শিশু-কিশোরদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও তার প্রতিকার

আযীযুর রহমান 1745 বার পঠিত

মুখবন্ধ : 

মহান আল্লাহ প্রদত্ত অফুরন্ত নে‘আমতরাজির মধ্যে অন্যতম নে‘আমত আমাদের অতি আদরের প্রাণপ্রিয় সোনামণি তথা শিশু-কিশোররা। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের সকল জাতি, সমাজ ও দেশের একমাত্র ও মৌলিক সমস্যা হচ্ছে শিশু-কিশোর এবং যুবকদের চারিত্রিক অবক্ষয়। মুসলিম জাতি আজ গতানুগতিকতা, আদর্শহীনতা, পাশ্চাত্যের অন্ধঅনুকরণ ও অপসংস্কৃতির সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে। তারই মধ্যে উজানের প্রবল স্রোত বেয়ে ছিন্ন পাতায় সাজানো তরণীর মত হাঁটি হাঁটি পা-পা করে একমাত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শে জীবন গড়ার দৃপ্ত শপথ নিয়ে নিজেদের পরিচিতি, জীবনাদর্শ, আক্বীদা-আমল ও ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার সফরে নেমেছে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘সোনামণি’। আজকের সোনামণি আগামী দিনে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। সোনামণিরাই হবে অনাগত দিনে দেশের আমীর, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সচিব, ডিসি, ভিসি, ইমাম, মুফতী, আলেম, হাফেয, ক্বারী ইত্যাদি দেশ পরিচালনায় সকল দিক ও বিভাগের কর্ণধার। তাদের চারিত্রিক অবক্ষয় হলে দেশ ও জাতি ডুবে যাবে অধঃপতনের অতল তলে। সমাজে নেমে আসবে চরম অশান্তি ও অনাচার। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে দুর্নীতির বহ্নিশিখা। আদর্শ ও চরিত্রহীন সোনামণি হালবিহীন নৌকার মত। তাই শিশু-কিশোরদেরকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শে গড়ে তোলার জন্যই সোনামণি সংগঠনের মাধ্যমে ৫৬,০০০ বর্গমাইলের বাংলাদেশের প্রায় ৮ কোটি সোনামণিদের মেধা ও মননের পরিবর্তন ঘটাতে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ফালিল্লাহিল হামদ

শিশু-কিশোরদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ

সোনামণিদের নৈতিক অবক্ষয়ের অনেকগুলো কারণের মধ্যে এখানে নিমণবর্ণিত ১৫টি কারণকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন- ১. সুশিক্ষার অভাব। ২. পিতা-মাতা সচেতনতার সাথে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন না করা। ৩. শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের প্রকৃত শিক্ষাদানে উদাসীন মনোভাব। ৪. শিশু-কিশোর সংগঠকদের দায়িত্বপালনে উদাসীনতা। ৫. পাশ্চাত্য ও অন্যান্য দেশের অনৈসলামিক আদর্শের বাহুল্যতা ও সহজলভ্যতা। ৬. সমাজ-সেবামূলক কাজে শিশু-কিশোরদের উদ্বুদ্ধ না করা। ৭. বালক-বালিকাদের সহ-শিক্ষার কুফল। ৮. আলেম-ওলামাদের কর্মবিমুখতা। ৯. পারিবারিক ও সাংগঠনিক পর্যায়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠক না হওয়া। ১০. নেশাজাতীয় দ্রব্যের সহজপ্রাপ্যতা। ১১. অসৎ ও চরিত্রহীন বন্ধুদের সাহচর্য। ১২. বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ী ঘন ঘন বেড়ানো ও অবস্থান করা। ১৩. কল্পনাপ্রবণ ও স্বপ্নাশ্রয়ী শিশু-কিশোরদের যথাযথ মনের খোরাক না দেওয়া। ১৪. ইসলাম অনুসারীদের নিজ ও পরিবারের সৌন্দর্য, চেতনা ও রুচিশীলতার অভাব। ১৫. ওলামা-মাশায়েখ ও ধর্মীয় শিক্ষকগণের আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সুস্থ সংস্কৃতি ও সঠিক ইসলামী আক্বীদা বিমুখতা।

শিশু-কিশোরদের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিকার

১. শিশু-কিশোরদের সুশিক্ষা প্রদানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ :

মহান আল্লাহ সৃষ্টিজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে আপন হাতে নিপুণভাবে সৃষ্টি করেছেন (ছোয়াদ ৭৫)। তিনি চান তাঁর সুন্দরতম সৃষ্টি সুন্দরভাবে জীবনযাপন করুক। এ লক্ষ্যে তিনি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে সুন্দর জীবন যাপনের সার্বিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন ।

বিশ্বের সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রকৃত ও একমাত্র উৎস স্বয়ং মহান রাববুল আলামীন। যেমন তিনি বলেন,  إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللَّهِ‘সকল জ্ঞানের উৎস একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা’ (আহক্বাফ ২৩)। তিনি বলেন, وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا ‘আর আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে’ (তালাক্ব ১২)। সোনামণিদের জন্য প্রকৃত সুশিক্ষা নিশ্চিত করার এ মহান দায়িত্ব ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংগঠনিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিকভাবে সাধারণ শিক্ষার সাথে সাথে ইসলামী শিক্ষার তেমন কোন সমন্বয় নেই। তাই এ ব্যাপারে প্রকৃত দায়িত্ব পালন করতে হবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সাংগঠনিকভাবে। ইসলামে জ্ঞানচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বৃহদাংশ জুড়ে জ্ঞানার্জনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহর বাণী, اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (১) خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ (২) اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ (৩) الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ (৪) عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ-  ‘পড়! তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’। ‘যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এক জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে’। পড়! তোমার রবের নামে যিনি মহা সম্মানিত’। ‘যিনি ক্বলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন’। ‘মানুষ যা জানত না সেগুলোকে শিক্ষা দিয়েছেন’ (আলাক্ব ১-৫)। তিনি আরো বলেন, وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় জিনিসের নাম শিক্ষা দিয়েছেন’ (বাক্বারাহ ৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয’ (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮)। তিনি আরও বলেন, فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِى عَلَى أَدْنَاكُمْ ‘আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা তেমন যেমন তোমাদের নিমণতমের উপর আমার মর্যাদা’ (তিরমিযী হা/২৬৮৫; মিশকাত হা/২১২-২১৪)। তিনি অন্যত্রে বলেন, مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يلتمس فِيهِ عِلْمًا سَهل اللَّهُ له بِهِ طَرِيقًا الي الْجَنَّةِ ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন (মুসলিম, মিশকাত হা/২১২)। জ্ঞানার্জন সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন, مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِى الدِّينِ ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তিনি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’ (ছহীহ বুখারী হা/১৭; ছহীহ মুসলিম হা/২৪৩৬; মিশকাত হা/২০০)। অন্যত্র তিনি বলেন,  وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ ‘অজ্ঞ ইবাদতকারীর তুলনায় জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদা পূর্ণিমা রাতের শশী (চাঁদ) যেমন তারকারাজির উপর দ্বীপ্তিমান। আর জ্ঞানীগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী’ (আবুদাঊদ হা/৩৬৪৩; মিশকাত হা/২১২)। Stanly Hall ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, "If you teach their the three `R`s, Reading, writing and Arithmetic and don`t teach the fourth `R` Religion, they are Sure to become fifth `R` Rascal". ‘যদি তুমি তাদেরকে (সোনামণিদেরকে) তিনটি ‘আর’ তথা পড়া, লেখা ও গণিত শিক্ষা দাও এবং চতুর্থ আর তথা ধর্ম শিক্ষা  না দাও, তাহলে অবশ্যই তারা পঞ্চম আর তথা বেয়াদব হবে’। সুতরাং আমাদের উচিৎ ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির স্বার্থে এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যণের জন্য সোনামণিদেরকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি সঠিক আক্বীদায় সুশিক্ষা প্রদান করা কর্তব্য।

২. পিতা-মাতাকে সচেতনতার সাথে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা :

পিতা-মাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে সন্তান-সন্ততিকে বৈষয়িক শিক্ষার সাথে সাথে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে প্রকৃত আদর্শবান হিসাবে গড়ে তোলা। এ জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। মহান আল্লাহর বাণী, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও স্বীয় পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাও’ (তাহরীম ৬)। নিজ পরিবার ও সন্তান-সন্ততিকে সঠিক পদ্ধতিতে ছালাতের প্রশিক্ষণ দেওয়া পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব। আল্লাহ বরেন, وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ‘তুমি তোমার পরিবারবর্গকে ছালাতের আদেশ দাও এবং নিজেও এর উপর অবিচল থাকো’ (ত্বহা ১৩২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ ‘তোমাদের সন্তানরা যখন সাত বছর বয়সে উপনীত হবে তখন তাদেরকে ছালাতের আদেশ দাও এবং যখন তারা ১০ বছর বয়সে পৌঁছবে তখন ছালাতের জন্য প্রহার কর এবং তাদের শয্যা পৃথক করে দাও (আবুদাঊদ হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৫৭২। সনদ হাসান)। রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র আরও বলেন, ‘তুমি তোমার পরিবারের জন্য উপার্জিত সম্পদ হ’তে সামর্থানুসারে ব্যয় কর। পরিবার-পরিজনকে শিষ্টাচার শিক্ষাদানের ব্যাপারে শাসন থেকে বিরত থেকো না। আর মহান আল্লাহর ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদেরকে ভীতি প্রদর্শন কর’ (আহমাদ হা/২২১২৮; আদাবুল মুফরাদ হা/১৮; মিশকাত হা/৬, হাদীছ হাসান)। অতএব পিতা-মাতার দায়িত্ব হল তাদের আদরের সন্তানদেরকে শুধু রাগ, মারপিট আর ধমক না দিয়ে আদর করে ভালো ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ শিক্ষা দেওয়া। প্রতিটি কাজে ইসলামী তথা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শ যেমন ছালাত, ছিয়াম, খাওয়া, পানাহার, পোশাক পরা, চলাফেরা, ঘুমান, পায়খানা-পেশাব ইত্যাদিতে যথাযথ উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য মহান আল্লাহর নিকট প্রাণখোলা দো‘আ করা।

৩. শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত শিক্ষাদানে যথাযথ ভূমিকা পালন করা :

শিক্ষকদেরকে মানুষ গড়ার এবং জাতি গড়ার কারিগর বলা হয়। আমাদের সকলকে স্ব-স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ‘প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে’ (ছহীহ বুখারী হা/৮৯৩; ছহীহ মুসলিম হা/৪৮২৮; মিশকাত হা/৩৬৮৫)। একজন আদর্শ শিক্ষক দেশ ও জাতিকে সুউচ্চ আসনে পৌঁছে দিতে পারে। তাই শিক্ষকদেরকে মুকুটহীন জ্ঞান বিতরণের সম্রাটও বলা হয়। প্রকৃত আদর্শবান শিক্ষকের কারণে তাঁর প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা হবে পোশাকে মার্জিত, আচার-ব্যবহারে বিনয়ী, চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ ও বিচক্ষণ। আমাদের মহানবী (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘আর অবশ্যই আপনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী (ক্বালাম ৪)। সকল কাজ কর্মে আমাদের রাসূল (ছাঃ)-কে আদর্শ হিসাবে অনুসরণ করতে হবে। বর্তমান শিক্ষকগণ তাদের সেই দায়িত্ব ভুলে গিয়ে কেউ কেউ ছুটছেন অর্থের পিছনে, কোচিং, ব্যাচ আর প্রাইভেট নিয়ে। আবার কেউ কেউ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে অশালীন ও নির্লজ্জ আচরণ করছেন যার প্রমাণ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাই এদেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রতি সবিনয় নিবেদন, হে শিক্ষকমন্ডলী! আপনাদের উপর অর্পিত জাতি গড়ার এ মহান দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট হউন। তাহলে মহান আল্লাহ আপনাদেরকে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মঙ্গল দান করবেন।

৪. শিশু-কিশোর সংগঠনের দায়িত্বশীলদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করা :

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। মহান আল্লাহর বাণী, الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ‘ধন-সম্পদ আর সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য (ও সুখ-শান্তির উপাদান ও বাহন) (কাহাফ ৪৬)। বর্তমান পৃথিবীতে আদর্শ-নীতি, পথ ও মতের কোন শেষ নেই। বিরাজমান শিশু-কিশোর সংগঠনগুলোর অধিকাংশই বস্ত্তবাদী ও বৈষয়িক উন্নতির জন্য মস্তিষ্কপ্রসূত বিভিন্ন দর্শন বা আদর্শের সনিষ্ঠ অনুসারী। সেখানে ব্যক্তি ও সমাজ উন্নয়নের কোন দিক-নির্দেশনা অনুপস্থিত। অন্যদিকে প্রকৃতপক্ষে কার আদর্শে শিশু-কিশোরদের গড়তে হবে এ সম্পর্কে একমাত্র ‘সোনামণি’ সংগঠনই তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য ও নির্দেশনা জাতির কাছে তুলে ধরেছে। আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ  ‘তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মধ্যে উত্তম নমুনা নিহিত রয়েছে’ (আহযাব ২১)। প্রত্যেক শিশু-কিশোর সংগঠনের সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলদেরকে নিমেণর গুণাবলী অর্জন সাপেক্ষে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিৎ। যেমন- ১. তাক্বওয়া অর্জন ২. সদাচারণ ও উদারতা ৩. ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা ৪. স্বার্থ ও ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা ৫. ওয়াদা ও আমানত রক্ষা করা ৬. সকলের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা ৭. টার্গেটভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন ও যোগাযোগের সমন্বয় করা।

শিশু ও বড়দের মাঝে আলোচনা ও দাওয়াতের পদ্ধতি হবে ভিন্ন। বড়দের যে পদ্ধতিতে দাওয়াত দেওয়া হয়, শিশুদের সে পদ্ধতিতে আয়ত্বে আনা সম্ভব নয়। সোনামণিদের আয়ত্বে আনার উপায় হবে ৫টি। যথা : ১. সালাম ও মুছাফাহা করা ২. বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা ৩. লেখা-পড়া ও পরিবারের খোঁজ নেয়া ৪. সম্ভাব্য সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করা ও ৫. পরিবেশ বুঝে সাংগঠনিক দাওয়াত দেওয়া। উপরোক্ত পদ্ধতিতে সোনামণিদেরকে আয়ত্বে আনা সম্ভব। সুতরাং সকল প্রকার দায়িত্বশীলদের একান্ত কর্তব্য হচ্ছে, স্ব-স্ব এলাকার শিশু কিশোরদের সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রণয়ন করা এবং সাপ্তাহিক ও মাসিক টার্গেটের ভিত্তিতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা। আর এভাবেই তাদেরকে ছোট থেকে দ্বীনের পথে পরিচালিত করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

৫. অনৈসলামিক আদর্শের সয়লাব রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা :

পাশ্চাত্যসহ অন্যান্য দেশের ধার করা আদর্শ গ্রহণ করে আমাদের সোনামণি ও যুবক-যুবতীরা চরিত্রহীন হচ্ছে। ডিশ, ইন্টারনেটের আকাশ-সংস্কৃতি, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিন ইত্যাদি হচ্ছে যুব চরিত্র বিধ্বংসী অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। বাংলাদেশসহ সমস্ত পৃথিবীর প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিশু-কিশোর তথা যুবকদের নৈতিক অবক্ষয়। আমাদের সন্তানেরা পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, কথা-বার্তায় ও আচার-আচরণে গ্রহণ করছে অনৈসলামিক আদর্শ। পিতা-মাতা, শিক্ষক-মুরুববী ও সংগঠনের দায়িত্বশীলবৃন্দ শিশু-কিশোরদের সঠিক শিক্ষা দিতে ও তাদের মনের খোরাক যোগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার মূলে রয়েছে সকল প্রকার দায়িত্বশীলদের ইসলামী আক্বীদা ও বিশুদ্ধ দিক নির্দেশনার অজ্ঞতা। তাই আসুন! আমরা সকলে মিলে আমাদের   সন্তানদেরকে সঠিক ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করি এবং সামাজিক ও রাষ্টীয়ভাবে পাশ্চাত্য থেকে আমদানী করা আদর্শ পরিহার করে দেশ, জাতি, সমাজ ও পরিবারকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করি।

৬. সমাজসেবামূলক কাজে সোনামণিদের উদ্বুদ্ধ করা :

সমাজে অবহেলিত, নিপীড়িত, অসহায় ও অত্যাচারিতদের পাশে  যেভাবে অনৈসলামিক সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীলগণ এগিয়ে আসে, সেভাবে এদেশের ওলামা-মাশায়েখ ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের তেমন জোরালো কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় না। অথচ এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, فَذَلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ (২) وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ ‘সে তো এমন, যে কঠোরভাবে তাড়িয়ে দেয় ইয়াতীমকে এবং উদ্বুদ্ধ করে না মিসকীনকে খাওয়াতে’ (মা‘ঊন ২-৩)। সুতরাং আমাদের শিশু-কিশোরদের মাঝে অসুস্থ রোগী, অসহায়, দুর্বলদের সার্বিক সহযোগিতা দানে এগিয়ে আসা, রাস্তাঘাট ও অন্যান্য সকল সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাজে স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করা, গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়ানো এবং ইসলামী প্রশিক্ষণ প্রদান করে বিশেষ নমুনা স্থাপনের জাযবা তৈরী করতে হবে। অতএব আসুন! আমরা স্বার্থ-দ্বন্দ্বহীন ভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের আকাঙ্খায় এ ধরনের সমাজসেবামূলক কাজে আন্তরিকতাপূর্ণ সহযোগিতা করি।

৭. বালক-বালিকাদের সহশিক্ষা নিষিদ্ধ করা একান্ত যরূরী :

সোনামণিদের ইসলামী আদর্শ অনুসারে জীবন গড়ার জন্য সহ-শিক্ষা নিষিদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে সোনামণিদের চরিত্র গঠনের জন্য ছেলে ও মেয়েদের পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে অথবা শিফটিং ব্যবস্থা চালু থাকবে। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার কারণে উভয়ের লজ্জা কমে যায়। একই সঙ্গে চা-নাস্তা করা, গল্প করা ও খেলাধূলার মাধ্যমে একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। বড় হলে পূর্ব পরিচিতির জের ধরে অবৈধ ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে। এটাই বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্র। আমাদের পারিবারিক ব্যবহার্য কাঠের আসবাবপত্র যেমন ঘুণে ধরে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায়, ঠিক তেমনি আমাদের অতি আদরের সোনামণিরা ধীরে ধীরে চারিত্রিক অবক্ষয়ে নিপতিত হয়। পরিবার, শিক্ষক, রাষ্ট্র ও সমাজের সকল দায়িত্বশীলের এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখা একান্ত প্রয়োজন।

আদর্শ হচ্ছে এমন এক প্রহরী, যা মানুষকে সারাজীবন সৎপথে চলতে শেখায়। ছালাত-ছিয়ামের মত পর্দা করাও যে ফরয তা সোনামণিদের শিখাতে হবে। পর্দার সুফল সম্পর্কেও সোনামণি বালিকাদের শিখাতে হবে। যেমন- ১. পর্দা করা মহান আল্লাহর নির্দেশ ২. রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ ও মর্যাদার প্রতীক, ৩. ধূলাবালি ও ময়লা থেকে রক্ষা করে, ৪. সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, ৫. পিতা-মাতার আদর্শ সন্তান হিসাবে পরিচিতি বাড়ে, ৬. সুবুদ্ধির উদয় হয় ও মাথা ঠান্ডা থাকে, ৭. দ্বীনের কাজে আগ্রহ ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়, ৮. মুমিনের ভাল লোকদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়, ৯. মাস্তান ও দুশ্চরিত্রদের থেকে রক্ষাকবচ, অর্থাৎ Eve-teasing (উত্যক্ত) করা হবে না, ১০. জান্নাতের পথ সুগম হয় ইত্যাদি। গত ১.৪.১৩ তারিখ বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় যে, ফিলিস্তীনের গাজায় ৯ বছর বয়স থেকে বালক ও বালিকাদের সহশিক্ষা নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের দেশেও এরূপ ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন।

৮. আলেম-ওলামাদের কর্মবিমুখতা দূর করা :

সমাজে ও দেশে ওলামাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশী। তাঁরা সারাদিন ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কাজে ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে চায়ের স্টলে এবং তাবলীগের নামে অসংখ্য যুবক, কর্মঠ ও বয়স্ক মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে মসজিদে মসজিদে শুয়ে, বসে, ঘুমিয়ে এবং তাসবীহ টিপে ইসলামের নামে অনেক জাল-যঈফ হাদীছ, কল্প-কাহিনী ও গল্প শুনিয়ে দিন-রাত, সপ্তাহ মাস ও বছর চিল্লার নামে কাটিয়ে দিচ্ছে অলস জীবন। যা কখনও কাম্য নয়। এভাবে তারা কর্মবিমুখতা, মিশ্র ও বহুরূপ ধারণ করে। সুতরাং আমাদের দেশে আলেম-ওলামাদের উচিৎ এভাবে অলস জীবন না কাটিয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে এগিয়ে আসা এবং ইসলামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করা। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।

৯. নিয়মিত পারিবারিক ও সাংগঠনিক বৈঠকের ব্যবস্থা করা :

আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি পরিবারই মূল সংগঠন। তাই প্রত্যেকটি পরিবার ও সংগঠনের জন্য সাপ্তাহিক বৈঠক অপরিহার্য। আদর্শ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশ গড়ার ভিত্তি স্থাপিত হয় এই সাপ্তাহিক বৈঠকের মাধ্যমে। দেশের শিশু-কিশোর তথা যুবকদের চরম চারিত্রিক অবক্ষয় রোধে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান আহরণ করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি ও উপায় হচ্ছে সাপ্তাহিক বৈঠক। জ্ঞানীদের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞানদান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত’ (মুজাদালাহ ১১)। জ্ঞানীদের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ ‘হে নবী আপনি বলুন! যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে! কেবলমাত্র বুদ্ধিমান লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে’ (যুমার ৯)

আল্লাহর নিকট জ্ঞানী সম্প্রদায়ই সর্বাধিক মর্যাদাশীল ও সম্মানের অধিকারী। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, عَنْ عُثْمَانَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ. উছমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শেখায় (ছহীহ বুখারী হা/৫০২৭; আবুদঊদ হা/১৪৫২; মিশকাত হা/২১০৯)। এই হাদীছের মর্মানুযায়ী দুনিয়ার সব শিক্ষকের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হচ্ছে যার মধ্যে কুরআনের শিক্ষা আছে এবং সব ছাত্রের শ্রেষ্ঠ ছাত্র হচ্ছে সে, যে কুরআনের জ্ঞানার্জন করেছে।

নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকের উপকারিতা : ১. সাংগঠনিক জীবনের হাতেখড়ি হয়, ২. জ্ঞানের প্রসার ও প্রখরতা বৃদ্ধি পায়, ৩. নেতৃত্ব সৃষ্টি করে, ৪. সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেয়, ৫. আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়, ৬. দাওয়াতী কাজে উৎসাহিত করে, ৭. দ্বীন প্রচারের পদ্ধতি ও উপায় শিক্ষা দেয়, ৮. দারস ও বক্তৃতার প্রশিক্ষণ দেয়, ৯. আমল সংশোধন করে, ১০. পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করে, ১১. অতুলনীয় জ্ঞানার্জন সম্ভব হয়, ১২. পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করা সম্ভব হয়, ১৩. খোলামেলা আলোচনার অভ্যাস ও সাহস গড়ে উঠে, ১৪. সময়ের কাজ যথাসময় করার অথবা নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা দেয়, ১৫. সত্যিকারের দ্বীনের খাদেম ও মুজাহিদ হিসাবে গড়ে উঠা সম্ভব।

তাই আসুন! আমরা সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠক অনুশীলন করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শে জীবন গড়ি। এ ক্ষেত্রে আমরা নিম্নের রুটিনটি অনুসরণ করতে পারি। যেমন প্রতি সপ্তাহে ১৬৮ ঘন্টা। এর মধ্যে মাত্র ১ ঘন্টা ইসলামী সংগঠনের কাজে ব্যয় করা, ৩৫ ঘন্টা বাড়ীতে পড়াশুনা করা, ৪৮ ঘন্টা স্কুল/মাদরাসায় ও প্রাইভেট পড়ে ব্যয় করা, ৮৪ ঘন্টা খাবার, ঘুম ও বিশ্রাম এবং খেলাধূলার জন্য ব্যয় করা (১+৩৫+৪৮+৮৪)= ১৬৮ ঘন্টা।

১০. নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার ও সহজলভ্যতা দূর করাঃ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ ‘সকল প্রকার নেশাজাত দ্রব্যই মদ। আর সব ধরনের মদই হারাম (ছহীহ মুসলিম হা/৫৩৩৭, ‘পানাহার অধ্যায়-৩৭, অনুচ্ছেদ-৭)। মদ হচ্ছে সকল অশ্লীল কর্মের মূল। মদ কোন বস্ত্তর নাম নয়। বরং মস্তিষ্ক বিকৃত করার এক শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। আমাদের দেশে প্রচলিত তামাক, বিড়ি, সিগারেট, আফিম, গাজা, ভাং, হেরোইন, ফেনসিডিল ইত্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্য যে নামে চলুক না কেন তা মদ এবং তা সবই হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন-  وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِى الدُّنْيَا فَمَاتَ وَهُوَ يُدْمِنُهَا لَمْ يَتُبْ لَمْ يَشْرَبْهَا فِى الآخِرَةِ ‘যে ব্যক্তি সর্বদা নেশাজাত দ্রব্য পান করে এবং তাওবা না করে মারা যাবে। সে পরকালে সুস্বাদু পানীয় পান করতে পারবে না’ (ছহীহ মুসলিম হা৫৩৩৬; মিশকাত হা/৩৬৩৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِينَةِ الْخَبَالِ  قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ قَالَ عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ- ‘আল্লাহ ওয়াদা করেছেন নেশাজাত দ্রব্য পানকারীদেরকে ‘ত্বীনাতে খাবাল’ পান করাবেন। জিজ্ঞাসা করা হ’ল হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ত্বীনাতুল খাবাল কি? উত্তরে তিনি বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামবাসীদের শরীর নিঃসৃত রক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পূঁজ’ (ছহীহ মুসলিম হা/৫৩৩৫; মিশকাত হা/৩৬৩৯)। তিনি অন্যত্র আরো বলেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ ‘নেশায় বুদ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৭৮)। রাসূল (ছাঃ) নেশাদ্রব্য পানকারীকে জুতা ও খুরমা গাছের ডাল দ্বারা ৪০ বার মারতেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৩৬১৪)। নেশাজাত দ্রব্য পানকারীদের সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন- ১. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ২. সর্বদা জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী ৩. খোটাদানকারী ৪. ও সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে যাবে না’ (দারেমী, মিশকাত হা/৩৬৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৭৩)। অতএব আমাদের শিশু-কিশোর ও যুবকদের যাবতীয় নেশাজাত দ্রব্য থেকে দূরে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১১. অসৎ ও চরিত্রহীন বন্ধুদের সাহচর্য থেকে দূরে থাকা :

মানব জীবন একাকী চলতে পারেনা। পৃথিবীতে চলতে গেলে বন্ধু, সাথী, সঙ্গী বা কল্যাণকামী অপরিহার্য। মহানবী (ছাঃ) নিজেও সর্বদা সঙ্গী-সাথী নিয়ে চলতেন। তাদেরকে তিনি সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরেছিলেন বলেই তারা হয়েছিলেন সোনার মানুষ এবং গড়েছিলেন সোনালী সমাজ। সুতরাং বুঝা যায় বন্ধুদের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে সোনামণি তথা যুবক-যুবতীদের চারিত্রিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে বন্ধু নির্বাচনে ভুল করা। মহান আল্লাহর বাণী, لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ ‘মুমিনগণ যেন অন্য কোন মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে তাদের সাথে মহান আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না’ (আলে-ইমরান ২৮)। তিনি আরও বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যপন্থীদের সাথে থাক’ (তাওবা ১১৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, أَمِ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ فَاللَّهُ هُوَ الْوَلِيُّ ‘তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছে! অথচ আল্লাহ্ই তো তাদের একমাত্র অভিভাবক বা বন্ধু’ (শুরা ০৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ ‘সে ব্যক্তি তারই সাথে থাকবে, সে যাকে ভালবেসেছে (তিরমিযী হা/২৩৮৫। হাদীছ ছহীহ।)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সৎ ও অসৎ সাহচর্য সম্পর্কে যথাক্রমে আতর বিক্রেতা ও কর্মকারের সাথে তুলনা করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘আতর বিক্রেতা হয়তো এমনিতেই কিছু আতর দিবে অথবা তুমি কিছু ক্রয় করবে আর কিছু না হলেও আতরের সুগন্ধি পাবে। পক্ষান্তরে কর্মকার তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে আর কিছু না হলেও অন্ততঃ ধোঁয়ার দুর্গন্ধ তুমি পাবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫০১০)। আসুন! আমরা নিজে উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করি এবং আমাদের সন্তানদের উত্তম ও ভাল বন্ধু বা সঙ্গী-সাথী নির্বাচনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সকলকে উত্তম বন্ধু নির্বাচনের তাওফীক দাও। আমীন!!

১২. আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাড়ীতে ঘন ঘন না বেড়ানো :  

বর্তমান সমাজে সোনামণি ও যুবক-যুবতীদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষকের বাড়ীতে একা একা বেড়াতে যাওয়া ও অবস্থান করা যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। যা না করলে যেন ছাত্র-ছাত্রীদের মর্যাদা রক্ষা হয় না বা মান-সম্মান থাকে না। এটা সম্পূর্ণরূপে অনৈসলামিক কালচার। ইসলামী অনুশাসনে এর কোন ভিত্তি নেই। একজন সোনামণি অথবা যুবক-যুবতী যখন তার গার্ডিয়ান ব্যতীত একা একা মামা, খালা, ফুফু, চাচা, শিক্ষক, দুলাভাই, বন্ধু-বান্ধবের বাড়ীতে বেড়াতে যায়, তখন ঐ বাড়ীতে অবস্থানরত অন্যান্য যুবক-যুবতীদের সাথে তাদের পরিচিতি, সখ্যতা ও ঘনিষ্টতা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর বিশেষ করে যুবতী মেয়েরা যখন কোন বাড়ীতে একা একা বেড়াতে যায় ও অবস্থান করে, তখন তাদের বেশীরভাগই অতিদ্রুত খারাপের দিকে চলে যায়; যা সহজে চিন্তায় আসে না বা বুঝা যায় না। আরও একটা কালচার এর চেয়ে ভয়াবহ ও মারাত্মক যে, নিজ বাড়ীতে অথবা স্যারের বাড়ীতে বিশেষ করে ছাত্রীদের একাকী প্রাইভেট পড়ার সুযোগ করে দেওয়া। এর মধ্যে লাভের চেয়ে ক্ষতির অংশ যে কত বেশী তা সহজে মিলাতে পারবেন না। অতএব আসুন! উল্লেখিত বিষয়ে আমরা যথাযথ সর্তকতা অবলম্বন করি এবং সোনামণিদের ইসলামী প্রশিক্ষণ প্রদান করি।

১৩. কল্পনাপ্রবণ ও স্বপ্নাশ্রয়ী শিশু-কিশোরদের মনের খোরাকের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা :

সোনামণি তথা শিশু-কিশোরগণ তাদের মনে বিভিন্ন ধরনের কল্পনা আঁকে। নতুন নতুন স্বপ্ন দেখে। এজন্যই সোনামণি সংগঠন সোনামণিদের জন্য কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পাশাপাশি ইসলামী জ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান, মেধা পরীক্ষা, কবিতা, সংলাপ, ইসলামী গল্প ও বিভিন্ন উপদেশমূলক গল্প ও বিজ্ঞানকে সিলেবাসভুক্ত করেছে। যা শিশু-কিশোরদের মনের অনেক কল্পনা ও স্বপ্নের খোরাক দিতে সক্ষম। এগুলির মাধ্যমে তাদের মেধা ও মননের দ্বার উন্মুক্ত হয়। যদিও বয়স্ক বা বৃদ্ধ দায়িত্বশীলরা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখান না, সহযোগিতা করেন না এবং এরকম কোন কার্যাবলী পছন্দও করেন না। কারণ তাঁদের এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা নেই। বয়ষ্ক দায়িত্বশীলদের তাই বুঝিয়ে ম্যানেজ করে নিতে হবে। পড়াশুনার পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিযোগিতা, সংলাপ ও সাধারণ জ্ঞানে তারা সর্বদা পুলকিত হয়। তাদের সুপ্ত মেধা শক্তি বিকশিত হয় এবং সকল কাজে তারা আগ্রহী হয়ে উঠে। মনটাকে কাজ দাও, তাহলে সে ভাল থাকবে। সুন্থ থাকবে, সুন্দর থাকবে। তারা যেন সর্বদা ঝামেলামুক্ত, অভাবহীন ও শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজ, দেশ, জাতি ও পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে। ভবিষ্যৎ সুন্দর জীবনের অনেক আল্পনা আঁকে। তাই আমরা তাদেরকে সে সুযোগ করে দেই। তাহলে তারা হবে সত্যাশ্রয়ী। যাবতীয় অন্যায়, অসত্য, অবিচার, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বদা সচেতন ও সংগ্রামী। সোনামণি সংগঠন সহ সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের এ সংগঠন সম্পর্কে যথারীতি পড়াশুনার সাথে চিন্তা-ভাবনা, গবেষণার জন্য বিশেষ উদ্যমী ও আগ্রহী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। সুতরাং শিশু-কিশোরদের বেশী বেশী করে আদর করব, ভালবাসব। কারণ তারা নিষ্পাপ অথবা তাদের পাপের ফিরিস্তি অনেক কম।

১৪. সর্বদা নিজের ও পরিবারের সৌন্দর্য চেতনা ও রুচিশীলতা বজায় রাখা :

মহান আল্লাহ সুন্দর ও সৌন্দর্যমন্ডিত। তিনি সুন্দর ও সৌন্দর্যকে ভালবাসেন। আমাদের প্রিয় নবী (ছাঃ) সৌন্দর্য ও পবিত্রতাকে আজীবন লালন করেছেন। তিনি ছালাতে গমনের সময় আতর ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর বাণী, إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তাওবাকারী ও (দৈহিকভাবে) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারহা ২২২)। বর্তমান সমাজে অনেক ইসলামপন্থীদের সৌন্দর্যচেতনা ও রুচিশীলতার অভাবে রুচিশীল সাধারণ মানুষ ও সোনামণিরা তাঁদেরকে এড়িয়ে চলে। তাঁদের সাথে মিশতে, সংগঠন করতে ও ইসলামী জ্ঞানার্জন করতে আগ্রহী হয় না। তাদেরকে সেকেলে, সভ্যতাহীন ইত্যাদি বলা হয়। সোনামণি সংগঠনের দায়িত্ব পালনকালে আমি বিশেষ করে এসব তথ্যের বাস্তব সত্যতা পেয়েছি। তাই আমি ইমাম, মুয়াযি্যনসহ সকল ইসলাম অনুরাগীদেরকে সৌন্দর্যসচেতন ও রুচিশীল হওয়ার অনুরোধ জানাই। এক্ষেত্রে ময়লা ও অপরিষ্কার পোশাক-পরিচ্ছদ, বিশেষত মেয়েদের কপালে টিপ, হাত ও পায়ে বড় বড় রঙ-বেরঙের নখ, মুখ, নাক ও দাঁত অপরিষ্কার, পাঞ্জাবীর পকেট ও বোতাম ছেড়া এবং প্রসাব করতে বসার সময় পাঞ্জাবী ঝুলে পড়া ও দাঁড়িয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করা ইত্যাদিসহ এ ধরনের আরও অনেক অসুন্দর, মন্দ ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা একান্ত প্রয়োজন।

১৫. ওলামা-মাশায়েখ ও ধর্মীয় শিক্ষকগণের আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও সঠিক ইসলামী আক্বীদার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা :

বর্তমান আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে অন্যান্য সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ওলামা মাশায়েখ ও ধর্মীয় শিক্ষকগণকে সঠিক ইসলামী শিক্ষার সাথে সাথে প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রশিক্ষিত ও সক্রিয় হতে হবে। মহান আল্লাহর বাণী وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ‘আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানময়’ (নূর ১৮,৫৮ ও ৫৯)।  আল্লাহ বলেন, فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ ‘তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলনা, যাতে তারা দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং এ সংবাদ পৌঁছে দিতে পারে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা বাঁচতে পারে’ (তাওবা ১২২)। সমাজে কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য ইসলামী দাওয়াতের সাথে সাথে সমাজ, দেশ ও জাতির উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে ওলামা-মাশায়েখদের এগিয়ে আসতে হবে। আর সকল মানুষকে তাদের মর্যাদানুপাতে সম্মান করতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশের এই ঘুণে ধরা সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে সাধারণ শিক্ষিত মানুষ ও শিশু-কিশোরদের ওলামাদের প্রতি তাদের উল্লেখিত ধারণা পাল্টাতে হবে। তাদেরকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সাথে সাথে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলেই আসবে পরিবর্তন ইনশাআল্লাহ।

উপসংহার

আমাদের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই ৫৬,০০০ বর্গমাইলের বাংলাদেশে প্রায় ৮ কোটি সোনামণির বাস। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও আমাদের শিশু-কিশোরেরা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে দৃষ্টি ফেরাচ্ছে পাশ্চাত্যের আদর্শের দিকে। এমতাবস্থায় পূর্বগগণে উদিত সকালের রক্তিম সূর্যের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়েছে দিকভ্রান্ত শিশু-কিশোরদেরকে একমাত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শে জীবন গড়ার দৃপ্ত শপথ নিয়ে জন্ম নেয়া সোনামণি সংগঠন। কবির ভাষায় ‘উষর মরুর ধুসর বুকে বিশাল যদি শহর গড়, একটি জীবন সফল করা তাহার চেয়ে অনেক বড়’। তাই এদেশের সকল মুসলিমের প্রতি বিনীত উদাত্ত আহবান, তারা যেন তাদের প্রাণপ্রিয় অতি আদরের শিশুসন্তানকে সোনামণি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করে শৈশব থেকেই রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে জীবন গড়ার সুযোগ করে দেন। পরিশেষে এ সংগঠনের স্থায়িত্বের জন্য সময়, শ্রম, মেধা, মনন ও অর্থ ব্যয় করার নিমিত্তে মহান আল্লাহর মদদ কামনা করছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন!!

মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান

[লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় পরিচালক, সোনামণি]



বিষয়সমূহ: শিশু-সোনামণি
আরও