৪২/২৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بَاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ النَّهَارِ -

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ  তা’আলা নিজ হাত রাতে প্রসারিত করেন, যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তওবা করে। এবং দিনে তার হাত প্রসারিত করেন, যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তওবাহ করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে’।[19]  অন্যত্র তিনি বলেন, ‘গোনাহ থেকে তওবাকারী সেই ব্যক্তির মতো যার কোন গোনাহ নেই’।[20]  তাই পর্ণোগ্রাফীর ড্রাগ থেকে বাঁচার জন্য খাঁটি তওবা করতে হবে। আল্লাহ  বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর-খাঁটি তওবা। সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মুছে দিবেন। আর তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে বয়ে চলছে ঝর্ণাধারা’ (তাহরীম ৬৬/৮)। খাঁটি- আন্তরিকভাবে তাওবা মানে উক্ত পাপের কাজে আর ফিরে না যাওয়া।

প্রার্থনা করা :

মহান আল্লাহ  বলেন,

 وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ-  

‘তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর, তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব’ (গাফের ৪০/৬০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

 إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا أَخْطَأَ خَطِيئَةً نُكِتَتْ فِى قَلْبِهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فَإِذَا هُوَ نَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ وَتَابَ سُقِلَ قَلْبُهُ-  

‘বান্দা যখন কোন পাপ করে তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। অতঃপর  যখন সে পাপ থেকে নিজেকে ছিনিয়ে নেয় এবং আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও তওবা করে তখন অন্তরের মরিচা ছাফ হয়ে যায়’।[21]

অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকার ফায়েদা :

মহান আল্লাহ  বলেছেন,

 الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ-  

‘যারা বড় বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে, ছোট ছোট অপরাধ করলে নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত’ (নাজম ৫৩/৩২)। অতএব অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকলে আল্লাহ  ছোট-খাট গোনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ  আরো বলেন,

إِلَّ„ مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا-   

‘তবে যারা তওবা করবে ঈমান আনবে, আর সৎ কাজ করবে। আল্লাহ  তাদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দেবেন, আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)

উপসংহার :

মহান আল্লাহ  বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ-

‘যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে আল্লাহ  তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যারা তলদেশ দিয়ে ঝর্ণধারা প্রবাহিত। আর যারা কুফরি করে তারা ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে আর আহার করে যেভাবে আহার করে জন্তু জানোয়ার। জাহান্নাম হবে তাদের বাসস্থান’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১২)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হ’তে এমন এ ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ও আরাম-আয়েশ ভোগকারী ছিল। অতঃপর তাকে একবার (মাত্র) জাহান্নাম  দেখানো হবে, তারপর  তাকে বলা হবে , হে আদম সন্তান! তুমি কখনো ভালো জিনিস দেখেছ? তোমার কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু! আর জান্নাতীদের মধ্য হ’তে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়াতে সবচেয়ে দুখী ও অভাবী ছিল । তাকে জান্নাতে (এক বার মাত্র)  দেখানোর পর বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি (দুনিয়াতে) কখনো কষ্ট দেখেছ? তোমার উপর কি কখনো বিপদ গেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো বিপদ দেখিনি’।[22] কাজেই মুসলিমদের কাজ হলো আসল ঠিকানা জান্নাত লাভের প্রত্যাশায় বিনয়ী ও নম্রভাবে ছালাত আদায় করা, অসার কথাবার্তা (গান-বাজনা, ভোগ-বিলাসিতা) ত্যাগ করা, চোখ, কান ও যৌনাঙ্গ হিফাযত করা। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!

 (ক্রমশঃ)

[লেখক : ৪র্থ বর্ষ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]

[1] . বুখারী হা/২৮৩৪; মুসলিম হা/১৮০৫; তিরমিযী হা/৩৮৫৭; ইবনু মাজাহ হা/৭৪২; আহমাদ হা/ ১১৭৬৮

[2] . সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২৮৭; মিশকাত হা/৫১৭৯

[3]. বুখারী হা/৭৪৯৮; মুসলিম হা/২৮২৪; মিশকাত হা/৬৫১২  মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা, পৃ. ২৪৮-২৪৯

[4] .বুখারী হা/৬৮৪৬; মুসলিম হা/১৪৯৯

[5]. মুসলিম হা/ ৬৩৪; নাসাঈ হা/৪৭১; আবু দাউদ হা/৪২৭; আহমাদ ১৬৭৯

[6]. বুখারী হা/২২৩; মুসলিম হা/ ৩৫১৭; ইবনু মাজাহ হা/২৮০; আহমাদ হা/২২৩৯৫; দারেমী হা//৬৫৩

[7]. বুখারী হা/১৪৬৯; মুসলিম হা/১০৫৩; তিরমিযী হা/২০২৪ নাসাঈ/২৫৮৮

[8] . তিরমিযী হা/২০০০

[9] . সিলসিলাহ ছহীহাহ হা/৭৪১

[10] . বুখারী হা/১৪২৩; মুসলিম হা/ ১০১৩

[11] . প্রীতি প্রকাশনী, সপ্তম মুদ্রণ ক্রুসেড ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪

[12]তিরমিযী হা/২৯৫৪; ছহীহুন জামে হা/৮২০২

[13]. মুসলিম হা/২০১৮; তিরমিযী হা/ ৩৪২২, ৩৪২৬বুখারী হা/২৩১১; দারেমী হা/ ৩৪২৪

[14]বুখারী হা/ ৩৩২৭ ; মুসলিম হা/ ২৮৩৪, মিশকাত হা/ ৫৬১৯

[15]বুখারী হা/ ৬৫৬৮,৬১৯৯; কিতাবুল জিহাদ; হুরদের গুণাবলী, অনুচ্ছেদ, তিরমিযী হা/ ১৬৫১

[16]. বুখারী হা/৫০৬৫

[17]. তিরমিযী হা/১১৫৮; সহীহা হা/২৩৫

[18]. তিরমিযী হা/২৮০৫

[19]. মুসলিম হা/৭১৬২৫

[20]. সহীহ তারাগীব হা/৩১৪৫; ইবনু মাজাহ হা/ ৪২৫০

[21]. তিরমিযী হা/ ৩৩৩৪; নাসাঈ হা/১১৬৫৮

[22]. মুসলিম হা/২৮০৭; আহমাদ হা/১২৬৯৯; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৬/৪৬৬




বিষয়সমূহ: পাপ
আরও