কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমানের শাখা (৬ষ্ঠ কিস্তি)

হাফেজ আব্দুল মতীন 8527 বার পঠিত

(৫১) কল্যাণ এবং তাক্বওয়ার কাজে পরস্পর সহযোগিতা করা :

মহান আল্লাহ বলেন, وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ- ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে একে অপরকে সাহায্য করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তি দানকারী’ (মায়িদা ৫/২)। হাদীছে এসেছে,عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا. فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنْصُرُهُ إِذَا كَانَ مَظْلُومًا، أَفَرَأَيْتَ إِذَا كَانَ ظَالِمًا كَيْفَ أَنْصُرُهُ قَالَ تَحْجُزُهُ أَوْ تَمْنَعُهُ مِنَ الظُّلْمِ، فَإِنَّ ذَلِكَ نَصْرُهُ-  আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমার ভাইকে সাহায্য কর। সে যালিম হোক অথবা মাযলূম হোক।  এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মাযলূম হ’লে তাকে সাহায্য করব তা তো বুঝলাম কিন্তু যালিম হ’লে তাকে কিভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তাকে অত্যাচার  থেকে বিরত রাখবে। আর এটাই হ’ল তার সাহায্য’।[1]

(৫২) লজ্জাশীলতা :

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِى الْحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإِيمَانِ- আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত একদা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এক আনছারী ব্যক্তির পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন লজ্জা ত্যাগের জন্য নছীহত করছিলেন। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, ওকে ছেড়ে দাও। কারণ লজ্জা ঈমানের অঙ্গ’।[2] অন্য হাদীছে এসেছে, عِمْرَانِ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِى إِلاَّ بِخَيْرٍ- ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোন কিছুই নিয়ে আনে না’।[3] অপর হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَشَدَّ حَيَاءً مِنَ الْعَذْرَاءِ فِى خِدْرِهَا، فَإِذَا رَأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ عَرَفْنَاهُ فِى وَجْهِهِ- আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘নবী (ছাঃ) গৃহবাসিনী পর্দানশীল কুমারীদের চেয়েও বেশী লজ্জাশীল ছিলেন’।..... যখন নবী (ছাঃ) কোন কিছু অপসন্দ করতেন তা চেহারায় বুঝা যেত।[4] অপর এক হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى مَسْعُودٍ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ إِذَا لَمْ تَسْتَحِى فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ- আবু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, প্রথম যুগের আম্বিয়ায়ে কেরামের উক্তিসমূহ যা মানবজাতি লাভ করেছে তন্মেধ্যে একটি হ’ল যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহ’লে তুমি যা ইচ্ছা তাই কর’।[5]

(৫৩) পিতামাতার খেদমত করা : 

মহান আল্লাহর ইবাদতের পরেই পিতা-মাতার খেদমতের কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا  ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর’ (নিসা ৪/৩৬)। মহান আল্লাহ বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ ‘আর আমরা মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করেছে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। অতএব তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (মনে রেখ, তোমার) প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই’ (লোকমান ৩২/১৪)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ- ‘আর আমি মানুষকে তার মাতা পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোয় সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব! আমাকে সামর্থ দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নে‘আমত দান করেছ, তোমার সে নে‘আমতের যেন আমি শুকরিয়া আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পসন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মাঝে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (আহকাফ ৪৬/১৫)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا - وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا- ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি ‘উহ’ শব্দটিও করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে নরমভাবে কথা বল। আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়াবশে প্রতিপালন করেছিলেন’ (বানী ইসরাঈল ১৪/২৩-২৪)

নিজের জন্য পিতা-মাতা এবং সন্তান-সন্তুতিসহ সকল মু‘মিন মু‘মিনাত এবং মুসলিম-মুসলিমাতের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যেমন : মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে বলেন,  رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ ‘হে আমাদের প্রভু! আমাকে ও আমার পিতামাতাকে এবং ঈমানদার সকলকে ক্ষমা কর যেদিন হিসাব দন্ডায়মান হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪১)। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى عَمْرٍو الشَّيْبَانِىَّ يَقُولُ حَدَّثَنَا صَاحِبُ هَذِهِ الدَّارِ وَأَشَارَ إِلَى دَارِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ. قَالَ حَدَّثَنِى بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِى-   আবু আমর আশ-শায়বানী (রঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বাড়ীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এ বাড়ীর মালিক আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমলটি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তিনি বললেন, যথা সময়ে ছালাত আদায় করা। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, অতঃপর পিতা-মাতার খেদমত করা। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কোনটি? আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, অতঃপর আল্লাহর পথে জিহাদ করা। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বললেন, এগুলি তো আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাকেই বলেছেন। যদি আমি আরও অধিক জানতে চাইতাম তাহ’লে তিনি আরো বলতেন’।[6]

অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِى قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ  أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوكَ- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হক্বদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল, অতঃপর কে? নবী (ছাঃ) বললেন, তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, অতঃপর তোমার পিতা’।[7]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أُجَاهِدُ. قَالَ لَكَ أَبَوَانِ. قَالَ نَعَمْ. قَالَ فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ- আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, আমি কি জিহাদে যাব? তিনি বললেন, তোমার কি পিতা-মাতা আছে? সে বলল, হ্যাঁ; তিনি বললেন, তাহ’লে তাদের (সেবা করার মাধ্যমে) জিহাদ কর’।[8]

অপর হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رضى الله عنهما قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ. قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أَمَّهُ আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হ’ল নিজের পিতা-মাতাকে লা‘নত করা। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আপন পিতা-মাতাকে কোন লোক কিভাবে লা‘নত করতে পারে? তিনি বললেন, সে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়’।[9]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى بَكْرَةَ عَنْ أَبِيهِ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ. قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ  الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ. وَكَانَ مُتَّكِئًا فَجَلَسَ فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ، أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ . فَمَا زَالَ يَقُولُهَا حَتَّى قُلْتُ لاَ يَسْكُتُ আবু বাকরাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললাম, অবশ্যই সতর্ক করবেন। হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার গণ্য করা, পিতামাতার নাফরমানী করা (অবাধ্য হওয়া)। একথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন, এর পর সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া দু‘বার করে বললেন, ক্রমাগত বলেই চললেন, এমনকি আমি বললাম,  তিনি মনে হয় থামবেন না’।[10] 

(৫৪) আত্নীয়তা রক্ষা করা :

মহান আল্লাহ বলেন,فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ- أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ- ‘তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদের আল্লাহ লা’নত করেন, ফলে তাদের বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টিসমূহকে অন্ধ করেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২২-২৩)

মহান আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ  ‘পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অটুট রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে ও পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাৎ এবং তাদের জন্য রয়েছে মন্দ আবাস’(রাদ ১৩/২৫)। অথবা নিজের কল্যাণের জন্যই আত্মীয়তা রক্ষা করতে হবে যাতে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন নাজাত মিলে। মহান আল্লাহ বলেন,  وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং আত্মীয় পরিজন, ইয়াতীম, মিসকীন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, পথের সাথী ও তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক (দাস-দাসী, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও গর্বিতকে ভালবাসেন না’ (নিসা ৪/৩৬)

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ رِزْقُهُ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِى أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি পসন্দ করে যে তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচারণ করে’।[11]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ  صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الرَّحِمَ سُجْنَةٌ مِنَ الرَّحْمَنِ ، فَقَالَ اللَّهُ مَنْ وَصَلَكِ وَصَلْتُهُ ، وَمَنْ قَطَعَكِ قَطَعْتُهُ  আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী (ছাঃ) বলেন, ‘রক্ত সম্পর্কে মূল হ’ল রহমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, যে ব্যক্তি তোমার সাথে সুসম্পর্ক রাখবে আমি তার সাথে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার হ’তে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমিও সে লোক হ’তে সম্পর্ক ছিন্ন করব’।[12] নাবী (ছাঃ) বলেন, لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ، وَلَكِنِ الْوَاصِلُ الَّذِى إِذَا قَطَعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا- ‘প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয় বরং আত্মীয়তার হক সংকরক্ষণকারী সে ব্যক্তি যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরেও বজায় রাখে’।[13]

জান্নাত পেতে হলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى أَيُّوبَ رضى الله عنه أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَخْبِرْنِى بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِى الْجَنَّةَ. قَالَ مَا لَهُ مَا لَهُ وَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَرَبٌ مَالَهُ، تَعْبُدُ اللَّهَ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِى الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ- আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি শিক্ষা দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উপস্থিত লোকজন বলল, তার কি হয়েছে? তার কি হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তার একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। এরপর নবী (ছাঃ) বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে অংশী স্থাপন করবে না, ছালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে’।[14] অপর হাদীছে এসেছে, عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ قَالَ إِنَّ جُبَيْرَ بْنَ مُطْعِمٍ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ  যুবায়ের ইবনু মুতঈম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি নবী (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[15]

(৫৫) উত্তম চরিত্র :

বিনয়-নম্রতা অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ থেকে রক্ষা করে। হক্ব পেলেই হক্ব গ্রহণ করা, রাগের সময় মানুষকে ক্ষমা করা, আমানত বজায় রাখা, সত্য কথা বলা, ইসলামের সকল কাজ-কর্ম রাসূল (ছাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতিতে আদায় করা, প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করা, তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা, শিরকী কাজ ও বিদ‘আতী আমল থেকে মানুষকে রক্ষা করা, সকল অন্যায় অপকর্ম থেকে নিজেকে হেফাযত রাখার চেষ্টা করা এবং অপরকেও রক্ষা করার চেষ্ট করা। রাসূল ছাঃ)-এর চরিত্রকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে’ (আহযাব ৩৩/২১)। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ  ‘আর অবশ্যই তুমি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত’ (ক্বলম ৬৮/৪)। উত্তম চরিত্রের আর একটি গুণ মানুষকে ক্ষমা করা।

মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ‘যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৩৪)। সুতরাং মানব জাতীকে এরূপ সকল দাঈ ও আলেম উলামাদেরকে নম্র, ভদ্র হতে হবে, মানুকে অন্যায়ভাবে ধমক দেওয়া, কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া, আচার ব্যবহার উগ্র হওয়া চলবে না। এরূপ করলে মানুষ নিকটে থাকবে না। বদনাম ছাড়া কিছুই করবে না। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ)-কে আল্লাহ বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ-  ‘আর আল্লাহর রহমতের কারণেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী কঠোর হৃদয়ের হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رضى الله عنهما قَالَ لَمْ يَكُنِ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا وَكَانَ يَقُولُ إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا- আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) অশ্লীলভাষী ও অসাদচরণে অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম’।[16]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَكُنْ فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا وَقَالَ إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَىَّ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا মাসরূক্ব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাপূর্বক অশ্লীল ভাষী ছিলেন না। তিনি বলেছেন তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে প্রিয় যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী’।[17]

অপর এক হাদীছে এসেছে,عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَنَّهَا قَالَتْ مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلاَّ أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا، مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا، فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ، وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِنَفْسِهِ، إِلاَّ أَنْ تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ اللَّهِ فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ بِهَا- আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নাবী (ছাঃ)-কে কখনই দু’টি জিনিষের একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া হ’লে তখন তিনি সহজটিই গ্রহণ করতেন। যদি তা গুনাহ না হত। গুনাহ হ’তে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করতেন। নবী করীম (ছাঃ) নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেন নি। তবে আল্লাহর সীমারেখা লংঘন করা হলে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য প্রতিশোধ নিতেন’।[18] সুতরাং কুরআন-সুন্নাহ্কে অাঁকড়ে ধরা এবং সালাফে ছালেহীনদের পথে চলাই হ’ল মানব জীবনের উত্তম আদর্শ।

(৫৬) ক্রীতদাসদের প্রতি ইহসান করা, উত্তম ব্যবহার করা :

মহান আল্লাহ বলেন, وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورً ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং আত্মীয় পরিজন, ইয়াতীম, মিসকীন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, পথের সাথী ও তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক (দাস-দাসী, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও গর্বিতকে ভালবাসেন না’ (নিসা ৪/৩৬)

হাদীছে এসেছে,عَنِ الْمَعْرُورِقَالَ رَأَيْتُ أَبَا ذَرٍّ الْغِفَارِىَّ رضى الله عنه وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ وَعَلَى غُلاَمِهِ حُلَّةٌ فَسَأَلْنَاهُ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ إِنِّى سَابَبْتُ رَجُلاً فَشَكَانِى إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لِىَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَعَيَّرْتَهُ بِأُمِّهِ. ثُمَّ قَالَ إِنَّ إِخْوَانَكُمْ خَوَلُكُمْ جَعَلَهُمُ اللَّهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ فَأَعِينُوهُمْ  মা‘রূফ ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি আবু যার গিফারী (রাঃ)-এর দেখা পেলাম। তার গায়ে তখন এক জোড়া কাপড় আর ক্রীতদাসের গায়ের (অনুরূপ) কে জোড়া কাপড় ছিল। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, একবার এক ব্যক্তিকে আমি গালি দিয়েছিলাম। সে নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তখন নবী  করীম (ছাঃ) আমাকে বললেন, তুমি তার মায়ের প্রতি কটাক্ষ করে লজ্জা দিলে? তারপর তিনি বললেন, তোমাদের গোলামেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্ত করেছেন। কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায় তা হ’তে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা হ’তে যেন পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজে বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের শক্তির উর্দ্ধে কোন কাজ তাদের দাও তবে সহযোগিতা কর’।[19]

(৫৭) দাস-দাসীর মালিকের অধিকার :

হাদীছে এসেছে, عَنْ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْعَبْدُ إِذَا نَصَحَ سَيِّدَهُ وَأَحْسَنَ عِبَادَةَ رَبِّهِ كَانَ لَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ  ইবনু উমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্রীতদাস যদি তার মনিবের হিতাকাংখী হয় এবং তার প্রতিপালকের উত্তমরূপে ইবাদত করে তাহ’লে তার ছাওয়াব হবে দ্বিগুণ’।[20]

অন্য হাদীছে এসেছে,عَنْ أَبِى مُوسَى الأَشْعَرِىِّ رضى الله عنه قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّمَا رَجُلٍ كَانَتْ لَهُ جَارِيَةٌ فَأَدَّبَهَا فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا، وَأَعْتَقَهَا وَتَزَوَّجَهَا، فَلَهُ أَجْرَانِ، وَأَيُّمَا عَبْدٍ أَدَّى حَقَّ اللَّهِ وَحَقَّ مَوَالِيهِ، فَلَهُ أَجْرَانِ- আবু মুসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে লোক তার বাঁদীকে উত্তমরূপে জ্ঞান ও আদব শিক্ষা দেয় এবং তাকে মুক্ত করে ও বিয়ে করে তাহলে সে দ্বিগুণ ছাওয়াব লাভ করবে। আর যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক্ব আদায় করে এবং মনিবের হক্বও আদায় করে সেও দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে’।[21]

(৫৮) পরিবার ও সন্তান-সন্ততিদের হক্ব আদায় করা : সন্তান-সন্তাতিদের পিতা-মাতাগণ তাওহীদের শিক্ষা দান করবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত (তাওহীদ প্রতিষ্ঠা) করার জন্য’ (যারিয়াহ ৫১/৫৬)। সকল প্রকার ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ও সকল প্রকার শিরকী কাজ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দান করবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورً ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং আত্মীয় পরিজন, ইয়াতীম, মিসকীন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, পথের সাথী ও তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক (দাস-দাসী, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও গর্বিতকে ভালবাসেন না’ (নিসা ৪/৩৬)। সকল নবী-রাসূলগণই নিজের পরিবার সন্তান-সন্তানাদি এবং সম্প্রদায়কে সর্ব প্রথম তাওহীদের শিক্ষা দান করেছেন ও শিরকী কাজ পরিত্যাগ করার কথা বলেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূত থেকে দূরে থাক’ (নাহল ১৬/৩৬)। ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ  ‘আর যখন ইবরাহীম বলেছিল, হে আমার পালনকর্তা, এ শহর (মক্কা)-কে তুমি শান্তিময় কর এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের তুমি মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখ’ (ইবরাহীম /৩৫)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ - أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إِلَهَكَ وَإِلَهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ  ‘এরই অছিয়ত করেছিল ইবরাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকূবও। (আর তা এই যে,) হে আমার সন্তানেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্য এই ধর্মকে মনোনীত করেছেন। অতএব অবশ্যই তোমরা মরো না মুসলিম (আত্মসমর্পিত) না হয়ে। তোমরা কি উপস্থিত ছিলে যখন ইয়াকূবের মৃত্যুক্ষণ উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে তার সন্তানদের বলেছিল, আমার পরে তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার মা‘বূদের এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মা‘বূদের ইবাদত করব- যিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাক’ (বাক্বারাহ ২/১৩২-১৩৩)

মহান আল্লাহ ইউসুফ (আঃ) সম্পর্কে বলেন,  وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ آبَائِي إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ مَا كَانَ لَنَا أَنْ نُشْرِكَ بِاللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ذَلِكَ مِنْ فَضْلِ اللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ - يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ - مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ  ‘আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের ধর্ম অনুসরণ করি। আমাদের জন্য শোভা পায় না যে, কোন বস্ত্তকে আল্লাহর সাথে শরীক করি। এটা আমাদের প্রতি এবং অন্য সব লোকদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। হে কারাগারের সাথীদ্বয়! পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের পূজা করে থাক। যেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছ। এদের পক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। আল্লাহ ব্যতীত কারু বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ব্যতীত তোমরা অন্য কারু ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না’ (ইউসুফ ১১/৩৮-৪০)

মহান আল্লাহ লোকমান সম্পর্কে বলেন, وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ‘স্মরণ কর, যখন লোকমান উপদেশ দিয়ে তার পুত্রকে বলেছিল, হে বৎস! আল্লাহর সাথ কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয়ই শিরক সবচেয়ে বড় পাপ’ (লোকমান ৩১/১৩)। সন্তান-সন্তুানাদিদের পরিবারবর্গকে আল্লাহ তা‘আলার অনুগত করা এবং রাসূল (ছাঃ) এর আনুগত্য করার শিক্ষা প্রদান করা। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ  ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৩)। রাসূল (ছাঃ) এর আদেশ নিষেধ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا ‘রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ (হাশর ৫৯/৭)। যে ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ) এর আনুগত্য করল সে যেন আল্লাহরই আনুগত্য করল।

মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ - قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ ‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আলে ইমরান ৩/৩১)। সন্তান ও পরিবারকে রাসূল (ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করতেন সেভাবে ছালাত আদায়ের পদ্ধতি শিক্ষা দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي  ‘নিশ্চয় আমিই আল্লাহ! আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণে ছালাত কায়েম কর’ (ত্বোহা /১৪)। মহান আল্লাহ বলেন, وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى ‘আর তুমি তোমার পরিবারকে ছালাতের আদেশ এবং তুমি এর উপর অবিচল থাক। আমরা তোমার নিকট রূযী চাই না। আমরাই তোমাকে রূযী দিয়ে থাকি। আর (জান্নাতের) শুভ পরিণাম তো কেবল মুত্তাক্বীদের জন্যই’ (ত্বহা /১৩২)। এভাবেই যাকাত আদায় করার পদ্ধতি, ছিয়াম সাধনের পদ্ধতি, হজ্জ আদায়ের পদ্ধতি শিক্ষা প্রদান করতে হবে। দ্বীনের সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় এবং আদব-ক্বায়দা শিক্ষা প্রদান করতে হবে। পরিবার এবং মেয়েরা বাইরে বের হ’লে পর্দার সহিত বের হবার শিক্ষা প্রদান করবে। অর্থাৎ নিজেকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে বাঁচাবে এবং সমত্মান-সন্তুতি ও আত্মীয় স্বজনদেরকেও বাঁচানোর চেষ্টা করবে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, যারা আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়’ (তাহরীম ৬৬/৬)

আয়াতটির ব্যাখ্যা হিসেবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, مُرُوا الصَّبِىَّ بِالصَّلاَةِ إِذَا بَلَغَ سَبْعَ سِنِينَ وَإِذَا بَلَغَ عَشْرَ سِنِينَ فَاضْرِبُوهُ عَلَيْهَا ‘সন্তান-সন্তুতিগণকে সাত বৎসর হলে (ছালাত আদায় না করলে) তাদের প্রহার কর’।[22] হাসান (রাঃ) বলেন, তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য করার আদেশ কর এবং তাদের শিক্ষাদান কর এবং আদব-ক্বায়দা শিক্ষা দাও’।[23] 

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর আনুগত্য করার শিক্ষা প্রদান কর, আল্লাহর সাথে সীমালংঘন ও পাপ থেকে রক্ষা কর, তুমি তোমার (সন্তান-সন্তুতি) আহাল পরিবারকে সর্বদায় আল্লাহকে স্বরণ করা শিক্ষা প্রদান কর, জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর’।[24] ফক্বীহগণ বলেন, ‘এভাবেই তাদের ছিয়াম সাধনে অভ্যাস্ত কর যাতে তারা সর্বদায় আল্লাহর ইবাদত ও তার ই আনুগত্য করে এবং পাপ কাজ ও অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকে’।[25]

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ دَخَلَتِ امْرَأَةٌ مَعَهَا ابْنَتَانِ لَهَا تَسْأَلُ، فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِى شَيْئًا غَيْرَ تَمْرَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا إِيَّاهَا، فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا وَلَمْ تَأْكُلْ مِنْهَا، ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ، فَدَخَلَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيْنَا ، فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ مَنِ ابْتُلِىَ مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ بِشَىْءٍ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنَ النَّارِ- ‘আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দু’টি শিশু কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকট এসে কিছু চাইল। আমর নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুর টি দু’ভাগ করে কন্যা দু’টিকে দিয়ে দিল। এরপর ভিখারিণী বেরিয়ে চলে গেলে নাবী (ছাঃ) আমাদের নিকট আসলেন। তার নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেন যাকে এরূপ কন্যা সমত্মানের ব্যাপারে কোনরূপ পরীক্ষা করা হয় সে কন্যা সমত্মান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হ’তে আড় হয়ে দাঁড়ায়’।[26] অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দু’টি মেয়েকে তাদের প্রাপ্ত বয়স হওয়া পর্যন্ত ভরণ পোষণ ও উত্তম শিক্ষা প্রদান করলে, সে ও আমি কিয়ামতের দিন এভাবে এক সাথে থাকব দিয়ে আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে দেখালেন’।[27]

অপর এক হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ. قَالَتِ النِّسَاءُ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم غَلَبَنَا عَلَيْكَ الرِّجَالُ، فَاجْعَلْ لَنَا يَوْمًا مِنْ نَفْسِكَ فَوَعَدَهُنَّ يَوْمًا لَقِيَهُنَّ فِيهِ فَوَعَظَهُنَّ وَأَمَرَهُنَّ فَكَانَ فِيمَا قَالَ لَهُنَّ مَا مِنْكُنَّ امْرَأَةٌ تُقَدِّمُ ثَلاَثَةً مِنْ وَلَدِهَا إِلاَّ كَانَ لَهَا حِجَابًا مِنَ النَّارِ فَقَالَتِ امْرَأَةٌ وَاثْنَيْنِ فَقَالَ وَاثْنَيْنِ- আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘এক মহিলা নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাদীছ তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শিখাবেন। তিনি বললেন, তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে।

সে মোতাবেক তারা একত্রিত হলেন এবং নবী করীম (ছাঃ) তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন এবং বললেন, তোমাদের কেউ যদি সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় (মৃত্যুবরণ) করে তাহলে এ সন্তানরা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার জন্য পর্দা হয়ে দাঁড়াবে। তাদের মাঝে থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দু’জন হয়? বর্ণনাকারী বলেন, মহিলা কথাটি দু’ দু’বার জিজ্ঞেস করলেন, তখন নবী (ছাঃ) বললেন, দু’জন হলেও, দু’জন হলেও, দু’জন হলেও।[28]

(ক্রমশ)

[লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, সঊদীআরব]


[1]. বুখারী হা/৬৯৫২; আহমাদ হা/১১৪৯।

[2]. বুখারী হা/২৪; আহমাদ হা/৫১৮৩; মুসলিম হা/৩৬।

[3]. বুখারী হা/৬১১৭; আহমাদ হা/১৯৮৩০; মুসলিম হা/১৬৫।

[4]. বুখারী হা/৬১০২; আহমাদ হা/১১৬৮৩; মুসলিম হা/২৩২০।

[5]. বুখারী হা/৩৪৮৪; আহমাদ হা/১৭০৯০।

[6]. বুখারী হা/৫২৭; আহমাদ হা/৩৮৯০; মুসলিম হা/৮৫।

[7]. বুখারী হা/৫৯৭১; আহমাদ হা/৯০৮১; মুসলিম হা/২৫৪৮।

[8]. বুখারী হা/৫৯৭২; আহমাদ হা/৬৭৬৫; মুসলিম হা/২৫৪৯।

[9]. বুখারী হা/৫৯৭৩; আহমাদ হা/৭০২৯; মুসলিম হা/৯০।

[10]. বুখারী হা/৫৯৭৬; আহমাদ হা/২০৩৮৫; মুসলিম হা/৮৭।

[11]. বুখারী হা/২০৬৭; আহমাদ হা/১৩৫৮৫; মুসলিম হা/২৫৫৭।

[12]. বুখারী হা/৫৯৮৮।

[13]. বুখারী হা/৫৯৯১; আহমাদ হা/৬৫২৪।

[14]. বুখারী হা/৫৯৮৩; আহমাদ হা/১৬৭৩২; মুসলিম হা/২৫৫৬।

[15]. বুখারী হা/৫৯৮৪; আহমাদ হা/১৬৭৩২; মুসলিম হা/২৫৫৬।

[16]. বুখারী হা/৩৫৫৯; আহামদ হা/৬৫০৪; মুসলিম হ/২৩২১।

[17]. বুখারী হা/৩৭৫৯; আহমাদ হা/৬৭৬৭।

[18]. বুখারী হা/৩৫৬০; আহমাদ হা/২৪৮৪৬; মুসলিম হা/২৩২৭; বায়হাক্বী হা/১০/৩৫০।

[19]. বুখারী হা/২৫৪৫; আহমাদ হা/২১৪৩২; মুসলিম হা/১৬৬১।

[20]. বুখারী হা/২৫৪৬; মুসলিম হা/১৬৬৪।

[21]. বুখারী হা/২৫৪৭।

[22]. আহমাদ হা/১৫৩৭৭; আবু দাঊদ হা/৪৯৪; তিরিমিযী হা/৪০৪; ইবনে কাছীর ১৪/৫৯ ছহীহ।

[23]. মুখতাছার শু‘আবুল ঈমান পৃঃ ৯৩।

[24]. ইবনু কাছীর ১৪/৫৮।

[25]. ইবনু কাছীর ১৪/৫৯।

[26]. বুখারী হা/১৪১৮; আহমাদ হা/২৫৩৩২; মুসলিম হা/২৬২৯।

[27]. মুসলিম হা/২৬৩১।

[28]. বুখার হা/৭৩১০; মুসলিম হা/২৬৩৩; আহমাদ হা/১১২৯৬।

 



আরও