মৃত্যু : একটি ধ্রুব বাস্তবতা ও আমরা!

মুজাহিদুল ইসলাম 2692 বার পঠিত

দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী এবং চিরস্থায়ী জীবনের একমাত্র সেতুবন্ধন হ’ল মৃত্যু। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের জীবনাবসান হয় না বরং জীবনের এক চিরস্থায়ী অধ্যায় শুরু হয়। এটা এমন এক সত্য, যেটা প্রত্যেক ধর্মের মানুষ এমনকি নাস্তিকরাও বিশ্বাস করে। মহান আল্লাহ বলেন, كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ ‘তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। অতঃপর আমরা তোমার সম্মুখ থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজকে তোমার দৃষ্টি হবে প্রখর’ (ক্বাফ ৫০/২২)।

কিন্তু আমরা দুনিয়াকে পেয়ে আখেরাতকে ভুলতে বসেছি। নিমেণ মৃত্যু সংক্রান্ত কিছু বিষয় এবং আমাদের দুনিয়াবী চিন্তাধারার সাথে কুরআন হাদীছের সামঞ্জ্যতা কতটুকু সে ব্যাপারে আলোকপাত করা হ’ল।

মৃত্যুর যন্ত্রনা রয়েছে যা সবাইকেই ভোগ করতে হবে :

মৃত্যুর প্রথম লক্ষণ হ’ল সাকরাতুল মাউত তথা মৃত্যু যন্ত্রণা। কুরআন ও হাদীছে ‘সাকারাতুল মাউত’ সম্পর্কে বিবরণ এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَجَاءتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ذَلِكَ مَا كُنتَ مِنْهُ تَحِيدُ ‘মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে। এটা থেকেই তুমি পালাতে চাচ্ছিলে’ (ক্বাফ ৫০/১৯)

‘সাকারাতুল মাউত’ অর্থ মৃত্যুযন্ত্রণা। এটা খুবই অসহনীয় যন্ত্রণা। তবে মৃত্যু যন্ত্রণার মুখোমুখি হওয়া মানুষের খারাপ হওয়ার চিহ্ন নয়। কেননা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কেও এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। 

আয়েশা (রাঃ) বলেন, মৃত্যুর প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে চামড়ার অথবা কাঠের একপাত্রে কিছু পানি রাখা ছিল। তিনি তাঁর হাত ঐ পানির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন। এরপর নিজ চেহারা দু’হাত দ্বারা মুছে দিতেন আর বলতেন لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَاتٍ ‘লা-ইলাহা ইলাল্লাহু’ নিশ্চয়ই মৃত্যুর অনেক যন্ত্রণা। এরপর দু’হাত তুলে বলতে লাগলেন, فِي الرَّفِيقِ الأَعْلَى ‘হে আল্লাহ! আমাকে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্নদের মাঝে গণ্য করে নিন’। এ অবস্থাতেই তাঁর জান কবয করা হ’ল এবং তাঁর হাত দু’টো এলিয়ে পড়ল’।[1]

মৃত্যুর ফেরেশতা যখন উপস্থিত হয়, মৃত্যুপথযাত্রী তাদেরকে দেখতে পান। যদিও তখনও তিনি দুনিয়ার বুকে জীবিত থাকেন, তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন অনুশোচনা এবং ক্ষমা লাভের সকল আশা শেষ হয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ العَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِر ‘রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত মহান আল্লাহর বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন’।[2]

কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, পৃথিবীর এই চিরন্তন সত্য মৃত্যুকে আমরা সবচেয়ে বেশী ভুলে থাকি। দুনিয়ার বাহ্যিক চাকচিক্য যেন আমাদেরকে মৃত্যুর স্মরণ থেকে গাফেল করে রেখেছে। আমরা এমনভাবে দুনিয়ার পিছনে ছুটছি, যেন এটাই আমাদের একমাত্র বাসস্থান। কথিত সৌন্দর্য্য নগদ পেয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি আখেরাতের প্রকৃত সৌন্দর্য্যকে। এজন্যই মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা তো দুনিয়াকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাক। অথচ আখেরাতই উত্তম ও চিরস্থায়ী’ (আ‘লা ৮৭/১৬-১৭)। তবে সেই চিরস্থায়ী জীবনের সুখ-শান্তি নির্ভর করছে আমাদের এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের উপর। এই জীবনে যারা আল্লাহর ভয়ে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। তাঁর বিধি-নিষেধের ব্যাপারে সতর্ক থেকে সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করবে। কাল ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা দান করবেন। পক্ষান্তরে দুনিয়াবী জীবনে যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত না হবে। স্বেচ্ছাচারী এবং বিধি নিষেধের ব্যাপারে অবহেলা করে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে। আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিবেন। হাদীছে কুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, وَعِزَّتِي لَا أَجْمَعُ عَلَى عَبْدِي خَوْفَيْنِ وَأَمْنَيْنِ، إِذَا خَافَنِي فِي الدُّنْيَا أَمَّنْتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَإِذَا أَمِنَنِي فِي الدُّنْيَا أَخَفْتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘আমার ইযযতের কসম! আমি আমার বান্দার মাঝে কখনো দুই ভয়কে একত্রিত করিনা এবং দুই নিরাপত্তাকেও একত্রিত করি না। সুতরাং বান্দা যখন আমাকে দুনিয়াতে ভয় করে, আমি তাকে কিয়ামতের দিন নিরাপত্তা দান করব। আর যে দুনিয়াতে আমার আযাব থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে, কিয়ামতের দিন আমি তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করব’।[3]

আল্লাহ দুনিয়াতে কীভাবে পাপীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকেন?

মহান আল্লাহর বান্দার পাপাচারের কারণে তাকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দিয়ে থাকেন। সেটা শুধু পরকালেই নয়, বরং দুনিয়াতেও দিয়ে থাকেন। তবে এই শাস্তি শুধু বিপদ-মুছীবত বা শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পার্থিব জীবনে আমরা অনেক সময় ভাবতে পারি যে- আমি তো অনেক পাপ করেছি, কিন্তু আমার তো বিপদাপদ বা শাস্তি হয়নি। বরং আমি অনেকের চেয়ে তো আরোও ভালো আছি? কিন্তু মহান আল্লাহর আমাদেরকে এমনভাবে শাস্তি দিয়ে থাকেন, যেটাকে আমরা সাধারণত শাস্তিই মনে কারি না। আর সেই শাস্তি কেমন আমরা নিম্নোক্ত কথোপকথন থেকেই স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

ক্লাস চলাকালীন সময়ে এক ছাত্র তার প্রিয় উস্তাদকে জিজ্ঞেস করল, শায়েখ! আমরা প্রতিনিয়ত কত পাপ কাজ করি, কিন্তু শাস্তি তো পাই না, এর রহস্য কি?

জবাবে শিক্ষক বললেন, আল্লাহর তোমাকে প্রতিদিন কত উপায়ে শাস্তি দিচ্ছেন তুমি কি তা জানো?

এরপর তিনি ছাত্রটিকে এভাবে বুঝাতে লাগলেন-

আমি তোমাকে কতগুলো প্রশ্ন করছি নিজের সাথে বা অন্যের সাথে মিলিয়ে দেখ তো রহস্য খুঁজে পাও কিনা?

এক. আল্লাহর কি তোমাকে তাঁর সাথে গোপন আলাপের (মুনাজাত) স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেন নি?

জেনে নাও, একজন ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে কঠিন বিপদ ও পরীক্ষা হ’ল বক্র হৃদয়ের অধিকারী হওয়া। আর এ অপরাধের সবচেয়ে বড় শাস্তি হ’ল ভালো কাজ করার জন্য অতি সামান্য তাওফীক্ব পাওয়া।

দুই. তোমার জীবনে কি এমন কত শত দিন পার হয়ে যাচ্ছে না? যেখানে কুরআন তেলাওয়াতের সৌভাগ্য তোমার নছীবে জোটে না? এমনকি তুমি এই আয়াতটি শুনলেও বিন্দুমাত্র প্রভাবিত হও না! যেখানে আল্লাহ বলেন, لو أنزلنا هذا القرآن على جبل لرأيته خاشعا متصدعا من خشية الله ‘যদি এই কুরআন আমরা কোন পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম, তাহলে অবশ্যই তুমি তাকে আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হ’তে দেখতে। আর আমরা এইসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা করে’ (হাশর ৫৯/২১)।

তিন. তুমি কি অসংখ্য দীর্ঘ রাত ঘুমে-নির্ঘুমে কাটিয়ে দিচ্ছো না? যেখানে তুমি তাহাজ্জুদ থেকে বঞ্চিত হও!

চার. তোমার চোখের সামনে দিয়ে কত কল্যাণের মওসুম- রামাযান মাস, যিলহজ্জের দশ দিন ইত্যাদি পার হয়ে যাচ্ছে না? অথচ তোমার সাধ্যমত যে রকম ব্যস্ত থাকা উচিত ছিল সে রকম সুযোগ পাও না! সুতরাং এর চাইতে অধিক শাস্তি আর কি হতে পারে?

পাঁচ. সামান্য ইবাদতেই তুমি কি ক্লান্ত হয়ে যাও না? ইবাদত করতে গেলে অনেক ভারী ও পরিশ্রম বোধ কর না?

ছয়. তুমি কি অধিকাংশ সময় নিজের জিহবাটাকে আল্লাহর যিকির থেকে বঞ্চিত রাখো না?

সাত. প্রবৃত্তি আর কামনাগুলোর সামনে নিজেকে দুর্বল অনুভব করো না?

আট. সম্পদের ভালোবাসা, প্রসিদ্ধি আর প্রতিপত্তি লাভের তীব্র স্বপ্ন দেখো না?

নয়. আখেরাতের তুলনায় দুনিয়াবী সফলতা অর্জনের আকাঙ্খা বিরতিহীনভাবে তোমাকে কি প্রভাবিত করে না? এটা কি তোমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হয়ে আছে না?

সুতরাং এ গুলোর চেয়ে অধিক শাস্তি আর কি হতে পারে? জেনে নাও, এই সমস্ত মোহ আর ধোঁকাগুলোই হচেছ আমাদের পাপসমূহের ইহকালীন শাস্তি। অতএব ফিরে না আসলে মরণের পর তো প্রতিশ্রুত শাস্তি আছেই!

প্রিয় বৎস! সর্বশেষে তোমাকে একটি নছীহত করছি। নিজেকে এভাবে চলতে দিও না, সাবধান হও। জেনে রাখ, আমাদের জীবনে আল্লাহর সবচেয়ে নিমণমানের শাস্তি হ’ল, সম্পদে, স্বাস্থ্যে আর প্রভাব-প্রতিপত্তিতে সর্বদা মায়াবী অনুভূতি কাজ করা। আর সবচেয়ে বড় শাস্তি হ’ল অন্তরে আখেরাতমুখী অনুভূতির অস্তিত্ব না থাকা। ফলে এক পর্যায়ে অন্তরগুলো বক্র হ’তে হ’তে তা মোহরাবদ্ধ হয় এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।

সুতরাং আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন দুনিয়ার মোহ আমাদের গ্রাস না করে ফেলে। পার্থিব মোহ থেকে বাঁচার উপায় রাসূল (ছাঃ) আমাদের বলে দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, اَكْثِرُوْا مِنْ ذِكْرِهَاذمِ اللّذَّاتِ الْمَوْتِ ‘তোমরা দুনিয়ার স্বাদকে তিক্তকারী জিনিসকে বেশি বেশি স্মরণ কর। আর তা হ’ল মৃত্যু’।[4] এজন্য আমাদের উচিত হ’ল মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করা। মৃত্যুর জন্য উত্তম প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে মুক্তির জন্য পরকালীন পাথেয় সঞ্চয় করা।

দুনিয়ায় প্রকৃত বুদ্ধিমান ব্যক্তি কে?

দুনিয়াতে যারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অন্যকে ঠকাতে পারে, কূটকৌশলী হয়, সাধারণত আমরা তাদেরকে বুদ্ধিমান হিসাবে বিবেচনা করি। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে বুদ্ধিমানের সংজ্ঞা ছিল ভিন্ন। একবার এক আনছারী ছাহাবী তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, أَيُّ الْمُؤْمِنِينَ أَكْيَسُ؟ ‘সবচেয়ে বুদ্ধিমান মুমিন কে? রাসূল (ছাঃ) উত্তরে বললেন, أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا، وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا، أُولَئِكَ الْأَكْيَاسُ ‘তোমাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি মরণকে স্মরণ করতে পারে এবং মরণের পরবর্তী জীবনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে পারে। তারাই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান’।[5]

অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মরণকে যারা বেশী বেশী স্মরণ করে তারাই বেশী বুদ্ধিমান এবং তারাই পরবর্তী জীবনে বেশী সফলতা অর্জন করতে পারবে। দুনিয়াবী জীবনে আমরা যখন কয়েকদিনের জন্য কোন সফরে বের হই, তখন আমরা আগে থেকেই ভেবে রাখি যে, সেখানে গিয়ে কি খাবো, কোথায় থাকবো, কতো টাকা খরচ হ’তে পারে, কখন কোন পোশাক পরিধান করবো ইত্যাদি নানা রকমের প্রস্ত্ততি থাকে। অথচ আমরা মাত্র কয়েকদিনের জন্য নিজের স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছি, এমনকি আবার ফিরেও আসবো স্বস্থানে। তাতেই আমাদের কতো ধরনের প্রস্ত্ততি থাকে! পক্ষান্তরে আমরা যে এই সুন্দর পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিবো। সেই সফরটা হবে আমাদের চিরস্থায়ী। আর কখনে ফিরে আসা হবে না। এটা জানা সত্ত্বেও কি আমরা সেই চিরস্থায়ী সফরের জন্য আদৌ কোন প্রস্ত্ততি গ্রহণ করছি? কখনো কি চিন্তা করেছি যে, কবরে কিভাবে তিনটি প্রশ্নের জওয়াব দিব? এতোদিন দুনিয়ায় থেকে কি সঞ্চয় করলাম? যখন মহান আল্লাহ আমাদের যৌবন সম্পর্কে, আমাদের পুরা যিন্দেগী সম্পর্কে, আমাদের রুযী সম্পর্কে (হালাল নাকি হারাম) জিজ্ঞাসা করবেন, তখন আমরা কি জওয়াব দিব? হয়ত গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় হয়নি। কারণ দুনিয়াবী প্রতিযোগিতা, সম্পদের প্রতিযোগিতা আমাদের এতটাই ব্যস্ত রেখেছে যে, আমরা আমাদের চিরস্থায়ী জীবন সম্পর্কে চিন্তা করার সময়ই পাই না। রাসূল (ছাঃ) সেই ভয়ই করেছিলেন, আমরা সেই আশংকাজনক পরিস্থিতির উপরে দন্ডায়মান। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সম্পর্কে দরিদ্রতার ভয় করি না; কিন্তু আমি ভয় করি যে, তোমাদের উপর দুনিয়াকে প্রশস্ত করে দেওয়া হবে, যেমন প্রশস্ত করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। আর তোমরা তা লাভ করার জন্য ঐরূপ প্রতিযোগিতা করবে যেরূপ তারা প্রতিযোগিতা করেছিল। ফলে এই পার্থিব মোহ তোমাদেরকে ধ্বংস করবে, যেরূপ তাদেরকে ধ্বংস করেছিল’।[6] তাই বুদ্ধিমান মুমিন কখনো শুধু দুনিয়ার প্রাচুর্যতায় লালায়িত থাকেন না, বরং তিনি চিরস্থায়ী জীবনের জন্য উত্তম পাথেয় সঞ্চয়ে বেশী মনযোগী হয়।

আমাদের মধ্যে কে প্রকৃত ধনী?

আমাদের নিকটে ধনীর সংজ্ঞা হ’ল, যার পর্যাপ্ত ধন-দৌলত আছে, বাড়ী-গাড়ী আছে সে ব্যক্তিই হ’ল ধনী ব্যক্তি। এবার আসুন! আমরা জেনে নেই আমাদের প্রিয় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এই ধনীর সংজ্ঞা কীরূপ ছিলো। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ وَلَكِنَّ الْغِنَى غِنَى النَّفس ‘ধনসম্পদের প্রাচুর্যতার নাম ধনী নয়; বরং প্রকৃত সম্পদশালী সেই, যার অন্তর সম্পদশালী’।[7] আর অন্তরকে ধনী বানানোর অন্যতম উপায় হ’ল অল্পে তুষ্ট থাকা। একদিন রাসূল (ছাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে পাঁচটি উপদেশ প্রদান করছিলেন, যার দ্বিতীয়টি ছিল, وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ ‘আল্লাহর তা‘আলা তোমার কিসমতে যা বন্টন করেছেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকো (যত স্বল্প রূযীই হোক না কেনো), তাহলে তুমি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনী হ’তে পারবে’।[8] সুতরাং আমাদের রূযী যত কমই হোক না কেন, আমাদের উচিত হবে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা। ভেবে নিতে হবে আল্লাহর আমাদের রিযিকে এতটুকুই রেখেছেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তই সর্বোত্তম। এটা ভেবে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া আদায় করতে হবে। মোদ্দাকথা হ’ল, যে ব্যক্তি হালাল ভক্ষণকারী, অল্পে তুষ্ট এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে, সেই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী এবং সুখী মানুষ।

আমাদের প্রকৃত সম্পদ কোনটি?

গরীব-মিসকীনদের মাঝে অধিকাংশই দারিদ্রকে অভিশাপ মনে করে এবং নিজেদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগা হিসাবে বিবেচনা করে। অথচ আমরা এটা কখনো ভাবি না যে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ শ্রেষ্ঠ রাসূল (ছাঃ) কতটুকু সম্পদশালী ছিলেন। তাঁর ছাহাবায়ে কেরামই বা কতটুকু ধণাঢ্য ছিলেন। রাসূল (ছাঃ) গরীবদেরকে ভালোবাসতেন এবং তাদেরকে তাঁর পাশে স্থান দিতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাতের ইবাদতের প্রাক্কালে দো‘আ করলেন এই বলে যে, اَللَّهُمَّ أَحْيِنِي مِسْكِينًا وَأَمِتْنِي مِسْكِينًا وَاحْشُرْنِي فِي زُمْرَةِ الْمَسَاكِينِ ‘হে আল্লাহর! তুমি আমাকে মিসকীন অবস্থায় জীবিত রাখ, মিসকীন অবস্থায় মৃত্যু দান কর এবং মিসকীনদের দলে হাশর কর’। রাসূল (ছাঃ)-এর এই দো‘আ শুনে আয়েশা (রাঃ) অবাক হয়ে বললেন, لِمَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ ‘কেন? হে আল্লাহর রাসূল!’ উত্তরে তিনি বললেন, يَا عَائِشَةُ لَا تَرُدِّي الْمِسْكِينَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ يَا عَائِشَةُ أَحِبِّي الْمَسَاكِينَ وَقَرِّبِيهِمْ فَإِنَّ اللهَ يُقَرِّبُكِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘হে আয়েশা! কোন মিসকীনকে তোমার দুয়ার হ’তে (খালি হাতে) ফিরিয়ে দিও না। খেজুরের একটি টুকরা হলেও প্রদান করিও। হে আয়েশা! মিসকীনদেরকে ভালবেসো এবং তাদেরকে নিজের কাছে স্থান দিও, তাহলে আল্লাহর তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তোমাকে তাঁর নিকটে রাখবেন’।[9] সুতরাং আমাদের বাহ্যিক নিদর্শন সুন্দর হওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হ’ল অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য্য। কারণ বিচারের মাঠে আল্লাহ তা‘আলা কোন সাদা-কালো, আরব-অনাবর, ধনী-গরীব বিবেচনা করে বিচার করবেন না। আল্লাহ তা‘আলার নিকট সকল সৃষ্টিই সমান। তাই তিনি বিচার করবেন আমাদের আমল ও অন্তর দেখে। এই মর্মে রাসূল (ছা‌t) বলেন, إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ ‘নিশ্চয় আল্লাহর তোমাদের চেহারা-ছূরাত ও ধনসম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি দেখেন তোমাদের আমলসমূহ এবং অন্তরসমূহ’।[10] আমল হচ্ছে চিরস্থায়ী সম্পদ। যে ব্যক্তি এই সম্পদ দ্বারা তার অন্তরকে সম্পদশালী করবে সে ব্যক্তিই প্রকৃত ধনী বা সম্পদশালী। দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে যা কিছুই আমরা ব্যবহার করি না কেনো, কোন কিছুই প্রকৃতভাবে আমাদের নয়। আল্লাহ সাময়িকভাবে কিছুদিন ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে রাখেন মাত্র। আমরা দুনিয়াবী জীবনে হয়ত অনেক সম্পদ উপার্জনে করছি, ব্যাংক-ব্যালেন্স, গাড়ি-বাড়ি ও জমা-জমির মালিক হচ্ছি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা আমরা কতটুকু ভোগ করতে সক্ষম হচ্ছি? এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) কি বলেছেন, يَقُوْلُ الْعَبْدُ مَالِيْ مَالِيْ وَإِنَّ مَالَهُ مِنْ مَالِهِ ثَلاَثٌ مَا أَكَلَ فَأَفْنَى أَوْ لَبِسَ فَأَبْلَى أَوْ أَعْطَى فَاقْتَنَى وَمَا سِوَى ذَلِكَ فَهُوَ ذَاهِبٌ وَتَارِكُهُ لِلنَّاسِ ‘বান্দা আমার মাল, আমার সম্পদ বলে (তথা গর্ব করে)। প্রকৃতপক্ষে তার মাল হ’তে তার (উপকারে আসে) মাত্র তিনটি। যা সে খেয়ে শেষ করে দিয়েছে বা পরিধান করে ছিঁড়ে ফেলেছে অথবা দান করে (পরকালের জন্য) সংরক্ষণ করেছে। এছাড়া যা আছে তা তার কাজে আসবে না এবং সে লোকদের (ওয়ারিছদের) জন্য ছেড়ে চলে যাবে’।[11] সুতরাং আমাদের উচিৎ ক্ষণস্থায়ী সম্পদের প্রতি বেশি মনোযোগী না হয়ে চিরস্থায়ী সম্পদের প্রতি অধিক মনযোগী হওয়া। যেই সম্পদ আমাদের উপকারে আসবে সেই সম্পদের ধনভান্ডার তৈরিতে সচেষ্ট থাকা। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاَثَةٌ فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى وَاحِدٌ يَتْبَعُهُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقَى عَمَلُهُ ‘তিনটি জিনিস মৃত লাশের সাথে যায়। দু’টি ফিরে আসে এবং একটি তার সাথে থেকে যায়। তার সাথে গমন করে আত্মীয়-স্বজন, কিছু মাল-সম্পদ এবং তার আমল। পরে জাতি-গোষ্ঠী ও মাল-সম্পদ ফিরে আসে এবং থেকে যায় তার আমল’।[12]

বিচার দিবসের কঠিন পরিস্থিতি :

সম্মানীত পাঠকবৃন্দ! মায়ের গর্ভে আমরা প্রায় দীর্ঘ নয় মাস দশ দিন কাটিয়েছি। তারপর আমরা এই পৃথিবীর বুকে আগমন করেছি। এক টুকরো কাপড়ে আবৃত হয়ে অশ্রুবিহীন কান্নায় পিতামাতাসহ সকল আত্মীয়-স্বজনদের মুখে হাসি ফুটিয়ে সেদিন এসেছিলাম আমাদের পিতামাতার অন্তরের অনুরঞ্জক হয়ে। কত খুশি কত আনন্দে মুখরিত ছিল বাড়ির অঙ্গন। তারপর আল্লাহর দেয়া মেয়াদকাল ফুরিয়ে গেলেই আমরা পাড়ি জমাবো জীবনের আরেক জগতে। আসার সময় যেমন শূন্য হাতে সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে এসেছিলাম। তেমনি যাওয়ার সময়ও আবার শূন্য হাতে তিন টুকরো কাফনের কাপড়ে আবৃত হয়ে চলে যাব। চলে যাব পিতামাতাকে সন্তানহারা করে, স্ত্রীকে বিধবা করে, সন্তানদের ইয়াতীম করে। আত্মীয়স্বজন সবাই আমাদের মৃত্যুতে কাঁদবে, দুঃখ করবে। কয়েকমাস পর ফের ভুলেও যাবে। দুনিয়াতে আমরা একে অপরকে যতই ভালোবাসি না কেনো, বিচারের মাঠে কেউ কারো বোঝা বহন করবে না। সবাইকে তার নিজস্ব আমলগুণে প্রতিদান দেওয়া হবে। তাতে বিন্দুমাত্র কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى ‘কেউ কারো বোঝা

বহন করবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪)

যেই মা তার সন্তানকে জীবনের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতেন, যে বাবা দাবিহীন সারাজীবন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তার সন্তানকে লালন পালন করেছেন, যে স্ত্রীর পবিত্র চাহনী এবং নিষ্পাপ সন্তানের মায়াবী চেহারা আমাদের যাবতীয় কষ্টকে লাঘব করে, আমাদের অন্তরে প্রশান্তির সুশীতল বাতাস বইয়ে দেয়, যেই ভাই-বোনদের সাথে মিষ্টি মধুর সম্পর্ক জীবনকে আরও মধুময় করেছে। এই প্রিয় মানুষগুলো ক্বিয়ামতের দিন আমাদের চিনবে না, বাবা-মা চিনবে না তাদের কলিজার টুকরা সন্তানকে। ভাই-বোন চিনবে না তাদের আপন সহদরকে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে পলায়ন করবে। এমনকি সন্তানও চিনবে না তার পিতামাতাকে, যারা দুনিয়াতে তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন ছিলেন। এব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারপর যেদিন কান-ফাটানো আওয়াজ আসবে। সেইদিন মানুষ তার ভাইকে ছেড়ে পালাবে, আর তার মাকে ও তার বাবাকে, আর তার পতি-পত্নীকে ও তার সন্তান-সন্ততিকে, সেদিন তাদের মধ্যকার প্রত্যেক লোকেরই এত ব্যস্ততা থাকবে যা তাকে বেখেয়াল করে দেবে’ (আবাসা ৮০/৩৩-৩৭)।

আমরা একটু ভেবে দেখি, কেন, কিসের জন্য বা কাদের জন্য আমরা দুনিয়ায় এতো কষ্ট করে যাচ্ছি? কেন নিজের সর্বস্ব সময়টা শুধু দুনিয়াবী কাজেই ব্যয় করছি। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা ভালোবেসে তাঁর বান্দাদের ডেকে বলেন, يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِيْ أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدُّ فَقْرَكَ ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে (যাবতীয় দুনিয়াবী ব্যস্ততা থেকে) খালি করে নাও। আমি তোমার অন্তরকে অভাব-মুক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার দরিদ্রতার পথ বন্ধ করে দিব’।[13]

তাই আসুন! এখনো সময় আছে। এখনো আমাদের নিঃশ্বাস চলছে। এখনো তাওবার দরজা খোলা আছে। ক্ষণে ক্ষণে আমরা দুনিয়াকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আসুন! আমরা আমাদের আমলগুলোকে সুন্দর করি। জান্নাতের পথকে সুগম করায় সর্বদা সচেষ্ট থাকি। পরিশেষে আলী ইবনে আবী ত্বালেব (রাঃ)-এর বক্তব্যটি স্মরণ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘দুনিয়া পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে, আর আখেরাত সম্মুখে আসছে। আর তাদের প্রত্যেকটির সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। কেননা আজ আমলের সময়, এখানে কোন হিসাব নেই। আর আগামীকাল হিসাব-নিকাশ হবে, সেখানে কোন আমল নেই’।[14] অতএব আল্লাহ তা‘আলা যেন আমাদেরকে দুনিয়ার এই কন্টকাকীর্ণ পথকে ঈমানের সাথে পাড়ি দেয়ার তাওফীক্ব দান করেন। সর্বোপরি আমাদের আখেরাতমুখী বান্দা হিসাবে কবুল করেন। আমীন ছুম্মা আমীন।

[লেখক : ছাত্র, কুল্লিয়া ২য় বর্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী ]


[1]. বুখারী হা/৬৫১০।

[2]. তিরমিযী হা/৩৫৩৭; মিশকাত হা/২৩৪৩।

[3]. ইবনু হিববান হা/৬৪০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৬৬; সনদ ছহীহ।

[4]. তিরমিযী হা/২৩০৭; মিশকাত হা/১৬০৭; সনদ ছহীহ।

[5]. ইবনে মাজাহ হা/৪২৫৯; সনদ হাসান।

[6]. বুখারী হা/৩১৫৮; মিশকাত হা/৫১৬৩।

[7]. বুখারী হা/৬৪৪৬; মুসলিম হা/১০৫১; মিশকাত হা/৫১৭০।

[8]. তিরমিযী হা/২৩০৫; মিশকাত হা/৫১৭১; সনদ হাসান।

[9]. তিরমিযী হা/২৩৫২; মিশকাত হা/৫২৪৪; সনদ ছহীহ

[10]. মুসলিম হা/২৫৬৪; ইবনু মাজাহ হা/৪১৪৩; মিশকাত হা/৫৩১৪।

[11]. মুসলিম হা/২৯৫৯; মিশকাত হা/৫১৬৬।

[12]. বুখারী হা/৬৫১৪; মুসলিম হা/২৯৬০; মিশকাত হা/৫১৬৭।

[13]. তিরমিযী হা/২৪৬৬; মিশকাত হা/৫১৭২; সনদ ছহীহ।

[14]. বুখারী হা/৬৪১৭ (তা‘লীক্ব); মিশকাত হা/৫২১৫।



বিষয়সমূহ: মৃত্যু
আরও